চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98353
ডাউনলোড: 8163


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98353 / ডাউনলোড: 8163
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

কুরাইশদের কল্পরাজ্য

খোদা না করুন যে,এই মানুষ একদিন তার জীবনের দিকচক্রবাল রেখা পরিষ্কার ও উজ্জ্বল দেখতে পেয়ে নিজের জন্য এক কাল্পনিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রবক্তা হয়ে যায়। তখনই সে অস্তিত্ব ও জীবনকে কেবল তারই সাথে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করবে এবং অন্য মানুষের জন্য স্বল্পতম জীবনধারণের ন্যূনতম অধিকার ও সম্মানের স্বীকৃতি দেবে না।

সকলের ওপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও উচ্চ মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য কুরাইশগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল যে,তারা মক্কা শরীফের বাইরে নির্ধারিত এলাকার  (حل )114 অধিবাসীদের ন্যূনতম সম্মান ও মর্যাদার স্বীকৃতি দেবে না। কারণ তারা বলত, সাধারণ আরব আমাদের ইবাদাতগাহের প্রতি মুখাপেক্ষী। আর আরব জাতির সবাই প্রত্যক্ষ করেছে,আমরা কাবার দেব-দেবীদের কৃপাদৃষ্টিতে আছি।” তখন থেকেই কুরাইশদের কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায়। তারা জোরজুলুম চালিয়ে হিল-এর অধিবাসীদেরকে বাধ্য করেছিল যে,হজ্ব ও উমরার জন্য মক্কায় প্রবেশ করলে তারা তাদের নিজেদের সাথে আনা খাদ্য ভক্ষণ করতে পারবে না। হারামের অধিবাসীদের খাবারই তাদের খেতে হবে। তাওয়াফের সময় তাদেরকে মক্কার স্থানীয় পোশাক পরিধান করতে হবে। আর এখানে স্মর্তব্য যে,এ স্থানীয় পোশাকে গোত্রীয় দিক প্রতিফলিত হয়েছিল। কোন ব্যক্তি মক্কার স্থানীয় পোশাক সংগ্রহ করতে না পারলে তাকে অবশ্যই দিগম্বর হয়ে পবিত্র কাবার চারপাশে তাওয়াফ করতে হবে। তবে যে কতিপয় (অ-কুরাইশ) আরব গোত্রপতি এ বিষয়টি মেনে নেয় নি তাদের ব্যাপারে স্থির করা হয় যে,তাওয়াফ শেষ করার পর তারা দেহ থেকে পোশাক পরিচ্ছদ বের করে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। কোন ব্যক্তির হক নেই ঐ সব পোশাকে হাত দেয়ার। তবে সবক্ষেত্রেই মহিলারা বিবস্ত্র হয়ে তাওয়াফ করতে বাধ্য ছিল। তাদেরকে (মহিলাদের) তাওয়াফ করার সময় কেবল নিজেদের মাথা একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে বিশেষ ধরনের একটি কবিতা115 গুনগুন করে পড়তে হতো।

খ্রিষ্টান আবরাহার আক্রমণের পর কোন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানের পবিত্র মক্কায় প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে যে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান কোন মক্কাবাসীর বেতনভূক কর্মচারী হতো সে হতো ব্যতিক্রম (অর্থাৎ সে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করতে পারত)। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিজ ধর্ম সম্পর্কে ন্যূনতম কথা বলার অধিকার তার থাকত না।

কুরাইশদের গর্ব ও অহংকার এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল যে,হজ্বের কিছু কিছু আচার-অনুষ্ঠান যা হারামের বাইরে আঞ্জাম দিতে হয় তা তারা বর্জন করেছিল এবং এ কারণে তারা আরাফাতের ময়দানে116 অবস্থান করত না ( আরাফাত’হারামের বাইরে একটি স্থানের নাম যেখানে হাজীদেরকে অবশ্যই যিলহজ্ব মাসের নবম দিবসে যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়।)। অথচ তাদের পূর্বপুরুষগণ (হযরত ইসমাঈল-এর সন্তানগণ) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাকে হজ্ব অনুষ্ঠানের একটি অংশ বলে গণ্য করতেন। আর কুরাইশদের পুরো বাহ্যিক সম্মান ও মর্যাদা পবিত্র কাবা ও হজ্বের এ সব আচার-অনুষ্ঠানের কাছেই ঋণী ছিল। আরব উপদ্বীপের সকল স্থান থেকে জনগণ প্রতি বছর শুষ্ক ও পানিহীন এ মরু এলাকায় হজ্বব্রত পালনের জন্য আসতে বাধ্য ছিল। এখানে যদি কোন তাওয়াফ করার স্থান (পবিত্র কাবা) ও মাশআর (হাজীদের নির্দিষ্ট ইবাদাতের স্থান-যেখানে হাজীরা আরাফাহ্ থেকে বের হয়ে রাত্রিযাপন করে ফজরের সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফরয অবস্থান করার জন্য এবং এরপর তারা মীনায় হজ্বের বাকি কাজগুলো আঞ্জাম দেয়ার জন্য বের হয়ে যায়) না থাকত তাহলে কোন ব্যক্তিই জীবনে একবারের জন্যও এ স্থান অতিক্রম করার ইচ্ছা প্রকাশ করত না।

সামাজিক হিসাব-নিকাশের দৃষ্টিতে এ সব দুর্নীতি ও বৈষম্যের উদ্ভব আসলে এড়ানো সম্ভব নয়। একটি মৌলিক বিপ্লব ও শক্তিশালী আন্দোলনের জন্য বিশ্বের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরীর পরিবেশ অবশ্যই সীমাহীন দুর্নীতি ও কলঙ্কের মধ্যে নিমজ্জিত হতেই হবে।

এ সব বঞ্চনা,আমোদ-প্রমোদ প্রভৃতি পবিত্র মক্কা নগরীর পরিবেশ-পরিস্থিতিকে একজন বিশ্বসংস্কারক নেতার আবির্ভাবের জন্য প্রস্তুত ও উপযুক্ত করে তুলছিল। আর এ বিষয়টি মোটেও অনর্থক ও অসমীচীন হবে না যে,আরবদের পণ্ডিত বলে খ্যাত ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেল যিনি তাঁর শেষ জীবনে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং ইঞ্জিল শরীফ সংক্রান্ত জ্ঞানও অর্জন করেছিলেন তিনি যখনই মহান আল্লাহ্ ও নবীদের সম্পর্কে কথা বলতেন তখনই তিনি মক্কার ফিরআউন আবু সুফিয়ানের ক্রোধ ও উষ্মার শিকার হতেন। আবু সুফিয়ান তখন বলত, এমন স্রষ্টা ও নবীর কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। কারণ আমরা প্রতিমা ও মূর্তিদের দয়া ও কৃপার মধ্যেই আছি।”

6. মহানবীর পিতা আবদুল্লাহ্

যেদিন আবদুল মুত্তালিব তাঁর পুত্র আবদুল্লাহর জীবন মহান আল্লাহর পথে 100 উট কোরবানী করার মাধ্যমে পুনঃক্রয় করেছিলেন তখনও তাঁর (আবদুল্লাহর) জীবনের 24টি বসন্ত অতিবাহিত হয়নি। এ ঘটনার কারণে আবদুল্লাহ্ কুরাইশ বংশীয়দের মধ্যে প্রশংসনীয় মর্যাদা ও খ্যাতির অধিকারী হওয়া ছাড়াও নিজ বংশে,বিশেষ করে আবদুল মুত্তালিবের কাছে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন। কারণ যে জিনিসের জন্য মানুষকে তার জীবনে চড়া মূল্য দিতে হয় এবং বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয় সে জিনিসের প্রতি তার টান সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এ কারণেই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে আবদুল্লাহ্ অস্বাভাবিক ধরনের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।

যেদিন আবদুল্লাহ্ পিতার সাথে কোরবানী করার স্থানে গমন করছিলেন সেদিন তাঁর মধ্যে পরস্পর ভিন্নধর্মী আবেগ ও অনুভূতির উদ্ভব হয়েছিল। পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁর সার্বিক দুঃখ-কষ্ট বরণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অনুভূতি তাঁর গোটা অস্তিত্বকে ঘিরে রেখেছিল;আর এ কারণেই আত্মসমর্পণ করা ব্যতীত তাঁর আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু অন্যদিকে,যেহেতু ভাগ্যবিধি চাচ্ছিল তাঁর জীবন-বসন্তের ফুলগুলোকে শরৎকালীন পত্রের মতো শুকিয়ে বিবর্ণ ও মলিন করে দিতে সে কারণে তাঁর অন্তরের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতাও দেখা দিয়েছিল।

আবদুল্লাহ্ ঈমান এবং আবেগ-অনুভূতি-এ দু টি শক্তির পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে গিয়েছিলেন এবং এ ঘটনাপ্রবাহ তাঁর অন্তরে বেশ কিছু অপূরণীয় অস্বস্তি ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। তবে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবে সমস্যার সমাধান হলে আবদুল মুত্তালিব আমেনার সাথে আবদুল্লাহর বিবাহের ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করার মাধ্যমে এ তিক্ত অনুভূতির তাৎক্ষণিক অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলেন। আবদুল্লাহর জীবনসূত্র যা ছিন্ন-ভিন্ন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল তা জীবনের সবচেয়ে মৌলিক বিষয়ের (অর্থাৎ বিবাহ) সাথে এখন সংযুক্ত হয়ে গেল।

আবদুল মুত্তালিব কোরবানীর স্থল থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় পুত্র আবদুল্লাহর হাত ধরে সরাসরি ওয়াহাব ইবনে আবদে মান্নাফ ইবনে যাহরার গৃহে চলে গেলেন। ওয়াহাবের মেয়ে আমেনার সাথে আবদুল্লাহকে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করলেন। উল্লেখ্য যে,ওয়াহাব-কন্যা আমেনা ছিলেন পুণ্যবতী ও সচ্চরিত্রা নারী। আর তিনি (আবদুল মুত্তালিব) ঐ একই অনুষ্ঠানে আমেনার চাচাতো বোন দালালাকে বিবাহ করেন। মহানবী (সা.)-এর চাচা হযরত হামযাহ্117 এই দালালার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হযরত হামযাহ্ ছিলেন মহানবীর সমবয়সী।

সমসাময়িক ঐতিহাসিক আবদুল ওয়াহ্হাব (মিশর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক,যিনি তারীখে ইবনে আসীরের ওপর কিছু মূল্যবান ও উপকারী টীকা লিখেছেন) উপরিউক্ত ঘটনাকে একটি অসাধারণ ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে লিখেছেন, ঐ দিনই ওয়াহ্হাবের গৃহে আবদুল মুত্তালিবের গমন,তা-ও আবার দু টি মেয়ের বিবাহ প্রস্তাব দেয়া-একটি মেয়েকে নিজে বিয়ে করার জন্য এবং অপর মেয়েকে পুত্র আবদুল্লাহর সাথে বিবাহ দেয়ার জন্য আসলেই সামাজিক লোকাচার ও রীতিনীতি বহির্ভূত। ঐ ঐতিহাসিক দিনে যা তাঁর জন্য শোভনীয় ছিল তা হলো বিশ্রাম নেয়া ও ক্লান্তি-অবসাদ দূর করা। তাঁদের নিজেদের ক্লান্তি দূর করে নিজ নিজ কাজে হাত দেয়াটিই ছিল (তাঁদের জন্য একান্ত) স্বাভাবিক।118

কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি,লেখক যদি বিষয়টিকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করতেন,তাহলে তাঁর পক্ষে তা বিশ্বাস করা সহজ হতো।

যা হোক অতঃপর আবদুল মুত্তালিব বধূবরণের জন্য একটি সময় নির্দিষ্ট করেন। নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে কুরাইশদের প্রচলিত প্রথানুযায়ী হযরত আমেনার পিতৃগৃহে বিবাহ অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়। কিছুদিন আমেনার সাথে একত্রে বসবাস করার পর আবদুল্লাহ্ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শামের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং শাম থেকে ফেরার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমরা এতৎসংক্রান্ত বিশদ বিবরণ পরে যথাস্থানে উল্লেখ করব।

রহস্যজনক চক্রান্তকারীদের আনাগোনা

এতে কোন সন্দেহ নেই যে,ইতিহাসের পাতায় পাতায় জাতিসমূহের উজ্জ্বল ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকসমূহ শিক্ষণীয় বিষয় হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তবে সকল যুগ ও শতাব্দীতে ভালোবাসা ও ঘৃণা,আপোষকামিতা,উপেক্ষা ও শৈথিল্য,সৃজনশীলতা,অভূতপূর্ব বক্তব্য,লেখনী শক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং এ ধরনের আরো অনেক কারণ ইতিহাস রচনা ও লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে এবং ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাগুলোকে মিথ্যা কল্প-কাহিনীর সাথে সংমিশ্রিত করে ফেলেছে। আর এটি হচ্ছে সেই ইতিহাসবেত্তার জন্য এক বিরাট সমস্যা যিনি ইতিহাসশাস্ত্রের তাত্ত্বিক মূলনীতিসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করে সত্য ও মিথ্যাকে পৃথক করে থাকেন।

উপরিউক্ত কারণসমূহ ইসলামের ইতিহাস রচনা ও লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাসমূহের বিকৃতি সাধনে অদৃশ্য হাতসমূহ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য কখনো কখনো বন্ধুদের তরফ থেকে এমন সব শোভাবর্ধনকারী অলংকারিক বক্তব্য প্রদান ও প্রশংসাব্যঞ্জক কথা বলা হয়েছে যেগুলোর মাঝে মিথ্যা ও বানোয়াট হওয়ার নিদর্শন স্পষ্ট বিদ্যমান।

আমরা ইতিহাসে পাঠ করি যে,হযরত আবদুল্লাহর ললাটে সব সময় নবুওয়াতের নূর (আলো) চমকাত।119 আমরা আরো জেনেছি,অনাবৃষ্টির বছরগুলোতে আবদুল মুত্তালিব তাঁর সন্তান আবদুল্লাহর হাত ধরে পাহাড়ের দিকে চলে যেতেন এবং আবদুল্লাহর ললাটের নূরের উসিলায় মহান আল্লাহর কাছে দয়া ও কৃপা প্রার্থনা করতেন।

এ বিষয়টি (আবদুল্লাহর কপালে নবুওয়াতের নূরের অস্তিত্ব) বহু শিয়া-সুন্নী আলেম বর্ণনা করেছেন। আর এ বিষয়টির অসত্য হওয়ার পক্ষে কোন দলিল বিদ্যমান নেই। তবে কতিপয় ইতিহাস গ্রন্থে বিষয়টি এমন এক কল্প-কাহিনী বা উপাখ্যানের উপজীব্য হয়েছে যা আমরা কখনই সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শোভা হিসাবে গ্রহণ করতে পারি না।

ফাতিমা খাসআমীয়ার কাহিনী

ফাতিমা খাসআমীয়াহ্ ছিল ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেলের ভগ্নি। ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেল ছিলেন আরবের অন্যতম পণ্ডিত ও ভবিষ্যদ্বক্তা। তিনি ইঞ্জিল সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের ঘোষণার শুরুতে হযরত খাদীজার সাথে তাঁর কথোপকথন ঐতিহাসিক গ্রন্থাদিতে লিপিবদ্ধ আছে। আমরা তা যথাস্থানে আলোচনা করব।

ওয়ারাকার বোন ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছিল যে,ইসমাঈলের বংশধারায় এক ব্যক্তি নবী হবেন। এ কারণে সে সব সময় তাঁর সন্ধান করত। যেদিন আবদুল মুত্তালিব আবদুল্লাহর হাত ধরে তাঁকে কোরবানীর স্থল থেকে বের হয়ে হযরত আমেনার পিতৃগৃহের দিকে যাচ্ছিলেন তখন ফাতিমা খাসআমীয়াহ্ তার ঘরের পাশে দণ্ডায়মান ছিল। তার চোখ একটি আলোর প্রতি নিবদ্ধ হয় অনেকদিন ধরে সে যার সন্ধান করে এসেছেন। সে বলল, আবদুল্লাহ্! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তোমার পিতা যেসব উট তোমার মুক্তির জন্য কোরবানী করেছেন তা আমি এক শর্তে দিতে প্রস্তুত। আর তা হলো তুমি আমার সাথে সহবাস করবে।” তখন আবদুল্লাহ্ বললেন, এখন আমি আমার পিতার সাথে আছি। এটি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” আবদুল্লাহ্ ঐ দিনই আমেনার সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং একরাত তাঁর সাথে অতিবাহিত করেন। পরের দিন তিনি ফাতিমা খাসআমীয়ার ঘরে ছুটে যান এবং তার পূর্বপ্রদত্ত প্রস্তাবে তিনি যে সম্মত ও প্রস্তুত আছেন তা তাকে জানান। ফাতিমা খাসআমীয়াহ্ বলল, আজ তোমাকে আমার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ তোমার কপালে যে নূর আগে প্রত্যক্ষ করতাম তা এখন আর নেই এবং তোমা থেকে তা চলে গেছে। 120

কখনো কখনো বলা হয়েছে যে,ফাতিমা তার প্রয়োজনের কথা আবদুল্লাহর কাছে প্রকাশ করলে তিনি (আবদুল্লাহ্) তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত দু টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করেন :

أما الحرام فالممات دونه

والحل لأحل فاستبينه

فكيف بالأمر الذي تبغينه

يحمي الكريم عرضه و دينه

“যেখানে এ ব্যাপারে আমি ভাবতেও পারি না সেখানে আমার পক্ষে তোমার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া কিভাবে সম্ভব? মহৎ ব্যক্তি তার নিজ সম্মান ও ধর্ম সংরক্ষণ করে।”

কিন্তু আমেনার সাথে তাঁর বিবাহের তিন দিন অতিবাহিত হতে না হতেই প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা আবদুল্লাহকে ফাতিমা খাসআমীয়ার গৃহপানে তাড়িত করে। ফাতিমা খাসআমীয়াহ্ তখন তাঁকে বলেছিল, তোমার কপালে যে দ্যুতি ছিল সে কারণেই আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই দ্যুতিটি আর নেই। মহান আল্লাহ্ যে স্থানে তা রাখতে চেয়েছিলেন সেখানেই রেখেছেন।” আবদুল্লাহ্ বললেন, হ্যাঁ আমি আমেনাকে বিবাহ করেছি। 121

এ ঘটনাটি বানোয়াট ও মিথ্যা হবার প্রমাণ

এ কাহিনীর জালকারী কিছু কিছু দিক উপেক্ষা করেছে এবং কাহিনীটির মিথ্যা ও কৃত্রিম হওয়ার চি হ্নগুলো দূর করতে পারে নি। যদি সে ঠিক এতটুকু পরিমাণের ওপরই নির্ভর করত যে,একদিন বাজারে অথবা গলিতে আবদুল্লাহর সাথে ফাতিমা খাসআমীয়ার দেখা হলে আবদুল্লাহর কপালে নবুওয়াতের দ্যুতি প্রত্যক্ষ করেছিল;এ দ্যুতি তাকে আবদুল্লাহর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছিল,তাহলে তা বিশ্বাস করা যেত। কিন্তু কাহিনীটির মূল ভাষ্য অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নোক্ত কারণসমূহের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়:

1. এ কাহিনী থেকে প্রতীয়মান হয় যে,যখন ফাতিমা খাসআমীয়াহ্ তার কামনা-বাসনার কথা প্রকাশ করল তখন আবদুল্লাহর হাত পিতা আবদুল মুত্তালিবের হাতের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এমতাবস্থায় এ মেয়েটির পক্ষে তার মনোবাসনা ব্যক্ত করা কি আসলেই সম্ভব এবং আবদুল মুত্তালিবের মতো কুরাইশপ্রধানের সামনে তার এ কথা বলতে কি মোটেও লজ্জা হলো না? কারণ আবদুল মুত্তালিব ছিলেন ঐ ব্যক্তি যিনি মহান আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগীর পথে নিজ সন্তানকে পর্যন্ত কোরবানী করতে মোটেও ভীত ও শঙ্কিত ছিলেন না। আর যদি আমরা বলি,ফাতিমা খাসআমীয়ার মনবাসনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বৈধ ছিল (অর্থাৎ সে আবদুল্লাহর কাছে বৈধ বিবাহের প্রস্তাবই পেশ করেছিল) তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আবদুল্লাহ্ তাঁকে লক্ষ্য করে যে পঙ্ক্তিদ্বয় আবৃত্তি করেছিলেন সেগুলোর সাথে তা মোটেও খাপ খায় না।

2. এ থেকেও জটিলতর হচ্ছে আবদুল্লাহর পুরো ব্যাপারটা। কারণ যে সন্তান পিতার জন্য নিজে নিহত হয়েও অর্থাৎ নিজের জীবন প্রাণ উৎসর্গ করে হলেও সম্মান প্রদর্শন করে সে কিভাবে পিতার সামনে উপরিউক্ত কথাগুলো বলতে পারে? আসলে যে যুবক কয়েক মিনিট আগে তরবারির নিচে জবাই হওয়া থেকে নিস্কৃতি পেয়েছে সে তো তীব্রভাবে আত্মিক-মানসিক অস্থিরতার শিকার। তার পক্ষে কিভাবে এক রমণীর কামনা-বাসনার প্রতি সাড়া দেয়া সম্ভব?! ঐ রমণীর কি তাহলে সময়জ্ঞান বলতে কিছুই ছিল না? অথবা জালকারী কি কাহিনীটির এ সব দুর্বল ও উজ্জ্বল দিকের প্রতি উদাসীন থেকেছে?

কাহিনীর দ্বিতীয় রূপটি আরো বেশি অপমানজনক ও লজ্জাকর। কারণ প্রথমেই আবদুল্লাহ্ (অবৈধ কাজের আহবান শোনামাত্রই) ঐ দুটি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করে প্রস্তাব দানকারিণীকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বলেছিলেন, এই অবৈধ কাজ যা ধর্ম ও মানমর্যাদা নষ্ট করে দেয় তা অপেক্ষা মৃত্যুও আমার জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সহজ।” অতঃপর আত্মমর্যাদাবোধে উদ্দীপ্ত এ যুবকের পক্ষে এ ধরনের বিচ্যুত চিন্তাধারার কাছে নতি স্বীকার ও আত্মসমর্পণ করা কিভাবে সম্ভব হলো অথচ যার এখনো বিয়ের পর তিন রাতের বেশি সময় অতিবাহিত হয় নি। আর এরই মধ্যে যৌন তাড়না তাকে ফাতিমা খাসআমীয়ার গৃহপানে তাড়িত করেছিল!

আমরা কখনই মেনে নিতে পারব না যে,বনি হাশিম গোত্রে প্রতিপালিত আবদুল্লাহর মতো কোন যুবকের মাথায় এ ধরনের তাকওয়াবহির্ভূত চিন্তাধারার উদ্ভব হতে পারে যেখানে আবদুল্লাহকে মহান আল্লাহ্ একজন শ্রেষ্ঠ মহামানবের পিতা হিসাবে মনোনীত করেছেন। অধিকন্তু শিয়া-সুন্নী আলেমগণ মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বতন পিতৃপুরুষ ও গর্ভধারণকারিণীদের চারিত্রিক পবিত্রতার পক্ষে যে সব দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তা এ ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য এবং উপরিউক্ত কাহিনীটি মিথ্যা প্রতিপন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ মিথ্যা কল্পকাহিনী যদি অজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতের মুঠোয় তুলে দেয়া না হতো তাহলে আমরা মূলত তা আলোচনাই করতাম না।

 ‘ কিতাবে পিয়াম্বার গ্রন্থের প্রতি দৃষ্টিপাত

কিতাবে পিয়াম্বার গ্রন্থটিতে যদি দৃষ্টিপাত করুন এবং এ কাহিনীটি লালন করার জন্য লেখক যে সব অধ্যায়ের অবতারণা করেছেন সেগুলোর ব্যাপারে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা-ভাবনা করেন তাহলে এ গ্রন্থের লেখকের আসল উদ্দেশ্যের সাথে আমরা পরিচিত হতে পারব। মহানবী (সা.)-এর জীবনী গল্পাকারে লেখাই হচ্ছে লেখকের মূল উদ্দেশ্য যাতে করে এ গল্পের প্রতি আগ্রহী তরুণগণ মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত অধ্যয়ন করতে আগ্রহী হয়। এটি এরকমই এক মহৎ,পবিত্র ও প্রশংসনীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য,তবে এ শর্তে যে,তা অবশ্যই ধর্মীয় নীতিমালার সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল হতে হবে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,উপরিউক্ত গ্রন্থের ভাষ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে,দুর্বলতম রেওয়ায়েত এবং সবচেয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন কল্পকাহিনীই হচ্ছে লেখকের মূল দলিল;আবার কখনো কখনো লেখক নিজ থেকেই এগুলোর সাথে কয়েকগুণ বেশি বানোয়াট কথাবার্তা ও ভিত্তিহীন তথ্য যোগ করেছেন।

ফাতিমা খাসআমীয়ার কাহিনীটি ঠিক এমনই যা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। যদি ধরে নেয়া হয় যে,উক্ত গল্পটি একটি মৌলিক গল্প বা কাহিনী,তারপরেও ঘটনাটির মূল বিবরণ ঠিক এটিই যা আদি ঐতিহাসিক সূত্রসমূহ থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।122

‘মহানবী’(সা.) গ্রন্থের লেখক,এমন সব ঘৃণ্য ও মর্যাদাহানিকর কথা অলঙ্কারসূচক গুণ হিসাবে এ ঘটনার সাথে উল্লেখ করেছেন যা বনি হাশিম গোত্রের মান-সম্মান,বিশেষ করে মহানবী (সা.)-এর শ্রদ্ধেয় পিতার খোদাভীরুতা ও পূতঃপবিত্র চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করে। আর এভাবে লেখক চেয়েছেন,যে গল্প বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে ভিত্তিহীন তা অধিকতর সুপাঠ্য করতে। লেখক এমনভাবে সরলমতি আরব ললনা ফাতিমা খাসআমীয়ার চারিত্রিক আচার-আচরণ বর্ণনা করেছেন যেন দীর্ঘকাল অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত ছিল।

লেখক এমনভাবে এ রমণীর প্রতি আবদুল্লাহর প্রেমাসক্তি বর্ণনা করেছেন,আবদুল্লাহর সুউচ্চ মর্যাদার সাথে যার ক্ষুদ্রতম সম্পর্কও নেই। আবদুল্লাহর সুমহান মর্যাদার প্রমাণ এটিই যে,মহান আল্লাহ্ তাঁরই ঔরসে নবুওয়াত ও তাকওয়ার নূর আমানতস্বরূপ স্থাপন করেছিলেন।

মহানবী’গ্রন্থের পাঠকবর্গের মনে রাখা উচিত যে,এ গ্রন্থের কিছু কিছু বিষয় ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে এবং এ গ্রন্থের বেশ কিছু আলোচ্য বিষয়ের কাহিনীভিত্তিক ও ঔপন্যাসিক দিকও আছে। এ গ্রন্থের অনেক আলোচ্য বিষয়ই পাশ্চাত্যের লেখকদের থেকে ধার করা হয়েছে যেগুলোর কোন স্পষ্ট যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ আমাদের সামনে নেই। যেমন উক্ত গ্রন্থের 102 পৃষ্ঠায় আবদুল্লাহর বিয়ের রাতের ঘটনাপ্রবাহ ও আরবীয় নৃত্যপদ্ধতি সম্পর্কে এবং আমেনার সাথে আবদুল্লাহর বিয়ের রাতে আবদুল্লাহর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার কারণে 200 কুমারী মেয়ে হিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করেছিল-এ উপাখ্যানটি গীবন লিখিত রোমান সাম্রাজ্যের পতন’গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তাই এ গ্রন্থের পাঠকদের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি তাঁরা যেন এ গ্রন্থ পাঠ করার সময় এর দুর্বল ও শক্তিশালী দিকগুলো বেশি বেশি বিবেচনায় আনেন।

ইয়াসরিবে আবদুল্লাহর মৃত্যু

আমেনার সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে আবদুল্লাহর জীবনের নব অধ্যায়ের সূচনা হয় এবং আমেনার মতো স্ত্রী লাভ করার কারণে তাঁর জীবন আলোকিত হয়ে যায়। কিছুদিন অতিবাহিত হলে পবিত্র মক্কা থেকে একটি বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি শামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাওয়ার ঘণ্টা বেজে উঠলে কাফেলা যাত্রা শুরু করে এবং শত শত হৃদয়কেও যেন সেই সাথে নিয়ে যায়। এ সময় হযরত আমেনা গর্ভবতী ছিলেন। কয়েক মাস পরে দূর থেকে কাফেলার নিশান দেখা গেলে কিছু ব্যক্তি ঐ কাফেলায় তাদের নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য শহরের বাইরে গমন করল।

হযরত আবদুল মুত্তালিব তাঁর পুত্র আবদুল্লাহর অপেক্ষায় ছিলেন। পুত্রবধু আমেনার অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি কাফেলার মাঝে আবদুল্লাহকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরছিল। কিন্তু কাফেলার মাঝে তাঁর কোন চি‎‎ হ্নই পাওয়া গেল না। খোঁজাখুঁজির পর তাঁরা জানতে পারলেন,আবদুল্লাহ্ ফেরার পথে ইয়াসরিবে (মদীনায়) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই বিশ্রাম ও সফরের ক্লান্তি দূর করার জন্য তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কিছুদিন অতিবাহিত করতে চেয়েছেন। এ খবর শোনার পর আবদুল মুত্তালিব ও আমেনার মুখমণ্ডলে দুশ্চিন্তা ও বিষাদের ছায়া বিস্তার করল এবং তাঁদের নয়ন বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।

আবদুল মুত্তালিব জ্যেষ্ঠ পুত্র হারেসকে ইয়াসরিবে গিয়ে আবদুল্লাহকে মক্কায় নিয়ে আসার আদেশ দিলেন। হারেস ইয়াসরিবে পৌঁছে জানতে পারলেন যে,বাণিজ্য কাফেলা প্রস্থানের এক মাস পরে যে অসুস্থতার কারণে আবদুল্লাহ্ যাত্রাবিরতি করেছিলেন সেই অসুস্থতায় মৃতুবরণ করেছেন। হারেস মক্কায় ফিরে এসে পুরো ঘটনা হযরত আবদুল মুত্তালিবকে জানালেন এবং হযরত আমেনাকেও তাঁর স্বামীর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করলেন। আবদুল্লাহ্ মৃত্যুর আগে যা কিছু উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে গিয়েছিলেন তা ছিল নিম্নরূপ : পাঁচটি উট,এক পাল দুম্বা এবং উম্মে আইমান নাম্নী এক দাসী যিনি পরবর্তীকালে মহানবী (সা.)-কে প্রতিপালন করেছিলেন ।123