চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98344
ডাউনলোড: 8163


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98344 / ডাউনলোড: 8163
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

আবু তালিবের অভিভাবকত্ব

আবু তালিবের মহান ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা প্রসঙ্গে আমরা এ গ্রন্থের একটি বিশেষ অংশে (নবুওয়াতের 10ম বর্ষের ঘটনাবলী সংক্রান্ত অধ্যায়) আলোচনা করব। সেখানে আমরা বিশুদ্ধ দলিল ও সূত্রের ভিত্তিতে মহানবী (সা.)-এর প্রতি তাঁর ঈমান এবং আত্মসমর্পণের বিষয়েও আলোচনা করব। কিন্তু এখন আমরা মহানবীর অভিভাবক হিসাবে হযরত আবু তালিবের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ঘটনা উল্লেখ করব।

কতিপয় গৌরবোজ্জ্বল কারণে হযরত আবু তালিব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কারণ আবু তালিব ছিলেন মহানবীর পিতা হযরত আবদুল্লাহর সহোদর ভ্রাতা।150 তিনি দানশীলতা,বদান্যতা,পরোপকার ও জনহিতকর কাজে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ কারণেই হযরত আবদুল মুত্তালিব তাঁর অনাথ নাতির লালন-পালন করার জন্য আবু তালিবকে মনোনীত করেছিলেন। স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস তাঁর অতীব মূল্যবান অবদানের সাক্ষী যা আমরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব।

কথিত আছে যে,মহানবী (সা.) দশ বছর বয়সে পিতৃব্য আবু তালিবের সাথে একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর যেহেতু এ যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসসমূহে সংঘটিত হয়েছিল সেহেতু উক্ত যুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছিল ফিজার’। ইতিহাসে ফিজার যুদ্ধ সংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা এসেছে।151

শামদেশ (সিরিয়া) সফর

কুরাইশ বংশীয় বণিকগণ যথারীতি প্রতি বছর অন্তত একবার শামদেশে গমন করত। হযরত আবু তালিব কুরাইশদের বাৎসরিক এ বাণিজ্যিক সফরে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যে ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি মুহূর্তের জন্য নিজের কাছ থেকে পৃথক হতে দিতেন না তাঁকে কার কাছে রেখে যাবেন এতৎসংক্রান্ত সমস্যাটির এভাবে সমাধান করলেন যে,তিনি তাঁকে মক্কায় রেখে যাবেন এবং কতিপয় ব্যক্তিকে তাঁর দেখাশোনার দায়িত্ব দেবেন। কিন্তু কাফেলার প্রস্থানের মুহূর্তে মহানবীর চোখ অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে গেল এবং তাঁর অভিভাবক আবু তালিবের কাছ থেকে (কিছুদিনের জন্য হলেও) এ বিচ্ছেদ তাঁর কাছে অত্যন্ত কঠিন বলে গণ্য হলো। মহানবীর দুঃখভারাক্রান্ত মুখমণ্ডল হযরত আবু তালিবের অন্তরে আবেগ-অনুভূতির প্রলয়ঙ্কর তুফানের সৃষ্টি করল। তিনি অবশেষে কষ্ট সংবরণ করে হলেও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজের সাথে নিলেন।152

মহানবীর বারো বছর বয়সের এ সফর ছিল তাঁর অন্যতম আনন্দঘন ভ্রমণ। কারণ এ সফরে তিনি মাদইয়ান,ওয়াদী-উল কুরা ও সামুদ জাতির আবাসস্থল অতিক্রম করেছিলেন। তিনি শাম দেশের মনোজ্ঞ প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীও অবলোকন করেছিলেন। কুরাইশ কাফেলাটি তখনও গন্তব্যস্থলে পৌঁছে নি ঠিক তখন বুসরা নামক স্থানে এমন এক ঘটনা সংঘটিত হয় যার জন্য হযরত আবু তালিবের সফর সংক্রান্ত কর্মসূচীর মধ্যে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। নিচে এতৎসংক্রান্ত বিশদ বিবরণ প্রদান করা হলো :

অনেক বছর যাবৎ বাহীরা নামের একজন খ্রিষ্টান পাদরী বুসরা নামক স্থানে একটি বিশেষ ধর্মীয় উপাসনালয়ে উপাসনা করতেন এবং তিনি সেখানকার খ্রিষ্টানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। বাণিজ্যিক কাফেলাসমূহ যাত্রাপথে ঐ স্থানে বিশ্রামের জন্য যাত্রাবিরতি করত এবং কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য তাঁর কাছে যেত। সৌভাগ্যবশত বাহীরা কুরাইশ বাণিজ্য কাফেলার মুখোমুখি হন। তাঁর দৃষ্টি আবু তালিবের ভ্রাতুষ্পুত্রের ওপর পড়লে তিনি খুবই আকৃষ্ট হন। শিশু মহানবীর দৃষ্টিতে এমন এক রহস্যের নিদর্শন ছিল যা তাঁর অন্তরে লুক্কায়িত ছিল। বেশ কিছুক্ষণ তিনি মহানবীর দিকে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে তাকিয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন, এ শিশুটি আপনাদের মধ্যে কার সন্তান? ঐ কাফেলার কতিপয় ব্যক্তি আবু তালিবের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, (শিশুটি) আবু তালিবের আত্মীয়।” আবু তালিব তখন বললেন, সে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র।” বাহীরা বললেন, এ শিশুর এক অতি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। এ সেই প্রতিশ্রুত নবী যাঁর সর্বজনীন নবুওয়াত ও বিশাল হুকুমত (রাজত্ব) সম্পর্কে আসমানী গ্রন্থসমূহে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এ সেই নবী যাঁর নাম এবং যাঁর পিতা ও পরিবারের নামও আমি ধর্মীয় গ্রন্থাদিতে পড়েছি এবং আমি জানি তিনি কোথা থেকে উত্থিত হবেন এবং কিভাবে তিনি তাঁর নব্য প্রতিষ্ঠিত ধর্মকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করবেন153 ,তবে আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে তাঁকে ইয়াহুদীদের চোখের আড়ালে রাখা। কারণ তারা যদি বুঝতে পারে,তাহলে তারা তাঁকে হত্যা করবে।”

অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা বিশ্বাস করেন যে,শামদেশ সফরকালে আবু তালিবের ভ্রাতুষ্পুত্র ঐ স্থানটিই আসলে অতিক্রম করেন নি। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার নয় যে,মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা আবু তালিব তাঁকে কোন ব্যক্তির সাথে পবিত্র মক্কায় ফেরত পাঠিয়ে ছিলেন কি না? আর এ বিষয়টি অসম্ভব বলেই মনে হয় যে,সন্ন্যাসীর কথা শোনার পর আবু তালিব তাঁকে নিজের কাছ থেকে পৃথক করে দেবেন অথবা তিনি শামদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মদের সাথে পবিত্র মক্কার পথে রওয়ানা হয়ে যেতে পারেন।  আবার কখনো বলা হয় যে,আবু তালিব বাহীরার কাছ থেকে শোনার পরও হযরত মুহাম্মদকে নিজের সাথে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শামদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রাচ্যবিদদের মিথ্যাচার

আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এ গ্রন্থে পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদদের ভুল-ভ্রান্তি এবং কখনো কখনো তাঁদের অবৈধ মিথ্যাচার ও অপবাদের ওপরও হাত দেব। যার ফলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে,তাঁরা কতটা জেনে-শুনে ও ইচ্ছা প্রণোদিত হয়ে সরল ব্যক্তিদের মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রয়াস চালিয়েছেন!

পাদ্রী বাহীরার সাথে শিশু মহানবীর সাক্ষাৎ আসলে একটি অত্যন্ত সাদামাটা ঘটনা। কিন্তু প্রাচ্যবিদরা বহু শতাব্দী পরে এ ঘটনাকে তাঁদের বক্তব্যের দলিল হিসাবে উত্থাপন করে জোর দিয়ে বলতে চান যে,হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উন্নত ও মহান শিক্ষামালা যা তিনি 28 বছর পরে জনসমক্ষে প্রকাশ ও প্রচার করেছিলেন এবং আবে হায়াতের (অমৃত) মতো মৃতপ্রায় আরব জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন আসলে তা তিনি উপরিউক্ত সফরেই বাহীরা থেকে শিখেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা বলতে চান যে,হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেহেতু নির্মল,পবিত্র,স্বচ্ছ হৃদয়,পুণ্য আত্মা এবং প্রকৃতি প্রদত্ত অসাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারী এবং সূক্ষ্মভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে সক্ষম ছিলেন তাই তিনি উক্ত সাক্ষাতেই পূর্ববর্তী নবী ও আদ-সামূদের মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের কাহিনী এবং তাঁর ধর্মের অধিকাংশ প্রাণসঞ্জীবনী শিক্ষা ও বিধান এ খ্রিষ্টান পাদ্রীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন।

নিঃসন্দেহে উপরিউক্ত বক্তব্য অলীক কল্পনা বৈ আর কিছুই নয় এবং মহানবীর জীবনেতিহাসের সাথে তা বিন্দুমাত্র খাপ খায় না। আর বুদ্ধিবৃত্তিক মাপকাঠি ও নীতিমালাও তা প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের এ বক্তব্যের পক্ষে দলিলগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :

1. হযরত মুহাম্মদ (সা.) সকল ঐতিহাসিকের মতে নিরক্ষর (উম্মী) ছিলেন। তিনি লিখতে-পড়তে জানতেন না। আর শামদেশ সফরের সময় তাঁর বয়স 12 বছরও পূর্ণ হয় নি। এমতাবস্থায় কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি বিশ্বাস করতে পারবে যে,যে শিশু লেখাপড়া করে নি এবং যার বয়সের বারোটি বসন্তও অতিক্রান্ত হয় নি সে কি তাওরাত ও ইঞ্জিল থেকে বেশ কিছু বিষয় শিখে নিয়ে 40 বছর বয়সে তা ওহী হিসাবে প্রচার এবং এক নতুন শরীয়তের প্রবর্তন করেছে? এ ধরনের বিষয় স্বাভাবিক নিয়ম-নীতিমালার বাইরে এবং মানুষের সামর্থ্য ও ক্ষমতা বিবেচনা করলে তা অসম্ভব বলেই গণ্য করা যায়।

2. যে সময়ের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাওরাত ও ইঞ্জিল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন এ সফরের সময়কাল তার চেয়েও অতি সংক্ষিপ্ত ছিল। কারণ এ সফর ছিল বাণিজ্যিক সফর। যাওয়া-আসা এবং বিদেশে অবস্থানকাল সর্বসাকুল্যে 4 মাসের বেশি লাগত না। কারণ কুরাইশগণ বছরে দু বার সফরে বের হতো। শীতকালে তারা ইয়েমেনের দিকে এবং গ্রীষ্মকালে শামদেশের দিকে সফর করত। তাই এত অল্প সময়ের মধ্যে যে,তাদের পুরো সফর কাল 4 মাসের বেশি হতে পারে এ কথা কল্পনা করা যায় না। আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ব্যক্তিগণও এত অল্প সময়ের মধ্যে এ দু বৃহৎ ধর্মীয় গ্রন্থ শিক্ষা ও আয়ত্ত করতে সক্ষম হবেন না। একজন নিরক্ষর শিশুর পক্ষে তো এ কাজ মোটেও সম্ভব নয়। এ ছাড়াও তিনি পুরো এ চার মাস পাদ্রী বাহীরার সাথে ছিলেন না;বরং শামদেশ যাওয়ার পথে কোন এক স্থানে এ সাক্ষাৎটি হয়েছিল। আর গোটা সাক্ষাৎকাল বড় জোর কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল।

3. ঐতিহাসিক তথ্য ও বিবরণাদি থেকে প্রমাণিত হয় যে,শিশু মহানবীকে নিজের সাথে শামদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেই আবু তালিব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁদের প্রকৃত গন্তব্যস্থল বুসরা ছিল না;বরং বুসরা ছিল শামে যাওয়ার পথে অবস্থিত একটি এলাকা যেখানে বাণিজ্যিক কাফেলাসমূহ বিশ্রাম করার জন্য কখনো কখনো যাত্রাবিরতি করত। তাই এটি কিভাবে সম্ভব যে,মহানবী সেখানে অবস্থান করে তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষায় ব্রত হবেন? আর যদি বলি যে,আবু তালিব তাঁকে নিজের সাথে শামে নিয়ে গিয়েছিলেন অথবা সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে মক্কায় ফিরে গিয়েছিলেন অথবা অন্য কোন ব্যক্তির সাথে তিনি তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাহলে কোন অবস্থায়ই বুসরা আবু তালিবের বাণিজ্যিক কাফেলার প্রকৃত গন্তব্যস্থল ছিল না। যার ফলে কাফেলা উক্ত অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আর মহানবীও সেখানে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করবেন।

4. যদি মহানবী উক্ত পাদ্রীর কাছ থেকে কতিপয় বিষয় শিখে থাকেন তাহলে তা অবশ্যই কুরাইশদের মধ্যে খ্যাতি লাভ করত এবং সকলেই ফেরার পর তা বর্ণনা করত। তা ছাড়া মহানবীও তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে দাবি করতে পারতেন না যে, হে লোকসকল! আমি নিরক্ষর ও লেখাপড়া শিখি নি।” অথচ মহানবী তাঁর রিসালাত ও নবুওয়াত উক্ত শিরোনামেই শুরু করেছিলেন। আর তখন মক্কার কোন ব্যক্তি তাঁকে বলেনি যে, হে মুহাম্মদ! তুমি তোমার বারো বছর বয়সে বুসরায় এক পাদরীর কাছে পাঠ নিয়েছিলে (তাওরাত ও ইঞ্জিল শিখেছিলে)। আর এ সব উজ্জ্বল সত্যসমূহ তাঁর কাছ থেকেই আয়ত্ত করেছ।”

মক্কার মুশরিকগণ তাঁর প্রতি সকল প্রকার অপবাদ আরোপ করেছিল। যাতে করে তারা মহানবীর বিরুদ্ধে কোন দলিল-প্রমাণ পেতে পারে সেজন্য তারা পবিত্র কোরআনের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করত। এমনকি তারা যখন দেখতে পেত যে,মহানবী কখনো কখনো মারওয়া পাহাড়ের একজন খ্রিষ্টান দাসের পাশে বসে রয়েছেন তখন তারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বলত, মুহাম্মদ তার বাণী এ গোলামটির কাছ থেকে শিখেছে।” তাই পবিত্র কোরআন তাদের এ অযৌক্তিক অপবাদ খণ্ডন করে বলেছে :

) و لقد نعلم أنّهم يقولون إنّما يعلّمه بشر لسان الذي يلحدون إليه أعجميّ و هذا لسان عربيّ مبين(

“তাদের এ বক্তব্যের ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। তারা বলে যে,এক মানুষ তাকে এ কোরআন শিক্ষা দেয়,কিন্তু যে ব্যক্তির (খ্রিষ্টান দাস) প্রতি তারা ইঙ্গিত করেছে তার ভাষা তো অনারবীয় (আজামী) আর এ গ্রন্থটি পরম বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ।” (সূরা নাহল : 103)

কিন্তু প্রাচ্যবিদদের এ অপবাদ না পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে,আর না কোন সুযোগসন্ধানী কুরাইশ তা মহানবীর বিরুদ্ধে দলিল হিসাবে ব্যবহার করেছে। আর এ থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে,এ অপবাদ আসলে আমাদের সমসাময়িক কালের প্রাচ্যবিদদের মস্তিষ্কপ্রসূত।

5. পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের যে সব কাহিনী ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো তাওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণিত কাহিনীগুলোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ দু গ্রন্থে নবী-রাসূলদের কাহিনী অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণ্যভাবে বর্ণিত হয়েছে যা কখনই বুদ্ধিবৃত্তিক ও যৌক্তিক নীতিমালার সাথে খাপ খায় না। পবিত্র কোরআনের সাথে এ দু গ্রন্থের তুলনা করলে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে,পবিত্র কোরআনের বিষয়বস্তু এ দু গ্রন্থ থেকে নেয়া হয় নি। আর যদি ধরেও নেয়া হয় যে,হযরত মুহাম্মদ (সা.) পূর্ববর্তী জাতি ও উম্মতদের কাহিনী সংক্রান্ত তথ্য ও জ্ঞান বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়ম অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিভিন্ন গ্রন্থ ও অধ্যায় হতে গ্রহণ করেছেন তাহলে অবশ্যই তাঁর বক্তব্য ও বাণীর সাথে কুসংস্কার ও কল্পকাহিনী মিশ্রিত হয়ে যাবে।155

6. শামদেশ গমনের পথে অবস্থিত বুসরা এলাকার খ্রিষ্টান পাদরী যদি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো একজন নবীকে প্রশিক্ষিত করে সমাজকে উপহার দেয়ার মতো এতটা ধর্মীয় ও তাত্ত্বিক জ্ঞান ও তথ্যাবলীর অধিকারী হতেন তাহলে কেন তিনি খ্যাতি অর্জন করেন নি? কেন তিনি অজ্ঞাত রয়ে গেলেন? কেন তিনি মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রশিক্ষিত করেন নি,অথচ তাঁর আশ্রম ও উপাসনালয়ে সর্বদা জনতা যিয়ারত করতে আসত?

7. খ্রিষ্টান লেখকগণও মহানবী হযরত মুহাম্মদকে একজন বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যক্তি হিসাবেই জানেন। আর পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী পূর্ববর্তী নবী-রাসূল এবং জাতিসমূহের কাহিনী ও ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর কোন তথ্যই জানা ছিল না। ঐ সব নবী-রাসূল এবং জাতি সংক্রান্ত জ্ঞান তিনি কেবল ওহী মারফত লাভ করেছেন-অন্য কোন সূত্র থেকে পান নি। সূরা কাসাসের 44 নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে :

) و ما كنت بجانب الغربي إذ قضينا إلى موسى الأمر و ما كنت من الشّاهدين(

“যখন আমি মূসাকে রিসালাতের দায়িত্বভার প্রদান করেছিলাম তখন আপনি তুর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি তা প্রত্যক্ষও করেন নি।”

সূরা হুদের 49 নং আয়াতে হযরত নূহ (আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে :

) تلك من أنباء الغيب نوحيها إليك ما كنت تعلمها أنت و لا قومك من قبل هذا(

“এগুলো হচ্ছে অদৃশ্যজগতের সংবাদ যা আমরা আপনার প্রতি ওহী করেছি। না আপনি এর আগে এ সব সংবাদ ও কাহিনী সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন,আর না আপনার সম্প্রদায় (এগুলো জানত)।”

এ সব আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে,মহানবী এ সব ঘটনা ও কাহিনী সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন না। সূরা আলে ইমরানের 44 নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে :

) ذلك من أنباء الغيب نوحيه إليك و ما كنت لديهم إذ يُلقون أقلامهم أيّهم يكفل مريم و ما كنت لديهم إذ يختصمون(

“এটি হচ্ছে অদৃশ্য জগতের সংবাদ যা আপনার প্রতি আমরা ওহী করেছি;আর আপনি তাদের কাছে ছিলেন না যখন তারা লটারী করছিল যে,কে তাদের মধ্য থেকে মরিয়মের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে? (তাদের প্রত্যেকেই চাচ্ছিল যে,সে এ গৌরবের অধিকারী হবে) এবং তারা যখন এ ব্যাপারে পরস্পর বিবাদ করছিল তখনও আপনি তাদের নিকট ছিলেন না।”

তাওরাত গ্রন্থ সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা

নবী-রাসূলদের কাহিনী বর্ণনা করার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থ এতটা অসংলগ্ন কথাবার্তা,আলোচনা ও বক্তব্যে ভরপুর যে,তা কখনই ওহীর সাথে সম্পর্কিত করা সম্ভব নয়। আমরা এতৎসংক্রান্ত তাওরাত থেকে কিছু নমুনা পেশ করব যার ফলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে যে,মহানবী (সা.) যদি খ্রিষ্টান পাদ্রী বাহীরার কাছ থেকেই পবিত্র কোরআন শিখে থাকবেন তাহলে পবিত্র কোরআনে কেন তাওরাতে বর্ণিত জঘন্য ও ঘৃণ্য বিষয়সমূহের কোন অস্তিত্ব নেই? যেমন :

1. তাওরাতের সৃষ্টি’সংক্রান্ত পুস্তিকার 32 নং অধ্যায়ের 25-30 নং বাক্যে বর্ণিত আছে,মহান আল্লাহ্ এক রাতে প্রভাত হওয়া পর্যন্ত হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর সাথে কুস্তি লড়েছিলেন!

2. মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-কে মিথ্যা বলেছিলেন, যদি এ গাছের ফল খাও তাহলে তুমি মারা যাবে? অথচ যদি তাঁরা ঐ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করতেন তাহলে মহান আল্লাহর ন্যায় ভালো-মন্দ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতেন! যেহেতু তাঁরা (ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল) খেয়েছিলেন তাই তাঁরা (ভালো-মন্দ সম্পর্কে) জ্ঞাত হয়েছিলেন!156

3. তাওরাত হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর দু জন ফেরেশতার অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করেছে : খোদা দু জন ফেরেশতার সাথে নিচে (ভূপৃষ্ঠে) অবতরণ করলেন যাতে করে তিনি মানব জাতির ব্যাপারে যাচাই করতে পারেন যে,যা কিছু তাঁর কাছে পৌঁছায় তা সত্য না মিথ্যা। এ কারণেই তিনি ইবরাহীমের কাছে প্রকাশিত হলেন। ইবরাহীম বললেন, আপনাদের পা ধুয়ে দেয়ার জন্য কি পানি আনব? খোদা ও ফেরেশতাদ্বয় ক্লান্ত ছিলেন। তাই তাঁরা বিশ্রাম করলেন এবং খাদ্য গ্রহণ করলেন।157

সম্মানিত পাঠকবর্গ! আপনারা পবিত্র কোরআনের কাহিনীগুলো অধ্যয়ন করে বিচার করুন যে,এ কথা বলা কি সম্ভব,পবিত্র কোরআন যা এত বড় সম্মানের অধিকারী সে গ্রন্থটি নবী-রাসূলদের সাথে সংশ্লিষ্ট কাহিনীগুলো তাওরাত থেকে ধার করেছে? যদি তাওরাত থেকেই নিয়ে থাকে তাহলে তাওরাতের উপরিউক্ত কুসংস্কারগুলোর লেশমাত্রও কেন পবিত্র কোরআনের মধ্যে নেই?

ইঞ্জিলের প্রতি দৃষ্টিপাত

আমরা এখানে ইঞ্জিল থেকে তিনটি বিষয় বর্ণনা করব যার ফলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে যে,মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআনের উৎস কি এ ইঞ্জিল না অন্য কোথাও?

হযরত ঈসা মসীহ্ (আ.)-এর মুজিযা

হযরত ঈসা (আ.) মা এবং শিষ্যদের সাথে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। ইত্যবসরে মদ শেষ হয়ে গেলে তিনি সাত মশক পানি অলৌকিকভাবে মদে রূপান্তরিত করে দিলেন।158 ঈসা (আ.) একটি পেয়ালা নিয়ে তাদের হাতে দিয়ে বললেন, পান কর। কারণ এটি হচ্ছে আমার রক্ত। 159

কিন্তু সম্মানিত পাঠকবর্গ! আপনার ইতোমধ্যে জেনেছেন যে,মদ্যপান সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের যুক্তি এতৎসংক্রান্ত ইঞ্জিলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে লোকসকল! মদ ও জুয়া যে কোন ধরনেরই হোক না কেন-তা অপবিত্র এবং শয়তানের কর্ম। তাই এগুলো থেকে দূরে থাক। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে। 160 তাই এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) কি পবিত্র কোরআন বুসরার খ্রিষ্টান পাদ্রী বাহীরার কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন?

বর্তমানে বিদ্যমান ইঞ্জিল হযরত ঈসাকে একজন দুর্ভাগা ব্যক্তি’হিসাবে পরিচিত করিয়ে দেয় যিনি ছিলেন তাঁর মায়ের প্রতি নির্দয়।161 অথচ পবিত্র কোরআন ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারে ইঞ্জিলের উপরিউক্ত বক্তব্যের ঠিক বিপরীতটিই উল্লেখ করেছে :

) وبّرا بوالدتي و لم يجعلني جبّارا شقيّا(

“...আমাকে আমার জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি পুণ্য করার আদেশ দিয়েছেন এবং তিনি আমাকে দুর্ভাগা,অত্যাচারী ও অবাধ্য করেন নি।” (সূরা মরিয়ম : 32)

ন্যায়পরায়ণ এবং সকল গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত ব্যক্তিগণ পবিত্র কোরআনের কাহিনী ও বিধি-বিধানসমূহ যদি তাওরাত ও ইঞ্জিলের সাথে তুলনা করেন তাহলে স্পষ্টভাবে অনুধাবন করবেন যে,তাওরাত ও ইঞ্জিল পবিত্র কোরআনের ক্ষুদ্রতম প্রামাণিক উৎস হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না।162

 

অষ্টম অধ্যায় : মহানবী (সা.)-এর যৌবনকাল

সমাজপতি ও নেতাদের অবশ্যই ধৈর্যশীল,শক্তিশালী,সাহসী,বীর এবং সুমহান উদার আত্মার অধিকারী হতে হবে।

ভীরু,কাপুরুষ,দুর্বল চিত্তের অধিকারী,ইচ্ছাহীন ও ঢিলাঢালা ব্যক্তিগণ কিভাবে সমাজকে আঁকা-বাঁকা পথ অতিক্রম করিয়ে (ইপ্সিত লক্ষ্যপানে) নিয়ে যেতে পারবে? তারা কিভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে? তারা কিভাবে তাদের নিজ অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বকে অন্যদের বিকৃতি সাধন করা থেকে রক্ষা করবে?

নেতার হৃদয় ও আত্মার উদারতা ও মহত্ত্ব এবং তাঁর শারীরিক ও মানসিক শক্তি তাঁর অনুসারীদের ওপর আশ্চর্যজনক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। যখন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে মিশরের প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করেন তখন তিনি মিশরের মজলুম জনগণের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে,তদানীন্তন স্বৈরাচারী প্রশাসনের অত্যাচারে মিশরের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তিনি উক্ত চিঠিতে তাঁর নিযুক্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে আত্মিকভাবে সাহসী ও বীর বলে অভিহিত করেছিলেন। এখন আমরা উক্ত চিঠি থেকে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অংশ বর্ণনা করছি। হযরত আলী (আ.) এ চিঠিতে একজন দায়িত্বশীল নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলী বর্ণনা করেছেন :

أمّا بعد فقد بعثت إليكم عبدا من عباد الله لا ينام أيّام الخوف و لا ينكل عن الأعداء ساعات الرّوع. أشدّ على الفجّار من حريق النّار و هو مالك بن الحارث أخو مذحج فاسمعوا له و اطيعوا أمره فيما طابق الحقّ,فإنّه سيف من سيوف الله لا كليل الظّبة و لا نابى الضّريبة.

আমি তোমাদের কাছে মহান আল্লাহর একজন বান্দাকে প্রেরণ করেছি যে ভয়ের দিনগুলোতে ঘুমায় না এবং ভীতিপ্রদ মুহূর্তগুলোতে শত্রুদের থেকে বিরত থাকে না (পলায়ন করে না);অপরাধীদের প্রতি আগুনের দহন ক্ষমতার চেয়ে সে অধিকতর কঠোর। এ ব্যক্তিটি মাযহাজ গোত্রভুক্ত মালেক ইবনে হারেস (আল আশতার)। তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আদেশ পালন করবে যদি তা সত্য ও ন্যায়সংগত হয়;কারণ সে হচ্ছে মহান আল্লাহর তরবারি যার ধার কখনই নষ্ট হবে না এবং যার আঘাত কখনই ব্যর্থ হবে না। 163

মহানবীর আধ্যাত্মিক শক্তি

কুরাইশদের প্রিয়ভাজন ব্যক্তিটির (মুহাম্মদ) ললাটে শৈশব ও কৈশোর থেকেই শক্তি,সাহস ও দৃঢ়তার নিদর্শন স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছিল। তিনি 15 বছর বয়সে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে কুরাইশদের একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন যা ফিজারের যুদ্ধ নামে খ্যাতি লাভ করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ব ছিল চাচাদের কাছে তীর সরবরাহ করা। ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে এ বাক্যটি মহানবীর নিকট থেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন : মহানবী (সা.) বলেছেন,

كنت أنبّل على أعمامي

“আমি আমার চাচাদের কাছে তীর পৌঁছে দিতাম যাতে করে তাঁরা তা নিক্ষেপ করেন। 164

ঐ অতি অল্প বয়সে মহানবীর যুদ্ধে যোগদান আমাদেরকে তাঁর অসীম সাহসের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় এবং এ থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে,কেন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবীর ব্যাপারে বলেছেন,

كنّا إذا احمرّ البأس اتّقينا برسول الله (ص) فلم يكن أحد منّا أقرب إلى العدوّ منه

“যখনই যুদ্ধের বিভীষিকা তীব্র হয়ে যেত তখনই আমরা রাসূল (সা.)-এর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করতাম। কারণ আমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি তাঁর চেয়ে শত্রুর অধিকতর নিকটবর্তী ছিল না। 165

আমরা ইনশাল্লাহ্ মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের জিহাদ’সংক্রান্ত অধ্যায়ে ইসলামের সমরনীতির দিকে ইঙ্গিত করব। আর সেখানে আমরা মুসলমানদের যুদ্ধ ও সংগ্রাম করার পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করব। এ সব যুদ্ধ ও সামরিক অভিযান মহানবী (সা.)-এর নির্দেশেই বাস্তবায়িত হয়েছে। আর ঠিক এ বিষয়টিই ইসলামের ইতিহাসের অত্যন্ত আকর্ষণীয় আলোচ্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত।