চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98289
ডাউনলোড: 8160


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98289 / ডাউনলোড: 8160
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

ফিজারের যুদ্ধসমূহ

এ ধরনের ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করা আমাদের আলোচনার গণ্ডির বাইরে। শ্রদ্ধেয় পাঠকবর্গ যাতে করে এ সব যুদ্ধের সাথে অপরিচিত না থাকেন তাই এ সব যুদ্ধের কারণ ও পদ্ধতির ওপর সামান্য আলোকপাত করব। এখানে উল্লেখ্য যে,কেবল একদল ঐতিহাসিকের মতে ফিজারের যুদ্ধগুলোর কোন একটিতে মহানবী (সা.) যোগদান করেছিলেন।

জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা পুরো বছরই যুদ্ধ ও লুটপাট করে কাটিয়ে দিত। আর এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার জন্য আরবদের জাতীয় জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও কার্যত অচল হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই সমগ্র বছরের মধ্যে রজব,যিলক্বদ,যিলহজ্ব ও মুহররম-এ চার মাস আরবদের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ রাখা হতো। যার ফলে তারা বাজার বসিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে এবং আপন পেশায় নিয়োজিত থাকতে সক্ষম হতো।166

এর ওপর ভিত্তি করেই এ দীর্ঘ চার মাসে উকায,মাজনাহ্ এবং যিল মাজাযের বাজারগুলোতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হতো। শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলেই একে অপরের পাশে বসে লেন-দেন করতো। একে অপরের বিপরীতে গর্ব ও অহংকারও প্রকাশ করা হতো। আরবের নামীদামী কণ্ঠশিল্পী ও কবি তাদের স্বরচিত কবিতা,গান ও কাসীদাহ্ ঐ সব মাহফিলে পরিবেশন করত। প্রসিদ্ধ বক্তাগণ ঐসব স্থানে বক্তৃতা করত। শত্রুদের আক্রমণের হাত থেকে নিরাপদ হওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হয়েই ইয়াহুদী,খ্রিষ্টান এবং মূর্তিপূজকগণ এ সব স্থানে আরব বিশ্বের জনগণের কাছে নিজ নিজ আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্মমত প্রচার করত।

কিন্তু আরব জাতির ইতিহাসে এ নিষিদ্ধ মাস চতুষ্টয়ের সম্মান চার বার লঙ্ঘিত হয়েছিল। এর ফলে কতিপয় আরব গোত্র পরস্পরের ওপর আক্রমণ করেছিল। যেহেতু এ সব যুদ্ধ নিষিদ্ধ (হারাম) মাসগুলোতে সংঘটিত হয়েছিল তাই এ সব যুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছিল ফিজারের যুদ্ধ’। এখন আমরা সংক্ষেপে এ যুদ্ধগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করব।

ফিজারের প্রথম যুদ্ধ

এ যুদ্ধে বিবদমান পক্ষদ্বয় ছিল কিনানাহ্ ও হাওয়াযিন গোত্র। এ যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে বদর বিন মাশা র নামক এক ব্যক্তি উকাযের বাজারে নিজের জন্য একটি স্থান তৈরি করে সেখানে প্রতিদিন জনগণের সামনে নিজের গৌরব জাহির করত। একদিন হাতে তলোয়ার নিয়ে বলল, হে লোকসকল! আমি সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। যে আমার কথা শুনবে না সে অবশ্যই এ তরবারি দ্বারা নিহত হবে।” ঐ সময় এক ব্যক্তি তার পায়ে তরবারি দিয়ে আঘাত করে তার পা কেটে ফেলে। এ কারণেই দু টি গোত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়,তবে কেউ নিহত হওয়া ব্যতিরেকেই তারা সংঘর্ষ করা থেকে বিরত হয়।

ফিজারের দ্বিতীয় যুদ্ধ

এ যুদ্ধের কারণ ছিল এই যে,বনি আ মের গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলা এক যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে-মহিলাদের প্রতি দৃষ্টি দেয়াই ছিল যার অভ্যাস। যুবকটি তার মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করলে ঐ রমণী তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রবৃত্তির পূজারী যুবকটি রমণীর পেছনে বসে তার লম্বা গাউনের প্রান্তগুলো গাছের কাটা দিয়ে এমনভাবে পরস্পর গেঁথে দিয়েছিল যে,বসা অবস্থা থেকে দাঁড়ানোর সময় ঐ রমণীর মুখমণ্ডল অনাবৃত হয়ে যায়। এ সময় ঐ রমণী ও যুবক তাদের নিজ নিজ গোত্রকে আহবান করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং কিছুসংখ্যক লোকের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে অবশেষে সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

ফিজারের তৃতীয় যুদ্ধ

কিনান গোত্রের এক ব্যক্তির কাছে বনি আ মের গোত্রের এক ব্যক্তির কিছু পাওনা ছিল। ঐ ঋণগ্রস্ত লোকটি আজ দেব,কাল দেব বলে পাওনাদার লোকটিকে ঘুরাচ্ছিল। এতে এ দু ব্যক্তির মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ব্যক্তিদ্বয়ের নিজ নিজ গোত্রও পরস্পরকে হত্যা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু শান্তির ব্যাপারে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে উভয় গোত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে।

ফিজারের চতুর্থ যুদ্ধ

এ যুদ্ধে মহানবী (সা.) অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তাঁর বয়স কত ছিল সে সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন,তখন মহানবীর বয়স ছিল 14 অথবা 15 বছর। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন,তখন তাঁর বয়স ছিল 20 বছর। যেহেতু এ যুদ্ধ 4 বছর স্থায়ী হয়েছিল তাই এতৎসংক্রান্ত বিদ্যমান সকল বর্ণনা বিশুদ্ধ হতে পারে।167

এ যুদ্ধের মূল কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,নূমান বিন মুনযির প্রতি বছর একটি বাণিজ্যিক কাফেলা প্রস্তুত করে ব্যবসায়িক পণ্য-সামগ্রী ঐ কাফেলার সাথে উকাযের মেলায় পাঠাত। ঐ সব পণ্যের বিনিময়ে চামড়া,দড়ি এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা কাপড় ক্রয় করে আনার নির্দেশ দিত। উরওয়াতুর রিজাল নামক হাওয়াযিন গোত্রের এক ব্যক্তিকে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বারাদ বিন কাইস (কিনান গোত্রের) হাওয়াযিন ব্যক্তিটির উন্নতির কারণে অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ল। সে নূমান বিন মুনযিরের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানাল,কিন্তু তার প্রতিবাদে কোন ফল হলো না। তার ভেতরে ক্রোধ ও হিংসার অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে উঠল। সে সর্বদা উরওয়াতুর রিজালকে পথিমধ্যে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিল। অবশেষে বনি মুররা গোত্রের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সে তাকে হত্যা করে। আর এভাবে হাওয়াযিন লোকটির রক্তে তার হাত রঞ্জিত হয়।

ঐ দিনগুলোতে কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্র পরস্পর মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। আর এ ঘটনাটি ঐ সময় সংঘটিত হয় যখন আরব গোত্রগুলো উকাযের বাজারগুলোতে কেনা-বেচা ও লেন-দেনে ব্যস্ত ছিল। এক লোক কুরাইশ গোত্রকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। হাওয়াযিন গোত্র ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার আগেই কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্র নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে হারাম শরীফে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হাওয়াযিন গোত্র তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পিছু নেয় ও ধাওয়া করে। হারাম শরীফে পৌঁছানোর আগেই এ দু দলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অবশেষে আবহাওয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলে যুদ্ধরত গোত্রগুলো যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়। আর এটি ছিল আঁধারের মধ্যে হারাম শরীফের দিকে অগ্রসর এবং কুরাইশ ও কিনানাহ্ গোত্রের জন্য শত্রুর হাত থেকে নিরাপদ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ঐ দিন থেকে কুরাইশ ও তাদের মিত্ররা মাঝে-মধ্যে হারাম শরীফ থেকে বের হয়ে এসে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতো। চাচাদের সাথে মহানবীও কিছু দিন যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এ অবস্থা চার বছর স্থায়ী হয়েছিল। অবশেষে যুদ্ধে হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে থেকে যারা নিহত হয়েছিল তাদের রক্তপণ পরিশোধ করার মাধ্যমে ফিজারের চতুর্থ যুদ্ধের যবনিকাপাত হয়। উল্লেখ্য যে,এ যুদ্ধে কুরাইশদের চেয়ে হাওয়াযিন গোত্রের নিহতদের সংখ্যা বেশি ছিল।

হিলফুল ফুযূল (প্রতিজ্ঞা-সংঘ)

অতীতকালে হিলফুল ফুযূল’নামে একটি প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি জুরহুম গোত্রের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। এ প্রতিজ্ঞার মূল ভিত্তি ছিল অত্যাচারিত ও পতিতদের অধিকার সংরক্ষণ। এ চুক্তির স্থপতি ছিলেন ঐ সব ব্যক্তি যাদের প্রত্যেকের নাম ছিল ফযল ধাতু থেকে নিষ্পন্ন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীরের বর্ণনা অনুযায়ী হিলফুল ফুযূলের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম ছিল ফযল বিন ফাযালাহ্ (فضل بن فضالة ),ফযল বিন আল হারেস (فضل بن الحارث ) এবং ফযল বিন ওয়াদাআহ্

(فضل بن وداعة )।168

যেহেতু কয়েকজন কুরাইশ যে চুক্তি নিজেদের মধ্যে সম্পাদন করেছিলেন,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে তা হিলফুল ফুযূলের অনুরূপ ছিল সেহেতু এ ঐক্য ও চুক্তির নামও হিলফুল ফুযূল’দেয়া হয়েছিল।

মহানবীর নবুওয়াত ঘোষণার 20 বছর পূর্বে যিলক্বদ মাসে এক ব্যক্তি পবিত্র মক্কা নগরীতে বাণিজ্যিক পণ্যসহ প্রবেশ করে। ঘটনাক্রমে আ স ইবনে ওয়ায়েল তা ক্রয় করে। কিন্তু যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে ঐ লোকটিকে তা পরিশোধ না করলে তাদের মধ্যে তীব্র ঝগড়া বেঁধে যায়। যে সব কুরাইশ বংশীয় ব্যক্তি পবিত্র কাবার পাশে বসা ছিল তাদের প্রতি (হতভাগ্য) পণ্য বিক্রেতার দৃষ্টি পড়ল এবং তার আহাজারি ও ক্রন্দনধ্বনিও তীব্র ও উচ্চ হলো। সে কিছু কবিতা আবৃত্তি করল যা ঐ সব লোকের অন্তঃকরণে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিল যাদের ধমণীতে পৌরুষ ও শৌর্য-বীর্যের রক্ত প্রবাহমান ছিল। ইত্যবসরে যুবাইর ইবনে আবদুল মুত্তালিব উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর সাথে আরো কতিপয় ব্যক্তিও আবদুল্লাহ্ ইবনে জাদআনের গৃহে একত্রিত হলেন। তাঁরা পরস্পর প্রতিজ্ঞা করলেন এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যতদূর সম্ভব অত্যাচারীর কাছ থেকে অত্যাচারিতের অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে শপথ করলেন। প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি সম্পন্ন হলে তাঁরা আস ইবনে ওয়ায়েলের কাছে আসলেন এবং সে যে পণ্য কিনে মূল্য পরিশোধ করে নি তা তার থেকে নিয়ে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

আরবের কবি-সাহিত্যিক ও গীতিকারগণ এ চুক্তির প্রশংসায় বেশ কিছু কবিতাও রচনা করেছেন।169

মহানবী (সা.) উক্ত হিলফুল ফুযূলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ তা মজলুমের জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করত। মহানবী এ চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে বেশ কিছু কথা বলেছেন যেগুলোর মধ্য থেকে এখানে কেবল দু টি বাণীর উদ্ধৃতি দেব :

لقد شهدت في دار عبد الله بن جدعان حلفا لو دعيت به في الأسلام لأجبت

“আবদুল্লাহ্ ইবনে জাদআনের ঘরে এমন একটি প্রতিজ্ঞা সম্পাদিত হবার বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলাম যদি এখনও (নবুওয়াত ঘোষণার পরেও) আমাকে উক্ত প্রতিজ্ঞার দিকে আহবান জানানো হয় তাহলেও আমি এতে সাড়া দেব।”

ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন : মহানবী (সা.) হিলফুল ফুযূল চুক্তির ব্যাপারে পরবর্তীকালে বলেছেন,

ما أحب أن لي به حمر النعم

“লাল পশম বিশিষ্ট উটের বদলেও এ চুক্তি ভঙ্গ করতে আমি মোটেও প্রস্তুত নই।”

হিলফুল ফুযূল এতটা দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত ছিল যে,ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এ চুক্তির অন্তর্নিহিত মূল বিষয় মেনে চলার ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব আছে বলে বিশ্বাস করত। মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে নিযুক্ত ওয়ালীদ ইবনে উতবাহ্ ইবনে আবু সুফিয়ানের পবিত্র মদীনা নগরীর প্রশাসক থাকাকালীন যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা এ বিষয়ের উৎকৃষ্ট দলিল। শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আ.) জীবনে কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি। একবার একটি সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে মদীনার তৎকালীন শাসনকর্তার সাথে তাঁর মতপার্থক্য হয়েছিল। ইমাম হুসাইন অত্যাচার ও অন্যায়ের ভিত্তি ধ্বংস করা এবং জনগণকে ন্যায্য অধিকার আদায় করার প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত করানোর জন্য ঐ জালেম শাসনকর্তাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, মহান আল্লাহর শপথ,যদি তুমি আমার ওপর অন্যায় ও জোরজবরদস্তি কর তাহলে আমি আমার তরবারি কোষমুক্ত করে মহানবী (সা.)-এর মসজিদে দাঁড়িয়ে ঐ চুক্তি ও প্রতিজ্ঞার দিকে সবাইকে আহবান করব যা তাদের পূর্ব পুরুষগণই সম্পাদন করেছিলেন।” তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর দণ্ডায়মান হয়ে এ কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন এবং আরো বললেন, আমরা সবাই রুখে দাঁড়াব এবং তাঁর ন্যায্য অধিকার আদায় করব অথবা এ পথে আমরা সবাই নিহত হব।” ইমাম হুসাইন (আ.)-এর এ উদাত্ত আহবান ধীরে ধীরে আল মিসওয়ার ইবনে মিখরামাহ্ ও আবদুর রহমান ইবনে উসমানের মতো সকল আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তির কর্ণগোচর হলে সবাই ইমাম হুসাইনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর দিকে ছুটে গেলেন। ফলে ঐ অত্যাচারী শাসনকর্তা উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে যায় এবং ইমামের ওপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকে।170