চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98350
ডাউনলোড: 8163


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98350 / ডাউনলোড: 8163
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

একজন বস্তুবাদী ব্যক্তির বিশ্বদৃষ্টি

প্রকৃতিবিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি অনেক বিজ্ঞানীর কাছ থেকেই আধ্যাত্মিক ও প্রকৃতিবিজ্ঞানের সীমা-পরিসীমার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান বিষয়াদি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার শক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে এবং তাদের চিন্তা-ভাবনার সীমা-পরিসীমাকে অত্যন্ত সীমিত করে দিয়েছে। এঁরা চিন্তা করেন যে,বিশ্বজগৎ বলতে আসলে এ বস্তুজগতকেই বুঝায় এবং বস্তু ও পদার্থের বাইরে আর কোন কিছুর অস্তিত্বই নেই। আর যে সব বিষয় বস্তুবাদের মূলনীতি ও বিধানের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাবে না সেগুলোই হচ্ছে অলীক ও বাতিল।

এ গোষ্ঠীটি ওহী এবং অতি প্রাকৃতিক (আধ্যাত্মিক-অবস্তুগত) বিষয়াদি সম্পর্কে অগ্রিম অভিমত (কোন চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা না করেই) ব্যক্ত এবং পরিচিতি ও জ্ঞান লাভের উপায়-উপকরণ ও মাধ্যমকে পঞ্চেন্দ্রিয় ও অভিজ্ঞতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কারণেই ওহীর জগৎ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক অবস্তুগত জগতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে। আর যেহেতু ইন্দ্রিয়ানুভূতি,অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাদেরকে ওহীর জগৎ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক অবস্তুগত জগতের দিকে পরিচালিত (করে না) এবং এ ধরনের (অবস্তুগত) অস্তিত্ববান সত্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য জ্ঞাপন করে না,যেহেতু তারা তাদের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদকারী ছুরি ও অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে এ ধরনের অবস্তুগত অস্তিত্ববান সত্তাকে দেখতে পায় না অথবা ল্যাবরেটরীতে যেহেতু এ সব

অস্তিত্ববান সত্তার কোন নিদর্শন দৃষ্টিগোচর হয় না সেহেতু তারা অবস্তুগত আধ্যাত্মিক জগৎ ও ওহীর অস্তিত্বই সরাসরি অস্বীকার করেছে। পরিণামে যেহেতু পরিচিতি ও জ্ঞান লাভের বিদ্যমান উপায়-উপকরণ ও মাধ্যমসমূহ (ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও অভিজ্ঞতা) তাদেরকে এ সব অবস্তুগত আধ্যাত্মিক বিষয়ের দিকে পরিচালিত করে না,সেহেতু তাদের দৃষ্টিতে অবশ্যই এ সব বিষয়ের বাহ্য কোন অস্তিত্বই নেই।

আসলে এ ধরনের চিন্তা-ধারা অত্যন্ত সীমিত,অপূর্ণাঙ্গ এবং অহংকার ও গর্বমিশ্রিত চিন্তাধারা বৈ আর কিছুই নয়। আর এ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তিকে ভুলক্রমে অনস্তিত্ব বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যেহেতু বর্তমানে বিদ্যমান উপায়-উপকরণ ও মাধ্যম ব্যবহার করে যে সব সত্য বিষয়ে মহান স্রষ্টার উপাসক জ্ঞানী ও পণ্ডিতগণ বিশ্বাস করেন সে সব বিষয়ে তারা পৌঁছতে পারে না সেহেতু তারা (তাদের নিজেদের এ অপারগতা থেকে) সিদ্ধান্ত নেয় যে,এ সব আধ্যাত্মিক অবস্তুগত বিষয় সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে,বস্তুবাদীরা অতি প্রাকৃতিক আধ্যাত্মিক জগৎসমূহের কথা বাদ দিলেও এমনকি স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করার ব্যাপারে স্রষ্টায় বিশ্বাসী জ্ঞানী-পণ্ডিতদের বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য মোটেও উপলব্ধি করতে পারে নি। যদি সব ধরনের সংকীর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং গোঁড়ামি পরিহার করে সুষ্ঠু পরিবেশে আস্তিক ও নাস্তিক গোষ্ঠী পারস্পরিক আলোচনা-পর্যালোচনায় অংশগ্রহণ করে তাহলে ধারণা করা সম্ভব হবে যে,বস্তুবাদী ও আস্তিকের মধ্যকার ব্যবধান অচিরেই দূর হয়ে যাবে। যে মতবিরোধ জ্ঞানী-পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে দু দলে বিভক্ত করে ফেলেছে তা আর বিদ্যমান থাকবে না।

আস্তিক পণ্ডিতবর্গ মহান আল্লাহর অস্তিত্ব অকাট্যভাবে প্রমাণকারী অগণিত দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে এ প্রকৃতিবিজ্ঞানই (পদার্থবিদ্যা,রসায়ন ও জীববিদ্যা) আমাদেরকে এক জ্ঞানী-ক্ষমতাবান স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকে পরিচালিত করে। সকল বস্তুগত অস্তিত্ববান সত্তার ভিতরে ও বাইরে যে আশ্চর্যজনক ব্যবস্থা ক্রিয়াশীল তা এ ব্যবস্থার অস্তিত্বদানকারীর অস্তিত্বেরই অকাট্য দলিল-প্রমাণস্বরূপ। নীহারিকাপুঞ্জ থেকে নিয়ে পরমাণু পর্যন্ত এ সমগ্র বস্তুজগৎ সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত নিয়ম ও বিধানসমূহের ওপর নির্ভর করেই পূর্ণতা প্রাপ্তির পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আর অন্ধ ও বধির প্রকৃতির পক্ষে কখনই এ অনিন্দ্য সুন্দর ব্যবস্থার অস্তিত্ব দান সম্ভব নয়। আর এটাই হচ্ছে অস্তিত্বের শৃঙ্খলাভিত্তিক প্রমাণ যে ব্যাপারে অগণিত গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে। সৃষ্টির শৃঙ্খলা নির্দেশক দলিল-প্রমাণটি সকল স্তর ও শ্রেণীর মানুষের জন্য বোধগম্য। সাধারণত সর্বসাধারণ বই-পুস্তক ও লিখিত প্রবন্ধসমূহে এ দলিলটির ওপরই নির্ভর করা হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি কোন এক দিক থেকে এ দলিল-প্রমাণ উত্থাপন ও আলোচনা করে থাকে। আর যে সব দলিল-প্রমাণ এতটা সর্বজনীন নয় সেগুলো সম্পর্কে দর্শন ও কালামশাস্ত্রের গ্রন্থসমূহে

বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সূক্ষ্ম,অবস্তগত আত্মা এবং অতি প্রাকৃতিক জগৎসমূহের ব্যাপারে যে সব দলিল-প্রমাণ ও আলোচনা রয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটির ব্যাপারে আমরা এখানে আলোকপাত করব।

অবস্তুগত আত্মা

রুহ অর্থাৎ আত্মায় বিশ্বাস অন্যতম জটিল ও দুরূহ বিষয় যা জ্ঞানী ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যারা সব কিছু বস্তুবাদী বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে দেখতে ও পর্যালোচনা করতে চায় তারাই আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। তারা কেবল এমন মানবিক মন ও মানসে বিশ্বাসী যার বস্তুগত দিক ও পর্যায় রয়েছে এবং যার কার্যকারিতা প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুনের প্রভাবাধীন।

অবস্তুগত আত্মা ও মনের অস্তিত্ব ঐ সব বিষয়ের অন্তর্গত যেগুলো আস্তিক ও আধ্যাত্মিক জগৎসমূহের অস্তিত্বে বিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে খুব সূক্ষ্মভাবে আলোচিত হয়েছে। তারা এ ধরনের অবস্তুগত অস্তিত্ববান সত্তার অস্তিত্বের ব্যাপারে অগণিত দলিল-প্রমাণ উত্থাপন করেছেন। যদি কোন উপযুক্ত ক্ষেত্র ও পরিবেশে ঐশী দলিল-প্রমাণসমূহের মূলনীতিসমূহ সংক্রান্ত পূর্ণজ্ঞান ও পরিচিতিসহকারে এ সব দলিল-প্রমাণ আলোচনা করা হয় তাহলে তা সম্পূণরূপে গৃহীত হবে। ফেরেশতা,আত্মা,ওহী ও ইলহাম সম্পর্কে আস্তিক পণ্ডিত ও জ্ঞানিগণ যা কিছু বলেছেন তা সবই এমন এক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত যা পূর্ব থেকেই মজবুত দলিল-প্রমাণ দ্বারা তাঁরা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।208

ওহী অথবা গোপন রহস্যাবৃত অনুভূতি

ওহী বা ঐশী প্রত্যাদেশে বিশ্বাস সকল আসমানী ধর্ম ও রিসালাতের মূল ভিত্তি। আর এর ভিত্তি হচ্ছে শক্তিশালী আত্মার অস্তিত্ব যা ফেরেশতার মাধ্যমে অথবা ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি ঐশী জ্ঞান ও শিক্ষা লাভ করে। জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ ওহীর ব্যাপারে বলেছেন,

الوحي تعليمه تعالى من اصطفاه من عباده كلّ ما أراد اطّلاعه عليه من ألوان الهداية و العلم و لكن بطريقة خفيّة غير معتادة للبشر

“ওহী হচ্ছে এই যে,মহান আল্লাহ্ তাঁর মনোনীত কোন বান্দার কাছে হেদায়েতের পথসমূহ এবং বিভিন্ন প্রকার ঐশী (আধ্যাত্মিক) জ্ঞান স্বাভাবিক প্রচলিত পথ ও পদ্ধতির বাইরে ভিন্ন এক রহস্যাবৃত গোপনীয় পদ্ধতিতে শিখান।”

নিঃসন্দেহে প্রত্যেক মানুষের জীবন অজ্ঞতা বা জ্ঞানশূন্যতা থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে জ্ঞান ও পরিচিতির বলয়ে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে মানুষের সামনে তার মনোজগতের বাইরে অবস্থিত জগৎসমূহে প্রবেশদ্বার ও পথসমূহ উন্মুক্ত হতে থাকে।

প্রথমে বাহ্য পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ বেশ কিছু বাস্তবতার সাথে পরিচিত হয়। এরপর তার চিন্তা ও অনুধাবন ক্ষমতার পূর্ণতাপ্রাপ্তির কারণে ধীরে ধীরে এমন সব বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যা স্পর্শ,ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে সে একজন মননশীল যুক্তিবাদী মানুষে পরিণত হয় এবং কতগুলো সর্বজনীন অর্থ ও তাৎপর্য এবং সর্বজনীন তাত্ত্বিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়।

কখনো কখনো মানব জাতির মাঝে এমন সব শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখা যায় যাঁরা ইলহামের (অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণা) মাধ্যমে প্রাপ্ত এক বিশেষ ধরনের দিব্যলোক ও দৃষ্টির দ্বারা এমন সব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ও পরিচিত হন যা কখনই যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নয়।

এ কারণেই পণ্ডিতগণ মানুষের অনুধাবন ও উপলব্ধি করার ক্ষমতাকে :

1. আপামর জনতার অনুধাবন ও উপলব্ধি,

2. চিন্তাশীল যুক্তিবাদীদের অনুধাবন ও উপলব্ধি

এবং 3. আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞানী সাধক এবং দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুধাবন ও উপলব্ধি-এ তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন।

যেন বলা যায়,অগভীর বাহ্য দৃষ্টিশক্তির অধিকারিগণ পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে,বুদ্ধিজীবী ও যুক্তিবাদিগণ যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে এবং দিব্যজ্ঞানসম্পন্ন আধ্যাত্মিক সাধকগণ ঊর্ধ্বলোক থেকে ইলহাম ও ইশরাক অর্থাৎ ঐশী অনুপ্রেরণা ও আধ্যাত্মিকতার ঔজ্জ্বল্য বিচ্ছুরণের মাধ্যমে প্রকৃত বাস্তবতা উদ্ঘাটনে রত হয়।

নীতিশাস্ত্রের প্রতিভাধর দিকপালগণ এবং বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ স্বীকার করেন যে,তাঁদের অভূতপূর্ব আবিষ্কারসমূহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক ধরনের আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণাদায়ক আলোক-স্ফুলিঙ্গের প্রভাবেই তাদের মানসপটে প্রতিফলিত ও প্রস্ফুটিত হয়েছে। এরপর তাঁরা বিভিন্ন ধরনের চাক্ষুষ ও পরীক্ষামূলক (ব্যবহারিক) পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াসমূহের সাহায্য নিয়ে ঐ সব আবিস্কৃত বিষয়াদির পূর্ণতা বিধানের প্রয়াস চালিয়েছেন।

জ্ঞান অর্জনের উৎসত্রয়

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে,কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য (অর্থাৎ জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে) মানুষের করায়ত্তে তিনটি প্রধান পথ বা উৎস আছে। সাধারণ মানুষ প্রধানত প্রথম পদ্ধতি,দ্বিতীয় গোষ্ঠীটি দ্বিতীয় পদ্ধতি এবং অতি মুষ্টিমেয় ব্যক্তি আত্মিক পূর্ণতা অর্জন করে তৃতীয় পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

1 . ইন্দ্রিয়ানুভূতিলব্ধ পথ পদ্ধতি : এ পদ্ধতির প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে ঐ সব অনুভূতি ও উপলব্ধি যা বাহ্য পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসপটে অনুপ্রবেশ করে। যেমন সব ধরনের দৃষ্টিগোচরীভূত বস্তু,(সব ধরনের) স্বাদ ও খাদ্যবস্তু,সুগন্ধি দ্রব্য ইত্যাদি বিশেষ ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং মাধ্যমের দ্বারা আমাদের অনুভূতি ও উপলব্ধির মূল অক্ষে স্থাপিত হয়। আজ টেলিস্কোপ,অণুবীক্ষণ যন্ত্র,রেডিও,টেলিভিশন ইত্যাদির আবিষ্কার মানুষের ইন্দ্রিয়ানুভূতিলব্ধ উপলব্ধি ও অনুধাবন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রশংসাব্যঞ্জক অবদান রেখেছে এবং তাকে কাছের ও দূরের বিষয়াদি ও বস্তুসামগ্রীর ওপর কর্তৃত্বশীল করেছে।

2 . বুদ্ধিবৃত্তিক পথ পদ্ধতি : বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতগুলো স্বতঃসিদ্ধ,স্পষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক বিষয় থেকে ইন্দ্রিয়ের সীমারেখা বহির্ভূত কতগুলো সর্বজনীন নিয়ম-কানুন আবিষ্কার করেন এবং এভাবে জ্ঞান ও পরিচিতি এবং পূর্ণতার বেশ কিছু শৃঙ্গ তাঁরা পদানত করেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বজনীন নিয়ম-কানুন,দার্শনিক বিষয়াদি এবং মহান স্রষ্টার গুণ ও ক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও তথ্যাবলী এবং যে সব বিষয় আকীদা-বিশ্বাস ও ধর্মশাস্ত্রে আলোচিত হয় সেগুলো সব কিছুই আসলে মানব চিন্তা এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ও শক্তির ক্রিয়াশীলতা ও কার্যকারিতার প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ।

3 . ঐশী অনুপ্রেরণার পথ পদ্ধতি : এটিই হচ্ছে সত্য চেনার তৃতীয় পথ যা পঞ্চেন্দ্রিয়,এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিরও ঊর্ধ্বে এবং এগুলোর চেয়ে উন্নত। এটি প্রকৃত বাস্তব চেনার এমন এক পথ ও পদ্ধতি যা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। অবশ্য সংকীর্ণ বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টি বুদ্ধিবৃত্তি ও পঞ্চেন্দ্রিয়ের বলয় বহির্ভূত এ ধরনের উপলব্ধি,অনুধাবন ও অনুভূতি মেনে নিতে পারে না। তবে বৈজ্ঞানিক নীতিমালার আলোকে এ ধরনের অনুভূতি ও উপলব্ধি অস্বীকার করার কোন পথ বিদ্যমান নেই।

বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টিতে বহিঃজগৎ সংক্রান্ত জ্ঞান ও পরিচিতি এবং প্রকৃত বাস্তবতাসমূহ সংক্রান্ত জ্ঞান ও পরিচিতি অর্জনের পথ কেবল প্রথম দু টি পথ ও পদ্ধতির মাঝেই সীমাবদ্ধ। অথচ বড় বড় ঐশী ধর্ম ও শরীয়তভিত্তিক বিশ্বদৃষ্টি,দার্শনিক ও অধ্যাত্ম তত্ত্বজ্ঞানভিত্তিক বিশ্বদৃষ্টিতে (জ্ঞান ও পরিচিতির) তৃতীয় পথ ও পদ্ধতিটিও বিদ্যমান আছে যা হচ্ছে সকল আসমানী ধর্ম ও শিক্ষামালার মূল ভিত। কেবল জ্ঞানার্জনের তৃতীয় এ পথটি অস্বীকার করার যেমন কোন দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান নেই,ঠিক তেমনি ওহী বিষয়ক যে সব দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তদনুযায়ী জ্ঞানার্জনের তৃতীয় এ পথটি একটি বাস্তব সত্য হিসাবে বিদ্যমান ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং যে সব ব্যক্তি নিজেদেরকে ঐশী নেতা এবং মহান আল্লাহর মনোনীত বান্দা বলে জানে এবং যাঁদের আত্মা এক বিশেষ ধরনের নির্মল পবিত্রতা ও সতেজতার অধিকারী হয়েছে তাঁদের মাঝে তৃতীয় এ পথটি ব্যাপকভাবে দেখতে পাওয়া যায়।

যখনই মহান আল্লাহর সাথে কোন মানুষের সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠে তখনই তার অন্তঃকরণে বাহ্য পঞ্চেন্দ্রিয় ও বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহার ব্যতিরেকেই কোন এক নিগুঢ় বাস্তব সত্যেরই প্রতিফলন ও প্রক্ষেপ হতে থাকে। এ ধরনের প্রক্ষেপ ও অর্জনকেই ইলহাম’ (ঐশী অনুপ্রেরণা) এবং কখনো কখনো ইশরাক (আধ্যাত্মিক আলোর বিচ্ছুরণ) বলা হয়।

তবে যদি অতি প্রাকৃতিক (আধ্যাত্মিক) জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক এমন এক রূপ লাভ করে যার পরিণতি হচ্ছে কতগুলো সাধারণ শিক্ষা-দীক্ষা এবং সর্বজনীন বিধি-বিধান লাভ,তাহলে এ ধরনের প্রাপ্তিকেই ওহী’ (ঐশী প্রত্যাদেশ),ওহী আনয়নকারীকে ওহীর ফেরেশতা এবং ওহীর গ্রহীতাকে নবী বলা হয়।

ইলহাম কেবল এর গ্রহীতার কাছেই নিশ্চয়তাব্যঞ্জক হতে পারে,অথচ ঠিক একই সময় তা অন্যদেরকে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট নাও করতে পারে।209

এ কারণেই জ্ঞানী ও পণ্ডিতগণ একমাত্র ঐ ওহীকেই সর্বজনীন তত্ত্বজ্ঞানের নির্ভরযোগ্য উৎসমূল বলে বিবেচনা করেন যা নবীদের ওপর অবতীর্ণ হয় যাঁদের নবুওয়াত অভ্রান্ত দলিল-প্রমাণ,যেমন মুজিযা ইত্যাদির দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।