চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98299
ডাউনলোড: 8160


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98299 / ডাউনলোড: 8160
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

নিকটাত্মীয়দেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান

মহানবী (সা.) পুরো তিন বছর গোপনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন এবং এ সময় তিনি জনসাধারণের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যক্তিবিশেষকে গড়ার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেছিলেন। ঐ সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজন অবধারিত করে দেয় যে,তিনি যেন প্রকাশ্যে দাওয়াত অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যে লিপ্ত না হন। গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে একদল ব্যক্তিকে তিনি ইসলাম ধর্মের দিকে আহবান করেছিলেন;আর এই গোপন প্রচার কার্যক্রমের কারণেই একদল লোক ইসলাম ধর্ম ও তাওহীদী মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এ ধর্ম গ্রহণ করেছিল। ইতিহাসে এ সব ব্যক্তির নাম লিপিবদ্ধ আছে যাঁরা মহানবীর রিসালাত বা মিশনের এ পর্যায়ে এ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস এনেছিলেন। এঁদের মধ্য থেকে কতিপয় ব্যক্তির নাম নিচে বর্ণিত হলো :

হযরত খাদীজাহ্,আলী ইবনে আবি তালিব (আ.),যায়েদ ইবনে হারেসা,যুবাইর ইবনুল আওয়াম,আবদুর রহমান ইবনে আওফ,সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস,তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্,আবু উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্,আবু সালামাহ্,আরকাম ইবনে আবিল আরকাম,কুদামাহ্ ইবনে মাযউন,আবদুল্লাহ্ ইবনে মাযউন,উবাইদাহ্ আল-হারিস,সাঈদ ইবনে যায়েদ,খুবাব ইবনে আরত,আবু বকর ইবনে আবু কুহাফাহ্,উসমান ইবনে আফফান প্রমুখ।242

কুরাইশ নেতৃবর্গ দীর্ঘ এ তিন বছর আমোদ-প্রমোদ,আরাম-আয়েশ ও বিলাস-ব্যসনে মগ্ন ছিল;অথচ ঐ অবস্থায় তারা মহানবী (সা.)-এর গোপনে ইসলাম প্রচার কার্যক্রম সম্পর্কে কম-বেশি তথ্য পেয়েছিল। কিন্তু তারা সামান্য প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে নি এবং বিন্দুমাত্র ঔদ্ধত্যও প্রদর্শন করে নি।

এ তিনটি বছর যা ছিল ব্যক্তিগঠনের পর্যায় বা কাল এ সময় মহানবী (সা.) কতিপয় সাহাবীকে সাথে নিয়ে কুরাইশদের দৃষ্টি থেকে দূরে পবিত্র মক্কার গিরি-উপত্যকাসমূহে গিয়ে নামায আদায় করতেন। একদিন যখন পবিত্র মক্কায় কোন এক উপত্যকায় মহানবী (সা.) ও কতিপয় সাহাবী নামায আদায় করছিলেন তখন কতিপয় মুশরিক তাঁদের এ কাজে আপত্তি এবং তাঁদের তীব্র ভর্ৎসনাও করেছিল। এর ফলে মহানবীর সাহাবী ও কতিপয় মুশরিকদের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের দ্বারা একজন মুশরিক এ সময় আহত হয়েছিল।243 এ কারণে মহানবী (সা.) আরকামের গৃহকেই ইবাদাতস্থল হিসাবে নির্ধারণ করেন।244 তিনি সেখানে ইবাদাত ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। যার ফলে মহানবীর কর্মতৎপরতা মুশরিকদের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়। আম্মার ইবনে ইয়াসির ও সুহাইব ইবনে মিনান ঐ সব ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাঁরা এ গৃহে মহানবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন।

জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ব্যাপক কর্মসূচীসহ কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। তবে তাঁদের কাজ তাঁরা ক্ষুদ্র স্থান থেকেই শুরু করেন। আর যখনই তাঁরা কোন সাফল্য অর্জন করেন তখনই তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যাপক প্রসার ও বিস্তৃতির জন্য চেষ্টা করেন;আর সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্রকে তাঁরা আরো বিস্তৃত করেন এবং তাঁদের কর্মকাণ্ডের পূর্ণতা বিধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

একজন জ্ঞানী ব্যক্তি245 আজকের একটি বিরাট উন্নত দেশের এক নেতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে আপনাদের সাফল্যের অন্তর্নিহিত রহস্যটা কি? তখন তিনি বলেছিলেন, আমাদের অর্থাৎ পাশ্চাত্যের অধিবাসীদের চিন্তা-ভাবনা আপনাদের অর্থাৎ প্রাচ্যের অধিবাসীদের থেকে ভিন্ন। আমরা সব সময় ব্যাপক কর্মসূচী ও পরিকল্পনাসহ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করি। তবে ছোট জায়গা থেকে আমাদের কাজ শুরু করি এবং সাফল্য অর্জনের পর আমরা ঐ কাজটি ব্যাপকভাবে করার চেষ্টা করি। আর যদি আমরা মাঝপথেই টের পেয়ে যাই যে,আমাদের কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সঠিক নয় তখন আমরা সাথে সাথেই কাজের ফর্মুলা বা প্যাটার্ন পরিবর্তন করে ফেলি এবং অন্য একটি কাজ শুরু করে দিই। কিন্তু আপনারা ব্যাপক পরিকল্পনাসহ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করেন এবং পুরো কর্মসূচী ও পরিকল্পনাটি আপনারা মাত্র একটি জায়গায় বাস্তবায়ন করেন;আর আপনারা যদি মাঝপথে অচলাবস্থায় উপনীত হন তাহলে বিরাট ক্ষতি স্বীকার করা ব্যতীত প্রত্যাবর্তনের আর কোন পথ অবশিষ্ট থাকে না।

এ ছাড়াও আপনাদের অর্থাৎ প্রাচ্য দেশীয়দের মন-মানসিকতা তাড়াহুড়া করার স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। আর আপনারা সব সময় চাষের প্রথম দিনেই ফসল পেতে চান। আপনারা প্রথম দিনগুলোতেই সর্বশেষ ফলাফল অর্জন করতে চান। আর এটিই হচ্ছে এমন এক ভুল সামাজিক চিন্তাধারা যা মানুষকে এক আশ্চর্যজনক অচলাবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়।”

আমরা বিশ্বাস করি যে,এ ধরনের চিন্তাধারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। যাঁরা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান  তাঁরা সব সময় তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য ঠিক এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছেন এবং করছেন। মহানবীও অকাট্য এ মূলনীতিটি মেনে চলতেন এবং দীর্ঘ তিন বছর তাড়াহুড়া না করেই তিনি গোপনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন। তিনি যে ব্যক্তিকে চিন্তাশক্তির অধিকারী ও যোগ্যতাসম্পন্ন পেতেন তাঁর কাছেই তিনি তাঁর ধর্ম তুলে ধরতেন। একটি বিরাট আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পৃথিবীর সকল মানুষকে একই পতাকাতলে (তাওহীদের পতাকাতলে) একত্র করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি পুরো এ তিনটি বছর জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্যোগ নেন নি। এমনকি তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়দেরকেও বিশেষভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানান নি। তিনি বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির সাথেই কেবল ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে তুলতেন এবং যদি কোন ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য যোগ্য ও প্রস্তুত দেখতেন কেবল তাঁকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানাতেন। এর ফলে এই তিন বছরে একদল লোক তাঁর অনুসারী হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁদেরকে সৎ পথ প্রদর্শন করেছিলেন।

কুরাইশ গোত্রপতিগণ এ তিন বছর আমোদ-প্রমোদ ও স্ফূর্তি করেই কাটিয়েছে। মক্কার ফিরআউন আবু সুফিয়ান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা যখনই মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের দাবি এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবানের যথার্থ রূপের সাথে পরিচিত হতো তখনই তারা বিদ্রূপাত্মক হাসি হেসে নিজেদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলত, মুহাম্মদের দাবি ও আহবান ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেল এবং উমাইয়্যার আহবানের ন্যায় অতি সত্বর নিস্প্রভ ও ম্লান হয়ে যাবে। আর অচিরেই সেও বিস্মৃতির অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে যাবে। (এই ওয়ারাকাহ্ ইবনে নওফেল এবং উমাইয়্যা ইঞ্জিল ও তাওরাত অধ্যয়ন করার ফলে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে আরবদের মাঝে খ্রিষ্টধর্মের কথা বলতেন।)

কুরাইশ নেতৃবর্গ এ তিন বছর মহানবী (সা.)-এর প্রতি সামান্যতম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে নি,বরং তারা এ সময় তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখেছে। আর মহানবীও এ সময় মুশরিকদের প্রতিমা ও দেব-দেবীসমূহের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোন সমালোচনা করেন নি। এ সময় তিনি কেবল আলোকিত মন ও অন্তরের অধিকারী ব্যক্তিদের সাথেই বিশেষ সম্পর্ক ও যোগাযোগ গড়ে তুলেছিলেন।

কিন্তু যেদিন থেকে বিশেষ প্রচার কার্যক্রম (অর্থাৎ নিকটাত্মীয়দের ইসলাম গ্রহণের আহবান) এবং সর্বসাধারণ পর্যায়ে প্রচার কার্যক্রমের (অর্থাৎ জনসাধারণকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান) কাজ শুরু হলো সেদিন থেকেই মুশরিক কুরাইশগণও জাগ্রত ও সচেতন হয়ে গেল এবং তারা বুঝতে পারল যে,উমাইয়্যা ও ওয়ারাকার সাথে তাঁর আহবান ও প্রচার কার্যক্রমের স্পষ্ট মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অতএব,এ কারণেই মহানবীর ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যক্রমের প্রকাশ্যে ও গোপনে বিরোধিতা ও সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। মহানবী (সা.) নিকটাত্মীয়দের মাঝেই (ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানিয়ে) সর্বপ্রথম নীরবতার সীলমোহর ভঙ্গ করেন। আর এর পরপরই তিনি সাধারণ মানুষকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আহবান জানান।

নিঃসন্দেহে যে সব সুগভীর ও মৌলিক সংস্কার ও সংশোধন জনগণের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে এবং সমাজের গতিপথের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করে সেগুলো অন্য সব কিছুর চেয়ে দু ধরনের মজবুত শক্তিরই সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। উক্ত শক্তিদ্বয় হলো:

1. কথা বলা ও বক্তব্য প্রদানের ক্ষমতা : যে মানুষ এ ক্ষমতার অধিকারী হবে সে খুব চমৎকার ও আকর্ষণীয়ভাবে বাস্তবতা ও সত্যসমূহ বর্ণনা করতে সক্ষম হবে এবং সে তার নিজ ব্যক্তিগত চিন্তাধারা,ধ্যান-ধারণা এবং যা কিছু ওহীর জগৎ থেকে লাভ করে তা জনতার মন-মানসিকতা ও চিন্তাধারায় প্রবেশ করাতে সক্ষম হবে।

2. প্রতিরক্ষামূলক শক্তি যা শত্রুদের আক্রমণের মুখে বিপজ্জনক অবস্থায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যূহ গড়ে তোলে এবং এ অবস্থার অন্যথা হলে সকল সংস্কারমূলক আন্দোলনের প্রচার কার্যক্রমের অগ্নিশিখা ঐ প্রথম দিনগুলোতেই নিভে যাবে।

মহানবী (সা.)-এর বক্তব্য ও কথা ছিল পরিপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য ও ভাষণ ছিল একজন দক্ষ সুবক্তার বক্তব্যের অনুরূপ। তিনি পরম প্রাঞ্জলতা এবং বলিষ্ঠতা সহকারে তাঁর ধর্মের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন;তবে প্রচার কার্যক্রমের একদম সূচনালগ্নে তাঁর ইসলাম ধর্ম প্রচার কার্যক্রম দ্বিতীয় প্রকার শক্তির অধিকারী ছিল না। কারণ এ তিন বছরে মহানবী (সা.) মাত্র 40 জনকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন এবং ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে,এ ক্ষুদ্র দলটি শত্রুর অনিষ্ট ও ক্ষতি সাধন থেকে মহানবী (সা.)-কে রক্ষা করতে সক্ষম ছিল না।

এ কারণেই মহানবী (প্রচার কার্যক্রমের) একটি প্রতিরক্ষা ব্যূহ ও একটি শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সাধারণ মানুষের পর্যায়ে দাওয়াতী কর্মকাণ্ড শুরু করার আগেই নিকটাত্মীয়দের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানিয়েছিলেন এবং তিনি এ পথে দ্বিতীয় প্রকার শক্তির যে ঘাটতি ছিল তা পূরণ এবং সম্ভাব্য যে কোন ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিকটাত্মীয়দের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবানের ন্যূনতম ফায়দা ছিল এই যে,যদি ধরেও নেয়া হয় যে,তাঁর নিকটাত্মীয় ও জ্ঞাতিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে না,কিন্তু অন্ততপক্ষে গোত্রীয় টান ও আত্মীয়তার কারণে তারা তাঁকে বিভিন্ন ধরনের শত্রুতা ও বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ হবে। আর ঐ সময় তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম মুষ্টিমেয় গোত্রপতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিল।

অধিকন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে,সকল সংস্কার ও সংশোধন প্রক্রিয়ার মূল ভিত-ই হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সংস্কার। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি (সংস্কারক) তাঁর নিজ সন্তান-সন্ততি এবং জ্ঞাতি ও নিকটাত্মীয়দেরকে মন্দ কাজ করা থেকে বিরত রাখবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যদের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচার কার্যক্রম মোটেও প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ এমতাবস্থায় তাঁর প্রতিপক্ষ তাঁর মুখের ওপর তাঁর নিকটাত্মীয় ও জ্ঞাতি গোত্রের কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করার সুযোগ পেয়ে যাবে।

তাই এ কারণেই মহান আল্লাহ্ নিকটাত্মীয়দের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানানোর ব্যাপারে মহানবীকে ওহীর মাধ্যমে সম্বোধন করে বলেছিলেন,

) وأنذر عشيرتك الأقربينَ(

“আর আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে (পরকালের ভয়ঙ্কর শাস্তি সম্পর্কে) ভয় প্রদর্শন করুন। (সূরা আশ-শুয়ারা : 214)

আর সাধারণ জনগণের পর্যায়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানানোর ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তাঁকে আদেশ দিয়েছিলেন :

) فاصْدعْ بما تُؤمر وأعْرِضْ عن الْمُشركين إنّا كفيناك المستهزئين(

“আপনাকে যে ব্যাপারে আদিষ্ট করা হয়েছে তা প্রকাশ করুন এবং মুশরিকদের থেকে দূরে অবস্থান করুন। নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বিদ্রূপকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। 246

নিকটাত্মীয়দের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান পদ্ধতি

নিকটাত্মীয়দেরকে মহানবী (সা.) যে পদ্ধতিতে ইসলাম ধর্মের আহবান জানিয়েছিলেন তা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ঐ দিন যে সত্য প্রকাশিত হয়েছিল তাতে পরবর্তীকালে এ দাওয়াতের রহস্যসমূহ উজ্জ্বলতর হয়েছিল।

) وأنذر عشيرتك الأقربين(

আর আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন করুন’-এ আয়াতটির ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ এবং একইভাবে ঐতিহাসিকগণ প্রায় ঐকমত্য পোষণ করে লিখেছেন, মহান আল্লাহ্ তাঁকে নিকটাত্মীয়দেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানানোর ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন। মহানবীও বিভিন্ন দিক বিবেচনা ও চিন্তা-ভাবনা করার পর হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) যাঁর বয়স তখন 13 কিংবা 15 বছরের বেশি ছিল না তাঁকে দুধসহ খাবার তৈরি করার আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর বনি হাশিমের নেতৃবর্গের মধ্য থেকে 45 জনকে নিমন্ত্রণ করলেন। তিনি অতিথিদের জন্য খাদ্য পরিবেশনকালে লুক্কায়িত রহস্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ছিল এই যে,খাবার পরিবেশন করার পর মহানবী (সা.)-এর বক্তব্য শুরু করার আগেই তাঁর একজন চাচা (আবু লাহাব) অত্যন্ত হালকা ও ভিত্তিহীন কথা বলে মহানবীর রিসালাত ও নবুওয়াতের ব্যাপারে ঐ নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মহানবীর বক্তব্য শোনার আগ্রহ নষ্ট করে দেয়। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখার বিষয়টি পরের দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখাই সমীচীন ও কল্যাণকর বলে বিবেচনা করলেন। পরের দিন একই কর্মসূচী ও পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি করলেন। খাদ্য পরিবেশন করার পর মহানবী (সা.) বনি হাশিম গোত্রের নেতাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,

إنّ الرّائدَ لا يكذبُ أهله واللهِ الذي لا إله إلّا هو إنّي رسولُ اللهِ إليكم خاصَّةً و إلى النّاس عامّةً والله لتموتنَّ كما تنامون و لتُبْعَثُنَّ كما تستيقظون، ولَتُحاسبنَّ بما تعملون وإنّما الجنّةُ أبداً والنّارُ أبداً.

“নিঃসন্দেহে কোন দল বা কাফেলার পথ-প্রদর্শক তার দলের বা কাফেলার লোকদেরকে মিথ্যা বলে না। যে মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই তাঁর শপথ,নিশ্চয়ই আমি বিশেষ করে তোমাদের কাছে এবং সাধারণভাবে মানব জাতির কাছে মহান আল্লাহর প্রেরিত দূত (রাসূল)। মহান আল্লাহর শপথ,তোমরা যেমন ঘুমাও ঠিক তেমনি তোমরা অবশ্য অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে আর ঠিক যেমনভাবে তোমরা নিদ্রা থেকে জাগ্রত হও ঠিক তদ্রূপ মৃত্যুর পর তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে এবং তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই হিসাব দিতে ও জবাবদিহি করতে হবে। আর নিশ্চয়ই (সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আছে) মহান আল্লাহর চিরস্থায়ী জান্নাত এবং (অসৎকর্মশীলদের জন্য আছে) চিরস্থায়ী জাহান্নাম। 247

এরপর তিনি আরো বললেন;

فأيُّكم يوازرني على هذا الأمر على أنْ يكون أخي و وَصِيِّي و خليفتي فيكم

“আমি যা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি তা আর কোন ব্যক্তি তার নিজ সম্প্রদায়ের জন্য কখনই আনয়ন করে নি। আমি তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ এনেছি। আমার প্রভু মহান আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর দিকে আহবান করতে আমাকে আদেশ করেছেন। অতএব,তোমাদের মধ্য থেকে কোন্ ব্যক্তি আমার ভাই,ওয়াসী (নির্বাহী) ও খলীফা হওয়ার শর্তে আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করবে?

যখন মহানবীর বক্তব্য এ স্থলে উপনীত হলো তখন সমগ্র মজলিস জুড়ে নীরবতা বিরাজ করছিল। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব এবং তাদের নিজেদের কাজের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তার সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছিল। হযরত আলী (আ.) ঐ সময় মাত্র 15 বছরের কিশোর ছিলেন। তিনি এবারে মজলিসের নীরবতা ভঙ্গ করে উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, হে মহান আল্লাহর রাসূল! হে মহানবী! আমি আপনাকে সহায়তা ও সাহায্য প্রদানের জন্য প্রস্তুত। মহানবী (সা.) তাঁকে বসতে বললেন। এরপর তিনি তাঁর উপরিউক্ত কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। এ 15 বছরের কিশোর আলী ব্যতীত আর কেউ তাঁর আহবানে সাড়া দিল না। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়দের প্রতি মুখ ফিরিয়ে বলেছিলেন,

إنَّ هذا أخي و وصِيِّي و خليفتي عليكم فاسمعوا له و أطيعوه

“হে লোকসকল! এ যুবকটি তোমাদের মাঝে আমার ভাই,ওয়াসী এবং খলীফা। তার কথা তোমরা মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং তার অনুসরণ করবে। এ সময় মজলিস সমাপ্ত হলো। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ মুচকি হাসি দিয়ে আবু তালিব (আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিল, মুহাম্মদ নির্দেশ দিয়েছে যে,তুমি তোমার ছেলের অনুসরণ করবে এবং তার আদেশ পালন করবে! সে তাকে তোমার মুরব্বী বানিয়ে দিয়েছে। 248

যা কিছু ওপরে লেখা হয়েছে তা এমন এক বিস্তারিত বিষয়ের নির্যাস যা অধিকাংশ মুফাসসির ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধরনের বিবরণের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন। (একমাত্র ইবনে তাইমিয়াহ্ যিনি মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত সম্পর্কে এক বিশেষ ধরনের আকীদা পোষণ করতেন তিনি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি এ হাদীসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করেন নি। আর সবাই ঘটনাটিকে ইতিহাসের সুনিশ্চিত ও তর্কাতীত বিষয়াদির অন্তর্গত বলে বিশ্বাস করেছেন।)

অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতা

সত্য ঘটনা ও বিষয়াদির বিকৃতিসাধন,উল্টো করে উপস্থাপন এবং পর্দাবৃত রাখাই হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা ও অপরাধের স্পষ্ট নিদর্শন। ইতিহাসে যুগে যুগে একদল গোঁড়া লেখক এ পথ পরিক্রমণ করে তাঁদের তাত্ত্বিক লেখা ও রচনাবলী কতগুলো বিকৃতি ও বিচ্যুতি দিয়ে ভর্তি করে মূল্যহীন করেছেন। তবে সময় অতিবাহিত হওয়া এবং জ্ঞানের পূর্ণতা (সাধন) এ সব গোঁড়া-অন্ধ লেখককে রচনা ও লিখন কার্য থেকে বিরত রেখেছে এবং একদল (সত্যান্বেষী) কলমের খোঁচায় পর্দা ও অন্তরায় বিদীর্ণ করে বাস্তবতাসমূহকে পর্দার অন্তরাল থেকে বের করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখানে এ ধরনের খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতার একটি নমুনা তুলে ধরা হলো :

1. মুহাম্মদ ইবনে জরীর তাবারী (মৃ. 310 হি.) তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে নিকটাত্মীয়দের আহবান করার ঘটনাটি আমরা যেভাবে আলোচনা করেছি ঠিক সেভাবেই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন;কিন্তু এই একই লেখক তাঁর তাফসীর গ্রন্থে যখনوأنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الأقْرَبِيْنَ (আর আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন)-এ আয়াতটির ব্যাখ্যা করেছেন তখন তিনি তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে যা লিখেছেন তা মূল পাঠ (মতন) ও সূত্র (সনদ) সহ সেখানে উল্লেখ করেছেন,কিন্তু যখন তিনি

على أنْ يكون أخي و وصيّي و خليفتي আমার ভাই,ওয়াসী এবং খলীফা হওয়ার শর্তে -এ বাক্যাংশে উপনীত হন,তখন তিনি এ বাক্যাংশটিকে পরিবর্তিত করে লিখেছেন-

على أن يكون أخي كذا و كذا আমার ভাই এরূপ,এরূপ ! নিঃসন্দেহেو وصيّي و خليفتي আমার ওয়াসী ও আমার খলীফা’-এ শব্দসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে এরূপ,এরূপ’ উল্লেখ করা দুরভিসন্ধি পোষণ ও বিশ্বাসঘাতকতা করা বৈ আর কিছুই নয়। তিনি এতটুকু বিকৃতি সাধন করে ক্ষান্ত হন নি। তিনি শুধু মহানবী (সা.)-এর প্রশ্নবোধক বাক্যটি বাদ দেন নি,এমনকি বনি হাশিমের নেতৃবর্গের নীরব থাকার পর হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে মহানবী (সা.) যে বাক্যটি বলেছিলেন, নিশ্চয়ই এ আমার ভাই,ওয়াসী এবং খলীফা’-তাতেও বিকৃতি সাধন করেছেন এবং এরূপ এরূপ’-এ সব শব্দ ব্যবহার করেছেন।

ঐতিহাসিকের অবশ্যই সত্য ঘটনা ও বিষয়াদি লেখার ব্যাপারে মুক্ত ও সংস্কারমুক্ত হতে হবে। তাকে বিরল সাহসিকতার সাথে নির্ভীক হয়ে যা সত্য ঠিক তা-ই লিখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে,যে বিষয়টি তাবারীকে এ দু টি শব্দ আমার ওয়াসী ও খলীফা’ বাদ দিয়ে তদস্থলে এরূপ এরূপ’ এ শব্দদ্বয় আনতে উদ্বুদ্ধ করেছে তা তাঁর মাজহাবী গোঁড়ামি এবং ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস। কারণ তিনি হযরত আলী (আ.)-কে মহানবী (সা.)-এর পরপরই তাঁর ওয়াসী ও স্থলাভিষিক্ত বলে বিশ্বাস করতেন না। আর যেহেতু উক্ত শব্দদ্বয় মহানবীর ওফাতের পরপরই হযরত আলীর ওয়াসী (নির্বাহী প্রতিনিধি) এবং খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে সেহেতু তিনি আয়াতটির শানে নুযূলে বিকৃতি সাধন করে তাঁর নিজ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি,আকীদা-বিশ্বাস এবং মাজহাব সংরক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছেন।

2. ইবনে কাসীর শামী (মৃ. 732 হি.) আল-বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্’ নামক গ্রন্থে এবং তাঁর তাফসীর গ্রন্থের 3য় খণ্ডের 351 পৃষ্ঠায় ঐ পথ অনুসরণ করেছেন যা তাঁর আগে ঐতিহাসিক তাবারীও অনুসরণ করেছিলেন। আমরা কখনই  ইবনে কাসীরকে এ ব্যাপারে নির্দোষ গণ্য করতে পারি না। কারণ তাঁর গ্রন্থের মূল ভিত তারিখে তাবারী থেকে নেয়া। আর সুনিশ্চিতভাবে তিনি এ অংশটি লিপিবদ্ধ করার সময় তারিখে তাবারীর শরণাপন্ন হয়েছেন। এতদ্সত্ত্বেও অনেক বিষয় বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তিনি তারীখে তাবারীতে বর্ণিত বিষয়াদি বর্ণনা করা থেকে বিরত থেকেছেন এবং আশাতীতভাবে এ ঘটনাটি আবার তাফসীরে তাবারী থেকে বর্ণনা করেছেন।

3. মিশরের ভূতপূর্ব সংস্কৃতিমন্ত্রী হায়াতু মুহাম্মদ’ (সা.) গ্রন্থের প্রণেতা ড. হাইকাল কর্তৃক কৃত অপরাধ;আর এভাবে তিনি বর্তমান প্রজন্মের সামনে প্রকৃত বিষয় ও ঘটনাসমূহ বিকৃত করার পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করেছেন। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে,তিনি তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় প্রাচ্যবিদদের কঠোর সমালোচনা ও আক্রমণ করেছেন এবং সত্যের বিকৃতি সাধন ও ইতিহাস জাল করার জন্য তাঁদের তীব্র নিন্দাও করেছেন,অথচ তিনি এ ক্ষেত্রে তাঁদের চেয়ে কম করেন নি। কারণ :

প্রথমত উক্ত গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে তিনি উক্ত ঘটনাটি বেশ কাটছাঁট করে বর্ণনা করেছেন এবং দু টি সংবেদনশীল বাক্যের মধ্যে কেবল একটি [মহানবী (সা.) বনি হাশিমের নেতৃবর্গের প্রতি মুখ করে বললেন, আমার ভাই,আমার ওয়াসী এবং স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি হওয়ার শর্তে আপনাদের মধ্য থেকে কোন্ ব্যক্তি আমাকে এ ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকতা করবে? ] তিনি ঐ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন;তবে আরেকটি বাক্য যা মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-এর পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা করার ঘোষণা দেয়ার পর তাঁর ব্যাপারে বলেছিলেন তা তিনি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছেন এবং মহানবী (সা.) যে হযরত আলীর ব্যাপারে বলেছিলেন এ কিশোর আমার ভাই,ওয়াসী এবং স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি’ তা তিনি আদৌ উল্লেখ করেন নি।

দ্বিতীয়ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণসমূহে তিনি আরো বহুদূর এগিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনা বাদ দিয়েছেন এবং এভাবে তিনি তাঁর নিজের ও তাঁর গ্রন্থের মর্যাদার অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছেন।