চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98311
ডাউনলোড: 8161


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98311 / ডাউনলোড: 8161
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

প্রথম হিজরত

হাবাশা বা আবিসিনিয়ায়287 একদল মুসলমানের হিজরত তাঁদের গভীর ঈমান ও নিষ্ঠারই স্পষ্ট দলিল। একদল মুসলমান কুরাইশদের উৎপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া,নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন এবং এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করার জন্য শান্ত ও উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে পবিত্র মক্কা নগরী ত্যাগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য,পেশা,স্ত্রী-পরিবার,সন্তান-সন্ততি পরিহার করে অন্যত্র যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারা কোথায় যাবে,কি করবে-এ ব্যাপারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছিল যে,সমগ্র আরব উপদ্বীপ জুড়ে ছিল মূর্তিপূজা ও মূর্তিপূজকদের আধিপত্য। আরব উপদ্বীপের কোন অঞ্চলেই তাওহীদের ধ্বনি তোলা এবং একত্ববাদী ধর্মের বিধি-বিধান পালন করা সম্ভব ছিল না। যে নবীর ধর্মের মূল ভিত্তি ছিল নিশ্চয়ই আমার জমিন প্রশস্ত। অতএব,তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদাত কর’288 -এ আয়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত সেই নবীর কাছে হিজরতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করাই যে সবচেয়ে উত্তম হবে এ ব্যাপারে তারা চিন্তা করল।

আর মহানবীও মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত ছিলেন। যদিও তিনি বনি হাশিমের পূর্ণ সাহায্য-সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করতেন এবং তারা তাঁকে সব ধরনের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করতেন,তথাপি তাঁর সঙ্গী-সাথী ও অনুসারীদের মধ্যে দাস-দাসী,আশ্রয়হীন মুক্ত ব্যক্তি এবং পৃষ্ঠপোষকহীন দুর্বল ব্যক্তিদের সংখ্যা কম ছিল না। আর কুরাইশ নেতৃবর্গ এ সব ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা থেকে মুহূর্তের জন্যও বিরত থাকত না। যাতে করে আন্তঃগোত্রীয় কলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের উদ্ভব না হয় সেজন্য প্রতিটি গোত্রের নেতা এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ উক্ত গোত্রের যে সব ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করত তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। আর আপনারা এ সব লোমহর্ষক নির্যাতন ও অত্যাচারের কাহিনী পূর্ববর্তী অধ্যায়সমূহে পড়েছেন।

এ সব কারণে সাহাবিগণ যখন মহানবীর কাছে হিজরত করার ব্যাপারে তাঁদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন মহানবী বলেছিলেন,

لو خرجتم إلى أرض الحبشة فإنّ بها ملكا لا يُظلم عنده أحد و هي أرض صدق، حتّى يجعل الله لكم فرجا ممّا أنتم فيه

“যদি তোমরা হাবাশায় হিজরত কর তাহলে তা তোমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। কারণ সেখানে একজন শক্তিশালী ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ্ আছেন যাঁর সামনে কোন ব্যক্তির ওপর বিন্দুমাত্র অত্যাচার করা হয় না। সে দেশটি সত্য ও পুণ্যভূমি। তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ্ কর্তৃক মুক্তির পথ বাতলে দেয়া পর্যন্ত তোমরা সে দেশটিতে বসবাস করতে পার। 289

হ্যাঁ,যে পবিত্র পরিবেশ ও অঞ্চলের যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্বভার একজন উপযুক্ত ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তার হাতে ন্যস্ত সে দেশ বা অঞ্চলটি হচ্ছে মর্ত্যলোকে স্বর্গরাজ্যের নমুনাস্বরূপ। আর মহানবীর সাহাবীদের একমাত্র আশা-আকাঙ্ক্ষাই ছিল এ ধরনের একটি পুণ্যভূমি খুঁজে বের করা যেখানে তাঁরা পূর্ণ নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার সাথে তাঁদের ধর্মীয় দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারবেন।

মহানবী (সা.)-এর হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য তাঁদের ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল যে,তাঁরা অনতিবিলম্বে মক্কার মুশরিকদের বুঝে ওঠার আগেই কেউ পায়ে হেঁটে,আবার কেউ সওয়ারী পশুর ওপর চড়ে রাতের আঁধারে জেদ্দা বন্দরের পথ ধরে যাত্রা শুরু করে। এবারে তাঁদের মোট সংখ্যা ছিল 10 অথবা 15 জন এবং তাঁদের মধ্যে 4 জন মুসলিম নারীও ছিলেন।290

এখানে আমাদের অবশ্যই একটু চিন্তা করে দেখা দরকার যে,মহানবী (সা.) কেন হিজরতের জন্য হাবাশা ব্যতীত অন্য কোন দেশ বা স্থানের নাম প্রস্তাব করেন নি? আরব উপদ্বীপ এবং অন্যান্য সব এলাকা ও দেশের অবস্থা ও পরিবেশ অধ্যয়ন করলেই হাবাশাকে হিজরতের স্থল হিসাবে বাছাই করার কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ আরব উপদ্বীপের সকল এলাকাই ছিল সাধারণত মুশরিকদের করায়ত্তে। তাই এ সব এলাকায় হিজরত করা ছিল বিপজ্জনক। মুশরিকরা কুরাইশদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য অথবা পূর্বপুরুষদের ধর্মের প্রতি টান থাকার কারণে হিজরতকারী মুসলমানদেরকে আশ্রয় দান করা থেকে বিরত থাকত। আর আরব উপদ্বীপের খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদী অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহও মুসলমানদের হিজরতের জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল না। কারণ তারা পরস্পরের ওপর ধর্মীয় প্রভাব বিস্তার করার জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিল। তাই তাদের এলাকাসমূহে তৃতীয় প্রতিপক্ষের আগমনের কোন প্রেক্ষাপটেরই অস্তিত্ব ও সুযোগ ছিল না। অধিকন্তু এ গোষ্ঠীদ্বয় (খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদী) আরব জাতিকে হীন ও নীচ বলে গণ্য করত।

ইয়েমেন পারস্য সম্রাটের শাসনাধীন ছিল। আর ইয়েমেনে মুসলমানদের হিজরত ও বসবাস করার ব্যাপারে ইরানী প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ রাজী ছিলেন না,এমনকি মহানবী (সা.)-এর চিঠি পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের হাতে পৌঁছলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ইয়েমেনের শাসনকর্তাকে লিখিত আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, নব আবির্ভূত নবীকে গ্রেফতার করে ইরানে পাঠিয়ে দাও।”

ইয়েমেনের মতো হীরাও ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের শাসনাধীন। শাম ছিল পবিত্র মক্কা নগরী থেকে বহু দূরে। অধিকন্তু ইয়েমেন ও শাম ছিল কুরাইশদের বাজার এবং এ সব এলাকার অধিবাসীদের সাথে কুরাইশদের ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক। মুসলমানরা যদি ঐ সব অঞ্চলে আশ্রয় নিত তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে,কুরাইশদের অনুরোধে তাদেরকে ঐ সব জনপদ থেকে বহিষ্কার করা হতো। দৃষ্টান্তস্বরূপ হাবাশার বাদশার কাছে এ ধরনের আবেদন করা হয়েছিল যদিও তিনি তা গ্রহণ করেন নি।

সে যুগে শিশু ও নারীদের সাথে নিয়ে সমুদ্রপথে ভ্রমণ করা ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও দুরূহ ব্যাপার। এ ভ্রমণ ও জীবনের মায়া ত্যাগ করাটা ছিল নিঃসন্দেহে তাঁদের পবিত্র ঈমান ও নিষ্ঠার পরিচায়ক।

তখনকার জেদ্দা বন্দর ছিল আজকের ন্যায় মহাব্যস্ত বাণিজ্যিক বন্দর। সৌভাগ্যক্রমে দু টি বাণিজ্যিক জাহাজ হাবাশা গমনের অপেক্ষায় ছিল। কুরাইশদের পিছু নেয়ার ভয়ে মুসলমানরা হাবাশা গমনের ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করে এবং অর্ধ দিনার প্রদান করার মাধ্যমে অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে তারা জাহাজে চড়ে। একদল মুসলমানের ভ্রমণ ও দেশ ত্যাগের সংবাদ মক্কার মুশরিক নেতাদের কানে পৌঁছলে তারা তৎক্ষণাৎ দেশত্যাগী মুসলমানদেরকে পবিত্র মক্কা নগরীতে ফিরিয়ে আনার জন্য একদল ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু তাদের জেদ্দার সমুদ্রোপকূলে পৌঁছানোর আগেই জাহাজদ্বয় বন্দর ত্যাগ করে হাবাশার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের এ দলটির হিজরত ও দেশ ত্যাগ নবুওয়াতের 5ম বর্ষের রজব মাসে সংঘটিত হয়েছিল।

যে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটি নিজেদের ধর্মরক্ষার্থে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের পশ্চাদ্ধাবন আসলে কুরাইশদের জঘন্য পাপাচারের আরেকটি স্পষ্ট নমুনা। মুহাজিরগণ নিজেদের সন্তান-সন্ততি,পরিবার-পরিজন,ঘর-বাড়ি,ধন-সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেছিল,কিন্তু তারপরও মক্কার কাফের-মুশরিক নেতৃবর্গ তাদের পিছু ছাড়েনি। হ্যাঁ,দারুন নাদওয়ার নেতৃবর্গ বেশ কিছু কারণবশত মুসলমানদের এ সফর ও হিজরতের অন্তর্নিহিত রহস্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিল বলেই বেশ কিছু ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে গোপনে আলোচনা করেছিল যা আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব।

ক্ষুদ্র এ দলটির সবাই একই গোত্রভুক্ত ছিল না। এ দশ মুহাজিরের প্রত্যেক ব্যক্তিই ভিন্ন ভিন্ন গোত্রভুক্ত ছিল। এ হিজরতের পরপরই মুসলমানদের আরেকটি গোষ্ঠী জাফর ইবনে আবি তালিবের নেতৃত্বে হাবাশায় হিজরত করেছিল।

দ্বিতীয় হিজরত বাধাহীনভাবে সংঘটিত হয়েছিল। এ কারণেই কতিপয় মুসলমান নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিজেদের সাথে নিয়ে যেতে পেরেছিল। এদের আগমনে হাবাশায় মুসলমানদের সংখ্যা 83 জনে উন্নীত হয়। আর তারা যে সব শিশুকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল অথবা যে সব শিশু সেখানে জন্মগ্রহণ করেছিল আমরা যদি তাদের সংখ্যা হিসাব করি তাহলে তাদের পরিসংখ্যান উপরিউক্ত সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।

মহানবী (সা.) হাবাশাকে যেমন বর্ণনা করেছিলেন মুহাজির মুসলমানগণ সে দেশটিকে ঠিক সে রকম একটি সমৃদ্ধশালী ও শান্ত দেশ হিসাবেই পেয়েছিল-যেখানে পূর্ণ স্বাধীনতা বিদ্যমান ছিল। আবু সালামার স্ত্রী উম্মে সালামাহ্ যিনি পরবর্তীকালে মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছিলেন তিনি হাবাশা সম্পর্কে বলেছেন,

لمّا نزلنا أرض الحبشة جاورنا بها خير جار النّجّاشيّ أمنّا على ديننا، و عبدنا الله لا نؤذى و لا نسمع شيئا

“আমরা যখন হাবাশায় বসবাস শুরু করলাম,তখন আমরা সর্বোত্তম প্রতিবেশী বাদশা নাজ্জাশীর পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেয়েছিলাম। আমরা সেখানে কারো কাছ থেকে সামান্যতম যাতনা ও নির্যাতন ভোগ করি নি এবং কেউ আমাদের কটু কথাও শোনায় নি।”

কতিপয় মুহাজির কর্তৃক রচিত কবিতা থেকেও প্রতীয়মান হয় যে,হাবাশার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত মনোজ্ঞ,আনন্দদায়ক ও চমৎকার। আবদুল্লাহ্ ইবনে হারিস রচিত দীর্ঘ কবিতা থেকে মাত্র তিনটি পঙ্ক্তি এখানে উল্লেখ করছি এবং পুরো কবিতাটি পাদটীকায় উদ্ধৃত করব।

فلا تقيموا على ذل الحياة وخز

ي في الممات و عيب غير مـأمون

পবিত্র মক্কা নগরীতে মহান আল্লাহর সকল বান্দা

লাঞ্ছিত,নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত

আমরা মহান আল্লাহর ভূমি প্রশস্ত পেয়েছি

যা মানুষকে অপদস্থতা থেকে মুক্তি দেবে,

তাই কলঙ্কজনক জীবনের গ্লানি

অবমাননাকর মৃত্যু ও যে ত্রুটি কাউকে নিরাপত্তা দেয় না,তার জন্য অপেক্ষা করো না।

ইবনে আসির লিখেছেন, এ দলটি নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর পঞ্চম বর্ষের রজব মাসে হাবাশায় হিজরত করেছিল। এদের সবাই পুরো শাবান ও রামযান মাস হাবাশায় ছিল। যখন তাদের কাছে সংবাদ পৌঁছল যে,কুরাইশরা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন করা থেকে বিরত হয়েছে তখন তারা শাওয়াল মাসে মক্কায় ফিরে আসে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পর যে সংবাদ তাদের কাছে পৌঁছেছিল মক্কার অবস্থা ঠিক তার বিপরীতই তারা দেখতে পেল। এ কারণেই তারা পুনরায় হাবাশার পথ ধরল। 291

আগ্রহী পাঠকবর্গ এতৎসংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ পেতে হলে সীরাতে ইবনে হিশাম অধ্যয়ন করুন।292

হাবাশার রাজদরবারে কুরাইশ প্রতিনিধি

হাবাশায় মুসলমানদের স্বাধীন ও নিরুপদ্রব জীবনযাপনের সংবাদ মক্কার কাফের-মুশরিকদের নেতৃবৃন্দের কানে পৌঁছলে শত্রুতার ব হ্নি তাদের অন্তরে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। হাবাশায় মুসলমানগণ যে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে তা তখন তারা বুঝতে পারল। কারণ হাবাশার ভূমি মুসলমানদের জন্য একটি দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। তাদের ভয় এ কারণে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে,পাছে হয়তো আবিসিনিয়ার দরবারে ব্যাপক হিজরতকারী মুসলমান প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হয়ে যেতে পারে এবং আবিসিনিয়ার বাদশাকে আত্মিকভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে ফেলতে পারে। আর এর ফলে তারা (মুসলমানরা) এক সুসজ্জিত সেনাদলের দ্বারা সমগ্র আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের শাসন,প্রভাব-প্রতিপত্তি ও দৌরাত্ম্য সমূলে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হবে।

দারুন নাদওয়ার293 প্রধানগণ পুনরায় পরামর্শ সভায় মিলিত হয়ে অভিমত ব্যক্ত করল যে,কতিপয় প্রতিনিধিকে তারা হাবাশার দরবারে প্রেরণ করবে। আর সে দেশের বাদশার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তারা যথোপযুক্ত উপঢৌকনেরও ব্যবস্থা করবে। তাহলে তারা এ সব উপঢৌকন প্রদানের মাধ্যমে বাদশার অন্তরে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। এরপর তারা মুহাজির মুসলমানদেরকে বোকা,অজ্ঞ ও নতুন শরীয়ত ও ধর্মমতের উদ্ভাবক বলে বাদশার সামনে অভিযুক্ত করবে। যাতে করে তাদের পরিকল্পনা যত দ্রূত সম্ভব বাস্তবায়িত হয় সেজন্য তারা তাদের নিজেদের মধ্য থেকে দু জন অভিজ্ঞ,ধূর্ত ও ফন্দিবাজকে মনোনীত করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,উক্ত দু জন ফন্দিবাজের একজন পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুখোড় রাজনীতিকে পরিণত হয়েছিল। লটারীতে আমর ইবনে আস ও আবদুল্লাহ্ ইবনে রবীয়ার নাম উঠল। দারুন নাদওয়ার প্রধান তাদের দু জনকে নির্দেশ দিল : বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করার আগেই মন্ত্রীদের উপঢৌকনগুলো তাদের কাছে সমর্পণ করবে এবং আগেই তাদের সাথে আলোচনা সেরে নেবে। আর তাদের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে যাতে করে বাদশার সাথে সাক্ষাতকালে তারা তোমাদের আবেদনের সত্যায়ন করে। উপরিউক্ত ব্যক্তিদ্বয় প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেয়ে হাবাশার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

হাবাশার মন্ত্রীরা কুরাইশ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হলো। কুরাইশ প্রতিনিধিরা যে সব উপঢৌকন মন্ত্রীদের জন্য এনেছিল সেগুলো তাদের কাছে অর্পণ করে বলল, আমাদের মধ্য থেকে একদল অর্বাচীন যুবক নিজেদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে এমন এক ধর্ম উদ্ভাবন করেছে যা আমাদের ও আপনাদের ধর্ম থেকে পৃথক। আর এখন তারা আপনাদের দেশেই বসবাস করছে। কুরাইশ নেতৃবর্গ ও অভিজাতশ্রেণী ঐকান্তিকভাবে হাবাশার বাদশাকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি যেন যত শীঘ্র সম্ভব এ সব আশ্রয় গ্রহণকারীকে বহিষ্কারের আদেশ জারী করেন এবং ইত্যবসরে আমরা আরো অনুরোধ করছি যে,বাদশার সাথে আলাপ-আলোচনাকালে মন্ত্রী পরিষদ যেন আমাদের সহায়তা দান করা থেকে কুণ্ঠিত না হন। আর যেহেতু আমরা তাদের দোষ-ত্রুটি ও অবস্থা উত্তমরূপে জ্ঞাত সেহেতু তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করাই শ্রেয়। আর বাদশার সাথেও যেন তাদের দেখা-সাক্ষাৎ না হয়।”

লোভী ও স্থূলদৃষ্টিসম্পন্ন দরবারিগণ তাদেরকে আশা-ভরসা দিল। পরের দিন তারা হাবাশার বাদশার কাছে গমন করল। কুশল বিনিময় এবং উপঢৌকন অর্পণ করার পর তারা কুরাইশদের বাণী বাদশার কাছে পৌঁছে দিয়ে বলল, হাবাশার সম্মানিত বাদশাহ্! কতিপয় অর্বাচীন ও নির্বোধ যুবক তাদের নিজেদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে এমন এক ধর্ম প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে যা হাবাশার রাষ্ট্রধর্মের সাথেও যেমন খাপ খায় না,ঠিক তেমনি তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মের সাথেও খাপ খায় না। এ দলটি সম্প্রতি এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং এ দেশে মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা ও সুযোগ আছে তার তারা অপব্যবহার করছে। তাদের গোত্র ও সম্প্রদায়ের প্রধানগণ হাবাশার বাদশার কাছে বিনীত নিবেদন করেছেন যেন তিনি তাদের বহিষ্কারের আদেশ প্রদান করেন। এর ফলে যেন তারা তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হয়।...

যখনই কুরাইশ প্রতিনিধিদের বাণী এ স্থলে পৌঁছাল,যে সব মন্ত্রী রাজকীয় সিংহাসনের পাশে উপবিষ্ট ছিল তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত হলো। তাদের সবাই কুরাইশ প্রতিনিধিদের সাহায্যার্থে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের বক্তব্য সত্যায়ন করল। কিন্তু হাবাশার জ্ঞানী ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ্ তাঁর দরবারের আমাত্য ও সভাসদদের সাথে বিরোধিতা করে বললেন, কখনই এ কাজ বাস্তবায়িত হবে না। আমি যে দলটিকে আমাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি,অনুসন্ধান করা ব্যতীত কেবল এ দু জন ব্যক্তির কথায় তাদের হাতে সোপর্দ করব না। অবশ্যই এ সব আশ্রয় গ্রহণকারীর প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান করার পর যদি তাদের ব্যাপারে এ দু জন প্রতিনিধির বক্তব্য সঠিক হয়,তাহলে তাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাব। আর এদের ব্যাপারে যদি প্রতিনিধিদের বক্তব্য সত্য না হয় তাহলে আমি কখনই তাদের প্রতি আমার সমর্থন প্রত্যাহার করব না এবং তাদেরকে আগের চেয়েও বেশি সাহায্য করব।”

অতঃপর শাহী দরবারের বিশেষ কর্মকর্তা মুহাজির মুসলমানদের কাছে গমন করে পূর্ব থেকে বিন্দুমাত্র কিছু না জানিয়েই তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে দরবারে উপস্থিত করল। জাফর ইবনে আবু তালিবকে মুহাজির মুসলমানদের প্রতিনিধি বলে পরিচিত করানো হলো। কতিপয় মুসলমান উদ্বিগ্ন ছিলেন যে,এতদ্প্রসঙ্গে মুহাজির মুসলমানদের মুখপাত্র হাবাশার খ্রিষ্টান বাদশার সাথে কিভাবে কথা বলবেন? সব ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য জাফর ইবনে আবু তালিব বললেন, আমি যতটুকু আমার নেতা ও নবীর কাছ থেকে শুনেছি তার চেয়ে কম বা বেশি কিছুই বলব না।

হাবাশার বাদশাহ্ জাফরের দিকে মুখ করে বললেন, কেন আপনারা আপনাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে এমন এক নতুন ধর্মের অনুসারী হয়েছেন যার সাথে আমাদের ধর্মেরও মিল নেই? জাফর ইবনে আবু আলিব বললেন, আমরা অজ্ঞ-মূর্খ ও মূর্তিপূজারী ছিলাম। আমরা মৃত ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকতাম না। আমরা সব সময় খারাপ কাজ করতাম। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতাম না। দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তিরা ছিল ক্ষমতাবানদের অধীন আজ্ঞাবহ। আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব করতাম। আমরা এভাবেই আমাদের জীবন নির্বাহ করছিলাম ঐ সময় পর্যন্ত যখন আমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি যিনি পূর্ব হতেই সততা,সত্যবাদিতা ও সচ্চরিত্রের জন্য খ্যাত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশে আমাদের সবাইকে তাওহীদের (একেশ্বরবাদ) দিকে আহবান জানালেন এবং প্রতিমাসমূহের স্তুতি ও প্রশংসাকে অত্যন্ত ঘৃণ্য বলে গণ্য করলেন। তিনি আমানত সংরক্ষণ,অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকা,নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে সদাচরণ এবং রক্তপাত,অবৈধ যৌন সম্পর্ক,মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান,ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ এবং মহিলাদেরকে খারাপ কাজ আঞ্জাম দেয়ার অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আমাদেরকে নামায পড়তে,রোযা রাখতে এবং (নিজেদের) সম্পদের যাকাত আদায় করার নির্দেশ দেন। আমরা মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রশংসা ও উপাসনায় রত হলাম। তিনি যা হারাম সাব্যস্ত করেছেন তা হারাম এবং তিনি যা হালাল সাব্যস্ত করেছেন আমরা তা হালাল বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু কুরাইশ গোত্র আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যাতে করে আমরা আমাদের ধর্ম ত্যাগ করে পুনরায় পাথর ও ফুলের পূজা করি এবং অপবিত্র ও মন্দ কাজে লিপ্ত হই সেজন্য তারা আমাদেরকে দিন-রাত নির্যাতন করেছে। আমাদের সহ্যক্ষমতা ও শক্তি নিঃশেষিত হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছি। আমাদের নিজেদের ধর্মরক্ষা করার জন্য আমরা আমাদের জীবন ও সহায়-সম্পদের মায়া ত্যাগ করে হাবাশায় আশ্রয় নিয়েছি। হাবাশার বাদশার ন্যায়পরায়ণতা আমাদের চুম্বকের মতো তাঁর দেশের দিকে টেনে এনেছে এবং এখনও তাঁর ন্যায়পরায়ণতার ওপর আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা আছে।294

জাফর ইবনে আবি তালিবের সুমিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য এতটা কার্যকরী হয়েছিল যে,হাবাশার বাদশা অশ্রুসজল নেত্রে তাঁকে তাঁর নবীর ওপর অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থ থেকে কিয়দংশ পাঠ করার অনুরোধ করেছিলেন। জাফর সূরা মরিয়মের প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। তিনি এ সূরার আয়াতগুলোর তেলাওয়াত অব্যাহত রাখলেন এবং হযরত মরিয়মের সতীত্ব ও হযরত ঈসা (আ.)-এর মর্যাদা ও অবস্থান সংক্রান্ত ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে তুলে ধরলেন। সূরা মরিয়মের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত শেষ হতে না হতেই বাদশা ও ধর্মযাজকদের ক্রন্দনধ্বনি উচ্চকিত হলো। অশ্রুজল তাঁদের দাড়ি ও তাঁদের সম্মুখে উন্মুক্ত গ্রন্থগুলোকে সিক্ত করছিল।

বেশ কিছুক্ষণ পুরো রাজদরবারে সুনসান নীরবতা বিরাজ করতে লাগল,এমনকি সবার মধ্যে অনুচ্চ গুঞ্জরণ ধ্বনিও থেমে গিয়েছিল। তখন হাবাশার বাদশাহ্ বললেন, এদের নবীর বাণী এবং যা কিছু ঈসা (আ.) আনয়ন করেছেন সেগুলো আসলে একই আলোকোজ্জ্বল উৎস থেকে উৎসারিত (إنّ هذا و ما جاء به عيسى ليخرج من مشكاة واحدة )। তোমরা চলে যাও। আমি কখনই এদেরকে তোমাদের হাতে সোপর্দ করব না।”

রাজকীয় অধিবেশন মন্ত্রীবর্গ ও কুরাইশ প্রতিনিধিগণ যা ধারণা করেছিল ঠিক তার বিপরীতে চলে গেল। ফলে তাদের কোন আশাই আর বিদ্যমান রইল না।

আমর ইবনে আস ছিল ধূর্ত রাজনীতিবিদ। সে তার সফরসঙ্গী আবদুল্লাহ্ ইবনে রাবীয়ার সাথে রাতে আলোচনা করে বলল, আমাদেরকে আগামীকাল অবশ্যই ভিন্ন আরেকটি পথ অবলম্বন করতে হবে। সম্ভবত আশা করা যায় যে,এ পথেই মুহাজির মুসলমানদের প্রাণ আর রক্ষা পাবে না। আমরা আগামীকাল হাবাশার বাদশাকে বলব,এ সব মুহাজিরের নেতা (জাফর ইবনে আবি তালিব) হযরত ঈসার ব্যাপারে এক বিশেষ আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে যা খ্রিষ্টধর্মের আকীদার পরিপন্থী। আবদুল্লাহ্ তাকে এ ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য বলল, এ সব ব্যক্তির মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি আছে যাদের সাথে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু এ ব্যাপারে তার কথায় কোন কাজ হলো না। পরের দিন পুনরায় তারা হাবাশার রাজদরবারে মন্ত্রীবর্গসমেত উপস্থিত হলো। এবার তারা হাবাশার রাষ্ট্রধর্মের প্রতি সহমর্মিতা ও সাহায্যের ধূয়ো তুলে হযরত ঈসা মসীহ্ (আ.) সংক্রান্ত মুসলমানদের আকীদার সমালোচনা করতে লাগল। তারা বাদশাকে বলল, ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারে এরা এক বিশেষ ধরনের আকীদা পোষণ করে যা খ্রিষ্টধর্মের আকীদা ও মূলনীতির সাথে মোটেও খাপ খায় না। আর এ ধরনের ব্যক্তিদের উপস্থিতি আপনাদের রাষ্ট্রধর্মের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখতে পারেন।”

হাবাশার বুদ্ধিমান শাসনকর্তা এবারও অনুসন্ধান ও যাচাই করার উদ্যোগ নিলেন। তিনি মুহাজিরদেরকে দরবারে উপস্থিত করার আদেশ দিলেন। পুনরায় দরবারে তলব করার ব্যাপারে মুহাজির মুসলমানগণ চিন্তা করতে লাগলেন। যেন তাঁদের কাছে ইলহাম হলো যে,শাহী দরবারে তাঁদেরকে পুনরায় তলব করার কারণই হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মের প্রধান ব্যক্তিত্ব হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে মুসলমানদের আকীদা কি তা জিজ্ঞাসা করা। এবারেও জাফর ইবনে আবি তালিব মুসলমানদের মুখপাত্র মনোনীত হলেন। তিনি আগেই মুসলমানদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে,মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে এ ব্যাপারে যা কিছু শুনেছেন তা বলবেন।

বাদশাহ্ নাজ্জাশী মুহাজিরদের প্রতি তাকিয়ে বললেন, হযরত ঈসা মসীহ্ সম্পর্কে আপনাদের আকীদা কী? জাফর ইবনে আবি তালিব উত্তরে বললেন, হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আমাদের নবী (সা.) যা বলেছেন সেটিই আমাদের আকীদা। তিনি মহান আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁর পক্ষ থেকে রূহ ও কালেমা ছিলেন যা কুমারী ও দুনিয়াবিমুখ মরিয়মকে প্রদান করা হয়েছিল। 295

হাবাশার বাদশাহ্ জাফর ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর কথায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট ও প্রসন্ন হলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহর শপথ,এর চেয়ে বেশি মর্যাদা হযরত ঈসা (আ.)-এর ছিল না। কিন্তু বাদশার এ কথা বিচ্যুত মন্ত্রীবর্গ ও দরবারীদের পছন্দ হলো না। তবুও বাদশাহ্ মুসলমানদের আকীদা-বিশ্বাসের প্রশংসা করলেন এবং তিনি তাঁদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন। তিনি কুরাইশদের প্রেরিত উপঢৌকনগুলো কুরাইশ প্রতিনিধিদের সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ্ তো আমাকে এ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করার সময় আমা থেকে কোন উৎকোচ নেন নি। এ কারণেই আমার জন্য শোভনীয় নয় যে,আমিও এ পথে জীবিকা নির্বাহ করি। 296