চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 98269
ডাউনলোড: 8160


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 242 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 98269 / ডাউনলোড: 8160
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

নবুওয়াতের দশম বর্ষটি আনন্দ-বেদনার বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অতিবাহিত হলো। এ বছরেই তিনি তাঁর বড় দুই পৃষ্ঠপোষক হারান। প্রথমে আবদুল মুত্তালিব পরিবারের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব,তাঁর মিশনের একমাত্র কুরাইশ সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক স্বীয় চাচা আবু তালিবকে হারান। এ মুসিবতের কষ্ট তাঁর অন্তর হতে দূরীভূত হওয়ার পূর্বেই প্রিয় স্ত্রী হযরত খাদীজার বিয়োগ তাঁর মনোকষ্টকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল।354 হযরত আবু তালিব মহানবী (সা.)-এর প্রাণ ও সম্মান রক্ষাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং হযরত খাদীজাহ্ তাঁর সমগ্র সম্পদ দ্বারা ইসলামের উন্নতি ও সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত’ গ্রন্থের 1ম খণ্ডের 25 পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। আবু তালিবের মৃত্যুর কয়েকদিন পর কুরাইশ বংশীয় এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর মাথায় কিছু মাটি ঢেলে দিলে তিনি এ অবস্থায় গৃহে ফিরে আসলেন। তাঁর এক কন্যা এ করুণ অবস্থায় পিতাকে দেখে দ্রূত পানি এনে তা দ্বারা পিতার মস্তক ধৌত করতে থাকেন ও চিৎকার করে ক্রন্দন শুরু করেন। তাঁর চক্ষু হতে পানি ঝরতে দেখে নবী (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ক্রন্দন করো না। আল্লাহ্ তোমার পিতার রক্ষক। অতঃপর বললেন, যতদিন আবু তালিব জীবিত ছিলেন,কুরাইশ আমাকে কষ্ট দেয়ার সাহস পায় নি। 355

মক্কায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার কারণে নবী (সা.) অন্য স্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে সময় তায়েফ’ হিজাযের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। তিনি সেখানে একটি সফরের চিন্তা করলেন। তিনি ভাবলেন,সেখানকার সাকীফ’ গোত্রের নিকট গিয়ে দীনের দাওয়াত দিবেন (যদি তারা তা গ্রহণ করে এ আশায়)। তিনি তায়েফে পৌঁছে উপরিউক্ত গোত্রের প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদের নিকট নিজের আনীত একত্ববাদী ধর্মের বিবরণ দান করে তা গ্রহণের আহবান জানালেন। কিন্তু নবীর এ আহবান ও বক্তব্য তাদের ওপর কোন প্রভাব তো বিস্তার করলই না,বরং তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বলল, যদি তুমি আল্লাহর প্রেরিত নবী হয়ে থাক তবে তোমাকে অস্বীকার করার কারণে প্রতিশ্রুত আযাব আন। আর যদি তোমার দাবি মিথ্যা হয় তবে কোন কথা বলার অধিকার তোমার নেই।”

নবী করীম তাদের অযৌক্তিক ও শিশুসুলভ কথায় বুঝতে পারলেন তারা দায়িত্ব এড়াতে চাইছে। ফলে তিনি সে স্থান ত্যাগ করা সমীচীন মনে করে তাদের নিকট থেকে এ প্রতিশ্রুতি নিলেন যে,তাঁর এ কথা যেন গোত্রের অন্য ব্যক্তিরা জানতে না পারে। কারণ এতে গোত্রের নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিরা তাঁর একাকিত্বের সুযোগে তাঁর ক্ষতি করতে পারে। কিন্ত সাকীফ গোত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল না। তারা গোত্রের মূর্খ ও দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে নবীর পেছনে লেলিয়ে দিল। নবী (সা.) হঠাৎ করে নিজেকে অসংখ্য শত্রুর মাঝে দেখতে পেলেন। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে নিজ শত্রু উতবা ও শায়বার মালিকানাধীন বাগানে আশ্রয় নিলেন।356 নবী অনেক কষ্টে ঐ বাগানে প্রবেশ করলেন। তায়েফবাসীরাও তাঁকে ঐ অবস্থায় দেখে প্রত্যাবর্তন করল। তখন নবী (সা.)-এর পবিত্র দেহ ক্ষত-বিক্ষত এবং তাঁর দেহ হতে অবিরত ঘাম ও রক্ত ঝরছিল। তিনি আঙ্গুরের মাচার নিচে বসে বলছিলেন,

اللّهم إليك أشكو ضعف قوّتي و قلّة حيلي و هواني على النّاس يا أرحم الرّاحمين أنت ربّ المستضعفين و أنت ربّي من تكلني...

“হে আল্লাহ! আমার শক্তির স্বল্পতা ও অক্ষমতার বিষয়ে আপনার দ্বারস্থ হয়েছি। আপনি পরমতম দয়ালু এবং অসহায় ও দুর্বলের আশ্রয়। আপনি আমার প্রতিপালক,আমাকে কার ওপর ছেড়ে দেবেন...?

উপরিউক্ত দোয়ার ভাষা এমন এক ব্যক্তির যিনি পঞ্চাশ বছর সম্মান ও মর্যাদার সাথে নিবেদিত ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় জীবন কাটিয়েছেন। এখন তিনি এমনই সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন যে,শত্রুর উদ্যানে ক্লান্ত ও ক্ষত-বিক্ষত দেহ নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এবং নিজ ভবিষ্যতের প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

এমন সময় রাবিয়া’ পরিবারের এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর অবস্থাদৃষ্টে প্রভাবিত হয়ে স্বীয় দাস আ দাসকে তাঁর নিকট এক পেয়ালা আঙ্গুরের রস নিয়ে যাবার নির্দেশ দিল। আ দাস একজন খ্রিষ্টান ছিল। সে যখন আঙ্গুরের রসপূর্ণ পাত্র নিয়ে নবীর নিকট উপস্থিত হলো তখন তাঁর আলোকোজ্জ্বল চেহারা দেখে হতচকিত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ঘটনা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। আর তা হলো এ খ্রিষ্টান দাস লক্ষ্য করল,নবী (সা.) আঙ্গুরের রসপানের মুহূর্তে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বললেন। বিষয়টি তাকে এতটা আশ্চর্যান্বিত করল যে,সে নীরবতা ভেঙে নবী (সা.)-কে প্রশ্ন করল, আপনি যে বাক্যটি বললেন,আরব উপদ্বীপের কেউ এ বাক্যের সঙ্গে পরিচিত নয় এবং আমি কোন ব্যক্তির নিকট থেকে এ বাক্য শুনি নি;সাধারণত এ অঞ্চলের লোকেরা খাদ্য গ্রহণের সময় লাত ও উয্যার নাম উচ্চারণ করে থাকে। রাসূল (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কোথাকার অধিবাসী এবং কোন্ ধর্মের অনুসারী? সে বলল, আমি নেইনাওয়া’-এর অধিবাসী এবং খ্রিষ্টান। নবী (সা.) বললেন, তাহলে তুমি আল্লাহর পুণ্যময় বান্দা ইউনুস ইবনে মাত্তার অঞ্চলের লোক। নবীর এ কথায় সে অধিকতর আশ্চর্যান্বিত হলো। সে প্রশ্ন করল, আপনি ইউনুস ইবনে মাত্তাকে কিরূপে চিনলেন? নবী বললেন, আমার ভ্রাতা ইউনুস আমার ন্যায় আল্লাহর নবী ছিলেন। নবীর বক্তব্যে সত্যতার চি‎‎ হ্ন লক্ষ্য করে সে আশ্চর্য রকম প্রভাবিত হলো। সে নবীর প্রতি এতটা আকৃষ্ট হলো যে,তাঁর হাতে-পায়ে চুম্বন করতে লাগল এবং তাঁকে সত্য নবী বলে গ্রহণ করল। অতঃপর তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজ মালিকের দিকে প্রত্যাবর্তন করল। তার মনিব তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাকে প্রশ্ন করল, এ আগন্তুক ব্যক্তির সঙ্গে কি বিষয়ে আলাপ করলে এবং কেনই বা তার হাতে-পায়ে পড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করলে? দাস উত্তর দিল, যে ব্যক্তিটি এ বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি মানবকুলের নেতা। তিনি আমাকে এমন বিষয়ে বলেছেন-যে বিষয়ে কেবল নবীরাই জানেন। তিনিই প্রতিশ্রুত নবী। তার এ কথায় রাবীয়ার সন্তানরা অসন্তুষ্ট হয়ে তার শুভাকাক্সক্ষী হিসাবে বুঝানোর চেষ্টা করল, এ ব্যক্তি তোমাকে তোমার আদি ধর্ম থেকে সরিয়ে নিতে চায়,অথচ তুমি যে খ্রিষ্টধর্মে রয়েছ তা তার ধর্ম থেকে উত্তম।”

মহানবীর মক্কায় প্রত্যাবর্তন

তায়েফবাসী কর্তৃক পশ্চাদ্ধাবনের বিষয়টি রাবীয়া পরিবারের উদ্যানে আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটলেও যেহেতু নবীকে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসতে হবে সেহেতু মক্কায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিও তাঁর জন্য তেমন সুখকর নয়। কারণ মক্কায় তাঁর একমাত্র পৃষ্ঠপোষকের মৃত্যুর ফলে তিনি প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথেই বন্দী অথবা নিহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কয়েকদিন মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে অবস্থান করবেন। তিনি পরিকল্পনা করলেন কাউকে কুরাইশ নেতাদের নিকট প্রেরণ করে নিজ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেখানে এমন কোন ব্যক্তির সন্ধান না পেয়ে হেরা পর্বতের উদ্দেশে যাত্রা করলেন এবং একজন খুযায়ী আরব ব্যক্তির সন্ধান পেলেন। তিনি তাকে মক্কার অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি মুতয়েম ইবনে আদীর নিকট গিয়ে তাঁর জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানালেন। খুযায়ী লোকটি মক্কায় প্রবেশ করে মুতয়েমের নিকট মহানবীর অনুরোধের বিষয়টি উপস্থাপন করল। মুতয়েম যদিও একজন মূর্তিপূজক ছিলেন তদুপরি মহানবীর অনুরোধ রক্ষা করলেন এবং বললেন, মুহাম্মদ আমার গৃহে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে এবং আমি ও আমার সন্তানেরা তার নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব নিলাম। নবী করীম (সা.) রাত্রিতে মক্কায় প্রবেশ করে সরাসরি মুতয়েমের গৃহে পৌঁছলে সেখানে রাত্রি যাপনের পর প্রভাত হলে মুতয়েম তাঁর নিকট প্রস্তাব রাখলেন যেহেতু তাঁর গৃহে নবীর আশ্রয় গ্রহণের বিষয়টি কুরাইশদের জানা প্রয়োজন সেহেতু নবী যেন তাঁর সঙ্গে কাবা ঘর পর্যন্ত যান। প্রস্তাবটি মহানবীর পছন্দ হলো এবং তিনি এ প্রস্তাবে সম্মত হলেন। মুতয়েম তাঁর সন্তানদের অস্ত্রসহ প্রস্তুত হতে আদেশ দিলেন। অতঃপর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা বায়তুল্লায় প্রবেশ করলেন। তাঁদের বায়তুল্লায় প্রবেশের দৃশ্যটি দর্শনীয় ছিল। আবু সুফিয়ান রাসূলের অনিষ্টের প্রচেষ্টায় ছিল,কিন্তু রাসূলকে এভাবে কাবা গৃহে প্রবেশ করতে দেখে সে খুবই রাগান্বিত হলো কিন্তু তাঁর ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা ত্যাগে বাধ্য হলো। মুতয়েম ও তাঁর সন্তানরা কাবাগৃহের নিকট বসে পড়লেন এবং নবী করীম (সা.) শান্তভাবে কাবার তাওয়াফ সম্পন্ন করলেন। তাওয়াফ শেষ করে তাঁদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন।357

এর কিছুদিন পরেই মহানবী (সা.) মদীনায় হিজরত করেন এবং হিজরতের প্রথম বর্ষেই মক্কায় মুতয়েমের মৃত্যু ঘটে। যখন তাঁর মৃত্যুর খবর নবীর নিকট পৌঁছে তখন তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁকে স্মরণ করেন। নবীর সাহাবী কবি হাসসান ইবনে সাবিত তাঁর প্রশংসায় বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছেন। মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময় এ ব্যক্তির কথা স্মরণ করতেন,যেমন বদর যুদ্ধের পর-এ যুদ্ধে কুরাইশরা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে ও তাদের অনেকেই মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়-রাসূল (সা.) মুতয়েমের কথা স্মরণ করে বলেন, যদি মুতয়েম এখন জীবিত থাকতেন এবং আমাকে এ বন্দীদের মুক্তিদানের অনুরোধ করতেন বা ক্ষমা করে তাঁর নিকট হস্তান্তরের আহবান জানাতেন তাহলে আমি তা গ্রহণ করতাম।”

একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়

রাসূলের তায়েফ সফরের কষ্টদায়ক ঘটনাটি তাঁর দৃঢ়তা ও সহনশীলতার দৃষ্টান্ত। তাই ঐ বিশেষ মুহূর্তে মুতয়েম ইবনে আদী তাঁর প্রতি যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি তা কখনই ভুলতে পারেন নি। এ বিষয়টি আমাদেরকে উন্নত এক বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রতি আহবান জানায়। কিন্তু এ ঘটনাটি এর বাইরের অপর একটি বিষয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আর তা হলো রাসূলের চাচা আবু তালিবের মূল্যবান অবদান। মুতয়েম কয়েকদিন বা কয়েক ঘণ্টা রাসূলের খেদমত ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন,অথচ আবু তালিব সারা জীবন রাসূলের খেদমত ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। হযরত আবু তালিব রাসূল (সা.)-কে রক্ষা করতে যত কষ্ট সহ্য করেছেন মুতয়েম তার সহস্র ভাগের একভাগও করেন নি। যদি রাসূলুল্লাহ্ মুতয়েমের কয়েক ঘণ্টার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বদরের যুদ্ধের সকল বন্দীকে মুক্তি দিতে সম্মত হতে চান,তবে স্বীয় চাচার অক্লান্ত ও নিরবচ্ছিন্ন খেদমতের প্রতিদান কি দিয়ে দিতে পারেন? যে ব্যক্তি নবুওয়াতের ধারকের আট বছর বয়স হতে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর সেবা করেছেন,বিশেষত শেষ দশ বছর নিজের ও স্বীয় পুত্রের জীবন বাজি রেখে তাঁকে রক্ষায় ব্রত হয়েছেন বিশ্বনেতার নিকট তাঁর স্থান কোন্ পর্যায়ে হওয়া উচিত? তদুপরি এ দু ব্যক্তির (হযরত আবু তালিব ও মুতয়েম) মধ্যে বিরাট পার্থক্য লক্ষণীয়। আর তা হলো মুতয়েম একজন মূর্তিপূজক,অথচ আবু তালিব ছিলেন ইসলামী জগতের এক শ্রেষ্ঠ মুসলিম ব্যক্তিত্ব।

আরবদের প্রসিদ্ধ বাজারসমূহে বক্তব্য দান

হজ্বের সময়ে আরবরা উকাজ,মাজনাহ্,যিলমাজাজ প্রভৃতি স্থানে সমবেত হতো। বাগ্মী,মিষ্টভাষী কবিরা বিভিন্ন উচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে প্রেম,গোত্রীয় প্রশংসা ও বীরত্বসূচক কবিতা ও বাণীসমূহ উপস্থাপন করে লোকদের মাতিয়ে রাখতেন। নবী করীম (সা.) পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীর ন্যায় এরূপ সমাবেশের সুযোগকে কাজে লাগাতেন। যেহেতু হারাম মাসসমূহে (রজব,শাবান,যিলহজ্ব ও মুহররম) যুদ্ধ ও রক্তপাত নিষিদ্ধ ছিল সেহেতু নবী (সা) এ সময় তাদের নিকট থেকে ক্ষতির আশংকামুক্ত ছিলেন। তিনিও অন্যান্যের মতো এক উচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের উদ্দেশে বলতেন,

قولوا لا إله إلّا الله تفلحوا تملكوا بها العرب و تذلّ لكم العجم و إذا آمنتم كنتم ملوكا في الجنة

“আল্লাহর একত্বকে মেনে নাও,তবে সফলকাম হবে। এ ঈমানের শক্তিতে তোমরা বিশ্বকে (আজম) পদানত করতে পারবে এবং সকল মানুষ তোমাদের অনুগত হবে। যখন তোমরা ঈমান আনবে তখন চিরস্থায়ী বেহেশতে স্থান লাভ করবে।”

হজ্বের মৌসুমে বিভিন্ন গোত্রপতিদের প্রতি দাওয়াত

নবী করীম (সা.) হজ্বের সময় আরবের বিভিন্ন গোত্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। বিভিন্ন স্থানে তাদের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে নিজ দীনের দাওয়াত পেশ করতেন। কখনো কখনো নবীর বক্তব্যে বাধা প্রদান করে আবু লাহাব তাদেরকে তাঁর কথা বিশ্বাস না করতে বলত। সে প্রচার চালাত এ বলে যে,রাসূল (সা.) তাদের পিতৃধর্মের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং তাঁর দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিজ চাচার বিরোধিতার বিষয়টি গোত্রপতিদের মনের ওপর প্রভাব ফেলত এ কারণে যে,তারা মনে করত যদি এ ব্যক্তির কথা সত্য হতো তবে চাচা ও আত্মীয়রা তাঁর বিরোধিতা করত না।358

বনি আমের গোত্রের কিছুসংখ্যক লোক মক্কায় আগমন করলে নবী (সা.) তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত উপস্থাপন করলেন। তারা এ শর্তে ইসলাম গ্রহণে সম্মত হলো যে,নবীর মৃত্যুর পর তাদের গোত্র তাঁর উত্তরাধিকারী হবে। তিনি বললেন যে,তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনয়নের দায়িত্ব আল্লাহর,তিনি যাকে ভালো মনে করেন তাকেই মনোনীত করেন।359 এ কথা শ্রবণে তারা ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রইল। নিজ গোত্রের নিকট ফিরে গিয়ে বিষয়টি এক স্বচ্ছ হৃদয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন করলে তিনি বললেন,এটি সেই উজ্জ্বল নক্ষত্র যা মক্কার আকাশে উদিত হওয়ার কথা। ইতিহাসের এ অংশটি প্রমাণ করে যে, ইমামত’ অর্থাৎ রাসূলের উত্তরাধিকারী নির্ধারণের বিষয়টি মানুষের নির্বাচনের মাধ্যমে নয়,বরং আল্লাহর মনোনয়নের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পিশভোয়ায়ী আয নাজারে ইসলাম’ (ইসলামের দৃষ্টিতে নেতৃত্ব) নামক গ্রন্থে আলোচনা করেছি।

চব্বিশতম অধ্যায় : আকাবার চুক্তি

পূর্বকালে ইয়েমেন হতে সিরিয়ায় বাণিজ্য কাফেলার পথ ছিল ওয়াদিউল কুরা র ওপর দিয়ে। ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য কাফেলা মক্কা অতিক্রম করে যে বিস্তীর্ণ উপত্যকায় পৌঁছত তাকে ওয়াদিউল কুরা বলা হতো। ওয়াদিউল কুরা অতিক্রম করে যে সবুজাকীর্ণ লোকালয়ে কাফেলা পৌঁছায় তার পূর্ববর্তী নাম ছিল ইয়াসরিব’। পরবর্তীতে তা মদীনাতুর রাসূল’ নামে অভিহিত হয় ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ এলাকায় ইয়েমেনের কাহতানী’ আরবদের (যারা ইয়েমেন থেকে অত্র এলাকায় হিজরত করে এসেছিল) দু টি গোত্র (আওস ও খাজরাজ) বসবাস করত। সেখানে আরব উপদ্বীপের উত্তরাঞ্চল হতে আসা ইয়াহুদীদের তিনটি প্রসিদ্ধ গোত্রও (বনি কুরাইযাহ্,বনি নাযির ও বনি কাইনুকা’) বাস করত। প্রতি বছরই ইয়াসরিব হতে একদল লোক মক্কায় হজ্বের উদ্দেশ্যে আসত। নবী (সা.) তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এরূপ সাক্ষাতের ফলশ্রুতিতেই হিজরতের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ইসলামের বিক্ষিপ্ত শক্তিকে এক স্থানে কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যদিও এরূপ সাক্ষাতের অধিকাংশই ফলপ্রসূ হতো না তদুপরি ইয়াসরিবের হাজীরা নতুন এক নবীর আগমনের সংবাদ বহন করে নিয়ে যেত যা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসাবে সেখানে প্রচারিত হতো। খবরটি সেখানকার অধিবাসীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করত। তাই আমরা এখানে এরূপ কয়েকটি সাক্ষাতের বিবরণ পেশ করছি যা নবুওয়াতের একাদশ,দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ বছরে হয়েছিল। এ আলোচনা থেকে নবীর মক্কা হতে মদীনায় হিজরতের কারণ ও ইসলামী শক্তির কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

. যখনই মহানবী (সা.) জানতে পারতেন কোন বহিরাগত ব্যক্তি মক্কায় এসেছে তখনই তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন ও তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন। একদিন তিনি খবর পেলেন সুয়াইদ ইবনে সামেত নামে এক ব্যক্তি মক্কায় এসেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি বললেন, আমার নিকট হযরত লোকমানের প্রজ্ঞাজনোচিত যে কথামালা রয়েছে তদনুরূপ কথাই কি বলছেন? রাসূল (সা.) বললেন,

و الّذي معي أفضل هذا قرآن أنزله الله تعالى هو هدى و نور

“(তোমার কাছে যা রয়েছে তা ভালো) তবে আমার ওপর আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তা আরো উত্তম। কারণ তা প্রজ্বলিত আলো এবং হেদায়েতের নূর। 360

অতঃপর রাসূল (সা.) কয়েকটি আয়াত পাঠ করলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং মদীনায় ফিরে গেলেন। বুয়াস’ যুদ্ধে তিনি খাজরাজ গোত্রের হাতে নিহত হন এবং মৃত্যুর সময় তাঁর মুখে পবিত্র কালেমার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

খ. আনাস ইবনে রাফে বনি আবদুল আশহালের কিছু যুবককে সঙ্গে নিযে মক্কায় প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে আয়াস ইবনে মায়ায নামে এক যুবকও ছিল। তাদের মক্কা আগমনের উদ্দেশ্য ছিল খাজরাজ গোত্রের মোকাবিলায় কুরাইশদের নিকট থেকে সামরিক সাহায্য গ্রহণ। নবী (সা.) তাদের বৈঠকে তাদের সঙ্গে মিলিত হলেন ও ইসলামের দাওয়াত উপস্থাপন করে কয়েকটি আয়াত পাঠ করলেন। আয়াস একজন সাহসী যুবক ছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে এ নতুন ধর্মের প্রতি ঈমানের ঘোষণা দিয়ে বললেন, এ ধর্মটি কুরাইশদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে,একত্ববাদী এ ধর্ম তাঁদের জীবনের সকল দিকের নিরাপত্তা বিধানকারী। কারণ এ ধর্ম সকল বিশৃঙ্খলা,ভ্রাতৃহত্যা ও ধ্বংসকারী যুদ্ধের অপনোদন ঘটাবে। যেহেতু এ যুবক গোত্রপতির অনুমতি ব্যতিরেকে ঈমান এনেছিলেন সেহেতু আনাস এতে খুবই রাগান্বিত হলো।  সে তার রাগ দমনের উদ্দেশ্যে এক মুঠো বালি এ যুবকের উদ্দেশে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, চুপ কর! আমরা এখানে কুরাইশদের নিকট থেকে সাহায্যের আশায় এসেছি,নতুন ধর্ম গ্রহণের উদ্দেশ্যে আসি নি। নবী (সা.) সেখান থেকে উঠে এলে দলটি মদীনায় ফিরে যায় এবং আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে বুয়া স’-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আয়াস ইসলামের প্রতি ঈমান নিয়ে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নিহত হন।

বুয়া সের যুদ্ধ

আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধসমূহের মধ্যে প্রসিদ্ধ একটি যুদ্ধ হলো বুয়া সের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আওসরা জয়ী হয় এবং খাজরাজ গোত্রের খেজুর বাগানগুলো জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তাদের মধ্যে পালাক্রমে যুদ্ধ ও সন্ধি হতে থাকে। খাজরাজ গোত্রের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নি। এ কারণে উভয় গোত্রের নিকটই সে সম্মানিত ছিল। ক্রমাগত যুদ্ধের কারণে উভয় পক্ষই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের মধ্যে সন্ধির প্রতি তীব্র আগ্রহ দেখা দিয়েছিল। ফলে উভয় গোত্র আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইকে সন্ধির জন্য মধ্যস্থতাকারী নেতৃত্ব বলে গ্রহণে সম্মত হলো,এমনকি তারা উভয় গোত্রের নেতা হিসাবে তাকে গ্রহণের লক্ষ্যে তার জন্য বিশেষ মুকুট প্রস্তুতের পরিকল্পনা করল। কিন্তু এ পরিকল্পনা খাজরাজ গোত্রের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের কারণে পণ্ড হলো। নবী করীম (সা.) খাজরাজ গোত্রের ছয় ব্যক্তির নিকট ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা তা গ্রহণ করে।

খাজরাজদের ইসলাম গ্রহণ

নবী (সা.) হজ্বের সময় মক্কায় খাজরাজ গোত্রের ছয় ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কি ইয়াহুদীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ? তারা বলল, হ্যাঁ। নবী (সা.) তাদের বললেন, তোমাদের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। তারা মহানবীর আহবান গ্রহণ করে তাঁর কথা শ্রবণ করল। মহানবী (সা.) কয়েকটি আয়াত পাঠ করে বক্তব্য রাখলে তা তাদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলল। এ বৈঠকেই তারা ইসলাম গ্রহণ করল। যে বিষয়টি তাদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল তা হলো তারা পূর্বেই ইয়াহুদীদের নিকট থেকে শুনেছিল আরবদের মধ্য থেকে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটবে যিনি একত্ববাদী ধর্মের দাওয়াত দেবেন এবং মূর্তিপূজার অবসান ঘটাবেন। খুব শীঘ্রই তিনি আবির্র্ভূত হবেন। এ কারণে ইয়াহুদীরা কোন অপচেষ্টা করার পূর্বেই তারা ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তাঁকে সাহায্য করার ইচ্ছা পোষণ করল।

ছয় সদস্যের দলটি মহানবীকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাদের মাঝে সব সময় যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত। আশা করি মহান আল্লাহ্ আপনার এ পবিত্র ধর্মের মাধ্যমে এ যুদ্ধের অগ্নিকে প্রশমিত করবেন। আমরা ইয়াসরিবে ফিরে গিয়ে আপনার দীনের দাওয়াত দেব। যখনই আমরা সকলে আপনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছব তখন আমাদের নিকট আপনি অপেক্ষা সম্মানিত কেউ থাকবে না। 361

আকাবার প্রথম শপথ

উক্ত ছয় ব্যক্তি ইয়াসরিবের অধিবাসীদের মধ্যে অনবরত দীনের প্রচার কার্য চালায়। ফলে ইয়াসরিবের প্রতিটি ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে যায় এবং তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। নবুওয়াতের দ্বাদশ বছরে মদীনা থেকে বারো সদস্যের একটি দল রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এদের সঙ্গে প্রথম আকাবা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ বারো সদস্যের দলের প্রসিদ্ধ দু জন ব্যক্তি হলেন আসআদ ইবনে জুরারাহ্ এবং উবাদাতা ইবনে সামিত। তাঁদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে নিম্নোক্ত বক্তব্যটি ছিল :

أن لا نشرك بالله شيئا و لا نسرق و لا نزنى و لا نقتل أولَادنا و لا نأتى ببهتان نفتريه بين أيدينا و أرجلنا و لا نعصيه في معروف

“রাসূলের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে,আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক (অংশীদার) করব না,চুরি ও ব্যভিচার করব না,নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করব না,একে অপরের ওপর অপবাদ আরোপ করব না,অশ্লীল ও মন্দ কাজ করব না এবং ভালো কাজের বিরোধিতা করব না।”

রাসূল (সা.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যদি এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ কর তাহলে তোমাদের স্থান হবে বেহেশত,আর যদি এর অন্যথা কর তবে তোমাদের কর্মফল আল্লাহর ইচ্ছাধীন,হয় তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন,নতুবা শাস্তি দেবেন। এ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ ও চুক্তিনামাটি ঐতিহাসিকভাবে বাইয়াতুন্নেসা নামে প্রসিদ্ধ। কারণ নবী (সা.) মক্কা বিজয়ের পর নারীদের নিকট থেকে একই মর্মে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন।

এ বারো ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান নিয়ে মদীনায় ফিরে যায় এবং পূর্ণোদ্যমে দীনের দাওয়াতের কাজ শুরু করে। পরে তারা নবীর নিকট তাদের কোরআন শিক্ষাদানের জন্য একজন মুবাল্লিগ (প্রচারক) পাঠানোর অনুরোধ জানায়। নবী মুসআব ইবনে উমাইরকে তাদের প্রশিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। এ শক্তিশালী মুবাল্লিগের প্রচেষ্টায় মুসলমানরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয় এবং জামায়াতে নামায পড়া শুরু হয়।362