চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 74536
ডাউনলোড: 6136


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 74536 / ডাউনলোড: 6136
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

আরব বাহিনীর কতিপয় বীর যোদ্ধার পরিখা অতিক্রম

আমর ইবনে আবদে উদ,ইকরামাহ্ ইবনে আবী জাহল,হুবাইরা ইবনে ওয়াহাব,নওফেল ইবনে আবদুল্লাহ্ এবং যিরার ইবনে খাত্তাব নামের পাঁচ বীর যোদ্ধা যুদ্ধের পোশাক পরে দর্পভরে বনী কিনানার সৈন্যদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল : তোমার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। আজ তোমরা বুঝতে পারবে,কারা আরব বাহিনীর প্রকৃত বীর যোদ্ধা।” এরপর অশ্ব চালনা করে পরিখার যে অংশটির প্রস্থ কম ছিল,সেখান দিয়ে ঘোড়া সহ লাফ দিয়ে এ পাঁচ বীর যোদ্ধা সেখানে প্রহরারত মুসলিম তীরন্দায সৈন্যদের নাগালের বাইরে চলে যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পরিখা পার হবার স্থান ঘেরাও করে ফেলা হয় এবং অন্যদের তা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে বাধা দান করা হয়।

মল্ল (দ্বৈত) যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে আসা এ পাঁচ বীর যোদ্ধা পরিখা ও সালা পাহাড়ের (ইসলামী সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় শিবির) মাঝখানে এসে দাঁড়াল। এ আরব বীরেরা সেখানে অহংকারবশত নিজেদের অশ্বগুলোর সাথে ক্রীড়ায় লিপ্ত হলো এবং ইশারায় তাদের প্রতিপক্ষকে মল্লযুদ্ধের আহবান জানাতে লাগল।129

এ পাঁচ জনের মধ্যে বীরত্ব ও কৌশলের দিক থেকে বেশ বিখ্যাত বীর যোদ্ধাটি মুসলমানদের সামনে এসে দ্বৈত যুদ্ধে লিপ্ত হবার আহবান জানাল। সে মুহূর্তের পর মুহূর্ত ধরে নিজের কণ্ঠ উচ্চকিত করতে লাগল এবং মাতলামিপূর্ণ হুঙ্কারধ্বনি দিয়ে বলতে লাগল :هل من مبارز؟ তোমাদের মধ্যে কি কোন যোদ্ধা আছে?”   তার এ আস্ফালন সমগ্র যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল এবং মুসলিম সৈন্যদের দেহে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। মুসলমানদের নীরবতা তার স্পর্ধা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। সে (ব্যঙ্গচ্ছলে) বলছিল : বেহেশতের দাবীদাররা কোথায়? তোমরা মুসলমানরা কি বলো না যে,তোমাদের নিহত ব্যক্তিরা বেহেশতে এবং আমাদের নিহতরা জাহান্নামে যাবে? তোমাদের মধ্য থেকে কি একজনও আমাকে দোযখে পাঠানোর জন্য বা আমার পক্ষ থেকে তাকে বেহেশতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়?

আর সে তার এ কথাগুলো বীরগাঁথায় এভাবে বলছিল :

و لقد بححت من النّداء

بجمعكم هل من مبارز

“উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার জন্য এবং মল্লযোদ্ধাকে আহবান জানাতে জানাতে আমার গলা বসে গেছে।”

ইসলামী বাহিনীর সমাবেশ কেন্দ্রে আমরের আস্ফালন ও দম্ভোক্তির বিপরীতে সুমসাম নীরবতা বিরাজ করছিল। তখন মহানবী (সা.) বলছিলেন,মুসলমানদের মধ্য থেকে একজন বের হয়ে এ লোকের অনিষ্ট থেকে মুসলমানদের রেহাই দিক। কিন্তু একমাত্র হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ছাড়া আর কেউই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন না।

ওয়াকিদী লিখেছেন : যখন আমর মুসলমানদের মধ্য থেকে তার সমকক্ষ যোদ্ধাকে এসে তার সাথে মল্লযুদ্ধের আহবান জানাচ্ছিল,তখন সকল মুসলিম যোদ্ধার মাঝে এতটা নীরবতা বিরাজ করতে লাগল যে,এমন প্রতীয়মান হচ্ছিল,তাঁদের মাথার উপর যেন পাখিও বসে থাকতে পারবে। 130

অগত্যা এ সমস্যার সমাধান অবশ্যই হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের হাতেই হতে হবে। মহানবী (সা.) তাঁর তরবারি হযরত আলী (আ.)-এর হাতে তুলে দিলেন এবং তাঁর বিশেষ পাগড়ী তাঁর মাথায় বেঁধে দিয়ে তাঁর জন্য দুআ করলেন : হে আল্লাহ্! আলীকে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। হে প্রভু! বদরের যুদ্ধে উবাইদাহ্ ইবনে হারেসা এবং উহুদের যুদ্ধে শেরে খোদা (আল্লাহর ব্যাঘ্র) হামযাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। হে প্রভু! আলীকে শত্রুর আঘাত ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।” এরপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন :

) ربّ لا تذرنِى فردا و أنت خير الوارثين(

“হে প্রভু! আমাকে একাকী করবেন না;আর আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী।” (সূরা

আম্বিয়া : 89)

হযরত আলী বিলম্ব পুষিয়ে দেয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব রওয়ানা হয়ে গেলেন। এ সময় মহানবী তাঁর সম্পর্কে ঐতিহাসিক এ উক্তি করেছিলেন :

برز الإيمان كلّه إلى الشّرك كلّه

“পূর্ণ শিরকের মোকাবেলা করতে পূর্ণ ঈমান (রণক্ষেত্রে) আবির্ভূত হয়েছে।”

হযরত আলী (আ.) তাঁর প্রতিপক্ষের বীরগাঁথার অনুরূপ বীরগাঁথা রচনা করে বললেন :

لا تعجلن فقد أتاك

مجيب صوتك غير عاجز

তাড়াহুড়ো করো না।

কারণ তোমার আহবানে সাড়াদানকারী তোমার কাছে এসেছে,

যে অক্ষম (দুর্বল) নয়।

হযরত আলী (আ.)-এর সমগ্র দেহ লৌহ নির্মিত ভারী বর্ম ও অস্ত্র-শস্ত্রে আচ্ছাদিত ছিল এবং তাঁর চোখদ্বয় কেবল শিরস্ত্রাণের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে জ্বলজ্বল করছিল। আমর প্রতিপক্ষকে চিনতে চাচ্ছিল। তাই সে হযরত আলী (আ.)-কে বলল : তুমি কে?”   স্পষ্টবাদিতার জন্য বিখ্যাত হযরত আলী বললেন : আলী ইবনে আবী তালিব।” আমর বলল : আমি তোমার রক্ত ঝরাব না। কারণ তোমার পিতা ছিলেন আমার পুরনো বন্ধু। আমি তোমার চাচাত ভাইয়ের ব্যাপারে ভেবে অবাক হচ্ছি,সে তোমাকে কোন ভরসায় আমার সাথে লড়ার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছে? আমি তোমাকে না জীবিত,না মৃত এমন অবস্থার মধ্যে বর্শায় গেঁথে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে (শূন্যে) ঝুলিয়ে রাখতে পারি।”

ইবনে আবীল হাদীদ বলেন : আমার ইতিহাস বিষয়ক শিক্ষক (আবুল খাইর) ইতিহাসের এ অধ্যায় বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করতে গেলেই বলতেন : আমর আসলে আলীর সাথে দ্বৈত যুদ্ধে লিপ্ত হবার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিল। কারণ সে বদর ও উহুদ যুদ্ধে উপস্থিত ছিল এবং হযরত আলীর বীরত্ব সে সচক্ষে দেখেছে। এ কারণেই সে আলীকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছিল।”

হযরত আলী (আ.) বললেন : তুমি আমার মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামিও না। আমি উভয় অবস্থায় (আমি নিহত হই বা তোমাকে হত্যা করি) সৌভাগ্যবান এবং আমার বাসস্থান বেহেশত। তবে সকল অবস্থায় দোযখ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।” আমর মুচকি হেসে বলল : আলী! এ ধরনের বণ্টন ন্যায়ভিত্তিক নয় যে,বেহেশত ও দোযখ উভয়ই তোমার সম্পত্তি হবে।”

ঐ সময় আলী (আ.) আমর ইবনে আবদে উদকে ঐ প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন,যা একদিন কাবার পর্দা ছুঁয়ে নিজ প্রভুর (মহান আল্লাহর) সাথে করেছিল। আর তা ছিল,যুদ্ধের ময়দানে যদি কোন বীর তার প্রতিপক্ষকে তিনটি প্রস্তাব দেয়,তা হলে সেগুলোর যে কোন একটি তাকে গ্রহণ করতে হবে। এ কারণেই হযরত আলী (আ.) প্রস্তাব দিলেন,প্রথমে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। কিন্তু সে বলল : আলী! এটা বাদ দাও। কারণ তা সম্ভব নয়।” আলী (আ.) তাকে বললেন : যুদ্ধ থেকে ক্ষান্ত হও এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর নিজ অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে চলে যাও।” সে বলল : এ প্রস্তাব আমার জন্য লজ্জাকর। কারণ আগামীকালই আরবের কবিরা আমার ব্যাপারে ব্যঙ্গ করবে এবং তারা ভাববে,আমি ভয় পেয়ে এ কাজ করেছি।” তখন আলী (আ.) বললেন : এখন যখন তোমার প্রতিপক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে,তখন তুমিও তোমার ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এসো যাতে আমরা মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হই।” সে বলল: আলী! আসলে এটি একটি তুচ্ছ প্রস্তাব মাত্র। আমি কখনোই ভাবি নি যে,কোন আরব আমার কাছে এমন প্রস্তাব করতে পারে! 131

দুই বীরের লড়াই শুরু

দুই বীরের মধ্যে তীব্র মল্লযুদ্ধ শুরু হলো এবং তাদের দু জনের চারপাশ ধূলো-বালিতে ছেয়ে গেল। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছিল না। ঢাল ও বর্মের উপর তরবারির আঘাতের শব্দ ছাড়া আর কিছুই তাদের কানে আসছিল না। বেশ কয়েকটা আঘাত ও পাল্টা আঘাতের পর আমর তার তরবারি দিয়ে হযরত আলীর মাথায় আঘাত হানলে আলী (আ.) তা তাঁর ঢাল দিয়ে প্রতিহত করলেন। এ সত্বেও তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি এ সুযোগে তরবারি দিয়ে প্রতিপক্ষের পায়ে তীব্র আঘাত হানলেন অথবা তিনি তার দু পা বা একটি পা কেটে ফেললেন। ফলে আমর মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

ধূলো-বালির মধ্য থেকে আলী (আ.)-এর বিজয়ী হবার নিদর্শন তাকবীর ধ্বনি উত্থিত হলো। যে সব আরব বীর আমরের পশ্চাতে দাঁড়িয়ে ছিল,আমরের ধরাশায়ী হবার দৃশ্য তাদের অন্তরে এতটা ভীতির সঞ্চার করল যে,তারা নিজেদের অজান্তেই লাগাম ধরে নিজেদের ঘোড়াগুলোকে পরিখার দিকে চালনা করল এবং একমাত্র নওফেল ছাড়া তাদের সবাই তাদের নিজেদের সেনাশিবিরে ফিরে গেল। নওফেলের অশ্ব পরিখার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল এবং সে নিজেও মাটিতে পড়ে গিয়ে তীব্র আঘাত পেয়েছিল। পরিখায় প্রহরারত সৈন্যরা তার দিকে পাথর ছুঁড়তে থাকলে সে চিৎকার করে বলতে লাগল : এভাবে হত্যা করা মহানুভবতার পরিপন্থী। আমার সাথে মল্লযুদ্ধের জন্য একজন পরিখার ভেতরে নেমে এসো।” হযরত আলী (আ.) পরিখার ভেতরে নেমে তাকে হত্যা করলেন।

মুশরিক বাহিনীর সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে প্রচণ্ড ভীতির সৃষ্টি হলো। আর আবু সুফিয়ানই সবচেয়ে বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিল। সে ভাবছিল,মুসলমানরা হামযার হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নওফেলের লাশ বিকৃত করতে পারে। তাই সে নওফেলের লাশ দশ হাজার দীনারে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠালে মহানবী (সা.) বলেছিলেন : লাশটা দিয়ে দাও। কারণ ইসলাম ধর্মে মৃতদেহের বিনিময়ে অর্থ নেয়া হারাম করা হয়েছে।”

হযরত আলী (আ.)-এর তরবারির এ আঘাতের মূল্য

বাহ্যত হযরত আলী (আ.) একজন বীরকে বধ করেছিলেন। তবে আসলেই তিনি ঐ সব ব্যক্তির মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন,আমরের গগন বিদারী হুঙ্কারধ্বনি শুনে যাদের দেহে কম্পন শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তেমনি দশ হাজার সৈন্যের যে বিশাল বাহিনী নবগঠিত ইসলামী হুকুমত ধ্বংস করার জন্য কোমর বেঁধে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল,তিনি তাদেরকেও ভীত-সন্তস্ত্র করে দিয়েছিলেন। আর যদি আমর জয়লাভ করত,তা হলে তখনই বোঝা যেত হযরত আলীর এ আত্মত্যাগের মূল্য কত অপরিসীম ছিল!

হযরত আলী মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি এভাবে আলী (আ.)-এর এ আঘাতের মূল্যায়ন করে বলেছিলেন : আমার উম্মতের সমুদয় সৎকর্মের উপরে হচ্ছে এ আত্মত্যাগের গুরুত্ব। কারণ কুফরের সবচেয়ে বড় বীরের পরাজিত হবার কারণেই সকল মুসলমান মর্যাদাবান এবং সকল মুশরিক অপদস্থ হয়েছে। 132

আলী (আ.)-এর মহানুভবতা

আমরের বর্ম অত্যন্ত দামী ও মূল্যবান হলেও হযরত আলী (আ.) মহানুভবতার কারণে তা ছুঁয়েও দেখেন নি। এমনকি দ্বিতীয় খলীফা এ জন্য আলী (আ.)-কে ভর্ৎসনা করেছিলেন যে,কেন তিনি আমরের দেহ থেকে বর্মটি খুলে আনেন নি। আমরের বোন ঘটনা জানতে পেরে বলেছিল : আমি কখনই দুঃখ করব না যে,আমার ভাই নিহত হয়েছে। কারণ সে এক মহানুভব ব্যক্তির হাতেই নিহত হয়েছে। আর এর অন্যথা হলে আমার দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত আমি অশ্রুপাত করতাম। 133

এখন আমরা দেখব,আরবের বীর আমর ইবনে আবদে উদ নিহত হবার পর মুশরিক বাহিনীর কী পরিণতি হয়েছিল।

ছত্রভঙ্গ সম্মিলিত আরব বাহিনী

ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পেছনে আরব বাহিনী ও ইহুদীদের একক উদ্দেশ্য ছিল না। নব্য প্রতিষ্ঠিত তরুণ ইসলামী রাষ্ট্রের উত্তরোত্তর প্রসার লাভ করার কারণে ইহুদীরা ভীত হয়ে পড়েছিল এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি কুরাইশদের পুরনো শত্রুতা তাদেরকে এ যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করেছিল। সেখানকার ইহুদীরা গাতফান,ফিযারাহ ও অন্যান্য গোত্রকে খাইবরের শস্য প্রদান করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল,সে কারণেই তারা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সুতরাং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে গোষ্ঠীগুলোকে সর্বশেষ যা প্ররোচিত করেছিল,তা ছিল একটি বস্তুগত বিষয়। আর এ লক্ষ্য যদি মুসলমানদের মাধ্যমে পূরণ করা হতো,তা হলে তারা পূর্ণ সন্তুষ্টি সহ নিজেদের ঘর-বাড়িতে ফিরে যেত,বিশেষ করে যখন তীব্র শীত,খাদ্যাভাব এবং অবরোধকাল দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছিল এবং তাদের মন দুর্বল ও তাদের পশুগুলোও মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।

এ কারণেই মহানবী (সা.) উল্লিখিত গোত্রগুলোর নেতাদের সাথে চুক্তি করার জন্য একটি প্রতিনিধিদলকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি প্রতিনিধিদলকে এ গোত্রগুলোর কাছে এ কথা বলে দেয়ার আদেশ দেন যে,মুসলমানরা তাদেরকে মদীনার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত ফল প্রদানে সম্মত আছে। তবে এ শর্তে যে,তাদেরকে সম্মিলিত বাহিনী থেকে বের হয়ে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে হবে। মহানবী (সা.)-এর প্রতিনিধিগণ এ গোত্রগুলোর নেতাদের সাথে বসে একটি চুক্তির খসড়া তৈরি করে তা চূড়ান্ত অনুমোদন ও স্বাক্ষরের জন্য মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থাপন করেন। তবে মহানবী (সা.) সা দ ইবনে মায়ায ও সা দ ইবনে উবাদাহ্ নামক তাঁর দু জন সেনাকর্মকর্তার সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা দু জনই একই অভিমত ব্যক্ত করে বললেন, এ চুক্তি যদি মহান আল্লাহর নির্দেশে হয়ে থাকে,তা হলে তা মেনে নিতে হবে। আর এটি যদি আপনার ব্যক্তিগত বিবেচনায় হয়ে থাকে এবং আপনি যদি এ ব্যাপারে আমাদের অভিমত চেয়ে থাকেন,তা হলে আমাদের অভিমত হচ্ছে এই যে,চুক্তিটি এখানেই স্থগিত রাখতে হবে এবং তা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হবে না। কারণ আমরা অতীতে কখনই এসব গোত্রকে সেলামি দিই নি এবং এসব গোত্রের মধ্য থেকে একজনেরও জোর করে আমাদের কাছ থেকে এক টুকরো খেজুর পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়ার সাহস হয় নি। আর এখন যখন মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে এবং আপনার নেতৃত্বে আমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি এবং আমরা এ দ্বীনের বদৌলতে মর্যাদাবান ও শক্তিশালী,তখন এ সব গোষ্ঠী ও দলকে সেলামী দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

و الله لا نعطيهم إلّا السيف حتى يحكم الله بيننا و بينكم

-“মহান আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ্ কর্তৃক আমাদের ও তাদের মাঝে তরবারি দিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের সকল বৃথা ও অন্যায় আব্দারের উত্তর তরবারি দিয়েই দেব।”

মহানবী বললেন : এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন করার ব্যাপারে আমার চিন্তা-ভাবনার কারণ ছিল এই যে,যেহেতু তোমরা সম্মিলিত আরব বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছ এবং চতুর্দিক থেকে তোমরা তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছ,সেহেতু আমি দেখতে পেলাম,শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার মধ্যেই উদ্ধার পাবার পথ বিদ্যমান। এখন যখন তোমাদের আত্মত্যাগের মনোবৃত্তি আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে,তখন আমি এ চুক্তি স্থগিত করে দিচ্ছি এবং তোমাদের বলছি মহান আল্লাহ্ তাঁর নবীকে অপদস্থ করবেন না এবং শিরকের ওপর তাওহীদের বিজয়ের ব্যাপারে তাঁর প্রতিশ্রুতি তিনি অবশ্যই বাস্তবায়িত করবেন। ঐ সময় সা দ ইবনে মায়ায মহানবীর অনুমতি নিয়ে চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু মুছে ফেলে বললেন : মূর্তিপূজারীরা আমাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা করুক,আমরা কোন অবস্থায়ই তাদেরকে সেলামি দেব না। 134

সম্মিলিত আরব বাহিনীর ছত্রভঙ্গ ও ব্যর্থতার কারণ

1. বিজয়ের প্রথম কারণ ছিল গাতফান ও ফাযারাহ্ গোত্রের নেতাদের সাথে মহানবী (সা.)-এর প্রতিনিধিগণের সংলাপ। কারণ এ চুক্তি যদিও চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়নি,তবু তা বাতিল করারও ঘোষণা দেয়া হয় নি। এ গোত্রগুলো এভাবে নিজেদের মিত্রদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে দোদুল্যমান হয়ে যায় এবং দিনের পর দিন তারা এ চুক্তি সম্পাদনের প্রতীক্ষা করতে থাকে। যখন তাদেরকে সর্বাত্মক আক্রমণ করার অনুরোধ জানানো হতো,তখনই তারা এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার আশায় কতকগুলো বিশেষ অজুহাত দাঁড় করিয়ে কুরাইশদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করত।

2. সম্মিলিত আরব বাহিনীর শক্তিশালী বীর আমরের নিহত হওয়া,যার মল্লযুদ্ধে বিজয়ী হবার ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী ছিল। যুদ্ধে আমর নিহত হলে সম্মিলিত আরব বাহিনীর মাঝে তীব্র ভীতির উদ্ভব হয়। বিশেষ করে তার নিহত হবার পরপরই আরব বাহিনীর অন্যান্য বীর যোদ্ধা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেছিল।

3. নব বাইয়াতপ্রাপ্ত মুসলমান নুআইম ইবনে মাসউদ সম্মিলিত আরব বাহিনীর ঐক্য ভেঙে দেবার ব্যাপারে অসাধারণ প্রভাব রেখেছিলেন। তিনি মুশরিক বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন এবং এ কালের দক্ষ গুপ্তচরদের কর্মতৎপরতার চেয়ে তাঁর কর্মকাণ্ড কোন অংশে কম ছিল না;বরং ছিল আরো উন্নত এবং গুরুত্বপূর্ণ।

নুআইম ইবনে মাসউদ মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন : আমি একজন নও মুসলিম। আগে থেকেই সকল গোত্রের সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে। তারা আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কথা জানে না। আপনার যদি কোন নির্দেশ থাকে তা হলে আমাকে তা বলুন,আমি তা বাস্তবায়ন করব।” মহানবী (সা.) তাঁকে বললেন : এমন একটা কাজ কর যার ফলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অর্থাৎ কতকগুলো মহান কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য যদি তুমি একটি উপায় বের করার চিন্তা-ভাবনা কর এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন কর,তা হলে এতে কোন আপত্তি নেই। 135

নুআইম একটু চিন্তা করে তৎক্ষণাৎ বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের কাছে গেলেন। আর এ গোত্র আসলেই শত্রুর পঞ্চম বাহিনী ছিল এবং তাদের মাধ্যমে পেছনে থেকে মুসলমানদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকায় তারা ছিল প্রত্যক্ষ হুমকিস্বরূপ। তিনি বনী কুরাইযার দুর্গে প্রবেশ করে তাদের কাছে তাঁর বন্ধুত্ব,আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি তাদের সাথে এমনভাবে কথাবার্তা বললেন যেন তিনি তাদের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হন। এরপর তিনি বললেন : জোটবদ্ধ দলগুলো অর্থাৎ কুরাইশ ও গাতফান গোত্রের সাথে তোমাদের অবস্থার পার্থক্য আছে। কারণ মদীনা হচ্ছে তোমাদের সন্তান ও নারীদের আবাসস্থল এবং তোমাদের যাবতীয় ধন-সম্পদ এখানেই রয়েছে। তাই কোন অবস্থায়ই এখান থেকে অন্য কোথাও তোমাদের চলে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে মিত্র ও জোটভুক্ত গোষ্ঠী,যারা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এখানে এসেছে,তাদের আবাসস্থল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জায়গা মদীনার বাইরে ও এখান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

তারা যদি সুযোগ পেয়ে এ যুদ্ধে বিজয়ী হয়,তা হলে তো তারা তাদের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে উপনীত হবেই। আর যদি তারা এ যুদ্ধে পরাজিত হয়,তখন তারা তৎক্ষণাৎ এ স্থান ত্যাগ করে নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে যাবে,যা মুহাম্মদের নাগালের বাইরে।

তবে তোমাদের এ কথা ভেবে দেখা উচিত,যদি জোটভুক্ত দলগুলো এ যুদ্ধে বিজয়ী না হয় এবং তারা যদি তাদের কেন্দ্রে ফিরে যায়,তা হলে তোমরা মুসলমানদের হাতের মুঠোর মধ্যে পড়ে যাবে। আমি মনে করি,এখন যেহেতু তোমরা জোটভুক্ত দলগুলোর সাথে যোগ দিয়েই ফেলেছ,সেহেতু এ সিদ্ধান্তের ওপর তোমাদের অটল থাকা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তবে যাতে করে সম্মিলিত জোটভুক্ত দলগুলো য্দ্ধু চলাকালে তোমাদের ত্যাগ করে নিজ নিজ ভূ-খণ্ডে প্রত্যাবর্তন না করে,সেজন্য তাদের কয়েকজন নেতা ও সম্ভ্রান্ত বংশীয় ব্যক্তিকে যিম্মী রাখ,যেন তারা তোমাদের দুর্দিনে তোমাদের একাকী রেখে যেতে না পারে। কারণ তখন তারা তাদের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নেতাদের মুক্তির জন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুহাম্মদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে বাধ্য হবে।

বনী কুরাইযার দুর্গে কুরাইশ প্রতিনিধিদের গমন

আবু সুফিয়ান যুদ্ধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার জন্য শনিবার রাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ কারণেই কুরাইশ ও গাতফান গোত্রপতি ও নেতারা কয়েকজন প্রতিনিধিকে বনী কুরাইযার দুর্গে প্রেরণ করে এবং তারা তাদেরকে জানায় : এ স্থান আমাদের আবাসভূমি নয়;আমাদের পশুগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমরা আগামীকাল পেছন থেকে আক্রমণ চালাবে যাতে আমরা এ যুদ্ধের একটা চূড়ান্ত রফা করতে পারি।” সম্মিলিত আরব গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদেরকে বনী কুরাইযাহ্ গোত্রের সেনাপতি বলেছিল : আগামীকাল শনিবার। আর আমরা ইহুদী জাতি এ দিন কোন কাজ করি না। কারণ আমাদের একদল পূর্বপুরুষ এ দিনে কাজে হাত দিয়েছিল বলে আল্লাহর শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল। অধিকন্তু আমরা ঐ অবস্থায় যুদ্ধ করব যখন আরব দল ও গোষ্ঠীগুলোর কতিপয় নেতা যিম্মী হিসেবে আমাদের দুর্গে অবস্থান করবে যাতে করে তোমরা তাদের মুক্তির জন্য প্রাণপণে যুদ্ধ করে যেতে থাকবে এবং যুদ্ধ চলাকালে তোমরা আমাদের একাকী ফেলে পলায়ন করবে না।”

কুরাইশ প্রতিনিধিদল ফিরে গিয়ে গোত্রপতি ও নেতাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করে। তখন সবাই বলেছিল : নুআইম সহানুভূতি প্রকাশ করে যা বলেছে,তা ঠিকই (সত্যই) ছিল। আসলে বনী কুরাইযা আমাদের সাথে চালাকী করতে চাচ্ছে।” আবারো কুরাইশ প্রতিনিধিরা বনী কুরাইযার নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বলল : আমাদের কতিপয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে তোমাদের কাছে যিম্মী হিসেবে দেব,তা আসলে বাস্তব নয়। এমনকি আমরা আমাদের মধ্য থেকে একজন লোককেও তোমাদের কাছে যিম্মী হিসেবে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত নই। যদি তোমরা চাও,কাল মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করতে পার। তা হলে আমরাও তোমাদের সাহায্য করব।”

‘আমরা আমাদের মধ্য থেকে একজনকেও তোমাদের কাছে যিম্মী হিসেবে তুলে দেব না’ -কুরাইশ প্রতিনিধিদলের এ ধরনের উক্তি নুআইমের কথা সত্য হবার ব্যাপারে বনী কুরাইযার সকল সংশয় দূর করে দিল এবং সবাই অভিমত ব্যক্ত করল : নুআইম যা বলেছে,তা-ই সত্য। কুরাইশরা আসলে নিজেদের স্বার্থ ও পরিণতি নিয়েই কেবল ভাবে। যদি তারা এ যুদ্ধে জয়ী হবার সম্ভাবনা না দেখে,তা হলে তারা নিজেদের পথ ধরবে এবং এভাবে তারা মুসলমানদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করবে। 136

সর্বশেষ কারণ

উপরিউক্ত কারণগুলো,আরেকটি কারণ-যা আসলে গায়েবী সাহায্য’ বলে উল্লেখ করা যেতে পারে-এর সাথে যুক্ত হয়ে জোটভুক্ত দল ও গোষ্ঠীগুলোকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। অন্য কারণটি ছিল হঠাৎ করে আবহাওয়া তীব্রভাবে ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং ঝড় বইতে থাকে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তন এতটা তীব্র ছিল যে,তাঁবুগুলোকে উল্টে ফেলে দেয়;ফানুস ও প্রদীপগুলো নিভে যায় এবং প্রজ্বলিত অগ্নিরাশি মরুর বুকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ সময় মহানবী (সা.) হুযাইফাকে পরিখা অতিক্রম করে শত্রুদের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আনার দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি বলেন : আমি আবু সুফিয়ানের কাছে গেলাম। তাকে সম্মিলিত আরব বাহিনীর সেনাপতিদের মাঝে বক্তৃতা করতে দেখলাম এবং তখন সে বলছিল : আমরা যে অঞ্চলে এসেছি তা আমাদের বসবাসের কেন্দ্র নয়। আমাদের পশুগুলো ধ্বংস হয়েছে এবং ঝড়ো হাওয়া আমাদের তাঁবু,আস্তাবল ও প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডগুলো অবশিষ্ট রাখে নি। আর বনী কুরাইযাও আমাদের সাহায্য করে নি। আমাদের এ স্থান ত্যাগ করাই হচ্ছে কল্যাণকর। এরপর সে তার হাঁটুবাঁধা উটের উপর আরোহণ করে সেটাকে চাবুক দিয়ে কষে আঘাত করতে লাগল। বেচারা আবু সুফিয়ান এতটা ভীত ও হতাশাগ্রস্ত ছিল যে,তার উটের পাগুলো যে বাঁধা রয়েছে,সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল ছিল না।”

তখনও ভোরের আলো ফুটে বের হয় নি;সম্মিলিত আরব বাহিনী এ সময় ঐ স্থান ত্যাগ করে এবং তাদের একটি লোকও সেখানে অবশিষ্ট থাকে নি।137

আটত্রিশতম অধ্যায় : পঞ্চম হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ