চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড0%

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ জাফার সুবহানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 74533
ডাউনলোড: 6136


পাঠকের মতামত:

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-প্রথম খণ্ড চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 238 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 74533 / ডাউনলোড: 6136
সাইজ সাইজ সাইজ
চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

চিরভাস্বর মহানবী (সা.)-দ্বিতীয় খণ্ড

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

মহানবীর প্রতি মুকুকেসের পত্র

মিশর-অধিপতি নিজ আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞকে পত্র লেখার জন্য আহবান জানান এবং মহানবীর উদ্দেশে এ পত্র লিখেন :

“এ পত্র আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদের প্রতি কিবতী সম্রাট মুকুকেসের পক্ষ থেকে। আপনার উপর সালাম ও অভিনন্দন। আমি আপনার পত্র পাঠ করেছি এবং তার বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। আমি জানতাম,একজন নবী আবির্ভূত হবেন,কিন্তু আমার ধারণা ছিল,তিনি সিরিয়ায় আসবেন। আমি আপনার দূতকে স্বাগত জানিয়েছি।”

অতঃপর পত্রে তাঁর জন্য প্রেরিত উপহারের উল্লেখ করে সালাম দিয়ে শেষ করেন।222

মুকুকেস মহানবী (সা.)-এর প্রতি পত্রে যে ভাষায় কথা বলেছেন এবং যেভাবে তাঁর নাম নিজের নামের পূর্বে উল্লেখ করে সম্মান দিয়েছেন,তাঁর জন্য মূল্যবান উপঢৌকনসমূহ পাঠিয়েছেন,তদুপরি তাঁর দূতের প্রতি যে বিশেষ সম্মান দেখিয়েছেন-এ সবই বাহ্যিকভাবে প্রমাণ করে যে,মুকুকেস আন্তরিকভাবে মহানবীর দাওয়াত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে অভ্যুত্থানের আশংকা ও ক্ষমতার প্রতি মোহ তাঁকে ইসলাম গ্রহণের প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া ও ব্যবহারিকভাবে ইসলাম পালন থেকে বিরত রেখেছিল।

হাতেবকে মুকুকেসের বিশেষ রক্ষী দল সিরিয়া223 সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায়। অতঃপর সিরিয়া থেকে তিনি আরব কাফেলার সাথে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন। মদীনায় পৌঁছে মুকুকেসের পত্র মহানবীর হাতে দিলে তিনি বললেন : সে তার শাসন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঈমান আনে নি। কিন্তু তার এ ক্ষমতা ও নেতৃত্ব বেশি দিন স্থায়ী হবে না;বরং অচিরেই ধ্বংস হবে।”

পরবর্তীতে আরবের একজন দক্ষ রাজনীতিক,রাজনীতির মঞ্চে নিজের পরিপক্কতা ও বিচক্ষণতার সাক্ষ্যবাহক এবং এ বৈশিষ্টগুলোর কারণে খ্যাতি লাভকারী মুগীরা ইবনে শো বা সাকীফ গোত্রের কয়েক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে মিশর অভিমুখে যাত্রা করল। মিশরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তার কাছে জানতে চাইলেন,সে কীভাবে মিশরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। কারণ মুসলিম সেনাদল মিশর যাওয়ার পথ অবরোধ করে রেখেছে। সে বলল : সমুদ্রপথে এসেছি।” তাকে প্রশ্ন করা হলো : সাকীফ গোত্র কি মুহাম্মদের দাওয়াত গ্রহণ করেছে?”   তারা বলল : আমাদের মধ্যে কেউই ইসলাম গ্রহণ করে নি।” তখন মিশরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানতে চাইলেন : মুহাম্মদের স্বগোত্র তাঁর সাথে কিরূপ আচরণ করেছে।” সে বলল : কুরাইশ বংশের যুবকরা তার ধর্ম গ্রহণ করেছে,কিন্তু প্রৌঢ় ও বৃদ্ধরা তা গ্রহণ করে নি।” তাঁরা রাসূলের ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাইলেন। মুগীরা বলল : সে আমাদের এক আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়,আমাদের নামায পড়ার এবং যাকাত দেয়ার আদেশ করে। সেই সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও প্রতিশ্রুতি পালন করতে বলে এবং মদপান,ব্যভিচার ও সূদ হতে বিরত থাকার কথা বলে...।”

মুকুকেস তার কথায় ছেদ টেনে বলেন : সাকীফ গোত্র জেনে রাখুক,মুহাম্মদ (সা.) ইলাহী নবী এবং তিনি মানবতার পথনির্দেশের জন্য এসেছেন। যদি তাঁর আহবান মিশর ও রোমে পৌঁছে,তবে তারা তাঁর অনুসরণ করবে। কারণ হযরত ঈসা (আ.) এরূপ নবীর অনুসরণের আদেশ দিয়েছেন। তোমরা তাঁর ধর্ম সম্পর্কে যে বর্ণনা দান করছ,তা পূর্বেকার অন্যান্য নবীর আনীত বাণীর অনুরূপ। পরিশেষে তিনি বিজয়ী হবেন এবং তাঁর সঙ্গে যুদ্ধকারীদের আমি সাহায্য করব না।”

মুকুকেসের বক্তব্যে মুগীরা সহ সাকীফ গোত্রের লোকেরা অসন্তুষ্ট হলো। তারা নির্লজ্জতার সাথে বলল,যদি পৃথিবীর সবাই তাঁর ধর্ম গ্রহণ করে,তদুপরি তারা তা গ্রহণ করবে না। মুকুকেস তাদের প্রতি অনীহা প্রকাশ করার জন্য তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন। অতঃপর বললেন : এরূপ চিন্তা বালসুলভ। 224

এ বর্ণনাটি ঐতিহাসিক অন্যান্য বর্ণনার সঙ্গে অসামঞ্জশ্যশীল। কারণ মহানবী (সা.) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসনকর্তার প্রতি সপ্তম হিজরীতে পত্র প্রেরণ করেন এবং মুগীরা পঞ্চম হিজরীতে খন্দকের যুদ্ধের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। এমনকি তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানদের সঙ্গে ছিলেন এবং কুরাইশ প্রতিনিধি উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীর সঙ্গে মুসলমানদের পক্ষে বিতর্কে নিয়োজিত হয়েছিলেন। বর্ণিত ঘটনা সত্য হলে তাঁর পক্ষে হুদায়বিয়ায় থাকা সম্ভব ছিল না।

পরিশেষে উল্লেখ করতে চাই,ঐতিহাসিক ওয়াকিদী মহানবীর পত্রখানা ভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত পত্র থেকে বোঝা যায়,এটি ভিত্তিহীন। কারণ ঐ পত্রের বর্ণনা মতে মহানবী (সা.) মিশর সম্রাটকে তাঁর দেশ আক্রমণের হুমকি দিয়ে বলেছেন : মহান আল্লাহ্ আমাকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন,যদি কাফেররা দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ না করে,তবে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর।”

এ পত্রের বিষয়বস্তু অগ্রহণযোগ্য। কারণ,সে সময় যেখানে মুসলমানদের মক্কার অধিবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোরই পর্যাপ্ত শক্তি ছিল না,সেখানে মিশরের ন্যায় দূরবর্তী স্থানে আক্রমণের তো প্রশ্নই উঠে না। তদুপরি কোন শাসনকর্তার নিকট পাঠানো প্রথম পত্রে এরূপ হুমকি প্রদান বিশ্ব মানবতার প্রধান ব্যক্তিত্বের গৃহীত উদারনীতির পরিপন্থী। কারণ তিনি অন্য সবার চেয়ে ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে সচেতন ছিলেন এবং পরিবেশের উপযুক্ততা ও সময়ের দাবীকে বুঝতেন।

স্মৃতিবহুল আবিসিনিয়ায় মহানবীর দূত

আবিসিনিয়া আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বর্তমানে ইথিওপিয়া’ নামে প্রসিদ্ধ দেশটির আয়তন আঠারো হাজার বর্গ কিলোমিটার ও এর রাজধানী আদ্দিস আবাবা।

এশিয়ার অধিবাসীরা দীন ইসলামের আবির্ভাবের এক শ’ বছর পূর্বে এ দেশের সাথে পরিচিত হয়। পারস্য সম্রাট আনুশিরওয়ানের শাসনামলে ইরানী সেনাদলের আবিসিনিয়া আক্রমণের মাধ্যমে এ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। মুহাজির মুসলমানদের আবিসিনিয়ায় হিজরতের মাধ্যমে এ যোগাযোগ পূর্ণতা পায়।

মহানবী (সা.) যখন ছয়জন প্রতিনিধিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসনকর্তাদের উদ্দেশে পত্রসহ প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন,তখন আবিসিনিয়ার শাসনকর্তার নিকট ইসলামের আহবান বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমর ইবনে দ্বামরীকে মনোনীত করেন। তখন আবিসিনিয়ার শাসক ছিলেন নাজ্জাশী। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। এ পত্র নাজ্জাশীর প্রতি মহানবী (সা.)-এর প্রথম পত্র নয়। কারণ ইতোপূর্বে তাঁর কাছে মুসলমান মুহাজিরদের সম্পর্কে বিবরণ দিয়ে তাঁদের সাথে সদাচরণের আহবান জানিয়ে তিনি পত্র দিয়েছিলেন। ঐ পত্রখানাও ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে।225 কখনো কখনো মুসলমানদের বিষয়ে সুপারিশ করে লিখিত পত্রের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণের আহবান সম্বলিত পত্রকে এক করে দেখা হয়েছে অথবা মিশ্রিত করা হয়েছে। যখন মহানবী (সা.) আবিসিনিয়ার উদ্দেশে তাঁর দূত প্রেরণ করেন,তখনও একদল মুহাজির মুসলমান নাজ্জাশীর দরবারে আশ্রিত ছিলেন।

আবিসিনিয়ায় প্রেরিত মুহাজিরগণের একাংশ মদীনায় ফিরে এসেছিলেন এবং ঐ ন্যায়পরায়ণ শাসকের সুশাসন ও সদাচরণের সুন্দর স্মৃতি বহন করে এনেছিলেন। তাই আবিসিনিয়া মুসলমানদের জন্য স্মৃতিবহুল স্থান ছিল। আবিসিনিয়ার শাসকের প্রতি প্রেরিত পত্রে আমরা যে বিশেষ কোমল ভাব ও নমনীয়তা লক্ষ্য করি,তার কারণ মুসলমানদের প্রতি তাঁর সহৃদয় আচরণ এবং তাঁর উন্নত নৈতিক বৈশিষ্ট্য,যে সম্পর্কে মহানবী (সা.) পরিচিত ছিলেন।

অন্যান্য শাসকের প্রতি প্রেরিত পত্রে মহানবী আল্লাহর কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করতেন এবং সতর্ক করতেন এ বলে,যদি তারা ঈমান না আনে,তবে আদ জাতির বিপথগামিতার গুনাহ্ তাদের উপর বর্তাবে। কিন্তু এ পত্রে এরূপ কোন ভাষা নেই। মহানবী (সা.)-এর পত্রখানা ছিল এরূপ :

بسم الله الرّحمان الرّحيم من محمّد بن عبد الله الى النجاشى ملك الحبشه، سلام عليك فانى احمد الله الذى لا اله الا هو الملك القدوس السلام المؤمن المهيمن، اشهد ان عيسي بن مريم روح الله و كلمته القاها الى مريم البتول الطيبة الحصينة فحملت بعيسي، حملته من روحه و نفخه كما خلق آدم بيده. و اني ادعوك الى الله وحده لا شريك له و الموالاة علي طاعته، و ان تَتبعنى و توقن بالذى جائني، فاني رسول الله و اني ادعوك و جنودك الى الله عز و جل، و قد بلغت و نصحت فاقبلوا نصيحتي و السلام علي من اتبع الهدي

“পরম করুণাময় ও অনন্ত দাতা আল্লাহর নামে। এ পত্র আল্লাহর নবী মুহাম্মদের পক্ষ থেকে আবিসিনিয়ার শাসনকর্তা নাজ্জাশীর প্রতি। আপনার উপর সালাম। আমি একক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রশংসা করছি,যিনি সকল ত্রুটি ও অপূর্ণতা হতে মুক্ত। তাঁর অনুগত বান্দারা তাঁর শাস্তি হতে নিরাপত্তা লাভ করবে এবং তিনি তাঁর বান্দাদের উপর সাক্ষী ও দ্রষ্টা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,হযরত মারিয়ামের পুত্র ঈসা রুহুল্লাহ্ এবং তিনি পবিত্র ও দুনিয়াবিমুখ নারী মারিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী আল্লাহর এক নিদর্শনস্বরূপ। মহান আল্লাহ্ তাঁর ইলাহী শক্তিতে তাঁকে পিতা ছাড়া মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেছেন,যেমনভাবে আদমকে পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি করেছিলেন। আমি আপনাকে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর দিকে আহবান করছি,যাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি চাই,আপনি সবসময় আল্লাহর অনুগত থাকুন। সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনুন,যিনি আমাকে সত্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আবিসিনিয়ার সম্রাট! জেনে রাখুন,আমি আল্লাহর নবী। আমি আপনাকে ও আপনার সকল অনুসারী ও অনুগতদের ইসলাম গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। আমি এই পত্রসহ দূত প্রেরণের মাধ্যমে আমার উপর আরোপিত দায়িত্ব পালন করলাম এবং এর মাধ্যমে আপনাকে উপদেশ দান করলাম। সত্যপন্থীদের প্রতি সালাম। 226

মহানবী (সা.) সালামের মাধ্যমে এ পত্র শুরু করেছেন। স্বয়ং আবিসিনিয়ার সম্রাটের প্রতি সালাম দিয়েছেন। এটি একটি ব্যতিক্রম। কারণ রোম,ইরান,মিশর প্রভৃতি দেশের শাসকদের প্রতি তিনি সালাম দেন নি;বরং যারা সত্যের অনুসারী,তাদের উপর সালাম’ -এ কথা দিয়ে পত্র শুরু করেছিলেন,কিন্তু এ পত্রে স্বয়ং প্রতিপক্ষের প্রতি সালাম দিয়েছেন। এভাবে তাঁকে বিশেষ সম্মানিত করেছেন,যা সমসাময়িক অন্যান্য শাসকদের থেকে তাঁর ব্যতিক্রম হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে।

এ পত্রে মহান আল্লাহর কিছুসংখ্যক মহত্ত্বসূচক ও পবিত্রতা জ্ঞাপক গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর হযরত ঈসার আল্লাহর সমকক্ষ হওয়ার বিষয়টি,-যা খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের সৃষ্ট বাতিল বিশ্বাস,-উল্লেখ করে পবিত্র কুরআন থেকে এর বিপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হযরত ঈসার সৃষ্টিকে হযরত আদমের সৃষ্টির সাথে তুলনা করে বোঝানো হয়েছে,যদি পিতা না থাকা কারো খোদা হওয়ার প্রমাণ হয়,তা হলে হযরত আদমও তা ছিলেন,অথচ তাঁর বিষয়ে কেউই ঐরূপ বিশ্বাস রাখে না।

পত্রের শেষের বাণী উপদেশমূলক ছিল। এর মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে বিশেষভাবে উপস্থাপন থেকে বিরত থাকা হয়েছে।

মহানবী (সা.)-এর দূতের সাথে আবিসিনিয়ার সম্রাটের সংলাপ

মহানবীর দূত বিশেষ অভ্যর্থনার পর সম্রাটের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন : আমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আমার নেতার বাণী আপনার নিকট পৌঁছানোর। আপনার পবিত্র প্রকৃতি ও বিবেকের ওপর এই বাণীর যথার্থতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দিচ্ছি।

হে ন্যায়পরায়ণ সম্রাট! মুসলমান প্রবাসীদের প্রতি আপনার সহানুভূতিশীল আচরণ ভুলে যাওয়ার মতো নয় এবং আপনার নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা আমাদের এতটা প্রভাবিত করেছে যে,আমরা আপনাকে নিজেদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের একজন বলে জানি। আপনার উপর আমাদের এতটা আস্থা রয়েছে,যেন আপনি আমাদেরই একজন সহযোগী।

আপনাদের ইনযীল অগ্রাহ্যকরণও বিতর্কের ঊর্ধ্বের এক শক্তিশালী দলিল। এ গ্রন্থ ন্যায়বিচারক,যে তার বিচারের ক্ষেত্রে অন্যায়ের পক্ষ নেয় না। এ ন্যায়ের ধারক সুস্পষ্টভাবে আমাদের নবীর নবুওয়াতের পক্ষে সাক্ষ্য দান করে। যদি আপনি এই বিশ্বজনীন ও সর্বশেষ নবীর অনুসরণ করেন,তবে মহাকল্যাণ লাভ করতে পারবেন। আর যদি তা গ্রহণ না করেন,তা হলে আপনার উদাহরণ ইহুদীদের মতো হবে,যারা হযরত মূসা (আ.)-এর শরীয়তের রহিতকারী হযরত ঈসা (আ.)-এর শরীয়তকে অস্বীকার করেছিল। তারা রহিত শরীয়তকেই আঁকড়ে ধরেছিল। বর্তমানে ইসলামের শরীয়ত হযরত ঈসার আনীত শরীয়তকে রহিত ঘোষণা করে পূর্ণতম শরীয়ত উপস্থাপন করেছে।”

আবিসিনিয়ার সম্রাট মহানবীর দূতকে বললেন :

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,হযরত মুহাম্মদ (সা.) সেই প্রতিশ্রুত নবী,যাঁর প্রতীক্ষায় আহলে কিতাবরা (পূর্বেকার ইলাহী কিতাবধারীরা) রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি,যেমনভাবে হযরত মূসা (আ.) হযরত ঈসা (আ.)-এর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন,ঠিক তেমনিভাবে হযরত ঈসা (আ.) শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিচিতি লাভের চিহ্নসমূহ সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। আমি তাঁর নবুওয়াতের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে প্রস্তুত আছি,কিন্তু এখনো তার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হয় নি এবং আমার সহযোগীদের সংখ্যাও কম। তাই এ জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে,যাতে সকলে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যদি আমার পক্ষে সম্ভব হতো,তা হলে আমি এখনই আপনাদের নবীর কাছে উপস্থিত হতাম। 227

মহানবীর প্রতি নাজ্জাশীর পত্র

“পরম করুণাময় ও অনন্ত দাতা আল্লাহর নামে। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের প্রতি নাজ্জাশীর পত্র। যিনি ব্যতীত খোদা নেই এবং যিনি আমাকে ইসলামের প্রতি পরিচালিত ও হেদায়েত করেছেন,তাঁর শান্তি আপনার প্রতি বর্ষিত হোক। হযরত ঈসা (আ.)-এর নবী ও মানুষ হওয়ার বিষয়ে আপনার পত্রে উল্লিখিত প্রমাণসমূহ আমি লক্ষ্য করেছি। আমি তার কোন বিরোধিতা করি না। আপনার ধর্মের সত্যতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমার অতিথি মুহাজির মুসলমানদের প্রতি যতটা সম্ভব দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আমি এ পত্রের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিচ্ছি,আপনি আল্লাহর প্রেরিত এবং সত্যবাদী ব্যক্তি (নবী),যাঁর প্রতি ইলাহী গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে। আমি আপনার চাচাতো ভাইয়ের (জাফর ইবনে আবী তালিবের) সামনে ইসলাম গ্রহণ ও আপনার আনুগত্যের বাইয়াত করেছি। আমি আমার বাণী এবং ইসলাম গ্রহণের স্বীকৃতি জ্ঞাপনের জন্য নিজ পুত্র রারহাকে পত্রসহ আপনার পবিত্র সমীপে প্রেরণ করছি। আমি সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করছি,আমি শুধু নিজের জিম্মাদার,অন্য কারো নয়। যদি আপনি নির্দেশ দেন,আমি আপনার সমীপে উপস্থিত হব। হে আল্লাহর নবী! আপনার উপর সালাম। 228

নাজ্জাশী রাসূলের সমীপে বিশেষ উপহার পাঠান এবং মহানবীও তাঁর উদ্দেশে আরো দু খানা পত্র প্রেরণ করেন।

রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি মহানবীর পত্র প্রেরণের গুরুত্ব

তৎকালীন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই হয় তো ভেবেছেন,বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসকদের প্রতি পত্র প্রেরণের বিষয়টি প্রচলিত রীতি বিরোধী একটি কাজ। কিন্তু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে,মহানবীর পত্র প্রেরণের পেছনে নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু ছিল না :

প্রথমত ছয়জন দূতকে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের শাসকদের উদ্দেশে সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী দলিলভিত্তিক পত্রসহ প্রেরণ এ লক্ষ্যে ছিল যে,ভবিষ্যতে বিরোধীরা যেন আপত্তি উত্থাপন ও সন্দেহ প্রকাশের সুযোগ না পায়। আজ কারো পক্ষে সন্দেহ পোষণের অবকাশ নেই,মহানবীর আহবান বিশ্বজনীন ছিল এবং ইসলাম বিশ্বজনীন হওয়ার কারণেই তিনি সবার প্রতি এ আহবান রেখেছিলেন। উপরন্তু এর সপক্ষে পবিত্র কুরআনেও আয়াত রয়েছে। তাঁর নবুওয়াত বিশ্বজনীন প্রমাণের জন্য দূত প্রেরণের বিষয়টি সবচেয়ে বড়।

দ্বিতীয়ত পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজ ব্যতীত বাকী সকল শাসনকর্তাই রাসূলের দাওয়াতে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁর দূতদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। খসরু পারভেজ অহংকারী ও স্বৈরাচারী হওয়ার কারণে এর বিপরীত আচরণ করেছিল।

দূত প্রেরণের কারণেই আরবদের মাঝে নবী আবির্ভূত হয়েছেন বলে সবাই জানতে পারে এবং ধর্মীয় মহলগুলোতে এটি একটি আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। এ পত্রসমূহ ঘুমন্তদের জাগ্রত করে,অমনোযোগী ও অসচেতনদের নাড়া দেয় এবং বিশ্বের সভ্য জাতিগুলোকে প্রতিশ্রুত নবীর আবির্ভাব সম্পর্কে গবেষণা করতে এবং নতুন করে তওরাত ও ইনযীল অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধ করে। এর ফলে যে সকল ধর্মযাজক,পুরোহিত ও ধর্ম বিশেষজ্ঞ অন্ধত্ব ও ধর্মীয় গোঁড়ামীর ঊর্ধ্বে ছিলেন,তাঁরা বিভিন্নভাবে নতুন ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষণার সুযোগ পান। তৎকালীন অনেক ধর্মীয় পণ্ডিতই রাসূলের জীবনের শেষ দিকে বা তাঁর ওফাতের পর মদীনায় গিয়ে নতুন ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা চালিয়েছেন।

নাজ্জাশীর ওপর মহানবীর পত্রের প্রভাব

নাজ্জাশী মহানবীর প্রেরিত দূতকে উপঢৌকন সহ বিদায় করার পর আবিসিনিয়ার বিভিন্ন ধর্মযাজক ও ধর্মীয় পণ্ডিতদেরকে সত্য এ ধর্মের সাথে পরিচিত করানোর জন্য ত্রিশ সদস্যের একদল পণ্ডিত ব্যক্তিকে মদীনার উদ্দেশে প্রেরণ করেন। তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল,এই ব্যক্তিবর্গ মহানবীর সরল ও সাধারণ জীবনযাত্রা কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করুন এবং জানুন যে,তিনি তৎকালীন শাসকদের ন্যায় জাঁকজমকপূর্ণ জীবন যাপন করেন না।

নাজ্জাশীর প্রেরিত ধর্মীয় প্রতিনিধিদল মহানবীর সকাশে উপস্থিত হয়ে হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলেন। তিনি হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কিত সূরা মায়িদার একখানা আয়াত পাঠের মাধ্যমে তাঁর বিশ্বাস ব্যাখ্যা করলেন। আয়াতের ভাবার্থ তাদের এতটা প্রভাবিত করল,আপনাআপনি তাঁদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল।

আয়াতের অনুবাদ :

যখন আল্লাহ্ বলবেন : হে ঈসা ইবনে মারিয়াম! তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর,যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি (শিশু কালে) ও পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে প্রচারজ্ঞান,তওরাত ও ইনযীল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখির প্রতিকৃতির মতো প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার নির্দেশে,অতঃপর তুমি তাতে ফুঁক দিতে,এবং তা আমার আদেশে জীবিত পাখি হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় দান করতে এবং যখন তুমি আমার আদেশে মৃতদেরকে (জীবিত করে) বের করতে এবং যখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমা হতে নিবৃত্ত রেখেছিলাম,যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে;অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের ছিল,তারা বলল : এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছু নয়। (সূরা মায়িদাহ্ : 110)

এই প্রতিনিধি দল মহানবীর ধর্ম নিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে গবেষণার পর আবিসিনিয়ায় ফিরে গিয়ে সম্রাটের কাছে প্রতিবেদন পেশ করল।229

ইবনে আসির230 প্রতিনিধি দলের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন,তারা সবাই সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

কিন্তু যেহেতু ইবনে আসির আবিসিনিয়ার রাজার পত্র মহানবীর (সা.) হাতে পৌঁছেছিল বলেছেন,তাই নিঃসন্দেহে এই প্রতিনিধিদলের বার্তাবাহক তাতে নিমজ্জিত হন নি এবং তাঁর মতে নাজ্জাশীর পুত্র আরস ইবনে আসহাম231 তাঁর পত্রবাহক ছিলেন,যা আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।

গাসসানী শাসকের প্রতি মহানবীর পত্র

গাস্সান প্রাচীন কাহতানী বংশের আজদ গোত্রের একটি শাখা,যারা দীর্ঘ দিন যাবত ইয়েমেনে বাস করছিল। তাদের কৃষি ভূমি মারাব বাঁধের পানি দ্বারা সিঞ্চিত হতো। ঐ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তারা সিরিয়ায় বসবাস শুরু করে। তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা স্থানীয় অধিবাসীদেরও তাদের প্রভাবাধীন করে ফেলে এবং তারা ঐ অঞ্চলে গাসসানী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে। অবশ্য তারা রোম সম্রাটের অধীন ছিল। ইসলাম তাদের শাসনের পতন ঘটানো পর্যন্ত বত্রিশ জন শাসক সিরিয়ার জাওলান,দামেস্ক ও ইয়ারমুক অঞ্চলে শাসনকাজ পরিচালনা করেছে।

সুজা ইবনে ওয়াহাব মহানবীর প্রেরিত (ইসলামের বিশ্বজনীন বার্তাবাহী) ছয়জন দূতের অন্যতম,যিনি গাসসানী শাসকের নিকট পত্র নিয়ে যান। তিনি বায়ুজা’ নামক স্থানে গাসসানী শাসক হারিস ইবনে আবি শিমরের নিকট রাসূলের পত্র হস্তান্তর করেন,যখন মহানবী (সা.)-এর দূত হারিস শাসিত অঞ্চলে পৌঁছার সময় সে রোম সম্রাটকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রোম সম্রাট প্রতিপক্ষ ও শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে জয় লাভের কারণে বায়তুল মুকাদ্দাস যিয়ারতের মানত পূরণের লক্ষ্যে কনস্টান্টিনোপল থেকে পায়ে হেঁটে সিরিয়ার উপর দিয়ে জেরুযালেম যাচ্ছিলেন।

এ কারণে গাসসানী শাসকের সাথে সাক্ষাৎ করতে মহানবীর দূতকে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এ সময়ে তিনি হারিসের অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান হাজেরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাঁকে মহানবীর পবিত্র জীবনপ্রণালী ও তাঁর আনীত মহান ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেন। রাসূলের দূতের আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনা অভ্যর্থনা কমিটির প্রধানের মনে আশ্চর্য প্রভাব ফেলে এবং তাঁর চিন্তার জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। তিনি এতটা প্রভাবিত হলেন যে,তাঁর চোখ দিয়ে অবারিত ধারায় অশ্রু ঝরছিল। তিনি মহানবীর দূতকে বললেন : আমি ইনযীল ভালোভাবে পড়েছি এবং শেষ নবীর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পড়েছি। এখনই আমি তাঁর উপর ঈমান আনছি। কিন্তু হারিস যদি তা জানতে পারে,তা হলে আমাকে হত্যা করবে। হারিস নিজে রোম সম্রাটের ভয়ে ভীত। তাই যদি সে তোমার কথা বিশ্বাসও করে,তবু তা প্রকাশ করার সাহস পাবে না। তা ছাড়া সে সহ তার পূর্বপুরুষ সবাই এ অঞ্চলে রোম সম্রাটের বদান্যতায় শাসনকাজ চালাচ্ছে।”

কয়েক দিন অপেক্ষার পর হারিসের নিকট তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো। সে তখন সিংহাসনে মুকুট পরে বসেছিল। রাসূলের দূত পত্রটি তার হাতে দিলেন। পত্রটি এরূপ :

“পরম করুণাময় ও দাতা আল্লাহর নামে। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে হারিস ইবনে আবি শিমরের প্রতি। সত্যের অনুসারী ও প্রকৃত ঈমানদারদের উপর সালাম। তোমাকে একক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর,-যাঁর কোন শরীক নেই,-তাঁর প্রতি আহবান করছি। যদি তুমি ঈমান আনয়ন কর,তোমার ক্ষমতা বহাল থাকবে।”

পত্রের শেষ অংশ হারিসকে ক্রোধান্বিত করল। সে বলল : আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা কারো নেই। আমি অবশ্যই এই নবী দাবীকারীকে গ্রেফতার করব।” অতঃপর মহানবীর দূতকে ভীত করার লক্ষ্যে প্রধান সেনাপতিকে তাঁর সামনে সামরিক মহড়া প্রদর্শনের নির্দেশ দিল। তা ছাড়া নিজেকে প্রদর্শন করার জন্য রোম সম্রাটের নিকট এ মর্মে পত্র দিল যে,এই নবী দাবীকারীকে সে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘটনাক্রমে গাসসানী শাসকের পত্র নিয়ে যখন দূত রোমের সম্রাটের নিকট পৌঁছল,ঠিক সে সময় মহানবীর অন্যতম দূত দাহিয়া কালবী রোম সম্রাটের সামনে উপস্থিত ছিলেন। রোম সম্রাট মহানবীর আনীত ধর্ম নিয়ে পর্যালোচনা করছিলেন। গাসসানী শাসকের বাড়াবাড়িতে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি তার পত্রের জবাবে লিখলেন : তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কর। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ইলঈয়ায় আস।”

النّاس علي دين ملوكهم অর্থাৎ জনসাধারণ শাসকদের ধর্মের অনুবর্তী’ -এ রীতির প্রতিফলন গাসসানী শাসকের আচরণেও ঘটল। রোম সম্রাটের চিন্তা-পদ্ধতি ও গৃহীত রীতি হারিসের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটালো। সে মহানবীর দূতের প্রতি আচরণ পরিবর্তন করল এবং সম্মানের বিশেষ পোশাক তাঁর হাতে দিয়ে মদীনায় ফিরে রাসূলকে তার সালাম পৌঁছে দিয়ে বলতে বলল,সেও মহানবীর একজন প্রকৃত অনুসারী। কিন্তু মহানবী (সা.) তার কূটনৈতিক উত্তরে প্রভাবিত না হয়ে বললেন : অচিরেই তার শাসন-ক্ষমতার অবসান ঘটবে।” হারিস এ ঘটনার এক বছর পর অষ্টম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে।