সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 20546
ডাউনলোড: 3370

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 20546 / ডাউনলোড: 3370
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

ষষ্ট অধ্যায় :মাহ্দীবাদের অসুবিধাসমূহ

প্রতিটি আন্দোলনেরই কিছু প্রতিকুলতা থাকে যা ওই সাংস্কৃতির উন্নতি ও প্রগতিতে প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি করে। ইসলামী আন্দোলনেরও অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে যা তার উন্নতি ও প্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে আমরা ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

এ অধ্যায়ে আমরা মাহ্দীবাদের বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

মাহ্দীবাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে যদি আমরা অসাবধান থাকি তাহলে তা ইমাম মাহ্দী (আ.) সম্পর্কে মানুষের আক্বীদা বিশেষ করে যুবকদের আক্বীদাকে দূর্বল করবে। কখনো আবার এ কারণে ব্যক্তি বা গোত্র বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে। সুতরাং এই সমস্যাসমূহকে জানার মাধ্যমে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষাকরীরা আক্বীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে পড়া থেকে মুক্তি পেতে পারে। এখানে আমরা মাহ্দীবাদের প্রধান প্রধান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব:  

1 - ভুল ধারণা : মাহ্দীবাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ইসলামের এ সাংস্কৃতি সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল ধারণা। রেওয়ায়াতের ভুল ও অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা মানুষেকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে নিম্নে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হল।

ক)- প্রতীক্ষার ভাবার্থ সম্পর্কে ভুল ধারণা ও ব্যাখ্যার কারণে অনেকে মনে করে থাকে যে ,পৃথিবীকে অন্যায় মুক্ত করে ন্যায়-নীতিতে পূর্ণ করা যেহেতু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মাধ্যমে সংঘটিত হবে তাই আমাদের কোন দায়িত্বই নেই। বরং অনেকে মনে করে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ত্বরান্বিত হওয়ার জন্য সমাজে অন্যায়-অত্যাচার বৃদ্ধি করতে হবে। এ চিন্তা কোরআন ও হদীসের নির্দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা ,কোরআনে ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হযেছে।

ইমাম খোমেনী (রহ.) এ সম্পর্কে বলেছেন: আমাদের শক্তি থাকলে সারা বিশ্ব থেকে অন্যায়-অত্যাচার দূর করা আমাদের ইসলামী দায়িত্ব ,কিন্তু আমাদের সে শক্তি নেই। ইমাম মাহ্দী (আ.) পৃথিবীকে ন্যায়নীতিতে পূর্ণ করবেন ,সে জন্য আমাদেরকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব পালন করতেই হবে। 247

তিনি আরও বলেছেন: আমরা কি কোরআনের নির্দেশ অমান্য করে অন্যায় কাজের নিষেধ করা থেকে বিরত থাকব ?ন্যায় কাজের আদেশ করা থেকে বিরত থাকব ?এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের জন্য অন্যায়- অত্যাচারের প্রসার ঘটাব ?248

উল্লেখ্য যে ,আমরা প্রতীক্ষার আলোচনায় সঠিক প্রতীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

খ)- অনেকে কিছু হাদীসের বাহ্যিক দিক দেখে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিপ্লবের পূর্ব সব ধরনের সংগ্রামই নিরর্থক। সুতরাং ইরানের ইসলামী বিপ্লবকেও অনেকে ভাল দৃষ্টিতে দেখে না।

তাদের জবাবে বলব যে ,ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত আল্লাহর বিধানের প্রয়োগ ,ফ্যাসাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং শত্রুর সাথে জিহাদ করা সম্ভব নয়। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা হচ্ছে একটি অতি পছন্দনীয় পদক্ষেপ। যে সকল রেওয়ায়াতে সংগ্রাম করতে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে বাতিল সংগ্রাম এবং যা পার্থিব সুবিধা ভোগের জন্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কোন প্রকার প্রেক্ষাপট ও সময় সুযোগ ছাড়াই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সংগ্রামের নামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কাজেই সমাজ সংশোধনের জন্য যে বিপ্লব করা হয়ে থাকে তাতে কোন সমস্যা নেই। 249

)- মাহ্দীবাদ সম্পর্কে অপর একটি ভুল ধারণা হচ্ছে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিপ্লবকে হিংস্র বিপ্লব হিসাবে উপস্থাপন করা।

অনেকে মনে করে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) তলোয়ার দিয়ে রক্তের বন্যা বহিয়ে দিবেন। কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আ.) হচ্ছেন অতি দয়ালু এবং তিনি প্রথমে রাসূল (সা.)-এর মত মানুষকে নরম ভাষায় ও স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে ইসলাম ও কোরআনের দিকে দাওয়াত করবেন। অধিকাংশ মানুষ তার আহবানে সাড়া দিবে এবং তার দলের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং ইমাম শুধুমাত্র যারা জেনে শুনে সত্য গ্রহণ করতে চাইবে না এবং অস্ত্রের ভাষা ছাড়া কোন ভাষাই বোঝে না কেবল মাত্র তাদেরকেই হত্যা করবেন।

2 - আবির্ভাবের জন্য তাড়াহুড়া : মাহ্দীবাদের আপর একটি সমস্যা হচ্ছে যে ,আবির্ভাবের জন্য তাড়াহুড়া। এখানে তাড়াহুড়া বলতে কোন কিছুকে তার সময় না হতেই প্রার্থনা করা। তাড়াহুড়াকারীরা তাদের নফসের দূর্বলতার কারণে সব কাজেই অস্থিরতা প্রদর্শন করে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝেই কিছু ঘটার অপেক্ষায় থাকে।

মাহ্দীবাদের সাংস্কৃতিতে প্রতীক্ষাকারীরা সর্বদা ইমামের অপেক্ষায় রয়েছে ,তার আবির্ভাব ত্বরান্বিত হওয়ার জন্য দোয়া করে ,কিন্তু কখনোই তড়িঘড়ি করে না তাই এ প্রতীক্ষা যতই দীর্ঘ হোক না কেন। সবর্দা ধৈর্য ধারণ করে এবং আবির্ভাবের জন্য আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর ইচ্ছার কাছে মাথা নত করে ও আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য চেষ্ট চালাতে থাকে।

আব্দুর রহমান বিন কাছির বলেন: আমি ইমাম জা ফর সাদিক (আ.)-এর কাছে বসেছিলাম তখন মাহরাম প্রবেশ করে বলল: আমরা যার প্রতীক্ষায় আছি তা কবে বাস্তবায়িত হবে ?ইমাম বললেন: হে মাহরাম যারা সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যা বলেছে এবং যারা তড়িঘড়ি করে তারা ধ্বংস হবে ,যারা ধৈর্য ধারণ করবে তারা মুক্তি পাবে। 250

তড়িঘড়ি করতে এ জন্য নিষেধ করা হয়েছে যে ,এ কারণে প্রতীক্ষাকারীরা নিরাশ হতে পারে এবং ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে তা নালিশে রূপান্তরিত হতে পারে। দেরিতে আবির্ভাব তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে আর এ অসুখ অন্যদের মধ্যেও প্রবেশ করতে পারে যার কারণে অনেকে ইমামকে অস্বীকার করে বসতে পারে।

বলাবাহুল্য যে ,তাড়াহুড়া করার কারণ হচ্ছে অনেকে জানে না যে ,আবির্ভাব হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত তা বাস্তাবায়িত হবে না ,কাজেই তারা তাড়াহুড়া করে।

3- আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করা : মাহ্দীবাদের অপর একটি সমস্যা হচ্ছে অনেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সময়কে নির্ধারণ করে। যদিও আবির্ভাবের সময় গোপন রয়েছে এবং ইমামগণের হাদীসে আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করাকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে ও সময় নির্ধারণকারীদেরকে মিথ্যাবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে আবির্ভাবের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: যারা আবির্ভাবের সময় নির্ধারণ করে তারা মিথ্যাবাদী। এ কথা তিনি তিনবার বলেছিলেন। 251

তারপরও অনেকেই আবির্ভাবের সময়কে নির্ধারণ করে যার প্রাথমিক কুফল হচ্ছে যারা এ কথা বিশ্বাস করে এবং তার বিপরীত ফল দেখে তখন তারা নিরাশ হয়ে পড়ে।

সুতরাং প্রকৃত প্রতীক্ষাকরীদেরকে মিথ্যাবাদী ও মুর্খদের থেকে দূরে থাকতে হবে এবং আবির্ভাবের জন্য শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরশা করবে।

4 - আবির্ভাবের আলামতকে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করা : বিভিন্ন রেওয়ায়াতে ইমাম মাহ্দী ( আ .)- এর আবির্ভাবের বিভিন্ন আলামত বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু তার সঠিক বৈশিষ্ট্য আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যদিও কখনো কখনো কেউ এই সকল আলামত দেখে ইমামের আবির্ভাব ত্বরান্বিত হওয়ার খবর দিয়ে থাকে।

এ ঘটনাও মাহ্দীবাদের একটি সমস্যা যার কারণে মানুষ আবির্ভাব সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়ে। উদাহরণ স্বরূপ সুফিয়ানির চরিত্রকে অন্য কারো মধ্যে ব্যাখ্যা করা হয় অথবা দজ্জাল সম্পর্কে দলিল বিহীন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় এবং তার ভিত্তিতে ইমামের আবির্ভাব অতি নিকটে এই বলে সবাইকে সুসংবাদ দেওয়া হয় কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন ইমামের আবির্ভাব হয় না তখন অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায় এবং তাদের আক্বীদা নড়বড়ে হয়ে যায়।

5 - অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের আলোচনা : মাহ্দীবাদের সাংস্কৃতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যার আলোচনা অতি প্রয়োজন। কেননা ,অদৃশ্যের সময়ে শিয়াদের আক্বীদাকে দৃঢ় করার জন্য সেগুলোর প্রধান ভুমিকা রয়েছে।

কখনো এমন কিছু বিষয় নিয়ে সেমিনার ও আলোচনাসভা করা হয় যার কোন গুরুত্বই নেই বরং কখনো তার কারণে প্রতীক্ষাকারীদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ স্বরূপ ইমাম যামানার সাথে সাক্ষাৎ নামক সেমিনার সমূহে এ বিষয়টির উপর এত বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় যে ,অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং ফলে অনেকে নিরাশ হয়ে পড়েএমনকি অনেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে অস্বীকার করে বসে। বিভিন্ন রেওয়ায়াতে ইমাম মাহ্দী (আ.) যাতে সন্তুষ্ট সে পথে চলতে বলা হয়েছে ,কথা ও কাজে ইমামের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সুতরাং ইমামের অদৃশ্যকালে প্রতীক্ষাকারীদের কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে যার মাধ্যমে যদি কখনো ইমামের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয় তখন যেন তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিবাহ ,তার সন্তান এবং তিনি কোথায় জীবন- যাপন করেন এগুলির সবই অপ্রয়োজনীয় আলোচনার মধ্যে পড়ে। এগুলোর পরিবর্তে প্রতীক্ষাকারীদের জীবনে যা গঠনমূলক ভূমিকা রাখে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এ কারণেই আবির্ভাবের নিদর্শনের আলোচনার চেয়ে আবির্ভাবের শর্ত ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা বেশী জরুরী। কেননা ,আবির্ভাবের শর্তসমূহ জানতে পারলে ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর প্রতীক্ষাকারীরা সেই পথে অগ্রসর হতে আগ্রহী হবে।

মাহ্দীবাদের আলোচনায় সব দিকে দৃষ্টি রাখা অতি প্রয়োজন। অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.) সম্পর্কে আলোচনা করার সময় সব বিষয়ে পড়াশুনা করার প্রয়োজন। কখনো কেউ কেউ কয়েকটি হাদীস পড়ে অন্য হাদীসসমূহের দিকে দৃষ্টি রেখেই মাহ্দীবাদ সম্পর্কে একটি ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ কেউ কেউ কয়েকটি হাদীস পড়ে খবর দিল যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময় দীর্ঘ দিন ধরে যুদ্ধ হবে এবং অধিক রক্তারক্তি হবে। এভাবে তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর একটি কঠোর মুর্তি অঙ্কন করেছে। অপর রেওয়ায়েত সমূহে যে ,ইমামের দয়া মহানুভবতা এবং তার চারিত্রিক গুনাবলিকে রাসূল (সা.)-এর চারিত্রিক গুনাবলির সাথে তুলনা করা হয়েছে সেদিকে কোন দৃষ্টিপাত করে না। এই দু ধরনের হাদীসের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিলে বোঝা যাবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) সবার সাথে অতি দয়ালু আচরণ করবেন। তবে অত্যাচারী ও জালেমদের সাথে তিনি কঠোর আচরণ করবেন।

সুতরাং ইমাম মাহ্দী (আ.) সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে অনেক জ্ঞান থাকার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের মধ্যে সে যোগ্যতা নেই তাদেরকে এই সম্পর্কে আলোচনা করার কোন দরকারও নেই। কেননা ,তারা এ বিষয়ে প্রবেশ করলে মাহ্দীবাদের অনেক ক্ষতি সাধন করবে।

10) - মিথ্যা মাহ্দী দাবীকারী

মাহ্দীবাদের অপর একটি সমস্যা হচ্ছে যে ,অনেকেই নিজেকে মাহ্দী বলে দাবী করবে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সুদীর্ঘ অদৃশ্যকালে অনেকেই মিথ্যা দাবী করেছে যে ,তার সাথে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক আছে অথবা তার পক্ষ থেকে নায়েব বা বিশেষ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে।

ইমাম মাহ্দী (আ.) তার শেষ চিঠিতে চতুর্থ বিশেষ প্রতিনিধির কাছে লিখেছিলেন:

তুমি ছয় দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে , সকল কাজ ঠিক মত পালন কর এবং তোমার পর আর কাউকে প্রতিনিধি নির্ধারণ কর না। কেননা , দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে অনেকেই দাবী করবে যে , আমাকে দেখেছে। যেনে রাখ সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও আসমানী আওয়াজের পূর্বে যেই দাবী করবে যে , আমাকে দেখেছে সে মিথ্যাবাদী। 252

এ বর্ণনার পর প্রতিটি সচেতন শিয়ার দায়িত্ব হচ্ছে যারা দাবী করবে যে ,ইমাম মাহ্দীর সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে ও আমরা তার বিশেষ প্রতিনিধি তাদেরকে অস্বীকার করা এবং এভাবে সুবিধাবাদিদের পথকে বন্ধ করা।

আনেকে আবার আরও এগিয়ে গিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি দাবী করার পর নিজেকে স্বয়ং মাহ্দী দাবী করে বসেছে। এই ভণ্ড দাবীর মাধ্যমে তারা ভ্রান্ত র্ফেকার সৃষ্টি করেছে এবং অনেককেই বিভ্রান্তি মধ্যে ফেলে দিয়েছে। 253 এদের সম্পর্কে গবেষণা করলে দেখা যায় যে ,স্বৈরাচারিরা তাদের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই তারা বেঁচে আছে।

অজ্ঞতার কারণেই মানুষ ভ্রান্ত ও বাতিল র্ফেকাতে যোগ দেয় এবং মিথ্যাভাবে ইমামের বিশেষ প্রতিনিধি দাবীকারী ও ভণ্ড মাহ্দী দাবীকারীকে বিশ্বাস করে । ইমাম সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত জ্ঞান না রেখে ইমামকে দেখার প্রবল ইচ্ছা ও সুবিধাবাদীদের সম্পর্কে অসাবধানতার কারণে অনেকে ভণ্ডদের কবলে পড়ে।

সুতরাং প্রতীক্ষিত অনুসারীদের মাহ্দীবাদ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে ও নিজেদেরকে ভণ্ডদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং বড় আধ্যাত্মিক শিয়া আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে সঠিক পথে চলতে হবে।