দ্বীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকাল (অন্তর্ধান)
চতুর্থ প্রতিনিধির জীবনের শেষ দিকে ইমাম মাহ্দী
তাকে উদ্দেশ্য করে এভাবে লিখেছিলেন:
“
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
”
“
হে আলী ইবনে মুহাম্মদ সামুরী আল্লাহ তোমার মৃত্যুর শোকে তোমার
দ্বীনি ভাইদেরকে সবর ও কেরামত দান করুন। কেননা ৬ দিন পর তুমি
মৃত্যুবরণ করবে এবং চিরস্থায়ী ঠিকানায় চলে যাবে। কাজেই তোমার সকল
কাজের ঠিকমত দেখাশুনা কর এবং তোমার পর আর কাউকে প্রতিনিধির
ওসিয়ত করো না। কেননা
,এখন থেকে আমার দ্বীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধান শুরু
হতে যাচ্ছে এবং আল্লাহর নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দেখতে পাবে না
এবং এ অন্তর্ধান দীর্ঘকাল ধরে অর্থাৎ মানুষের অন্তর কঠিন ও কুৎসিত এবং
পৃথিবী অন্যায় ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে।
সুতরাং ৩২৯ হিজরীতে দ্বাদশ ইমাম (আ.)-এর শেষ প্রতিনিধির মৃত্যুর
মাধ্যমে দ্বীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকাল যা
“
গাইবাতে কোবরা
”
নামে পরিচিত শুরু
হয়। আল্লাহর নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত এ দ্বীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকাল চলতে
থাকবে এবং যে দিন আল্লাহর নির্দেশে অদৃশ্যের মেঘ সরে যাবে সেই দিন
পৃথিবী বেলায়াত নামক সূর্যের প্রত্যক্ষ নূরে আলোকিত হবে।
যেমনটি পূর্বেই জেনেছেন যে
,স্বল্পমেয়াদী অন্তর্ধানের সময়ে শিয়ারা
ইমামের বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করত। কিন্তু
দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানের সময়ে একমাত্র নায়েবে আ
’
ম (সাধারণ) অর্থাৎ দ্বীনি
আলেম ও মারাজায়ে তাকলীদদের শরণাপন্ন হবে এবং এটা একটি সরল
পথ
,যে সম্পর্কে ইমাম মাহ্দী (আ.) নিজেই একজন বিশ্বস্ত শিয়া আলেমের
কাছে চিঠি লিখেছেন। এই চিঠির কিছু অংশ যা ইমামের দ্বিতীয় প্রতিনিধির
মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে
,সেখানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে:
و اما الحوادث الواقعة فارجعوا فیها الی رواة حدیثنا فانهم حجتی علیکم و انا حجة الله علیهم
পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে আমাদের হাদীস বর্ণনাকারীদের শরণাপন্ন হবে।
কেননা তারা আমার হুজ্জাত আর আমি তাদের জন্য আল্লাহর হুজ্জাত।
দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানে দ্বীনি প্রশ্নসমূহের উত্তরের এ নতুন পদ্ধতি
বিশেষকরে ব্যক্তিগত ও সামাজিক কর্তব্য সস্পর্কে জানার এ পদ্ধতি এটাই
স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় যে
,শিয়া মাযহাবের সাংস্কৃতিতে ইমামত ও নেতৃত্বের এ
প্রক্রিয়া একটি জীবন্ত ও সক্রিয় পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মানুষের
হেদায়েত ও নেতৃত্বকে গঠনমূলক পদ্ধতিতে পালন করে থাকে। কখনোই
তাদের অনুসারীদেরকে নেতাবিহীন রাখে নি
,বরং তাদের জীবনের
ব্যক্তিগত ও সামাজিক সকল ব্যাপারকে যোগ্যতম আলেমদের হাতে সপে
দিয়েছেন। যারা দ্বীন বিশেষজ্ঞ
,আমানতদার এবং পরহেজগার। যারা
পারেন ইসলামের তরীকে সকল প্রতিকুলতা থেকে রক্ষা করতে এবং শীয়া
মাযহাবকে তাদের বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে।
ইমাম হাদী আন্ নাকী
(আ.)
অদৃশ্যকালীন সময়ে দ্বীনি আলেমদের
ভুমিকা সম্পর্কে বলেছেন:
ইমাম মাহদী (আ.)-এর অন্তর্ধানের পর যদি আলেমগণ জনগণকে তার
দিকে আহবান না করতেন
,হেদায়াত না করতেন
,যদি বলিষ্ঠ দলিল ও
হুজ্জাতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে রক্ষা না করতেন
,তারা যদি শয়তান
এবং শয়তানী বৈশিষ্টের অধিকারী ও আহলে বাইতের শত্রুদের হাত থেকে
শিয়া মাযহাবকে রক্ষা না করতেন তাহলে সকলেই দ্বীনচ্যুত হয়ে পড়ত।
কিন্তু তারা আছেন এবং শিয়া মাযহাবের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে রেখেছেন।
যেভাবে একজন জাহাজ চালক জাহাজের আরোহীদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওই সকল আলেমগণ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম।
এখানে যে বিশেষ বিষয়টির প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে তা হল
,একজন নেতার কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা অত্যাবশ্যক। কেননা মানুষের দ্বীন ও
দুনিয়ার এ গুরু দায়িত্ব এমন মাহামানবের ওপর অর্পণ করতে হবে যিনি
সঠিক বিষয়টি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সিদ্ধ হস্ত হবেন। একারণেই মাসুম
ইমামগণ (আ.) দ্বীনি আলেম এবং তারও উর্ধে ওয়ালীয়ে ফকীহর জন্য
অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। এসম্পর্কে ইমাম জা
’
ফর
সাদিক (আ.) বর্ণনা করেছেন:
“
ফকীহ্ ও আলেমগণের মধ্যে যারা নিজেদেরকে ছোট অথবা বড়
গোনাহ্ থেকে দুরে রেখেছে এবং দ্বীনের আইন-কানুন টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়
ভূমিকা পালন করে সাথে সাথে নিজের ইচ্ছা ও চাওয়া-পাওয়ার প্রতি
বিরোধিতা করে ও যামানার ইমামের নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকে
,মানুষের
উচিৎ তাদেরকে অনুসরণ করা। শিয়া মাযহাবের ফকীহ্গণের মধ্যে কিছু
সংখ্যক হচ্ছে এরূপ
,সকলেই নয়।
”