• শুরু
  • পূর্বের
  • 11 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 3863 / ডাউনলোড: 2524
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম হোসাইন (আ.)

ইমাম হোসাইন (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইমাম হোসাইন (আ .)

দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ

بسم الله الرحمن الرحیم

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু

আল্লাহর নামে

জন্ম

হিজরী চতুর্থ সনের শা বান মাসের তৃতীয় দিনে হযরত আলী ও হযরত ফাতেমার মহান মর্যাদার অধিকারী এই দ্বিতীয় সন্তান বেলায়েত ও অহী অবতরণের গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন। 1

যখন তাঁর জন্মের সংবাদ ইসলামের সম্মানিত নবী ও রাসূল (সা.)-এর কর্ণগোচর হয় তখন তিনি হযরত আলী ও ফাতেমার গৃহে আগমন করেন। তিনি নবজাতককে তার নিকট আনার জন্যে আসমাকে 2 বলেন। আসমা তাঁকে সাদা কাপড়ে পেচিয়ে রাসূল (সা.)-এর খেদমতে পেশ করলেন। তিনি শিশুর ডান কানে আযান আর বাম কানে ইকামত পাঠ করেন। 3

তাঁর সৌভাগ্যময় জন্মের প্রথম অথবা সপ্তম দিনে অহী অবতীর্ণকারী হযরত জিবরাঈল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে বলেন :

হে আল্লাহর রাসূল ,আল্লাহর সালাম আপনার জন্যে প্রেরিত হোক। আপনি এই নবজাত শিশুর নামকরণ হযরত হারুনের কনিষ্ট পূত্রের শুবাইর 4 -যা আরবীতে হোসাইন অর্থের সমর্থক নামে করুন। 5 কেননা আলীর মর্যাদা আপনার নিকট হযরত মুসার নিকট হারুনের মর্যাদার ন্যায় ,পার্থক্য শুধু এটা যে ,আপনি আল্লাহর শেষ নবী।

এভাবে এই মহিমাময় নাম হোসাইন আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ফাতেমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্যে নির্ধারণ করা হলো।

তাঁর জন্মের সপ্তম দিবসে হযরত ফাতেমা (আ.) আকিকা 6 হিসেবে একটি দুম্বা ইমাম হোসাইনের জন্যে কোরবানী করেন এবং তাঁর নবজাত শিশুর মাথা মুন্ডন করেন আর সেই কর্তিত চুলের সম ওজনের রূপা আল্লাহর পথে দান করেন। 7

হোসাইন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা.)

হোসাইন ইবনে আলীর জন্ম অর্থাৎ হিজরী চতুর্থ বৎসর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ইন্তেকাল যা তাঁর জন্মের ছয় বৎসর ও কয়েক মাস পরে সংঘটিত হয়-পর্যন্ত জনগণ ইমাম হোসাইনের ব্যাপারে ইসলামের সত্য নবী (সা.)-এর মহব্বত ও স্নেহ-ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে তৃতীয় ইমামের উচ্চ মর্যাদা ও মহত্বের ব্যাপারে ভালভাবেই ওয়াকিফহাল হয়েছেন।

হযরত সালমান ফারসী বলেন :

আমি দেখেছি রাসূল (সা.) হোসাইনকে তাঁর হাঁটুর উপর বসিয়ে চুমু খাচ্ছেন আর তখন তিনি বলছেন :

তুমি মহান ,মহান ব্যক্তির পুত্র এবং মহান ব্যক্তিবর্গের পিতা। তুমি ইমাম ,ইমামের পুত্র এবং ইমামদের পিতা। তুমি আল্লাহর হুজ্জাত (অকাট্য দলিল) ,আল্লাহর হুজ্জাতের পুত্র এবং আল্লাহর নয়জন হুজ্জাতের পিতা। তাদের শেষ জন শেষ যামানায় কিয়াম করবেন (আল্লাহ তাঁর আগমন ত্বরান্বিত করুক)। 8

হযরত আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করছেন :

যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে আপনি আপনার আহলে বাইতের মধ্য থেকে কাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন ?তিনি বলেন : হাসান ও হোসাইনকে। 9 প্রায়ই প্রিয় নবী (সা.) হাসান ও হোসাইনকে তাঁর বুকে চেপে ধরে তাদের পবিত্র দেহের সুঘ্রাণ নিতেন এবং তাদের চুম্বন করতেন। 10

আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যে : আমি দেখেছি যে রাসূল (সা.) হাসান ও হোসাইনকে তাঁর কাঁধে বসিয়ে আমাদের দিকে আসছেন। যখন তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন তখন বললেন ,যে আমার এই দু সন্তানকে ভালবাসবে সে আমাকে ভালবাসলো আর যে তাদের সাথে শত্রুতা করবে সে আমার সাথে শত্রুতা করলো। 11

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইমাম হোসাইনের মাঝে আধ্যাত্মিক ও ঐশী সম্পর্কের প্রাণবন্ত বর্ণনা এবং আন্তরিকতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ রাসূল (সা.)-এর নিম্নের এই বাক্যটির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন :

হোসাইন আমা থেকে এবং আমি হোসাইন থেকে। 12

হোসাইন পিতার সাথে

তাঁর জীবনের ছয় বছর তাঁর নানার সাথে অতিবাহিত হয়েছে। যখন রাসূল (সা.) এ ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নিলেন এবং তাঁর প্রভুর সাক্ষাতে চলে যান তখন থেকে ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত তিনি পিতার সাথে জীবন যাপন করেছেন। যে পিতা কখনো ন্যায় ও ইনসাফ ব্যতীত বিচার করেন নি ,পবিত্রতা ও বন্দেগী ছাড়া অতিবাহিত করেননি ,আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছু তাঁর দৃষ্টিতে ছিল না ,আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কিছু প্রার্থনা করেন নি এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু তাঁর কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তিনি এমন পিতা ছিলেন যার শাসনামলে এক মুহূর্তের জন্যে তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। যেমনি করে তাঁর খেলাফত আত্মসাৎ করার সময়ও তাঁকে কষ্ট দিতে শত্রুরা পিছপা হয়নি। তিনি এ সময়টুকু জান-প্রাণ দিয়ে পিতার নির্দেশের আনুগত্য করেছেন। যে ক বছর হযরত আলী (আ.) খেলাফতের দায়িত্বে ছিলেন তখন ইমাম হোসাইন (আ.) ইসলামী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পথে একজন আত্মোৎসর্গী সৈনিকের ন্যায় তাঁর মহানুভব ভ্রাতার মত প্রচেষ্টা চালাতেন। তিনি জামাল ,সিফ্ফিন ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধগুলোতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। 13

আর এভাবে তিনি তাঁর মহান পিতা আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং আল্লাহর দীনের সমর্থন করেছিলেন। এমনকি তিনি লোকজনের উপস্থিতিতে খেলাফত আত্মসাৎকারীদের লক্ষ্য করে প্রতিবাদ করতেন।

একদা হযরত ওমরের শাসনামলে ইমাম হোসাইন (আ.) মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। তিনি দ্বিতীয় খলীফাকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মিম্বারে উপবিষ্ট দেখতে পান। খলীফা তখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। ইমাম সরাসরি মিম্বারের সিঁড়িতে উঠে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করেন : আমার পিতার মিম্বার থেকে নিচে নেমে আসুন...। 14

ভাইয়ের সাথে ইমাম হোসাইন

হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী এবং আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর অসিয়ত অনুযায়ী মুসলমানদের নেতৃত্ব ও ইমামতের দায়িত্ব ইমাম আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইমাম হাসান (আ.)-এর উপর অর্পিত হয়। তখন সবার জন্যে তাদের নেতা ইমাম হাসানের আনুগত্য করা ফরজ ছিল। তখন ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর ভাইয়ের সহগামী ,সহকর্মী ও সহমর্মী ছিলেন। কেননা তিনি তো মুহাম্মদী অহী ও আলীর বেলায়াতের হাতে লালিত-পালিত হয়েছিলেন ।

অনুরূপভাবে যখন ইসলাম এবং মুসলিম সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এবং মহান আল্লাহর নির্দেশে ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং এতসব কষ্ট ও মর্মব্যথা সহ্য করেছিলেন তখনও ইমাম হোসাইন (আ.) ভাইয়ের কষ্টের সাথে শরীক হয়েছিলেন। যেহেতু তিনি জানতেন যে এই সন্ধি চুক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণ বয়ে আনবে ,তাই তিনি কখনো ভাইয়ের প্রতিবাদ করেন নি। এমনকি একদিন যখন মুয়াবিয়া ইমাম হাসান ও হোসাইনের উপস্থিতিতে তার অপবিত্র মুখ ইমাম হাসান ও তার মহান পিতা ইমাম আলী (আ.)-কে গালমন্দ করার জন্যে উদ্যত হয়েছিল ,ইমাম হোসাইন (আ.) মুয়াবিয়ার বক্তব্য তার অপবিত্র কণ্ঠনালীতে আবদ্ধ করে দেন এবং তার আচরণের জবাব দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে উদ্যত হন। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.) তাকে নীরবতার জন্যে আহ্বান জানান । ইমাম হোসাইন (আ.) তাই মেনে নিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর স্বীয় আসনে ফিরে যান। তারপর ইমাম হাসান (আ.) স্বয়ং মুয়াবিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে উদ্যোগী হন এবং তাঁর স্পষ্ট ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে মুয়াবিয়ার অপবিত্র মুখ বন্ধ করে দেন। 15

মুয়াবিয়ার শাসনামলে ইমাম হোসাইন (আ.)

ইমাম হাসানের শাহাদাতের পর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশানুযায়ী এবং আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) ও ইমাম হাসানের অসিয়ত অনুসারে মুসলমানদের নেতৃত্ব ও ইমামতের দায়িত্ব ইমাম হোসাইন (আ.)-এর স্কন্ধে অর্পিত হয়। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির নেতৃত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

ইমাম হোসাইন (আ.) লক্ষ্য করেন যে মুয়াবিয়া ইসলামের শক্তির উপর ভর করে খেলাফতের সিংহাসনে আরোহণ করে আল্লাহর নির্দেশাবলী পদদলিত করছে ও ইসলামী সমাজের মূলোৎপাটনে বদ্ধ পরিকর হয়েছে। তাই তিনি এই ধ্বংসাত্মক সরকারের কর্মকান্ডে সাংঘাতিক কষ্ট অনুভব করতেন। কিন্তু ইসলামী হুকুমতের আসন থেকে তাকে অপসারিত করার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারছিলেন না। যেমনি করে তাঁর ভাই ইমাম হাসান (আ.)ও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।

ইমাম হোসাইন (আ.) এটা অবহিত ছিলেন যে যদি তাঁর সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন তাহলে তিনি আন্দোলন ও সংগ্রাম শুরু করার পূর্বেই তাঁকে হত্যা করে ফেলা হবে। তাই নিরুপায় হয়ে ধৈর্যের পথ ধরেন। তিনি জানতেন যদি তিনি তখন কিয়াম করতেন তাহলে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বেই তাঁকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হতো।

আর তাঁর এই নিহত হওয়ার মধ্য থেকে কোন ফলাফল অর্জিত হতো না। সুতরাং যতদিন মুয়াবিয়া জীবিত ছিল ততদিন তিনি তাঁর ভাইয়ের ন্যায় জীবন যাপন করেছেন এবং কোন বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করেন নি। হ্যাঁ ,তিনি কখনো কখনো মুয়াবিয়ার কাজ-কর্ম ও পদক্ষেপের সমালোচনা করতেন আর জনগণকে নিকট ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশার আলো দেখাতেন আর বলতেন অতি সত্বর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যতদিন ধরে মুয়াবিয়া ইয়াযিদের পক্ষে জনগণের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ কার্যক্রম চালিয়েছে ততদিন ইমাম হোসাইন খুব শক্তভাবে তার বিরোধিতা করেছেন। তিনি কখনো ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন নি এবং ইয়াযিদের পরবর্তীতে ক্ষমতারোহণকে কোনক্রমেই স্বীকৃতি দেন নি। এমনকি তিনি কখনো কখনো মুয়াবিয়াকে সাংঘাতিক কড়া কথা শুনিয়েছেন এবং তার কাছে কঠোর ভাষায় পত্র লিখেছেন। 16

আর মুয়াবিয়াও ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত নেয়ার জন্যে ইমামকে পীড়াপীড়ি করে নি। এভাবেই ইমাম মুয়াবিয়ার মৃত্যু পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ইমাম হোসাইনের আন্দোলন

মুয়াবিয়ার পরবর্তীতে ইয়াযিদ ইসলামী হুকুমতের সিংহাসনে আরোহণ করে এবং নিজেকে আমিরুল মুমিনীন বলে ঘোষণা দেয়। সে তার অবৈধ ও স্বৈরাচারী রাজত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ইসলামী ও সুপরিচিত ব্যক্তিবর্গের কাছে বার্তা পাঠায় এবং তাদেরকে তার হাতে বাইয়াত করতে আহ্বান জানায়। এই অসৎ উদ্দেশ্যে সে মদীনার গভর্ণরের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করে। সেই পত্রে উল্লেখ করে যে আমার জন্যে হোসাইনের কাছ থেকে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ গ্রহণ কর আর যদি বিরোধিতা করে তাহলে তাকে হত্যা কর। গভর্ণর উক্ত সংবাদ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে পৌঁছান। তিনি ইমামের কাছ থেকে উত্তর চাইলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) উত্তরে এরূপ বলেন :

إِنَّا لِلَّه وَ إِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ وَ عَلَى اْلإِسْلاَمِ اْلْسَّلاَمُ إِذَا بُلِيَتِ اْلأُمَّةُ  بِرَاعِ مِثْلِ يَزِيْدَ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করবো। ইসলামের বিদায় যখন উম্মতের উপর ইয়াযিদের মত (এমন মদ্যপায়ী ,জুয়াড়ি ,বেঈমান ও অপবিত্র ব্যক্তি যে বাহ্যিকভাবেও ইসলামের কোন কিছু অনুসরণ করতো না) ব্যক্তি শাসক হয়। 17

ইমাম হোসাইন অবগত ছিলেন যে এখন যেহেতু তিনি ইয়াযিদের শাসনকে স্বীকৃতি দেন নি ,যদি তিনি মদীনায় বসবাস অব্যাহত রাখেন তাহলে তাঁকে হত্যা করা হবে। তাই আল্লাহর নির্দেশে রাত্রির অন্ধকারে এবং গোপনীয়তার সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে মদীনা ত্যাগ করেন। মক্কায় তাঁর আগমন এবং ইয়াযিদের হতে বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতির সংবাদ মক্কা ও মদীনার জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ,এমন কি এ খবর কুফা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কুফাবাসীরা মক্কা নগরীতে অবস্থান গ্রহণকারী ইমাম হোসাইনকে তাদের নিকট যাওয়া এবং তাদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে আমন্ত্রন জানায়। ইমাম কুফাবাসীদের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে তাঁর চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফা নগরীতে প্রেরণ করেন।

মুসলিম কুফায় পৌঁছলে কুফাবাসীদের অভূতপূর্ব ও উষ্ণ সম্বর্ধনা পান। অসংখ্য মানুষ ইমামের প্রতিনিধি হিসেবে হযরত মুসলিমের হাতে বাইয়াত করে। আর মুসলিমও ইমামের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করেন। তিনি ইমামের দ্রুত কুফায় পৌঁছা প্রয়োজন বলে পত্রে  উল্লেখ করেন।

যদিও ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীদেরকে খুবভালভাবেই চিনতেন এবং তার পিতা ও ভ্রাতার শাসনামলে তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী চরিত্র ,অধার্মিকতা ও অবাধ্যতা স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন। আর তাই জানতেন তাদের প্রতিশ্রুতি ও মুসলিমের সাথে তাদের বাইয়াতকে বিশ্বাস করা যায় না। তারপরও তিনি তারা যেন আর কোন অজুহাত ও ওজর দেখাতে না পারে এবং আল্লাহর আদেশ কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে কুফা শহরের দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এ অবস্থায় জিলহজ মাসের অষ্টম দিনে অর্থাৎ যেদিন হাজীরা মিনা -র দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন 18 এবং যারা মক্কার পথে রয়ে গিয়েছিলেন তারা অতিদ্রুত মক্কায় পৌঁছতে চেষ্টা করছিলেন সেদিন তিনি মক্কায় রয়ে গিয়েছিলেন এবং এ দিনে পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা থেকে ইরাকের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। এ কাজের দ্বারা তিনি একদিকে তাঁর উপর মহান দায়িত্ব পালন করেন আবার অন্যদিকে বিশ্ব মুসলমানদেরকেও বুঝিয়ে দেন যে নবী (সা.)-এর সন্তান ইয়াযিদের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেন নি। তিনি ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন নি বরং তার অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।

ইয়াযিদ কুফা অভিমুখে মুসলিমের যাত্রা এবং তাঁর হাতে জনগণের বাইয়াতের সংবাদ অবহিত হওয়ার পর কুফার নতুন গভর্ণর হিসেবে ইবনে যিয়াদকে (ইয়াযিদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সঙ্গী এবং বনি উমাইয়ার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও কঠোর ব্যক্তি) কুফায় পাঠায়।

ইবনে যিয়াদ কুফাবাসীদের ভীরু স্বভাব ,দুমুখো আচরণ এবং দুর্বল ঈমানকে ব্যবহার করে তাদেরকে হুমকি ও লোভ দেখিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলের চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মুসলিম একাকি ইবনে যিয়াদের অধীনস্থ সৈন্যদের আক্রমনের মোকাবিলা করেন । অবশেষে তিনি সাহস ও বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহর সালাম তাঁর উপর বর্ষিত হোক। ইবনে যিয়াদ কুফার ঈমানহীন ,বিশ্বাসঘাতক ও দ্বৈত চেহারার সমাজকে ইমামের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে। একাজ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে যারা ইমামকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে একটা বিরাট অংশ অস্ত্র হাতে নিয়ে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

ইমাম হোসাইন যে রাত্রিতে মদীনা ত্যাগ করেন যত দিন মক্কা নগরীতে অবস্থান করেছিলেন মক্কা থেকে কারবালায় যাত্রার পথে যেখানেই যাত্রা বিরতি করেছেন প্রতিটি স্থানেই এমনকি শাহাদাত পর্যন্ত কখনও ইঙ্গিতে আবার কখনও সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দিয়েছিলেন : আমার যাত্রার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করা এবং  ইয়াযিদের অনৈসলামী শাসনের প্রতিবাদ করা ,অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ,সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। আর আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত দীনকে পুনর্জীবিত করা ব্যতীত আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

যদিও এ আন্দোলনের পরিণতিতে স্বয়ং ইমাম ,তাঁর সন্তান ও সঙ্গীদের শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বন্দীত্ব বরণ করে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল কিন্তু যেহেতু আল্লাহ্ই এমন দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেছিলেন তাই তিনি এমন কঠিন দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যান ।

মহানবী (সা.) ,আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং ইমাম হাসানের মত ইসলামের পূর্ববর্তী নেতৃবৃন্দ বহুবার ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের কথা বর্ণনা করেছিলেন। এমন কি মহানবী (সা.) ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্মের সময় তাঁর শাহাদাতের কথা স্মরণ করে কেদেছিলেন। 19 আর স্বয়ং ইমাম হোসাইনও ইমামতের জ্ঞানের মাধ্যমে অবহিত হয়েছিলেন যে ,তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে এই সফরের ইতি ঘটবে। কিন্তু তিনি তো আল্লাহর নির্দেশ ও আসমানী আদেশের মোকাবিলায় নিজের জীবনের মূল্য বিবেচনা করার মত ব্যক্তিও নন ,আর তাঁর পরিবারের বন্দিত্ব অন্তরে রেখাপাত করার মত ব্যক্তি তিনি নন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিপদ-আপদকে মর্যাদার উপকরণ এবং শাহাদাতকে সৌভাগ্য জ্ঞান করতেন (চির কালের জন্যে তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)।

কারবালাতে ইমাম হোসাইন (আ.) -এর শাহাদাত বরণ -এর সংবাদ মুসলিম সমাজে এমন ভাবে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল যে ইমামের এ সফরের পরিণতি সম্পর্কে সাধারণ জনগণও অবহিত ছিল।

কেননা এ ব্যাপারটি বিক্ষিপ্তভাবে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ,ইমাম আলী ও ইমাম হাসান (আ.) এবং আরো অন্যান্য বিশিষ্ট মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে শুনেছিল।

এত প্রতিকূলতা ও কষ্টের মধ্য দিয়ে ইমাম হোসাইনের আন্দোলন অগ্রসর হতে দেখে তাঁর নিহত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ মানুষের মনেও প্রবলতর হয়ে উঠে। বিশেষ করে যখন স্বয়ং ইমাম যাত্রা পথে প্রায়ই বলতেন :

مَنْ كَانَ بَاذِلاً فِيْنَا مُهْجَتَهُ وَ مُوَطِّنًا عَلَى لِقَآءِ اللهِ نَفْسَهُ فَلْيَرْحَلْ مَعَنَا

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমাদের পথে প্রাণ বিসর্জন দিতে এবং আল্লাহর সাক্ষাত লাভে প্রস্তুত সে যেন আমাদের সাথে আসে। 20

আর সে কারণেই তাঁর কিছু হিতাকাঙ্ক্ষীর হৃদয়ে এ আকাঙ্ক্ষা ছিল যে ,ইমামকে এই সফর থেকে বিরত রাখবে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে একেবারে অসচেতন যে ,হযরত আলী (আ.)-এর সন্তান ,নবী (সা.)-এর উত্তরসূরী ও ইমাম ,অন্যদের চাইতে তাঁর কর্তব্যের ব্যাপারে বেশি সচেতন। তাঁর স্কন্ধে অর্পিত আল্লাহ্ প্রদত্ত দায়িত্ব থেকে কখনো তিনি হাত গুটিয়ে নিতে পারেন না।

হ্যাঁ ,ইমাম হোসাইন (আ.) এতসব চিন্তা ও মতামতের মাঝে তাঁর পথ চলা অব্যাহত রাখেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তে কেউ সামান্যতম বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি।

অবশেষে তিনি গেলেন ,শাহাদাতের সুধা পান করলেন ,তিনি শুধু একাই নন বরং সন্তান ও সঙ্গী-সাথীদের সহ ,যারা প্রত্যেকে ইসলামের দিগন্তে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন ,তারা সকলে তাঁর সঙ্গী হলেন এবং শাহাদাত বরণ করলেন এবং তারা কারবালার উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিকে নিজেদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত করেছেন যেন মুসলমান সমাজ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে ,ইয়াযিদ (উমাইয়া বংশের পাপ ও অপবিত্র ঐ ধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ) কোনমতেই রাসূল (সা.)-এর উত্তরসূরী নয় আর মূলতঃ ইসলাম বনি উমাইয়া থেকে এবং বনি উমাইয়া ইসলাম থেকে বহু দূরে।

সত্যি কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি যে যদি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর হৃদয় বিদারক ও বীরত্বপূর্ণ শাহাদাতের ঘটনা না ঘটতো তবে জনগণ ইয়াযিদকে আল্লাহর রাসূলের খলীফা হিসেবে মনে করতো ইয়াযিদও তার অধীনস্থদের অনাচার ,অবৈধ যৌনাচার ও অন্যান্য অপকর্মের খবরাখবর তাদের কানে পৌঁছতো এবং তারা সেটিকেই ইসলাম মনে করে কতই না ঘৃণার চোখে দেখতো ?কেননা যে ইসলামে রাসূলের খলীফা হিসেবে ইয়াযিদের মত ব্যক্তি সমাসীন হয় তার ব্যাপারে ঘৃণা আসাই স্বাভাবিক। হযরত ইমাম হোসাইনের পবিত্র পরিবার বন্দী হলেন। এর মাধ্যমে তারা এ মর্মান্তিক শাহাদাতের সর্বশেষ বাণী মানুষের কানে পৌঁছাতে সক্ষম হন। আমরা শুনেছি এবং পড়েছি যে তাঁরা শহরে শহরে বাজারে বাজারে ,বিভিন্ন মসজিদে ,ইবনে যিয়াদের দুর্গন্ধময় দরবারে এবং ইয়াযিদের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের  রাজসভায় অর্থাৎ সর্বদা এবং সর্বত্র তারা মুখ খুলেছেন এবং ফরিয়াদ তুলেছেন আর বনি উমাইয়ার শয়তানী ,অপরাধী ও দুর্গন্ধযুক্ত চেহারা থেকে প্রতারণার সুন্দর পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে তারা প্রমাণ করেছেন যে কুকুরপ্রেমী ও মদ্যপায়ী ইয়াযিদ এক মূহুর্তের জন্যেও খেলাফতের যোগ্যতা রাখে না। যে সিংহাসনে সে বসেছে এটা তার স্থান নয় । তাদের বক্তৃতাবলী হুসাইনী শাহাদাতের বাণীকে পূর্ণতায় পৌঁছিয়েছে। তারা এমনভাবে অন্তরসমূহে ঝড় তুলেছেন যে ইয়াযিদের নাম চিরদিনের জন্যে ইতরতা ,হীনতা ও নীচতার সমার্থক শব্দ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং তার শয়তানী ও সোনালী আকাঙ্ক্ষাগুলো ধুলোয় মিশে গেছে। নিগূঢ় ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিই পারবে এ মহান ও সীমাহীন সুফলদায়ক শাহাদাতের সব দিকের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে। তাঁর শাহাদাতের প্রথম দিন থেকে অদ্যবধি তাঁর প্রেমিকগণ ,তাঁর অনুসারী যারা মানুষের মহত্ব ও মর্যাদার মূল্য ও সম্মান দিয়ে থাকেন তাদের সকলে প্রতিবৎসর তাঁর শাহাদাত ও মহান আত্মত্যাগের দিবসে কালো কাপড় পরিধান করে এবং শোকপালনের মাধ্যমে সম্মানের সাথে তাঁকে স্মরণ করে থাকেন এবং তাঁর উপর আপতিত মুসিবতসমূহের জন্যে ক্রন্দন ও বিলাপ করে তাদের আন্তরিক ভালবাসার প্রকাশ করে থাকেন। আমাদের ঐশী ইমামগণ সর্বদা কারবালার ঘটনার বর্ণনা এবং এ ঘটনাকে জীবন্ত রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তারা নিজেরা তো তাঁর মাজার যিয়ারতে যেতেন এবং তাঁর শোকে বিহ্বল হতেনই তাছাড়াও ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্যে শোক পালন ও শোকাভিভূত থাকার মর্যাদা ও গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য বক্তব্য ও বাণী  পেশ করেছেন।

জনাব আবু আম্মারা বলেন :

একদা আমি ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) -এর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শোকে কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন । যখন আমি আবৃত্তি শুরু করি তখন ইমামের কান্নার আওয়াজ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি পাঠ করছিলাম আর তিনি ক্রন্দন করছিলেন। আর কান্নার শব্দ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে বাড়ীর বাহির থেকেও তা শুনা যাচ্ছিল। আমার কবিতা আবৃত্তি সমাপ্ত হলে তিনি মর্সিয়া পাঠে এবং ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শোকে মানুষকে কাঁদানোর সওয়াব ও ফযিলতের ব্যাপারে কিছু বক্তব্য পেশ করেন। 21

তিনি আরো বলেছেন :

ইমাম হোসাইন বিন আলী (আ.) -এর উপর আপতিত মুসিবত ছাড়া অন্য কোন মুসিবতে ক্রন্দন ও বিলাপ করা যথাযথ নয় ,কেননা তাঁর মুসিবতে ক্রন্দনের জন্যে মূল্যবান পুরস্কার ও পূণ্য অবধারিত। 22

আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম ,মুহাম্মদ বাকেরুল উলুম তাঁর অন্যতম সঙ্গী মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমকে বলেন : আমাদের অনুসারীদেরকে বল যে তারা যেন হযরত হোসাইনের মাজার যিয়ারতে গমন করেন। কেননা যে ঈমানদার ব্যক্তি আমাদের ইমামতের প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের প্রত্যেকের জন্যে হযরত আবা আবদিল্লাহ্ আল হোসাইনের কবর যিয়ারত করা অবশ্য কর্তব্য। 23

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন :

إِنَّ زِيَارَةَ اْلْحُسَيْنِ عَلَيْهِ اْلْسَّلاَمُ أَفْضَلُ مَا يَكُوْنُ مِنَ اْلأَعْمَالِ

অর্থাৎ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর যিয়ারত যে কোন নেক আমলের চেয়ে অধিক মূল্যবান ও ফযিলতের অধিকারী। 24

কেননা প্রকৃতপক্ষে এই যিয়ারত এমন এক শিক্ষালয় যেখান থেকে বিশ্ববাসী ঈমান ও সৎ কর্মের শিক্ষা পেয়ে থাকে। বলা চলে ,রুহকে পবিত্রতা ,পূণ্যতা ও ত্যাগের আধ্যাত্মিক জগতের দিকে যাত্রার উপযোগী করে তোলে। যদিও ইমাম হোসাইনের উপর আপতিত মুসিবতের জন্যে ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ করা এবং তাঁর কবর যিয়ারত ও কারবালাতে তাঁর বীরত্বময় ও সম্মানজনক ইতিহাসের স্মরণ ইত্যাদি কর্মসমূহ খুবই মূল্যবান। কিন্তু আমাদের  জেনে রাখা দরকার যে শুধুমাত্র এ যিয়ারত ও কান্না ও মর্মব্যথা উপলব্ধিই যথেষ্ট নয় বরং প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরকে ধার্মিকতা ,উৎসর্গী মনোভাবের লালন ও আসমানী বিধানের পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর এতসব কিছুর উদ্দেশ্যও তাই। মনুষ্যত্বের শিক্ষা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল কিছু থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করাই হলো হুসাইনী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর যদি তা অর্জিত না হয় অর্থাৎ যদি শুধুমাত্র বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র উদ্দেশ্যই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ।