ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)0%

ইমাম মাহদী (আ.) লেখক:
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 12717
ডাউনলোড: 3074

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 28 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12717 / ডাউনলোড: 3074
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

আবুল হাসান সামারী

মুনতাহাল মাকাল নামক গ্রন্থের লেখক ইমামের চতুর্থ প্রতিনিধি আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ সামারীর ব্যাপারে এভাবে লিখেছেন : তার সম্মান ও কদর এতই বেশী ছিল যে তার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। 94

এই মহান ব্যক্তি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নির্দেশে হুসাইন বিন রুহ নওবাখতির পরে প্রতিনিধির স্থানে স্থলাভিষিক্ত হয়ে শিয়াদের বিভিন্ন বিষয়ে দেখাশুনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

মরহুম মুহাদ্দেস কোমী এভাবে লিখেছেন : আবুল হাসান সামারী একদিন একদল সম্মানিত জ্ঞানী ব্যক্তি বৃন্দদের মধ্যে ঘোষণা করেন ,আল্লাহ্ তা য়ালা তোমাদের প্রতি আলী বিন ববাভেই কোমীকে হারানোর দুঃখে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করুন ,সে এখনই দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো।

উপস্থিত সকলে ঐ সময় ,দিন ও মাস লিখে রাখলো। 17/18 দিন পরে খবর পৌঁছালো যে ঠিক ঐ সময়েই আলী বিন ববাভেই কোমী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। 95

আলী বিন মুহাম্মদ সামারী 329 হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। 96 তার মৃত্যুর পূর্বে শিয়া মাযহাবের একদল লোক তার পাশে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ,তোমার পরে তোমার স্থলাভিষিক্ত কে হবে ?

জবাবে বলল : আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় নি যে এ ব্যাপারে কাউকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যাব। 97 ইমামের কাছ থেকে যে তৌকিয়াটি তার হস্তগত হয়েছিল তা তাদেরকে দেখালো। তারা তা থেকে হুবহু নকল করে রাখলো। সেটির বিষয় বস্তু ছিল এরূপ :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

হে আলী বিন মুহাম্মদ সামারী! আল্লাহ্ তা য়ালা তোমার বিয়োগে তোমার ভাইদের শোক-তাপ করাতে পুরস্কৃত করবেন। তুমি আর 6 দিন পরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।

সুতরাং তোমার দায়িত্বকে গুছিয়ে নিয়ে এসো এবং কাউকে তোমার স্থলাভিষিক্ত হিসাবে পরিচয় করাবে না। দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানের সূচনা হয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আবির্ভাবের কোন ঘটনাই ঘটবে না। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যখন অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে যাবে ,পৃথিবী জুলুম ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে ,তখন অনেকেই আমার অনুসারীদের কাছে আমার প্রতিনিধি বা আমার সাথে যোগাযোগ আছে এমনটি বলে দাবী করবে। জেনে রাখ যারা সুফিয়ানী ও সিইহার 98 উত্থানের আগে এ ধরণের দাবী করবে অর্থাৎ ইমামের পক্ষ হতে দায়িত্ব প্রাপ্তির দাবী করবে তারা হচ্ছে মিথ্যাবাদী।

وَ لاَ حَوْلَ وَ لاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِاللّهِ الْعَلى الْعَظِيم 99

6ষ্ঠ দিনে জনাব আবুল হাসান সামারী দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। খালেনজী রাস্তার কাছে আবী ইতাব নদীর পাশে তাকে দাফন করা হয়। 100

ইমামের (আ.) বিশেষ প্রতিনিধিগণ প্রত্যেকেই তাদের জামানায় সবচেয়ে পরহেজগার ও সম্মানিত ছিলেন। তারা শিয়াদের আস্থা ও বিশ্বাসভাজন ছিলেন। স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের পুরো সমস্ত সময়টাতে শিয়ারা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যাকে তাদের কাছে বর্ণনা করেছে। আর ইমাম সে সকল প্রশ্নের ও সমস্যার সমাধানও তাদের মাধ্যমেই শিয়াদের উদ্দেশ্যে পাঠাতেন। সে সময় এ ধরনের যোগাযোগ সবার জন্যেই সম্ভব ছিল। এমনকি কিছু সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি এই বিশেষ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইমামের সান্নিধ্যে উপনীত হয়ে তাকে দেখার সৌভাগ্যও অর্জন করেছিলেন।

এই স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময়ে ইমামের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে সকল অলৌকিক ঘটনা ঘটতো তা তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বস্ততা আরও বাড়িয়ে দিত। মরহুম শেখ তুসির উদ্ধৃতি দিয়ে ইহতিজাজ নামক গ্রন্থে লেখা হয়েছে :

ইমামের বিশেষ প্রতিনিধিদের কেউই তাঁর নির্দেশ বা আগের প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন নি। আর শিয়ারাও কাউকে গ্রহণ করেনি যতক্ষণ পর্যন্ত না ইমামের পক্ষ হতে তাদের মাধ্যমে কোন অলৌকিক ঘটনার অবতারণা হতো বা ইমামের দেয়া নিদর্শন তাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যেত...। 101

যা হোক ,স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের শেষে  দীর্ঘকালীন অন্তর্ধান পর্ব শুরু হয় যা এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময় লোকজন তাদের প্রশ্নের জবাব ইমামের কাছ থেকে তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিতে পারতো। কিন্তু এখন এটা আর সম্ভব নয়। এখন লোকজন অবশ্যই তাদের প্রশ্নকে ইমামের সাধারণ প্রতিনিধিদের কাছে বর্ণনা করে তাদের কাছ থেকেই জবাব সংগ্রহ করবে। কেননা তারা ফতোয়া দেয়ার বিষয়ে পাণ্ডিত্ব লাভ করেছেন এবং তারা এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় রয়েছেন তদুপরি হাদীসসমূহেও বিশেষজ্ঞ ফকীহর শরণাপন্ন হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা সকলের জন্য দলিল। মরহুম কাশশি লিখেছেন যে ইমামের কাছ থেকে তৌকিয়া হস্তগত হয়েছে তাতে তিনি বলেছেন : আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধিরা আমাদের থেকে যা বর্ণনা করে সে ব্যাপারে আমাদের অনুসারীদের যেন কোন প্রকার অজুহাত ,আপত্তি বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না থাকে ,কেননা তোমরা জেনে রাখ যে আমাদের গোপন রহস্যগুলোকে তাদের কাছে অর্পণ করেছি বা তাদেরকে দিয়েছি। 102

শেখ তুসি ,শেখ সাদুক ও শেখ তাবারসী ,ইসহাক বিন আম্মারের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করে বলেছেন : আমাদের মাওলা হযরত মাহ্দী (আ.) তার অন্তর্ধান থাকার সময় শিয়াদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে বলেছেন :

وَ اَماَّ الْحَوادِثُ الْواقِعَةُ فَاْرجِعُوا فِيها اِلى رُواةِ حَديِثِنا فَاِنَّهُمْ حُجَّتى عَلَيْكُمْ وَ اَناَ حُجَّةُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ

যে কোন পরিস্থিতির অবতারণা হলে বা যে কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তাতে আমাদের হাদীস বর্ণনাকারীদের (বিশেষজ্ঞদের) শরণাপন্ন হবে ,কেননা তারা হচ্ছে তোমাদের জন্য আমার প্রতিনিধি এবং আমি হচ্ছি তাদের জন্য আল্লাহর প্রতিনিধি। 103

মরহুম তাবারসীর উদ্ধৃতি দিয়ে ইহতিজাজ নামক গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,তিনি বলেছেন :

وَ اَماَّ مَنْ كانَ مِنَ الْفُقَهاءِ صائِناً لِنَفْسِهِ حاَفِظاً لِديِنِهِ مُخاَلِفاً لِهَواهُ مُطيِعاً لِاَمْرِ مَوْلاَهُ فَلِلْعَوامِ أَنْ يُقَلِّدوُهُ

যে সকল ফকীহ্ তাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে ,স্বীয় দীনের রক্ষক ও প্রবৃত্তির কুপ্ররোচনার বিরুদ্ধাচারনকারী হয় এবং তার মাওলার (ইমামগণ) নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকে ,জনসাধারণের উচিত তাদেরকে অনুসরণ করে চলা। 104

এমতাবস্থায় দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানের সময়ে মুসলমানদের দীন ও দুনিয়ার বিষয়াদি দেখাশুনার দায়িত্ব এমন ফকীহর হাতে অর্পিত হয়েছে যার মধ্যে মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দানের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে এবং নৈতিকভাবেও যিনি সম্পূর্ণ সৎ অর্থাৎ যে ফকীহর নেতৃত্ব দানের সকল যোগ্যতা রয়েছে ও তাকওয়ার অধিকারী তিনিই এ দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই অবশ্যই এসব বিষয়াবলী যেন তার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী হয়। যদিও ফতোয়া ,বিচার ও রায় প্রদানের অধিকার অনেক আগে থেকেই ইমামগণের পক্ষ থেকে তাদের উপর ন্যস্ত ছিল ,কিন্তু তাদেরকে অনুসরণ করে চলার প্রক্রিয়া এই দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

অন্তর্ধানে থাকার ভাল - মন্দ দিকসমূহ

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন ,বিশ্বাসীদের চিন্তার বিকাশ দান করে ও মনে মুক্তির আশাকে জাগ্রত রাখে। তাঁর উপর এমন বিশ্বাস রাখা যে ,সম্ভাবনা আছে তিনি যে কোন সময় আবির্ভূত হতে পারেন। পবিত্র হৃদয় ও যোগ্য ব্যক্তিদের উপর গঠনমূলক ও গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে ,ন্যায় বিচার করবে ,একে অপরের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি করবে যেন ইমামকে সাহায্য করার তৌফিক অর্জন করে এবং ইমামের সাক্ষাত লাভ করতে পারে বা তার জিয়ারত করা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় বা ইমামের অসন্তুষ্টির কারণ না হয়। যারাই তার উপর ঈমান রেখেছে তারা কখনই কোন অত্যাচারী ও দুঃস্কৃতিকারী শাসকের পক্ষে যায় নি। আর যারা তার উপর ঈমান রেখে চলে তাদের ভিতর এক দৃঢ় শক্তির সঞ্চার করে যার কারণে তারা জুলুম ও শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং কখনই তারা শয়তানী শক্তির অধীন হয় না বরং তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে।

তার আবির্ভাবের প্রতি ঈমান রাখার অর্থ এটা নয় যে ,মুসলমানরা তার আসার অপেক্ষায় সব কিছু থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখবে এবং ইমাম মাহ্দীর আগমনের আশায় নির্লিপ্ত থেকে সমাধানের দায়িত্ব তাঁর উপর ছেড়ে দিয়ে ঘরের কোণায় অবস্থান গ্রহণ করবে। অথবা কাফির ও দুষ্ট লোকের শাসনকে তারা মেনে নেবে বা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও শিল্পের  ক্ষেত্রে কোনরূপ উন্নতি করবে না বা সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কোন চিন্তা করবে না ,এমনটি নয়।

যদি এমনটি মনে করা হয় যে ,তাঁর প্রতি ঈমান অলসতা ,উদাসীনতা বা দায়-দায়িত্বহীনতা ও অবসন্নতা নিয়ে আসবে ,তবে এটা সম্পূর্ণ বাতিল বিষয়। কেননা পবিত্র ইমামগণ ও তাদের সাহাবাগণ নিজেদের উন্নতির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতেন এবং এ লক্ষ্যে কাজ করতেন সেই সাথে তারা ইমামের আবির্ভাবের প্রতিও ঈমান রাখতেন। ইসলামের বড় বড় যত আলেম ছিলেন ,যারা দীন ও দুনিয়া উভয় জ্ঞানে পারদর্শি ছিলেন তারা কি তাঁর আবির্ভাবের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন না ?বিশ্বাসী ছিলেন এবং তারা বিশ্বাসী থেকেই দীনের ও সমাজের উন্নতির জন্য সাধ্যমত কাজ করে গেছেন ,এজন্য আত্মোৎসর্গও করেছেন। তারা কখনও নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে আসেন নি। কঠিনতম কাজ করা থেকেও বিরত থাকেন নি বরং তারা নিজেদের তৈরী করার ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে অকুতোভয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।

ইসলামের প্রথম দিকের মুসলমানরা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছিলেন যে ,ইসলাম এগিয়ে যাবে এবং তাঁর সামনে বিজয়ের পর বিজয় রয়েছে। কিন্তু তারপরও এই বিজয়ের খবর তাদেরকে অলসে পরিণত করে নি বা তাদের কাজ করা হতে বিরত করতে পারে নি ;বরং তাদের চেষ্টার পরিমান আরও দ্বিগুণ হয়েছিল এবং কষ্ট ও ত্যাগের মাধ্যমে সফলতায় পৌঁছেছিল।

বর্তমান সময়ও মুসলমানরা বিভিন্ন বড় বড় দায়িত্বে রয়েছেন। তাদেরকে অবশ্যই দৃঢ়তার সাথে সে সকল দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন। সকল সময় সকল ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকবেন এবং সকলকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। শত্রুর অবৈধ অনুপ্রবেশকে প্রতিহত করবেন। ইসলাম ও মুসলমানদের উপর শত্রুর চিন্তাগত ,অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক ও সামরিক হামলাকে প্রতিহত করবে। যতটুকু বা যে পরিমানই সম্ভব নিজেদেরকে নৈতিকতার ব্যাপারে সচেতন করবে যাতে করে ইমাম মাহ্দীর সাহায্য ও সহযোগিতা ,দয়া ও করুণা বেশী করে তাদের ভাগ্যে জোটে। যতটুকু সম্ভব ক্ষেত্রকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে করে আল্লাহর সর্বশেষ প্রতিনিধি ও এই শেষ জামানার ইমাম দ্রুত আবির্ভূত হন।

আমিরুল মু মিনীন আলী (আ.) নবী করিম (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করে বলেছেন :

اَفْضَلُ الْعِبادَةِ اِنْتِظارُ الْفَرَجِ

হযরত বাকিয়াতুল্লাহর অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের অপেক্ষায় থাকা হচ্ছে সর্ব উৎকৃষ্ট ইবাদত। 105

ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেন : দ্বাদশ ইমামের অন্তর্ধান বেশ দীর্ঘ হবে। যারা তাঁর অন্তর্ধানের সময় তাঁর ইমামতের উপর বিশ্বাসী এবং তাঁর আবির্ভাবের অপেক্ষায় থাকবে তারা অন্যান্য সকল জামানার জনগণের থেকে উত্তম হবে। কেননা আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন তাদেরকে এতটা বিবেক-বুদ্ধি ,বোঝার ক্ষমতা ও জ্ঞান দান করেছেন যে ইমাম অন্তর্ধানে থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে উপস্থিত মনে হবে। আর এ কারণেই আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন তাদের মর্যাদাকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সঙ্গী হিসেবে তাঁর সাথে যুদ্ধকারী মুজাহিদের স্থান দিয়েছেন। তারা সত্য সত্যই নিবেদিত প্রাণ এবং প্রকৃতই আমাদের অনুসারী। আর তারাই জনসাধারণকে লুকিয়ে বা গোপনে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে।

আরও বলেছেন :

اِنْتِظارُ الْفَرَجِ مِنْ اَعْظَمِ الْفَرَجِ

মহামুক্তির প্রতীক্ষা থাকা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মুক্তি। 106

মরহুম আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ সাদরুদ্দিন সাদর এভাবে লিখেছেন : মহা মুক্তির জন্য অপেক্ষা হচ্ছে যে বিষয়ের প্রতি অপেক্ষমান তা বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য সচেষ্ট থাকা। এটা গোপন নয় যে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের অপেক্ষায় থাকার অর্থই হচ্ছে নিজের ও সমাজের বিশেষ করে শিয়া সমাজকে পরিশুদ্ধ করা যা নিম্নরূপ :

1-অপেক্ষা স্বয়ং মানুষের আত্মার জন্য একটি বিশেষ অনুশীলন বা প্রশিক্ষণ। যেমন বলা হয়ে থাকে :

اَلْاِنْتِظارُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ

অপেক্ষা হচ্ছে নিহত হওয়া থেকেও কষ্টকর।

আর অপেক্ষা করার জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ,যে বিষয়ে বা জিনিসের জন্য অপেক্ষা করা হয় তার প্রতি চিন্তা-ভাবনাকে ব্যস্ত রাখা ও দৃষ্টি রাখা এবং চিন্তা শক্তিকে একটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত করা। আর এই কঠিন কাজের দু টি সুফল আছে যা নিম্নরূপ :

ক) মানুষের চিন্তাশক্তি তার কার্যশক্তির পরিমান বৃদ্ধি করে।

খ) মানুষ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি গভীর চিন্তা-ভাবনা করার জন্য তার চিন্তাশক্তি ও ক্ষমতাকে এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করার শক্তি অর্জন করে। আর এই দু টি সুফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মানুষ তার জীবন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভব করে থাকে।

2-অপেক্ষার কারণে মানুষের মুসিবত ও সমস্যা হালকা হয়। কেননা সে জানে যে পরবর্তীতে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বা এর ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব। আর এ দু টির মধ্যে কত পার্থক্য যে সে জানে পরবর্তীতে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বা আদৌও জানে না যে পরবর্তীতে এই সমস্যা সমাধান হবে কি হবে না। বিশেষ করে যদি সম্ভাবনা থাকে যে অতি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ;হযরত মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হয়ে পৃথিবী থেকে সব অন্যায় ও অত্যাচারকে নির্মূল করে ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা করবেন এবং সমস্ত সমস্যা সমাধান করবেন।

3-মহামুক্তির প্রতীক্ষায় থাকার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী ও অনুসারী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে এমন কি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকবে তার বিশেষ সহযোগী ও সৈনিকে পরিণত হওয়ার। আর তার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করার বিশেষ চেষ্টা করা ও নৈতিক গুণাবলীকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে করে তাঁর সহযোগী হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয় ও তাঁর নির্দেশে তাঁর সাথে থেকে জিহাদ করার তৌফিক অর্জন করতে পারে। হ্যাঁ ,এসবের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে প্রকৃত চরিত্র ,যা আজ আমাদের সমাজে দুষ্প্রাপ্য।

4-মহামুক্তির প্রতীক্ষা শুধুমাত্র ব্যক্তি চরিত্র সংশোধন নয় ,বরং অন্যের আত্মিক সংশোধনেরও কারণ হয়। এর ফলে মানুষ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শত্রুদের উপর আধিপত্য অর্জনের পরিবেশ ও ক্ষেত্রও প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়। আর এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজন হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় নিজেদেরকে পারদর্শী করা। কারণ শত্রুদের উপর ইমামের বিজয় লাভের বিষয়টি সাধারণ প্রক্রিয়াতেই সংঘটিত হবে।

বর্ণিত চারটি বিষয় প্রকৃত মহামুক্তির প্রতীক্ষায় থাকার অসংখ্য ইতিবাচক প্রভাবের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ মাত্র। 107

মরহুম মুজাফফার এভাবে লিখেছেন : হযরত মাহ্দী (আ.)-এর অপেক্ষায় থাকার অর্থ এই নয় যে ,যেহেতু তিনি এসে দুনিয়াকে সংস্কার করবেন এবং যারা সত্যের পথে আছে তাদেরকে নাজাত দিবেন তাই এটা ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ,দীনের কাজ না করা ,বিশেষ করে দীনের ওয়াজিব বিষয়গুলো যেমন দীনের আইন-কানুনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ করা ,সৎ কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজে নিষেধ করা ইত্যাদি বর্জন করা কখনই বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা মুসলমানরা যে কোন পরিস্থিতিতেই আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে বাধ্য এবং আল্লাহর নির্দেশাবলী সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের মাধ্যমেই সম্ভব সৎ কাজে আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করা। এটা সমীচীন নয় যে ,দুনিয়া সংস্কার হওয়ার অপেক্ষায় ওয়াজিব কাজ করা থেকেও বিরত থাকবো। অপেক্ষা কখনই মুসলমানদের ওয়াজিব দায়িত্বকে লাঘব করে না এবং কোন কাজ সম্পাদনের সময়কে পিছিয়ে নিয়ে যায় না। 108

এ কারণে নিশ্চিত যে ইমামের অন্তর্ধানের সময়ে তার অনুসারীরাও (শিয়ারা) বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। অবশ্যই পরীক্ষিত হওয়ার সময় একদিকে যেমন দীনের ছায়াতলে থেকে নিজেকে বাঁচাবে আর অন্যদিকে তেমনই ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে যাতে করে ইমামের সৈনিক হিসেবে ইসলামের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে। বেশীর ভাগ জনগণই এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি।

জাবির জো ফী বলেন : ইমাম বাকির (আ.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ,আপনাদের মহামুক্তির সময় কখন ?

বললেন : দূরে! দূরে! আমাদের মহামুক্তি ততক্ষণ আসবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে চালনি দিয়ে চালা হচ্ছে। চালনি দিয়ে চালা হবে (তারপর ইমাম চালনি দিয়ে চালার কথাটিকে তিনবার উচ্চারণ করলেন) যাতে করে খারাপ লোকজন ধুলা-বালির ন্যায় চালনির নিচে পড়ে যায় আর ভালরা পৃথক হয়ে যায়। 109

হ্যাঁ অপেক্ষার এই বৈশিষ্ট্য আছে যে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে কোন প্রকার নিরাশার অবকাশ নেই এবং অপেক্ষাকারীরা আশান্বিত যে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ঘটবে ও আল্লাহর পক্ষ থেকে অতি দ্রুত মহা মুক্তি আসবে।

অপরদিকে অন্তর্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মানুষ এই সময়ে তাদের নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগাবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করবে যে ,কোন প্রকার ওহী ,এলহাম অলৌকিক সাহায্য ব্যতিরেকে তারা মানবতার কাফেলাকে তার প্রকৃত ও মহান লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। তখন তারা (মানব সমাজের মাঝে অবস্থানের) অবশ্যই ওহী ও আসমানী জ্ঞান ,শিক্ষা ও ঐশী প্রশিক্ষণের সামনে মাথা নোয়াবে।