ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)0%

ইমাম মাহদী (আ.) লেখক:
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 12715
ডাউনলোড: 3072

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 28 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12715 / ডাউনলোড: 3072
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইমাম অন্তর্ধানে থাকার সুফল

অনেকেই ইমামগণের (আ.) উপস্থিতির (মানব সমাজের মাঝে অবস্থানের) প্রকৃত রহস্য বা দর্শন ভালভাবে না জানার কারণে প্রশ্ন করে যে ইমামের অন্তর্ধানে থাকার সুফলতা কী ?তারা জানে না যে ,পৃথিবী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন আল্লাহ্ তা য়ালার পবিত্র প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকবেন যাতে তারা তাদের পরিপূর্ণ খোদা পরিচিতির মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদতের পূর্ণতম রূপের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন ।

ফেরেশতারা মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল। তারা বলেছিল পরবর্তীতে মানব জাতি খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। তারা মানুষ জাতির সাথে নিজেদেরকে আল্লাহর ইবাদতের বিষয়টি তুলনা করেছিল এবং তারা মানুষ সৃষ্টির কোন বিশেষত্ব দেখতে না পেয়ে বলেছিল :

أَتَجْعَلُ فِيها مَنْ يُفْسِدُ وَ يَسْفِكُ الدِّماءَ وَ نَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَ

আপনি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা জমিনের বুকে ফ্যাসাদ করবে ও একে অপরের রক্ত ঝরাবে ?আর অপরদিকে আমরা সর্বত্র আপনার প্রশংসা ,ইবাদত ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি। 110

আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন বিশ্বের পরিচালনা ও তার প্রকৃত বাস্তবতা ও রহস্য সম্পর্কে হযরত আদম (আ.)-এর জ্ঞান ও এ বিষয়ে তার যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বকে ফেরেশতাদের সামনে তুলে ধরে (যা প্রকৃতপক্ষে পরিপূর্ণ খোদা পরিচিতি নিয়ে তাঁর বন্দেগী করা ও তার ইবাদত করার দিকে ফিরে আসে) তাদেরকে পরিতুষ্ট ও শান্ত করলেন ।

আল্লাহর নির্দেশে যখন আদম (আ.) নিজের জ্ঞানকে ফেরেশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং তারা আল্লাহর হুজ্জাতদের (বিশিষ্ট ও মনোনীত বান্দাদের) অস্তিত্ব ও তাঁর কাছে তাদের বিশেষ মর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত হলো তখন বুঝতে পারলো যে ,আল্লাহকে তারা যেভাবে উপাসনা করে আর তাঁর অলিগণ ও হুজ্জাতদের ( মানব জাতির জন্য যারা আল্লাহর দলিল ও স্পষ্ট প্রমাণ স্বরূপ। ) উপাসনার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে এবং এ দুটির মধ্যে তুলনার অবকাশ রাখে না। যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ হচ্ছেন মানব জাতির অন্তর্ভূক্ত ,তাই মানুষ সৃষ্টি যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ এবং তারা অন্যান্য সৃষ্টির উপর প্রাধান্য রাখে।

সুতরাং এই উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গরাই সৃষ্টির দর্শনকে পরিপূর্ণ করেন। যার কারণে সমস্ত ফেরেশতাগণ তাদের সামনে মাথা নুইয়ে সেজদা করে। কেননা এই ব্যক্তিবর্গের ইবাদত তুলনাহীন এবং কোন ইবাদতই তাদের ইবাদতের স্থানকে পূরণ করতে পারবে না। আর যেভাবে আল্লাহর হুজ্জাতদের অস্তিত্ব মানব জাতির সৃষ্টি ও শুরুর জন্য বিশেষ কারণ হিসাবে চিহ্নিত ছিল তদ্রূপ মানব জাতির অস্তিত্ব অব্যাহত ও প্রবাহমান থাকার জন্যও তাদের অর্থাৎ ঐ বিশেষ কারণের অবশিষ্ট থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণেই আল্লাহর হুজ্জাতদের অবশ্যই মানব সমাজে উপস্থিত থাকতে হবে। যদি বলি যে আল্লাহর নেয়ামত আমাদের প্রতি রয়েছে তা শুধুমাত্র এই উপযুক্ত ব্যক্তিদের অস্তিত্বের কারণেই। যদি তারা না থাকতো তাহলে আমরাও থাকতাম না। আমরা এখনও যে দুনিয়ার অস্তিত্বের পোশাক পরে আছি যদি তাদের একজনও অবশিষ্ট না থাকেন তাহলে আমরা আবার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বো। সুতরাং আল্লাহর হুজ্জাত শুধুমাত্র দীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ নয় বরং এই পৃথিবীকে অস্তিত্বদানের ক্ষেত্রেও নেয়ামত স্বরূপ এবং আমাদের উপর দাবী রাখেন।

যিয়ারতে জামে কবীরাতে আমরা পড়ি :

مَوالِىَّ لاَ أُحْصى ثَنائَكُمْ وَ لاَ أَبْلُغُ مِنَ الْمَدْحِ كُنْهَكُمْ وَ مِنَ الْوَصْفِ قَدْرَكُمْ وَ أَنْتُمْ نُورُ الْاخْيارِ وَ هُداةُ الْاَبْرارِ وَ حُجَجُ الْجباَّرِ بِكُمْ فَتَحَ اللَّهُ وَ بِكُمْ يُنْزِلُ الْغَيْثَ وَ بِكُمْ يُمْسِكُ السَّماءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى الْاَرْضِ اِلاَّ بِاِذْنِه وَ بِكُمْ يُنَفِّسُ الْهَمَّ وَ يَكْشِفُ الضُرَّ

  “ হে আমার নেয়ামতসমূহের অভিভাবকগণ ,তোমাদের প্রশংসাকে গুনে শেষ করতে পারি না ,তোমাদের অস্তিত্বের মর্যাদা অনুযায়ী প্রশংসা করতে পারি না ,তোমাদের মর্যাদা ও ক্ষমতার বর্ণনা দিতে আমি অপারগ ,তোমরা ভালোদের নূর স্বরূপ আর উত্তমদের পথপ্রদর্শক এবং মহান আল্লাহর হজ্জাত ,আল্লাহ্ তা য়ালা তোমাদের কারণেই সৃষ্টির সূচনা করেছেন এবং তোমাদের কারণেই এই পৃথিবীর ইতি হবে ,তোমাদের কারণেই বৃষ্টির বারিধারা নিচে নেমে আসে ,তোমাদের কারণেই আসমানকে পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছেন ,  তোমাদের কারণেই সমস্যার সমাধান হয় ও দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটে।

ইমাম কাযেম (আ.) তাঁর পিতা হযরত ইমাম সাদিক (আ.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে  বলেছেন :

وَ بِعِبادَتِنا عُبِدَ اللَّهُ عَزَّ وَ جَلَّ وَ لَوْلاَنا ما عُبِدَ اللَّهُ

আমাদের জ্ঞান ও ইবাদতের কারণেই মহান আল্লাহর ইবাদত হয় আর যদি আমরা না থাকতাম তাঁর ইবাদতই হতো না। 111

অন্য আরেকটি হাদীসে বলেছেন :

اِنَّ الْاَرْضَ لاَ تَخْلُوا اِلاَّ وَ فِيها اِمامٌ

জমিন কখনই পবিত্র ইমাম ব্যতীত থাকে না। 112

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : আল্লাহর কসম ,আল্লাহ্ তা য়ালা যখন হযরত আদম (আ.)-এর রূহ মোবারককে কবজ করে নিলেন ,তখন থেকে পৃথিবীকে এমন অবস্থায় ত্যাগ করেন নি যে ,তাতে কোন ইমাম থাকবে না। যার মাধ্যমে মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। আর সেই হচ্ছে মানুষের জন্য আল্লাহর হুজ্জাত। আর জমিন কখনই ইমাম ছাড়া অর্থাৎ মানুষের জন্য আল্লাহর হুজ্জাত ব্যতীত অবশিষ্ট থাকবে না। 113

আর একটি বিষয় হচ্ছে ইমামগণ আধ্যাত্মিক বিষয়েরও হেদায়েতকারী। আর তা হচ্ছে এমন যে ,পবিত্র ইমামগণ যেভাবে মানুষের বাহ্যিক আমলের ব্যাপারে পথনির্দেশনা দেন বা পরিচালনা করেন তেমনি বাতেনী বা অভ্যন্তরীণ (আধ্যাত্মিক বিষয়ের) ব্যাপারেও নির্দেশনা দেন বা পরিচালনা করেন অর্থাৎ তার হেদায়েতের মাধ্যমেই আধ্যাত্মিক জীবন পরিচালিত হয় এবং সৎকর্মসমূহ তার ঐশী নির্দেশনায় ঊর্ধ্বে যাত্রা করে। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) و َ جَعَلْناهُمْ اَئِمَّةً يَهْدُونَ بِاَمْرِنا وَ اَوْحَيْنا اِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْراتِ (

এবং তাদেরকে ইমাম হিসাবে নির্দিষ্ট করেছি যেন আমাদের নির্দেশ অনুযায়ী মানুষদেরকে হেদায়েত করে এবং তাদের প্রতি ভালো কাজ সমূহ ওহী হিসেবে প্রেরণ করেছি। 114

এবং অন্য আরেক জায়গায় বলেছেন

) و َ جَعَلْنا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِاَمْرِنا لَماَّ صَبَرُوا (

আমরা তাদের কিছু সংখ্যককে ইমাম হিসাবে নির্দিষ্ট করেছি যেন আমাদের নির্দেশ অনুযায়ী  হেদায়েত করে ,কেননা তাঁরা ধৈর্যধারণ করেছে। 115

আল্লামা তাবাতাবাই এভাবে লিখেছেন : এ সকল আয়াত থেকে এটাই বোঝা যায় যে ,ইমাম বাহ্যিকভাবে দিক নির্দেশনা ও হেদায়েত করা ব্যতিরেকেও এক ধরনের অভ্যন্তরীণ হেদায়েতের বা আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার ব্যাপারেও কাজ করে থাকেন যা অবস্তুগত ও ঐশী নির্দেশ স্বরূপ। ইমামগণ তাঁদের অভ্যন্তরীণ সত্তা ,আধ্যাত্মিক আলো ও অস্তিত্বের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তরে প্রভাব ফেলেন। আর এভাবেই তাদেরকে পরিপূর্ণতা ও ভালো পরিণতির দিকে টেনে আনতে পারেন। 116 যারা আপত্তি করেন যে ,যেহেতু শিয়ারা ইমামের উপস্থিতিকে দীনি আইন-কানুন বর্ণনা এবং তা মানুষের সামনে পরিষ্কার করে দেয়া ও মানুষকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন মনে করে সেহেতু ইমাম অন্তর্ধানে থাকাতে এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হচ্ছে না ,কেননা যে ইমাম অন্তর্ধানে থাকে মানুষ তাঁর সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখতে পারে না তাই তার অস্তিত্বের কোন প্রকার সুফল নেই তারা ইমামতের প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে কোন ধারণাই রাখে না। কেননা ইমামতের আলোচনায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ,ইমামের দায়িত্ব শুধুমাত্র ইসলামের বাহ্যিক রূপ আলোচনা ও মানুষকে বাহ্যিকভাবে পথনির্দেশনা দান করা নয়। ইমামের যেমন মানুষকে বাহ্যিকভাবে পথনির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব আছে তেমনই তাদের অভ্যন্তরীণভাবে দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্বও রয়েছে। তিনিই হচ্ছেন মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের শৃঙ্খলা বিধানকারী এবং তিনিই মানুষের প্রকৃত আমল আল্লাহ্ তা য়ালার দিকে পরিচালনা করেন। এটা ঠিক নয় যে ,ইমামের শারীরিক উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি এ ব্যাপারে কোন প্রভাব রাখে না। আর ইমাম অভ্যন্তরীণভাবে মানুষের নফস ও রূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত যদিও তিনি আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে। আর এ কারণেই তার অস্তিত্ব বিরাজমান থাকার প্রয়োজন রয়েছে যদিও তাঁর আবির্ভাবের ও পৃথিবীকে সংস্কারের সময় আসে নি। 117

মরহুম খাজা নাসির উদ্দিন তুসি (রহঃ) বলেছেন :

وُجُودُهُ لُطْفٌ وَ تَصَرُّفُهُ لُطْفٌ آخَرٌ وَ عَدَمُهُ مِناَّ

ইমামের উপস্থিতি হচ্ছে আল্লাহর একটি অনুগ্রহ এবং (পর্দার অন্তরালে থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণভাবে) দিক-নির্দেশনা দানের বিষয়টি হচ্ছে আরেকটি অনুগ্রহ ,আর তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ না করার কারণ হচ্ছি আমরা।

সূর্য মানুষের জন্য উপকারী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যদি মানুষ তাঁর থেকে দূরে সরে যায় এতে তার কোন ক্ষতি হবে না। মানুষই এর জন্য দায়ী। কেন সে সূর্যের থেকে দূরে সরে থাকছে এবং কেনইবা নিজেকে তার আলো থেকে গোপন করছে। আর অবশ্যই এমনটা চিন্তা করা ঠিক নয় যে সূর্য কোন উপকারেই আসে না। কেননা যদি এই সূর্যই না থাকতো মানুষ তার গোপন আস্তানাতেও জীবন-যাপন করতে পারতো না এবং এই সূর্যই যার থেকে তারা দূরে সরে থাকছে বা তার আলো থেকে নিজেদেরকে গোপন করে রাখছে ,তাদের কাজের ক্ষেত্র ,পরিসর এবং জীবন ধারনের জন্য খাদ্য উৎপাদন করছে।

হাদীসসমূহে বর্ণিত হয়েছে ইমাম মাহ্দী (আ.) মেঘের আড়ালে সূর্যের ন্যায় লুকায়িত আছেন। সোলাইমান আ মাশ ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল : কিভাবে মানুষ আল্লাহর হুজ্জাত অদৃশ্য থাকা অবস্থায় তার কাছ থেকে উপকৃত হবে ?

বললেন : যেমনিভাবে মেঘেরা সূর্যকে আবৃত করে ফেললেও মানুষ তার থেকে উপকৃত হয়ে থাকে। 118

জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এভাবে প্রশ্ন করেন : শিয়ারা কিভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.) অদৃশ্য থাকার সময় তার কাছ থেকে উপকৃত হবে ?

বললেন : হ্যাঁ ,তাঁর কসম খেয়ে বলছি যিনি আমাকে নবুওয়াতের পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। তারা তাঁর নূরের আলোক ছটা থেকে আলোকিত হবে এবং তাঁর বেলায়তের থেকে লাভবান হবে যেমন সূর্যের আলো থেকে সবাই উপকৃত হয় যদিও মেঘেরা সূর্যকে আবৃত করে রাখে। 119

এ ছাড়াও ,ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রতি বছর হজে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন মজলিস ও মাহ্ফিলে আসা যাওয়া করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে মু মিনদেরকে কোন মাধ্যম অথবা কোন মাধ্যম ছাড়াই তাদের সমস্যার সমাধান করে থাকেন। জনগণ তাকে দেখে কিন্তু তাকে চিনতে পারে না। আর তিনি সবাইকে দেখেন ও চেনেন। কিছু কিছু নেককার (পূণ্যবান) ও পরহেজগার লোককে তাঁর বিশেষ দয়ার কুটিরে আশ্রয় দেন। তিনি স্বল্প ও দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানে থাকার সময় অনেকেই তাঁর সাক্ষাত প্রাপ্ত হয়ে তাঁর অনেক অলৌকিক ঘটনাও দেখেছে এবং তাদের অনেকের সমস্যার সমাধানও করিয়েছে।

মরহুম আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ সাদরুদ্দিন সাদর এভাবে লিখেছেন : বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে ,অনেকেই ইমাম অন্তর্ধানে থাকা অবস্থায় তাঁকে দেখেছে এবং তাঁর সাক্ষাত পেয়েছে। এ বর্ণনাগুলোর সাথে এই বইতে পূর্বে যে সকল হাদীসে তাঁকে দেখার ব্যাপারে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ,কোন প্রকার বিভেদ নেই। কেননা সেসব হাদীস বা রেওয়ায়েতে শুধুমাত্র ইমাম দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানে থাকা অবস্থায় যদি কেউ তাঁর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে তবে তাকে মিথ্যাবাদী বা তার এই খবরকে মিথ্যা বলে ধরে নেয়া হবে বলা হয়েছে। কিন্তু হয়তো কেউ তাঁর সাক্ষাত পাবে বা কারো সাথে তাঁর দেখা হবে এমন ঘটনা অস্বীকার করা হয় নি ।

ইমাম দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানে থাকা অবস্থায় অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং অনেক মানুষকে দীন ও দুনিয়ার কত প্রকার সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়েছেন ,কত অসুস্থকে সুস্থ করেছেন ,সহায় সম্বলহীন ও শক্তি সামর্থহীন লোকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ,কত লোককে প্রকৃত বা সত্য পথের সন্ধান দেখিয়েছেন ,কত পিপাসী ব্যক্তির তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন।

এরূপ বর্ণনা সম্বলিত গ্রন্থসমূহ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি কর্তৃক বিভিন্ন স্থানে সংকলিত হয়েছে যারা একে অপরকে চিনতেন না অথচ এসব বইয়ের লেখকরা মুওয়াছ্ছাক (সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত) ছিলেন বলে রিজাল শাস্ত্রের (হাদীস বর্ণনাকারীদের পরিচিতি সম্পর্কিত জ্ঞান) গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে। ঐ সকল বইতে এ ধরণের বিষয় লিপিবদ্ধ আছে যা আমাদের উল্লিখিত বিষয়গুলোর পক্ষে সাক্ষ্য দান করে। আমরা এ বইতে সেই সকল বিষয় হতে কিছু আলোচনা করেছি । এ ধরণের বর্ণনা এত অধিক যে ,সকল প্রকার সন্দেহকে অপনোদন করে। বিশেষতঃ এ সকল বর্ণনা অধ্যয়ন ,বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা ও যে সকল প্রমাণাদি এ বর্ণনাগুলোর সঙ্গেই বিদ্যমান তা দর্শনে যে কেউ অন্তত কিছু বর্ণনাকে অবশ্যই সত্যায়ন করবেন। 120