ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81165
ডাউনলোড: 9316

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81165 / ডাউনলোড: 9316
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

9. রোমীয়দের কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের যুগ

রোম-সম্রাট বোম্বেই খ্রি. পূ. 64 সালে সিরিয়া দখল এবং তা রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন । পরের বছর তিনি আল কুদ্স দখল করেন এবং তা সিরিয়াস্থ রোমান শাসনকর্তার অধীন করে দেন । মথির ইঞ্জিলে (মেথিউসের বাইবেল) বর্ণিত হয়েছে : খ্রি.পূ. 39 সালে রোম-সম্রাট অগাস্ট হিরোডিস আদোমীকে ইহুদীদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন । নব নিযুক্ত শাসনকর্তা হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহের ওপর একটি নতুন ও সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ করেন এবং তিনি খ্রি. পূ. 4 সালে মৃত্যুবরণ করেন । 90

ইঞ্জিলসমূহের বিবরণ অনুসারে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় হেরোডিস খ্রি.পূ. 4 সাল থেকে 39 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইহুদীদের শাসন করে এবং তার যুগে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন । এ শাসনকর্তাই ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়াকে হত্যা করে তাঁর কর্তিত মস্তক একটি সোনালী পাত্রে রেখে সালূমার কাছে উপঢৌকনস্বরূপ প্রেরণ করে । উল্লেখ্য যে ,এ সালূমা ছিল বনি ইসরাইলের এক জঘন্য নারী । 91

ইঞ্জিলসমূহ ও ঐতিহাসিকরা নেরোনের (নিরো) যুগে 54-68 খ্রিস্টাব্দে রোমান ও ইহুদীদের মধ্যে যে সব ঘটনা এবং কুদ্স ও ফিলিস্তিনে যা কিছু ঘটেছে তা উল্লেখ করেছেন । রোমান সম্রাট কাসবেসীয়ান তাঁর পুত্র তিতুসকে 70 খ্রিস্টাব্দে উক্ত অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত করেন । তিনি আল কুদসে আক্রমণ চালান । ফলে সেখানকার ইহুদীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং তাদের রসদপত্রও শেষ হয়ে গেলে তারা দুর্বল হয়ে যায় । তিনি তিতুস শহরের প্রাচীর ধ্বংস করেন এবং পুরো শহর তাঁর দখলে চলে আসে । তিনি শহরে প্রবেশ করে হাজার হাজার ইহুদীকে হত্যা এবং তাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করেন । তাদের উপাসনালয় গুঁড়িয়ে ফেলা হয় এবং তাতে অগ্নি সংযোগ করা হয় । উপাসনালয়টি এমনভাবে ধ্বংস করা হয় যে ,এর অস্তিত্বই আর খুঁজে পাওয়া যায় নি । শহরের যে সব অধিবাসী প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল তাদেরকে রোমে নিয়ে যাওয়া হয় ।

ঐতিহাসিক আল মাসউদী তাঁর আত্ তাম্বীহ্ ওয়াল আশরাফ গ্রন্থে বলেন : এ আক্রমণে নিহত ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল তিন মিলিয়ন -যা বাহ্যত অনেক বাড়িয়ে বলা হয়েছে । এ সব ঘটনার পর রোমানরা ইহুদীদের সাথে বেশি কঠোর আচরণ প্রদর্শন করে যা ঐ সময়ে তুঙ্গে পৌঁছে যখন সম্রাট কন্সটানটাইন এবং তাঁর পরবর্তী কায়সাররা (সম্রাটরা) খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন । তাঁরা ইহুদীদেরকে নির্যাতন ও শাস্তির মধ্যে রাখেন । এ কারণেই 620 খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.)-এর যুগে শাম ও ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সাথে পারস্য সম্রাট খোসরু পারভেযের যে যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধে রোমান বাহিনীর পরাজয় বরণ করার কারণে ইহুদীরা খুব খুশী হয়েছিল । ঠিক একইভাবে হিজাযের ইহুদীরাও আনন্দ প্রকাশ করেছিল এবং তারা মুসলমানদের ওপর তাদের বিজয়ী হওয়ার দূরাশা পোষণ করত । তখন এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় :

আলিফ লাম মীম । এ সব অক্ষরের শপথ রোম পরাজিত হয়েছে । খুব নিকটবর্তী অঞ্চলে এবং পরাজয় বরণ করার পর তারা অতি শীঘ্রই বিজয়ী হবে ,খুব অল্প কয়েক বছরের মধ্যে । অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল বিষয় কেবল মহান আল্লাহরই । আর মহান আল্লাহর সাহায্য ও শক্তির দ্বারা ঈমান আনয়নকারীরা সেদিন আনন্দিত হবে । তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাহায্য করেন । আর তিনিই পরাক্রমশালী বিজয়ী এবং দয়ালু । 92

ঐতিহাসিকদের অভিমত অনুযায়ী রোমানদের ওপর বিজয় লাভ করার পর বিজয়ী ইরানীদের কাছ থেকে ইহুদীরা নব্বই হাজার খ্রিস্টান যুদ্ধবন্দী ক্রয় করে তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল ।

কয়েক বছর পর যখন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস ইরানীদের ওপর বিজয়ী হন তখন তিনি ইহুদীদেরকে শাস্তি দেন এবং আল কুদসে যে ইহুদীই ছিল তাকে তিনি সেখান থেকে বহিষ্কার করেন ;আর এভাবে খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে এ শহর ইহুদীদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় । দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাবের কাছে খ্রিস্টানরা শর্তারোপ করেছিল যে ,কোন ইহুদী যেন সেখানে বসবাস না করে এবং তিনিও তাদের ইচ্ছার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন এবং এ বিষয়টি তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে লিপিবদ্ধ করেন । আর তা 638 খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ হিজরী 18 সালে যখন আল কুদ্স ও ফিলিস্তিন ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় তখন থেকে 1343 হিজরী অর্থাৎ 1925 খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ পাশ্চাত্যের হাতে তুর্কী উসমানী খিলাফতের পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ।

এ হচ্ছে ইহুদী জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যা আমাদের কাছে নানাবিধ বিষয় ,যেমন ইহুদীদের ব্যাপারে সূরা ইসরা (বনি ইসরাইল) ও অন্যান্য সূরার আয়াতসমূহের তাফসীরও স্পষ্ট করে দেয় । ... এ সব আয়াতের তাফসীর এবং তোমরা পৃথিবীতে দু বার ফিতনা করবে -এ আয়াতে মহান আল্লাহর বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে এই যে ,মহানবী (সা.)-এ নবুওয়াতে অভিষেকের আগে একবার এবং এরপর আরেকবার তোমরা পৃথিবীতে ফিতনা করবে । আর এটিই হচ্ছে তাদের বহু ফিতনা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পর্যায় ব্যাখ্যাকারী একমাত্র শ্রেণীবিন্যাস । উল্লেখ্য যে ,ইহুদী জাতির ইতিহাস এ সব বিষয় দিয়ে পরিপূর্ণ ।

10 .ইসলাম ও মুসলমানদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

আমাদের পক্ষ থেকে এমন সব বান্দাদেরকে প্রেরণ করব যারা হবে প্রচণ্ড শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী -মহান আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হচ্ছে মুসলমানরা । কারণ মহান আল্লাহ্ ইসলামের প্রাথমিক যুগে আমাদেরকে তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল করে দিয়েছিলেন । আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তন্নতন্ন করে তল্লাশী করেছেন । এরপর তাঁরা মসজিদে আকসায় প্রবেশ করেন । আবার যখন আমরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে সরে যাই তখন মহান আল্লাহ্ আমাদের বিরুদ্ধে ইহুদীদেরকে শক্তিশালী করে দেন এবং তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি (লোকবল) দিয়ে সাহায্য করেন এবং জনশক্তির দিক থেকে তাদেরকে আমাদের চেয়ে সংখ্যায় বৃদ্ধি করে দিয়েছেন । অতঃপর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী আন্দোলন এবং তাঁর আবির্ভাব আন্দোলনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী ও কর্তৃত্বশীল করে দেবেন । আমরা ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহ্ ব্যতীত অন্য কোন জাতিকে প্রত্যক্ষ করি না যাদেরকে মহান আল্লাহ্ ইহুদীদের ওপর বিজয়ী করে অতঃপর ইহুদীদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করেছেন ।

তবে জাতিসমূহের ওপর ইহুদীদের প্রতিশ্রুত শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য অর্জন কেবল একবারই হবে ,তা দু বার হবে না । তাদের এ আধিপত্য লাভ তাদের দ্বিতীয় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং ফিতনার সমসাময়িক হবে অথবা তারা তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সৃষ্ট ফিতনা-ফাসাদের মাধ্যমেই তা অর্জন করবে । আর আমরা ইহুদীদের এ শ্রেষ্ঠত্ব দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর কাল ব্যতীত তাদের ইতিহাসের আর কোন পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করি না ।

আজ ইহুদীরা তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যের তুঙ্গে অবস্থান করছে । আমরা বর্তমানে আমাদের ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের সূচানলগ্নে প্রবেশ করেছি এবং আমরা তাদের কুৎসিত চেহারা উন্মোচন করার পর্যায়ে রয়েছি ঐ সময় যখন মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী করবেন । যেমনভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রথমবার মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে পৃথিবীতে তাদের গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে অথবা তাঁর সাথে মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করব এবং তাদের আধিপত্য ,গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বকামিতার ধ্বংস সাধন করব ।

তবে যদি তোমরা প্রত্যাবর্তন ও তওবা কর তাহলে আমরাও প্রত্যাবর্তন করব ,আর আমরা জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য কারাগাররূপে নির্ধারণ করেছি -মহান আল্লাহর এ বাণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ইসরাইল ধ্বংস হওয়ার পর অনেক ইহুদী পৃথিবীতে থেকে যাবে । যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে না ইমাম মাহ্দী (আ.) তাদেরকে আরব দেশসমূহ থেকে বহিষ্কার করবেন । রেওয়ায়েত অনুসারে তারা আবার নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত হবে । আর তা হবে এক চোখ বিশিষ্ট দাজ্জালের ফিতনা চলাকালে । ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং মুসলমানরা এ সব ফিতনা সৃষ্টিকারীদের চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করবেন এবং মহান আল্লাহ্ তাদের মধ্য থেকে যারা নিহত হবে তাদের জন্য জাহান্নামকে কারাগার করে দেবেন এবং মুসলমানরা তাদের অবশিষ্টদেরকে কারাগারে অন্তরীণ করে তাদের নাশকতামূলক কর্মতৎপরতা ও ফিতনা চিরতরে বন্ধ করে দেবে ।

ষষ্ঠ অধ্যায়

আরব জাতি ও আবির্ভাবের যুগে তাদের ভূমিকা

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আন্দোলন এবং আবির্ভাবের যুগে আরব জাতি এবং তাদের সার্বিক অবস্থা ও শাসনকর্তাদের প্রসঙ্গে অসংখ্য রেওয়ায়েত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে । এ সব রেওয়ায়েতের মধ্যে ইয়েমেনে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী হুকুমত সংক্রান্ত হাদীসসমূহ বিদ্যমান ;এ সব রেওয়ায়েত ও হাদীস সার্বিকভাবে উক্ত হুকুমতের প্রশংসায় বর্ণিত হয়েছে । আমরা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এ সব হাদীস স্বতন্ত্র অধ্যায়ে আলোচনা করব ।

মিশরীয়দের আন্দোলন সংক্রান্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহও উক্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসমূহের মধ্যে বিদ্যমান । এ সব হাদীস ও রেওয়ায়েতে মিশরীয়দের প্রশংসা করা হয়েছে ,বিশেষ করে ঐ সব রেওয়ায়েত ও হাদীস যেগুলোয় বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কতিপয় সঙ্গী-সাথী ও সহকারী মিশরীয় হবেন । আরো কতিপয় হাদীসে বিধৃত আছে যে ,মিশর হযরত মাহ্দী (আ.)-এর মিম্বার অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বের প্রচার ও চিন্তাধারার কেন্দ্রস্থল হবে । মিশরে প্রবেশ করে সে দেশের মিম্বারে আরোহণ করে ইমাম মাহ্দী (আ.) যে ভাষণ প্রদান করবেন তৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বিদ্যমান আছে । এ কারণে মিশরীয় আন্দোলন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী আন্দোলনসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁর আবির্ভাবের আন্দোলনের অংশ বলে গণ্য করা হয়েছে । আমরা এ আন্দোলন সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা করব ।

ঠিক একইভাবে ইরাকে বিদ্যমান দলসমূহ এবং সেখানকার প্রকৃত মুমিনদের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহও বিদ্যমান । তাদেরকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীদের অন্তর্ভুক্ত বলে রেওয়ায়েতসমূহে স্মরণ করা হয়েছে এবং যথাসময়ে তা আমরা বর্ণনা করব ।

আরব জাতি সংক্রান্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মাগরিবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ যেগুলোয় মিশর ,সিরিয়া ,জর্ডান এবং ইরাকে মাগরিবী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । এ সব হাদীস ও রেওয়ায়েত থেকে তাদের নিন্দিত হওয়ার বিষয়টি প্রতীয়মান হয় । আর শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে আরব দেশসমূহে ইসলামী আন্দোলন এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের পক্ষ থেকে এ সেনাবাহিনী প্রেরিত হবে যা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা পালন করবে অথবা আরব জাতীয়তাবাদ সংরক্ষণকারী বাহিনী সদৃশ হবে । আমরা পরে এতৎসংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করব ।

ঠিক একইভাবে শিয়া ও সুন্নী সূত্রসমূহে সার্বিকভাবে আরব শাসক ও রাজন্যবর্গকে নিন্দা ও ভর্ৎসনা করে বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে । যেমন : নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি মুস্তাফীদ 93 রেওয়ায়েত : আরবদের (অথবা তাগুতীদের) জন্য আক্ষেপ ঐ অনিষ্ট থেকে যা তাদেরকে ধরাশায়ী করে ফেলবে ।

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন : মহান আল্লাহর শপথ ,আমি যেন তাকে (ইমাম মাহ্দী) রুকন ও মাকামের মাঝখানে দেখতে পাচ্ছি যে জনগণ তার সাথে একটি নতুন গ্রন্থ নিয়ে বাইআত করছে অথচ এ বিষয়টি মেনে নেয়া আরবদের কাছে খুবই কঠিন ও কষ্টকর হবে । আরব তাগুতী ও সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্য আক্ষেপ ঐ অনিষ্ট থেকে যা অতি সত্বর তাদেরকে আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে ফেলবে । 94 আর হাকিমের মুস্তাদরাকে বর্ণিত হয়েছে : আরবদের জন্য আক্ষেপ ঐ অনিষ্ট থেকে যা শীঘ্রই তাদের কাছে উপস্থিত হবে । 95

এখানে নতুন গ্রন্থ বলতে পবিত্র কোরআনকেই বোঝানো হয়েছে যা হবে পরিত্যক্ত (অর্থাৎ তদনুসারে আমল করা হবে না) এবং হযরত মাহ্দী (আ.) আবার নতুন করে তা উপস্থাপন করবেন এবং একে নব জীবন দেবেন ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যখন আল কায়েম আল মাহ্দী কিয়াম করবে (জনসমক্ষে আবির্ভূত হবে ও আন্দোলন করবে) তখন সে জনগণকে নতুন করে ইসলাম ধর্মের দিকে আহবান জানাবে এবং যে বিষয়টি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে এবং যা থেকে সাধারণ জনগণ পৃথক হয়ে যাওয়ার কারণে বিচ্যুতির পথে পা দিয়েছে সে বিষয়টির দিকে পরিচালিত করবে । আর সে এ কারণে মাহ্দী নামে অভিহিত হয়েছে যে ,সে জনগণকে একটি হারানো বিষয়ের দিকে দিক নির্দেশনা দেবে । আর তাকে কায়েম বলা হয়েছে এ কারণে যে ,সে সত্যসহ কিয়াম করবে । 96

ইসলাম ধর্ম শাসকশ্রেণী এবং অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কাছে কঠিন ও অপ্রীতিকর হবার কারণ হচ্ছে এই যে ,তারা এ ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে । আর এ কারণেই পবিত্র কোরআন ও খাঁটি ইসলাম ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন ,হযরত মাহ্দী (আ.)-এর হাতে বাইআত এবং ইসলামী বিধি-বিধান অনুসারে আমল করা তাদের জন্য কঠিন ও দুঃসাধ্য হয়ে যাবে ।

নতুন গ্রন্থ বলতে সূরা ও আয়াতসমূহের নতুন বিন্যাস সমেত এ পবিত্র কোরআনকেই বোঝানো হয়ে থাকতে পারে । রেওয়ায়েত ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : মহানবী (সা.) এবং অন্য সকল নবীর বিদ্যমান জিনিসপত্রসহ উল্লিখিত পবিত্র কোরআন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে সংরক্ষিত আছে এবং আমাদের হাতে যে পবিত্র কোরআন বিদ্যমান সেই কোরআনের সাথে উক্ত কোরআনের কোন পার্থক্য নেই ,এমনকি তাতে আমাদের কাছে বিদ্যমান কোরআন অপেক্ষা একটি বর্ণও কম-বেশি নেই ।

তবে আমাদের কাছে বিদ্যমান কোরআনের সাথে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে বিদ্যমান কোরআনের পার্থক্যটা হচ্ছে কেবল সূরা ও আয়াতসমূহের বিন্যাস সংক্রান্ত । ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে বিদ্যমান এ কোরআনটি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কর্তৃক পঠিত এবং হযরত আলী (আ.)-এর হাতে লিখিত । এ দুই অর্থে (অর্থাৎ সূরা ও আয়াতসমূহের বিন্যাস এবং পবিত্র কোরআনের পরিত্যক্ত বিধি-বিধানসমূহ বাস্তবে বলবৎ করা) পবিত্র কোরআন তাদের কাছে নতুন গ্রন্থ বলে মনে হবে ।

আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু ইয়াফুর থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন : আমি ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট থেকে শুনেছি যে ,তিনি বলেছেন : আরব বিদ্রোহীদের জন্য ধ্বংস রয়েছে ঐ অমঙ্গলের মধ্যে যা অতি শীঘ্রই তাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে ফেলবে । আমি বললাম : আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হই । হযরত কায়েম আল মাহ্দীর সাথে কজন আরব থাকবে ?

তিনি বললেন : খুব অল্প সংখ্যক । আমি বললাম : মহান আল্লাহর শপথ ,যারা তাদের (আরবদের) ব্যাপারে এ কথা বর্ণনা করে তারা সংখ্যায় অনেক । তিনি বললেন : তবে অবশ্যই মানুষকে পরীক্ষা করা হবে এবং তাদেরকে পরস্পর থেকে ছেঁকে বের করে আনা হবে । আর অনেক লোকই পরীক্ষার মাধ্যমে (ইসলাম ধর্মের সীমানা থেকে) বের হয়ে যাবে । 97

এ সব রেওয়ায়েতের অন্তর্গত হচ্ছে ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলোয় ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালে আরবদের মধ্যকার মতবিরোধের কথা বর্ণিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,এ মতবিরোধ (কতিপয়) আরবের মাঝে গৃহযুদ্ধের কারণ হবে ।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : জনগণ এক ধরনের তীব্র ভয়-ভীতি এবং ফিতনা ও বিপদাপদ কবলিত না হওয়া পর্যন্ত আল কায়েম কিয়াম করবে না । আর এর পূর্বে আছে তাদের মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা । এর পরপরই আরবদের মাঝে ধারালো তরবারি কর্তৃত্বশীল ও ফয়সালাকারী হবে । জনগণের মাঝে মতপার্থক্য ,ধর্মের ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্তি এবং তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থার উদ্ভব হবে । আর তা এমনভাবে হবে যে ,মানুষের মাঝে পারস্পরিক হিংস্রতা ,নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতা প্রত্যক্ষ করে সবাই তখন সকাল-সন্ধ্যায় মৃত্যু কামনা করবে । 98

আর বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত ও হাদীস আছে যেগুলো সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও মূল্যবোধ থেকে আরবদের দূরে সরে যাওয়া ,চিন্তাবিদগণ কর্তৃক তাদের নিজস্ব অভিমত ও ধ্যান-ধারণা ব্যক্ত করা এবং অন্যদেরকে তা গ্রহণ করার জন্য আহবান করার সাথে সংশ্লিষ্ট ।

এ সব রেওয়ায়েত ও হাদীসের মধ্যে ইরানীরা অথবা ইরানের শাসকবর্গ ও আরবদের মধ্যকার মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত হাদীসসমূহও বিদ্যমান । আর এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকাল পর্যন্ত চলতে থাকবে ।

যখন আমরা ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ,কালো পতাকাবাহীদের আন্দোলন এবং কুদ্স অভিমুখে তাদের অগ্রযাত্রা এবং সুফিয়ানীর শত্রুতামূলক তৎপরতা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসগুলো প্রত্যক্ষ করি তখন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ,আরব শাসক ও রাজা-বাদশাহদের মাঝে কালো পতাকাবাহীদের বিরোধী মনোভাব ও ভূমিকা থাকবে । তবে ইয়েমেনী আন্দোলন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে । অর্থাৎ তারা এবং অন্যান্য যে সব ইসলামী আন্দোলন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মাধ্যমে হবে তারা আরব শাসকদের থেকে ভিন্ন নীতি গ্রহণ করবে অর্থাৎ আরব দেশসমূহের ঐ সব ইসলামী আন্দোলন ,ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী কালো পতাকাবাহী ইরানীদের সহযোগী হবে । উল্লেখ্য যে ,সুফিয়ানী কুদ্স অভিমুখে অগ্রসরমান ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী কালো পতাকাবাহী ইরানীদের অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইবে ।

আরবদের সাথে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুদ্ধ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ এবং পবিত্র মক্কা নগরী মুক্ত করার পরপরই সুফিয়ানী বাহিনীর হাত থেকে মদীনা মুক্ত করার পর অথবা মুক্ত করার সময় হিজাযের ক্ষয়িষ্ণু প্রশাসন ও সরকারের অবশিষ্টাংশের সাথে তিনি যে যুদ্ধ করবেন তৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ যেমন বিদ্যমান আছে ঠিক তেমনি (এরপর) ইরাকে সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনে সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে ইমামের বৃহৎ যুদ্ধ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতও বর্ণিত হয়েছে । (এ সব রেওয়ায়েত ও হাদীসের মধ্য থেকে) গুটিকতক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) ইরাকে তাঁর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করবেন এবং সেখানকার 70টি গোত্রের রক্তপাত হালাল গণ্য করবেন । (ইরাক ও শামদেশের ঘটনাবলী বর্ণনা করার সময় এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব) । এতদপ্রসঙ্গে ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : যখন আল কায়েম আবির্ভূত হবে তখন তার ,আরব ও কুরাইশদের মাঝে একমাত্র তরবারী ব্যতীত আর কোন ফয়সালাকারী থাকবে না । 99

আরব উপদ্বীপ ,শাম ,বাগদাদ ,বাবিল (ব্যাবিলন) ও বসরায় ভূমিধ্বসসমূহ এবং হিজায অথবা হিজাযের পূর্ব দিকে অগ্নির আবির্ভাব ও তা প্রজ্বলিত হওয়া সংক্রান্ত হাদীসসমূহও উক্ত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহের অন্তর্গত । উল্লেখ্য যে ,উক্ত অগ্নি তিন দিন অথবা সাত দিন পর্যন্ত অবিরামভাবে জ্বলতে থাকবে এবং তা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিদর্শনাদির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে ।

শাম দেশ ও সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান

ইসলামের ইতিহাস ও হাদীস শাস্ত্রের সূত্র ও গ্রন্থসমূহে বর্তমান সিরিয়া ও লেবানন যা শামের মরুভূমি এবং লেবাননের পার্বত্য অঞ্চল বলেও অভিহিত এবং জর্দান ও অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড সমবেতভাবে শাম বা বৃহত্তর শামদেশের অন্তর্ভুক্ত (বহুবচন শামাত) । যদিও প্রধানত সমগ্র এ অঞ্চলকে শাম ও ফিলিস্তিন বলা হতো ;আর শামদেশের রাজধানী দামেশক শাম নামে প্রসিদ্ধ ছিল ।

আবির্ভাবের যুগে শামদেশ এবং এর ঘটনাবলী ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্বসংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েত অগণিত । আর এ সব রেওয়ায়েতের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সুফিয়ানীর আন্দোলন যে শামের ওপর নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করে সমগ্র দেশকে নিজ শাসনাধীনে নিয়ে আসবে । সুফিয়ানীর সেনাবাহিনী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে । সে শামে তার শত্রুদেরকে নির্মূল করার পর তুর্কীদের (রুশদের) বিরুদ্ধে কিরকীসীয়ায় এক বৃহৎ যুদ্ধে লিপ্ত হবে । অতঃপর সে ইরাকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে । সে হিজাযেও ভূমিকা রাখবে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলনকে নিশ্চি ‎‎ হ্ন করার লক্ষ্যে হিজাযের শাসনকর্তাকে সাহায্য করার জন্য সেখানে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে । কিন্তু মক্কা নগরীর অদূরে প্রতিশ্রুত মুজিযা (ভূগর্ভে তাদের প্রোথিত হওয়া) বাস্তবায়িত হবে ।

সার্বিকভাবে সুফিয়ানীর জন্য সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হবে ফিলিস্তিন বিজয় ও হযরত মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ । ইহুদী ও রোমানরা (পাশ্চাত্য) এ যুদ্ধে সুফিয়ানীকে সাহায্য ও সমর্থন দেবে । আর সুফিয়ানীর পরাজিত ও নিহত হওয়া ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিজয় ,তাঁর মাধ্যমে ফিলিস্তিন মুক্ত হওয়া এবং আল কুদসে তাঁর প্রবেশের মাধ্যমে এ গোলযোগের পরিসমাপ্তি হবে । আমরা এ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করতে চাই ।