ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81163
ডাউনলোড: 9315

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81163 / ডাউনলোড: 9315
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

সুফিয়ানীর সংখ্যা

নিঃসন্দেহে শিয়া ও সুন্নী হাদীসসমূহে যে প্রতিশ্রুত সুফিয়ানীর কথা বর্ণিত হয়েছে আসলে সে হবে এক ব্যক্তি । তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে ,যেমন ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে দু জন সুফিয়ানীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে : প্রথম সুফিয়ানী এবং দ্বিতীয় সুফিয়ানী । কিছু কিছু রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,সুফিয়ানীদের সংখ্যা হবে তিনজন । তবে যে সুফিয়ানী নিন্দিত ও ধিকৃত হয়েছে এবং ফিতনা ও এ ধরনের অন্যায় কাজ করবে সে হবে দ্বিতীয় সুফিয়ানী । কারণ প্রথম সুফিয়ানী শামের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং কিরকীসীয়ার যুদ্ধের পর ইরাক যুদ্ধে ইরানী বাহিনী ও কালো পতাকাবাহীদের হাতে পরাজিত হবে এবং যুদ্ধে আহত হওয়ার কারণে শামে ফেরার পথে মৃত্যুবরণ করবে । তখন দ্বিতীয় সুফিয়ানী তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে তার মূল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে ।

যদি এ সব রেওয়ায়েত সহীহ হয় তাহলে যেমন ইয়েমেনী ও খোরাসানীরা (কালো পতাকাবাহীরা) ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী হবেন ঠিক তেমনি প্রথম সুফিয়ানী হবে একজন আনাড়ি শাসনকর্তা যে প্রকৃত প্রতিশ্রুত সুফিয়ানীর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী হবে । ইবনে হাম্মাদ বলেছেন : ওয়ালীদ বলেন : সুফিয়ানী বনি হাশেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । সে তিন পতাকাবাহী সেনাদল এবং যারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং সকলের ওপর বিজয়ী হবে । তখন সে কুফার উদ্দেশে রওয়ানা হবে এবং বনি হাশেম ইরাকের দিকে হিজরত করবে । অতঃপর সুফিয়ানী কুফা থেকে ফেরার পথে শামের অদূরে নিহত হবে এবং মৃত্যুর আগে সে আবু সুফিয়ানের এক বংশধরকে তার স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করবে যে সবার ওপর বিজয়ী হবে... এবং সে-ই হবে কাঙ্ক্ষিত সুফিয়ানী । 138

সুফিয়ানী একাধিক হওয়া সংক্রান্ত এ ধরনের হাদীস ইবনে হাম্মাদ তাঁর পাণ্ডুলিপির 60 ও 74 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন ।

রেওয়ায়েতসমূহে চিত্রিত অবস্থা ও পরিস্থিতিসমূহ থেকে বোঝা যায় যে ,সুফিয়ানীর আন্দোলন ও উত্থান হবে অত্যন্ত দ্রুত ও বর্বরোচিত । আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় তার উত্থান ও আন্দোলনকে নাটকীয় রক্তক্ষয়ী বলে অভিহিত করা যায় । কারণ ,বিশ্ব-পরিস্থিতি ও পরাশক্তিসমূহের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এতটা তীব্র আকার ধারণ করবে যে ,তা অবশেষে যুদ্ধের রূপ নেবে । শাম (বৃহত্তর সিরিয়া) ফিলিস্তিনের ফিতনা দ্বারা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে । মশকের মধ্যে পানি যেভাবে আন্দোলিত হয় তেমনিভাবে দুর্বল ও টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার কারণে এ দেশটি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও অশান্তির শিকার হবে । ... পাশ্চাত্য ও ইহুদীদের দৃষ্টিতে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হবে ফিলিস্তিন সীমান্তে ও আল কুদসের দ্বারপ্রান্তে ইসলামী ও ইরানী সেনাবাহিনীর উপস্থিতির বিষয়টি । তখন শামসহ মুসলিম বিশ্বে রুশদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে । এ কারণেই তারা ক্ষমতাবান এক শাসক নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে । এটি এ উদ্দেশ্যে করবে যে ,একদিকে এর মাধ্যমে ইসরাইলের আশেপাশের অঞ্চলগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা যাবে ,অন্যদিকে ইসরাইল ও আরবদের সাধারণ প্রতিরক্ষা সীমাটি দখলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে । এর মাধ্যমে তারা ইরাক দখলের যুদ্ধে সুফিয়ানীকে সহযোগিতা করা ছাড়াও ইরানী ও কালো পতাকাধারীদের প্রতিহত করার লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করবে ।

একইভাবে পাশ্চাত্য ও ইসরাইল হিজাযের দুর্বল প্রশাসনকে সাহায্য করতে এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে সংঘটিত মৌলিক ও নতুন আন্দোলনকে দমন করতে সুফিয়ানীকে সুযোগ করে দেবে । অবশ্য ঐ আন্দোলন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট আন্দোলনের অংশ নয় ।

হাদীসসমূহে যে সব দিক স্পষ্টভাবে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতে উল্লিখিত হয়েছে সেগুলো সুফিয়ানীর আন্দোলনের তীব্রতা ও দ্রুততার বৈশিষ্ট্যকে অনুধাবন করার ব্যাপারে আমাদেরকে সাহায্য করবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন : সুফিয়ানী ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের অবশ্যম্ভাবী নিদর্শনসমূহের অন্যতম এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার আবির্ভাব ও আন্দোলন পনের মাস স্থায়ী হবে । সে ছয় মাস যুদ্ধ করবে । যখনই সে পাঁচটি শহরের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য কায়েম করবে তখন থেকে সে পুরো নয় মাস শাসন করবে । তার শাসন এর থেকে একদিনও বেশি হবে না । 139

পাঁচটি শহর হচ্ছে দামেশক ,জর্ডান ,হিমস ,হালাব (আলেপ্পো) ও কিন্নাসরীন । এ শহরগুলো সিরিয়া ,জর্দান ও লেবালনের প্রশাসনিক কেন্দ্র । রেওয়ায়েতসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,জর্দানও এর অন্তর্ভুক্ত হবে । তবে লেবানন যা বৃহত্তর শাম এবং ঐ পাঁচ শহরের অন্তর্গত সেটাও সুফিয়ানীর সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে । তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে কয়েকটি গোষ্ঠী যে সুফিয়ানীর আধিপত্যের বাইরে থাকবে তা উল্লেখ করা হয়েছে । তারা হবে সত্যপন্থী যাদেরকে মহান আল্লাহ্ সুফিয়ানীর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন । আর এতৎসংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা পরে দেয়া হবে । উল্লেখ্য যে ,লেবাননের জনগণ ঐ ব্যতিক্রমী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ।

রেওয়ায়েতসমূহে সুফিয়ানীর উত্থান ও আন্দোলনের সময় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং তা রজব মাসে সংঘটিত হবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : ইমাম মাহ্দীর আর্বিভাবের অন্যতম অবশ্যম্ভাবী নির্দশন হচ্ছে রজব মাসে সুফিযানীর উত্থান ও আন্দোলন । 140

সুফিয়ানীর উত্থান ও আন্দোলন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ছয় মাস পূর্বে হবে । কারণ ,ইমাম মাহ্দী ঐ বছরেরই মুহররম মাসের দশম রাতে (আশুরার রাতে) অথবা দশম দিনে (আশুরার দিনে) পবিত্র মক্কায় আবির্ভূত হবেন ;আর শামের ওপর সুফিয়ানীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবার কারণে সে প্রথমে ইরাক দখল করে ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের পূর্বেই তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিজয় এবং তাঁর আন্দোলন ও বিপ্লব দমন করার জন্য হিজাযে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে ।

সুফিয়ানীর উত্থান ও আন্দোলন তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে । যথা :

প্রথম পর্যায় : দৃঢ়ীকরণের পর্যায় অর্থাৎ প্রথম ছ মাস হবে তার কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তারকাল ;

দ্বিতীয় পর্যায় : ইরাক ও হিজায আক্রমণ ও যুদ্ধ পরিচালনা ;

তৃতীয় পর্যায় : সুফিয়ানীর ইরাক ও হিজাযে আগ্রাসন থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার মোকাবিলায় শাম ,ইসরাইল ও কুদ্সসহ তার অধিকৃত অবশিষ্ট অঞ্চলসমূহ রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ ।

এখানে একটি বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন । আর তা হলো : সুফিয়ানীর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ তার প্রথম ছ মাসের যুদ্ধসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র অংকন করেছে । প্রথমে আসহাব ও আবকায়ের সাথে এবং এরপর তার বিরোধী সকল ইসলামী ও অনৈসলামিক শক্তির সাথে তার গৃহযুদ্ধসমূহ সংঘটিত হবে যার ফলে সম্পূর্ণ শামের ওপর তার আধিপত্য কায়েম হবে ।

কিন্তু তার আন্দোলনের গতিবিধির দিকে দৃকপাত করলে আমরা স্বভাবতই বুঝতে পারব যে ,পুরো এ ছয় মাসে বড় বড় সামরিক অভিযান পরিচালিত হবে ;সে এমনভাবে নিজ আধিপত্য ও কর্তৃত্ব দৃঢ় করবে যে ,এর ফলে সে পরবর্তী নয় মাসে ব্যাপক ও বৃহৎ যুদ্ধ ও সামরিক অভিযানসমূহের জন্য বহু সেনা প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে । প্রথম ছয় মাসের যুদ্ধগুলোর পাশাপাশি সুফিয়ানী আসহাব ও আবকা ছাড়াও জর্দান ও লেবাননের শাসকদের এবং অন্যান্য বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধেও যুদ্ধে লিপ্ত হবে ।

একটি হাদীসে আবকা ও আসহাবের সাথে সুফিয়ানীর যুদ্ধসমূহের তীব্রতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে । আর এ যুদ্ধগুলোই শাম ধ্বংসের কারণ হবে । ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :

ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের চি হ্ন ও নির্দশনসমূহের মধ্যে রয়েছে জাবিয়া নামক শামের একটি গ্রাম ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া ও জাযীরায় তুর্কীদের (রুশদের) এবং রামাল্লায় রোমানদের (পাশ্চাত্য) আগমন । এ সময় সমগ্র বিশ্বে বহু যুদ্ধ সংঘটিত হবে যার ফলশ্রুতিতে শাম ধ্বংস হয়ে যাবে । অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,সর্বপ্রথম যে দেশ বা ভূ-খণ্ড ধবংস হবে তা হচ্ছে শাম । আর এ দেশটি ধবংস হবার কারণ হচ্ছে সেদেশে আবকা বাহিনী ,আসহাবের সেনাবাহিনী এবং সুফিয়ানীর সেনাদল -এ তিন বাহিনীর সমাবেশ (ও তাদের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ) । 141

দামেশকের ধবংস সংক্রান্ত ইমাম আলী (আ.)-এর হাদীস । তিনি বলেছেন : আমি অবশ্যই দামেশক ধবংস করব... এ কাজ আমার বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি করবে । বাহ্যত এ ধ্বংস হচ্ছে ঐ ধবংসযজ্ঞ যা সুফিযানী ,ইহুদী (ইসরাইল) ও রোমীয়দের (পাশ্চাত্য) বিরুদ্ধে ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক পরিচালিত আল কুদ্স মুক্ত করার মহাযুদ্ধের সময় সংঘটিত হবে ।

তবে সুফিয়ানী তার শাসনামলের শেষ নয় মাসে বেশ কয়েকটি বড় যুদ্ধ বাঁধাবে যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিরকীসীয়ায় তুর্কী (রুশজাতি) এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ,যা কিরকীসীয়ার মহাসমর বলে রেওয়ায়েতে আখ্যায়িত হয়েছে । অতঃপর সে ইরাকে ইয়েমেনী ও ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের ক্ষেত্রপ্রস্তুতকারী ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । উল্লেখ্য যে ,কতিপয় রেওয়ায়েত অনুসারে ইয়েমেনী ইরানীদের সাথে থাকবেন ।

পবিত্র মদীনা-ই মুনাওওয়ারায় সম্ভবত সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক সৈন্য থাকবে যারা হিজায সরকারের সেনাবাহিনীর পক্ষে মদীনা মুক্ত করার জন্য ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে ।

সুফিয়ানী হিজায ও ইরাকে পরাজয় বরণ করার পর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ অর্থাৎ পবিত্র আল কুদ্স বিজয়ের মহাযুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শাম অথবা ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন করবে ।

ওয়াদী ইয়াবিস (শুষ্ক উপত্যকা ) থেকে দামেশক পর্যন্ত

সুফিয়ানী যে তার আন্দোলন দামেশকের বাইরে সিরিয়া-জর্দান সীমান্তে অবস্থিত হাওরান বা দিরআ অঞ্চল থেকে শুরু করবে এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ প্রায় একই ;অবশ্য রেওয়ায়েতসমূহে তার আর্বিভাব ও অভ্যুত্থানের স্থানের নাম ওয়াদী ইয়াবিস ওয়া আসওয়াদ (শুষ্ক ও কালো উপত্যকা) বলা হয়েছে ।

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে  : কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দ-তনয় (হিন্দের বংশধর) ওয়াদী ইয়াবিস থেকে বিদ্রোহ করবে এবং সে হবে প্রশস্ত কাঁধের অধিকারী পুরুষ ;তার চেহারা হবে ভয়ঙ্কর এবং তার মাথা হবে প্রকাণ্ড । তার মুখমণ্ডলে বসন্তের দাগ থাকবে । তার মুখাবয়বের দিকে তাকালে মনে হবে যেন সে এক চক্ষুবিশিষ্ট । তার নাম হবে উসমান । তার পিতার নাম হবে আম্বাসাহ্ (উয়াইনাহ্)) । আর সে হবে আবু সুফিয়ানের বংশধর । ... সে অবশেষে নিরাপদ ও সুপেয় পানির দেশে পৌঁছে যাবে । অতঃপর সে ভাষণ দেয়ার জন্য সেখানকার মসজিদের মিম্বরে দণ্ডায়মান হবে । 142

পবিত্র কোরআনের কোন কোন তাফসীরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির অঞ্চল বলতে দামেশক ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।

ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে মুহাম্মদ ইবনে জাফর ইবনে আলী থেকে বর্ণিত হয়েছে :  সুফিয়ানী আবু সুফিয়ানের পুত্র ইয়াযীদের পুত্র খালেদের বংশধর হবে । সুফিয়ানী এমন এক ব্যক্তি যার মাথা হবে বৃহদাকার এবং তার মুখমণ্ডলে বসন্তের দাগ থাকবে । তার চোখের মধ্যে একটি সাদা বিন্দু থাকবে এবং দামেশক নগরীর অন্তর্গত একটি অঞ্চল যার নাম হবে ওয়াদী ইয়াবিস সেখান থেকে সাত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্রোহ করবে । এ সাত ব্যক্তির একজনের হাতে একটি পেঁচানো পতাকা থাকবে । 143

এ পাণ্ডুলিপির 74 পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে ,শামের পশ্চিমে আনাদারা নামক একটি গ্রাম থেকে সাত জন সহযোগীসহ সুফিয়ানী বিদ্রোহ করবে । আর এ গ্রন্থের 79 পৃষ্ঠায় আরতাত বিন মুনযির থেকে বর্ণিত হয়েছে : কুৎসিত চেহারার অধিকারী ও অভিশপ্ত এক ব্যক্তি বীসানের পূর্ব দিকে মান্দারুন থেকে একটি লাল রংয়ের উটের ওপর উপবিষ্ট অবস্থায় মাথায় একটি মুকুট পরে বিদ্রোহ করবে ।

ইবনে হাম্মাদ তাবেয়ীদের কাছ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন যেগুলো মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের হতে বর্ণিত বলা হয় নি । এসব রেওয়ায়েতে সুফিয়ানী ও তার আন্দোলন ও বিদ্রোহের সূচনা বা সূত্রপাত হিসাবে যে সব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো আসলে কল্প-কাহিনী ও রূপকথার সাথেই বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ । যেমন : তাকে স্বপ্নজগতে দেখা যাবে ,তখন তাকে বলা হবে যে , দাঁড়াও এবং সংগ্রাম কর । তার হাতে কাঠের তৈরি তিনটি লাঠি থাকবে । যে ব্যক্তিকেই সে তা দিয়ে আঘাত করবে তার মৃত্যু হবে অনিবার্য । 144

তবে অতিরঞ্জিত ও অস্বাভাবিক বিষয়াদি বর্ণনাকারী রেওয়ায়েতসমূহ বাদ দিলেও আরো এমন কিছু রেওয়ায়েত আছে যেগুলোয় সুফিয়ানীর আন্দোলন প্রচণ্ড ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে । তার আক্রমণের প্রচণ্ডতা শিয়া রাবীদের (হাদীস বর্ণনাকারীদের) নিকট একটি স্বীকৃত বিষয় । সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও উত্থানের সময় শিয়াদের করণীয় কি হবে -এতৎসংক্রান্ত বিষয়ে একজন রাবী ইমাম সাদিক (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ।

হুসাইন ইবনে আবিল আলা হাদরামী থেকে বর্ণিত : আবু আবদিল্লাহকে (ইমাম সাদিক) আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম : যখন সুফিয়ানী আবির্ভূত হবে তখন আমরা শিয়ারা কী করব ?তিনি বলেছিলেন : তখন শিয়া পুরুষরা তার কাছে নিজেদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখবে ,সে শিয়া নারী ও শিশুদের কোন ক্ষতি করবে না । আর যখন সে পাঁচ শহর অর্থাৎ শাম দেশের নগরীসমূহের ওপর নিজ আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে তখন তোমরা তোমাদের নেতার (ইমাম মাহ্দীর) দিকে হিজরত করবে (মুখ ফিরাবে) । 145

মনে হয় যে ,সবচেয়ে পাষণ্ড সুফিয়ানী হবে আবকা ও তার সমর্থকরা ;ইবনে হাম্মাদের বর্ণনায় উল্লিখিত বনি মারওয়ান বলতে এদেরকেই বুঝানো হয়েছে ।

ইবনে হাম্মাদ বলেছেন : সে মারওয়ানের ওপর বিজয়ী হয়ে তাকে হত্যা করবে ;অতঃপর সে মারওয়ানের বংশধরদেরকে তিন মাস ধরে হত্যা করবে । এরপর সে প্রাচ্যবাসীর (ইরানীদের) মোকাবিলা করার লক্ষ্যে কুফায় প্রবেশ করবে ।

কতিপয় রেওয়ায়েত হতে জানা যায় যে ,সুফিয়ানীর আবির্ভাবকালের প্রথম দিকে শিয়ারা তার প্রধান শত্রু বলে গণ্য হবে না ;বরং আবকা ও আসহাবের সমর্থকরা সুফিয়ানী ও শিয়া উভয়েরই শত্রু বলে গণ্য হবে ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : তোমাদের শত্রুদের থেকে তোমাদের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সুফিয়ানীই যথেষ্ট হবে । সে তোমাদের জন্য অন্যতম নিদর্শন হবে । ঐ ফাসেক আবির্ভূত হওয়ার দু মাসের মধ্যে অন্যদের মধ্য থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না ।

ইমাম বাকির (আ.)-এর কতিপয় সাহাবী তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন : ঐ সময় আমাদের নারী ও সন্তানদের ব্যাপারে আমাদে দায়িত্ব কী হবে ? ইমাম বললেন : তোমাদের পুরুষরা আত্মগোপন করবে । কারণ ,আমাদের অনুসারী শিয়ারা তাদের ওপর আক্রমণের আশংকা করবে । তবে তাদের নারীরা ইনশাল্লাহ্ তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকবে । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো : শিয়া পুরুষরা তার থেকে বাঁচতে কোথায় পলায়ন করবে ? ইমাম বললেন : যে কেউ তাদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে চাইবে সে যেন মদীনা ,মক্কা বা অন্য কোন শহরের দিকে পালিয়ে যায়... তোমরা বিশেষভাবে মক্কা অভিমুখে যাবে যা হবে তোমাদের একত্রিত হবার স্থান । আর এ ফিতনা নয় মাস অর্থাৎ নারীদের গর্ভধারণ কাল পরিমাণ স্থায়ী হবে এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তা এর চেয়ে অধিক কাল স্থায়ী হবে না । 146

এ রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,রমযান মাসে শামে শিয়াদের ওপর সুফিয়ানীর আক্রমণ সংঘটিত হবে । একইভাবে রেওয়ায়েতসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে ,এ অঞ্চলের ওপর তার কর্তৃত্ব এতটা শক্তিশালী ও নিরঙ্কুশ হবে যে ,সে সব অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকটের মোকাবিলায় সক্ষম হবে ।

কেবল সত্যান্বেষীরা ব্যতীত শামের জনগণ তার আনুগত্য করবে... । মহান আল্লাহ্ সত্যপন্থীদেরকে সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধ ও সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন । 147

কতিপয় রাবী এ রেওয়ায়েত থেকে এটিই বুঝেছেন যে ,লেবানন ও শামের শিয়ারা সুফিয়ানীর শাসনাধীন থাকবে না এবং তার আনুগত্যও করবে না । অবশ্য এটি সম্ভব হতে পারে এবং এতৎসংক্রান্ত ন্যূনতম দলিল হচ্ছে সুফিয়ানীর আদেশ মান্য করা থেকে শামের বেশ কিছু দল বা গোষ্ঠীর মুক্ত থাকা । কারণ ,শিয়া ও অশিয়া জনগোষ্ঠীসমূহ যারা মহান আল্লাহ্ কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে তারা ইরাক ও হিজাযে সুফিয়ানী কর্তৃক পরিচালিত সামরিক অভিযান ও আন্দোলনে যোগদান করা থেকে বিরত থাকবে । সম্ভাবনা রয়েছে বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থা ও পরিবেশের মধ্যে থাকার কারণেই সুফিয়ানীর শাসনাধীন অন্যান্য জনতার সাথে তাদের পার্থক্য থাকবে । বর্তমানে সিরিয়ার সাথে লেবাননের সম্পর্ক যেরূপ তদ্রূপ অবস্থার কারণে তারা এতটা স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকতে পারে ।

যা হোক সুফিয়ানী এ এলাকার ওপর তার আধিপত্য ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হবার পরপরই সীমান্তের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানসমূহ পরিচালনা করবে । যেমন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সুফিয়ানী এক বিশাল সেনাবাহিনী প্রস্তুত করবে ।

সুফিয়ানী তার সার্বিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা এবং সেনাশক্তি কেবল ইরাকের দিকেই নিয়োজিত করবে এবং তার সেনাবাহিনী কিরকীসীয়ার রণাঙ্গনে প্রবেশ করে সেখানে ভয়ানক যুদ্ধে লিপ্ত হবে । 148

কিরকীসীয়ার মহাসমর

সুফিয়ানী সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে সিরিয়া-ইরাক-তুরস্ক সীমান্তে অবস্থিত কিরকীসীয়ার প্রান্তরে যে যুদ্ধ সংঘটিত হবে তা সুফিয়ানীর আন্দোলনের মূল ধারার বহির্ভূত অর্থাৎ আবির্ভাবের যুগের ঘটনাবলীর বাইরের একটি ঘটনা বলেই মনে হয় । এ কারণেই যদিও সুফিয়ানীর ইরাক যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হলো সিরিয়া ও কুদ্স অভিমুখে ইরাকের ওপর দিয়ে অগ্রসরমান ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং ইরাকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ,কিন্তু ইরাক যাওয়ার পথে এক অদ্ভুত ঘটনার কারণে কিরকীসীয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং সে ঘটনাটি হচ্ছে ফোরাত নদীর গতিপথে অথবা এর নিকট একটি গুপ্তধন (বা খনি) আবিষ্কৃত হওয়া । একদল লোক এ গুপ্তধন কুক্ষিগত করার জন্য চেষ্টা করবে এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত হবে । তাদের মধ্য থেকে এক লক্ষ লোক নিহত হবে । তবে যুদ্ধরত কোন পক্ষই চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হবে না এবং ঐ গুপ্তধন বা খনির ওপর একক কর্তৃত্বও প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না ;বরং সকল পক্ষই এ থেকে হতাশ হয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ।

মুজামুল বুলদান গ্রন্থের বর্ণনানুসারে কিরকীসীয়া অঞ্চল হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র নগরী যা ফোরাত ও খাবূর নদীর সঙ্গমস্থলের অদূরে অবস্থিত এবং এ শহরের ধ্বংসাবশেষ সিরিয়ার দাইর যূর শহরের কাছে অবস্থিত । এ শহরটি সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের কাছে এবং সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত ।

কিরকীসীয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার মূল উদ্দেশ্য ,সুফিয়ানী ছাড়াও এ যুদ্ধের বিবদমান পক্ষসমূহ কে হবে এবং এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি কীভাবে ঘটবে এরূপ কতিপয় দিক অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য হওয়া সত্ত্বেও রেওয়ায়েতসমূহে এ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্ণিত হয়েছে ।

সমুদয় বৈশিষ্ট্যসমেত এ যুদ্ধের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সংক্রান্ত বিবরণও ঐ সব রেওয়ায়েতে এসেছে । যেমন নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি যা ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ কিরকীসীয়ায় (মাংসভুক পশু ও পাখিদের জন্য) খাদ্যে পরিপূর্ণ একটি দস্তরখান পাতবেন যার ঘোষণা আসমানী ফেরেশতা প্রদান করবেন এবং তিনি এ বলে আহবান জানাবেন : হে আকাশের পক্ষীকূল এবং পৃথিবীর জীবজন্তুকূল! অত্যাচারীদের মাংস ভক্ষণ করে পরিতৃপ্ত হওয়ার জন্য দ্রুত ছুটে এসো ।

কিরকীসীয়ার যুদ্ধক্ষেত্রকে মহান আল্লাহর দস্তরখান বলে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে এই যে ,অত্যাচারীদের পারস্পরিক সংঘর্ষ এবং পরস্পর কর্তৃক দুর্বল হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহর অন্যতম নির্ধারিত বিষয় যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে তাদের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করবে । আর এ কারণেই সে ইরাকে প্রবেশ করার আগেই কিরকীসীয়ার যুদ্ধে তার অনেক সৈন্যকে হারাবে । ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীরা তাকে পরাজিত করবে । অতঃপর কিরকীসীয়ার যুদ্ধে সুফিয়ানীর পরাজয় বরণের পর ইমাম মাহ্দী (আ.) ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তুর্কীদের (রুশজাতি) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন ।

রেওয়ায়েতের ভাষ্য অনুযায়ী কিরকীসীয়ার যুদ্ধক্ষেত্র হবে পানি ,উদ্ভিদ ও বৃক্ষবিহীন শুষ্ক মরুপ্রান্তর এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত সৈন্যদের লাশ দাফন করা হবে না অথবা লাশ দাফন করা সম্ভব হবে না । এ কারণেই আকাশের পাখি এবং ভূ-পৃষ্ঠের হিংস্র জীব-জন্তু উদরপূর্তি করে নিহত সৈন্যদের লাশ ভক্ষণ করবে । আর নিহত সৈন্যরাও হবে অত্যাচারী । কারণ তারা হবে অত্যাচারীদের অনুগত সৈন্য । অথবা তাদের মধ্যে উভয় পক্ষের অনেক অত্যাচারী সামরিক কর্মকর্তা এবং সমরনায়ক থাকবে ।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : অতঃপর সুফিয়ানী আবকার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে । সুফিয়ানী তাকে ,তার সঙ্গী-সাথীদের এবং আসহাবকে হত্যা করবে । তখন ইরাকে আক্রমণ করা ব্যতীত তার অন্য কোন লক্ষ্য থাকবে না । সে তার সেনাবাহিনীকে কিরকীসীয়ায় মোতায়েন করবে এবং সেখানে তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । এ যুদ্ধে এক লক্ষ লোক প্রাণ হারাবে এবং সুফিয়ানী প্রায় সত্তর হাজার সৈন্য কুফায় প্রেরণ করবে । 149

কতিপয় রেওয়ায়েতে নিহতদের সংখ্যা এক লক্ষ ষাট হাজার এবং আরো কতিপয় রেওয়ায়েতে নিহতদের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি উল্লিখিত হয়েছে । কারণ নিহতদের এক লক্ষ হবে অত্যাচারী সৈনিক আর এ বিষয়টি উপরিউক্ত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে । তবে অবশিষ্ট লাশ হবে সাধারণ সৈনিক ,এজেন্ট ও বঞ্চিত লোকদের ।

তবে বিতর্কিত গুপ্তধন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট হচ্ছে ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি । মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের পর্বত নির্গত হবে এবং একে কেন্দ্র করে এত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ বেঁধে যাবে যে ,প্রতি নয় ব্যক্তির মধ্যে সাত জনই নিহত হবে । অতঃপর যখন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে তখন এর নিকটবর্তী হয়ো না । 150

এই একই পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত হয়েছে : চতুর্থ ফিতনা আঠার বছর স্থায়ী হবে ;অতঃপর তা শেষ হবে এবং ঐ সময় ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পর্বত নির্গত হবে এবং জনগণ তা দখল করার জন্য পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে । এ যুদ্ধে প্রতি নয় জনের মধ্যে সাত জনই নিহত হবে ।

এ রেওয়ায়েতে বর্ণিত চতুর্থ ফিতনার অর্থ যদি মুসলমানদের ওপর পাশ্চাত্য ও অন্যান্য জাতির কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করা হয় ,তাহলে ঐ ফিতনা দীর্ঘস্থায়ী হবে । আর আজ প্রায় এক শতাব্দী গত হতে চলেছে । আর যদি এর লক্ষ্য শামের অভ্যন্তরীণ ফিতনা ও গোলযোগ হয়ে থাকে যা ফিলিস্তিনের ফিতনা থেকে উৎপত্তি লাভ করবে ,তাহলে এ দিক থেকে লেবাননের গৃহযুদ্ধ এ 18 বছরব্যাপী ফিতনার সূচনা হতে পারে ।

আর উল্লিখিত গুপ্তধন স্বর্ণ ও রৌপ্যের খনি হতে পারে যা সেখানে আবিষ্কৃত হবে এবং তিন রাষ্ট্র ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ ও গোলযোগের কারণ হবে । অথবা ঐ গুপ্তধন বা সম্পদ তেল বা অন্যান্য খনিজ দ্রব্যও হতে পারে । আমি শুনেছি যে ,কিরকীসীয়া অঞ্চল তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ ,এমনকি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চল হতে পারে । বর্তমানে কূপ খনন ও আনুষাঙ্গিক সন্ধান কার্য চালানো হচ্ছে এবং বেশ কিছু ইতিবাচক ফলাফলও পাওয়া গেছে । ... ঐ আল্লাহ্ই হচ্ছেন পবিত্র যাঁর হাতে আছে সকল বস্তুনিচয়ের সূক্ষ্ম পরিমাপ ও মালিকানা ।

তবে অধিকাংশ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে এ যুদ্ধে সুফিয়ানীর প্রতিপক্ষ হবে তুর্কীরা । কিন্তু এ ক্ষেত্রে তুর্কীরা বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে ?এ ক্ষেত্রে যা স্বাভাবিক এবং বাস্তবতার অধিক নিকটবর্তী বলে মনে হয় তা হচ্ছে এই যে ,যারা কিরকীসীয়ার যুদ্ধে সুফিয়ানীর প্রতিপক্ষ হবে তারা হবে তুর্কী ভাষাভাষী সেনাবাহিনী । কারণ এমন সম্পদকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হবে যা সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে অবস্থিত । তবে তৃতীয় পক্ষ যারা ইরাকে থাকবে তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং তাদের মধ্যে দু দলের উদ্ভব হবে ;এ দু দলের একটি হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইয়েমেনী ও ইরানীদের সমর্থক এবং অপর দলটি হবে সুফিয়ানীর সমর্থক । তবে এ ক্ষেত্রে এত বেশি দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান যেগুলো এ ক্ষেত্রে তুর্কী অর্থ রুশজাতি হওয়ার সম্ভাবনাকেই বেশি সমর্থন করে । বিশেষ করে ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলো স্পষ্ট স্মরণ করিয়ে দেয় যে ,সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও উত্থানের আগে কিরকীসীয়ার কাছে রবীয়াহ্ দ্বীপ অথবা দিয়ার বাকরে রুশজাতির আগমন হবে । আর ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলোয় উল্লিখিত হয়েছে যে ,সুফিয়ানী তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং এরপর হযরত মাহ্দী (আ.)-এর হাতে তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে । উল্লেখ্য যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রথম যে সেনাবাহিনীটি তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরণ করবেন তাদের হাতেই তুর্কীদের ধ্বংস সাধিত হবে । আর বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত জাযীরাহ্ বলতে বাহ্যত ঐ অঞ্চলকেই বোঝায় যা এ নামেই অভিহিত । উল্লেখ্য যে ,এ জাযীরায় সুফিয়ানীর আগেই তুর্কী ভাষাভাষী সেনাবাহিনীর আগমন হবে । আর জাযীরাহ্ শব্দটি অন্য কোন শব্দের সাথে যুক্ত না হয়েই রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত হয়েছে (যেমন তা জাযীরাতুল আরব আরব উপদ্বীপ নামে উল্লিখিত হয়নি ) । ঠিক একইভাবে রেওয়ায়েতসমূহের বিবরণ অনুসারে রামাল্লায় রোমান বাহিনীর আগমন বলতে ফিলিস্তিনের রামাল্লাকেই বোঝানো হয়েছে ।

হ্যাঁ ,খনি বা গুপ্তধনের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ যাতে মহানবী (সা.) মুসলমানদেরকে উক্ত সম্পদকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত হবে তাতে জড়াতে নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন তা করতলগত করার জন্য আগতরা একে অপরকে হত্যা করবে ,তা থেকে বোঝা যায় যে ,গুপ্তধনকে কেন্দ্র করে বিবদমান পক্ষগুলো হবে মুসলমান ;তবে এ বিষয়টি যুদ্ধে তুরস্ক-সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে না এবং রুশীয় তুর্কী অথবা তুর্কীদের সমর্থক কর্তৃক উক্ত সরকারকে সাহায্য করার সম্ভাবনাকেও বাতিল করে না । কারণ ,তুর্কীদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ভাষ্য জাযীরায় তাদের সেনাবাহিনীর আগমন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত হয়েছে । তবে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে যে সব রোমান ও মাগরিবীর (পাশ্চাত্য বা পশ্চিমাঞ্চলীয় অধিবাসীদের) কথা উল্লিখিত হয়েছে তারা কিরকীসীয়া যুদ্ধের অন্যতম বিবদমান পক্ষ হবে । আর ঐ সব নিদর্শনও হবে খুব অল্প ও দুর্বল । তবে অন্যদের বিরুদ্ধে সুফিয়ানীকে সাহায্য করার জন্য সম্ভবত রোমান ও মাগরিবীরা সেখানে উপস্থিত হবে ।

তবে সুফিয়ানীর বিরোধী প্রকৃত শক্তিগুলো যারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থক (ইয়েমেনী ও ইরানীরা) তারা কিরকীসীয়ার যুদ্ধে মোটেও অংশগ্রহণ করবে না । কারণ ,এ যুদ্ধ তাদের শত্রুদের মধ্যে সংঘটিত হবে । তবে রেওয়ায়েত হতে বাহ্যত বোঝা যায় ,তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হবে হিজাযে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাদের সাথে সম্পর্ক ,যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের জন্য চেষ্টা চালানো । উল্লেখ্য যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আন্দোলনের শুভ সূত্রপাত পবিত্র মক্কা নগরীতে হবে । তবে তাদের অংশগ্রহণ না করার কারণ সম্ভবত বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়াও হতে পারে । আমাদের দৃষ্টিতে এ পর্যায়ে (কিরকীসীয়ার যুদ্ধে) এ বিশ্বযুদ্ধের একটি অংশ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি । (আমরা এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব) ।

হযরত আলী (আ.) থেকে ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন : যখন সুফিয়ানীর সাঁজোয়া বাহিনী কুফার দিকে অগ্রসর হবে তখন সে একদল সৈন্যকে খোরাসানী বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করবে এবং তখন খোরাসানীরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সন্ধানে বের হবে । 151

সুফিয়ানী কর্তৃক ইরাক জবরদখল

রেওয়ায়েতসমূহের বক্তব্য অনুসারে সুফিয়ানীর জন্য ইরাক দখল একটি কৌশলগত ও তাৎক্ষণিক লক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে । তবে সে কিরকীসীয়ার যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হবে । এ যুদ্ধের পর সে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে । ইরাক আক্রমণ করার ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিপক্ষ থাকবে না ,এমনকি এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোও তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না ,যেহেতু যে তুর্কীদের বিরুদ্ধে কিরকীসীয়ায় সুফিয়ানী যুদ্ধ করবে তাদের মূল লক্ষ্যই হবে কিরকীসীয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ করায়ত্ত করা সেহেতু ইরাকে তাদের তেমন কোন প্রয়োজনই থাকবে না ।

সুফিয়ানীর একমাত্র বিরোধী শক্তি হবে ইয়েমেনী ও খোরাসানীরা অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা । এ বিষয়টি থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,ইরাকে সুফিয়ানীর যুদ্ধ মূলত ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হবে ।

রেওয়ায়েতসমূহ অনুসারে ইরাকের জনগণ দু অথবা তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে । ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের সমর্থক ,সুফিয়ানীর সমর্থক এবং তৃতীয় গোষ্ঠী হবে শাইসাবানীর নেতৃত্বাধীন । জাবির ইবনে জুফী থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : আমি ইমাম বাকির (আ.)-কে সুফিয়ানীর ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম । তখন তিনি বলেছিলেন : ইরাকে শাইসাবানীর আবির্ভাবের আগে সুফিয়ানী আবির্ভূত হবে না । মাটি থেকে ঝরনার পানি যেভাবে ফেটে বের হয় ঠিক সেভাবেই সে আবির্ভূত হবে এবং তোমাদের দূতদেরকে হত্যা করবে । এর পরই তোমরা সুফিয়ানীর উত্থান এবং আল কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় থাকবে । 152

শাইসাবানী বলতে আব্বাসীয় বংশোদ্ভূত কোন ব্যক্তি অথবা আহলে বাইতের কোন শত্রুকে বোঝানো হয়েছে । কারণ ইমামরা আব্বাসীয়দেরকে বনী শাইসাবান বলেছেন ।

শাইসাবানী একজন অপরাধী বা অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম হবে যা আহলে বাইতের ইমামরা তাঁদের শত্রুকে ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝানোর জন্য উল্লেখ করতেন । তবে অভিধানে শাইসাবান হচ্ছে ইবলীসের অন্যতম নাম । ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী খোরাসানী এবং তাদের সমর্থকদের হাতে ইরাকের শাসনকর্তৃত্ব চলে যাবার পর শাইসাবানী ইরাকে বিদ্রোহ করবে । এখানে স্মর্তব্য যে ,পূর্ববর্তী কোন এক পর্যায়ে ইরাকে খোরাসানীদের প্রবেশের বিষয়টি রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে ।

যাহোক ,ইরাকে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এমনই হবে যে ,তা সেদেশে সুফিয়ানী বাহিনীর প্রবেশের উপযোগী ও অনুকূল হবে এবং সে ইরাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে না । আর তখন ইয়ামানী ও খোরাসানীরা হিজাযে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শুভ আবির্ভাবের ঘটনাবলী নিয়ে মশগুল থাকবে । আর তাদের সেনাবাহিনী ও সেনাশক্তিসমূহের (প্রবেশের) অল্প আগেই সুফিয়ানী বাহিনী ইরাকে প্রবেশ করবে ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : নিঃসন্দেহে অমুক রাজবংশ রাজত্ব করতে থাকবে এবং যখন তারা শাসনক্ষমতা লাভ করবে তখন তাদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিরোধ দেখা দেবে এবং তাদের রাজত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তাদের ক্ষমতা লোপ পাবে । অবশেষে তাদের বিরুদ্ধে খোরাসানী ও সুফিয়ানী যুদ্ধ করবে -একজন পূর্ব থেকে এবং আরেকজন পশ্চিম থেকে । তারা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দ্রুতগামী অশ্বের ন্যায় কুফা অভিমুখে অগ্রসর হবে । এ দু জনের হাতে অমুক রাজবংশ ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে । আর তারা তাদের কাউকেই জীবিত রাখবে না । 153

অমুকের বংশধররা বলতে এখানে সম্ভবত ইরাকের ওপর কর্তৃত্বশীল শাইসাবানীর বংশ অথবা অন্য কোন শাইসাবানের বংশধরও বুঝানো হতে পারে ।

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত : আমি যেন সুফিয়ানীকে (অথবা তার বন্ধুকে) দেখতে পাচ্ছি যে ,সে কুফায় তোমাদের শ্যামল সবুজ জমিগুলোয় অবস্থান নিয়েছে এবং তার পক্ষ থেকে এক আহবানকারী উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করছে যে ,যে কেউ আলীর অনুসারীদের মাথা এনে উপস্থিত করবে তাকেই এক হাজার দিরহাম পুরস্কার দেয়া হবে । এ সময় প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে আক্রমণ করবে এবং বলবে যে ,এ ব্যক্তি তাদেরই একজন । এভাবে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা শুরু হবে এবং হাজার দিরহামের পুরস্কার দেযা হবে । কিন্তু সেসময়ে কেবল জারজরা ব্যতীত আর কেউ তোমাদের ওপর শাসন করবে না । ... আমি যেন একজন নিকাব পরিহিত ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছি । আমি তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম : ঐ নিকাব পরিহিত লোকটি কে ? ইমাম বলেছিলেন : সে তোমাদের মধ্যকারই এক ব্যক্তি হবে যে তোমাদের মতোই কথা বলবে । সে তার মুখমণ্ডল নিকাব দিয়ে ঢেকে রাখবে এবং তোমাদের যাবতীয় বিষয় ও তথ্য তার নখদর্পনে থাকবে এবং সে তোমাদের ভালোভাবে চিনবে অথচ তোমরা তাকে চিনবে না । সে তোমাদের প্রত্যেকের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে তোমাদের দুর্নাম করবে । তবে সে হবে জারজ । 154

ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতেও বর্ণিত আছে :

কুফায় প্রবেশ করে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র বংশধরদের অনুসারীদের হত্যা করা পর্যন্ত সুফিয়ানীর সাঁজোয়া বাহিনী আঁধার রাত এবং প্রলয়ঙ্কারী প্লাবনের মতো যা কিছু পাবে তা ধ্বংস করে ফেলবে । অতঃপর তারা চতুর্দিকে খোরাসানীদেরকে খুঁজতে থাকবে অথচ খোরাসানীরা তখন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সন্ধান করতে থাকবে ,তাঁকে ডাকতে থাকবে এবং তাঁর সাহায্যার্থে দ্রুত অগ্রসর হবে । 155

সুফিয়ানী বাহিনী ইরাক যুদ্ধে বিশেষ করে শিয়াদের ওপর যে সব জঘন্য অপরাধ করবে সেগুলো বিস্তারিত বিবরণ এ সব রেওয়ায়েতে এসেছে । ইবনে মাসউদ থেকে ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন : সুফিয়ানী যখন ফোরাত নদী অতিক্রম করে হাকার কুফা নামক একটি স্থানে এসে পৌঁছবে তখন মহান আল্লাহ্ তার ঈমান পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দেবেন । তখন সে অস্ত্রধারী সত্তর হাজার সৈন্যসমেত দুজাইল (ছোট দজলা) নামক একটি নদী অভিমুখে যাত্রা করবে । এদের চেয়েও অধিক সংখ্যক ব্যক্তি থাকবে যারা সোনালী প্রাসাদ পদানত করবে । তারা প্রতিরোধকারীদেরকে হত্যা করবে এবং গর্ভে পুত্রসন্তান থাকতে পারে -এ ধারণার বশবর্তী হয়ে গর্ভবতী নারীদের পেট চিড়ে ফেলবে । একদল কুরাইশ বংশীয়া রমণী দজলা নদীর তীরে জাহাজের যাত্রী ও পথিকদের কাছে আবেদন করবে যাতে করে তারা তাদেরকে তাদের সাথে সওয়ারী পশুগুলোর ওপর বসিয়ে নিয়ে যায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয় । তবে বনি হাশিমের সাথে তাদের শত্রুতা থাকার কারণে তারা তাদেরকে নিজেদের সাথে নেবে না । 156

অস্ত্রধারী সত্তর হাজার সৈন্যসমেত -এ বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে এই যে ,তাদের অস্ত্র ও হাতিয়ারসমূহের ধরণ অন্যান্য সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও হাতিয়ার থেকে ভিন্ন হবে এবং যে সোনালী প্রাসাদের ওপর তারা কর্তৃত্ব স্থাপন করবে মনে হচ্ছে যে ,তা হবে গুপ্তধন বা খনির স্থান অথবা এমন কোন প্রাসাদ যা দজলা বা দুজাইল নদীর পাশে অবস্থিত হবে । আর কুরাইশ রমণীরা বলতে আহলে বাইতের বংশধর নারীরা হবে ।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন : সুফিয়ানীর সেনাবাহিনী কুফায় প্রবেশ করে কাউকে জীবিত রাখবে না বরং হত্যা করবে ;তাদের মধ্যে হত্যা করার প্রবণতা এতটা বিদ্যমান থাকবে যে ,যখন তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি অতি মূল্যবান ও বিশাল ধনরত্ন খুঁজে পাবে তখনও সে সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপই করবে না । অথচ কোন শিশু দেখলেও তাকে হত্যা করবে । 157

যে সব স্থানের কথা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ছাড়াও রেওয়ায়েতসমূহে আরো কিছু স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে সুফিয়ানী বাহিনী বিপুল সংখ্যায় সমবেত হবে । যেমন যাওরা (বাগদাদ) ,আনবার ,সারাত ,ফারুক ও রাওহা । ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : সে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার সৈন্যকে কুফা অভিমুখে প্রেরণ করবে এবং তারা রাওহা এবং ফারুক নামক স্থানে আগমন করবে । সেখান থেকে ষাট হাজার সৈন্য কুফা অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং নুখাইলাস্থ হযরত হুদ (আ.)-এর সমাধিস্থলে এসে উপস্থিত হবে । 158

সাফায়েরীনী হাম্বলী প্রণীত লাওয়ায়েহুল আনওয়ার আল বাহীআহ্ নামক গ্রন্থে সুফিয়ানীর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে : সে তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তাদের ওপর জয়ী হবে । তখন সে পৃথিবীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে এবং বাগদাদে প্রবেশ করে সেখানকার একদল অধিবাসীকে হত্যা করবে ।

সুফিয়ানীর ইরাক আক্রমণ হবে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক এবং সে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অনুসারীদের হত্যা করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সফল হবে । সে ইরাক সরকারের পক্ষ থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে না ,এমনকি শিয়াদের পক্ষ থেকেও কোন প্রতিরোধ পরিলক্ষিত হবে না । তবে হাদীসে একজন অনারব ব্যক্তির ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে ,সে ক্ষুদ্র ও নিরস্ত্র একদল লোক নিয়ে সুফিয়ানী বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং সুফিয়ানী বাহিনী তাকে হত্যা করবে :

তখন কুফার অধিবাসী অনারব এক ব্যক্তি একটি দুর্বল দল সাথে নিয়ে সুফিয়ানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং সুফিয়ানী বাহিনীর সেনাপতি তাকে হীরা ও কুফার মাঝখানে হত্যা করবে । 159

আমরা শীঘ্রই ইবনে হাম্মাদের যে রেওয়ায়েতে স্পষ্ট উল্লিখিত হয়েছে যে , তারা নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় লোক হবে সে রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করব । তবে সুফিয়ানীর ইরাক আক্রমণ তার দ্বিতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্থাৎ ইরাকে তার পূর্ণ কর্তৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে বাস্তবায়ন করতে পারবে না । বরং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইরাক অভিমুখে দ্রুত অগ্রসরমান খোরাসানী ও ইয়ামেনী (ইমাম মাহ্দীর আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী) সেনাবাহিনীদ্বয়ের অগ্রসর হওয়ার সংবাদ সুফিয়ানী বাহিনীর কাছে এসে পৌঁছবে । এ সংবাদ পাওয়ার পর তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং খোরাসানী ও ইয়েমেনী বাহিনীদ্বয়ের মোকাবিলায় পশ্চাদপসরণ করবে এবং তাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকবে । তবে ইরাকের গুটিকতক স্থানে খোরাসানী ও ইয়ামানী বাহিনীদ্বয়ের সাথে তাদের সংঘর্ষ হবে এবং তারা সেগুলোয় পরাজিত হবে ।

অধিকতর শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে বলা যায় যে ,সুফিয়ানী তার এ সেনাশক্তি ইরাক থেকে প্রত্যাহার করবে এবং সে তার ধারণা মোতাবেক পবিত্র মক্কা নগরীতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর উত্থান ও আন্দোলনের অবসান ঘটাতে তার সেনাবাহিনীর পুরোটিকেই অথবা একটি বড় অংশকে হিজাযে মোতায়েন করবে । কারণ ,কতিপয় রেওয়ায়েতে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেবার জন্য সুফিয়ানী হিজাযে যে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে তা হবে ইরাক থেকে প্রত্যাহারকৃত তার সেনাবাহিনী । আরো কিছু রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,সে ঐ সেনাবাহিনী শাম থেকে হিজাযে প্রেরণ করবে । তবে উক্ত সেনাবাহিনীর এক অংশ শাম থেকে এবং আরেক অংশ ইরাক থেকেও প্রেরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত : সুফিয়ানী সত্তর হাজার সৈন্য কুফায় প্রেরণ করে সেখানকার অধিবাসীদেরকে হত্যা করে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে বা বন্দী করে অশেষ দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের সম্মুখীন করবে । আর তখনই খোরাসান থেকে কালো পতাকাধারী সেনাদল ইরাক অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং দ্রুতগতিতে একের পর এক গন্তব্যসমূহ অতিক্রম করবে এবং তাদের সাথে আল কায়েম আল মাহ্দীর বেশ কিছু সংখ্যক বিশেষ সঙ্গীও থাকবে । 160