ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)2%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 87381 / ডাউনলোড: 10547
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

আবির্ভাবের যুগে মিশরের ঘটনাপ্রবাহ

মিশরের ঘটনাবলী সংক্রান্ত বেশ কিছু সংখ্যক হাদীস বিদ্যমান । এতৎসংক্রান্ত প্রথম রেওয়ায়েতসমূহ হচ্ছে মুসলমানদের হাতে মিশর বিজয় সংক্রান্ত মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ সম্বলিত রেওয়ায়েতসমূহ । এরপর ফাতেমীয় বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহে মিশরের ওপর মাগরিবীদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ এবং সবশেষে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলী সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ ।

কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলী মিশরে ফাতেমীয় রাষ্ট্র ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠার ঘটনাবলীর সাথে মিশ্রিত হয়ে হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে । কারণ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে মিশরে মাগরিবী সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে ।

আর তা স্পষ্ট করে চি হ্নিতকরণের পন্থা হচ্ছে ঐ রেওয়ায়েত যা আবির্ভাবের যুগের সাথে মিশরে মাগরিবী সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা নির্দেশক অথবা মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন কোন ঘটনা ,যেমন সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও অভিযান এবং এ ধরনের ঘটনার সাথেও সংশ্লিষ্টতা নির্দেশ করে ।

সূক্ষ্ম আলোচনা-পর্যালোচনা করে আমরা কতিপয় রেওয়ায়েতের সন্ধান পাই যেগুলোয় মিশরে এমন সব ঘটনার কথা উল্লিখিত হয়েছে যেগুলো নিঃসন্দেহে অথবা শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলীর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হতে পারে ।

এসব রেওয়ায়েতের মধ্যে মিশরের জনগণের হাতে সে দেশের শাসনকর্তার নিহত হওয়া সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বিদ্যমান । এ ঘটনাটি যা বিশারাতুল ইসলাম গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় শেখ মুফীদের কিতাব আল ইরশাদ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে তা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের একটি নিদর্শন হিসাবে বর্ণিত ও গণ্য ।

একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা যা আমাদের সমসাময়িক যুগে জনগণের মাঝে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে এবং তা হলো যে , মিশরবাসীরা তাদের নেতাদেরকে হত্যা করবে এবং নেতাদের (সাদাতের) দেশের ওপর দাসদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে ১৮৯

আর জনগণ এ কথাকে আনওয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ডের সাথে মিলিয়ে ফেলে যা আসলেই ভুল । কারণ এ সব রেওয়ায়েতে সাদাত শব্দের অর্থ নেতৃবর্গ এবং তা কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম নয় । আর মিশরীয় শাসনকর্তার হত্যা -যা হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম নিদর্শন তার পরপরই ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হবেন । ঠিক তেমনি এ রেওয়ায়েত মিশরে এক বা একাধিক সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের বিষয়টিও নিশ্চিত করে । আর অনুপ্রবেশকারী সেনাবাহিনী পাশ্চাত্য সামরিক বাহিনী অথবা মাগরিবী বাহিনীও হতে পারে যা আমরা শীঘ্র বর্ণনা করব । কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : মিশরের শাসনকর্তার নিহত হওয়া শামবাসীদের হাতে সে দেশের শাসনকর্তার হত্যাকাণ্ডেরই সমসাময়িক হবে । আর ঠিক একইভাবে বিশারাতুল ইসলাম গ্রন্থের ১৮৫ পৃষ্ঠায় ইবনে হাজর প্রণীত আল কওলুল মুখতাসার গ্রন্থের উদ্ধৃতিসহ বর্ণিত হয়েছে : ষোলতম বিষয় : তাঁর (ইমাম মাহ্দীর) আগে শামদেশের শাসনকর্তা এবং মিশরের রাষ্ট্রনায়ক নিহত হবে ।

মিশরের শাসনকর্তা বা রাষ্ট্রনায়কের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত রেওয়ায়েত এবং যে রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,মিশর থেকে একজন বিপ্লবী নেতা সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও অভিযানের আগে আবির্ভূত হবেন সেই রেওয়ায়েতের মাঝে এক ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে ।

বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে : সুফিয়ানীর আগে মিশরী ও ইয়েমেনী আন্দোলন ও বিপ্লব করবেন । ১৯০

আর এ মিশরীয় ব্যক্তি সামরিক কর্মকর্তাদের নেতা অর্থাৎ সেনাপ্রধান হতে পারেন যিনি কতিপয় রেওয়ায়েত মোতাবেক মিশরে একটি আন্দোলনের সূত্রপাত করবেন এবং যুদ্ধের ঘোষণা দেবেন ।

মিশরে সেনাবাহিনীর অধিনায়কদের অধিনায়ক অর্থাৎ সেনাপ্রধান বিপ্লব ও অভ্যুত্থান ঘটাবেন এবং বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্যকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে সমরাভিযানে প্রেরণ করবেন ।

আরেকটি রেওয়ায়েতে এ বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে ,পাশ্চাত্য বাহিনীর অনুপ্রবেশের আগে তিনি জনগণকে মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের দিকে আহবান জানাবেন ।

পাশ্চাত্য মিশরে আক্রমণ ও আগ্রাসন চালাবে । যখনই তাদের আগমন হবে তখনই সুফিয়ানীর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে । আর এর আগে এক ব্যক্তি জনগণকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের দিকে আহবান জানাবেন । ১৯১

তবে মিশরীয় ব্যক্তিটি সেনাবাহিনীর অধিনায়কদের অধিনায়ক এবং যে ব্যক্তি জনগণকে মহানবীর আহলে বাইতের দিকে আহবান জানাবেন তাঁরা একজন না হয়ে তিন ব্যক্তি হবেন ।

যাহোক এ সব রেওয়ায়েতে মোটামুটিভাবে মিশরে একটি ইসলামী গণ-আন্দোলন ও ইসলামী বিপ্লবের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে যায় যা হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী । অথবা মিশরে ন্যূনতম হলেও শক্তিশালী ইসলামী পরিবেশের কথাও এ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে । এ সময় মিশরে একটি অভ্যন্তরীণ বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে যা বহির্বিশ্বে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধ ও সন্ধির সাথেই সংশ্লিষ্ট থাকবে ।

আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে মিশরের চারিদিক ও বিভিন্ন এলাকার ওপর কিবতীদের (দাসদের) আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে । কারণ আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিদর্শনাদি বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : মিশরের চারপাশে কিবতীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে । ১৯২

এর অর্থ এও হতে পারে যা ইবনে হাম্মাদ তাঁর হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে হযরত আবু যার (রা.) থেকে রেওয়ায়েত করেছেন : মিশর থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিদায় নেবে । খারিজাহ্ বলেন : আমি হযরত আবু যারকে বললাম : ঐ সময় যখন মিশর থেকে নিরাপত্তা বিদায় নেবে তখন এমন কোন নেতা নেই যে ,সে তা সেদেশে আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে ? তিনি বললেন : না । বরং মিশরের সার্বিক (প্রশাসনিক ,সামাজিক ও অর্থনৈতিক) ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে । ১৯৩ আর কা ব থেকে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ : মিশর উটের বিষ্ঠার মতো ভেঙে যাবে ।

মোটকথা ,মিশরের কিবতীরা বিদ্রোহ করবে এবং সে দেশে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে । তারা মিশর সরকারকে অমান্য করে সে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে । আর এ কারণেই মিশরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে । আর স্বভাবতই এ কিবতী সম্প্রদায়ের এ বিদ্রোহ বাইরে থেকে মুসলমানদের শত্রুদের প্ররোচনায়ই সংঘটিত হবে । কারণ বিদেশী শক্তির সাহায্য ও উস্কানি ব্যতীত মুসলমানদের বিরুদ্ধে কিবতী সম্প্রদায়ের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ ও আন্দোলন পরিচালিত হওয়ার পূর্ব নজীর ইতিহাসে পাওয়া যায় না । যেমন বহিঃশক্তির সাহায্য ও উস্কানিতেই ক্রুসেড যুদ্ধ চলাকালে অথবা বিগত শতাব্দীগুলোতে কিবতীদের ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী বিদ্রোহ ও অপতৎপরতার নজীর পাওয়া যায় । কিন্তু উল্লিখিত রেওয়ায়েতে কিবতী সম্প্রদায়ের উপরিউক্ত বিদ্রোহের সময়কালের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না । তবে হযরত হুযাইফাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত কতিপয় রেওয়ায়েত বিদ্যমান । যেমন : বসরা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত মিশর বিরান ও ধ্বংস হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে । ১৯৪

আর বাহ্যত আবির্ভাবের যুগে বসরা নগরীর প্রতিশ্রুত ধ্বংস ,ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের রাষ্ট্র ও প্রশাসন কায়েম হওয়ার পরে অথবা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বছরে সুফিয়ানী কর্তৃক ইরাক দখল করার পরপরই সংঘটিত হবে ।

রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে মিশরে মাগরিবী সেনাবাহিনীর প্রবেশ সংক্রান্ত হাদীস বিদ্যমান । মুহাদ্দিস ও লেখকরা সাধারণত এ ঘটনাকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন । এ রেওয়ায়েত ও অন্যান্য রেওয়ায়েতে মাগরিব শব্দের অর্থ হচ্ছে ইসলামী আল মাগরিব অঞ্চল যার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মরক্কো ,আলজেরিয়া ,লিবিয়া ও তিউনিসিয়া । তবে আমি যতদূর সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহ নিয়ে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণা করেছি সেগুলোর মধ্যে কোন রেওয়ায়েত পাইনি যা স্পষ্টভঅবে এ অর্থ নির্দেশ করে । বরং আমি দেখতে পেয়েছি যে ,মিশরে ফাতেমীয়দের বিপ্লবের সময় সে দেশে মাগরিবী বাহিনীসমূহের অনুপ্রবেশের ঘটনার সাথেই এ সব রেওয়ায়েত মিলে যায় । তবে শেখ তূসীর গাইবাত গ্রন্থের ২৭৮ পৃষ্ঠায় একটি রেওয়ায়েত পেয়েছি । উক্ত রেওয়ায়েতে মাগরিববাসী নয় ,বরং পাশ্চাত্যবাসীদের কথা উল্লেখ আছে । আর এখানে উল্লেখ্য যে ,এ গ্রন্থটি (গাইবাত) সবচেয়ে প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ও সূত্রসমূহের অন্তর্ভুক্ত । বিহারুল আনওয়ার বিশারাতুল ইসলাম নামক গ্রন্থদ্বয়ের লেখকরাও তাঁর থেকে রেওয়ায়েত করেছেন । তবে এ দু জন ছাড়া অন্যরা ভুলক্রমে গারব (পাশ্চাত্য)-এর স্থলে মাগরিব (উপরিউক্ত চারটি দেশ) শব্দ উল্লেখ করেছেন ।

দামেশকে সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও বিপ্লবের অল্প কিছু আগে মিশরে পাশ্চাত্যের অনুপ্রবেশের সময়কাল এ রেওয়ায়েতে স্পষ্ট করা হয়েছে । আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) কর্তৃক বর্ণিত দীর্ঘ একটি রেওয়ায়েতের এক অংশে বলা হয়েছে : সর্বশেষ যুগে তোমাদের নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে যার কতগুলো নিদর্শন থাকবে... পাশ্চাত্য মিশরের দিকে অগ্রসর হবে (সে দেশ দখল করার জন্য) । যখনই তারা মিশরে প্রবেশ করবে তখনই দামেশকে সুফিয়ানীর প্রশাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ।

এটি অসম্ভব নয় যে ,শেখ তূসী (রহ.) [মৃত্যু ৪৬০ হি.]-এর রেওয়ায়েতটি এমন রেওয়ায়েতের উৎসমূল যা তাঁর পরবর্তী রাবীরা বর্ণনা করেছেন এবং তাঁরা গারব (পাশ্চাত্য)-কে ভুলবশত মাগরিব বলে থাকতে পারেন । তবে আমরা একটি ব্যাপারে অধিকতর গুরুত্বারোপ করছি ,আর তা হলো যে ,মিশরে পাশ্চাত্য বা মাগরিবী বাহিনীসমূহের অনুপ্রবেশ এমন এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হবে যা মিশরে সংঘটিত হবে এবং তা সে দেশে পাশ্চাত্য বা মাগরিবী বাহিনীসমূহের সামরিক অভিযান চালানোর কারণ হবে । তাই মনে হচ্ছে যে ,এ সব সেনাবাহিনী ইসলামবিরোধী হবে এবং মিশরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে । তাই তারা মিশরে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে এবং তারা যদি মিশরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় তাহলে তা হবে দামেশকে সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থান এবং সে দেশের ওপর তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নিদর্শনস্বরূপ । যেহেতু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কয়েক মাস আগে সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও উত্থান হবে তাই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বছরে অথবা এর কাছাকাছি সময়ে মিশরে পাশ্চাত্য বা মাগরিবী বাহিনীসমূহের আগমন হবে ।

কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ,সুফিয়ানী মিশরবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে এবং সে মিশরে প্রবেশ করবে । সেখানে সে চার মাস জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করবে । তবে সুফিয়ানীর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে এ রেওয়ায়েতের সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবার অধিকতর সম্ভাবনা বিদ্যমান । কারণ প্রথম সারির হাদীসগ্রন্থ ও সূত্রসমূহে এ ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত নেই । কতিপয় রেওয়ায়েতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তদনুযায়ী সুফিয়ানী দামেশকে যে ব্যক্তিকে হত্যা করবে সে হবে আবকা । এ আবকা হবে মিশরের অধিবাসী অথবা মিশরের সাথে তার (রাজনৈতিক) সম্পর্ক থাকবে । তবে মহান আল্লাহ্ই (এ সব ব্যাপারে) জ্ঞাত ।

এ প্রসঙ্গে আরো একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে : হযরত মাহ্দী (আ.) মিশরকে তাঁর মিম্বার (প্রচারকেন্দ্র) হিসাবে মনোনীত করবেন । আর হযরত আলী (আ.) থেকে আবায়াহ্ আল আসাদী কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতে এ বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে । তিনি বলেছেন : আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-কে অভিযোগ করে বলতে শুনেছি আর আমি তখন তাঁর কাছেই দণ্ডায়মান ছিলাম : আমি মিশরে একটি মিম্বার স্থাপন করব এবং দামেশককে ধ্বংস করব । আমি আরবীয় নগর থেকে ইহুদী ও নাসারাদেরকে বিতাড়িত করব এবং এ লাঠি দিয়ে আরবদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব । আবায়াহ্ বলেন : আমি বললাম : আপনি এমনভাবে এ সব কথা বলছেন যেন আপনি মৃত্যুর পর জীবিত হবেন ? তিনি বলেছিলেন : হে আবায়াহ্! এটি অসম্ভব । তুমি ভুল বলছ । আমার বংশধর এক ব্যক্তি (ইমাম মাহ্দী) এ ধরনের কাজ করবে । ১৯৫

তখন (ইমাম মাহ্দী ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা) মিশরের উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং তিনি সে দেশের মিম্বারে আরোহণ করে মিশরবাসীদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন । পৃথিবী ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়বিচারের দ্বারা আনন্দ ও সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে এবং সবুজ-শ্যামল হয়ে যাবে । আকাশ থেকে মহান আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকবে এবং গাছপালা ফল দান করবে । ভূ-পৃষ্ঠের ওপর বৃক্ষ ও উদ্ভিদসমূহ জন্মাবে । বিশ্ববাসীর সামনে পৃথিবী পুষ্প ও উদ্ভিদ দিয়ে নিজেকে সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করবে । বন্য পশুগুলো নিরাপদে বিচরণ করবে এমনভাবে যে ,সেগুলো ভূ-পৃষ্ঠের ওপর সড়ক ও পথসমূহে গৃহপালিত পশুর মতো চড়ে বেড়াবে । মুমিনদের অন্তঃকরণসমূহে জ্ঞানের আলো এমনভাবে প্রতিফলিত হবে যে ,কোন মুমিনই তার জ্ঞানী ভাইয়ের কাছে জ্ঞান আহরণের জন্য মুখাপেক্ষী হবে না । আর সেদিন নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করবে । আয়াতটি হলো : মহান আল্লাহ্ অবারিত দানের মাধ্যমে সবাইকে অমুখাপেক্ষী ও নিরভাব করবেন । ১৯৬

এ দু রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্ব-ইসলামী সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সমগ্র বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ও ধর্ম প্রচারের কেন্দ্র হিসাবে মিশরের স্বীকৃত অবস্থান থাকবে । বিশেষ করে আমি মিশরে একটি মিম্বার স্থাপন করব এবং তখন তারা মিশরের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন এবং তিনি সে দেশের মিম্বারে আরোহণ করবেন অর্থাৎ হযরত মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা মিশরে যাবেন ,তবে তা সে দেশ দখল বা সে দেশে তাঁর শাসনকর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয় ;বরং মিশরের জনগণই ইমাম ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে । এ কারণেই তিনি মিশরকে তাঁর বক্তৃতার মিম্বার হিসাবে মনোনীত করবেন যাতে করে তিনি মিশরের জনগণ ও সমগ্র বিশ্বাবাসীর কাছে তাঁর বাণী প্রেরণ করতে সক্ষম হন । আর তাঁর প্রপিতামহ আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) ঠিক এ বিষয়েরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । আর যেহেতু মিশর বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তাঁর বাণী প্রচারের কেন্দ্রস্থল হবে তাই এ বিষয়টি মুসলমানদের জ্ঞানগত পর্যায়ের সাথে মোটেও অসঙ্গতিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক হবে না -যা তারা ঐ যুগে অর্জন করবে । আর উক্ত রেওয়ায়েত এ বিষয়টিই নির্দেশ করে । কারণ জ্ঞান হচ্ছে আপেক্ষিক ব্যাপার ।

এ সব রেওয়ায়েতের মধ্যে এ হাদীসটিও অন্তর্ভুক্ত যাতে বলা হয়েছে যে ,মিশরের দু টি পিরামিডের মধ্যে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বেশ কিছু গুপ্তধন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য পুঞ্জিভূত আছে । এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত শেখ সাদূক (রহ.)-এর কামালুদ্দীন নামক গ্রন্থের (পৃ. ৫-৫২৪) মতো প্রথম সারির গ্রন্থ ও সূত্রসমূহে বর্ণিত হয়েছে । সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের বংশধর আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ শারানী থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে মুহাম্মদ ইবনে কাসিম মিশরী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,আহমাদ ইবনে তোলূনের পুত্র এক বছরের জন্য এক হাজার শ্রমিককে পিরামিডের দরজা খুঁজে বের করার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন । তারা অবশেষে একটি মর্মর পাথরের সন্ধান পেয়েছিল যার পিছনে একটি ইমারত ছিল । তারা ঐ পাথরটি নষ্ট করতে পারেনি । তবে হাবাশার একজন খ্রিস্টান পাদ্রী মিশরের এক ফিরআউনের ভাষায় পাথরের ওপর লেখাগুলো পড়েছিলেন । পাথরে লেখা ছিল : আমি কয়েকটি পিরামিড ও নির্মাণ করেছি এবং এ দু টি পিরামিডও আমি নির্মাণ করে আমার ধন-সম্পদ এর ভিতরে গচ্ছিত রেখেছি । ইবনে তোলূন তখন বলেছিলেন : কেবল মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের কায়েম (আল মাহ্দী) ব্যতীত আর কোন ব্যক্তিই এ গুপ্ত ও গচ্ছিত সম্পদ খুঁজে বের করার পথ সম্পর্কে জ্ঞাত নয় । এরপর ঐ প্রস্তর নির্মিত স্ল্যাবটি এর পূর্ব স্থানে রেখে দেয়া হলো । এ রেওয়ায়েতে বেশ কিছু দুর্বল দিক বিদ্যমান যেগুলো কতিপয় রাবী কর্তৃক রেওয়ায়েতের মূল ভাষ্যের সাথে সংযোজিত হয়ে থাকতে পারে । এতদসত্ত্বেও এ রেওয়ায়েতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী দিকও পরিলক্ষিত হয় । আর একমাত্র মহান আল্লাহ্ই সবকিছু জানেন ।

এ সব রেওয়ায়েতের মধ্যে মিশরের আখনাসের রেওয়ায়েতটিও বিদ্যমান যা কানযুল উম্মাল হাদীসগ্রন্থের সংকলক বুরহান নামক একটি গ্রন্থে (পৃ. ২০০ ,তারিখ-ই ইবনে আসাকিরের বরাত দিয়ে উদ্ধৃত) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন । মহানবী (সা.) বলেছেন : আখনাস নামে কুরাইশ বংশীয় (মানাভীর ফয়যুল কাদীর গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ১৩১ পৃষ্ঠায় : উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত) এক ব্যক্তি মিশরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করবে । তখন মিশরবাসীরা তার ওপর বিজয়ী হবে অথবা তার কাছ থেকে শাসনক্ষমতা কেড়ে নেবে । সে তখন রোমে (পাশ্চাত্যে) পালিয়ে যাবে এবং রোমানদেরকে (পাশ্চাত্য সেনাবাহিনী) ইস্কানদারীয়ায় আনয়ন করবে এবং সেখানে সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । আর এটি হবে প্রথম ঘটনা । ঘটনাসমূহ বলতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ঘটনাবলী এবং বনি উমাইয়্যা (উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত) বলতে তাদের গৃহীত নীতিকে বোঝানো হয়েছে (সম্ভবত সে উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত নাও হতে পারে ,তবে বনি উমাইয়্যার নীতি ও ভাবধারার সমর্থক হবে) ।

দশম অধ্যায়


11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38