ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81134
ডাউনলোড: 9314

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81134 / ডাউনলোড: 9314
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

আবির্ভাবের যুগে ইরাকের ভূমিকা

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে ইরাকের পরিস্থিতি ও ঘটনাবলী সংক্রান্ত বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে । এ সব রেওয়ায়েত থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে ,ইরাক বিভিন্ন সামরিক শক্তি ও বাহিনীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ক্ষেত্রে পরিণত হবে এবং অশান্তই থেকে যাবে । এ দেশ বাস্তবে চারটি পর্যায় অতিক্রম করবে । পর্যায়গুলো হলো :

প্রথম পর্যায় : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বের যুগ । অত্যাচারী শাসকরা দীর্ঘকাল ইরাক শাসন করবে এবং সেদেশে হত্যাযজ্ঞ ,ত্রাস ও ভয়-ভীতি এমনভাবে বিস্তার লাভ করবে যে ,জনগণ শান্তি ও নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলবে । আর এ অবস্থা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী কালো পতাকাবাহীদের দ্বারা সেদেশ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ।

দ্বিতীয় পর্যায় : সেদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সেই প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করার জন্য ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী খোরাসানীদের সমর্থক ও শামের শাসনকর্তা সুফিয়ানীর সমর্থকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত ।

তৃতীয় পর্যায় : সুফিয়ানী কর্তৃক ইরাক দখল ও সেদেশের জনগণের ওপর তার অত্যাচার ও উৎপীড়ন ;এরপর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইয়েমেনী ও ইরানী সেনাবাহিনীসমূহের ইরাকে প্রবেশ যারা সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীকে পর্যদুস্ত করবে এবং তাদেরকে ইরাক থেকে বহিষ্কার করবে ।

চতুর্থ পর্যায় : ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক ইরাক মুক্ত করা ,সেখান থেকে সুফিয়ানীর সমর্থকদের ও বিভিন্ন বিদ্রোহী দলের অস্তিত্ব বিলোপ করা এবং ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক সে দেশটিকে তাঁর আবাসস্থল এবং সরকার ও প্রশাসনের কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করা ।

এ চার পর্যায়ে ইরাকের অভ্যন্তরে যে সব ঘটনা সংঘটিত হবে সেগুলো সংক্রান্ত আরো কিছু রেওয়ায়েত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে । যেমন সুফিয়ানীর আবির্ভাবের আগে শাইসাবানীর আবির্ভাব যে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত হবে । কুফার পেছনে (নাজাফে) 70 জন পুণ্যবান সৎকর্মশীল ব্যক্তিসহ একজন পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তির শাহাদাত ,জাযীরাহ্ অথবা তিকরীত থেকে আওফ সালামীর আবির্ভাব এবং তিন বছর ইরাকবাসীদেরকে হজ্ব পালন থেকে বিরত রাখা ;ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু দিন আগে বসরা নগরীর দেবে যাওয়া ও ধ্বংস হওয়া ,বাগদাদ ও হিল্লায় আরো ভূমিধ্বস ;ইরাকে মাগরিবী অথবা পাশ্চাত্য সেনাবাহিনীর প্রবেশ এবং সুফিয়ানী বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য একটি দলসহ এক সৎকর্মশীল ও যোগ্য ব্যক্তির আন্দোলন ও উত্থান ;ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে কতিপয় শিয়া ও সুন্নী দলের বিদ্রোহ ;আর এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিদ্রোহী দলটি হবে রুমাইলা-ই দাসকারার দল ;উল্লেখ্য যে ,রুমাইলা-ই দাসকারাহ্ দিয়ালা প্রদেশের বান শহরের অদূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল ।

এখন উপরিউক্ত পর্যায়গুলোর বিস্তারিত আলোচনা নিচে পেশ করা হলো :

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়

এ পর্যায় সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে ইরাকের অত্যাচারী শাসকবর্গ কর্তৃক সে দেশের জনগণের চরম দুর্ভোগ এবং কালো পতাকাবাহী ইরানীদের সাথে এ সব অত্যাচারী শাসকের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ ।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত : অচিরেই ইরাকে জনগণের কাছে খাদ্য-শস্য ও অর্থ পৌঁছবে না । আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম : কাদের পক্ষ থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হবে ?তিনি বললেন : আজমের (ইরানীদের) পক্ষ থেকে যারা খাদ্য ও অর্থ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে । 200

অতএব ,এর অর্থ এই দাঁড়াবে যে ,এ সব শাসক ইরানীদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে সে যুদ্ধই ইরাকের জনগণের কাছে খাদ্য-সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে । আর এটিই হচ্ছে ঐ অর্থনৈতিক সংকট ,ক্ষুধা ও ভীতি যা জাবির জুফীর রেওয়ায়েতে বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে । জাবির বলেছেন :

و لنبلونّكم بشيء مّن الخوف و الجوع

আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সামান্য ভয়-ভীতি ,ক্ষুধা ,ধন-সম্পদ ও প্রাণের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব -এ আয়াতের ব্যাপারে ইমাম বাকির (আ.)-কে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি বলেছিলেন : হে জাবির! এ ভীতি ও দুর্ভিক্ষের দু টি দিক আছে যার একটি বিশেষ এবং অপরটি সর্বজনীন ও ব্যাপক । তবে কুফায় বিশেষ দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব হবে । মহান আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের শত্রুদেরকে এ দুর্ভিক্ষে ফেলবেন এবং এভাবেই তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন । তবে যে দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক সংকট ব্যাপক ও সর্বজনীন হবে তা হচ্ছে ঐ দুর্ভিক্ষ যা শামে বিস্তার লাভ করবে এবং শামবাসীরা তাতে আক্রান্ত হবে । উল্লেখ্য যে ,তারা কখনোই এ অবস্থার শিকার হয় নি । এ মহাদুর্ভিক্ষের সময়কাল কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাব ও বিপ্লবের আগে এবং ভয়-ভীতি ও ত্রাসের সময়কালটি তার আবির্ভাব বা বিপ্লবের পরে হবে । 201

অবশ্য যে দুর্ভিক্ষের কথা রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে তা যে আহলে বাইতের শত্রুদেরকে বিশেষভাবে জর্জরিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করবে এতৎসংক্রান্ত কোন দলিল আমি পাই নি । তবে ইরাকে অত্যাচারী শাসকদের প্রশাসন অর্থনৈতিক সংকটে জড়িয়ে পড়বে এবং তীব্র দুর্ভোগ পোহাবে ।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পরে যে ভয়-ভীতি সমগ্র শামকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে তা তাঁর আবির্ভাবের আগে থেকেও সেখানে বিরাজমান থাকতে পারে । পরবর্তী রেওয়ায়েতে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে এই ভয়-ভীতি ,অস্থিরতা ও অশান্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : আল কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাব ও আন্দোলনের আগে জনগণের পাপের কারণে আকাশ থেকে যে আগুন তাদের ওপর আপতিত হবে তার দ্বারা তারা যন্ত্রণা পেতে থাকবে । লাল রঙের চি হ্ন সমগ্র আকাশ জুড়ে বিস্তার লাভ করবে ,বাগদাদ ও বসরায় ভূমিধ্বস হবে ,সেখানে প্রচুর রক্ত ঝরবে এবং অসংখ্য ঘর-বাড়ি ধ্বংপ্রাপ্ত হবে ,মৃত্যুর প্রাদুর্ভাব ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের আচ্ছন্ন করবে । এমন অশান্তি ও অস্থিরতা ইরাকবাসীদেরকে আক্রান্ত করবে যে ,তা তাদের থেকে স্বস্তি কেড়ে নেবে ।

তবে রেওয়ায়েতে এ সব নিদর্শন যে ধারাক্রম সহকারে বর্ণিত হয়েছে তদনুসারেই যে ঘটবে তা আবশ্যক নয় । বরং অশান্তি ,ভীতি ,ভূমিধ্বস ও দেবে যাওয়া আসমানী নিদর্শনসমূহের প্রকাশিত হওয়ার আগে সংঘটিত হবে এবং বাহ্যত আকাশের আগুন এবং তা লাল বর্ণ ধারণ করাটা অলৌকিক নিদর্শন হতে পারে ,অবশ্যই তা বিস্ফোরণসমূহ থেকে উদ্ভূত আগুন হবে না ।

পরবর্তী রেওয়ায়েত যা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তাতে যে সব ঘটনা সুফিয়ানী এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে অত্যাচারী শাসকদের শাসনামলে ইরাকে সংঘটিত হবে সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হয়েছে ।

আনাস ইবনে মালেক থেকে বর্ণিত : যখন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) নাহরাওয়ানের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি বুরাসা নামক একটি অঞ্চলে অবতরণ করেন । ঐ অঞ্চলে হুবাব নামের এক সন্ন্যাসী নিজ আশ্রমে বসবাস করতেন । যখন তিনি সেনাদলের শোরগোল শুনতে পেলেন তখন তাঁর আশ্রম থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর সেনাবাহিনীকে দেখতে পেলেন । তিনি এ অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে আশ্রম থেকে বাইরে আসলেন এবং প্রশ্ন করলেন : এ ব্যক্তিটি কে ?আর এ সেনাদলের অধিনায়ক কে ?তাঁকে বলা হলো : আমীরুল মুমিনীন আলী ,যিনি নাহরাওয়ানের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছেন । হুবাব দ্রুত গতিতে আলী (আ.)-এর কাছে এসে দাঁড়ালেন এবং কথা বলতে শুরু করলেন । তিনি বললেন : হে মুমিনদের নেতা! আপনার ওপর সালাম । আপনি সত্যিকার অর্থেই আমীরুল মুমিনীন । হযরত আলী বললেন : তুমি কীভাবে জেনেছ যে ,আমি সত্যিকার অর্থেই আমীরুল মুমিনীন ?তিনি বললেন : আমাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের এ কথাই শিখিয়েছেন । তখন হযরত আলী বললেন : হে হুবাব! সন্ন্যাসী বললেন : আপনি কীভাবে আমার নাম জানেন ?আলী (আ.) বললেন : আমার বন্ধু মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাকে শিখিয়েছেন । তখনই হুবাব আলী (আ.)-কে বললেন : আপনার হাত বাড়িয়ে দিন । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত পুরুষ । আর আপনি আলী ইবনে আবি তালিব তাঁর উত্তরাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত । হযরত আলী (আ.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি কোথায় বাস কর ?তিনি বলল : আমার নিজের আশ্রমে । হযরত আলী বললেন : আজকের পর থেকে আর কোন দিন সেখানে বাস করো না । তবে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধিপতির নামে এর নামকরণ করবে (হুবাব সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এর নাম রাখলেন বুরাসা) । এরপর আলী (আ.) তাঁকে বললেন : হে হুবাব! কোথা থেকে পানি পান কর ?তিনি বললেন : এখান (দজলা নদী) থেকে । তিনি বললেন : তুমি কেন কূপ খনন করছ না ?তিনি বললেন : হে আমীরুল মুমিনীন! যখনই আমি কূপ খনন করেছি তখনই আমি কূপের পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদময় পেয়েছি । তখন আলী (আ.) বললেন : এখানে একটি কূপ খনন কর । তিনি খনন করলেন এবং একটি পাথরখণ্ড পাওয়া গেল যা কোন ব্যক্তিই সেখান থেকে সরাতে পারছিল না । আলী (আ.) ঐ পাথরটি সেখানে থেকে উঠিয়ে ফেললেন এবং সেখান থেকে একটি ঝরনা বের হলো যার পানি মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং মাখনের চেয়েও সুস্বাদু । হযরত আলী তাঁকে বললেন : হে হুবাব! এ ঝরনা থেকে তোমার পানীয় জল সংগ্রহ করবে । কিন্তু অচিরেই তোমার এ মসজিদের পাশে একটি নগরীর গোড়াপত্তন হবে যেখানে জালিমরা বাড়াবাড়ি করবে এবং বড় বড় বিপদ আনয়ন করবে । অবস্থা এতদূর গড়াবে যে ,প্রতি জুমার রাতে সত্তর হাজার অশালীন কাজ আঞ্জাম দেয়া হবে । যখন তাদের ওপর বিপদ আপতিত হবে তখন তারা তোমার মসজিদে আক্রমণ চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেবে । তখন তুমি পুনরায় নির্মাণ করার মতো (মজবুত) করে তা নির্মাণ করবে যে কাফির ব্যতীত অন্য কেউ তা ধ্বংস করবে না । তখন তুমি সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করবে । যখন এ ধরনের কাজে হাত দেবে তখন তিন বছর হজ্বে যাওয়া থেকে নিষেধ করা হবে ও বাধা দেয়া হবে । তাদের কৃষিপণ্যসমূহ দাবানলে পুড়ে যাবে এবং মহান আল্লাহ্ পার্বত্য অঞ্চলের এক অধিবাসীকে তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল করে দেবেন । সে যে শহরেই প্রবেশ করবে তা ধ্বংস করবে এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে হত্যা করবে । আবার সে তাদের কাছে ফিরে আসবে । এরপর তারা তিন বছর শক্তি নাশকারী দুর্ভিক্ষ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার হবে । তবু সে তাদেরকে ছাড়বে না । এরপর সে কুফায় প্রবেশ করবে এবং যা কিছু তার সামনে থাকবে ,যেমন গাছ ,ইমারত ,এমনকি মানুষ সবকিছুকে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ধ্বংস করতে থাকবে । সেখানকার বাসিন্দাদেরকে হত্যা করা হবে । এ সব ঘটনা ঐ সময় ঘটবে যখন বসরা উন্নত হতে থাকবে এবং সেখানে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করা হবে । আর এ সময়ই বসরার ধ্বংস হওয়ার মুহূর্ত ঘনিয়ে আসবে । অতঃপর সে ওয়াসিত নামের আরেকটি শহরে প্রবেশ করবে যা হাজ্জাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হবে । এ শহরেও সে অন্য সব স্থানের মতো কাজ করবে । এরপর সে বাগদাদ অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং ক্ষমা সহকারে ঐ শহরে প্রবেশ করবে । এরপর জনগণ কুফায় আশ্রয় নেবে । কুফার এমন কোন স্থান থাকবে না যেখানে এ ঘটনা গোপন থেকে যাবে । তখন এ লোকটি যে ব্যক্তি তাকে বাগদাদে প্রবেশ করিয়েছিল তার সাথে কবর খোঁড়ার জন্য শহর থেকে বের হয়ে যাবে । ঠিক ঐ সময় সুফিয়ানী তাদের মুখোমুখি হবে এবং শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে তাদেরকে হত্যা করবে । সে একটি সেনাদলকে কুফার দিকে প্রেরণ করবে যারা সেখানকার কতিপয় অধিবাসীকে দাস হিসাবে বন্দী করবে । কুফা থেকে এক ব্যক্তি এসে তাদেরকে একটি দুর্গে আশ্রয় দেবে । সেখানে যে কেউ আশ্রয় নেবে সে-ই নিরাপদ থাকবে । সুফিয়ানীর সৈন্যরা কুফায় প্রবেশ করে যাকে ডেকে আনবে তাকে এমনভাবে হত্যা করবে যে ,এ সেনাবাহিনীর কোন সৈনিক মাটির ওপর পড়ে থাকা বড় একটি মনি-মুক্তার টুকরার পাশ দিয়ে গমন করলেও তা স্পর্শ করবে না অথচ সে ব্যক্তিই কোন শিশুকে দেখলেও তার পিছু নিয়ে তাকে হত্যা করবে । হে হুবাব! ঐ সময় এ সব ঘটনার পর কতই না দূরে ,তা কতই না দূরে! অবশ্যই বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং রাতের অংশের মতো ফিতনা ও গোলযোগসমূহের প্রতীক্ষা করতে হবে । হে হুবাব! আমি তোমাকে যা বলছি তা স্মরণে রাখবে । 202

অবশ্য এ রেওয়ায়েতের ভাষা ও প্রকাশরীতিতে বিশৃঙ্খলা ও অগোছালোভাব পরিলক্ষিত হয় । আর মরহুম মাজলিসীও এ রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করার পর বলেছেন : জেনে রাখ ,এ রেওয়ায়েতের অনুলিপি ত্রুটিযুক্ত এবং আমি হাদীসটি যেভাবে পেয়েছি ঠিক সেভাবেই বর্ণনা করলাম । এ কারণেই এ রেওয়ায়েতের সনদ ও ভাষ্যের ব্যাপারে সমালোচনা ও বিতর্ক করার অবকাশ আছে । এ হাদীসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে যা কিছু বলা হোক না কেন ,এ হাদীসটি ইরাকবাসীরা অত্যাচারী শাসকদের পক্ষ থেকে যে সব বিপদাপদ ও কঠিন অবস্থার শিকার হবে সেগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । তারা অত্যাচারী শাসকদের অন্যায়-অত্যাচার এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রভূত কষ্ট ভোগ করবে । অন্যান্য হাদীসেও প্রায় এ হাদীসের মূল বিষয় ও বক্তব্যের অনুরূপ বিষয় বর্ণিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,এ সব হাদীসের মধ্যে গুটিকতক হাদীসের সনদ সহীহ । রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহে যে সব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে বা সেগুলোর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে । যেমন বুরাসার মসজিদের ধ্বংস সাধন ,বাগদাদে ফিতনা এবং ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা ;কুর্দিস্তান অথবা ইরানের পাহাড়িয়া অঞ্চলসমূহ থেকে আগত সামরিক কর্মকর্তা ও সেনাপতিদের ক্ষমতাগ্রহণ ও বাগদাদে তাদের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘটনা ইত্যাদি । আর এ ধরনের ঘটনার অপর কিছু অংশ ,যেমন সুফিয়ানীর উত্থান এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী এখনও সংঘটিত হয় নি ।

মরহুম শেখ মুফীদ (রহ.) বলেছেন : হযরত কায়েম আল মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও বিপ্লবের নিদর্শনসমূহ এবং তাঁর আবির্ভাবের আগে যে সব ঘটনা ঘটবে সেগুলো রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে । যেমন সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও সামরিক অভিযান ,হাসানীর নিহত হওয়া ,পার্থিব পদ দখল করাকে কেন্দ্র করে বনি আব্বাসের মধ্যকার মতবিরোধ ,সাধারণ নিয়মের বাইরে রমযান মাসের মাঝামাঝিতে সূর্যগ্রহণ এবং ঐ একই মাসের শেষের দিকে চন্দ্রগ্রহণ ,বাইদার মরুপ্রান্তরে ভূমিধ্বস ,পূর্ব-পশ্চিমে আরো ভূমিধ্বস , (আকাশে) দুপুর থেকে অপরা ‎‎ হ্ন পর্যন্ত সূর্যের স্থির হয়ে থাকা ,পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ,কুফার পশ্চাতে (নাজাফে) সত্তর জন সৎকর্মশীল বান্দার সাথে একজন পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তিকে হত্যা ,পবিত্র রুকন ও মাকামের মাঝখানে পবিত্র কাবা ঘরের পাশে বনি হাশিমের এক ব্যক্তিকে হত্যা ,কুফার মসজিদের প্রাচীরের ধ্বংসসাধন ,খোরাসানের দিক থেকে কালো পতাকাসমূহের আবির্ভাব ,ইয়েমেনীর আবির্ভাব ও উত্থান ,মিশরে মাগরিবীর আবির্ভাব এবং শামের ওপর তার আধিপত্য বিস্তার ,জাযীরায় তুর্কীদের (রুশজাতি) আগমন ,রামাল্লায় রোমানদের আগমন ,পূর্ব দিক থেকে একটি তারার উদয় যা চাঁদের মতো আলোর বিচ্ছুরণ করবে এবং এরপর তা এতটা ঋজু হবে যে ,এর দু প্রান্ত পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাবে ,আকাশে লাল বর্ণের আলোকবৃত্তের আবির্ভাব ,অতঃপর সমগ্র আকাশ জুড়ে তার বিস্তৃতি লাভ ,আগুনের আবির্ভাব যা পূর্ব দিক থেকে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে আসবে এবং তিন দিন অথবা সাত দিন বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান থাকবে ,আরবদের অবাধ্য ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাওয়া ,নিজেদের দেশ ও অঞ্চলসমূহের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং অনারবদের (তুর্কীদের) আধিপত্য ও শাসনকর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে আসা ,মিশরীয় জনগণ কর্তৃক সেদেশের শাসককে হত্যা ,শামের ধ্বংস ও সেদেশে তিন পতাকার সমর্থক বাহিনীসমূহের মধ্যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব ,মিশরে কাইস গোত্র ও আরবদের পতাকাসমূহের আগমন ,খোরাসান শহরে কিন্দাহ্ গোত্রের পতাকাসমূহের আগমন ,পাশ্চাত্য থেকে অশ্বারোহী বাহিনী (সাঁজোয়া) সমূহের আগমন যারা কুফার নিকট অবস্থান গ্রহণ করবে এবং এ অঞ্চলে পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকাবাহীদের (ইরানী অথবা খোরাসানী) আগমন ,ফুরাত নদীতে এমনভাবে ফাটলের উৎপত্তি যার ফলে পানি কুফা শহরের অলি-গলি ও রাস্তা-ঘাট প্লাবিত করবে এবং ষাট ব্যক্তির আবির্ভাব যাদের প্রত্যেকেই নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করবে ।

একইভাবে (ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত হচ্ছে) আবু তালিবের বংশধরদের মধ্য থেকে আরো বারো ব্যক্তির আবির্ভাব যাদের প্রত্যেকেই ইমামতের মিথ্যা দাবি করবে ,জালূলা ও খানাকীনের মধ্যবর্তী স্থানে বনি আব্বাসভুক্ত এক সম্মানিত ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা ,কারখ ও সালাম শহরের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী সেতু নির্মাণ ,ঐ একই অঞ্চলে কালো বায়ুর উত্থান যা ঐ দিনের প্রভাতের প্রথম দিকে আরম্ভ হবে ,ভূমিকম্প যার ফলে এলাকার একটি বিরাট অংশ ভূ-গর্ভে দেবে যাবে ,ভয়-ভীতি ও ত্রাস যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং ইরাকের অধিবাসীদের বিশেষ করে বাগদাদবাসীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলবে ,ইরাকবাসীদের মধ্যে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ,জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি এবং ফসলাদির উৎপাদন হ্রাস ,যখন-তখন পঙ্গপালের আবির্ভাব যেগুলো শস্যক্ষেত্রসমূহে হানা দেবে যার ফলে শস্য ও কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে ও হ্রাস পাবে ,অনারব দু দলের মধ্যে মতবিরোধ যা তাদের মধ্যে ব্যাপক রক্তপাতের কারণ হবে ,দাসগণ কর্তৃক মালিকদেরকে অবমাননা ও তাদের বিরুদ্ধাচরণ এবং নিজেদের প্রভুদেরকে হত্যা ,কতিপয় বিদআতপন্থীর বানর ও শুকরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হওয়া ,প্রভু ও মালিকের রাজ্যসমূহের ওপর দাসদের বিজয় ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা (ফরাসী বিপ্লব ,বলশেভিক বিপ্লব ,চীন ও অন্যান্য দেশে কমিউনিস্টদের বিপ্লব বা মুসলিম বিশ্বে মধ্যযুগে দাসদের বিপ্লব ও সাম্রাজ্য স্থাপন ,যেমন মিশরের মামলুক সাম্রাজ্য) ,আসমানী আহবানধ্বনী যা সকল বিশ্ববাসী নিজ মাতৃভাষায় শুনতে পাবে ,মুখমণ্ডল ও বুকের ছবি যা সূর্যের ভিতর প্রকাশিত হবে (সবাই তা দেখতে পাবে) ,কতিপয় মৃত ব্যক্তির জীবিত হওয়া যা পৃথিবীর জীবনে পুনরাগমনের (রাজাআত) জন্য সংঘটিত হবে ,আর তারা একে অপরকে চিনতে পারবে ও পরস্পর সাক্ষাৎ করবে ।

যে সব নিদর্শন ওপরে বর্ণনা করা হলো সেগুলোর সবই চব্বিশ দিন অবিরাম বৃষ্টিবর্ষণের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি হবে । এ বৃষ্টিবর্ষণের ফলে মৃত জমি প্রাণ ফিরে পাবে এবং এর বরকতসমূহ স্পষ্ট হয়ে যাবে । এ ঘটনার পর সব ধরনের শারীরিক ব্যাধি মাহ্দী (আ.)-এর সত্যিকার অনুসারী ও অন্বেষণকারীদের মধ্য থেকে বিদায় নেবে । আর রেওয়ায়েতসমূহের বক্তব্য অনুযায়ী এ শুভক্ষণেই ইমাম মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীরা পবিত্র মক্কা থেকে তাঁর আবির্ভূত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাঁকে সাহায্য করার জন্য তাঁর দিকে দ্রুত ছুটে যাবে ।

উল্লিখিত এ সব ঘটনার মধ্যে কতিপয় ঘটনা নিশ্চিত ও অবশ্যম্ভাবী এবং কতিপয় ঘটনা কতগুলো শর্তসাপেক্ষে সংঘটিত হবে । আর মহান আল্লাহ্ই এ সব ঘটনার সংঘটন পদ্ধতি ও ধরন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত । এ সব ঘটনা যেভাবে ইতিহাস ও হাদীসের গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে সেভাবেই আমরা উল্লেখ করলাম এবং মহান আল্লাহর কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করছি । 203

শেখ মুফীদ যা কিছু উল্লেখ করেছেন তা আসলে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের দূরবর্তী ও নিকটবর্তী নিদর্শনসমূহের সারাংশ । যেমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তদনুযায়ী এ সব ঘটনার যে একের পর এক ক্রমান্বয়ে ঘটবে তিনি তা বোঝান নি । কারণ ,এ সব ঘটনার মধ্যে গুটিকতক ঘটনা ,যেমন পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তির নিহত হওয়া ,রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে হাশিম বংশীয় এক ব্যক্তির শিরচ্ছেদ এবং ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের মধ্যে সপ্তাহ দুয়েকের বেশি ব্যবধান থাকবে না । বরং হাশিম ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড হবে ইমাম মাহ্দীর আন্দোলনেরই একটি অংশ মাত্র । কারণ ,তিনি ইমাম মাহ্দীর প্রেরিত দূত হবেন । আবার এ সব নিদর্শনের মধ্যে কতিপয় নিদর্শন এবং ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের মাঝে বহু শতাব্দীর ব্যবধান বিদ্যমান ,যেমন আব্বাসীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ এবং ফাতিমীয়দের আন্দোলনের গতিধারায় মাগরিবীদের উত্থান এবং শামের ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ।

যে সব ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে গুটিকতক ঘটনার অবশ্যম্ভাবী হওয়া এবং অন্যান্য ঘটনা শর্তসাপেক্ষে সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে মরহুম শেখ মুফীদ যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হচ্ছে এই যে ,এ সব নিদর্শনের মধ্যে গুটিকতক নিদর্শন অবশ্যই সংঘটিত হবে । বিশেষ করে কতিপয় নিদর্শন যে অবশ্যই ঘটবে সে ব্যাপারে হাদীসসমূহে স্পষ্ট উক্তি করা হয়েছে । যেমন সুফিয়ানী ,ইয়েমেনী ,নাফসে যাকীয়ার নিহত হওয়া ,আসমানী গায়েবী আহবান ,সুফিয়ানী বাহিনীর ভূ-গর্ভে প্রোথিত হয়ে ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি । আর এ সব ঘটনার মধ্যে আরো কিছু ঘটনার সংঘটিত হওয়া অন্যান্য ঘটনা ঘটার শর্তে মহান আল্লাহর জ্ঞানে এবং তাকদীরের মধ্যে নিহিত রয়েছে । কারণ ,তিনিই কেবল অতীত ,বর্তমান ,ভবিষ্যৎ এবং এ সব ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ।

বাহ্যত হাসানী বলতে পবিত্র মক্কায় নাফসে যাকীয়াহ্ অথবা মদীনায় যে যুবক ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের খুব কাছাকাছি সময় সুফিয়ানী বাহিনীর হাতে নিহত হবেন তিনিও হতে পারেন যদিও তাঁর হাসানী সাইয়্যেদ এবং ইরাকের ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে । কারণ ,কতিপয় রেওয়ায়েতে  تحرّك الحسنيّ (হাসানী আন্দোলন করবে) -এ বাক্যটি বিদ্যমান ।

তবে সত্তর জন সৎকর্মশীল ব্যক্তির সাথে নাফসে যাকীয়ার নিহত হওয়ার ঘটনা মহান শহীদ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদর (রহ.) এবং একদল সম্মানিত বুযুর্গ আলেম ও মুমিনের সাথে খাপ খায় যাঁরা তাঁর সাথে শাহাদাত বরণ করেছেন এবং তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন সত্তর জন । এ হাদীসে উল্লিখিত কুফার পশ্চাদ্ভাগ বলতে নাজাফকে বোঝানো হয়েছে যা কতিপয় রেওয়ায়েতে নাজাফ-ই কুফা (অর্থাৎ ঐ শহরের পাহাড় ও উচ্চভূমিসমূহ) বলে অভিহিত হয়েছে । এ কারণেই নাজাফকে গাররা অথবা গারায়াইন বলে অভিহিত করা হয় । এ গাররা হচ্ছে দু টি স্মৃতিস্তম্ভের নাম যা হীরার বাদশাহ্ নুমান ইবনে মুনযির সেখানে নির্মাণ করেছিলেন এবং সেগুলোর ওপর সাদা রং দেয়া হয়েছে । অবশ্য কুফার পশ্চাতেই যে তাঁরা শাহাদাত বরণ করবেন এমনটি অত্যাবশ্যক নয় । সম্ভবত কুফার পশ্চাতে নাফসে যাকীয়ার নিহত হওয়া -এ বাক্যটির অর্থ হতে পারে যে ,তিনি নাজাফ শহরের অধিবাসী হবেন এবং সেখানে বসবাস করবেন । তবে যে সত্তর জন সৎকর্মশীল বান্দা তাঁর সাথে শাহাদাত বরণ করবেন তাঁদের পবিত্র নাজাফ নগরীর অধিবাসী হওয়ার ব্যাপারে তাঁদের সংক্রান্ত হাদীস এবং শেখ মুফীদের বক্তব্যেও কোন ইঙ্গিত নেই । বরং তাঁরা নাফসে যাকীয়াহ্ যিনি নাজাফের অধিবাসী হবেন তাঁর সাথে শাহাদাত বরণ করবেন ।

কুফার অদূরে অবস্থান গ্রহণকারী মাগরিবী (পাশ্চাত্য) অশ্বারোহী বাহিনী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ থেকে বোঝা যায় যে ,এ ঘটনাটি সুফিয়ানীর যুগে অথবা এর কাছাকাছি সময় সংঘটিত হবে ।

তবে পাশ্চাত্যের দিক থেকে অশ্বারোহী বাহিনীর আগমন ,যারা কুফার অদূরে অবস্থান গ্রহণ করবে -মরহুম শেখ মুফীদের এ কথার মধ্যে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে ,স্বয়ং এ কথাটি উক্ত রেওয়ায়েতের ব্যাপারে সূক্ষ্ম বিবেচনা ও গবেষণার পথ উন্মুক্তকারী । রেওয়ায়েতটির শব্দটি কি غرب (পাশ্চাত্য) না مغرب (ইসলামী বিশ্বের সুদূর পশ্চিমাঞ্চল যা মাগরিব বা মরক্কো) আর তা এ সম্ভাবনাও ব্যক্ত করে যে ,তারা (উক্ত অশ্বারোহীরা) পাশ্চাত্য সেনাবাহিনীই হবে যারা সুফিয়ানীকে সাহায্য করার জন্য অথবা কালো পতাকাসমূহের সমর্থকদেরকে (ইরানী সেনাবাহিনী) মোকাবিলা করার জন্য ইরাকে অনুপ্রবেশ করবে অথবা সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও উত্থানের আগেই সেখানে উপস্থিত থাকবে ;বরং যে রেওয়ায়েতসমূহে মাগরিবের সেনাবাহিনী এবং মাগরিববাসীরা বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করাই হচ্ছে উপযুক্ত পদক্ষেপ । কারণ ,হাদীসশাস্ত্রের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিসমূহে মূল শব্দটি হচ্ছে উক্ত পাশ্চাত্য বাহিনী ও পাশ্চাত্য অধিবাসী । প্রাচ্যের পতাকাসমূহের অর্থ খোরাসানী সেনাবাহিনীর পতাকা । আর এই খোরাসানী সেনাবাহিনী সদ্য ইরাকে অনুপ্রবেশকারী সুফিয়ানী বাহিনীকে দমন করার জন্য ইয়েমেনী সেনাবাহিনীর সাথে সে দেশে প্রবেশ করবে ।

তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বছরেই ফোরাত নদীতে ভাঙ্গন ধরবে এবং এর পানি কুফার ভিতবে প্রবাহিত হবে । আর এ বিষয়টি এভাবেই হাদীসসমূহে ,যেমন ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে । উক্ত হাদীসে ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : বিজয়ের বছরে ফোরাত নদী এমনভাবে ভাঙ্গবে যে ,পানি কুফা শহরের অলি-গলি ও রাস্তাগুলোয় ঢুকে যাবে । 204

আরেক দিক থেকে মরহুম শেখ মুফীদের বর্ণনা প্রমাণ করে যে ,প্রামাণ্য হাদীস গ্রন্থাদিতে এ সব নিদর্শন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে । আর তা এ সব রেওয়ায়েতের জন্য উচ্চ মাত্রার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আনয়ন করেছে । বরং বলা যেতে পারে যে ,তিনি যে সব হাদীস ও রেওয়ায়েতকে সহীহ বলে গণ্য করেন সেগুলোর বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই । কারণ ,তিনি ছিলেন সূক্ষ্মদর্শী এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অবস্থান ও মর্যাদার অধিকারী আলেম । তাবেয়ীদের ও আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামদের যুগে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের উৎস ও সূত্রসমূহের নিকটবর্তী হিসাবে এগুলোর ওপর তাঁর পূর্ণ দখল ছিল । কারণ ,তিনি 413 হিজরীতে ইন্তেকাল করেন ।

তবে যে সব রেওয়ায়েতে সুফিয়ানীর আগে ইরাকে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবার ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেগুলো প্রধানত ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলো ইরাকের অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের বিজয়ের দিকেই ইঙ্গিত দেয় । যেমন ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত এ রেওয়ায়েতটি :

যেন আমি দেখতে পাচ্ছি যে ,একদল প্রাচ্য (ইরান) থেকে বের হয়েছে যারা বিরোধীদের কাছে নিজেদের ন্যায্য অধিকার দাবি করছে । কিন্তু তাদের অধিকার আদায় করা হবে না । তারা পুনরায় তাদের বৈধ অধিকার দাবি করবে । এরপরও তাদের সে অধিকার আদায় করা হবে না । তারা এ পর্যায়ে কাঁধে তরবারি (অস্ত্র) তুলে নেবে এবং তীব্রভাবে প্রতিরোধ করবে ;তাদের এ অবস্থা দেখে বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পূর্বের দাবি পূরণ করে দেবে । কিন্তু তারাই এবার তা মেনে নেবে না ;তারা আবারও রুখে দাঁড়াবে এবং তোমাদের নেতা (ইমাম মাহ্দী) ব্যতীত আর কারো হাতে তারা হেদায়েতের পতাকা অর্পণ করবে না । তাদের নিহতরা শহীদ এবং আমি যদি ঐ সময় জীবিত থাকতাম ,তাহলে আমি তাকে সাহায্য করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতাম । 205

একইভাবে এ রেওয়ায়েতটিতে বর্ণিত হয়েছে : কালো পাতাকাসমূহ খোরাসান থেকে বের হয়ে বাইতুল মাকাদ্দাসে (জেরুজালেম) পতপত করে উড়া পর্যন্ত কোন কিছুই তাদেরকে পরাস্ত করতে ও পিছনে ফিরিয়ে দিতে (প্রতিহত করতে) পারবে না । 206

শিয়া ও সুন্নী সূত্রে বর্ণিত একটি মুস্তাফীয 207 রেওয়ায়েতে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : প্রাচ্য (ইরান) থেকে কতিপয় জনতার উত্থান হবে যারা মাহ্দীর হুকুমত ও কর্তৃত্বের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে । 208

উল্লেখ্য যে ,এ রেওয়ায়েতটি সহীহ গ্রন্থসমূহের সংকলকরাও তাঁদের গ্রন্থসমূহে রেওয়ায়েত করেছেন ।

যাহোক ,এ রেওয়ায়েত এবং এতদসদৃশ অন্যান্য রেওয়ায়েতে যদিও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে ইরাকে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত নেই তবুও এগুলোয় ইরানীদের দু পর্যায়ভিত্তিক বিজয়ের ইঙ্গিত বিদ্যমান । আর আমরা যথাস্থানে তা বর্ণনা করবে । যা অধিকতর উত্তম মনে হয় তা হচ্ছে ইরানীদের লক্ষ্য হবে ইরাকে অত্যাচারী ও স্বৈরাচারীদের হুকুমতের পতন ঘটানো এবং সেদেশে একটি ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা ।

অন্যান্য রেওয়ায়েতেও ইরাক ও সেদেশের বড় বড় নগরীতে খানাকীন ও বসরার পথে ইরানী সেনাবাহিনীর আগমন এবং সেখানে অত্যাচারী সরকার ও প্রশাসন কর্তৃক তাদেরকে বাধাদানের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে । কিন্তু ঐ রেওয়ায়েতসমূহ হয় মুরসাল (বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত) ,না হয় দুর্বল 209 ,যেমন বুরাসার রেওয়ায়েত যা আগে বর্ণিত হয়েছে এবং খুতবাতুল বায়ানের রেওয়ায়েতটি । এতে বর্ণিত হয়েছে :

তোমরা জেনে রাখ ,রাইবাসীদের কারণে বাগদাদের জন্য আক্ষেপ ;ইরাকবাসীদেরকে যে মৃত্যু ,হত্যাযজ্ঞ ও ভয়-ভীতি ঘিরে ফেলবে সেজন্য আক্ষেপ ;যখন তাদের মধ্যে তরবারি রাখা হবে (তাদেরকে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করা হবে) তখন মহান আল্লাহ্ যতটুকু চাইবেন সেই পরিমাণ হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকবে... । এ সময়ই অনারব (ইরান) আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং বসরা দখল করে নেবে । 210

একইভাবে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত মীর লৌহীর হাদীসটিও পূর্বোক্ত হাদীসটির সাথে সম্পর্কিত । ইমাম সাদিক বলেছেন : অতঃপর আরব ও অনারব সেনাবাহিনীর সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিরোধ দেখা দেবে । আর আবু সুফিয়ানের এক বংশধরের হাতে নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্ব অর্পণ করা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে । 211

تحرّك الحسني (তাহাররাকাল হাসানী বা হাসানী আন্দোলন করবেন এবং অগ্রসর হবেন)-এর রেওয়ায়েতটিও বর্ণিত হয়েছে । বিদ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,তিনি ইরাকে থাকবেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর নিহত হবেন ।

যে সব হাদীস থেকে ইরাকে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোর বিপরীতে আরো কিছু রেওয়ায়েত বিদ্যমান যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাব পর্যন্ত ইরাকে স্বৈরাচারী জালিমদের সরকার অব্যাহত থাকবে ।

কারণ ,এ প্রসঙ্গে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : কুফা মসজিদের পিছনে দেয়ালটি যা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের বাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত তা যখন ধ্বংস হবে তখন (অমুকের বংশের) শাসনকর্তৃত্বের অবসান হবে । আর এর পরই আল কায়েম আল মাহ্দী আবির্ভূত হবে । 212

শেখ তূসীর গাইবাত গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি হচ্ছে প্রাচীর ধ্বংসকারী তা মেরামত করবে না । এ রেওয়ায়েতের অর্থ হচ্ছে যে ব্যক্তি মসজিদের দেয়াল বা প্রাচীর ধ্বংস করবে হয় সে নিহত হবে অথবা তা মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করার আগেই সেখান থেকে চলে যাবে । অবশ্য মসজিদের প্রাচীর ধ্বংস করার ঘটনাটি কেবল সামরিক দিকসম্পন্নও হতে পারে । কারণ ,যে সব বিরোধী আন্দোলনকারী মসজিদে আশ্রয় নেবে ও অবস্থান করতে থাকবে তাদের আন্দোলন নিশ্চি হ্ন ও নস্যাৎ করে দেবার জন্য ঐ শহরের শাসনকর্তা তা ধ্বংস করবে ।

কখনো কখনো কুফার মসজিদের পাশে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েত থেকেও এ অর্থটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় । আবু বসীর ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেছেন : তোমাদের মসজিদের (কুফার মসজিদের) পাশে অমুকের সন্তানদের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট দিনে এক যুদ্ধের সূত্রপাত হবে । এ যুদ্ধে হাতির ফটক থেকে সাবানওয়ালাদের মহল্লা (কুফার একটি মহল্লা) পর্যন্ত চার হাজার লোক নিহত হবে । 213

আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : কোন এক শুক্রবারে জনগণকে হত্যা না করা পর্যন্ত তাদের রাজত্ব ও শাসন ধ্বংস হবে না । মসজিদে ও সাবানওয়ালাদের মহল্লার মাঝখানে যেন আমি দেহচ্যুত মস্তকসমূহ দেখতে পাচ্ছি । 214

ঠিক একইভাবে উপরিউক্ত হাদীসের অন্তর্নিহিত অর্থের খুব কাছাকাছি অর্থ সম্বলিত বেশ কিছু রেওয়ায়েত বিদ্যমান যেগুলোয় বিশেষ করে ইরাকে সুফিয়ানী কর্তৃক পরিচালিত সেনা অভিযানের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে । এ সব হাদীস থেকেও প্রতীয়মান হয় যে , (ইরাকে) যে দুর্বল সরকার যা শুধু অনৈসলামীই নয় ;বরং ইসলাম ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরোধী হবে সেই সরকারের বিরুদ্ধে সুফিয়ানী যুদ্ধ করবে । সুফিয়ানীর অভিযান প্রসঙ্গে যে রেওয়ায়েতটি বিহার গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করেছি সেই রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : সেদিন জনগণের শাসনকর্তা হবে ভয়ানক অত্যাচারী ,স্বৈরাচারী ও ভীষণ একগুঁয়ে যাকে ভবিষ্যদ্বক্তা ও যাদুকর বলে অভিহিত করা হবে । 215

তবে এ সব রেওয়ায়েত সহীহ হলেও পূর্বোল্লিখিত যে সব রেওয়ায়েতে ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের আগে ইরাকে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার বিষয়টি প্রতীয়মান হয় সে সব রেওয়ায়েতের সাথে এ সব রেওয়ায়েতের কোন বৈপরীত্য নেই । কারণ ,এ সব রেওয়ায়েতে ঐ পর্যায়ের কথা ব্যক্ত হয়েছে যার সাথে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কোন সম্পর্ক আছে কি নেই তা জানা নেই অথবা তা তাঁর আবির্ভাবের সাথে সংযুক্ত সংক্ষিপ্ত একটি পর্যায়ও হতে পারে । যাহোক ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের বিজয় হওয়ার পর ইরাকে একটি ইসলামী সরকার ও শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে । যতদিন মহান আল্লাহ্ চাইবেন ততদিন তা টিকে থাকবে । এ সরকারের মধ্যে বিচ্যুতি দেখা দিলে তা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বছরে অথবা তাঁর আবির্ভাবের অল্প আগে অত্যাচারীদের হাতে চলে যাবে । আর একমাত্র মহান আল্লাহ্ই এ ব্যাপারে ভালো জানেন ।

হাসান , শাহসাবানী ও আওফ সালামী

কতিপয় রেওয়ায়েতে হাসানী সংক্রান্ত বিবরণ এসেছে । তিনি ইরাকে তাঁর আন্দোলন শুরু করবেন । কিন্তু এ সব রেওয়ায়েতে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন ;কারণ ,এগুলোয় তিন ব্যক্তির নাম মদীনার হাসানী ,মক্কার হাসানী এবং ইরাকের হাসানীর নাম উল্লিখিত হয়েছে । একইভাবে খোরাসানী হুসাইনীর বিবরণ আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে এসেছে এবং কতিপয় শিয়া হাদীস গ্রন্থে তাঁকে হাসানী বলে অভিহিত করা হয়েছে । তিনিই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় তাঁর সেনাদল নিয়ে ইরাকে প্রবেশ করবেন । অতএব ,ইরাকে হাসানীর আন্দোলন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের কাঙ্ক্ষিত অর্থ উল্লিখিত হাসানীর আন্দোলনও হতে পারে । আবার তাঁর পূর্বে আরেক জন হাসানীও থাকতে পারেন ।

তবে শাইসাবানী সংক্রান্ত রেওয়ায়েত নুমানীর গাইবাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যা হাদীসশাস্ত্রের প্রথম সারির গ্রন্থসমূহের একটি । জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আল জুফী থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : শাইসাবানী ভূমি ফেটে পানি বের হওয়ার মতো ইরাকে আবির্ভূত হওয়ার আগে তোমরা সুফিয়ানীর দেখা পাবে না । সে হঠাৎ আবির্ভূত হবে এবং বিদ্রোহ করবে । সে তোমাদের প্রতিনিধিদের হত্যা করবে এবং এ ঘটনার পর তোমরা সুফিয়ানীর অপেক্ষায় থাকবে । আর তখনই কায়েম আল মাহ্দীও আবির্ভূত হবে ও কিয়াম করবে । 216

আমি যদিও শাইসাবানী সংক্রান্ত আর কোন রেওয়ায়েত খুঁজে পাই নি তবুও এ হাদীসে এ ব্যক্তি সংক্রান্ত কতিপয় বিষয় বিদ্যমান । যেমন :

1 .সে শাইসাবানী বলে অভিহিত হয়েছে । কারণ ,শাইসাবানের সাথে তার সম্পর্ক আছে । আর এটি হচ্ছে এমন এক উপাধি যা ইমামরা তাগুত ও দুষ্ট প্রকৃতির ব্যক্তিদেরকে প্রদান করতেন । যুবাইরীর অভিধানের ব্যাখ্যা গ্রন্থ অনুসারে ,শাইসাবান আসলে ইবলীসের একটি নাম এবং তা দ্বারা কখনো কখনো পুরুষ পিপীলিকাকে বোঝানো হয়ে থাকে ।

2 .সে যে সুফিয়ানীর আগে বের হবে তা হাদীসের এ অংশ তারপর তোমরা সুফিয়ানীর অপেক্ষায় থাকবে থেকে বোঝা যায় । ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত এ হাদীসের ভিত্তিতে বলা যায় যে ,তার ও সুফিয়ানীর মাঝে তেমন ব্যবধান থাকবে না অর্থাৎ সুফিয়ানীর পরপরই সে আবির্ভূত হবে ।

3 .তার আবির্ভূত হবার স্থান হচ্ছে ইরাক ;আর এ স্থানকে কুফান ও বলা হয় । অথবা তা কুফার কোন একটি স্থান হতে পারে । যাহোক ,যেমনভাবে ভূমি ফেটে পানি বের হয় তেমনি তার আবির্ভাব ,বিপ্লব ও সরকার প্রতিষ্ঠাও হবে আকস্মিক ও অনভিপ্রেত । সে হবে সীমা লঙ্ঘনকারী ও রক্তপাতকারী যে মুমিনদেরকে হত্যা করবে । আর সে তোমাদের প্রতিনিধিদেরকে হত্যা করবে -ইমাম বাকির (আ.)-এর এ বাণীর বাহ্য অর্থ হচ্ছে সে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী মুমিনদেরকে হত্যা করবে যাঁরা সামনাসামনি নেতৃত্ব দেবেন এবং জন-প্রতিনিধি দলের শীর্ষে অবস্থান করবেন । নগরের প্রতিনিধিবৃন্দ বলতে নগরের বড় বড় পদমর্যাদার অধিকারী মুমিনদেরকে বোঝানো হতে পারে । আবার গোত্র-প্রতিনিধি দল অথবা শহরের প্রতিনিধি দল বিশেষ পদমর্যাদার ব্যক্তিত্ব অর্থেও হতে পারে । অবশ্য এ অর্থেরও সম্ভাবনা আছে যে ,যে দলসমূহ বাইতুল্লাহ্ (কাবাঘর) যিয়ারত করার জন্য যাবে তাদেরকে সে হত্যা করবে ।

আমরা সুফিয়ানীর আন্দোলন ও ইরাকে তার সেনা অভিযানের পক্ষে অধিকতর গুরুত্বারোপ করে বলেছি যে ,ইরাকে শাইসাবানীর শাসনকর্তৃত্ব সুফিয়ানীর আবির্ভাবের আগে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ও তাদের অনুসারীদের হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার পরপরই বাস্তবায়িত হবে । অবশ্য কতিপয় ব্যক্তির দৃষ্টিতে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ইরাকের বর্তমান শাসক সাদ্দামের সাথে খাপ খায় । যেহেতু তার মধ্যেই এ সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান সেহেতু সুফিয়ানী যদি তার পরে শামে আবির্ভূত হয় ,তাহলে দাবি করা যেতে পারে যে ,সাদ্দামই হচ্ছে ইরাকের উক্ত শাইসাবানী যার কথা রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে ।

কিন্তু শেখ তূসী প্রণীত গাইবাত নামক গ্রন্থে আওফ সালামী সংক্রান্ত একটি রেওয়ায়েতও বর্ণিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,এ গ্রন্থটি হাদীসশাস্ত্রের প্রথম শ্রেণীর গ্রন্থাদির অন্তর্ভুক্ত । ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে হাযলাম ইবনে বশীর বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেছেন : আমি ইমাম যযনুল আবেদীন (আ.) -কে অনুরোধ করেছিলাম যে ,তিনি যেন আমাকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের প্রক্রিয়াটি আমাকে বর্ণনা করে শুনান এবং তাঁর আবির্ভাবের দলিল ও নিদর্শনসমূহের সাথে আমাকে পরিচিত করান । তিনি তখন বলেছিলেন : তার আবির্ভাবের আগে জাযীরায় আওফ সালামী নামের এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে যার মাতৃভূমি তিকরীত এবং তার নিহত হবার স্থান হবে দামেশকের মসজিদ । তারপর সমরকন্দ থেকে শুআইব ইবনে সালিহ্ আবির্ভূত হবে । আর তখনই অভিশপ্ত সুফিয়ানী ওয়াদী ইয়াবিস (শুষ্ক উপত্যকা) এলাকা থেকে বের হবে । উল্লেখ্য যে ,এই সুফিয়ানী আবু সুফিয়ানের ছেলে উতবার বংশধর হবে । তার আবির্ভাব ও উত্থানকালে মাহ্দী লুক্কায়িত থাকবে এবং এর পরপরই সে আবির্ভূত হবে । 217

অবশ্য এ ব্যক্তির ব্যাপারে (আওফ সালামী) আর কোন রেওয়ায়েত আমি খুঁজে পাই নি । তবে শুআইব ইবনে সালিহ্ সংক্রান্ত এ রেওয়ায়েতটির মূল ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে যে ,তিনি সমরকন্দের অধিবাসী হবেন । আর এ বিষয়টি শিয়া হাদীস সূত্র ও গ্রন্থসমূহে বর্ণিত প্রসিদ্ধ বিষয়সমূহের পরিপন্থী । শুআইব ইবনে সালিহ্ যে রাই শহরের অধিবাসী হবেন তা শিয়া হাদীস গ্রন্থসমূহে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । তবে আমরা এও বলতে পারি যে ,তাঁর পূর্বপুরুষ মূলত সমরকন্দের অধিবাসী ,তবে তিনি রাই শহরেই বড় হবেন । আর একইভাবে আমরা সুফিয়ানীর আগে তাঁর আবির্ভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটি যথাস্থানে উল্লেখ করেছি ।

বাহ্যত আওফ সালামী সিরীয় সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে ,ইরাকের হুকুমতের বিরুদ্ধে নয় এবং সুফিয়ানীর অল্প আগে সে আবির্ভূত হবে । তবে যে জাযীরাহ্ এলাকা তার আন্দোলন ও বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল হবে তা ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত । আর যখনই জাযীরাহ্ শব্দটি অন্য কোন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত না হয়ে ব্যবহৃত হবে তখন এ শব্দ থেকে এতদর্থই বুঝে নিতে হবে যে ,জাযীরাহ্ ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত একটি এলাকার নাম । আর ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের গ্রন্থসমূহেও তা এভাবেই বর্ণিত হয়েছে । অবশ্য এ জাযীরাহ্ জাযীরাহ্-ই রবীআহ্ এবং জাযীরাহ্-ই দিয়ার বাকর নামেও অভিহিত । অতএব ,জাযীরাকে জাযীরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ) অথবা অন্য কোন জাযীরাহ্ বলে গণ্য করা যাবে না । তবে জাযীরার সাথে এ শব্দটি সম্বন্ধিত করলে তা হবে ভিন্ন কথা । বাহ্যত আর তার অবস্থান স্থল হবে তিকরীত -এ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে ,তার আন্দোলন ও উত্থানের আগে এবং একইভাবে তার পরাজয় ও পলায়নের স্থল হবে তিকরীত ,যা আধুনিক ইরাকের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর । আর যা কিছু এ বিষয়টি সমর্থন করে তা হচ্ছে ,তিকরীত তার আন্দোলন ও উত্থান স্থলের অদূরে অর্থাৎ জাযীরার কাছে অবস্থিত । কতিপয় হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে তার অবস্থান স্থল হবে বিকরীত অথবা বাকভীত -এ বাক্যটি তিকরীতের স্থলে ভুলক্রমে লেখা হয়েছে । আর আমাদের এ বক্তব্যের সমর্থন করে বিহার ও শেখ তূসীর গাইবাত গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েতে বিদ্যমান তিকরীত শব্দটি । রেওয়ায়েতে এ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে ,সে (আওফ সালামী) দামেশকের মসজিদে নিহত হবে অর্থাৎ সেখানে সে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হবে অথবা ঐ স্থানে ধৃত ও নিহত হবে । সুতরাং তার আবির্ভাবের বিষয়টি শামের ঘটনাবলীর অন্তর্ভুক্ত যা ইরাকের ঘটনাবলীর সাথেও সংশ্লিষ্ট ।

তৃতীয় পর্যায় : সুফিয়ানীর সেনাভিযান ও বসরার ধ্বংসসাধন

এতদপ্রসঙ্গে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোয় ইরাকে সুফিয়ানীর সেনাভিযান ,সেদেশ দখল এবং সে দেশের জনগণ বিশেষ করে ইমাম মাহ্দী (আ.) ও আহলে বাইতের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের কথা বর্ণিত হয়েছে যা আমরা সুফিয়ানীর আন্দোলন ও অভ্যুত্থান সংক্রান্ত অধ্যায়ে আলোচনা করেছি । তবে এ সব রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ঐ সময়ের ইরাক সরকার এতটা দুর্বল ও অপারগ হবে যে ,তা নিজ সেনাবাহিনী এবং গণবাহিনীর সাহায্য নিয়েও সুফিয়ানীর আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না । আর এরপর ইরাক সরকার ইয়েমেনী ও ইরানী সেনাবাহিনীকে সেদেশে অনুপ্রবেশ করা থেকেও বিরত রাখতে পারবে না । উল্লেখ্য যে ,ইয়েমেনী ও ইরানী বাহিনীসমূহ সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য ইরাকে প্রবেশ করবে । সুফিয়ানীর সেনাবাহিনী খুব সম্ভবত দুর্বল ইরাক সরকারের আহবানে সাড়া দিয়েই সেদেশে অনুপ্রবেশ করবে । দুজাইল ,বাগদাদ ও ইরাকের অন্যান্য স্থানে সুফিয়ানী বাহিনীর যুদ্ধে লিপ্ত হবার কথা রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,সুফিয়ানী ইরাকে বিরোধী দলসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত হবে ।

কিন্তু উক্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহের অর্থ এটিই যে ,ইরানী ও ইয়েমেনী সেনাবাহিনী ইরাক জাতির গণসমর্থন লাভ করবে এবং নির্যাতিত ইরাকী জনগণ হাসিমুখে ইরানী ও ইয়েমেনী সেনাবাহিনীকে বরণ করে নেবে । তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সুফিয়ানী বাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবন ও দমন করার জন্য ইরানী ও ইয়েমেনী বাহিনীকে সাহায্য করবে ।

বসরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত রেওয়ায়তসমূহ তিন প্রকার । যথা- 1 । সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস ,2 । কৃষ্ণাঙ্গদের (যাংগীদের) বিদ্রোহ ও বিপ্লবের মাধ্যমে ধ্বংস এবং    3। ভূমিধ্বস ও  ভূ-গর্ভে দেবে যাওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস ।

নাহজুল বালাগাহ্ ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর খুতবাসমূহে বসরা ধ্বংসের যে কথা বলা হয়েছে তা হলো বসরা নগরীর প্রথম দু টি ধবংস যা আব্বাসী খিলাফতকালে সংঘটিত হয়েছে । আর সকল ঐতিহাসিকও তা উল্লেখ করেছেন । হযরত আলীর বাণীসমূহের অপরাংশ হতে বোঝা যায় তৃতীয় বারের মতো বসরা ধ্বংস হবে ভূমিধ্বসের মাধ্যমে এবং তা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম নিদর্শন ।

হযরত আলী (আ.) নাহজুল বালাগার একটি খুতবায় বসরাবাসীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : তোমরা ঐ নারীর (আয়েশার) সৈনিক এবং ঐ জন্তুর (আয়েশার উষ্ট্রীর) সমর্থক । যখন ঐ পশুটা উচ্চৈঃস্বরে শব্দ করেছিল তখন তোমরা পলায়ন করেছ... তোমরা খুব তাড়াতাড়ি দুঃখভারাক্রান্ত হও এবং তোমাদের প্রতিজ্ঞা আসলে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করারই প্রতিজ্ঞা । তোমাদের ধর্ম হলো নিফাক (কপটতা) এবং তোমাদের পানীয়জল অত্যন্ত তিক্ত ও অব্যবহারযোগ্য । সে তোমাদের মাঝে এসে বসবাস করতে থাকবে সে এ নগরীর পাপাচারের দ্বারা আক্রান্ত হরে । আর যে ব্যক্তি তোমাদেরকে ত্যাগ করবে সে মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার মাঝে স্থান লাভ করবে । যেন আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোমাদের মসজিদ (বসরার মসজিদ) পানিতে ভাসমান জাহাজের বক্ষদেশের মত দাঁড়িয়ে আছে । মহান আল্লাহর আজাব ওপর ও নিচ থেকে এ নগরীর ওপর আপতিত হচ্ছে । আর যে কেউই এর ভেতরে অবস্থান করবে সে-ই নিমজ্জিত হবে । 218

ইবনে আবীল হাদীদ এ খুতবায় আলী (আ.)-এর বাণীসমূহ সম্পর্কে বলেছেন : আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বসরা নগরীর নিমজ্জিত হওয়ার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে ,এ নগরীর জামে মসজিদ ব্যতীত বাকী সকল অংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে । একদল ব্যক্তিকে দেখেছি ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী সংক্রান্ত বই-পুস্তকে যা লিপিবদ্ধ আছে সে সম্পর্কে এ মত পোষণ করে বলেছে তা এ অর্থকেই নির্দেশ করে যে ,বসরা নগরী ও এর বাসিন্দারা যমীন ফেটে যে কালো পানি বের হবে তার দ্বারা নিমজ্জিত ও ধ্বংস হবে । আমার দৃষ্টিতে মনে হয় যা কিছু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তা সংঘটিত হয়েছে । কারণ ,বসরা দু বার নিমজ্জিত হয়েছিল । আব্বাসী খলীফা কায়েম বি আমরিল্লাহর শাসনামলে জামে মসজিদ ব্যতীত সম্পূর্ণ অংশ নিমজ্জিত হয়েছিল । উল্লেখ্য যে ,এ জামে মসজিদ পাখির বক্ষদেশের মতো পানির ওপর দৃশ্যমান ছিল । এ ছাড়া আর কিছুই সেখানে ছিল না । যেমনভাবে আলী (আ.) বসরা ধ্বংস হওয়ার ধরন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তদনুযায়ী পারস্য উপসাগর থেকে পানি আজ ফার্সী দ্বীপ নামে প্রসিদ্ধ একটি অঞ্চল দিয়ে এবং সান্নাম নামের একটি প্রসিদ্ধ পাহাড়ের দিক থেকে বসরা নগরীকে প্লাবিত করেছিল । এর ফলে শহরের ঘরবাড়ী এবং যারা সেখানে ছিল তাদের সবাই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল । এভাবে সেখানে এক বিরাট সংখ্যক অধিবাসী ধ্বংস হয়ে যায় এবং নিমজ্জিত হবার এ দু টি ঘটনার একটি বসরাবাসীদের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যা তারা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে বর্ণনা করে থাকে ।

কিন্তু যাঙ্গীদের (কৃষ্ণাঙ্গদের) বিদ্রোহের ফলে যে ধ্বংসযজ্ঞ সাধিত হয়েছিল তা আব্বাসীদের যুগে অর্থাৎ চতুর্থ হিজরী শতাব্দীর মাঝামাঝিতে সংঘটিত হয়েছিল । আলী (আ.) বারবার এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন । যেমন তিনি একটি খুতবায় বলেছেন : হে আহনাফ! আমি যেন দেখতে পাচ্ছি একটি সেনাদল অগ্রসর হচ্ছে যাদের পদচারণায় না ধুলোবালি উড়ছে ,না যোদ্ধাদের গুঞ্জন ,না তাদের বাহক পশুদের লাগামের ঝনঝন শব্দ আর না তাদের অশ্বসমূহের হ্রেষাধ্বনি শোনা যাচ্ছে ;উট পাখির পা ফেলার মতো পা ফেলে ফেলে তারা যমীনকে কর্ষিত ভূমির মতো করছে । 219

মরহুম সাইয়্যেদ রাযী বলেছেন ,হযরত আলী (আ.) এ সব বাক্য ব্যবহার করে যাঙ্গীদের নেতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন । এরপর তিনি বলতে থাকেন : তোমাদের আবাদকৃত সড়ক ও জনপদসমূহের জন্য আক্ষেপ এবং তোমাদের সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ির জন্য আক্ষেপ যেগুলোতে শকুনের ডানার মতো বারান্দা এবং তার খুঁটিগুলো হাতীর শুঁড়ের মতো হবে । সেগুলো ঐ সব ব্যক্তির হাতে ধ্বংস হবে যাদের নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ ও ক্রন্দন করা হবে না এবং যাদের অনুপস্থিত ব্যক্তিরা নিখোঁজ বলে গণ্য হবে না ।

কিরমিতীর নেতৃত্বে যাঙ্গীদের বিদ্রোহ ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে প্রসিদ্ধ ঘটনা বলে গণ্য । আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাদের যে সব অবস্থার বিবরণ প্রদান করেছেন সেগুলো তাদের সাথে হুবহু মিলে যায় । আর এ বিদ্রোহ আসলে খলীফাদের আমোদ-প্রমোদে মত্ত থাকা এবং দাস ও সাধারণ জনগণের সাথে তারা যে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছিল তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সংঘটিত হয়েছিল । এ কারণেই তার সকল সৈন্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের অন্তর্ভুক্ত যাদের কোন সওয়ারী পশু ছিল না অর্থাৎ তারা সবাই ছিল পদাতিক ।

তবে বসরার যে ধ্বংসের ঘটনা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিদর্শন হবে তা অনেক রেওয়ায়েতেই বর্ণিত হয়েছে । বসরা ঐ সব নগরীর অন্তর্ভুক্ত যেগুলো উল্টে দেয়া হবে । আর পবিত্র কোরআনেও এতৎসংক্রান্ত বিবরণ বিদ্যমান । অর্থাৎ যে সব শহর ভূ-গর্ভে প্রোথিত এবং মহান আল্লাহর আযাবের কারণে ধ্বংস হবে সেগুলোকেই মুতাফিকাহ্ (উল্টানো) বলা হয়েছে । এ সব শহরের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বসরা যা তিনবার উল্টে দেয়া হয়েছে এবং চতুর্থ পর্যায় এখনও বাস্তবায়িত হয় নি ।

ইবনে মাইসাম বাহরানীর শারহু নাহজিল বালাগায় (নাহজুল বালাগার ব্যাখ্যাগ্রন্থ) বর্ণিত হয়েছে : যখন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) উষ্ট্রের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি একজন আহবানকারীকে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দেন যে ,জনগণ যেন আগামী তিন দিন জামায়াতের নামাযে উপস্থিত হয় এবং শরীয়তসঙ্গত কারণ ব্যতীত এ নির্দেশ অমান্য না করে । তারা যেন এমন কোন কাজ না করে যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে যায় । নির্দিষ্ট দিনে যখন সকলে জমায়েত হলো তখন আলী (আ.) জামে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামায়াতে ফজরের নামায আদায় করলেন । নামাযের পর তিনি কিবলা পেছনে রেখে মুসাল্লার ডান পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন এবং জনগণের উদ্দেশে বক্তৃতা করলেন । তিনি যেভাবে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত সেভাবে তাঁর প্রশংসা করলেন ,মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ প্রেরণ করলেন এবং সকল মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । এরপর তিনি তাঁর বক্তব্য এভাবে শুরু করলেন : হে বসরাবাসী! যে শহর তার নিজ অধিবাসীদেরকে এখন পর্যন্ত তিনবার মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে সেই শহরের অধিবাসী! মহান আল্লাহ্ চতুর্থ পর্যায়টিও বাস্তবায়িত ও পূর্ণ করবেন । হে নারীর (আয়েশা) সৈন্যরা এবং ঐ সওয়ারী পশুর (উষ্ট্রী) সমর্থকরা! তা যখন উচ্চৈঃস্বরে ধ্বনি তুলেছে তখনই তোমরা তাতে সাড়া দিয়েছ । আর যে সময় তা ধরাশায়ী হয়েছে তখন তোমরা পরাজিত হয়েছ (এবং পলায়ন করেছ) ;তোমরা খুব দ্রুত দুঃখভারাক্রান্ত হও ;তোমাদের ধর্ম হচ্ছে কপটতা (নিফাক) এবং তোমাদের পানীয় জল তিক্ত ও ব্যবহারের অযোগ্য ;তোমাদের শহরের মাটি মহান আল্লাহর শহরগুলোর মধ্যে নিকৃষ্ট গন্ধের অধিকারী এবং ঐশী দয়া ও করুণা হতে তা সবচেয়ে দূরে রয়েছে । এ শহরের প্রতি দশ জনের নয় জনই দুষ্টু প্রকৃতির এবং ধ্বংসাত্মক কর্ম সম্পাদনকারী ;যে ব্যক্তি এ নগরীতে বসবাস করবে সে এ নগরীর পাপাচারের প্রভাবাধীন থাকবে । আর যে ব্যক্তি এ থেকে বের হয়ে যাবে সে মহান আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভুক্ত হবে । যেন আমি দেখতে পাচ্ছি ,তোমাদের শহরকে পানি এমনভাবে ঢেকে ফেলেছে যে ,কেবল মসজিদের স্তম্ভ ব্যতীত আর কোন কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । মসজিদটি যেন একটি পাখির বক্ষের মতো সমুদ্রের মাঝখানে স্পষ্ট ভাসমান ও দৃশ্যমান । এই সময় আহনাফ ইবনে কাইস দাঁড়িয়ে আরজ করলেন : হে আমীরুল মুমিনীন! এ ঘটনা কখন সংঘটিত হবে ? তিনি বললেন : হে আবু বাহর! তুমি সেই সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকবে না ;তোমার ও ঐ সময়ের মধ্যে বহু শতাব্দী ব্যবধান থাকবে । তবে তোমাদের মধ্যকার উপস্থিত ব্যক্তিরা যারা অনুপস্থিত আছে তাদেরকে এবং তারাও তাদের দীনী ভাইদেরকে জানাবে । কারণ ,যখনই তারা দেখতে পারে যে ,তাদের নলখাগড়ার ঝাঁড়সমূহ ঘরবাড়ি ও গগণচুম্বী অট্টালিকায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে তখনই তোমরা সেখান থেকে পলায়ন করবে । সে দিন তোমাদের জন্য কোন বসরা-ই আর বিদ্যমান থাকবে না ।

আলী (আ.) তাঁর ডান দিকে তাকিয়ে বললেন : তোমাদের ও আবুল্লার মাঝখানে কতটুকু ব্যবধান আছে ? তখন মুনযির ইবনে জারুদ দাঁড়িয়ে বললেন : আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক ,ব্যবধান চার ফারসাখের । তিনি বললেন : ঐ খোদার শপথ যিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নবুওয়াতসহ প্রেরণ করেছেন ,তাঁকে সম্মান দিয়েছেন ,তাঁর বিশেষ রিসালাতের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে অর্পণ করেছেন এবং তাঁর পবিত্র আত্মাকে চিরস্থায়ী বেহেশতে স্থান দিয়েছেন । তোমরা যেভাবে আমার কাছ থেকে এখন শুনতে পাচ্ছ তেমনি আমিও তাঁকে বলতে শুনেছি : হে আলী! যে স্থানের নাম বসরা ,সেই স্থান ও যে স্থানকে আবুল্লা বলা হয় সেই স্থানের মাঝখানে ব্যবধান হচ্ছে চার ফারসাখ । আর শীঘ্রই এ স্থান কর আদায়কারীদের আড্ডায় পরিণত হবে । সেখানে আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার ব্যক্তি শহীদ হবে যারা বদর যুদ্ধের শহীদদের সমমর্যাদার অধিকারী হবে ।

মুনযির তখন বললেন : হে আমীরুল মুমিনীন! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক । কারা তাদেরকে হত্যা করবে ? তখন আলী (আ.) বললেন : তারা শয়তানের ন্যায় কুৎসিত চেহারা ও উৎকট গন্ধযুক্ত ব্যক্তিদের (দাসদের) হাতে নিহত হবে । এ সব হত্যাকারী হবে খুবই লোভী কিন্তু তারা লুটপাট করে খুব সামান্যই লাভ করতে পারবে । ঐ সব লোকের অবস্থা কতই না উত্তম! যারা এদের হাতে নিহত হবে । তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একদল লোক অগ্রগামী হবে যারা ঐ সময়ের দাম্ভিক প্রকৃতির ব্যক্তিদের কাছে হীন-নীচ বলে গণ্য ;যদিও তারা পৃথিবীতে অখ্যাত কিন্তু ঊর্ধ্বজগতে তারা পরিচিত ও খ্যাতির অধিকারী । আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাদের জন্য ক্রন্দন করবে । অতঃপর মহানবী (সা.)-এর দু চোখ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং তিনি বললেন : হায় বসরা! তোমার জন্য আক্ষেপ ঐ সেনাদলের ধ্বংসযজ্ঞ করার কারণে ,যাদের না শব্দ আছে আর না পথ চলার সময় তারা ধুলো-বালি উড়ায় ।

মুনযির পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন : আপনি যে বললেন তা বেপরোয়া একদল লোকের দ্বারা সংঘটিত হবে এবং তারা বসরাবাসীদের ভাগ্যে বিপর্যয় ঘটাবে সেটি কী ? তখন আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বললেন : এ শব্দটির (ওয়া অর্থাৎ আক্ষেপ) দু টি দিক আছে ,যেগুলোর একটি করুণার দিক এবং অপরটি আযাবের দিক । হ্যাঁ ,হে জারুদ তনয়! বড় বড় রক্তপাতকারী যাদের এক অংশ অপর অংশকে হত্যা করবে এবং এর মধ্যে আছে ঐ ফিতনা ও গোলযোগ যার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি ও শহর ধ্বংস এবং সম্পদ লুটপাট করা হবে এবং ঐ সব নারীর বন্দিত্ব যাদের মস্তক অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থায় কর্তন করা হবে । হায় আফসোস! হায় আফসোস! তাদের কাহিনী কতই না আশ্চর্যজনক!

ঐ সব নিদর্শনের অন্তর্গত হচ্ছে এক চোখা ভয়ঙ্কর দাজ্জাল যার ডান চোখ কানা এবং তার অপর চোখে রক্তমিশ্রিত চর্বিত মাংসের ন্যায় কিছু একটা থাকবে । তার চোখ হবে আঙ্গুরের বীচির মতো যা পানির ওপর ঘুরছে এবং যেন তা কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে । বসরার একদল অধিবাসী যাদের সংখ্যা আবুল্লার শহীদদের সমান এবং যাদের ইঞ্জিলসমূহ বহন করার উপযোগী কাপড়ের তৈরি বেল্ট আছে তারা তার অনুসরণ করবে । তাদের আক্রমণে একদল নিহত হবে এবং একদল পলায়ন করবে । এরপর ভূমিকম্প শুরু হবে ,সব কিছু নিক্ষিপ্ত হবে ,ভূমিধ্বস সংঘটিত হবে ,চেহারাসমূহ পরিবর্তন হবে ,দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে ,অতঃপর মহাপ্লাবন হবে ।

হে মুনযির! বসরা নগরীর কথা যা পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহেও বর্ণিত আছে তাতে বসরা ছাড়াও আরো তিনটি নাম রয়েছে । ঐ সব গ্রন্থ সম্পর্কে জ্ঞাত আলেমরা ছাড়া আর কেউ সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত নয় । আর ঐ নাম তিনটি হলো : খারীবাহ্ ,তাদমুর এবং মুতাফাকাহ্ । অবশেষে তিনি বললেন : হে বসরাবাসী! মহান আল্লাহ্ মুসলমানদের সব শহর ও নগরের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিদেরকে তোমাদের মাঝেই স্থান দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে অন্য সকলের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন ,কিবলার দিক থেকে অন্য সকলের ওপর তোমরা শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ,কারণ ,তোমাদের কিবলা মাকাম-ই ইবরাহীমের উল্টো দিকে অবস্থিত । আর তা এমন এক জায়গা যেখানে পবিত্র মক্কাস্থ জামায়াতের নামাযের ইমাম দাঁড়ান ;তোমাদের কারীরা সর্বোত্তম কারী ;তোমাদের পরহেজগাররা জনগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেজগার । তোমাদের ইবাদতকারীরা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী । তোমাদের ব্যবসায়ীরা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং লেন-দেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সত্যবাদী । তোমাদের দানশীলরা এ কারণে জনগণের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রিয় । তোমাদের ধনবানরা মানব জাতির মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ও নম্র । তোমাদের যোগ্য ব্যক্তিরা সচ্চরিত্রের দিক থেকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ;তোমরা জনগণের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয় দানকারী ;যা তোমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তা নিয়ে তোমরা কষ্ট কর না ;জামায়াতের নামাযে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে তোমাদের আগ্রহ অন্য সকলের চেয়ে বেশি । তোমাদের ফলগুলো সর্বোত্তম ফল । তোমাদের ধন-সম্পদ সবচেয়ে বেশি এবং তোমাদের সন্তানরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও সতর্ক ,তোমাদের নারীরা সবচেয়ে সতী এবং সবচেয়ে পতিভক্ত । মহান আল্লাহ্ তোমাদের হাতের মুঠোয় পানি দিয়েছেন যা তোমরা সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের জীবন ধারণের জন্য ব্যবহার করে থাক । তিনি সমুদ্রকে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধির কারণ করে দিয়েছেন ;যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও দৃঢ়পদ হও তাহলে বেহেশতের তূবা বৃক্ষ তোমাদের ওপর ডাল-পালা মেলে ছায়া দেবে । তবে মহান আল্লাহর ইচ্ছা এমনই এবং তাঁর ফয়সালা বাস্তবায়িত হবেই ;আর মহান আল্লাহর হিকমতের পরিপন্থী কোন কাজ করার ক্ষমতা কোন ব্যক্তির নেই । তিনিই তাঁর বান্দাদের দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন । মহান আল্লাহ্ বলেছেন : এমন কোন অঞ্চল নেই যার অধিবাসীদেরকে কিয়ামত দিবসের আগে ধ্বংস অথবা শাস্তি প্রদান করব না । (সূরা ইসরা : 10) আর এ সত্য পবিত্র কোরআনে লিপিবদ্ধ আছে ।

তিনি আরো বললেন : একদিন মহানবী (সা.) একটি বিষয় সম্পর্কে আমাকে বললেন এবং আমি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি সেখানে তাঁর সাথে ছিল না । তিনি বলেছিলেন : রুহুল আমীন হযরত জিবরাইল (আ.) আমাকে তাঁর ডান কাঁধে বসিয়ে ভ্রমণ করতে নিয়ে গেলেন যাতে আমি যমীন (পৃথিবী) এবং এর ওপর যা কিছু আছে তা প্রত্যক্ষ করি । তিনি আমার কাছে যমীনের চাবি অর্পণ করলেন এবং ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু ছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু থাকবে সব কিছু সম্পর্কে আমাকে অবগত করলেন । যেমনভাবে আমার পিতা আদম (আ.)-এর পক্ষে এ সব বিষয় জানা কঠিন ছিল না তেমনি এ সব বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া এবং এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা আমার জন্য কঠিন হয় নি । হযরত আদমকে মহান আল্লাহ্ সব নাম শিক্ষা দিয়েছিলেন । কিন্তু ফেরেশতারা সেগুলো জানত না । অতঃপর আমি সমুদ্রের তীরে একটি নগর যা বসরা নামে পরিচিত তা দেখতে পেলাম । ঐ নগরটি আকাশ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী এবং সমুদ্রের পানির সবচেয়ে নিকটবর্তী নগরী ছিল । ঐ অঞ্চলটি অন্য সকল অঞ্চল অপেক্ষা দ্রুত ধ্বংস হবে । এ শহরটির মাটি সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে । এ শহরটি বিগত শতাব্দীগুলোতে কয়েক দফা ভূ-গর্ভে প্রোথিত হয়ে ধ্বংস হয়েছে । আবারও তা ধ্বংস হবে । হে বসরাবাসী! এ নগরীর আশে-পাশের গ্রামগুলোর জন্য আফসোস! যেদিন সেখানে (সমুদ্রের) পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করবে সেদিনটি তোমাদের জন্য এক বিরাট বিপদের দিন বলে গণ্য হবে । আমি তোমাদের শহরের যে স্থান থেকে পানি ভূমি ফেটে ফোয়ারা আকারে বের হবে সে স্থানটি চিনি । এর আগে তোমাদের ওপর বেশ কতগুলো বড় ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটবে যেগুলো তোমাদের দৃষ্টির অন্তরালে আছে । তবে আমরা এগুলোর সাথে পরিচিত । যে ব্যক্তি এ নগরীর সমুদ্র-গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার সময় তা ত্যাগ করবে সে মহান আল্লাহর দয়া ও করুণার মাঝে স্থান লাভ করবে । আর যে ব্যক্তি এ বিষয়ের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে এ শহরে অবস্থান করবে সে অপরাধ ও পাপের মধ্যে জড়িয়ে যাবে । আর মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অন্যায় করেন না । 220

আমরা এ হাদীসের সাথে নাহজুস সাআদাহ্ গ্রন্থ এবং মুস্তাদরাক নাহজিল বালাগাহ্ গ্রন্থ থেকে একটি অনুচ্ছেদ যোগ করেছি । ইবনে কুতাইবাহ্ প্রণীত উয়ূন আখবারির রিযা নামক গ্রন্থ থেকে এ ভাষণের আরেকটি অনুচ্ছেদ হাসান বাসরীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে । অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপ : মহানবী (সা.) থেকে আমি শুনেছি যে ,বসরা নামক একটি অঞ্চল জয় করা হবে যা কিবলার দিক থেকে সবচেয়ে প্রামাণ্য ভূমি বলে গণ্য হবে । এ নগরীর কারীরা সর্বশ্রেষ্ঠ কারী ,এ নগরীর ইবাদতকারীরা সর্বোত্তম ইবাদতকারী ,এ নগরীর আলেমরা সবচেয়ে জ্ঞানী ,এ নগরীর দানশীল ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী ;এ নগরী থেকে আবুল্লা নামের অঞ্চলটির মধ্যকার দূরত্ব চার ফারসাখ । এ শহরের জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে চল্লিশ হাজার ব্যক্তিকে শহীদ করা হবে । তাদের শহীদরা আমার সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদদের মতো হবে ।

ঐতিহাসিক সূত্র ও গ্রন্থসমূহ থেকে জানা যায় যে ,ভবিতব্য বিভিন্ন ঘটনা সংক্রান্ত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর খুতবাহ্ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল । তবে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত হওয়া এবং অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তুর দিক থেকে এ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ।

যে দু টি রেওয়ায়েত এখানে আমরা উল্লেখ করেছি সেগুলোয় কেবল ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া এবং পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে বসরা নগরীর ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে । আর এটি হবে এমন এক ঘটনা যা পূর্ববর্তী দু টি পর্যায়ে অর্থাৎ বসরা নিমজ্জিত হওয়া ও যাঙ্গীদের বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হয়নি । আর বাহ্যত এটিই হচ্ছে বসরা নগরীর ঐ ভূমিধ্বস এবং ধ্বংসের ঘটনা যা ইমামদের রেওয়ায়েতসমূহে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম নিদর্শন হিসাবে উল্লিখিত হয়েছে । সম্ভবত এ ঘটনাটি সুফিয়ানী কর্তৃক ইরাক দখল হওয়ার আগে সে দেশটির অত্যাচারী শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে কালো পতাকাবাহী (ইরানী) সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলাকালে অথবা সুফিয়ানী কর্তৃক ইরাক দখল হওয়ার পর সংঘটিত হবে । আর যেভাবে এ রেওয়ায়েতদ্বয়ে বসরার শহীদদের সংখ্যা (সত্তর অথবা চল্লিশ হাজার) ,বদর যুদ্ধের শহীদদের মতো তাঁদের মর্যাদা এবং তাঁদের জন্য আলী (আ.)-এর অশ্রুপাত বর্ণিত হয়েছে ,ঠিক সেভাবে আরেকটি রেওয়ায়েতেও বসরার শহীদদের জন্য মহানবীর অশ্রুপাতের কথা উল্লিখিত হয়েছে । প্রথম রেওয়ায়েতে তাঁদের শাহাদাতের স্থানটি বসরা ও আবুল্লার মাঝখানে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যা আজ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে অবস্থিত বসরার একটি মহল্লা । অথচ ইবনে কুতাইবার রেওয়ায়েতে তাঁদের শাহাদাতবরণের স্থান জামে মসজিদের পাশে বলে উল্লিখিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,জামে মসজিদের অর্থ হচ্ছে বসরার মসজিদ ।

সুতরাং নিরুপায় হয়ে বলতেই হয় যে ,হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগেই অবশ্য তাদের শাহাদাতবরণের ঘটনা সংঘটিত হবে । কারণ ,তাঁর আবির্ভাবের পর এমন কোন অত্যাচারী থাকবে না যাদের দ্বারা শহীদরা হীন ও অপদস্থ হতে পারে । আর রেওয়ায়েত থেকেও এমনই প্রতীয়মান হয় । তবে তাঁদের শাহাদতবরণের সময়কাল নির্দিষ্ট করা সংক্রান্ত কোন ইঙ্গিত বিদ্যমান নেই । আর একইভাবে রেওয়ায়েতে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়নি যে ,তাঁরা কাদের হাতে নিহত হবেন এবং সম্ভবত হাদীসটিতে ভাইয়েরা-সমর্থকরা শব্দ দু টি ভুলক্রমে অন্য শব্দের স্থলে লেখা হয়েছে ।

যে দাজ্জালের কথা বলা হয়েছে তার আগমন তাদের পরে হবে । সত্তর হাজারের অধিক ইঞ্জিলের অনুসারী খ্রিস্টান তার সমর্থক হবে । তবে এ দাজ্জাল প্রতিশ্রুত যে দাজ্জাল ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পর আবির্ভূত হবে সে নাও হতে পারে । কারণ ,ইবনে কুতাইবার রেওয়ায়েতটিতে কেবল আবুল্লার শহীদদের বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং তাতে দাজ্জালের নাম উল্লেখ করা হয় নি । অপরদিকে ,ইবনে মাইসাম এ রেওয়ায়েতের সূত্র উল্লেখ করেন নি । ফলে এ রেওয়ায়েত সম্পর্কে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন । আর মহান আল্লাহ্ই এ ব্যাপারে কেবল জ্ঞাত আছেন ।

جاء فرعون و من قبله و المؤتفكات بالخاطئة

আর ফিরআউন এবং তার পূর্বে যারা ছিল তারা এবং পাপের কারণে ওলট-পালট করে দেয়া নগরসমূহ পাপাচারে লিপ্ত ছিল 221 -এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরে নুরুস সাকালাইনে বর্ণিত হয়েছে যে ,ওলট-পালট করে দেয়া নগরসমূহ বলতে বসরাকে বোঝানো হয়েছে । আর একইভাবে ওলট-পালট করা ভূমিসমূহকে ভূ-গর্ভে তিনি প্রোথিত করবেন (সূরা নাজম : 53) -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,ওলট-পালটকৃত ভূমি বা শহরসমূহ বলতে বসরার অধিবাসীদের সহ স্বয়ং এ নগরীকে বোঝানো হয়েছে যা ইতোমধ্যে ওলট-পালট করা হয়েছে । আর ইবরাহীমের অনুসারীরা ,মাদায়েনের অধিবাসীরা (হযরত শুআইবের অনুসারীদের নগরী হচ্ছে মাদায়েন) এবং ওটল-পালটকৃত নগরীসমূহ । (সূরা তাওবাহ্ : 70) -মহান আল্লাহর এ বাণীর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,তারা লুতের সম্প্রদায় এবং তাদের নগরী ওলট-পালট করে ধ্বংস করা হয়েছে ।

মান লা ইয়াহদারুহুল ফাকীহ্ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে জুওয়াইরিয়াহ্ ইবনে মুসহির আবদী থেকে একটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : আমরা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর সাথে খারেজীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলাম । (পথিমধ্যে) আসর নামাযের সময় হলে বাবিলে (ব্যাবিলনে) পৌঁছলাম । আলী (আ.) জনগণের সাথে যাত্রাবিরতি করলেন । অতঃপর তিনি জনগণের দিকে তাকিয়ে বললেন : হে লোকসকল! এটি একটি অভিশপ্ত ভূ-খণ্ড এবং এ পর্যন্ত তিনবার (আরেকটি রেওয়ায়েতে দু বার) এখানে মহান আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছে । আর বর্তমানে এ অঞ্চল ঐশী শাস্তির তৃতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য অপেক্ষমান । আর এ ভূ-খণ্ড ঐ সব ভূ-খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো ওলট-পালট করা হয়েছে ।

চতুর্থ পর্যায় : হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক ইরাক মুক্তকরণ

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ইরাক আগমন ,সুফিয়ানী বাহিনীর অবশিষ্টাংশ এবং বিভিন্ন খারেজী দল-উপদলের হাত থেকে সেদেশ মুক্তকরণ এবং সেদেশকে তাঁর প্রশাসন ও সরকারের রাজধানী ও কেন্দ্রস্থল নির্বাচিত করার ব্যাপারে অগণিত হাদীস বিদ্যমান ।

ইমাম মাহ্দী (আ.)এর ইরাক আগমনের সুনির্দিষ্ট সময় সংক্রান্ত কোন বিষয় আমাদের হস্তগত হয় নি । তবে তাঁর আবির্ভাব আন্দোলনের আলোচনা প্রসঙ্গে বর্ণিত হবে যে ,আবির্ভাব ও হিজায মুক্ত করার কয়েক মাস পরে আহ্ওয়াযের অদূরে ইস্তাখরের বাইদা অঞ্চলে (কুহে সেফীদ) বিরোধী শক্তিসমূহের সাথে তাঁর সঙ্গী-সাথীদের প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হবে । এ যুদ্ধে সুফিয়ানী বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করবে । অতঃপর ইমাম মাহ্দী আকাশ পথে এক স্কোয়ার্ড্রন বিমান সহযোগে ইরাকে প্রবেশ করবেন । কারণ , হে জিন ও মানব জাতি! যদি তোমরা আকাশ ও স্থল পথে দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হও তাহলে অতিক্রম করো তো দেখি । তবে মহান আল্লাহর শক্তি ও আধিপত্য ব্যতীত তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না (সূরা রাহমান : 32) -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাকির (আ.)-এর হাদীস থেকে উপরিউক্ত বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে যায় । তিনি বলেছেন : আল কায়েম আল মাহ্দী ভূমিকম্পের দিবসে আলোর হাওদা সহকারে এমনভাবে ভূমিতে অবতরণ করবে যে ,কোন ব্যক্তিই বুঝতে সক্ষম হবে না যে ,সে হাওদাসমূহের কোনটিতে আছে । অবশেষে সে কুফা নগরীতে অবতরণ করবে ।

যদি এ রেওয়ায়েতটি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে মুজিযাগত দিক ছাড়াও এ রেওয়ায়েত থেকে এ বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে ,ইমাম মাহ্দীর জীবন রক্ষা করার জন্য এ ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ও সতর্কতা গ্রহণ করা তখন অপরিহার্য হয়ে যাবে ।

তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূল পরিবেশ বজায় থাকার পাশাপাশি ইরাকের অভ্যন্তরীণ অবস্থা তখন যতটা হওয়া উচিত ততটা শত্রুমুক্ত থাকবে না । অবতরণ করবে এবং অবশেষে সে কুফায় অবতরণ করবে -এ বাক্যদ্বয় থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,তিনি সরাসরি কুফা বা নাজাফে প্রবেশ করবেন না ;বরং কতিপয় রেওয়ায়েত অনুসারে তিনি প্রথমে (ইরাকের) রাজধানীতে অথবা কোন এক সামরিক ঘাঁটিতে অথবা কারবালায় অবতরণ করবেন ।

রেওয়ায়েতসমূহে ইরাকে তাঁর কর্মতৎপরতা ও মুজিযাসমূহের এক বিরাট অংশের বিবরণ এসেছে । এতদপ্রসঙ্গে আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আন্দোলন সংক্রান্ত অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং এ অধ্যায়ে যে সব বিষয় ইরাকের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করব । এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইরাকের অভ্যন্তরীণ অবস্থা অনুকূলে আনা এবং বিরাট সংখ্যক বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করা । কারণ ,রেওয়ায়েতসমূহে এমনটিই বণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) ঐ সময় কুফায় (ইরাকে) প্রবেশ করবেন যখন সেখানে তিনটি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলতে থাকবে । বাহ্যত এ দলসমূহের প্রথম দলটি হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থক ,দ্বিতীয়টি হবে সুফিয়ানীর অনুসারী এবং তৃতীয়টি বিদ্রোহীদের সাথে সংশ্লিষ্ট । ইমাম বাকির (আ.) থেকে আমর ইবনে শিমর বর্ণনা করেছেন : ইমাম বাকির (আ.) মাহ্দী (আ.)-কে স্মরণ করলেন ,অতঃপর বললেন : সে যখন কুফায় প্রবেশ করবে তখন তিনটি পতাকাবাহী দল কুফাকে অশান্ত ও গোলযোগপূর্ণ করে রাখবে । আর কুফায় মাহ্দীর প্রবেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং কুফা ইমামকে বরণ করার জন্য পূর্ণরূপে উপযোগী হবার পরপরই সে সেখানে প্রবেশ করবে এবং মিম্বারে আরোহণ করে এমনভাবে বক্তৃতা করবে যে ,এতে জনগণ তীব্রভাবে ক্রন্দন করবে এবং এ কারণে তারা তার কোন কথাই শুনতে পারবে না । 222

এ হাদীস এবং এতাদৃশ্য অন্যান্য হাদীসে কুফা বলতে সমগ্র ইরাককে বোঝানো হয়েছে । সুতরাং ইরাকে পতাকাবাহী তিন দলের অস্তিত্ব ,যে রেওয়ায়েতসমূহে সুফিয়ানীর পরাজিত হবার পর ইরাকে ইরানীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর পরিপন্থী নয় । যেমন পরবর্তী মুস্তাফীদ রেওয়ায়েতটি যা শিয়া-সুন্নী হাদীস সূত্রসমূহে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) ও ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে ।

ইমাম বাকির বলেছেন : কালো পতাকাসমূহ খোরাসান থেকে কুফায় অবতরণ করবে এবং যখন মাহ্দী আবির্ভূত হবে তখন তারা তার হাতে বাইআত অর্থাৎ আনুগত্যের শপথ (নবায়ন) করার জন্য তার কাছে উপস্থিত হবে । 223

সুতরাং ইরাকে সামরিক প্রাধান্য ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানী সেনাবাহিনীর হাতেই থাকবে । তবে ইরাকের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও জনগণ ইতোমধ্যে আমরা যা উল্লেখ করেছি তদনুযায়ী ইরাকে বিদ্যমান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের টানাপড়েন ও দ্বন্দ্বের শিকার হবে ।

যে সব রেওয়ায়েতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে শত্রু মনোভাবাপন্ন দল ও বিদ্রোহী দলগুলো ধ্বংস ও বিলুপ্ত হবে সে সব রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,তাঁর বিরোধী আন্দোলনসমূহ সংখ্যায় অনেক হবে । এগুলো হতে পারে খারেজী সম্প্রদায়ভুক্ত অথবা সুফিয়ানী সমর্থক অথবা অন্যান্য বিরোধী গোষ্ঠীভুক্ত ।

ইমাম মাহ্দী তাঁর প্রপিতামহ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে যে অঙ্গীকার লাভ করেছেন তা বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করার জন্য কঠোরতা প্রদর্শন করবেন এবং যে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবে তাকেই তিনি হত্যা করবেন । ইমাম বাকির (আ.) থেকে এতদপ্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে : নিজ উম্মতের সাথে মহানবী (সা.)-এর আচরণ ছিল কোমল ;তিনি জনগণের সাথে নম্র ব্যবহার করতেন ,তাদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল দয়ার্দ্র ;কিন্তু কায়েমের (আল মাহ্দী) নীতি হবে বিরোধী এবং অনিষ্টকামীদের হত্যা ;মহানবী (সা.) থেকে এ ব্যাপারে যে লিখিত সনদ তার সাথে আছে সেই লিখিত সনদ বলে তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে । সে এভাবে সামনে এগিয়ে যাবে এবং কাউকে তওবা করতে বলবে না । ঐ ব্যক্তির জন্য আফসোস যে তার আদেশ অমান্য করবে । 224

যে সনদটি তাঁর সাথে আছে তা হচ্ছে এমন এক অঙ্গীকার পত্র যা তাঁর প্রপিতামহ মহানবী (সা.)-এর কণ্ঠে এবং হযরত আলী (আ.)-এর হাতে লিখিত । এ সনদে উল্লিখিত হয়েছে : তাদেরকে হত্যা কর ;আবারও হত্যা কর এবং কাউকে তওবা করতে বলো না ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত : আমাদের কায়েম (আল মাহ্দী) নতুন দায়িত্ব ও নতুন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আবির্ভূত হবে এবং বিপ্লব করবে । আরবদের সাথে সে কঠোর আচরণ করবে এবং তরবারি ব্যতীত তার আর কোন কাজ নেই । সে কাউকে তওবা করতে বলবে না এবং মহান আল্লাহর পথে সে কোন ভর্ৎসনা ও তিরস্কারকারীর তিরস্কারের পরোয়াও করবে না । 225

নতুন বিষয় যা উপরিউক্ত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ হচ্ছে ঐ ইসলাম ধর্ম যা অত্যাচারীদের হাতে নিশ্চি হ্ন হয়েছে এবং মুসলমানরাও যা থেকে দূরে সরে গেছে । ইসলাম ধর্ম ও পবিত্র কোরআন তাঁর মাধ্যমে পুনর্জীবন লাভ করবে ;আর এ বিষয়টি যে সব আরব তাদের বিদ্রোহী তাগুতী শাসকশ্রেণীর আনুগত্য করে এসেছে তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে । এ কারণেই তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত : কায়েম (আল মাহ্দী) সংগ্রাম ও যুদ্ধ চলাকালে এমন সব সমস্যা ও বিপদের সম্মুখীন হবে মহানবীও যেগুলোর মোকাবিলা করেন নি । যখন মাহনবী (সা.) মানবমণ্ডলীর কাছে প্রেরিত হলেন তখন তারা খোঁদাইকৃত পাথর ও কাঠের প্রতিমা উপাসনা করত ;তবে কায়েম আল মাহ্দীর যুগে জনগণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং তারা মহান আল্লাহর কিতাবের অপব্যাখ্যা ও এর মনগড়া তাফসীর করবে । আর এর বশবর্তী হয়েই তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে । 226

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ,তাদের অসৎ ও দরবারী আলেমরা এবং লম্পট শাসকশ্রেণী কিভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের প্রশাসন ও সরকারের সাথে শত্রুতাকে বৈধতা দানের জন্য মহান আল্লাহর আয়াতসমূহের মনগড়া ব্যাখ্যা দেবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে ।

কতিপয় রেওয়ায়েতের ভাষ্য অনুসারে মাহ্দী (আ.)-এর প্রচণ্ড আক্রমণ মুনাফিকদের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হবে যারা ইসলামের লেবাসে নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখবে । এমনকি তাদের কতিপয় ব্যক্তি নিজেদেরকে মাহ্দী (আ.)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী-সাথীদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার চেষ্টা চালাবে । কিন্তু তিনি ঐ নূর (আলো) ও হিকমাত (প্রজ্ঞা) যা মহান আল্লাহ্ তাঁর হৃদয়ে দান করেছেন তা দিয়ে তিনি তাদেরকে শনাক্ত করবেন ।

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : যখন ঐ লোকটি কায়েম আল মাহ্দীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে তাকে আদেশ-নিষেধ করতে থাকবে তখন মাহ্দী আদেশ দিয়ে বলবে যে ,তাকে এ কাজ হতে বিরত কর । অতঃপর মাহ্দী ঐ লোকটির মস্তক কর্তন করার আদেশ দেবে । আর ঐ সময় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে (কাফের ও মুনাফিকদের) অন্তঃকরণসমূহে মাহ্দীর ভয় ব্যতীত আর কিছুই থাকবে না । 227

কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,কখনো কখনো শত্রুদের নিশ্চি ‎‎ হ্ন করার অভিযান প্রক্রিয়া এমন এক জায়গায় পৌঁছবে যে ,তিনি বিরোধী একদলকে পুরোপুরি নিশ্চি ‎‎ হ্ন করে দেবেন ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : যে সময় কায়েম আল মাহ্দী কিয়াম করবে তখন সে কুফার দিকে অগ্রসর হবে । প্রায় বারো হাজার লোকের সমন্বয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী যাদেরকে বাতারীয়াহ্ বলে অভিহিত করা হবে তারা শহর থেকে বের হয়ে মাহ্দীর (কুফা আগমনের) পথ রুদ্ধ করে দেবে এবং তাকে বলবে : আপনি যে পথে এসেছেন সে পথেই ফিরে যান । ফাতেমার বংশধরদের প্রতি আমাদের কোন প্রয়োজন নেই । অতঃপর সে তার তরবারির কোষ উন্মুক্ত করবে এবং তাদের একজনকেও জীবিত রাখবে না । অতঃপর সে কুফায় প্রবেশ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানসমূহ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সে সেখানকার সন্দেহপোষণকারী সকল মুনাফিককে হত্যা করবে । 228

পরবর্তী হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে যে ,তিনি সত্তর জন অসৎ আলেমকে হত্যা করবেন । এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ ও তাদের সমর্থকরা কুফায় বিশৃঙ্খলা ও শিয়াদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে । মালিক বিন দামারা আলী (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,তিনি বলেছেন : হে মালিক ইবনে দামারা! এ বিষয়টি কেমন হবে যখন শিয়ারা পরস্পর বিভেদ করবে ?অতঃপর তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলোকে জালের ন্যায় একটি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করালেন । আমি বললাম : হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ সময় কোন্ কোন্ কল্যাণকর বিষয় বাস্তবায়িত হবে ?তখন তিনি বললেন : ঐ যুগেই রয়েছে সকল কল্যাণ । হে মালিক! ঐ সময়ই আমাদের কায়েম আল মাহ্দী কিয়াম করবে এবং প্রায় সত্তর ব্যক্তি যারা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা বলবে তাদেরকে সে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে । অতঃপর মহান আল্লাহ্ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করবেন । 229

পরবর্তী রেওয়ায়েতটিতে হিজায অঞ্চলে সকল সৈন্য ভূমিধ্বসে ধ্বংস হওয়া এবং ইরাকে পরাজয় বরণ করার নিদর্শন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সেখানে সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর অবস্থান করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে ।

ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : অতঃপর সে অগ্রসর হবে ;অবশেষে সে কাদিসিয়ায় পৌঁছবে ,অথচ ঐ সময় জনগণ কুফায় সমবেত হয়ে সুফিয়ানীর হাতে বাইআত করবে । 230

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : অতঃপর সে কুফা অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং সেখানে অবতরণ করবে । সেখানে সে সত্তরটি আরব গোত্রের রক্তপাত বৈধ বলে গণ্য করবে । 231

অর্থাৎ এ সব গোত্রের মধ্য থেকে যে সব ব্যক্তি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শত্রু ও বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেবে তাদের রক্তকে মূল্যহীন (বৈধ) বলে গণ্য করবে ।

ইবনে আবি ইয়াফুর ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেছেন : সে আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে প্রথম কায়েম (উত্থানকারী) হবে । সে তোমাদের সাথে এমন কথা বলবে যা তোমরা সহ্য করতে পারবে না এবং রুমাইলা-ই দাসকারায় তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে ও যুদ্ধে লিপ্ত হবে । সেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তোমাদের সবাইকে হত্যা করবে । আর এটিই হবে সর্বশেষ বিদ্রোহী দল । 232

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : যখন এ নির্দেশের অধিপতি (ইমাম মাহ্দী) কতিপয় বিধান ও সুন্নাহ্ পালন করার আদেশ দেবে এবং এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখবে তখন একদল লোক মসজিদ থেকে বের হয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে । সে তখন তার সাথীদেরকে তাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেবে এবং তারা তার নির্দেশ পেয়ে বিদ্রোহীদের দিকে অগ্রসর হবে এবং কুফার খেজুর বিক্রেতাদের মহল্লায় তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে । তারা তাদেরকে বন্দী করবে ;তখন তারা মাহ্দীর নির্দেশে তাদেরকে হত্যা করবে । আর এটিই হবে সর্বশেষ দল যারা কায়েমে আলে মুহাম্মদ (ইমাম মাহ্দী)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে । 233

এ দু রেওয়ায়েতের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ,রুমাইলা-ই দাসকারার খারেজীরা হবে সর্বশেষ সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং কুফার মসজিদের খারেজীরা হবে সর্বশেষ দল যারা ইমাম মাহ্দীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করবে । আর রেওয়ায়েতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,রুমাইলা-ই দাসকারার খারেজীরা হবে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গোষ্ঠী । এ গোষ্ঠীর দলপতি হবে ফিরআউন ও ইবলীসের সমকক্ষ ।

আবু বাসীর থেকে বর্ণিত : রুমাইলা-ই দাসকারায় অনারব বিদ্রোহীরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা পর্যন্ত তিনি অল্প সময়ের জন্য কুফায় অবস্থান করবেন । রুমাইলা-ই দাসকারার বিদ্রোহীদের সংখ্যা হবে দশ হাজার এবং তাদের স্লোগান হবে : হে ওসমান! হে ওসমান! তখন ইমাম মাহ্দী আজমের (অনারব) এক ব্যক্তিকে ডেকে তার হাতে তরবারি অর্পণ করে তাঁকে ঐ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দিকে প্রেরণ করবেন । ঐ অনারব ব্যক্তি তাদের সকলকে এমনভাবে হত্যা করবেন যে ,তাদের মধ্য থেকে একজনকেও জীবিত রাখবেন না । 234

পূর্ববর্তী রেওয়ায়েতে রুমাইলা-ই দাসকারাহ্ স্থানটিকে রাজকীয় দাসকারাহ্ (রাজা-বাদশাদের বসবাস ও আমোদ-প্রমোদ করার অট্টালিকা) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে । আর মুজামুল বুলদান নামক গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে ,রুমাইলা-ই দাসকারাহ্ আবান শহরের অদূরে ইরাকে দিয়ালা প্রদেশের বাকুবার অন্তর্গত একটি গ্রাম ।

তবে রেওয়ায়েতে এ সব ব্যক্তি অনারব বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলে উল্লিখিত হয়েছে এ কারণে যে ,তারা আরব নয় অথবা তাদের নেতা হবে অনারব ।

কতিপয় রেওয়ায়েতে আরেক ধরনের বড় শুদ্ধি অভিযানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । তিনি বারো হাজার আরব-অনারব সৈন্যকে ডেকে তাদের সবাইকে বিশেষ ধরনের পোশাক পড়াবেন । অতঃপর তিনি সবাইকে শহরের ভিতর প্রবেশ করে যারা ঐ ধরনের পোশাক পরিহিত থাকবে না তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেবেন । আর তারাও তাঁর নির্দেশ পালন করবে ।

মনে হচ্ছে যে ,এ ধরনের শহর অবশ্যই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরোধী মুনাফিক ও কাফিরদের দ্বারা পূর্ণ থাকবে । আর এ কারণেই তিনি ঐ শহরের অধিবাসীদেরকে হত্যা করার জন্য এ ধরনের আদেশ দেবেন অথবা শহরের মধ্যে যে সব মুমিন ব্যক্তি বসবাস করছে তাদেরকে তিনি আগেই কোন একভাবে জানাবেন যে ,যখন সেখানে আক্রমণ চালানো হবে তখন যেন তারা বাড়ি-ঘর থেকে বের না হয় অথবা তাদের নিরাপদ থাকার জন্য তিনি তাদের কাছে সেনাবাহিনীর বিশেষ পোশাক প্রেরণ করবেন ।

অবশ্য এ ধরনের ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান ইরাকসহ সমগ্র বিশ্বে ভীতি ও সন্দেহের সৃষ্টি করবে । কারণ ,কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,যখন বিশ্ববাসী ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক শত্রুদেরকে ব্যাপকহারে হত্যা করার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা বলতে থাকবে ,এ ব্যক্তি ফাতিমা (আ.)-এর বংশধর নয় । সে যদি প্রকৃতই হযরত ফাতিমার বংশধর হতো তাহলে সে জনগণের প্রতি দয়া করত । বরং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক শত্রুদেরকে ব্যাপকহারে হত্যা করার কারণে তাঁর কতিপয় বিশেষ সাহাবী সন্দিহান হয়ে পড়বে । অবস্থা এতদূর গড়াবে যে ,তাদের একজন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে এবং ইমাম মাহ্দীর কাছে প্রতিবাদও করে বসবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত আছে : মাহ্দী আল কায়েম বের হয়ে বাজারে পৌঁছবে । তার পিতার বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি তাকে বলবে : আপনি জনগণকে দুম্বার পালের মতো ভয় দেখাচ্ছেন... এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে আপনার কি কোন অঙ্গীকারপত্র বা অন্য কোন প্রমাণ আছে ? ইমাম সাদিক বলেন : জনগণের মাঝে ঐ ব্যক্তির চেয়ে সাহসী কেউ থাকবে না । ঐ সময় একজন অনারব তার উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলবে : চুপ কর! নইলে গর্দান উড়িয়ে দেব । আর তখন আল কায়েম মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত অঙ্গীকারপত্রটি বের করে (জনসমক্ষে) প্রদর্শন করবে । 235

তার পিতার বংশোদ্ভূত -এ বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে ,ঐ প্রতিবাদকারী ব্যক্তি আলী (আ.)-এর বংশোদ্ভূত হবে । বাজারে পৌঁছবে -এ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে ,তিনি এমন এক স্থানে পৌঁছবেন যার নাম سوق অর্থাৎ বাজার হবে । আর এ সম্ভাবনাও বিদ্যমান যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) বিরোধীদের হত্যা করতে করতে বাজারের কতিপয় ব্যবসায়ীকেও হত্যা করবেন । আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে ,যে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তিকে চুপ থাকতে বলবে সে ইরানী হবে এবং সে জনগণ থেকে ইমাম মাহ্দীর আনুগত্যের শপথ আদায় করার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে ।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত আছে : যখন সে সালাবীয়াহ্ (হিজাযের দিক থেকে ইরাকের একটি স্থানের নাম) পৌঁছবে তখন তার পিতার বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি যে এ নির্দেশের অধিপতি মাহ্দী ব্যতীত অন্য সকলের চেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী হবে ,সে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে : হে অমুক! আপনি এ কী করছেন ?যে ইরানী ব্যক্তি বাইআত গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে সে তখন ঐ ব্যক্তিকে উচ্চৈঃস্বরে বলবে : মহান আল্লাহর শপথ ,চুপ কর নইলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব । তখন কায়েম আল মাহ্দী তাকে (প্রতিবাদকারীকে) বলবে : হে অমুক! চুপ কর । হ্যাঁ ,মহান আল্লাহর শপথ ,মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে আমার কাছে একটি অঙ্গীকারপত্র আছে । অতঃপর সে একটি বাক্স অথবা একটি বিশেষ ধরনের ছোট সিন্দুক আনার আদেশ দেবে এবং (তা আনা হলে তা থেকে) মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত অঙ্গীকারপত্রটি (বের করে) তাকে পাঠ করে শুনাবে । ঐ সময় উক্ত প্রতিবাদকারী বলবে : আমার প্রাণ আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক । আপনার মাথা আমার দিকে এগিয়ে দিন যাতে আমি চুম্বন করতে পারি । মাহ্দী তার আহবানে সাড়া দেবে এবং সে তার দু চোখের মাঝখানে চুম্বন করবে । এরপর সে বলবে : আপনার জন্য আমি উৎসর্গীকৃত হই । আমাদের কাছ থেকে নতুনভাবে বাইআত গ্রহণ করুন এবং মাহ্দীও তাদের হতে আবার বাইআত গ্রহণ করবে । 236

সংক্ষিপ্ত এ বিবরণের দ্বারা যে সব ব্যক্তিকে ইমাম মাহ্দী (আ.) হত্যা করবেন তাদের ব্যাপারে বাহ্যত স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,তাদের অনেকেই শিয়া অথবা সুন্নী অথবা সুফিয়ানীর সমর্থক এবং ইমামের বিরুদ্ধাচরণকারী হবে ,যেমন অসৎ আলেম ,বিভিন্ন দল ,উপদল ও গোষ্ঠী এবং সমাজের কতিপয় শ্রেণী । আর তাদের মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চরদের দল থাকা একান্ত স্বাভাবিক ।

তবে এ সব ঘটনার পর ইরাক ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সরকার ও প্রশাসনের ছায়াতলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে এবং তাঁর বিশ্ব সরকারের রাজধানী ও কেন্দ্র হিসাবে তা নবজীবন লাভ করবে । ইরাক এ সময় বিশ্ব মুসলিম উম্মার হৃদয়ের কিবলা ও নয়নের মধ্যমণিতে পরিণত হবে এবং তা তাদের প্রেরিত প্রতিনিধিদের চূড়ান্ত গন্তব্য হবে ।

ঐ সময কুফা ,সাহলা ,হীরা ,নাজাফ ও কারবালা একই শহরের বিভিন্ন উপশহর বা মহল্লায় পরিণত হবে । আর এ নগরীর নাম তখন বিশ্ববাসীর মনে গেঁথে যাবে এবং সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকবে । বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহ থেকে মানুষ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এ নগরীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে যাতে শুক্রবার দিবসে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ইমামতিতে তাঁর বিশ্ব মসজিদে জুমার নামায আদায় করতে পারে । উল্লেখ্য যে ,এ বিশ্ব-মসজিদের এক হাজার দরজা থাকবে । এতদসত্ত্বেও সেখানে উপস্থিত মিলিয়ন-মিলিয়ন জনতার মাঝে জুমার জামায়াতের কাতারে এক ব্যক্তির দাঁড়ানোর পরিমাণ জায়গা পাওয়াও অনেকের জন্য সম্ভব হবে না ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : তার প্রশাসন পরিচালনার কেন্দ্র হবে কুফা । তার বিচারালয় হবে ঐ নগরীর জামে মসজিদ । বাইতুল মাল এবং মুসলমানদের মধ্যে গনীমত বণ্টনের কেন্দ্রস্থল হবে সাহলার মসজিদ । তার বিশ্রামাগার এবং নীরবে-নিভৃতে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করার স্থান গাররাইনের শ্বেত টিলাসমূহে অবস্থিত হবে । মহান আল্লাহর শপথ ,এমন কোন মুমিন তখন থাকবে না যে ঐ স্থান এবং এর আশেপাশের কোন স্থানে বাস না করবে । তবে আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে ,এমন কোন মুমিন থাকবে না যে সেখানে আগমন করবে না এবং অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে যে ,এমন কোন মুমিন থাকবে না যে সে স্থানের দিকে ছুটে যাবে না । তবে শেষোক্ত ভাষ্যটিই অধিকতর সঠিক । কুফা শহরের আয়তন পঁয়তাল্লিশ মাইল হবে এবং এ শহরের গগনচুম্বী অট্টালিকগুলো কারবালার অট্টালিকাসমূহের চেয়েও উন্নত হবে । মহান আল্লাহ্ কারবালাকে ফেরেশতা ও মুমিনদের আশ্রয়স্থল ও যাতায়াতের স্থানে পরিণত করবেন । এর ফলে এ নগরী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে । 237

তাঁর বিচারালয় অর্থাৎ বিচারের জন্য জনগণ যে স্থানে গমন করবে এবং যেখানে তাদের মধ্যে বিচার ও রায় প্রদান করা হবে তা হবে কুফার বর্তমান মসজিদ অথবা তা যে বিরাট জামে মসজিদ ইমাম মাহ্দী (আ.) নির্মাণ করবেন সেই মসজিদও হতে পারে । নিভৃত যে স্থানে তিনি স্রষ্টার উপাসনা করবেন সেই স্থানটি নাজাফের অদূরে অবস্থিত শ্বেত টিলাসমূহের নিকটেই হবে । কুফার আয়তন পঁয়তাল্লিশ মাইল হওয়ার অর্থ হচ্ছে কুফার আয়তন অথবা এ নগরীর দৈর্ঘ্য (লম্বায়) প্রায় একশ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : কুফার পশ্চাতে (নাজাফে) সে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে যার এক হাজারটি দরজা থাকবে । সেই মসজিদ কারবালা ও হীরার দু নদীর পাশে নির্মিত হবে এবং কুফার বাড়িগুলোর সাথে এমনভাবে সংযুক্ত থাকবে যে ,কোন ব্যক্তি দ্রুতগামী খচ্চরের ওপর আরোহণ করে জুমার নামাযের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও সে তা ধরতে পারবে না । 238 অর্থাৎ তার বাহনে চড়ে দ্রুতগতিতে রওয়ানা হওয়া সত্ত্বেও জুমার নামায ধরতে পারবে না । কারণ ,সে নামাযে দাঁড়ানোর জন্য কোন খালি জায়গা খুঁজে পাবে না ।

অবশ্য ইরাকে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ,বস্তুগত উন্নতি এবং ইরাক যে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সরকার ও প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল হবে এতৎসংক্রান্ত অগণিত রেওয়ায়েত বিদ্যমান যেগুলো এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয় ।

যাহোক , (প্রাথমিক পর্যায়ে) ইমাম মাহ্দী (আ.) ইরাক মুক্ত করে তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং ইরাককে তাঁর প্রশাসন ও সরকারের কেন্দ্রস্থল হিসাবে মনোনীত করবেন । পারস্যোপসাগরীয় দেশগুলোসহ ইয়েমেন ,হিজায ,ইরান ও ইরাক তাঁর সরকার ও প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত হবে । আর এভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.) যখন অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিত ও শঙ্কামুক্ত হবেন তখন তিনি তাঁর বিদেশী শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবেন । এ পর্যায়ে প্রথমে তিনি তুর্কীদের (রুশজাতি) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেখানে (রাশিয়ায়) একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন । এরপর তিনি এক বিশাল সেনাবাহিনীসহ শামের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন এবং দামেশকের নিকট মারজ আযরা নামক স্থানে অবতরণ করবেন । সেখানে আল কুদ্স মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি সুফিয়ানী ,ইহুদী এবং রোমানদের (পাশ্চাত্য) বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন । আমরা এ ব্যাপারে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকামী আন্দোলনের ঘটনাবলী সংক্রান্ত অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।