ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)2%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 87420 / ডাউনলোড: 10560
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

পাশ্চাত্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে ফিলিস্তিন ও শামে পাশ্চাত্যের শোচনীয় পরাজয়বরণ পাশ্চাত্য জাতিসমূহ এবং তাদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে এবং নিঃসন্দেহে একমাত্র হযরত ঈসা (আ.) ,ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং পাশ্চাত্য জাতিসমূহের মধ্য থেকে ইমাম মাহ্দীর সমর্থনকারী জনতার কথা ও ক্ষমতাই সেখানে (পাশ্চাত্যে) কেবল কার্যকর হবে। পাশ্চাত্যে ইমাম মাহ্দীর সমর্থক গণশক্তির জোয়ার ও উত্থাল তরঙ্গ মালা সেখানকার ক্ষমতাসীন কুফরী-বস্তুবাদী খোদাদ্রোইী সরকারগুলোর পতন ঘটিয়ে এমন সব সরকার কায়েম করার দায়িত্ব নেবে যারা ইমাম মাহ্দীর সরকার ও প্রশাসনের সাথে সংহতি ঘোষণা করবে।

শিয়া-সুন্নী হাদীস সূত্রসমূহে বিদ্যমান হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহের ভাষ্য মোতাবেক ইমাম মাহ্দী (আ.) পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন এবং স্বীয় সঙ্গী-সাথি ও সেনাবাহিনী সাথে নিয়ে রোমের সর্ববৃহৎ নগরী অথবা পাশ্চাত্যের শহর ও নগরীগুলো জয় করবেন। কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী সঙ্গী-সাথিদের সাথে নিয়ে তাকবীর দিয়ে (রোমের) ঐ সব শহর ও নগরী জয় করবেন। ৩৮২

আরো বর্ণিত হয়েছে ,তিনি রোমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন এবং সঙ্গী-সাথিদের সাথে নিয়ে রোমের সর্ববৃহৎ নগরী মুক্ত করবেন। ৩৮৩

ইমাম সাদিক (আ.) বর্ণিত হয়েছে যে ,তিনি বলেছেন : তখন রোমের অধিবাসী তার হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে এবং ইমামও তাদের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে এবং সঙ্গী-সাথিদের মধ্য থেকে একজনকে পাশ্চাত্যে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করবে। ৩৮৪

এ রেওয়ায়েতে আরো বর্ণিত হয়েছে : রোমের যে নগরী ইমাম মাহ্দী জয় করবেন তা বাহ্যত পাশ্চাত্যের রাজধানী ও এর মূল কেন্দ্র হয়ে থাকবে। ৩৮৫

لهم في الدّنيا خزي (তাদের জন্য রয়েছে এ পৃথিবীতে লাঞ্ছনা ও অপমান) -এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইকরামাহ্ ও সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে : রোমে একটি নগরী আছে যা মুক্ত করা হবে। ৩৮৬

হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে : সত্তর হাজার মুসলমানের তাকবীর ধ্বনির মাধ্যমে তিনি (মাহ্দী) পাশ্চাত্যের একটি নগরী মুক্ত করবেন। ৩৮৭

পঞ্চদশ অধ্যায়

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন শাসনের একটি চিত্র

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দানকারী স্পষ্ট আয়াত ও রেওয়ায়েতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ঐশ্বরিক দায়িত্ব অত্যন্ত মহান এবং বিবিধ দিক ,সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যমণ্ডিত হবে। স্বয়ং এ বিষয়টিই হচ্ছে এমন এক সুমহান পদক্ষেপ যা পৃথিবীর বুকে মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেবে এবং মানব জাতির সামনে সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা করবে।

এমনকি যদি তাঁর দায়িত্ব কেবল নতুনভাবে ইসলামের পুরুজ্জীবন ও পুনর্জাগরণ ,ন্যায়ভিত্তিক ও ঐশ্বরিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা এবং পার্থিব জগতকে আলোকোজ্জ্বল করার সাথেই সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে সেটাই হবে যথেষ্ট। তবে এতকিছু সত্ত্বেও তিনি তাঁর যুগে এবং এর পরে বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকে মানব জীবনের উন্নতি ও পূর্ণতা এমনভাবে নিশ্চিত করবেন যে ,যা এর পূর্ববর্তী পর্যায়গুলো উন্নত হওয়া সত্ত্বেও সেগুলোর সাথে অতুলনীয় হবে।

আর অস্তিত্বের গভীরতা এবং ঊর্ধ্বলোক ও এর বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানো ও প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করার মিশন যা কিয়ামত ও পারলৌকিক জীবন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে গায়েবী অজড় জগৎ এবং দৃশ্যমান এ পার্থিব জগতের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ঐক্য ক্রিয়াশীল রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ভূমিকা পালন করবে।

আমরা এখন এ গ্রন্থের কলেবর অনুসারে এ দায়িত্ব বা মিশনের বিভিন্ন দিক ও পর্যায়ের একটি খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরব।

অন্যায়-অত্যাচার ও জালিমদের থেকে পৃথিবীকে পবিত্র করা

প্রথম দর্শনে এমনটা মনে হতে পারে যে ,জুলুম ,তাগুতী শক্তিবর্গ এবং অত্যাচারীদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়া আসলে একটি অসম্ভব বিষয়। আর এ পৃথিবী যেন মজলুমদের আর্তনাদ ও ক্রন্দন ধ্বনিতে ভরে গেছে এবং এগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যেন কোন ত্রাণকর্তা নেই। বিশ্ব যেন অত্যাচারীদের অশুভ অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে ,ইতিহাসে এমন কোন অধ্যায় বা যুগ আমাদের জানা নেই যা জালিমদের থেকে মুক্ত থেকেছে। কারণ ,এসব জালিম আগাছা-পরগাছা ও অপবিত্র উদ্ভিদের ন্যায় সমাজের অভ্যন্তরে এমন সুদৃঢ় মূল বিস্তার করেছে যার একটিকে উপড়ে ফেলা হলে তার জায়গায় দশগুণ আগাছা-পরগাছা জন্মায়। আর কোন এক প্রজন্মে জালেমরা ধবংস হয়ে গেলেও অন্য প্রজন্মসমূহে দলে-দলে জালেম জন্ম লাভ করে।

কিন্তু মহান প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্ এতেই কল্যাণ নিহিত রেখেছেন যে ,মানবজীবন সত্য-মিথ্যা এবং ভালো ও মন্দের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভিত্তিতে বিকাশ লাভ করবে। তিনি প্রতিটি পদার্থের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা ,প্রতিটি সময় ও কালের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভাগ্য এবং পরিশেষে সকল অন্যায়-অবিচারের জন্যও তিনি একটি পরিণতি নির্ধারণ করেছেন।

সেদিন অসৎকর্মশীল ব্যক্তিরা নিজেদের চেহারা ও মুখ-মণ্ডলের দ্বারা চি ি হ্নত হবে। অতঃপর...

পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :

মহান আল্লাহ্ তাদেরকে সব সময় চেনেন। তবে উপরিউক্ত আয়াতটি আল কায়েম আল মাহ্দীর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। সে পাপীদেরকে তাদের চেহারা ও মুখ-মণ্ডলের দ্বারা চিনবে এবং সে ও তার সাথীরা তরবারি দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেয়ার মতো শাস্তি দেবে। ৩৮৮

আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন : মহান আল্লাহ্ আমাদের (আহলে বাইতের) মধ্য থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে অকস্মাৎ (মুসলিম উম্মাহর জন্য) এক মহামুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। আমার পিতা সর্বশ্রেষ্ঠা দাসীর সন্তানের (ইমাম মাহ্দী) জন্য কোরবান হোন...। দীর্ঘ আট মাসে শত্রুরা তার কাছ থেকে তরবারি ও হত্যাকাণ্ড ব্যতীত আর কিছুই পাবে না। ৩৮৯

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : মহানবী (সা.) নিজ উম্মতের সাথে অত্যন্ত কোমল আচরণ প্রদর্শন করতেন এবং তিনি জনগণকে অন্তরঙ্গভাবে গ্রহণ করতেন। আর আল কায়েম আল মাহ্দী শত্রুদেরকে হত্যা করবে এবং কারো তাওবা সে গ্রহণ করবে না। তার সাথে সার্বক্ষণিক যে অঙ্গীকারপত্র আছে সে তার দ্বারাই এ কাজ করতে আদিষ্ট হয়েছে। ঐ ব্যক্তির জন্য আক্ষেপ যে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। ৩৯০

যে অঙ্গীকারপত্রটি তার সাথে আছে সেটা হচ্ছে ঐ প্রসিদ্ধ অঙ্গীকারপত্র যা তিনি তাঁর প্রপিতামহ রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছ থেকে পেয়েছেন। রেওয়ায়েতসমূহের ভিত্তিতে ঐ অঙ্গীকারপত্রে এ বাক্যটিও বিদ্যমান : হত্যা কর ,আবারও হত্যা কর এবং কারো তাওবা গ্রহণ করবে না।

ইমাম বাকির (আ.) আরো বলেছেন :   “ তবে প্রপিতামহ মহানবী (সা.)-এর সাথে মাহ্দী (আ.)-এর সাদৃশ্য হলো সেও তরবারি সহকারে আবির্ভূত হবে এবং তার অভ্যুত্থানেরও লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের শত্রু এবং অত্যাচারী-তাগুতীদেরকে হত্যা করা। সে তরবারির দ্বারা শত্রুদের অন্তরে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিজয়ী হবে এবং তার সেনাবাহিনী পরাজিত হবে না। ৩৯১

ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন : মহান আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত সে বিরামহীনভাবে মহান আল্লাহর শত্রুদেরকে হত্যা করতেই থাকবে। যখন সে তার অন্তরে দয়া ও করুণা অনুভব করবে তখনই সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্পর্কে অবগত হবে। ৩৯২

এই একই হাদীসগ্রন্থে ইমাম জাওয়াদ (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : যখন তার সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা পর্যাপ্ত সংখ্যক অর্থাৎ দশ হাজার হবে তখন সে মহান আল্লাহর নির্দেশে আবির্ভূত হবে এবং মহান আল্লাহ্ এ ব্যাপারে পূর্ণ সন্তুষ্টি প্রকাশ না করা পর্যন্ত সে বিরামহীনভাবে খোদার শত্রুদেরকে হত্যা করতে থাকবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম : তিনি কিভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির ব্যাপারে অবগত হবেন ? তিনি বলেছিলেন : মহান আল্লাহ্ তখন তাঁর অন্তরে দয়া ও করুণার উদ্রেক করবেন।

বরং রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কতিপয় সাহাবী তাঁর হাতে জালিমদের ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও রক্তপাতের কারণে তাঁর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে এবং তাঁর কাছে প্রতিবাদও জানাবে।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : যখন সে সালাবীয়ায় পৌঁছবে তখন তারই এক আত্মীয যে ইমাম মাহ্দী ব্যতীত জনগণের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ও শক্তিশালী হবে সে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করবে : হে অমুক! আপনি কি করছেন ?মহান আল্লাহর শপথ ,আপনি জনগণকে আপনার সামনে থেকে ছাগল-ভেড়ার মতো তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যেমনভাবে রাখাল অথবা নেকড়ে দুম্বা-ভেড়ার পালকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে কি আপনার প্রতি কোন অঙ্গীকার পত্র বা অন্য কিছু আছে ?এ সময় যে ব্যক্তি ইমাম মাহ্দীর পক্ষ থেকে জনগণের বাইআত গ্রহণ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবে সে বলবে : চুপ কর! নইলে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। তখন আল কায়েম আল মাহ্দী (আ.) বলবে : হে অমুক! চুপ কর। হ্যাঁ ,মহান আল্লাহর শপথ ,আমার সাথে মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে একটি সনদ আছে। হে অমুক! ছোট সিন্দুকটি নিয়ে আস । ঐ ব্যক্তি তাঁর কাছে সিন্দুকটি নিয়ে আসবে। ইমাম মাহ্দী তখন মহানবীর সনদটি পাঠ করবে। ইত্যবসরে ঐ প্রতিবাদকারী লোকটি বলবে : আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হই ;অনুমতি দিলে আমি আপনার মাথায় চুম্বন করব। ইমাম মাহদী তখন তার পবিত্র মস্তক সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দেবে এবং ঐ ব্যক্তি তার দু চোখের মাঝখানে চুম্বন করবে। সে আবারও বলবে : মহান আল্লাহ্ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করে দিন। আপনি আবারও আমাদের বাইআত নবায়ন করুন। আর ইমাম মাহ্দীও তাদের বাইয়াত নবায়ন করবে। ৩৯৩

নিঃসন্দেহে বেশ কিছু প্রমাণ অথবা এমন একটি নিদর্শন থাকবে যেগুলো বা যার মাধ্যমে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গীরা অনুধাবন করতে পারবে যে ,ঐ অঙ্গীকারপত্রটি মহানবী (সা.)-এর। তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে বাইয়াত নবায়ন করার জন্য তাদের পুনঃ আবেদন এ কারণে হবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে (অর্থাৎ ব্যাপক রক্তপাত ও হত্যার ব্যাপারে) তাদের আপত্তি এক প্রকার বাইয়াত ভঙ্গকরণ বলে বিবেচিত হবে।

কতিপয় ব্যক্তি ইমাম মাহদী ( আ .) কর্তৃক অত্যাচারীদেরকে হত্যা , ধ্বংস ও শাস্তিদানের বিষয়টি পাষণ্ডতা এবং হত্যাকাণ্যের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বলে গণ্য করতে পারে । কিন্তু এ কাজ বাস্তবে একটি শল্য সিকিৎসা সদৃশ য া বিদ্রোহী ও অত্যাচারীদের অপবিত্র অস্তিত্ব থেকে মুসলিম সমাজ এবং বিশ্বের অন্য সব সমাজকে পবিত্র করার জন্য আবশ্যক । এটি ছাড়া কখনোই অন্যায় অত্যাচারের পরিসমাপ্তি হবে না এবং ন্যায় পরায়ণতা কর্তৃত্বশীল হবে না । যদি ইমাম মাহদী (আ.) তাদের সাতে কোমল আচরণ করেন অথবা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তাহলে কখনোই উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী চক্রের নতুন নতুন ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা বন্ধ হবে না । উল্লেখ্য যে এ সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির  জীবন আসলে এ সব ষড়যন্ত্র ও প্রচারণার উপরই নির্ভরশীল । কারণ ,বর্তমান সমাজসমূহে অত্যাচারীরা একটি গাছের শুকনো ডালপালার মতো বরং তারা হচ্ছে  ক্যন্সারসদৃশ যা কষ্টকর হওয়া সত্বেও রোগীর প্রাণ রক্ষার জন্য অবশ্যই কেটে ফেলা উচিত ।

অবশ্য এ ধরণের নীতি-আবস্থানের ক্ষেত্রে যা সন্দেহ পোষণকারীদের চিত্ত প্রশান্ত করে তা হচ্ছে ,ইমাম মাহদীর সাথে মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রদত্ত একটি বিখ্যাত অঙ্গীকারপত্র আছে । মহান আল্লাহ তাকে জনগণ ও তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করবেন । তিনি মহান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের আলোকে যে কোন লোকের দিকে তাকানো মাত্রই তাকে চিনে ফেলবেন এবং তার রোগের প্রতিষেধক সম্পর্কেও জ্ঞাত থাকবেন । সুতরাং ভয়ের কোন কারণ নেই যে ,যে সব ব্যক্তির সুপথপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকবে তারা ইমাম মাহদীর হাতে নিহত হবে না । এ বিষয়টি যেন হযরত খিজির (আ.) ও হযরত মূসা (আ.)-এর কাহিনীতে হযরত খিজিরের হাতে শিশুটির নিহত হওয়ার মতোই । এ কাহিনীতে বর্ণিত হয়েচে যে ,যাতে ঐ ছেলে বড় হয়ে পিতা-মাতাকে খোদাদ্রোহিতা ও কুফরীর পথে নিয়ে না যায় সেজন্য তিনি ছেলেটিকে হত্যা করেছিলেন । বরং রেওয়ায়েতসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে ,খিযির (আ.) ইমাম মাহদী (আ.) এর সাথে আবির্ভূত ও তার সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন ।বাহ্যত পরিদৃষ্ট হয় যে ,খিযির (আ.) কল্যাণের বিকাশ এবং মুমিনদের থেকে অকল্যাণসমূহ দূর করা এবং এক শক্তিশালী অপবিত্র মহীরুহে পরিণত হবার আগেই ফিতনা-ফ্যাসাদ ও দুর্নীতির বীজ ধ্বংস করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে লাদুনী (আধ্যাত্মিক দিব্যজ্ঞান) ব্যবহার করবেন : আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দয়া প্রদর্শন করেছিলাম এবং আমাদের পক্ষ থেকে (দিব্য) জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলাম । ৩৯৪

শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে বলা যায় যে ,ইমাম মাহদী (আ.)-এর সরকার ও প্রশাসনে হযরত খিযির (আ.) ও তার সঙ্গীদের প্রকাশ্য ভূমিকা থাকবে । জনগণের ওপর এ সব মহান ব্যক্তির বেলায়েতের হক এবং ইমাম মাহদীর বিশ্ব-প্রশাসনে বাহ্যিক আইন কানুন এবং অবস্থা লঙ্ঘন করার অধিকার তাদের থাকবে । রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহদী (আ.) মহান আল্লাহর প্রকৃত বিধান অনুসারে জনগণের মাঝে বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন । উল্লেখ্য যে , ,মহান আল্লাহই ইমাম মাহদীকে প্রকৃত বিচার করার ক্ষমাত প্রদান করবেন । এ কারণেই তিনি কারো কাছে সাক্ষী অথবা দলিল-প্রমাণ চাইবেন না । তিনি অত্যাচারী ও ফিতনা সৃষ্টিকারীদেরকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে তার খোদাপ্রদত্ত আধ্যাত্মিক ও প্রকৃত জ্ঞান প্রয়োগ করবেন । কখনো কখনো তার সঙ্গীরাও জনগণের সাঝে বিচার-ফয়সালা এবং অপরাধীদের ধ্বংস করার ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি বেছে নেবেন । কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে তারা জনগণের সাথে তাদের প্রকাশ্য অবস্থার ভিত্তিতে আচরণ করবেন । তবে হযরত খিযির (আ.) ও তার সঙ্গীরাই ঐ সব বিশেষ যোগ্রতার অধিকারী হবেন ।


18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38