ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81174
ডাউনলোড: 9316

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81174 / ডাউনলোড: 9316
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

ইসলামের পুর্জাগরণ এবং ধর্মের সর্বজনীনতা

তিনিই সেই আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে সত্য ধর্ম এবং মানুষকে পথ প্রদর্শন করার জন্য প্রেরণ করেছেন যাতে তা সব ধর্মের ওপর জয়যুক্ত ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। 395 এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন : মহান আল্লাহ কি এখন পর্যন্ত এ আয়াতের বাস্তব নমুনা প্রকাশ করেছেন ?না ,ঐ সত্তার কসম ,যার হাতে আমার প্রাণ ,এমন কোন জনপদ পৃথিবীর বুকে থাকবে না  যেখানে সকাল-সন্ধায় মহান আল্লাহর একত্ব এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হবে না । 396

ইবনে আব্বাস বলেছেন : ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ব্যতীত কোন ইহুদী ,নাসারা অথবা অন্য ধর্মের অনুসারী থাকবে না । অবশেষে জিযিয়া কর (যিম্মী বিধর্মী কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ কর যার বিনিময়ে ইসলামী প্রশাসন তাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস ,নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা প্রতান করে )উঠিয়ে দেয়া হবে ,ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং শুকুর হত্যা করা হবে । এটিই হবে নিম্নোক্ত আয়াতের বাস্তব নমুনা : যাতে তিনি ইসলাম ধর্মকে সব ধর্মের ওপর বিজয়ী এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেন যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না । আর এ ঘটনা হযরত কায়েম আল মাহদীর হাতে বাস্তবায়িত হবে । 397

জিযিয়া কর উঠিযে নেয়া হবে (বিলুপ্ত করা হবে )-এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে ,আহলে কিতাবের কাছ থেকে ইসলাম ব্যাতীত আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না ।

আবু বসীর বলেছেন : নিম্নোক্ত এ আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম সাদিক (আ .)-এর কাছে প্রশ্ন করলাম : তিনিই সেই আল্লাহ যিনি রাসূলকে সত্য ধর্মসহ মানব জাতিকে হিদায়াত করার জন্য প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি ইসলাম ধর্মকে সব ধর্মের ওপর জয়যুক্ত করেন যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে । ইমাম বললেন :মহান আল্লাহর শপথ ,এ আয়াতের ব্যাখ্যা এখনো বাস্তবায়িত হয় নি । আমি জিজ্ঞাসা করলাম :আপনার জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গীকৃত হোক । এটি কখন বাস্তবায়িত হবে ?তিনি বললেন :যখন মাহন আল্লাহর ইচ্ছায় আল কায়েম আল মাহদী আবির্ভূত হবে ও সংগ্রাম করবে । যখন সে আবির্ভূত হবে তখন কাফির ও মুশরিকরা তার আবির্ভাব ,আন্দোলন ও সংগ্রামের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়বে ;কারণ ,কোন পাথরের পিছনে যদি কোন কাফির বা মুশরিক লুকায় তাহলে ঐ পাথর সবাক হয়ে বলবে :হে মুসলমান !আমার আশ্যয়ে কাফির বা মুশরিক লুটিয়ে আছে ;তাকে হত্যা কর । আর সেও তখন তাকে হত্যা করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে । 398

ইমাম বাকির (আ .)বলেছেন : (শত্রুর অন্তরে )ভয় -ভীতিবোধের উদ্ভব হবার ফলে আল কায়েম আল মাহদী বিজয়ী হবে । সে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পাবে ও সমর্থিত হবে । দেশ -দেশান্তর অতিক্রম করে তার কাছে লোকজন ছুটে আসবে । তার জন্য মাটির নিচে প্রেথিত গুপ্তধন বের হয়ে আসবে । তার রাজত্ব ও কর্তৃত্ব সমগ্র প্রাচ্য0পাশ্চাত্যকে শামিল করবে । মহান আল্লাহ তার ধর্মকে তার মাধ্যমে বিশ্বের সব ধর্ম ও মতাদর্শের ওপর বিজয়ী করবেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ ও এর বিরোধীতা করবে । সে প্রথিবীর বুকে বিধ্বস্ত ও বিরাণ হয়ে যাওয়া জনপদ ও অঞ্চলসশূহ আবাদ করবে । তখন ঈসা রুহুল্লাহ পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং তিনি তার পেছনে নামায পড়বেন । 399

ইমাম বাকির (আ .)উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : সেদিন মহানবী (সা .)এর রিসালাত মেনে নেয়া ও তা স্বীকার করা ব্যতীত (ধরাণির বুকে )কোন ব্যক্তিই থাকবে না । 400

ইমাম সাদিক (আ .)বলেছেন ; আমার পিতাকে (ইমাম বাকির ) তোমরা সকল মুশরিকের বিরুদ্ধে তেমনিভাবে যুদ্ধ করবে যেমনভা্বে তারা সবাই তার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল যাতে পৃথিবীতে ফিতনা না থাকে এবং ধর্ম পরিপূর্ণরূপে মহান আল্লাহর হয়ে যায় -এ আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল । তিনি বলেছিলেন ;এখনোও এ আয়াতের তাফসীররের সময়কাল উপস্থিত হয়নি । যখন আল কায়েম আল মাহদী আবির্ভূত হবে ও বিপ্লব করবে তখন যারা তাকে পাবে তারা নিজেরাই এ আয়াতের ব্যাখ্যা -প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ করবে । যেমনভাবে মহান আল্লাহ বলেছেন তেমনি অবশেষে হযরত মুহাম্মদ (সা .)-এর ধর্ম তিমির রাত্রি শেষে সত্য প্রভাতের (সূবহে সাদিকের )মতো আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে এবং পৃথিবীর বুকে তখন শিরকের কোন চিহ্নই থাকবে না । 401

একইভাবে এটি বিশ্ববাসীর জন্য স্মরণ ব্যাতীত আর টিছুই নয় এবং নিঃসন্দেহে ঐ সময়ের পরে এর সংবাদ সম্পর্কে তারা অবগত হবে । -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাকির (আ .)বলেছেন : এটি আল কায়েম আল মাহদীর আবির্ভাবকালে সংঘটিত হবে । 402

অতি সত্বর আমরা তাদের কাছে আমাদের নিদর্শনসমূহ আকাশে এবং যমীনে স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করব যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,তিনিই সত্য । 403 এ আয়াতের ব্যাখ্যায়ও ইমাম বাকির (আ .)থেকে বর্ণিত হয়েছে : মহান আল্লাহর (বানর ও শুকরের আকৃতিতে )তাদের রূপান্তর হয়ে যাবার বিষয়টি স্বয়ং তাদেরকেই দেখবেন এবং দিগন্তে আকাশের কিদচক্রবাল রেখাসমূহের দেবে যাওয়া এবং তাদের শহর এবং নগরসমূহের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা প্রত্যক্ষ করাবেন । আর তারাও নিজেদের মাঝে এবং সমগ্র বিশ্বজুড়ে মহান আল্লাহর মহিমা ও শক্তি অনুভব করবে এবং যাতে তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,তিনিই সত্য । -এআয়াতের প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে আল কায়েম আল মাহদীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থান যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে বাস্তব ঘটনা ;আর সমগ্র মানব জাতি অগত্যা তা প্রত্যক্ষ করবেই । 404

কতিপয় রেওয়াওয়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,কতিপয় কাফের ,মুনাফিক এবং ইমাম মাহদী (আ .)এর বিরোধী হটাৎ করে বানর ও শুকরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে । দিগন্তের ভেঙ্গে পড়া র অর্থ হচ্ছে শহর ও নগরসমূহে বিশৃঙ্খলা ,গোলযোগ ,অস্থিরতা ও বিদ্রোহ এবং আধিপত্য বিস্তারকারী শাসকবর্গের আধিপত্য থেকে জাতিসমূহের মুক্ত হওয়া এবং আকাশের দিকচক্রবাল রেখার ভেঙ্গে পড়া র অর্থ হচ্ছে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ প্রকাশিত হওয়া ।

আকাশসমূহ ও যমীনে সবাই ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাকির (আ .)বলেছেন : উপরিউক্ত আয়াত আল কায়েম আল মাহদীর শানে অবতির্ণ হয়েছে । যখন সে আবির্ভূত হবে তখন বিশ্বের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইহুদী ,খ্রিষ্টান ,তারকা পূজারী ,বেদীন ,মুরতাদ এবং কাফিরদের কাছে ইসলাম ধর্মকে উপস্থাপন করবে ;তাই যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করবে তাকে তিনি নামায ,যাকাত এবং যে সব বিধান মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব সেগুলো পালন করতে বাধ্য করবেন । আর যে ইসলাম ধর্ম পালন করতে সম্মত হবে না তাকে তিনি হত্যা করবেন । এভাবে সমগ্র বিশ্বে কেবল একত্ববাদী ব্যতীত আর কোন ধর্মাবলম্বী থাকবে না । আমি বললাম :আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হই । কাফির ও বেদীনদের সংখ্যাই তো বেশী । তখন তিনি বলেছিলেন :অবশ্য যখন মহান আল্লাহ কোন কাজ করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি অগণিতকে নগণ্য করে দেন । 405

তবে এতদপ্রসঙ্গে শিয়া ও সুন্নী সূত্রসমূহে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত হচ্ছে এটিই যে ,ইমাম মাহদী (আ .)-এর কুনিয়াহ হচ্ছে আবুল কাসিম যা মহানবী (সা .)-এর কুনিয়াহ । মহানবী (সা .)বলেছেন : মাহদী আমার বংশধারার অন্তর্ভুক্ত এবং ফাতিমার একজন বংশধর হবে । আমি যেভাবে ওহীর ভিত্তিতে সংগ্রাম করেছি তদ্রূপ সে আমার পথ ও পদ্ধতির ভিত্তিতে সংগ্রাম করবে । 406

আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েচে : যেভাবে আমি ইসলাম ধর্মের সূচনালগ্নে এ ধর্মসহ উত্তিত হয়েছি ও আন্দোলন করেছি তদ্রূপ সে সর্বশেষ যুগে ইসলাম ধর্মসহ উত্থিত হবে (বিপ্লব করবে )। 407

একইভাবে তিনি বলেছেন : বিশ্বে কেবল ইসলামের শাসনকর্তৃত্ব ছাড়া আর কিছুই থাকবে না । তখন পৃথিবী রূপালী ফলকের মতো আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে । 408

অর্থাৎ পৃথিবী কুফর ও নিফাক থেকে পবিত্র হয়ে খাঁটি রূপার টুকরার মতো উজ্জ্বল ও সুশোভিত বেশ ধারণ করবে ।

হযরত আলী (আ .)বলেছেন : অন্যেরা যখন পবিত্র কোরআনকে নিজেদের ধ্যান -ধারণা ,অভিরুচি ও বিশ্বাসের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় (অর্থাৎ নিজেদের অভিরুচির ভিত্তিতে অপব্যাখ্যা করবে )তখন সে পবিত্র কোরআন থেকে তার আকীদা -বিশ্বাস গ্রহণ করবে । সে বিশ্ববাসীকে ন্যায়প্রক্রিয়া কিভাবে অবলম্বন করতে হয় তা বাস্তবে দেখাবে এবং কিতাবে (কোরআন )ও সুন্নাহ যাকে পরিত্যাগ ও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত করবে । 409

ইমাম মাহদী (আ .)পবিত্র কোরআনের অনুসরণ করবেন এবং বিচ্যুতদের মতো এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিকৃত করবেন না ।

ইমাম বাকির (আ .)থেকে বর্ণিত হয়েছে : আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমাদের ধর্ম (ইসলাম )পলায়নরত রক্তে রঞ্জিত কাতর পাখির মতো ,আমাদের আহলে বাইতের এক ব্যক্তি ব্যতীত কেউ তা তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না । তখন সে তোমাদেরকে বছরে দু বার পুর্স্কার এবং মাসে দু টি জীবিকা প্রদান করবে । তোমরা তার সময় এমনভাবে প্রজ্ঞা অর্জন করবে যে ,মহিলারা নিজ নিজ ঘরে মহান আল্লাহর কিতাব এবং মহানবী (সা .)-এর সুন্নাহর ভিত্তিতে বিচার করবে । 410

যেহেতু ইমাম বলেছেন রক্তে রঞ্জিত কাতর পাখির মতো সেহেতু ইসলামের অবস্থা সংক্রান্ত একটি সূক্ষ্ণ উপমাস্বরূপ । ইসলাম হচ্ছে একটি আহত পাখির মতো যা পাখা মেলে ধরে এবং মুসলমানদেরকে ইসলামের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে । আর এ প্রক্রিয়া ঐ সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে যখন মাহদী (আ .)এ ধর্মকে মুক্তি দেবেন ,পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং মুসলমানদের কাছে আবার ফিরিয়ে আনবেন । সে তোমাদেরকে বছরে দু বার পুরস্কার এবং মাসে দু টি জীবিকা প্রদান করবে -এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে বাইতুলমাল থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর একটি আর্থিক পুরস্কার এবং প্রতি দু সপ্তাহ অন্তর খাদ্য -সামগ্রী এবং ভোজ্যদ্রব্য বন্টন করা হবে ।

ইমাম সাদিক (আ .)থেকে বর্ণিত হয়েছে : ইসলাম ধর্ম শ্রীহীন ও হীন হওয়ার পর মহান আল্লাহ এ ধর্মকে তার মাধ্যমে সম্মান প্রদান করবেন ,পরিত্যাক্ত ও অপাঙক্তেয় থাকার পর এ ধর্মকে পুনরায় জীবিত করবেন ,জিযিয়হ পুনঃপ্রত্যাবর্তন করবেন এবং তরবারি দিয়ে কাফির ও প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে তার পথে আহবান করবেন ;আর যে এর বিরোধিতা করবে সে নিহত হবে ;আর যে তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে সে -ই অপদস্ত হবে । 411

তিনি আরো বলেছেন : মহান আল্লাহ তার মাধ্যমে সব ধরনের বিদআত দূরীভূত করবেন ,প্রতিটি পথভ্রষ্টতাকে মিটিয়ে দেবেন এবং প্রতিটি সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করবেন । 412

ইমাম বাকির (আ .)বলেছেন : পৃথিবীর বুকে এমন কোন বিরাণ ভূমি থাকবে না যা আবাদ হবে না । একমাত্র মহান আল্লাহ ব্যতীত প্রতিমা ,মূর্তি ইত্যাদির মতো আর কোন উপাস্য থাকবে না যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ধ্বংস হবে না । 413

মানুষ যদি বিস্ময়বশত নিজেকেই প্রশ্ন করে ,যে সব অমুসলিম জাতি পার্থিব জীবন যাপনে পূর্ণরূপে অভ্যস্ত ,ঈমান এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ থেকে বহু দূরে এবং ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করে তাদের মাঝে ইমাম মাহদী (আ .)কিভাবে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটাবেন ,তাহলে এটিই স্বাভাবিক । তবে অবশ্যই প্রভূত বিশ্বাসভিত্তিক ,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যককারণ যেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি আমরা ইতোমধ্যে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আন্দোলনের অধ্যায়ে আলোচনা করেছি সেগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ,বিশ্বের জাতিসমূহ পার্থিব ও ধর্মবর্জিত জীবনকে পরীক্ষা করে দেখেছে ,এর স্বাদ নিয়েছে এবং নিজেদের সমুদয় অস্তিত্ব ও বোধ দিয়ে এ জীবনের শূন্যতা এবং মানুষের বিবেকবোধের কাছে সঠিক জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে এর অপারগতা অনুভব করতে পেরেছে ।

ঐসব কার্যকারণের মধ্যে এটিও অন্তর্ভুক্ত যে ,পবিত্র ইসলাম ধর্ম আসলে স্বভাবজাত (ফিতরাত )ধর্ম । যদি অত্যাচারী শাসনকর্তারা এ ধর্মের আলো আলেম এবং সত্যিকার মুমিনদের মাধ্যমে জাতিসমূহের কাছে পৌছতে দেয় তাহলে তারা এ আলোর দিকে আকৃষ্ট হবে এবং দলে দলে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করবে । আরেকটি বিষয় হচ্ছে এমন সব নিদর্শন ও অলৌকিক বিষয় সংঘটিত হওয়া যা ইমাম মাহদী (আ .)কর্তৃক বিশ্বের জাতিসমূহের জন্য বাস্তবায়িত হবে । এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও স্পষ্ট বিষয় হবে আসমানী আহবান যা ইতোমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি । যদিও অত্যাচারী শাসকদের ওপর এ সব মুজিযার কার্যকরী প্রভাব ক্ষণস্থায়ী ও দুর্বল অথবা তা জনগণের ওপর ফলহীন ,তবে তাদের নিজ নিজ জাতির ওপর এ সব মুজিযা বিভিন্নভাবে কার্যকরী প্রভাব রাখে । সম্ভবত তাদের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারকারী কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে ইমাম মাহদীর একের পর এক বিজয় । কারণ ,পশ্চাত্যের জাতিসমূহ স্বভাবতই বিজয়ী শক্তিকে ভালবাসে এবং এগুলোর প্রশংসা করে ,এমনকি যদি সেগুলো তাদের শত্রুও হয় । আরেকটি কারণ হযরত ঈসা (আ .)এর পৃথিবীতে অবতরণ এবং ঐ সব মুজিযা ও নিদর্শন যেগুলো মহান আল্লাহ তার শক্তিশালী হাতে পাশ্চাত্য জাতিসমূহ এবং পৃথিবীবাসী জন্য প্রকাশ করবেন । বরং বাহ্যত স্পষ্ট যে ,হযরত ঈসা (আ .)-এর ভূমিকা ও তৎপরতা মূলত পাশ্চাত্যবাসীর মধ্যেই হবে । আর স্বভাবতই পাশ্চাত্য জাতিসমূহ এবং তাদের শাসকরা শুরুতে তার সামনে উপস্থিতির কারণে আনন্দিত হয়ে তার প্রতি ঈমান আনবে । কিন্তু যখনই তিনি ইমাম মাহদী (আ .)এবং ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে তার ঝোক ও অনুরাগ ব্যক্ত করবেন তখনই পাশ্চাত্য সরকারসমূহ তার ব্যাপারে সন্দিহান ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে এবং সে সাথে তার প্রতি সর্বজনীন সমর্থন কমে যাবে । তবে পাশ্চাত্য জাতিসমূহের মধ্য থেকে তার বেশ কিছু সঙ্গী ও সমর্থক থাকবে যাদের মধ্যে এমন এক আদর্শিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হবে যে ,তারা তাদের নিজ নিজ দেশে গণ আন্দোলনের জোয়াড় বইয়ে দেবে । আর এ বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি ।

অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক দিক । ইমাম মাহদী (আ .)এর হাতে মুসলিম বিশ্বে জনকল্যাণের যাবতীয় উপায় -উপকরণ ও সুযোগ -সুবিধা যথার্থভাবে পরিবর্তিত ও বিকশিত হবে । রেওয়ায়ে ও হাদীসসমূহের বক্তব্য অনুযায়ী মুসলমানরা তার যুগে এত বেশী নেয়ামতের প্রাচুর্য লাভ করবে যে ,পৃথিবী ও জাতিসমূহের ইতিহাসে তা হবে অভূতপূর্ব । এ বিপরীতে অমুসলিম দেশসমূহে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে । আর নিশ্চিতভাবে এ ধরণের পরিস্থিতি পাশ্চাত্য জাতিসমূহের ওপর ব্যাপক প্রভা বিস্তার করবে ।

বস্তুগত জীবনের ব্যাপক পরিবর্তন এবং জনকল্যাণের ব্যাপক বিকাশ

ইমাম মাহদী (আ .)সংক্রান্ত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তার শাসনামলে অর্থনৈতিক কল্যাণ ও প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ও বিকাশ ।

বিশেষ করে যখন আমরা জানি যে ,এ সব রেওয়ায়েত ও হাদীস মহানবী (সা .)-এর যুগে এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহে আজ যে সব ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সেগুলোর আগেই বর্ণিত হয়েছে । আর মানব জাতির পার্থিব জীবনকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে ,দৈনন্দিন ,সামাজিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এ সব পরিবর্তন অতীতের তুলনায় ভিন্ন । অধিকন্তু ইমাম মাহদী (আ .)-এর যুগে মানুষের পার্থিব জীবনের যে ধরণের কথা রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা আমাদের জানা আধুনিক যুগের জীবনের চেয়েও ব্যাপক । আর যা আমাদেরকে জনকল্যাণ ও সমৃদ্ধির ঐ পর্যায়ে নিয়ে যাবে তা হচ্ছে মানব জাতির স্বাভাবিক চেষ্টা -প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের পরিবর্তন ও বিকাশ ।

এখন আমরা এতৎসংক্রান্ত কতিপয় রেওয়ায়েত উল্লেখ করব :

ভূ -গর্ভস্থ সম্পদ উত্তোলন এবং জনগণের মাঝে তা বন্টন

এতৎসংক্রান্ত প্রচুর রেওয়ায়েত ও হাদীস বিদ্যমান । যেমন এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি প্রণিধানযোগ্য। মহানবী (সা.) বলেছেন : পৃথিবী তার জন্য এর সমুদয় সম্পদ ও ঐশ্বর্য্য বের করে দেবে এবং সে জনগণের মধ্যে অগণিত ধন-সম্পদ বণ্টন করবে। 414

আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : “… সে ভূ-গর্ভ থেকে স্তম্ভের মতো স্বর্ণ উত্তোলন করবে। 415

আর এ রেওয়ায়েতটি শিয়া ও সুন্নী সূত্রসমূহে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং তা অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণ নির্দেশ করে। আর সে সাথে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দানশীলতা ও মানব জাতির প্রতি তাঁর মমত্ববোধ এবং ভালোবাসাও এ রেওয়ায়েত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : যখন আহলে বাইতের আল কায়েম আবির্ভূত হবে এবং আন্দোলন করবে তখন সে যাবতীয় সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে জনগণের মাঝে বণ্টন করবে এবং সর্বত্র ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। যে কেউ তার আনুগত্য করবে সে আসলে মহান আল্লাহরই আনুগত্য করবে এবং যে কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করবে সে আসলে মহান আল্লাহরই বিরুদ্ধাচরণ করবে। সে আনতাকিয়ার একটি গুহা থেকে তাওরাত ও অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বের করে আনবে এবং তাওরাতের বিধানের ভিত্তিতে ইহুদীদের মধ্যে ,ইঞ্জিলের বিধান অনুযায়ী খ্রিস্টানদের মধ্যে ,যূবুরের বিধানের ভিত্তিতে এ গ্রন্থের অনুসারীদের মধ্যে এবং পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহের ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করবে। পৃথিবীর অভ্যন্তর ও বাইরের যাবতীয় সম্পদ তার কাছে সঞ্চিত হবে। আর সে জনগণকে আহবান করবে : তোমরা সবাই যে জিনিসের জন্য আত্মীয়তা ও রক্ত-সম্পর্ক ছিন্ন করেছ ,পরস্পরের রক্ত ঝরানো হালাল বলে গণ্য করেছ এবং হারামসমূহ আঞ্জাম দিয়েছ সে দিকে চলে এসো...। সে প্রত্যেক ব্যক্তিকে এতটা দেবে যে ,এর পূর্বে সে কারো কাছ থেকে তা পায় নি। সে পৃথিবীকে যেমনভাবে তা অন্যায়-অবিচার ,বৈষম্য ও অকল্যাণ দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে তেমনি ন্যায়বিচার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেবে। 416

মুসলিম উম্মাহর নেয়ামতসমূহের অধিকারী হওয়া এবং সমগ্র পৃথিবীর আবাদ ও পুনর্গঠিত হওয়া

মহানবী (সা.) বলেছেন : মাহ্দীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত লাভ করবে যে ,তারা পূর্বে কখনই তা লাভ করে নি। আকাশ থেকে তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং তখন পৃথিবীর বুকে সব ধরনের উদ্ভিদই জন্মাবে। 417

তিনি আরো বলেছেন যে ,তাঁর উম্মত তাঁর (মাহ্দী) কাছে এমনভাবে আশ্রয় নেবে যেমনভাবে মক্ষীরাণীর কাছে মৌমাছিরা আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি পৃথিবীকে যেভাবে তা অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্য দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক সেভাবে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন। আর সমগ্র মানব জাতি ঠিক তাদের আদি সমাজের মতো হয়ে যাবে। তিনি কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করবেন না এবং কোন রক্ত ঝরাবেন না (অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবেন না)। 418

মনে হচ্ছে ঠিক তাদের আদি সমাজের মতো -এ বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে আদি মানব সমাজ যা এক অখণ্ড জাতি ছিল। মানব জাতি স্বভাবজাত প্রকৃতি ও নির্মলতার ভিত্তিতে জীবন যাপন করত এবং তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য ছিল না। আর এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে : মানব জাতি এক অখণ্ড জাতি ছিল। 419

এ বিষয়টি কতিপয় রেওয়ায়েত ও হাদীসের মতামতকে সমর্থন করে। কারণ ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে মানব সমাজ প্রথমে দারিদ্র্যমুক্ত ও অভাবমুক্ত একটি সমাজে পরিণত হবে। অতঃপর তখন তা মতভেদ ,টানাপড়েন ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতবিহীন প্রেম-প্রীতি ,সৌহার্দ্র্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজে পরিণত হবে যেখানে বিচারকার্য ও বিচারালয়ের কোন প্রয়োজন হবে না। এর পরবর্তী পর্যায়ে ঐ সমাজ এমন এক সমাজে রূপান্তরিত হবে যেখানে অর্থ ও টাকা-পয়সা ছাড়াই সব ধরনের লেন-দেন সম্পন্ন হবে। জনগণ তখন মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একে অপরের সেবা করবে এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরগণের ওপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করে নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করবে।

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন : আসমান ও যমীনের বাসিন্দারা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করার ব্যাপার কার্পণ্য করবে না এবং যমীনেও উদ্ভিদ ,বৃক্ষ ও তরুলতা জন্মানোর পথে কোন বাধা থাকবে না অর্থাৎ পৃথিবী বৃক্ষ ,তরুলতা ,ফুলে-ফলে ভরে যাবে। এর ফলে জীবিতরা আকাঙ্ক্ষা করতে থাকবে : হায় যদি এ সব নেয়ামত ভোগ করার জন্য মৃতরা জীবিত হতো। 420

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : মহান আল্লাহ্ তার মাধ্যমে নিজ ধর্মকে বিজয়ী করবেন যদিও কাফের-মুশরিকরা তা পছন্দ করবে না এবং পৃথিবীর সমস্ত বিধ্বস্ত ও বিরাণ এলাকা তার মাধ্যমে আবাদ হয়ে যাবে। 421

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : মাহ্দী মানব জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা এবং মহান আল্লাহ্ তার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত ফিতনার প্রজ্বলিত অগ্নি নিভিয়ে দেবেন। 422

مدهامّتان এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : পবিত্র মক্কা ও মদীনা খেজুর গাছের দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যাবে। 423

সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে : যে বছর আল কায়েম আল মাহ্দী আবির্ভূত হবেন এবং কিয়াম করবেন সে বছর চব্বিশ বার পৃথিবীর ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হবে যার বরকত ও কল্যাণকর প্রভাব সর্বত্র দৃষ্টিগোচর হবে। 424

ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করছেন : মাহ্দীর চি হ্ন হচ্ছে নিজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপারে কঠোর আচরণ ,মুক্ত হস্তে ধন-সম্পদ দান এবং দুঃস্থ ,সহায়-সম্বলহীন মানুষের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া।

আরো বর্ণিত হয়েছে :   মাহ্দী যেন অসহায়দের মুখে মাখন পুরে দেবেন। 425