ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)5%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 87408 / ডাউনলোড: 10559
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও জীবন-ধারণের উপায়-উপকরণের পরিবর্তন

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে অতীত ও বর্তমান প্রজন্মসমূহের বহু অস্বাভাবিক বিষয় আলোচিত হয়েছে। যেমন : গণযোগাযোগের মাধ্যমসমূহ ,গবেষণা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ,অডিও-ভিজুয়াল সামগ্রীসমূহ ,বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ,অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ ,সরকার ও প্রশাসন ,বিচার-ব্যবস্থা এবং আরো অন্যান্য বিষয় যেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি আবার বাহ্যত কারামত বা মুজিযাস্বরূপ। আর মহান আল্লাহ্ এগুলোই ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করবেন । তবে এসব বিষয়ের অনেকগুলোই আবার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহে (পদার্থ ,রসায়ন ও জীববিদ্যা) পরিবর্তন এবং মহান আল্লাহর ঐশী নিয়ম ও নেয়ামতসমূহের যথার্থ ব্যবহার থেকে উদ্ভূত হবে। এখানে উল্লেখ্য যে ,মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহ বিভিন্ন প্রকার মৌল ও খনিজ পদার্থ হিসাবে পৃথিবী ও মহাকাশে মানুষের হাতের নাগালেই আছে। বেশ কিছু রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মাধ্যমে যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে তা পৃথিবীতে মানব জীবনের যাবতীয় দিক ও পর্যায়ে উন্নতি ও প্রগতির ক্ষেত্রে এক বিরাট পদক্ষেপস্বরূপ।

এ কারণেই ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : জ্ঞান সাতাশটি অক্ষর (শাখা-প্রশাখা) সমতুল্য। সকল নবী-রাসূল সম্মিলিতভাবে যা এনেছেন তা আসলে জ্ঞানের দু টি অক্ষরস্বরূপ। মানব জাতি মাহ্দীর আবির্ভাবের দিবস পর্যন্ত এ দু টি অক্ষরের বেশি কিছু জানতে পারবে না। আর যখন আল কায়েম আল মাহদী আবির্ভূত হবে ও কিয়াম করবে তখন সে জ্ঞানের অবশিষ্ট পঁচিশটি অক্ষর বের করে তা মানব জাতির মধ্যে প্রচার করবে ;আর এভাবে সে জ্ঞানের সাতাশ ভাগই প্রচার করবে ও জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেবে। ৪২৬

এ রেওয়ায়েতে যদিও মহান নবী-রাসূলদের আনীত জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে দৃকপাত করা হয়েছে তবুও মহান আল্লাহর পরিচিতি (স্রষ্টাতত্ত্ব) ,রিসালাত ও আখিরাত সংক্রান্ত জ্ঞান ছাড়াও এ রেওয়ায়েতে প্রাকৃতি বিজ্ঞানসমূহের দিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। আর বর্ণিত হাদীসসমূহ অনুযায়ী মহান নবিগণ মানব জাতিকে এ সব জ্ঞানের কতিপয় মূলনীতিও শিখিয়েছেন এবং তাদেরকে এ দিকে ধাবিত করে তাদের সামনে এসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুটিকতক প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করেছেন । যেমন : হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর মাধ্যমে সেলাই শিক্ষা ,হযরত নূহ (আ.)-এর মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ এবং কাঠের কাজ ও আসবাবপত্র প্রস্তুত করার পদ্ধতি এবং হযরত দাউদ ও সুলায়মান  (আ.)-এর মাধ্যমে বর্ম তৈরি করার পদ্ধতির শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ রেওয়ায়েতে জ্ঞানের প্রকৃত অর্থ ধর্মীয় জ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানও হতে পারে এতদর্থে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) মানব জাতিকে যে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিখাবেন সেটার অনুপাত হবে ২ : ২৫।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :   তোমরা জেনে রাখ ,যূলকারনাইন বশীভূত ও অবাধ্য মেঘদ্বয়ের মধ্যে একটি বেছে নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি বশীভূত মেঘকে বেছে নেন এবং তোমাদের বন্ধু ও প্রিয়ভাজন ব্যক্তিটির (মাহ্দী) জন্য ঐ অবাধ্য মেঘটি বরাদ্দকৃত হয়েছে। রাবী বলেন : আমি প্রশ্ন করলাম : উদ্ধত মেঘ কোনটি ? তিনি বললেন : যে মেঘে গর্জন ,বিদ্যুত ও বজ্রপাত আছে সেই মেঘটি -যার ওপর তোমাদের প্রিয়ভাজন ব্যক্তিটি সওয়ার হবে। তোমরা জেনে রাখ ,সে মেঘের ওপর আরোহণ করে যাবতীয় উপায়-উপকরণসমেত উর্ধ্বাকাশে উড়ে যাবে। এসব উপায়-উপকরণ হচ্ছে সাত আসমান ও যমীন যেগুলোর পাঁচ স্তর আবাদ এবং দুই স্তর বীরাণ সেগুলোর সকল উপায়-উপকরণ। ৪২৭

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : আল কায়েমের যুগে প্রাচ্যে বসবাসরত মুমিন ব্যক্তি পাশ্চাত্যে অবস্থানকারী নিজ ভাইকে দেখতে পাবে এবং যে ব্যক্তি পাশ্চাত্যে আছে সেও প্রাচ্যে বসবাসরত তার ভাইকে দেখতে পাবে। ৪২৮

ইমাম সাদিক (আ.) আরো বলেছেন : যখন আল কায়েম আবির্ভূত হয়ে বিপ্লব করবে তখন মহান আল্লাহ্ আমাদের অনুসারীদের চোখ ও কান এতটা শক্তিশালী করে দেবেন যে ,তাদের ও ইমামের মাঝে কোন মধ্যবর্তী মাধ্যম ও দূত বিদ্যমান থাকবে না। এটা এমনভাবে হবে যে ,ইমাম যখনই তাদের সাথে কথা বলবে ,তারা তা শুনতে পাবে এবং তাকে দেখতেও পাবে। অথচ ইমাম তার নিজ জায়গাতেই থাকবে। ৪২৯

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : সাহিবুল আমরের (ইমাম মাহ্দী) হাতে যখন যাবতীয় বিষয় ও কাজ অর্পণ করা হবে তখন ভূ-পৃষ্ঠের নীচু স্থানগুলোকে উঁচু এবং উঁচু স্থানগুলোকে সমতল করে দেয়া হবে। আর তা এমনই হবে যে ,তার কাছে পৃথিবী হাতের তালুর মতো হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি আছে যে তার হাতের তালুতে একটি চুল থাকলে তা দেখতে পায় না ?

বর্ণিত হয়েছে যে ,আলোর একটি স্তম্ভ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশ পর্যন্ত তাঁর জন্য স্থাপন করা হবে এবং তিনি তার মধ্যে বান্দাদের যাবতীয় কাজ প্রত্যক্ষ করবেন। আর মিশরের পিরামিডের একটি পাথরের নীচে তাঁর জন্য বেশ কিছু জ্ঞান গচ্ছিত রাখা আছে যেগুলো তাঁর আগে কারো হস্তুগত হয় নি। ৪৩০

আরো কিছু রেওয়ায়েত আছে যেগুলো পূর্ণরূপে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। যেমন : এগুলোর মধ্যে কতিপয় রেওয়ায়েতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পূর্ণ পরিবর্তন ,মুমিনদের মানসিক যোগ্যতা ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট উপকরণসমূহের আমূল পরিবর্তন এবং ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ব্যবহৃত উপায়-উপকরণ ,যন্ত্রপাতি এবং কারামতসমূহের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : আমি যেন আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীদেরকে দেখতে পাচ্ছি যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের আজ্ঞাবহ ,এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের হিংস্র পশুকুল এবং আকাশের শিকারী পাখীরাও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করবে। সবকিছুই ,এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের এক অঞ্চল আরেক অঞ্চলের ওপর গর্ব করে বলবে : আজ আল কায়েমের একজন সঙ্গী আমার ওপর পদধুলি দিয়েছেন এবং আমাকে অতিক্রম করেছেন। ৪৩১

ইমাম বাকির (আ.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে : যখন আমাদের কায়েম আবির্ভূত হবে ও বিপ্লব করবে তখন পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে যে ব্যক্তিকেই প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরণ করবে তখন তাকে বলবে : তোমার হাতের তালুতেই তোমার কর্মসূচী ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা আছে। যখনই তোমার ক্ষেত্রে কোন ব্যাপার ঘটবে যা তুমি বুঝ নি এবং যার হিকমতও তোমার জানা নেই তখন তুমি তোমার হাতের তালুর দিকে তাকাবে এবং সেখানে যে নির্দেশনা বিদ্যমান আছে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ৪৩২

এ রেওয়ায়েত সম্পর্কে ইয়াওমুল খালাস গ্রন্থে এমন সব সূত্র ও উৎসের কথা বর্ণিত হয়েছে যেগুলো অন্যান্য গ্রন্থে আমি পাই নি। আর তাঁদের ইমাম মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীদের ক্ষেত্রে এসব ঘটনা মুজিযা ও কারামত আকারে ঘটা অথবা বৈজ্ঞানিক নিয়ম-নীতি এবং অত্যাধুনিক ও অতি উন্নত মাধ্যম ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সংঘটিত হওয়া সম্ভব।

হযরত সুলাইমান ও যূলকারনাইনের সাম্রাজ্য অপেক্ষাও বিশাল সাম্রাজ্য

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ থেকে খুব ভালোভাবে বোঝা যায় যে ,তিনি যে বিশ্ব ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করবেন তা হযরত সুলাইমান (আ.) ও বাদশাহ যূলকারনাইনের রাজত্ব অপেক্ষাও বিশাল। আর কতিপয় রেওয়ায়েত থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ইমাম বাকির (আ.)-এর নিম্নোক্ত রেওয়ায়েত :

আমাদের (ইমাম মাহ্দীর) রাজত্ব হযরত সুলায়মান ইবনে দাউদ (আ.)-এর রাজত্বের চেয়ে ব্যাপক এবং আমাদের রাজ্যের পরিসীমা তাঁর রাজ্যের পরিসীমা অপেক্ষা বড় হবে।

আর পরবর্তী রেওয়ায়েতটিতে বর্ণিত হয়েছে যে ,তাঁর হাতে এমন সব হাতিয়ার ও উপায়-উপকরণ বিদ্যমান যেগুলো বাদশাহ যূলকারনাইনেরও ছিল না এবং ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলোয় বর্ণিত হয়েছে যে ,মহান নবীদের থেকে যা কিছু উত্তরাধিকার হিসাবে বিদ্যমান ,যেমন হযরত সুলাইমান (আ.)-এর উত্তরাধিকার সেগুলো সব তাঁরই আয়ত্তে থাকবে এবং সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে।

কারণ ,হযরত সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্বের অন্তর্গত ছিল ফিলিস্তিন ও শামদেশ। মিশর ও এর পশ্চিমের দেশসমূহ অর্থাৎ আফ্রিকা মহাদেশ তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত অনুসারে ইয়েমেন থেকে ভারত ,চীন এবং অন্যান্য দেশ তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং দক্ষিণ ইরানে অবস্থিত ইস্তাখর শহরও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অথচ রেওয়ায়েতসমূহের ভিত্তিতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমত সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। যার ফলে এমন কোন জনপদ থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহর একত্ব এবং মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া হবে না। আর পৃথিবীর বুকে এমন কোন বিধ্বস্ত অঞ্চলও বিদ্যমান থাকবে না যার পুনর্গঠন ও আবাদ করা হবে না।

আরেকদিকে ,ইমাম মাহ্দীর হাতে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকবে সেগুলো ঐ সব সুযোগ-সুবিধা অপেক্ষা অধিক যেগুলো হযরত সুলাইমান (আ.)-এর আয়ত্তে ছিল। সে সব সুযোগ-সুবিধা মুজিযাস্বরূপ ও মহান আল্লাহর কৃপায় তাঁর হাতে তুলে দেয়া হবে অথবা সেগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধাসমূহকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কারণে অর্জিত হয়ে থাকবে। তবে রেওয়ায়েতসমূহ ও ইতিহাসবেত্তাদের বক্তব্য অনুসারে কালগত দিক থেকে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্বকাল প্রায় অর্ধ শতাব্দী স্থাযী হয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুবরণের পর (৯৩৬ খ্রিস্টপূর্ব) বিচ্যুতি দেখা দেয় এবং তাঁর রাজত্ব ও প্রশাসন ধ্বংস হয়ে যায় এবং আল কুদ্স ও নাবলূস -এ দু রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়।

যদিও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর হুকুমতের সময়কালের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ বিভিন্ন ধরনের ,তবে যা আমাদের বিশ্বাসে প্রাধান্য পাওয়ার উপযুক্ত তা হচ্ছে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন সরকার পৃথিবীর ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। আর তাঁর পর তাঁর সন্তান-সন্ততিগণ যাঁরা তাঁরই আদর্শ ও পথ নিরবচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষণ ও অনুসরণ করবেন তাঁরাই শাসনকর্তৃত্ব পাবেন। আর তখন কতিপয় নবী এবং আহলে বাইতের কয়েকজন ইমাম  পুনঃপ্রত্যাবর্তন করবেন এবং তাঁরা এ বিশ্বের পরিসমাপ্তিকাল পর্যন্ত রাজত্ব করবেন ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখবেন।

উচ্চতর জগতে প্রবেশাধিকার প্রাপ্তি

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : মহান আল্লাহ্ যূলকারনাইনকে বশীভূত এবং অবাধ্য মেঘদ্বয়ের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার ইখতিয়ার দিয়েছিলেন এবং তিনি বশীভূত মেঘটি বেছে নেন যার মধ্যে কোন বজ্রনিনাদ ও বিদ্যুত ছিল না। আর তিনি যদি উদ্ধত মেঘকে বেছে নিতেন তাহলে তা তাঁর অধিকারভুক্ত হতো না। কারণ ,মহান আল্লাহ্ এ উদ্ধত মেঘকে আল কায়েম আল মাহ্দীর জন্য বরাদ্দ করেছেন। ৪৩৩

এ রেওয়ায়েতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ ,আসমানসমূহের তারকারাজির মাঝে এবং ঊর্ধ্বজগতে গমনাগমন করার জন্য বিভিন্ন প্রকার মাধ্যম এবং বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করবেন। যেমন যে মেঘের বজ্রপাত ,গর্জন ও বিদ্যুত আছে তা... এবং তিনি এসব মাধ্যম ব্যবহার করে ঊর্ধ্বাকাশে উড্ডয়ন করবেন। আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মাধ্যমগুলো তাঁর ইখতিয়ারে থাকবে।

আর ঠিক একইভাবে এ রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,আমাদের পৃথিবী ছাড়াও সাত আকাশের জগৎ এবং আমাদের পৃথিবীর বাইরের ছয় পৃথিবীতে ইমাম মাহ্দীর উড্ডয়ন সম্পন্ন হবে। আর এ বিষয়টি এতদর্থে নয় যে ,কেবল তিনি নভোযান ও স্পেস শিপ এর মতো মাধ্যম ব্যবহার করবেন ;বরং তাঁর যুগে অবস্থা এমনই হবে যে ,গ্রহ থেকে গ্রহে এবং গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সিতে ভ্রমণ হবে আমাদের বর্তমান যুগে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে ভ্রমণতুল্য।

আর ইমামের বাণী থেকেও প্রতীয়মান হয় যে ,পাঁচটি বসবাসযোগ্য গ্রহ অথবা পাঁচ পৃথিবী অথবা পাঁচ আসমান আছে যেগুলোর অধিবাসীদের সাথে অচিরেই (ইমাম মাহ্দীর শাসনামলে) আমাদের এ পৃথিবীর যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বিভিন্ন হাদীস ও রেওয়ায়েত অনুযায়ী আসমানসমূহে অগণিত গ্রহ আছে যেগুলোয় মহান আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের বিভিন্ন সমাজ বিদ্যমান। উল্লেখ্য যে ,এসব সৃষ্টি মানুষ ,ফেরেশতা ও জিনদের থেকে ভিন্ন। আর আল্লামা মাজলিসী বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে এসব রেওয়ায়েতের মধ্য থেকে গুটিকতক রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। একইভাবে পবিত্র কোরআনের বেশ কিছু আয়াতও এতদর্থই নির্দেশ করে। যেমন পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি :

হে জ্বিন ও মানব জাতি! যতি তোমরা ঊর্ধ্বাকাশসমূহ এবং ভূ-গর্ভের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সক্ষম হও ,তাহলে এ ব্যাপার পদক্ষেপ গ্রহণ কর তো দেখি ;তবে আধিপত্য ও দক্ষতা ব্যতীত তোমরা মহাকাশ সফর অর্থাৎ ঊর্ধ্বাকাশসমূহে উড্ডয়ন এবং পৃথিবীর গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। (সূরা রাহমান : ২৩-২৪)

অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যামানায় অতি সত্বর পৃথিবীর বুকে মানব জীবন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে যা এর পূর্ব পর্যন্ত অতীতকালের মানব জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। এখানে এ ব্যাপারে অধিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আলোচনার অবকাশ নেই।

আখেরাত ও বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি লাভ

যে সব কর্ম তৎপরতা ,আন্দোলন ও গতি আমাদের এ জগতে সেগুলোর নিজস্ব স্থান -কাল এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার মধ্যেই সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে বস্তু জগৎ থেকে অবস্তু জগতের দিকে গমন অথবা অবস্তু জগৎ থেকে বস্তুগত জগতের দিকে প্রত্যাবর্তন উল্লেখযোগ্য । পবিত্র কোরআন ও ইসলাম ধর্ম এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা দূর করে যথোপযুক্ত আলোকপাত করেছে এবং এব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে এর সাথে খাপ খওয়ানোর জন্য জোর দিয়েছে ।

এ পরিক্রমণকে মহান আল্লাহর দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং তার সাথে মিলন অথবা উধ্বালোক ও আখেরাতের দিকে গমন বলে অভিহিত করা হয় ।

জাগতিক প্রেক্ষাপটে যেহেতু আমাদের এ জগৎ এবং বিস্তিৃত অদৃশ্যলোকের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হবে সেহেতু পবিত্র কোরআন ও ইসলামে মহান আল্লাহর দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন বা উধ্বলোকে (আখেরাত )উত্তোরণকে কিয়ামত এবং পুনরুত্থান বলে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে ,এ অদৃশ্যলোক আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে আছে ।

মানুষের ক্ষেত্রে এ পরিক্রমণ ও গতির চুড়ান্ত বিকাশের পর্যায় হচ্ছে মৃত্যু যা ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে চিরস্থায়ী বিস্তৃত (অসীম )জীবনে প্রবেশ যা কখনো ধ্বংস হবে না । আসলে এ ধর্মের দৃষ্টিতে মৃত্যু ধ্বংস নয় ,অথচ এমনটিই আমরা কখনো কখনো ভেবে থাকি । আর অস্তিত্ব জগতের ক্ষেত্রে মৃত্যুর চুড়ান্ত বিকাশের পর্যায় হচ্ছে কিয়ামত এবং বস্তু জগৎ ও অদৃশ্য অবস্ত জগতের এক সমান হওয়া ।

পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়েছে যে ,কিয়ামত ও পুনরুত্থানের বেশ কিছু ধারাবাহিক পদক্ষেপ ও নিদর্শন আছে যেগুলো পৃথিবী ,আকাশ এবং মানব সমাজে প্রকাশ পাবে ও বাস্তবায়িত হবে । বেশ কিছু রেওয়ায়েত থেকে প্রতিয়মান হয় যে ,ইমাম মাহদী (আ .)-এর সরকার ও প্রশাসনের ব্যাপারে সবাই একমত যে ,তার হুকুমতের পরে কিয়ামত ও পুনুরুত্থানের নিদর্শনসমূহ শুরু এবং প্রকাশ পেতে থাকবে । এখন আমরা দেখব কিভাবে কিয়ামত ও পুনরুত্থান শুরু হবে ।

সম্ভবত উধ্বলোকের উত্তোরণ ও প্রবেশ করার পথ প্রাপ্তির বিষয়টি রেওয়ায়েতসমূহে আলোচনা করা হয়েছে এবং তা ইমাম মাহদীর যুগে বাস্তবায়িত হবে । তখন নিঃসন্দেহে আখেরাত ও বেহেশতে ব্যাপকতর প্রবেশ ও উত্তোরণের শুভ সূচনা হবে । সুতরাং যে সব রেওয়ায়েতে ইমাম মাহদীর পরে পৃথিবীতে কতিপয় নবী এবং ইমামের রাজআত (মৃত্যুর পরে কিয়ামতের আগে একদল মৃত ব্যক্তির পৃথিবীতে পুনরুজ্জীবিত হওয়া )এবং তাদের শাসনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো এবং কতিপয় রেওয়ায়েতে যা কিছু রাজায়াত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ হচ্ছে ঠিক এ পর্যায় । রাজাআতে বিশ্বাস যদিও ইসলাম ধর্ম ও শিয়া মাযহাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় অর্থাৎ রাজায়াতে বিশ্বাস না করার কারণে কোন ব্যক্তি আহলে বাইতে মাযহাব ও ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যায় না । কিন্তু রাজায়াত সংক্রান্ত রেওয়ায়ে এত অধিক   এবং বিশ্বাস যোগ্য যে ,তা রাজায়াতে বিশ্বাস করার কারণ হবে।

কতিপয় রেওয়ায়েত অনুসারে রাজআত ইমাম মাহদী (আ .)এর হুকুমতের পরে এবং তার পরে এগার জন মাহদীর পরে শুরু হবে । কারণ ইমাম সাদিক (আ .)বলেছেন : নিশ্চয় আল কায়েম আল মাহদীর পরে ইমাম হুসাইন (আ .)এর বংশধরদের মধ্য থেকে এগার জন মাহদী আসবে । ৪৩৪

এখানে আমরা রাজআত সংক্রান্ত কতিপয় রেওয়ায়েত উল্লেখ করব ।

যে আল্লাহ আপনার ওপর পবিত্র কোরআনকে ফরয করেছেন তিনি অবশ্যই আপনাকে পূর্বস্থানে ফিরিয়ে আনবেন -পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ .)বলেছেন : তোমাদের নবী (সা .)পুনরুজ্জীবিত হয়ে তোমাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবেন । ৪৩৫

আবু বাসীর বলেছেন : ইমাম বাকির (আ .)আমাকে বলেছেন :তাহলে ইরাকবাসী কি রাজআত প্রত্যাখ্যানকারী ?আমি বললাম ;হ্যাঁ । তিনি বললেন :তারা কি কোরআন তেলাওয়াত করে না এবং পড়ে না : আর সেদিন আমি প্রত্যেক জাতি থেকে   এক দলকে পুনরুজ্জীবি করব ? ৪৩৬

আরেকটি রেওয়ায়েতে উপরিউক্ত আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম সদিক (আ .)কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন : জনগণ এ ব্যাপারে কি বলে ?তখন তিনি বলেছিলেন :তাদের অভিমত হচ্ছে উপরিউক্ত আয়াত কিয়ামত দিবস প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে । তিনি বললেন :কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ প্রত্যেক জাতি থেকে একদলকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং অবশিষ্টদেরকে তাদের পূর্বাবস্থার ওপর ছেড়ে দেবেন (তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না )!এ আয়াতটি নিঃসন্দেহে রাজাআত প্রসঙ্গে অবতির্ণ হয়েছে এবং কিয়ামতের সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াতটি হচ্ছে : তাদের সবাইকে আমি পুনরুত্থিত করে একত্রিত করব আর তাদের কাউকে উপেক্ষা করব না এবং …’ ৪৩৭

যুরারাহ বলেন : রাজাআতের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি এবং অন্যান্য ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম । তিনি আমাকে বললেন :যে ব্যাপারে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ তার সময় এখনো হয় নি ;বরং যে ব্যাপারে তাদের জ্ঞান ছিল না তা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যায় উপনীত হয় নি । ৪৩৮

কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমামদের রাজআতের পর মহানবী (সা .)-এর রাজআত হবে । আর ইমামদের মধ্যে যিনি প্রথম এ পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করবেন তিনি হলেন ইমাম হুসাইন (আ .) ।

ইমাম জাফর সাদিক (আ .)থেকে বর্ণিত হয়েছে : যিনি প্রথম এ পৃথিবীতে ফিরে আসবেন (মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হবেন )তিনিই ইমাম হুসাইন (আ .) । তিনি এত দিন রাজত্ব করবেন যে (বার্ধক্যের কারণে )তার ভ্রু তার চোখের সামনে এসে পড়বে । ৪৩৯

ইমাম সাদিক (আ .)থেকে আরেকটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে : রাজাআত সর্বজনীন বিষয় নয় ;বরং এটি গুটিকতক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটবে । কারণ ,প্রকৃত সত্যবাদী মুমিন এবং শকতকরা একশ ভাগ মুশরিক -কাফির ব্যতীত আর কারো রাজআত হবে না। ৪৪০

ষোলতম অধ্যায়

মুসলিম মাগরিব ভূ-খণ্ড এবং আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলী

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগের বিভিন্ন রেওয়ায়েতে মাগরিবীদের উল্লেখ আছে (মাগরিবীদের কথা বর্ণিত হয়েছে) । তবে এ সব রেওয়ায়েত যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবে ফাতেমীয়দের আন্দোলন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের সাথে সেগুলো মিলে-মিশে গেছে । উল্লেখ্য যে ,মুসলমানরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগেই ফাতেমীয়দের আন্দোলন ও বিপ্লব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা করেছেন । আর এ সব রেওয়ায়েত ,আরো অন্যান্য ভবিষ্যৎ ঘটনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত এবং মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের প্রমাণপঞ্জীর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য ।

তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে মাগরিবীদের আন্দোলন ও তৎপরতা সম্পর্কে স্পষ্ট উক্তি বিদ্যমান এবং ফাতেমীয়দের আন্দোলন ও বিপ্লবের সাথে এ সব রেওয়ায়েতের কোন সম্পর্ক নেই । এমনকি এতৎসংক্রান্ত এবং এ ছাড়াও আরো সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমান যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,মাগরিবীদের এ আন্দোলন ও তৎপরতা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগেই সংঘটিত হবে । এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট হচ্ছে সিরিয়া ও জর্দানে মাগরিবী বাহিনীর আগমন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ । এখানে উল্লেখ্য যে ,সুফিয়ানীর আন্দোলন ও বিপ্লবের একটু আগেই সিরিয়া ও জর্দানে মাগরিবী বাহিনী অনুপ্রবেশ করবে । আর ইতোমধ্যে আমরা যথাস্থানে এ বিষয়টি আলোচনা করেছি ।

সমগ্র শাম ,ইরাক-তুরস্ক সীমান্তে অবস্থিত কিরকীসীয়ার যুদ্ধ এবং ইরাকে মাগরিব হতে (আগত) অথবা মাগরিবী আরোহীরা (অর্থাৎ সাঁজোয়া বাহিনী) অথবা হলুদ পতাকাসমূহের ভূমিকার কথা রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত হয়েছে । যেমন ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে উল্লিখিত নিম্নোক্ত রেওয়ায়েত: যখন হলুদ ও কালো পতাকাসমূহ (পতাকাবাহী সেনাবাহিনীসমূহ) শামের অভ্যন্তরে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের জন্য আক্ষেপ যারা সামরিক বাহিনীর হাতে পর্যদূস্ত হবে । অতঃপর বিজয়ী সেনাবাহিনীর হাতে থেকে শামের জন্য আক্ষেপ এবং অভিশপ্ত কুৎসিত চেহারাবিশিষ্ট লোকটির থেকে তাদের জন্য আক্ষেপ । 197

অভিশপ্ত কুৎসিত চেহারাবিশিষ্ট হওয়া হচ্ছে সুফিয়ানীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যেরই অন্তর্ভুক্ত । এ পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত হয়েছে : কালো পতাকাবাহী এবং হলুদ পতাকার সমর্থকরা কুনাইতারা শহরে পরস্পরের মুখোমুখী হবে এবং ফিলিস্তিনে (ইসরাইলে) প্রবেশ করা পর্যন্ত একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হবে । এ সময় সুফিয়ানী প্রাচ্যবাসীদের (ইরানী সেনাবাহিনী) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে । আর যখন মাগরিবী সেনাবহিনী জর্দানে অবতরণ করবে তখন তাদের অধিনায়ক মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা তখন তিন দলে বিভক্ত হয়ে একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাবে । একটি দল যে স্থান থেকে এসেছিল সে স্থানেই প্রত্যাবর্তন করবে । আরেকটি দল সেখানে থেকে যাবে এবং সুফিয়ানী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাদেরকে পরাস্ত করে নিজের অনুগত করবে । 198

এতে আরো উল্লিখিত হয়েছে : নিশ্চয়ই মাগরিবীদের সেনাপতি ,বনি মারওয়ান ও বনি কুযাআহ্ শামের রাজধানীতে (দামেশকে) কালো পতাকাবাহীদের (ইরানী সেনাবাহিনী) সাথে যুদ্ধ করার জন্য পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হবে । 199

আবির্ভাবের যুগে মাগরিবী সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানসমূহ সংক্রান্ত সমুদয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,তাদের অভিযান আরব অথবা আন্তর্জাতিক বাঁধাদানকারী বাহিনীসমূহের সাথেই বেশি সদৃশ হবে । এ বাহিনী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী বিপ্লব ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে । তারা শামে প্রাচ্যবাসীদের পতাকাবাহী সেনাদল অর্থাৎ আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং তাদের হাতে পরাজিত হবে । পরাজয় বরণ করার পর তারা জর্দানের দিকে পশ্চাদপসরণ করবে । আমরা শামের ঘটনাবলী সংক্রান্ত অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আরো কিছু রেওয়ায়েত অনুসারে বোঝা যায় যে ,ইরাকেও তাদের ভূমিকা থাকবে ।

তবে কিরকীসীয়ার যুদ্ধে মাগরিবী সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ খুব সংক্ষিপ্ত হওয়ায় ইসলামের স্বার্থে তাদের ভূমিকার কথা নির্দেশ করে না । চাই তাদেরকে সুফিয়ানীর বিপরীতে তুর্কীদের সমর্থনকারী বা সুফিয়ানীর মিত্রপক্ষ বলে গণ্য করি না কেন । কারণ ,রেওয়ায়েতসমূহে কিরকীসীয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষকেই নিন্দা এবং তাদেরকে অত্যাচারী বলে গণ্য করা হয়েছে ।

রেওয়াযেতসমূহ সঠিক হওয়ার ভিত্তিতে কেবল বাকী থাকে মিশরে মাগরিবী বাহিনীর ভূমিকা । আর তাদের ভূমিকা ইসলাম ও মিশরবাসীদের অনুকূলে থাকবে কি -এ ব্যাপারে কোন দলিল আমাদের হাতে নেই । বরং আমাদের এ কথা বলাই উত্তম হবে যে ,ঐ সময় তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে ইসরাইল-সীমান্ত রক্ষা করা যখন মিশর সরকার ইহুদীদের বিরুদ্ধে সে দেশের জনগণ ও সেনাবাহিনীর প্রাণোৎসর্গকারী অভিযানসমূহ প্রতিহত ও বাধাদান করতে অপারগ হবে । অথবা তাদের প্রধান ভূমিকা মিশরে কিবতী সম্প্রদায়ের উল্লিখিত অপকর্ম ও অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে সে দেশের মুসলমানদের তীব্র প্রতিক্রিয়া থেকে এ সম্প্রদায়কে (কিবতী) রক্ষা করা হবে । অথবা ঐ সময় মাগরিবী বাহিনী আরব প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসাবে গণ্য হবে যখন মিশর সরকার দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে মিশরে হযরত মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থনকারী ইসলামী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মিশরের সরকারী বাহিনী উদ্বিগ্ন ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে । তখন মিশর সরকার মাগরিবী বাহিনীকে সে দেশে অনুপ্রবেশ ও সামরিক হস্তক্ষেপ করার আহবান জানাবে ।

আর মহান আল্লাহ্ই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন ।

একাদশ অধ্যায়


20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38