ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81145
ডাউনলোড: 9314

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81145 / ডাউনলোড: 9314
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

ইবনে হাজার আল হাইসামী

তিনি তার আস সাওয়ায়িক আল মুহরিকাহ নামক গ্রন্থে বলেছেন : মুকাতির ইবনে সুলাইমান এবং তাকে যে সব মুফাসসির অনুসরণ করেছেন তারা বলেছেন যে ,দ্বাদশ আয়াত

) و إنه لعلم للساعة (

অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি কিয়ামতের নিদর্শন -মাহদীর শানে অবতীর্ণ হয়েছে । যে সব হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় উল্লিখিত হয়েছে যে ,মাহদী মহানবী (সা.) এর আহলে বাইতভুক্ত সেগুলো শীঘ্রই বর্ণনা করা হবে । আর হযরত আলী ও ফাতেমা (রা.)- এর বংশধারার মধ্যে যে বরকত ও কল্যাণ আছে এবং মহান আল্লাহ যে তাদের দু জন থেকে অসংখ্য পবিত্র ও যোগ্য মানুষ সৃষ্টি এবং তাদেরকে প্রজ্ঞার চাবিকাঠি ও করুণার খনি করে দেবেন এতৎসংক্রান্ত নির্দেশনা এ আয়াতে বিদ্যমান । এর অন্তর্নিহিত কারণ হলো এই যে ,মহানবী (সা.) দোয়ার মাধ্যমে হযরত ফাতিমা এবং তার সন্তান ও বংশধদেরকে বিতাড়িত শয়তানের হাত থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় দিয়েছেন এবং আলীর জন্যও তিনি অনুরূপ প্রার্থনা করেছেন । এ বিষয় নির্দেশকারী হাদীসসমূহের বাচনভঙ্গি থেকেও জানা যায় এর সবগুলোই ইমাম মাহদী ?(আ.) সম্পর্কিত । 447

আমার অভিমত হচ্ছে و إنه لعلم للساعة এ আয়াতের যে ব্যাখ্যাদ্বয়ের একটিতে ইমাম মাহদীকে কিয়ামতের নিদর্শন এবং আরেকটিতে হযরত ঈসাকে কিয়ামতের নিদর্শন বলা হয়েছে সে ব্যাখ্যাদ্বয়ের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব যে ,হযরত ঈসা (আ.) ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে অবতরণ করবেন এবং তাকে সাহায্য করবেন । আর তাদের উভয়ের মাধ্যমেই একসঙ্গে মহাসত্য ও কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ প্রকাশিত হবে ।

মাহদী সংক্রান্ত কিছু হাদীস বর্ণনা করার পর ইবনে হাজার ঈসা ইবনে মারিয়ামই মাহদী

( لا مهدی إلا عیسی بن مریم )এ হাদীসের ওপর টীকা লিখতে গিয়ে  বলেছেন : অতঃপর  ঈসাই মাহদী ( لا مهدی إلا عیسی )এর ব্যাখ্যা কেবল এ হাদীসটি প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতেই সম্ভব । তা না হলে হাকিম এতদপ্রসঙ্গে যা বলেছেন সেটাই বলতে হবে । তিনি বলেছেন : আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েই এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছি এবং আমি যুক্তি পেশ করার জন্য তা করিনি । আর বায়হাকী বলেছেন : এ হাদীস কেবল মুহাম্মদ ইবনে খালিদ বর্ণনা করেছে। হাকিম বলেছেন : মুহাম্মদ ইবনে খালিদ একজন অজ্ঞাত ( مجهول ) হাদীস বর্ণনাকারী এবং তার বর্ণনা মহানবী (সা.) এর সাথে সম্পর্কিত করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে মত পার্থক্য রয়েছে । নাসাঈ স্পষ্টভাবে বলেছেন : সে মুনকার অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত বর্ণনাকারী । নাসাঈ ছাড়াও হাদীসের অন্যান্য হাফেয দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে ,এ হাদীসটির আগে সে সব হাদীস আছে অর্থাৎ যেগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে মাহদী ফাতিমার বংশধর সেসব হাদীস সূত্রের দিক থেকে অধিকতর সহীহ ।448

আবুল ফিদা ইবনে কাসীর

তার রচিত গ্রন্থ আন নিহায়াহ য় তিনি বলেছেন : শেষ যুগে যে মাহদী আবির্ভূত হবেন তার আলোচনা স্বতন্ত্র অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে এবং তাতে বলা হয়েছে যে ,তিনি হেদায়েতপ্রাপ্ত খলীফা ও ইমামদের অন্তর্ভুক্ত । মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহে তার সংক্রান্ত বর্ণনা বিদ্যমান এবং বলা হয়েছে যে ,তিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন ।

تخرج من خراسان رایات سود فلا یردها شئ حتی تنصب بإلیاء   অর্থাৎ খোরাসান থেকে কালো পতাকাসমূহ বের হবে । ঈলিয়ায় সেগুলো স্থাপন করা পর্যন্ত কোন কিছুই সেগুলোকে বাধা দান করতে পরবে না এ হাদীস বর্ণনার পরপরই তিনি বলেছেন : এসব পতাকা ঐসব পতাকা নয় যেগুলো নিয়ে আবু মুসলিম খোরাসানী বিদ্রোহ করেছিলেন এবং 132 হিজরীতে উমাইয়্যা শাসনের মূলোৎপাটন করেছিলেন ;বরং এগুলো হচ্ছে অন্য কালো পতাকা যেগুলো মাহদীর সাথে আসবে । আর তিনি হচ্ছেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আলাভী আর ফাতিমী আল হাসানী (রা.) । মহান আল্লাহ এক রাতের মধ্যেই তাকে প্রস্তুত এবং তার সবকিছু ঠিক করে দেবেন অর্থাৎ তার তওবা কবুল করবেন ,তাকে সামর্থ্য এবং ঐশী নির্দেশনা দেবেন ও সুপথ প্রদর্শন করবেন । তাকে একদল প্রাচ্যবাসী সমর্থন ও সাহায্য করবে ,তার শাসনকর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করবে ,তার ক্ষমতার ভিত মজবুত করবে ;তার পতাকাও হবে কালো ;আর এটি হচ্ছে এমন এক পতাকা যা মর্যাদ ও ব্যক্তিত্বের প্রতীক । কেননা মহানবী (সা.) এর পতাকা কালো বর্ণের ছিল যা উকাব ঈগল নামে অভিহিত ছিল ।

যা হোক শেষ যুগে যে মাহদীর আগমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে ,মূলত তার আবির্ভাব ও উত্থান হবে প্রাচ্য (ইরান) থেকে এবং বায়তুল্লাহয় (মক্কায়) তার হাতে বাইআত করা হবে । এ বিষয়টি কিছু হাদীসেও উল্লিখিত হয়েছে...এবং আমি মাহদীর আলাচনায় একটি পৃথক খণ্ডও রচনা করেছি। আর সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর । 449

জালালুদ্দীন সুয়ূতী

তিনি আল হাভী লিল ফাতাওয়া নামক গ্রন্থে বলেছেন : ইবনে জারীর তার তাফসীর গ্রন্থে

و من أظلم ممن مساجد الله أن یذکر فیها اسمه و سعی فی خرابها

অর্থাৎ যারা মহান আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করার ব্যাপারে বাধা দান করেছে এবং সেগুলো (মসজিদসমূহ) ধ্বংস করার ব্যাপারে চেষ্টা করেছে তাদের চেয়ে অধিক অত্যাচারী আর কে আছে ? -এ আয়াত প্রসঙ্গে সুদ্দী থেকে বর্ণনা করেছেন : তারা হচ্ছে রোমীয় যারা বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করার ব্যাপারে বাখতুন নাসরকে সাহায্য করেছিল ;

) اولئک ما کان لهم أن یدخلوها إلا خائفین (

অর্থাৎ তাদেরকে অবশ্যই ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাকে প্রবেশ করতে হবে -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : সেদিন পৃথিবীর বুকে রোমের সকল অধিবাসী (রোমান জাতি) নিজেদের গর্দান কর্তিত হওয়ার ভয়ে জিযিয়া কর প্রদানের ব্যাপারে ভীত হয়েই সেখানে প্রবেশ করবে । অতঃপর তারা জিযিয়া কর প্রদান করবে । لهم فی الدنیا خزی   অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে এ পৃথিবীতে লাঞ্ছনা ও অপমান -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন : তবে পৃথিবীতে তাদের লাঞ্ছনা ও অপমান হচ্ছে এমন যে ,যখন মাহদী আবির্ভূত হবেন এবং কন্সাট্যানটিনোপোল বিজয় করা হবে তখন তিনি তাদেরকে হত্যা করবেন ;আর এটিই হচ্ছে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও অপমান । 450

لا مهدی إلا عیسی بن مریم অর্থাৎ ঈসা ব্যতীত কোন মাহদী নেই অথবা ঈসাই হচ্ছেন মাহদী -এ হাদীসের ওপর টীকা লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন : আল কুরতুবী তার আত তাযকিরাহ নামক গ্রন্থে বলেছেন : এ হাদীসটির সনদ দুর্বল । মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত থেকে মাহদীর আবির্ভাব এবং তিনি যে হযরত ফাতিমা (আ.)-এর বংশধর হবেন এতৎসংক্রান্ত মহানবী থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত এবং এ হাদীসটির চেয়েও অধিক সহীহ । তাই এ হাদীসটি দিয়ে নয় ,বরং ঐ সকল হাদীসের ভিত্তিতেই অভিমত প্রদান ও ফয়সালা করতে হবে।

আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনুল হাসান ইবনে ইবরাহীম ইবনে আসেম আস সাহরী বলেছেন : মাহদীর আগমন ও আবির্ভাব ,তিনি যে আহলে বাইতভুক্ত হবেন ,সাত বছর শাসন করবেন ,পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন ,তার সাথে হযরত ঈসা (আ.) আবির্ভূত হয়ে ফিলিস্তিনের বাব-ই লুদ্দের (লদ-এর ফটক) কাছে দাজ্জালকে বধ করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবেন ,তিনি এ উম্মতের নেতৃত্ব দান করবেন এবং ঈসা (আ.) তার শাসনামলে তার পেছনে নামায আদায় করবেন-এতৎসংক্রান্ত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহ মহানবী (সা.) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং বরণনাকারীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এ হাদীসগুলো ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । 451

ইবনে আবীল হাদীদ মুতাযিলী

তিনি শারহু নাহজিল বালাগাহ গ্রন্থেو بنا یختم لا بکم এবং আমাদের দ্বারাই তিনি সমাপ্ত করবেন ,তোমাদের দ্বারা নয় -হযরত আলী (আ.)-এর এ বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন : এ বাণী (ইমাম) মাহদীর প্রতি ইঙ্গিত যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন । অধিকাংশ মুহাদ্দিস একমত যে ,তিনি হযরত ফতিমার বংশধর হবেন এবং আমাদের মুতাযিলা ভাইগণও তা অস্বীকার করেন না এবং তারা তাদের গ্রন্থসমূহে মাহদী প্রসঙ্গটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের প্রসিদ্ধ শিক্ষকগণও তা স্বীকার করেছেন । তবে আমাদের বিশ্বাস মতে তিনি এখনো জন্মগ্রহণ করেন নি এবং ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করবেন । এ একই অভিমত হাদীসপন্থিগণও পোষণ করে থাকেন । 452

ক্ষিপ্ত উষ্ট্রীর ক্ষিপ্ততার পর নিজ শাবকের প্রতি সদয় হবার মতো পৃথিবী বিদ্রোহ ও বিরুদ্ধাচরণ করার পর আমাদের প্রতি অবশ্যই সদয় হবে -হযরত আলী এ কথা বলার পর তিলাওয়াত করলেন : যারা পৃথিবীতে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েছে আমরা তাদের ওপর অনুগ্রহ প্রদর্শন এবং তাদেরকে ও উত্তরাধিকারী (অধিপতি) করতে চাই । হযরত আলীর এ বাণী ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন : আর ইমামীয়া শিয়ারা ধারণা করে যে ,এটি হচ্ছে তার পক্ষ থেকে গায়েব ইমাম সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি যিনি শেষ যুগে পৃথিবী শাসন করবেন । তবে আমাদের মাজহাবের ভাইয়েরা (মুতাযিলারা) বলেন যে ,এটি হচ্ছে ঐ ইমাম সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি যিনি পৃথিবী শাসন করবেন এবং সকল রাষ্ট্র ও দেশের ওপর স্বীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন । আর এ থেকে তার বর্তমান জীবিত ও বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য হয় না । আর যায়দীয়ারা বলেন যে ,যিনি পৃথিবী শাসন করবেন তিনি অবশ্যই ফাতিমী হবেন যাকে যায়দী মাজহাবের একদল ফাতিমী অনুসরণ করবে ,এমনকি যদিও বর্তমানে তাদের একজনও নেই । 453

بأبی ابن خیرة الإماء সর্বশ্রেষ্ঠ দাসীমাতাদের সন্তানের জন্য আমার পিতা উৎসর্গীকৃত হোক হযরত আলী (আ.)- এর এ বাণী ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইবনে আবীল হাদীদ বলেন : তবে ইমামীয়া শিয়ারা ধারণা করে যে ,তিনি তাদের দ্বাদশ ইমাম এবং তিনি দাসীমাতার সন্তান যার নাম নারজিস । কিন্তু আমাদের মুতাযিলা ভাইয়েরা মনে করে যে ,তিনি হযরত ফাতিমার বংশধর যিনি ভবিষ্যতে দাসীমাতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন এবং তিনি বর্তমানে নেই পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তিনি তা ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে ভরে দিবিন ,তিনি জালেমদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেবেন । 454

তবে উদাহরণস্বরূপ তিনি যদি আমাদের যুগে জন্মগ্রহণ করেন ,তাহলে এখন তিনি কোথাকার দাসী এবং তিনি কিভাবে দাসীমাতার সন্তান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দাসীমাতার সন্তান হবেন ?

ইবনে আবীল হাদীদ বলেছেন : فی سترة من الناس   সে (মাহদী) জনচক্ষুর অন্তরালে থাকবে -আলীর এ বাণীতে যে ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ,তা মোটেও ইমামীয়া শিয়াদের মাজহাবের অনুকূলে যায় না ,যদিও তারা ধারণা করেছে যে ,হযরত আলীর উক্ত উক্তি তাদের অভিমতকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত ও সমর্থন করে । আর তা এ কারণে যে ,মহান আল্লাহর পক্ষে এ ইমামকে শেষ যুগে সৃষ্টি করা এবং তাকে কিছুকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপন রাখা সম্ভব । তার বেশ কিছু প্রচারক থাকবেন যারা তার দিকে জনগণকে আহবান জানাবেন এবং তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন । অতঃপর তিনি গোপন থাকার পর আবির্ভূত হয়ে সকল দেশের ওপর শাসন পরিচালনা করবেন এবং সমগ্র পৃথিবীকে তার শাসনকর্তৃত্ব মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করবেন। 455

ফাইযুল কাদীর গ্রন্থে লেখক আল্লামা মান্নাভী

 المهدی رجل من ولدی وجهه کالکوکب الدّرّی   মাহদী আমার বংশধরদের মধ্যকার এক ব্যক্তি তার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল তারকার মতো উজ্জ্বল হবে -এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল মাতামিহ গ্রন্থে বলেছেন : বর্ণিত আছে যে ,এ উম্মতের মাঝে একজন খলীফা হবেন যার চেয়ে হযরত আবু বকর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী নন । আর মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অগণিত এবং প্রসিদ্ধ । অনেকেই সেগুলোর ব্যাপারে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেছেন । আস সামহুদী বলেছেন : তার(মহানবী) থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহে প্রতিষ্ঠিত বিষয় হচ্ছে এই যে ,মাহদী ফাতিমার বংশধর হবেন । আর সুনানে আবী দাউদে বর্ণিত আছে যে ,তিনি হাসানের বংশধর হবেন ।এ ক্ষেত্রে মূল রহস্য হচ্ছে ,মহান আল্লাহর উদ্দেশে উম্মতের প্রতি সদয় হয়ে ইমাম হাসানের খিলাফত ত্যাগ । তাই মহান আল্লাহ প্রথিবীবাসীর প্রচণ্ড প্রয়োজনের মুহূর্তে এবং অন্যায়-অবিচার দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর ইমাম হাসানের বংশধর হতে এক ব্যক্তির ওপর সত্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ করবেন । স্বীয় বান্দাদের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সুন্নাত বা রীতি হচ্ছে এই যে ,যে ব্যক্তি তার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করবে তিন ঐ ব্যক্তিকে অথবা তার বংশধরকে যা সে ত্যাগ করেছে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু প্রদান করেন ।

এরপর তিনি বলেছেন : ঈসা ইবনে মারিয়াম ব্যতীত কোন মাহদী নেই- এ হাদীসটি মাহদী সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসের পরিপন্থি নয় । কারণ ,আল কুরতুবীর বক্তব্য অনুসারে এ হাদীসের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে হযরত ঈসা ব্যতীত আর কোন মাহদী পূর্ণরূপে মাসুম (নিষ্পাপ) নন । আর রুয়ানী হুযাইফা থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,ইবনুল জাওয়ী ও ইবনুল আহমদ আর রাযী বলেছেন : উক্ত হাদীস আসলে একটি বাতিল হাদীস । এ হাদীসের সনদে (রাবীদের পরস্পরায়) মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আস সূরী বিদ্যমান । তার সম্পর্কে ইবনুল জাল্লাব থেকে আল মীযান নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে ,তিনি রাওয়াদ থেকে মাহদী সংক্রান্ত একটি প্রত্যাখ্যাত হাদীস বর্ণনা করেছেন । এরপর তিনি উক্ত হাদীস উদ্ধৃত করে বলেছেন : এ হাদীসটি বাতিল । 457

আল্লামা খাইরুদ্দীন আল আলূসী

তিনি গালিয়াতুল মাওয়ায়েয নামক গ্রন্থে বলেছেন : অধিকাংশ আলেমের বিশুদ্ধ ও সঠিক অভিমতের ভিত্তিতে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব । আলেমদের মধ্যে যারা তার আবির্ভাবের বিষয়টি অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন তাদের এ মতের কোন মূল্য নেই আর মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত বেশ কিছু হাদীস বিদ্যমান ।

ঐ সকল হাদীসের একটি অংশ আলোচনা করার পর তিনি বলেছেন : যা কিছু আমরা মাহদী প্রসঙ্গে উল্লেখ করলাম আসলে তা হচ্ছে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্যতম বিশুদ্ধ অভিমত । 458

শেখ মুহাম্মদ আল খিদর হুসাইন শাইখুল আযহার

আত তামাদ্দুন আল ইসলামী নামক ম্যাগাজিনে মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের ওপর এক পলক দৃষ্টি -এ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনি বলেছেন : খবরে ওয়াহিদের (একক সূত্রে বর্ণিত হাদীস) দ্বারা যুক্তি পেশ করার বৈধতার বিষয়টি ব্যবহারিক বিধির অন্তর্ভুক্ত । এটি এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে শরীয়ত প্রণেতা মহান আল্লাহ এমন কিছু সম্পর্কে সর্বসাধারণকে অবহিত করেন যা জানা ঈমানের সঠিকতার মানদণ্ড হিসাবে পরিগণিত নয় ,তবে তাদের তা অবশ্যিই জানা উচিত । ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কিত হাদীসসমূহ এরূপ (খবরে ওয়াহিদ) হাদীসের অন্তর্ভুক্ত । তাই যখন মহানবী (সা.) থেকে শেষ যামানা সম্পর্কে এমন কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় তখন যদি তা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হাদীসের পর্যায়ে না-ও পৌছায় অর্থাৎ রাবীদের সংখ্যা অধিক না-ও হয় তবুও তা গ্রহণ করা ও মেনে নেয়া অপরিহার্য ।

সহীহ বুখারীতে মাহদী সংক্রান্ত কোন হাদীস বর্ণিত হয় নি । সহীহ মুসলিমে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তাতে মাহদীর নাম স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয় নি এবং কতিপয় হাদীসশাস্ত্রবিদের মতে এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো মাহদী অথবা অন্তত এতে তার কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা গুণের দিকে ইঙ্গিত করা । তবে আহমদ ইবনে হাম্বল ,আবু দাউদ ,আত তিরমিযী ,ইবনে মাজাহ ,তাবারানী ,আবু নাঈম ইবনে হাম্মাদসহ অন্যান্য হাদীসবেত্তা তাদের নিজ নিজ হাদীসগ্রন্থে মাহদী সংক্রান্ত হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন ।

মোল্লা আলী আল কারী প্রণীত আল উরফুল ওয়াদী ফী হাকীকাতিল মাহদী এবং শাওকানী প্রণীত আত তাওহীদ ফি তাওয়াতুরে মা জায়া ফিল মুনতাজার ওয়াদ দাজ্জাল ওয়াল মাসীহ (প্রতীক্ষিত মাহদী ,দাজ্জাল ও মাসীহ সক্রান্ত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহের মুতাওয়াতির হওয়া সংক্রান্ত ব্যাখ্যা) নামক সন্দর্ভে এসব হাদীস সংকলিত হয়েছে ।

আমাদের জানা মতে প্রথম যে ব্যক্তি মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছিলেন তিনি হলেন আবু যাইদ আবদুর রহমান ইবনে খালদুন । তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে , (মাহদী সংক্রান্ত) কতিপয় হাদীস সমালোচনার উর্দ্ধে । আর আমাদের অভিমত হচ্ছে ,এ সব হাদীসের মধ্যে যখন অন্তত একটি হাদীস সঠিক বলে প্রমাণিত হবে এবং সমালোচনার উর্দ্ধে বলে গণ্য হবে তখন ঐ হাদীস শেষ যুগে এমন এক ব্যক্তি যিনি শরিয়ত অনুসারে মানব জাতিকে নেতৃত্বদান এবং ন্যায়পরায়ণতাসহ পৃথিবীতে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন ,তার আবির্ভাবের বিষয়টিতে বিশ্বাস অর্জনের জন্য যথেষ্ট হবে ।

যে সব সাহাবীর সূত্রে মাহদী সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাদের সংখ্যা সাতাশ জন । প্রকৃত ব্যাপার হলো বানোয়াট এবং নিকটবর্তী দুর্বল হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহকে প্রথক করার ব্যাপার হলো বানোয়াটের নিকটবর্তী দুর্বল হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহকে প্রথক করার পর মাহদী সংক্রান্ত অবশিষ্ট হাদীস সম্পর্কে কোন বিচক্ষণ গবেষক ও আলেমেই উপিক্ষা করতে পারেন না । আর একটু আগে উল্লিখিত সন্দর্ভে শাওকানী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ,মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলো মুতাওয়াতির হাদীসের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে । তিনি বলেছেন : এ সংক্রান্ত যে সব হাদীসের ওপর নির্ভর করা সম্ভব সেগুলোর সংখ্যা পঞ্চাশ ,যার মধ্যে সহীহ ,হাসান ও সংশোধনযোগ্য দুর্বল হাদীস (যে দুর্বল হাদীসের সমর্থক হাদীসসমূহ রয়েছৈ যার দ্বারা তার বিষয়বস্তুগত দুর্বলতা দূর করা সম্ভব) বিদ্যমান । তাই এ সংক্রান্ত হাদীস নিঃসন্দেহে মুতাওয়াতির ;বরং যে সব হাদীস এ হাদীসসমূহ অপেক্ষাও স্বল্প সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও উসূলশাস্ত্রের গ্রহীত পারিভাষিক নীতিমালার ভিত্তিতে মুতাওয়াতির পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ সেগুলোরকেও মুতাওয়াতির হাদীস বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ প্রত্যাখ্যানকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে ,এসব হাদীস শিয়াদের তৈরী । কিন্তু তাদের বক্তব্য এভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায় যে ,হাদীসগুলো তার সংশ্লিষ্ট সূত্রসহই বর্ণিত হয়েচে এবং আমরা এগুলোর সনদসমূহের রাবীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান গবেষণা করেছি । অতঃপর আমরা তাদেরকে এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পেয়েছি যারা ন্যায়পরায়ণতা এবং সূক্ষ্ণ স্মরণশক্তির জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং যাদের মধ্যে কেউই জারহ ও তাদীল (হাদীসসমূহের বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ততা ,নির্ভরযোগ্যতা ও ক্রটি পর্যালোচনা) বিশেষজ্ঞ আলেমদের পক্ষ থেকে শিয়া বলে অভিযুক্ত হন নি । অথচ এ সব বিশেষজ্ঞ আলেমের মধ্যে এমন অনেক রয়েছেন হাদীসের রাবীদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে যারা খ্যতি লাভ করেছেন । আবার কোন কোন শাসক তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিষয়কে নিজ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে । তাই তারা জনগণকে নিজেদের চারপাশে সমবেত করার জন্য নিজেদেরকে মাহদী বলে দাবী করেছে । ফাতেমীয় সাম্রাজ্যে এ দাবীর ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । কারণ ,এর প্রতিষ্ঠিাতা উবাইদুল্লাহ মনে করতেন যে ,তিনিই মাহদী । মুওয়াহহিদদের প্রশাসনও এ দাবীর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । কারণ ,এ প্রশাসনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে তূমার্ত এ দাবীর ওপরই তার শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।

মুরিইনিয়াহ রাজবংশের শাসনামলে মরক্কোর ফেজ নগরীতে তূযদী নামক এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল এবং মানহাজাহ গোত্রের সর্দাররা তার চারপাশে জড়ো হয়েছিল । সে মাসমাতীদেরকে হত্যা করেছিল ।

690 হিজরীতে মরক্কোর এক পল্লীতে আব্বাস নামের এক ব্যক্তি নিজেকে মাহদী দাবী করে বিদ্রোহ করে । একটি গোষ্ঠি তার অনুসারী হয় । অবশেষে সে নিহত হয় । এভাবে তার দাবী ও প্রচার কার্যক্রমেরও যবনিকাপাত হয় ।

মিশরে আরাবীর বিপ্লবের পর মুহাম্মদ আহমদ নামের এক ব্যক্তি সুদানে আবির্ভূত হয়ে নিজেকে মাহদী বলে দাবী করে এবং 1300 হিজরীতে জাহীনা অঞ্চলের বাক্কারাহ গোত্র তাকে মাহদী হিসেবে মেনে নিয়ে তার অনুসারী হয় । তার স্বভাবিক মৃত্যুর পর বাক্কারাহ গোত্রের এক সর্দার তার স্থলাভিষিক্ত হয় ।

যখন জনগণ মহানবী (সা.)এর কোন হাদীস বোঝার ক্ষেত্রে ভুল করে অথবা তা সঠিকভাবে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ না করার ফলে ফিতনার উৎপত্তি হয় তখন হাদীসের এরূপ অপব্যবহারের বিষয়টি যেন হাদীসটি সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ পোষণ অথবা তা অস্বীকার করার কারণ না হয় । কারণ ,নবুওয়াত নিঃসন্দেহে একটি প্রকৃত বিষয় ;অথচ বেশ কিছু ব্যক্তি নবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করেছে এবং এ দাবী দ্বারা অনেক লোককে পথভ্রষ্টও করেছে ,যেমন বর্তমানকালে কাদিয়ানী ফিরকার কর্মকাণ্ড (এ ভ্রান্ত ফিরকার প্রতিষ্ঠাতা মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) । আর উলূহীয়াতের (উপাস্য হওয়া) বিষয়টি একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হওয়া সত্বেও এবং তা দ্বিপ্রহরের মধ্যে আকাশে দীপ্তমান সূর্য়ের চেয়েও উজ্জল জানার পরও কিছু কিছু সম্প্রদায় তাদের নেতাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়েছেন । যেমন এ যুগে বাহাঈ সম্প্রদায় এমন দাবীই করে থাকে । তাই পরম সত্য মহান আল্লাহকে তার (উলূহীয়াতের) ক্ষেত্রে যে ভ্রান্ত ধারণা (শিরক) পোষণ করা হয়েচে সেজন্য অস্বীকার করা মোটেও সমীচীন হবে না । 459

শেখ নানিরুদ্দীন আলবানী

শেখ নাসিরুদ্দীন আল আলবানী আত তামাদ্দুন আল ইসলামী ম্যাগাজিনে মাহদী প্রসঙ্গে শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন : মাহদী প্রসঙ্গে জানা থাকা উচিত যে ,তার আবির্ভাব সংক্রান্ত প্রচুর সহীহ হাদীস বিদ্যমান যার বেশ কিঠু সহীহ সনদযুক্ত অর্থাৎ মহানবী (সা.) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে । আমি এ প্রবন্ধে এগুলোর মধ্য থেকে কতিপয় সনদ উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করব । এর পরপরই যারা এ সব হাদীস ও রেওয়ায়েত প্রসঙ্গে আপত্তি করেছেন এবং এগুলোর দোষ-ক্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাদের আপত্তি ও সংশয়সমূহ অপনোদন করব । তিনি উদাহরণস্বরূপ এ সংক্রান্ত কতিপয় হাদীসের উল্লেখ করে সেগুলো মুতাওয়াতির হওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞ আলেমদের অভিমত তুলে ধরেছেন ।

এরপর তিনি বলেছেন : সাইয়্যেদ রশীদ রিযা এবং অন্যরা ইমাম মাহদী সংক্রান্ত যে সব হাদীস বার্ণত হয়েছে সেগুলোর ওপর স্বতন্ত্রভাবে গবেষণা চালান নি এবং সূক্ষ্ণভাবে যাচাই করে দেখেন নি ;আর  এ সব হাদীসের প্রতিটির সনদও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন নি । যদি তা করতেন তাহলে তারা প্রত্যক্ষ করতেন যে ,এ হাদীসগুলোর মধ্যে এমন সব হাদীস আছে যেগুলো দিয়ে শুধু এ বিষয়েই নয় ,এমনকি গায়েবী অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও শরীয়তের দলিল পেশ করা সম্ভব । অথচ কেউ কেউ ধারণা করেন যে ,এসব গায়েবী বিষয় কেবল মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয় । রশীদ রিযা (রহ.) দাবী করেছেন যে ,মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের সনদ শিয়া বর্ণনাকারী মুক্ত নয় । কিন্তু ব্যাপারটি একেবারেই এমন নয় । আমি যে চরাটি হাদীস উল্লেখ করেছি সেগুলোয় শিয়া বলে প্রসিদ্ধ কোন রাবী নেই । যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে ,এ দাবী সত্য ,তবুও তা মাহদী (আ.) সংক্রান্ত হাদীসসমূহের সত্য হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা সৃষ্টি করে না । কারণ হাদীস সত্য ও বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র শর্ত বা বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে রাবীর সত্যবাদিতা এবং সূক্ষ্ণভাবে স্মরণ রাখার ক্ষমতা । তাই রাবীর ভিন্ন মাজহাবের অনুসারী হওয়ার বিষয়টি কোন হাদীস অগ্রহণযোগ্য হওয়ার মাপকাটি হতে পারে না । তেমনি সম মাজহাবের অনুসারী হওয়াও কোন হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত নয় । আর বিষয়টি হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতির মধ্যেও গ্রহণ করা হয়েছে এবং হাদীসশাস্ত্রবিদদের নিকট এটি একটি সর্বস্বীকৃত নীতি । তাই শায়খাইন (বুখারী ও মুসলিম) তাদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে অনেক শিয়া ও অন্য মাজহাবের অনুসারী রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন এবং এ ধরনের হাদীসের দ্বারা দলিল-প্রমাণও পেশ করেছেন ।

তবে সাইয়্যেদ রশীদ রিযা অন্য কোন কারণে এ সব হাদীসকে ক্রুটিমুক্ত বলে থাকতে পারেন । আর তা হলো তাআরুদ  ( تعارض ) বা পরস্পর বিরোধিতা অর্থাৎ হয়তো তার মতে মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ পরস্পর বিরোধী এবং সেগুলো পরস্পরকে বাতিল করে দেয় । কিন্তু এ কারণটি প্রত্যাখ্যাত । কেননা পরস্পর বিরোধী হওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে ,প্রামাণ্যের দৃষ্টিতে হাদীসসমূহের সমান হওয়া । তাই শক্তিশালী ও দুর্বল হাদীসদ্বয়ের মধ্যে তাআরুদ-এর নীতি কার্যকর হওয়াকে কোন সুবিবেচক ও জ্ঞানী ব্যক্তিব বৈধ বিবেচনা করেন না । সাইয়্যেদ রশীদ রিযা মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের ক্ষেত্রে  যে তাআরুদ-এর কথা উল্লেখ করেছেন তা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বিধায় বিবেকবান জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে তা স্বীকৃত ও বৈধ নয় ।

মোটকথা হলো মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত বিশ্বাস হচ্ছে এমন একটি বিশ্বাস যা মুতাওয়াতির সূত্রে বার্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং যেহেতু এ বিশ্বাস গায়েবী বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এ বিষয়ে বিশ্বাস পোষণ করা ওয়াজিব । এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখা খোদাভীরু (মুত্তাকী) বন্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । যেমনটি মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) الم ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ (

আলিফ লাম মীম । এটি ঐ গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই এবং পরহেজগারদের জন্য পথ প্রদর্শক যারা গায়েবে বিশ্বাস রাখে ।

এ সব বিষয় একমাত্র অজ্ঞ অথবা অহংকারী ব্যতীত আর কেউ অস্বীকার করে না । আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করছি ,তিনি যেন আমাদেরকে যে সব বিষয় পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয় প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয়েছে তাতে বিশ্বাস আনার তাওফীক দেন। 460

আল কিত্তানী আল মালিকী

তিনি তার নাজমুল মুনতাসির মিনাল হাদীস আল মুতাওয়াতির গ্রন্থে যে বিশ জন সাহাবী মাহদী সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের বিবরণ দানের পর বলেছেন : আল হাফিয আস সাখাভী থেকে একাধিক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে ,তিনি বলেছেন : মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির । আর সাখাভী এ কথা ফাতহুল মুগীস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং আবুল হাসান আল আবিরী থেকে তা উদ্ধৃত করেছেন ।

এ সন্দর্ভের শুরুতে এ কথার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে । মাহদী সংক্রান্ত আবুল আলা ইদ্রীস আল হুসাইনী আল ইরাকীর একটি লেখায় মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির অথবা প্রায় মুতাওয়াতির -এ কথা বিদ্যমান । তিনি বলেছেন : একাধিক সমালোচক হাফিয মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির হবার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন

শারহু রিসালাহ পুস্তিকায় শেখ জাওস হতে বর্ণিত হয়েছে : আস সাখাভী বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে মাহদী সংক্রান্ত হাদীস বিদ্যমান এবং বলা হয়েছে যে ,এ হাদীসগুলো মুতাওয়াতির হাদীসের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে । শারহুল মাওয়াহিবে শাফিঈর মানাকিব অধ্যায়ে আবুল হাসান আল আবিরীর উদ্ধিৃতি দিয়ে বলা হয়েছে : মাহদী যে এ উম্মতের মধ্য থেকে হবেন এবং তার পেছনে ঈসা (আ.) নামায পড়বেন- এতৎসংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির । আর ঈসাই মাহদী ( لا مهدی الا عیسی ) ইবনে মাজার এ হাদীস রদ্দ করার জন্য মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকেই হবেন এবং ঈসা মাসীহ তার পেছনে নামায পড়বেন- এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে

মাআনীল ওয়াফা ফি মাআনীল ইকতিফা গ্রন্থে শেখ আবুল হাসান আল আবিরী বলেছেন : মাহদীর আগমন ,তিনি যে সাত বছর রাজত্ব করবেন এবং পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে ভরে দেবেন এতৎসংক্রান্ত হাদীস মহানবী (সা.) থেকে অগণিত রাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । তাই এ হাদীসসমূহ বর্ণনাকারীর সংখ্যার দৃষ্টিতে মুস্তাফিয হাদীসের পর্য়ায় অতিক্রম করে মুতাওয়তিরের পর্যায়ে পৌছেছে । শেখ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আস সাফারাইনী আল হাম্মলী তার শারহুল আকীদাহ গ্রন্থে বলেছেন : মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অগণিত এবং তা অর্থগতভাবে মুতাওয়তিরের পর্যায়ে পৌছেছে এবং আহলে সুন্নাতের আলেমদের মাঝে এতটা প্রচলিত হয়েছে যে ,তারা মাহদীর আবির্ভাবকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন । এরপর তিনি কতিপয় সাহাবী থেকে মাহদী সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসসমূহ থেকে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন : সাহাবীদের থেকে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে ,তাদের মধ্য থেকে অনেকেরই নাম উল্লিখিত হয়েছে এবং অনেকের নাম উল্লিখিত হয় নি । যদি এ সকল হাদীসের সাথে তাবেয়ীদের হতে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে যোগ করা হয় তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জিত হয় । তাই মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত বিশ্বাস ওয়াজিব । আর এ বিষয়টি আলেম ও বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতদের কাছে প্রতিষ্ঠিত এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত 461

আল আদভী আল মিশরী

তিনি তার মাশারিকুল আনওয়ার গ্রন্থে বলেছেন : কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,মাহদী আবির্ভুত হবার সময় তার মাথার ওপর এক ফেরেশতা আহবান জানিয়ে বলতে থাকবে : এই মাহদী মহান আল্লাহর খলিফা ;অতএব ,তোমরা সবাই তার আনুগত্য কর । অতঃপর জনগণ তার দিকে ছুটে আসবে এবং তাদেরকে মাহদী-প্রেমের সুধা পান করানো হবে । তিনি সাত বছর পশ্চিম ও পূর্ব অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব শাসন করবেন ;প্রথমে যারা কাবা ঘরের রুকন ও মাকামের মাঝখানে তার বাইআত করাবে তাদের সংখ্যা হবে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলিম যোদ্ধাদের সমান অর্থাৎ তিনশ তের জন । এরপর শামের ঈমানদার ব্যক্তিরা ,মিশরের সম্ভান্ত বংশীয়রা ,প্রাচ্যের (ইরানের) বিভিন্ন গোত্র ও দল এবং অন্যান্য জাতি তার কাছে আসবে এবং তার হাতে বাইআত করবে । মহান আল্লাহ খোরাসান থেকে তার সাহায্যার্থে কালো পতাকাবাহী এক সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করবেন ;তারা এক বর্ণনামতে শামের দিকে এবং আরেক বর্ণনা অনুসারে কুফার দিকে অগ্রসর হবে । আর এতদুভয়ের মধ্য সমন্বয় সাধন করা সম্ভব । মহান আল্লাহ তাকে তিন হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবেন । পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আসহাব-ই কাহাফ (গুহাবাসী সাত যুবক) তার সাহায্যকারী হবেন । উস্তাদ সুয়ূতী বলেছেন : এ সময় পর্যন্ত তাদের জীবিত রাখার রহস্য হচ্ছে এ উম্মতের মধ্যে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সত্যাশ্রয়ী খলীফা ইমাম মাহদীকে সাহায্য করার মহান মর্যাদা দান করা । তার সেনাবাহীনি তার সামনে ও পেছনে যথাক্রমে হযরত জিবরাইল ও মীকাঈল থাকবেন । 462

সাদুদ্দীন তাফতাযানী

তিনি শারহু মাকাসিদ গ্রন্থে বলেছেন : আলোচনার পরিসমাপ্তি : মাহদীর আবির্ভাব এবং ঈসার অবতরণ ইমামতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত । তারা দু জন হচ্ছেন কিয়ামতের নিদর্শন । এতদপ্রসঙ্গে বেশ কিছু সহীহ হাদীস বিদ্যমান যদিও সেগুলো হচ্ছে খবরে ওয়াহিদ ( একক বা স্বল্প সূত্রে বর্ণিত হাদীস )

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন এক বিপদের কথা উল্লেখ করলেন যা এ উম্মতকে এমনভাবে স্পর্শ করবে যে ,এর ফলে কোন লোকই তখন অন্যায়-অত্যাচার থেকে বাচার জন্য কোন আশ্রয়স্থলই খুজে পাবে না । অতঃপর মহান আল্লাহ আমার বংশধারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যে পৃথিবীকে অন্যায়-অত্যাচার দিয়ে যেমনভাবে ভরে যাবে ঠিক তেমনি ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন । তাই আহলে সুন্নাতের আলেমদের অভিমত হচ্ছে ,তিনি হবেন একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম এবং হযরত ফাতিমার বংশধর । মহান আল্লাহ যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে সৃষ্টি করবেন এবং ঐশী ধর্ম ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তাকে প্রেরণ করবেন । আর ইমামীয় শিয়ারা ধারণা করেছে যে ,তিনি মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আল আসকারী যিনি শত্রুর আশংকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন অর্থাৎ আত্মগোপন করেছেন এবং নূহ (আ.) লোকমান খিযির (আ.)- এর মত তার জীবন দীর্ঘায়িত হওয়া অসম্ভব ব্যাপার নয় । তবে অন্য সকল মাজহাব ও ফিরকা তাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে । কারণ ,তা অত্যন্ত দূরবর্তী সম্ভাবনার একটি বিষয় । এ উম্মতের ক্ষেত্রে এ ধরণের দীর্ঘ জীবনের ঘটনা বিরল বলে গণ্য এবং অনুরূপ নজীরের কথা কোন দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায় নি । 463

আল কিরমানী আদ দামেশকী

তিনি আখবারুদ দুওয়াল ওয়া আসরারুল আউয়াল গ্রন্থে বলেছেন : আলেমদের মধ্যে ঐক্যমত্য আছে যে ,মাহদী হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন এবং বিপ্লব করেবেন । এমন ব্যক্তির আবির্ভাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহ ইমাম মাহদীর অস্তিত্ব সমর্থন করে এবং তার মতো ব্যক্তিত্বের দ্যূতি ও আলোর বিচ্ছুরণের সাথেই তা সামাঞ্জস্যশীল । তার আবির্ভাব ও আত্মপ্রকাশে শতাব্দীর অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোকোদ্ভাসিত হবে । তার দর্শনে রাতের কালো আধার আলোকোজ্জ্বল প্রভাতে পরিণত হবে । তার ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের দিগন্তপ্রসারী আলোকচ্ছটা সমগ্র বিশ্বকে আলোদানকারী চাঁদ অপেক্ষাও উজ্জ্বল করবে । 464

মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী

তিনি তার আল ফুতুহাত আল মাক্কীয়া গ্রন্থে বলেছেন : জেনে রাখ (মহান আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন) ,মহান আল্লাহর একজন খলীফা আছেন যিনি এমন অবস্থায় আবির্ভূত হবেন যখন পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচার দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে । আর যদি পৃথিবীর আয়ু শেষ হতে একদিনও অবশিষ্ট থাকে তাহলে মহান আল্লাহ ঐ দিনটাকে এতটা দীর্ঘায়িত করবেন যে ,রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বংশধারায় হযরত ফাতিমার সন্তানদের মধ্য থেকে আল্লাহর খলীফা এক ব্যক্তি শাসনভার গ্রহণ করবেন ;মহনবী (সা.)- এর নামের সাথে তার নাম মিলে যাবে ।

মারজ আক্কায় মহান আল্লাহর সর্ববৃহৎ দস্তরখান প্রত্যক্ষ করবে ;তিনি অন্যায়-অনাচার ও অত্যাচারীদের নিশ্চিহ্ন করবেন ,দীন প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ইসলামে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবেন । হীন অবস্থায় থাকার পর তার মাধ্যমে ইসলাম সম্মানিত হবে এবং মৃত্যুর পর তা পুনরুজ্জীবন লাভ করবে । তিনি জিযিয়া কর চালু করবেন এবং মহান আল্লাহর দিকে তরবারির সাহায্যে আহবান জানাবেন । তাই যে তার আহবান প্রত্যাখ্যান করবে তাকে তিনি হত্যা করবেন এবং যে তার সাথে সংঘর্ষ ও দ্বন্দে লিপ্ত হবে সে অপদস্ত ও লাঞ্চিত হবে । তিনি যে প্রকৃত দীনের ওপর আছেন সেই দীনকেই প্রকাশ করবেন ;রাসূলুল্লাহ (সা.) যদি থাকতেন তবে যেভাবে ধর্ম পালন করতে বলতেন সেভাবে তা পালন করার আদেশ দেবেন । তিনি পৃথিবীর বুক থেকে সকল ধর্ম ও মাজহাব বিলুপ্ত করবেন । যার ফলে পৃথিবীতে একমাত্র বিশুদ্ধ ধর্ম (ইসলাম) ব্যতীত আর কোন ধর্ম থাকবে না ।

তার শত্রুরা হবে ফকীহ-মুজতাহিদদের অনুসারী । কারণ তারা দেখবে তাদের ইমামরা যে ফতোয়া প্রদান করেছে সেগুলোর পরিপন্থি নির্দেশ ও হুকুম ইমাম মাহদী প্রদান করেছেন । কিন্তু তারা তার তরবারি ও কর্তৃত্বের ভয়ে বাধ্য হয়ে এবং তার কাছ থেকে সুবিধা লাভের আশায় তার নির্দেশ মেনে নেবে ।

সাধারণ মুসলিম জনতা ,অভিজাত মুসলমানদের চেয়ে মাহদীকে পেয়ে বেশী আনন্দিত হবে । হাকীকতপন্থী আরেফগণ যাদের কাশফ ও শুহুদ (আধ্যাত্মিক জগতের বিষয় ও রহস্যাবলী উন্মোচন ও প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতা) আছে তারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার পরিচিতি লাভ করার কারণে স্বভাবিকভাবেই তার হাতে বাইআত করবেন ।

তার আল্লাহওয়ালা সঙ্গী-সাথী থাকবেন যারা তার রাষ্ট্র কায়েম করবেন এবং তাকে সাহায্য করবেন । তারা হবেন তার মন্ত্রী । তার রাষ্ট্র ও প্রশাসনে গুরুদায়িত্ব পালন করবেন এবং মহান আল্লাহর বিধি-বিধান প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও তাকে সাহায্য করবেন ।

তার নেতৃত্বে যুদ্ধকারী শহীদরা হবেন শ্রেষ্ঠ শহীদ ;তার বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বস্ত ;মহান আল্লাহ তার জন্য একটি দলকে সাহায্যকারী নিযুক্ত করবেন যাদেরকে তিনি তার গায়েবী জগতে তার জন্য লুক্কায়িত রেখেছেন তিনি কাশফ ও শুহুদের মাধ্যমে তাদেরকে হাকীকতসমূহ (সত্যের প্রকৃত রূপ)দেন এবং স্বীয় বান্দাদের প্রতি করণীয় দায়িত্ব তাদের মাধ্যমেই সম্পাদন করেন ,তাদের সাথে পরামর্শ করে ইমাম বিভিন্ন বিষয়ে ফয়সালা করবেন । কারণ ,তারা গায়েবী জগতে যা আছে তা জানেন ।

তবে তিনি নিজেই সত্যের তরবারি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সবচেয়ে যোগ্য রাজনীতিক তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু অবহিত অর্থাৎ তিনি তার অবস্থান ও মর্যাদা অনুসারে তার নিকট হতে জ্ঞাত । কারণ ,তিনি নিষ্পাপ খলীফা যাকে মহান আল্লাহ ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখেছেন ;তিনি পশুর ভাষাও বুঝবেন ;মহান আল্লাহ তার জন্য যে সব সহযোগী নিযুক্ত করেছেন তাদের জ্ঞানের রহস্যাবলী দ্বারা তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতির মাঝে ন্যায় ও সুবিচার কায়েম করবেন । কারণ ,মহান আল্লাহ বলেছেন : মুমিনদেরকে সাহায্য করাই হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব ( و کان حقا علینا نصر المؤمنین ) । এসব সহযোগী হবেন তার সঙ্গীদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী ও শ্রেষ্ঠ ;তারা হবেন অনারব-তাদের মধ্যে একজনও আরব থাকবেন না । তবে তারা আরবী ভাষায় কথা বললেন ;তাদের একজন রক্ষক আছেন যিনি তাদের (মানব) জাতিভুক্ত নন । তারা কখনো মহান আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেন নি এবং তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসভাজনদের অন্তর্ভুক্ত । 465