ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81146
ডাউনলোড: 9314

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81146 / ডাউনলোড: 9314
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

আহলে সুন্নাতের হাদীস ও মনীষীদের দৃষ্টিতে ইমাম মাহদী (আ.)

আর সে হচ্ছে কিয়ামতের একটি নিদর্শন। (সূরা যুখরূফ :61)

আহলে সুন্নাতের নিকট সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীস সংকলন ছয়টি যা সিহাহ সিত্তাহ নামে পরিচিত । হাদীসের প্রামাণ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করার জন্য আহলে সুন্নাতের হাদীস সংকলকগণ যে সব মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন এ ছ টি সংকলন সে সব মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত । এ ছ টি গ্রন্থ হচ্ছে : সহীহ আল বুখারী ,সহীহ আল মুসলিম ,সহীহ আত তিরমিযী ,সুনানে ইবনে মাজাহ ,সুনানে আবু দাউদ ও সহীহ আন নাসাঈ । ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে সিহাহ সিত্তাহ ও আহলে সুন্নাতের অন্যান্য সূত্রে অসংখ্য হাদীস রয়েছে । এখানে উদ্ধৃত নিম্নোক্ত হাদীস ও বর্ণনাগুলো এমন যেগুলোর সত্যতা ও প্রামাণ্যতার ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের হাদীস বিশারদগণ একমত ।

1. মহানবী (সা.) বলেছেন : এমনকি সমগ্র বিশ্বের আয়ু যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে এবং কিয়ামত হতে একদিনও অবশিষ্ট থাকে তাহলেও মহান আল্লাহ ঐ দিবসকে এতটা দীর্ঘায়িত করবেন যাতে তিনি ঐ দিবসেই আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারেন যাকে আমর নামেই ডাকা হবে । পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচারে ভরে যাওয়ার পর সে তা শান্তি ও ন্যায়ে পূর্ণ করে দেবে । (তিরমিযী ,2য় খণ্ড ,পৃ. 86 9ম খণ্ড ,পৃ. 74-75 ;আবু দাউদ ,2য় খণ্ড ,পৃ. 7 ;মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ,1ম খণ্ড পৃ. 376 3য় খণ্ড ,পৃ.63 ;মুস্তাদরাকুস সাহীহাইন (হাকেম) ,4র্থ খণ্ড ,পৃ. 557 ;আল মাজমা (তাবারানী) ,পৃ. 217 ;তাহযীবুস সাবিত (ইবনে হাজার আসকালানী) ,9ম খণ্ড ,পৃ. 144 ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ (ইবনে হাজার হাইসামী) ,11শ অধ্যায় ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 249 ;কানযুল উম্মাল ,7ম খণ্ড পৃ. 186 ;ইকদুদ দুরার ফী আখবারিল মাহদী আল মুনতাযার ,12শ খণ্ড ,1ম অধ্যায় ;আল বায়ান ফী আখবারি সাহিবিয যামান (গাঞ্জী শাফিয়ী) ,12শ অধ্যায় ;ফাতহুল বারী (ইবনে হাজার আসকালানী) ,7ম খণ্ড ,পৃ. 305 ;আল তাযকিরাহ (কুরতুবী) ,পৃ. 617 ;আল হাভী (সুয়ূতী) পৃ. 160 ;আল উরফুল ওয়ারদী (সুয়ূতী) পৃ. 2 ।

আশ শাফিয়ী (ওফাত 363/974) বলেছেন যে ,এ হাদীস বিপুলসংখ্যক সূত্রে বর্ণিত এবং বহু বর্ণনাকারী কর্তৃক তা মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র বর্ণিত ও প্রচারিত হয়েছে । এছাড়া হাদীসটি ইবনে হিব্বান ,আবু নাঈম ,ইবনে আসাকির প্রমুখ কর্তৃক লিখিত গ্রন্থাদিতেও উদ্ধৃত হয়েছে ।

2. মহানবী (সা.) বলেছেন : মাহদী আমাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের সদস্যদের একজন । (ইবনে মাজাহ ,2য় খণ্ড ,হাদীস নং-4085)

হাদীসে যেমন আমরা দেখতে পাই ,ইমাম মাহদী (আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত । তাই তিনি হযরত ঈসা (আ.) হতে পারেন না । ইমাম মাহদী (আ.) এবং ঈসা (আ.) ভিন্ন দুই ব্যক্তি ,তবে তারা দু জন একই সময় আগমন করবেন । নিম্নোক্ত হাদীসে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহদী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধর হবেন ।

3. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মাহদী ফতিমার বংশধর। (ইবনে মাজাহ ,2য় খণ্ড ,হাদীস নং 4086 ;নাসাঈ ;বাইহাকী ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 249- এর বর্ণনানুসারে অন্যান্য হাদীস-সংকলকগণ) ।

4. মহানবী (সা.) বলেছেন : আমরা আবদুল মুত্তালিবের বংমধরগণ বেহেশতবাসীদের নেতা : স্বয়ং আমি ,হামযাহ ,আলী ,জাফর ,হাসান ,হুসাইন ,ও মাহদী। (ইবনে মাজাহ ,2য় খণ্ড ,হাদীস নং 4087 ;মুস্তাদরাকে হাকেম (আনাস ইবনে মালিক-এর সূত্রে বর্ণিত) ;দাইলামী ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 245)

5. মহানবী (সা.) বলেছেন : মাহদী আমার উম্মাহর মাঝে আবির্ভূত হবে। সর্বনিম্ন 7 বছর এবং সর্বোচ্চ 9 বছরের জন্য আবির্ভূত হবে । 1 এ সময় আমার উম্মাহ অফুরন্ত আশীর্বাদ ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে যা তারা আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি । উম্মাহ তখন বিপুল পরিমাণ খাদ্যের অধিকারী হবে যার ফলে তাদের (খাদ্য) সঞ্চয় করে রাখার প্রয়োজন হবে না । সে সময় ধন-সম্পদের প্রাচুর্য এত বেশী হবে যে ,তখন কোন ব্যক্তি মাহদীর কাছে কোন কিছু প্রর্থনা করলে সে বলবে : ওখানে আছে নিয়ে যাও । (ইবনে মজাহ ,2য় খণ্ড ,হাদীস নয় 5083)

6. মহানবী (সা.) বলেছেন : আমার ও আমার আহলে বাইতের সদস্যদের জন্য আল্লাহ পারলৌকিক জীবনকে ইহলৌকিক জীবনের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন ও মনোনীত করেছেন । আমার (ওফাতের) পরে আমার আহলে বাইতের সদস্যরা অনেক কষ্ট ভোগ করবে এবং তাদেরকে ঘর-বাড়ি থেকে বলপূর্বক উচ্ছেদ করা হবে । তখন প্রাচ্য থেকে একদল লোক কালো পতাকাসহ আগসন করবে এবং তাদেরকে কিছু ভাল জিনিষ (অধিকার) প্রদান করার জন্য তারা আবেদন করবে । কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যাত হবে অর্থাৎ তাদেরকে সেই অধিকার দেয়া হবে না । এ কারণে তারা যুদ্ধ করবে । সে যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে এবং তারা যা প্রথমে চেয়েছিল তা-ই তাদেরকে দেয়া হবে । কিন্তু তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে যতক্ষণ না আমার আহলে বাইত থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে এবং যেভাবে পৃথিবী অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক সেভাবে তা ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবে । তাই যে ব্যক্তি ঐ যুগ প্রত্যক্ষ করবে তার উচিৎ হবে বরফের ওপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের সাথে মিলিত হওয়া । (ইবনে মাজাহ ,2য় খণ্ড ,হাদীস নং-4082 ;তারিখে তাবারী ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 250-251)

7. আবু নাদরা বর্ণনা করেছেন : আমরা জাবির ইবনে আবদুল্লাহর সাথে ছিলাম । জাবির ইবনে আবদুল্লাহ দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকার পর বললেন ,রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের সর্বশেষ যুগে একজন খলীফা হবে যে গণনা না করেই জনগণকে হাত ভরে ধন-সম্পদ দান করবে । (বর্ণনাকারী বলেন :) আমি আবু নাদরা ও আবুল আ লাকে জিজ্ঞাসা করলাম : আপনারা কি উমর ইবনে আবদুল আযীযকে বুঝাতে চাচ্ছেন  তারা বললেন : না । (অর্থাৎ তিনি হবেন ইমাম মাহদী ।) 2 (মুসলিম ,কিতাবুল ফিতান ,4র্থ খণ্ড ,পৃ. 2234 ,হাদীস নং 67)

8. মহানবী (সা.) বলেছেন : সর্বশেষ যুগে আমার উম্মত অত্যন্ত কঠিন দুঃখ যাতনা ভোগ করবে যেরূপ তারা আগে কখনো ভোগ করে নি ;তখন মানুষ মুক্তির পথ খুজে পাবে না । তখন আল্লাহ আমার বংশধারা থেকে এক ব্যক্তিকে আবির্ভূত করবেন যে অন্যায়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া পৃথিবীকে ন্যায় দ্বারা পূর্ণ করে দেবে । পৃথিবীবাসী ও আসমানবাসী তাকে ভালবাসবে । আকাশ থেকে পৃথিবীর সকল স্থানের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং পৃথিবীও যা কিছু দিতে পার তার সব কিছু উজাড় করে দেবে । আর সমগ্র পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে যাবে । (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 250 ,হাকেম প্রণীত সাহীহ ফিল হাদীস)

9. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আরবদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবী ধ্বংস হবে না যার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ । (তিরমিযী ,9ম খণ্ড ,পৃ. 74)

10. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মাহদী আমার আহলে বাইত থেকে আবির্ভূত হয়ে একটি বিপ্লব ঘটাবে এবং পৃথিবী অন্যায়-অবিচার ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ন্যায় ও সাম্য দ্বারা পূর্ণ করে দেবে । (মুসনাদে আহমাদ ,1ম খণ্ড ,পৃ. 84 ;জামিউস সাগীর ,পৃ 2 ও 160 ;আল উরফুল ওয়ার্দী ,পৃ. 2 ;কানযুর উম্মাল ,7ম খণ্ড ,পৃ 186 ;ইকদুদ দুরার ,12শ খণ্ড ,অধ্যায় 1 ;আল বায়ান ফী আখবারি সাহিবিয যামান ,12শ অধ্যায় ;আল ফুসুসুল মুহিম্মাহ ,12শ অধ্যায় ;আরজাহুল মাতালিব ,পৃ. 380 ;আল মুকাদ্দিমাহ ,পৃ. 266)

11. মহানবী (সা.) বলেছেন : আল্লাহ শেষ বিচার দিবসের আগে ,এমনকি এ পৃথিবীর আয়ুস্কাল যদি একদিনও অবশিষ্ট থাকে ,আমার আহলে বা্ইতের মধ্য থেকে মাহদীকে অন্তর্ধান থেকে আবির্ভূত করবেন । সে এ পৃথিবীতে ন্যায় ও সুবিচারের প্রসার ঘটাবে এবং সব ধরণের অন্যায় অত্যাচার ও অবিচারের মূলোৎপাটন করবে । (মুসনাদে আহমাদ ,1ম খণ্ড ,পৃ. 99)

সুনানে আবু দাউদেও উপরিউক্ত হাদীসের অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে । (ইংরেজি অনুবাদ ,অধ্যায় 36 ,হাদীস নং 4270)

12. মহানবী (সা.) বলেছেন : মাহদী আমার আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ;নিঃসন্দেহে আল্লাহ এক রাতের মধ্যেই তাকে আবির্ভূত করবেন (অর্থাৎ তিনি কখন আবির্ভূত হবেন সে ব্যাপারে পূর্ব হতে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয় । এবং তার আবির্ভাব হবে আকস্মিক)। (ইবনে মাজাহ ,2য় খণ্ড ,পৃ. 269 ;মুসনাদে আহমাদ ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 252)

14. হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রা.) বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি :আমার উম্মাহর একদল ব্যক্তি শেষ বিচার দিবসের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত সত্যের জন্য যুদ্ধ করতে থাকবে । তখন ঈসা ইবনে মারিয়াম অবতরণ করবেন এবং তাদের নেতা (মাহদী) তাকে নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করবে ;কিন্তু ঈসা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বলবেন : না ,আপনাদেরকে মহান আল্লাহ অণ্যদের  (মানব জাতির) জন্য মনোনীত করেছেন । (মুসলিম ,2য় খণ্ড ,পৃ. 193 ;মুসনাদে আহমাদ ,3য় খণ্ড ,পৃ. 45 ও 384 ;আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 251 ;সুয়ূতী প্রণীত নুযূল ইসা ইবনে মারিয়াম আখিরি যামান)

15. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বলেছেন ; রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মধ্য থেকে একদল লোক ঈসা ইবনে মারিয়ামের অবতরণ পর্যন্ত সত্যের জন্য যুদ্ধ করতে থাকবে । ঈসা ইবনে মারিয়াম অবতরণ করলে তাদের ইমাম (মাহদী) তাকে নামায পড়ানোর জন্য অনুরোধ করবে । কিন্তু ঈসা বলবেন : এ কাজ করার জন্য আপনি অধিক হকদার । আর মহান আল্লাহ এ উম্মতে আপনাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে অন্যদের ওপর মর্যাদা দিয়েছেন । (মুসনাদে আবু ইয়ালা ;সহীহ ইবনে হিব্বান)

ইবনে আবী শাইবাহ (আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ হাদীসশাস্ত্রবিদ এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার) ইমাম মাহদী সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে বলা হয়েছে যে ,ইমাম যিনি নামাযে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ামেরও ইমাম হবেন তিনি মাহদী (আ.) ।

সুয়ূতী উল্লেখ করেছেন : হযরত ঈসা যখন অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদীর পিছনে নামায পড়বেন-এ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ যে সব ব্যক্তি অস্বীকার করেছে তাদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তিকে আমি সত্য অস্বীকার করে বলতে শুনেছি : এমন ব্যক্তি যিনি নবী নন ,তার পিছনে নামায পড়া অপেক্ষা ঈসা (আ.) এর মর্যাদা উচ্চতর । কিন্তু পরম সত্যবাদী মহানবী (সা.) থেকে বহু সংখ্যক সহীহ হাদীসের মাধ্যমে ইমাম মাহদী (আ.) এর পিছনে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ামের নামায পড়ার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি একটি অদ্ভুত অভিমত ।

আল্লামা সুয়ূতী এ ব্যাপারে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন । (নুযূলু ঈসা ইবনে মারিয়াম আখিরি যামান)

ইবনে হাজার আসকালানী বলেছেন : মাহদী এ উম্মতেরই একজন । হযরত ঈসা অবতরণ করে তার পিছনে নামায পড়বেন । (ফতহুল বারী ,5ম খণ্ড ,পৃ. 362)

আহলে সুন্নাতের আরেক বিখ্যাত আলেম ইবনে হাজার হাইসামীও একই কথা উল্লেখ করে বলেছেন : আহলে বাইত আকাশের তারকারাজির ন্যায় যাদের মাধ্যমে আমরা সঠিক দিকে পরিচালিত হই এবং তারকারাজি যদি অস্ত যায় (ঢাকা পড়ে যায়) তাহলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমার কিয়ামত দিবসের নিদর্শনাদির মুখোমূখি হবো । আর হাদীস অনুযায়ী এটি তখনই ঘটবে যখন ইমাম মাহদীর আগমন হবে ,নবী হযরত ঈসা (আ.) তার পিছনে নামায পড়বেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করা হবে । আর তখনই সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশসমূহ একের পর এক প্রকাশ পেতে থাকবে । (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 234)

আবুল হুসাইন আল আজীরীর উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে হাজার বলেছেন : ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব ও উত্থান সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীসসমূহ বিপুল সংখ্যক সনদসহ বর্ণিত হয়েছে এবং তা মুতাওয়াতির হওয়ার পর্যায়কেও ছাড়িয়ে গেছে । এসব হাদীসে মহানবী (সা.) এর নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,মাহদী তার (রাসূলুল্লাহর) আহলে বাইতভুক্ত হবেন ,তিনি পৃথিবীকে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন এবং হযরত ঈসা মাসীহ (আ.) ও ঐ একই সময় আগমন করবেন । মাহদী ফিলিস্তিনে দাজ্জালকে বধ করার ব্যাপারে ঈসা (আ.) কে সাহায্য করবেন । তিনি এ উম্মতের নেতৃত্ব দবেন এবং হযরত ঈসা (আ.) তার পিছনে নামায পড়বেন । (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 254)

ইবনে আলী আশ শাওকানী (ওফাত 1250/1834) আত তাওহীদ ফী তাওয়াতুরি মা জাআ ফীল মুনতাযার ওয়াদ দাজ্জাল ওয়াল মাসীহ (প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী ,দাজ্জাল ও মাসীহ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির হওয়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা) নামক গ্রন্থে ইমাম সম্পর্কে লিখেছেন : মাহদী সংক্রান্ত হদীসসমূহ বহু নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং এ করাণেই এসব হাদীস নিঃসন্দেহে নির্ভরযোগ্য ;কারণ ,ফিকহশাস্ত্রে ঐ সব হাদীসের ক্ষেত্রেও মুতাওয়াতির হওয়ার বৈশিষ্ট্য প্রযোজ্য যেগুলো ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের সংখ্যার চেয়েও অল্প সংখ্যায় বর্ণিত হয়েছে । মহানবীর সাহাবীদের প্রচুর বাণী আছে যেগুলোতে স্পষ্ট ও বিশদভাবে মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আলোচনা বিদ্যমান । এসব বাণী মহানবী (সা.) এর নিকট থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের সমপর্যায়ভুক্ত । কারণ ,ইজতিহাদের মাধ্যমে এসব বাণী প্রতিষ্ঠিত করায় কোন সমস্যা নেই। লেখক আল ফাতহুর রাব্বানী নামক তার অপর এক গ্রন্থেও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন । (এতৎসংক্রান্ত বিষয়ে দেখুন মাওযূআতুল ইমাম আল মাহদী ,1ম খণ্ড ,পৃ. 391-392 ,413-414 ও 434 এবং তুহাফুল আহওয়াযী ,6ষ্ঠ খণ্ড ,পৃ. 485)

আস সাবান তার ইসআফুর রাগিবীন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সংক্রান্ত হাদীসসমূহ যে মহানবঅ (সা.) কর্তৃক বর্নিত তা বোঝা যায় । তিনি (মাহদী) মহানবীর আহলে বাইতের সদস্য এবং তিনি পৃথিবীকে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন ।

সুয়ূতী তার সাবাইকুয যাহাব গ্রন্থে লিখেছেন : আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে ,মাহদী শেষ যুগে আবির্ভূত হয়ে সমগ্র বিশ্বকে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন । তার আবির্ভাব সংক্রান্ত হাদীস বিপুল সংখ্যক ।

হাফেজ আবুল হাসান সিজিস্তানী (ওফাত 363হি/974হিখ্রি.) বলেছেন : মহানবীর নিকট থেকে ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ বিপুল সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে । মাহদী (আ.) মহানবীর আহলে বাইতভুক্ত হবেন এবং সমগ্র বিশ্বকে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন।

পরবর্তী যেসব খ্যাতনামা আলেম এ বক্তব্য মেনে নিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন ইবনে হাজার আসকালানী (তাহযীবুত তাহযীব ,9ম খণ্ড ,পৃ. 144 ফাতহুল বারী ,7ম খণ্ড ,পৃ 305 ,কুরতুবী (আত তাযকিরাহ ,পৃ. 617) ,সুয়ূতী (আল হাভী ,2য় খণ্ড পৃ. 165-166) ,মুত্তাকী হিন্দি (আল বুরহান ফী আলামাতি মাহদীয়ে আখিরিয যামান ,পৃ. 175-176) ,ইবনে হাজার হাইসামী (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,অধ্যায় 11 ,উপাধ্যায় 1 ,পৃ. 249) যুরকানী (শারহুল মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়াহ ,5ম খণ্ড ,পৃ. 348) ,সাখাভী (ফাতহুল মুগীস ,3য় খণ্ড ,পৃ. 41)

ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর আকীদার সর্বোৎকৃষ্ট চিত্র এমন এক ব্যক্তি কর্তৃক চিত্রিত হয়েছে যিনি নিজে ইমাম মাহদীর আগমনে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং এতৎসংক্রান্ত হাদীসসমূহের সত্যতা অস্বীকার করেছিলেন । তিনি হলেন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন (ওফাত 808 হি./ 1406খ্রি.) । তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল মুকাদ্দিমায় লিখেছেন : এটি একটি প্রসিদ্ধ ও জ্ঞাত বিষয় যে ,সকল মুসলিম কর্তৃক সকল যুগে বর্ণিত হয়েছে সর্বশেষ যুগে মহানবী (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি নিশ্চতভাবে আবির্ভূত হবেন । তিনি ইসলাম ও ন্যায়বিচারকে শক্তিশালী করবেন । আর মুসলমানগণ তার অনুসরণ করবে এবং তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন । তাকে আল মাহদী বলা হবে । (আল মুকাদ্দিমা ,ইতিহাস সংক্রান্ত ভূমিকা ,ইংরেজি অনুবাদ ,লন্ডন ,1967 ,পৃ. 257-258)

উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে ,ইমাম মাহদী সংক্রান্ত আকীদা ইসলামের বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের নয় ;বরং এ হচ্ছে সকল মুসলমানের মধ্যে প্রচলিত একটি সর্বজনীন আকীদা ।

সমকালীন যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস ও তাফসীরশাস্ত্র বিশারদ শেখ আহমদ মুহাম্মদ শাকের (ওফাত 1377হি/1958 খ্রি.) লিখেছেন : মাহদীর আগমনে বিশ্বাস কেবর শিয়াদের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয় । কারণ ,এ আকীদা মহানবী (সা.) এর অনেক সাহাবীর বর্ণনা থেকে এমনভাবে এসেছে যে ,কেউই এর সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান হতে পারে না । এরপর তিনি ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ ইবনে খালদুন কর্তৃক দুর্বল বলে আখ্যায়িত করার কঠোর সমালোচনা করেন । [আহমদ মুহাম্মদ শাকের প্রণীত (ব্যাখ্যাসহ) মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল ,দারুল মাআরেফ ,মিশর থেকে প্রকাশিত ,5ম খণ্ড ,পৃ. 196-198 ,14শ খণ্ড ,পৃ. 288]

ইখওয়ানুল মুসলিমীন সংগঠনের মুফতী সাইয়্যেদ সাবেক তার গ্রন্থ আল আকাইদুল ইসলামিয়াহ গ্রন্থে লিখেছেন : মাহদী সংক্রান্ত আকীদা আসলেই সত্য যা ঐস সব ইসলামী আকীদা ও মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে ।

দু জন বিখ্যাত শাফেয়ী আলেম আল্লামা গাঞ্জী তার গ্রন্থ আল বায়ান -এ এবং সাবলানজী তার গ্রন্থ নুরুল আবসার -এ তিনিই সেই সত্তা ,যিনি তার রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি তা সকল ধর্মের ওপর বিজয়ী করে দেন -কোরআন মজীদের এ আয়াতের ব্যাপারে সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,মহানবীর প্রতি মহান আল্লাহর এ প্রতিশ্রুতি আল মাহদীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে যিনি হযরত ফাতিমার বংশধর ।

ইবনে তাইমিয়াহ (মৃ. 728হি./1328 খ্রি.) মিনহাজুস সুন্নাহয় (4র্থ খণ্ড ,পৃ. 211-212) লিখেছেন যে ,ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এবং তার শিষ্য যাহাবী এ গ্রন্থের সার সংক্ষেপে  এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন । (মুখতাসার মিনহাজুস সুন্নাহ ,পৃ. 533-534)

রা্বেতায়ে আলমে ইসলামী কর্তৃক 11 অক্টোবর 1976 তারিখে প্রদত্ত এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে ,20 জনেরও অধিক সাহাবী ইমাম (আ) সংক্রান্ত এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন । এছাড়া যে হাদীসশাস্ত্রবিদগণ এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মাহদীর ওপর বই-পুস্তক লিখেছেন তাদের একটি তালিকাও ফতোয়ার সাথে প্রদান করা হয়েছে । এ ফতোয়ায় বলা হয়েছে : হাদীসের হাফেজ এবং হাদীসশাস্ত্র বিশারদগণ প্রত্যয়ন করেছেন যে ,ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের মধ্যে অনেক সহীহ এবং হাসান হাদীস বিদ্যমান । এর অধিকাংশ হাদীসই বিপুল সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত (অর্থাৎ মুতাওয়াতির বা অকাট্য) । তারা আরো প্রত্যয়ন করেছেন যে ,মাহদীর আগনে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয এবং এটি হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদার অন্যতম । সুন্নী মাজহাবের কেবল অজ্ঞ ব্যক্তিরা ও বিদআতপন্থীরা মাহদী সংক্রান্ত আকীদা অস্বীকার করেছেন । (এ ফতোয়ার পূর্ণ পাঠের জন্য আল বায়ান গ্রন্থে লেখক আল গাঞ্জী আশ শাফেয়ীর ভূমিকা দেখুন ,বৈরুত 1379হি./1979 খ্রি. ,পৃ. 76-79)

আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেম শেখ খাজা মুহাম্মদ পার্সা নাকশাবন্দীর বক্তব্য : আবু মুহাম্মদ আসকারী (আ.) আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত । তিনি 6 রবিউল আওয়াল 260 হি. শুক্রবার ইন্তেকাল করেন এবং তাকে তার পিতার সমাধির কাছে সমাহিত করা হয় ।তিনি তার পিতার ইন্তেকালের পর 6 বছর জীবতি ছিলেন এবং (মৃত্যুকালে) কেবল এক পুত্র সন্তান রেখে যান যিনি হচ্ছেন আবুল কাশেম মুহাম্মদ । তিনিই প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা । প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা 255 হিজরীর 15 শাবান জন্মগ্রহণ করেন ;তার মায়ের নাম ছির নারজিস (রা.) । যখন তার বয়স 5 বছর তখন তার পিতা ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ইন্তেকাল করেন ।

সাইয়্যেদ হাকীমাহ বিনতে আবি জাফর মুহাম্মদ আল জাওয়াদ (আ.) ছিলেন ইমাম হাসান আল আসকারীর ফুপু ,তিনি বলেছেন : 255 হিজরীর 15 শাবান আমি ইমাম হাসান আসকারীর বাড়িতে ছিলাম । তিনি আমাকে তার বাড়তে থাকতে অনুরোধ করেন । ফজরের ওয়াক্ত হলে আমি দেখতে পেলাম । ইমাম হাসান আসকারী তাকে দু হাতে তুলে নিয়ে তার ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিলেন । এরপর তিনি আমাকে বললেন : ফুপু! এ সদ্যপ্রসূত শিশুই হচ্ছে প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা । (ফাসলুল খেতাব ,পৃ. 443 ও 447 ,তাশখন্দ থেকে মুদ্রিত গ্রন্থটির মূল নাম হচ্ছে লামাহ আলামাতুল আউলিয়া ;আহলে সুন্নাতের অন্যতম মনীষী ভারতের মাদ্রাসায়ে দেওবন্দের বিখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী এ গ্রন্থের উর্দু অনুবাদ করেছেন ।

শেখ ওয়াহাব ইবনে আহমাদ আবনে আলীর বক্তব্য : কিয়ামতের শর্তাবলী অন্যতম ইমাম মাহদী (আ.) এর পুনরাবির্ভাব ,দাজ্জালের আবির্ভাব ,আকস্মিক নতুন নতুন রোগের প্রদুর্ভাব ,পশ্চিম দিক হতে সূর্যোদয় ,কোরআন উধাও হয়ে যাওয়া ,ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব ও বিজয় । এরপর তিনি বলেন : এসব ঘটনা ঘটবে এবং ঐ সময় ঘটবে যখন ইমাম মাহদী (আ.) এর পুনরাবির্ভাবের প্রত্যাশা করা হবে যিনি হবেন ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর পুত্র এবং 255 হিজরীর 15 শাবান জন্মগ্রহণ করেছেন । তিনি এখনো  জীবিত আছেন এবং ঈসা ইবনে মারিয়ামের সাথে তার সাক্ষাত হবে । (আল ইয়াওয়াকীত ওয়াল জাওয়াহির ফী আকাইদুল আকবার ,দ্বিতীয় সংস্করণ ,পৃ. 127)

আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট মনীষী ইমাম হুসাইন দিয়ার বাকরীর বক্তব্য : ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (আ.) হচ্ছেন দ্বাদশ ইমাম । আবুল কাসেম তার উপাধি এবং বারো ইমামী শিয়াদের আকীদা অনুসারে তার উপাধিসমূহের অন্যতম হচ্ছে আল কায়েম (বিপ্লবকারী) ,আল মাহদী , (সুপথপ্রাপ্ত) ,আল মুনতাযার (প্রতীক্ষিত) সাহেবুল আসর ওয়ায যামান (যুগের অধিপতি) । তাদের মতানুযায়ী তিনি দ্বাদশ ও সর্বশেষ ইমাম । তারা আরো বিশ্বাস করে যে ,তিনি সামাররায় তার মায়ের সামনে একটি কুয়ার ভেতরে প্রবেশ করেন এবং থেকে তিনি আর বের হননি । এ ঘটনা 265 বা 266 হিজরীতে ঘটেছিল । আর এ ঘটনা সত্য । তার মা ছিলেন উম্মে ওয়ালাদ ( ঐ দাসীকে উম্মে ওয়ালাদ বলা হয় যে তার নিজ মালিকের সন্তান গর্ভে ধারণ করে জন্ম দেয় )। তার বেশ কিছু নাম ,যেমন সাকীল ,সুসান ও নারজিস উল্লেখ করা হয়েছে । (তারিখুল খামিস ,2য় সংস্করণ ,পৃ. 288 ,বৈরুত থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত)

আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট মনীষী ইমাম ইবনে জওযী : মুহাম্মদ ইবনে হাসান বিন আলী বিন মুহাম্মদ বিন আলী বিন মূসা বিন জাফর বিন মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব (আ.)! আবুল কাসিম আপনার উপাধি এবং আপনি খলীফা ও সকল যুগের ইমাম । আপনার মায়ের নাম সাকীল। (তাযকিরাতুল খা্ওয়াস ,পৃ. 204 ,মিশর থেকে প্রকাশিত)

শেখ ইবনে হাজার আল হাইসামী ইমাম হাসান আসকারী (আ.) প্রসঙ্গে লিখেছেন : কথিত আছে ,তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা কার হয়েছিল এবং আবুল কাসেম মুহাম্মদ ব্যতীত তার আর কোন পুত্র সন্তান ছিলনা । আবুল কাসেম মুহাম্মদ (আ.) এর বয়স যখন 5 বছর তখন তার পিতা ইন্তেকাল করেন । কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে (ঐ অল্প বয়সেই) জ্ঞান প্রদান করেন এবং তিনি প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা হিসাবে প্রসিদ্ধ । তিনি আত্মগোপন করে আছেন এবং কেউ জানেনা তিনি কোথায় আছেন । (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ ,পৃ. 208 ,মূলতান ,পাকিস্তান থেকে মুদ্রিত)

গ্রান্ড মুফতিয়ে দিয়ার (দেশের প্রধান মুফতি) নামে খ্যাত আল হাযারমা আবদুর রহমান বিন মুহাম্মদ ইবনে হুসাইন ইবনে উমর আল মাশহুর আলাভীর বক্তব্য : শেখ ইরাকীর মতে ,ইমাম মাহদী (আ.) 255 হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন । শেখ আলী আল খাওয়াসের জীবদ্দশায় অর্থাৎ 958 হিজরীতে ইমাম মাহদী (আ.) সত্য (বাস্তবে বিদ্যমান) ;আর একই কথা ইমাম আবদুল ওয়াহাব শারানীও বলেছেন । (বাকিয়াতুল মুস্তারশিদীন ,পৃ. 294 ,বৈরুত থেকে প্রকাশিত)

ইমাম কিরমানী নামে প্রসিদ্ধ আহমাদ ইবনে ইউসুফ ওয়া মুশকীর বক্তব্য : পিতার মৃত্যুর সময় ইমাম আবুল কাসেম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসকারীর বয়স ছিল 5 বছর । মহান আল্লাহ যেমন নবী হযরত ইয়াহইয়াকে ঐ বয়সে জ্ঞান দিয়েছিলেন যখন তিনি ছিলেন অল্প বয়স্ক শিশু ,তেমনি তিনি তাকে ঐ অল্প বয়সেই ঐশী ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন । তিনি সুন্দর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন এবং তার পবিত্র বদন মণ্ডলী ছিল আলোকিত (নূরানী) । (তারিখে আখবারুদ দুওয়াল ফী আছারিল আউয়াল ,পৃ 118 ,বাগদাদ ,ইরাক থেকে প্রকাশিত)। এসব বৈশিষ্ট্য ইমাম মাহদীর বিবরণ প্রদানকালে হাদীসের গ্রন্থাবলীতেও উল্লিখিত হয়েছে ।

আহলে সুন্নাতের আরেক মনীষী ইমাম আল্লামা শেখ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আমীর আশ শিবরাভীর বক্তব্য : প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদী ইবনে হাসান আল খালিস (আ.) 255 হিজরীর 15 শাবান সামাররায় জন্মগ্রহণ করেন । আব্বাসী শাসনকর্তার অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে ইমাম হাসান আসকারী মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্মগ্রহণের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন । ইমাম মুহাম্মদের উপাধিগুলো হচ্ছে মাহদী (হেদায়েতপ্রাপ্ত) ,কায়েম (বিপ্লকারী) ,মুনতাযার(প্রতীক্ষিত) ,খালাফে সালেহ(পূণ্যবান উত্তরাধিকারী) এবং সাহেবুয যামান ;এসব উপাধির মধ্যে আল মাহদী সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। (ইলা তাহাফি বেহুবিল আশরাফ ,পৃ. 179-180 ,মিশর থেকে প্রকাশিত)

আহলে সুন্নাতের আরেক মনীষী ইমাম আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ বিন মুতামাদ খান আল বাদাখশানী । নিশ্চয় আপনার শশ্রু হবে নির্বংশ -এ আয়াতের আবতার শব্দের ব্যাখ্যা করে বলেন : আবতার ঐ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা বা ভবিষ্যৎ বংশধারা নেই । অতঃপর তিনি বলেন : ইমাম হুসাইনের পুত্র আবুল হাসান আলী বিন হুসাইন যায়নুল আবেদীন (আ.) ,তার পুত্র আবু জাফর মুহাম্মদ আল বাকের (আ.) ,তার সন্তান আবু আবদিল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.) ,তার সন্তান আবু ইসমাইল মূসা আল কাযেম (আ.) ,তার সন্তান ছিলেন আলী আর রেযা (আ.) এবং তার সন্তান ছিলেন আবু মুহাম্মদ আয যাকী (আ.) ,আর তার সন্তান হচ্ছেন আল মুনতাযার আবুল কাসেম মুহাম্মদ আল মাহদী (আ.) । (নাযালুল আবরার ,পৃ. 174-175 ;ইরাক থেকে মুদ্রিত)

আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট মনীষী ইমাম শেখ মুমিন বিন হাসান মুমিন আশ শাবলানজীর বক্তব্য : মুহাম্মদ বিন হাসান হচ্ছেন দ্বাদশ (ইমাম) । তিনি আবুল কাসেম মুহাম্মদ বিন হাসান বিন আলী আল হাদী বিন মুহাম্মদ আল জাওয়াদ বিন আলী আর রেযা বিন মূসা কাযেম বিন জাফর আস সাদিক বিন মুহাম্মদ আল বাকের বিন আলী যায়নুল আবেদীন বিন আল হুসাইন বিন আলী বিন আবী তালিব (আ.) । তার মায়ের নাম ছিল নারজিস এবং কেউ কেউ তাকে সুসান ও সাকীল বলেও উল্লেখ করেছেন । আবুল কাসেম তার কুনিয়াহ এবং তার উপাধি হচ্ছে আল হুজ্জাত (খোদায়ী প্রমাণ) ,মাহদী ,খালাফে সালেহ ,আল কায়েম ,আল মুনতাযার এবং সাহেবুয যামান । আল ফুসূলুল মুহিম্মাহ র বিবরণ অনুসারে তিনিই বারো ইমামী শিয়াদের দ্বাদশ ইমাম । ইবনুল ওয়ার্দীর ইতিহাস অনুযায়ী তিনি 255 হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন । (নুরুল আবসার)

আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট মনীষী আল্লামা কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন তালহা শাফিয়ীর বক্তব্য : আবুল কাসেম মুহাম্মদ বিন আল হাসান খালিস বিন আলী আল মুতাওয়াক্কিল বিন মুহাম্মদ আল কামিয়াহ বিন আলী আর রেযা বিন মূসা আল কাযেম বিন জাফর আস সাদিক বিন মুহাম্মদ আল বাকের বিন আলী যায়নুল আবেদীন বিন হুসাইন আয যাকী বিন আলী বিন আবী তালিব (আ.) ;তিনি প্রতীক্ষিত ত্রাণকর্তা । তার মায়ের নাম ছিল সাকীলাহ এবং তিনি হাকীমাহ নামেও পরিচিতা ছিলেন । তার নাম মুহাম্মদ ;তার কুনিয়াত আবুল কাসেম ;তার উপাধিসমূহের মধ্যে আল হুজ্জাত ,খালাফে সালেহ ও আল মুনতাযার প্রসিদ্ধ । (মাতালিবুস সুউল ফী মানাকিবে আলে রাসূল ,পৃ. 89 ;মিশর থেকে প্রকাশিত) তিনি উক্ত গ্রন্থে আরো লিখেছেন যে ,ইমাম মাহদী ইমাম আবু মুহাম্মদ আল হাসান আল আসকারীর পুত্র । কিনি সামাররায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনি তার আদ দুরারুল মুনাযযাম গ্রন্থেও একই কথা উল্লেখ করেছেন ।

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম শেখ আসলাহুদ্দীন তার শারহে দারিয়াহ গ্রন্থে লিখেছেন : হযরত মাহদী (আ.) আহলে বাইতের ইমামদের মধ্যে দ্বাদশ ইমাম । ইমাম আলী ছিলেন প্রথম ইমাম এবং ইমাম মাহদী হচ্ছেন সর্বশেষ ইমাম ।

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম শেখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আল হামুয়ানী আশ শাফিয়ী ফারায়িদুস সিমতাইন গ্রন্থে আবাল খাযাঈ থেকে লিখেছেন যে ,তিনি বর্ণনা করেছেন : ইমাম আলী আর রেযা বিন মূসা (আ.) বলেছেন : আমার পরে আমার পুত্র জাওয়াদ তাকী ইমাম হবে ;তারপরে তার পুত্র আলী আল হাদী আন নাকী ইমাম হবে । তার পরবর্তী ইমাম হবে তার পুত্র আল হাসান আল আসকারী ;আর তার পরে ইমাম হবে তার পুত্র মুহাম্মদ আল মাহদী । তার অবর্তমানে অর্থাৎ অন্তর্ধানকালে জনগণ তার পুনরাবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে ।তার পুনরাবির্ভাবের পর যারা তার আনুগত্য করবে তারাই হবে মুমিন ।

আহলে সুন্নাতের অন্তত পয়ত্রিশ জন বিখ্যাত আলেম ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে 46টি গ্রন্থ রচনা করেছেন । এর মধ্যে উল্লোখযোগ্য হচ্ছে :

1. কিতাবুল মাহদী : আবু দাউদ ।

2. আলামাতুল মাহদী : জালালুদ্দীন সুয়ূতী।

3. আল কাওলুল মুখতাসার ফী আলামাতিল মাহদী আল মুনতাযার : ইবনে হাজার ।

4. আল বায়ান ফী আখবারি সাহিবিয যামান : আল্লামা আবু আবদিল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইউসুফ আদ দাশেকী ।

5. মাহদী আলে রাসূল : আলী ইবনে সুলতান মুহাম্মদ আল হিরাভী আল হানাফী ।

6. মানাকেবুর মাহদী : আল হাফেয আবু নাঈম আল ইসফাহানী ।

7. আল বুরহান ফী আলামাতিল মাহদী আখিরায যামান : মুত্তাকী হিন্দী ।

8. আরবাউনা হাদীসান ফীল মাহদী : আবদুল আলা আল হামাদানী ।

9. আখবারুল মাহদী : আল হাফেয আবু নুআইস ।

পাদটিকা :

1. শিয়া মাজহাবের হাদীস ও বর্ণনা অনুযায়ী শান্তি ও সাম্যের সরকার ও রাষ্ট্র যা ইমাম মাহদী (আ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হবে তা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় শত শত বছর টিকে থাকবে । আর তারপরই শেষ বিচার দিবসের আগমন হবে । উপরিউক্ত হাদীসসমূহে যা কিছু 7 অথবা 9 বছর হিসাবে উল্লিখিত হয়েছে তা আসলে যখন থেকে ইমাম মাহদী (আ.) তার মিশন শুরু করবেন তখন থেকে তার দ্বারা সমগ্র বিশ্ব বিজয় করার সময়কাল ।

2. এ হাদীসে বন্ধনীর মধ্যকার এ কথাটি সহীহ মুসলিমের ইংরেজি অনুবাদক আবদুল হামদি সিদ্দীকীর বক্তব্য ।

3. আহলে সুন্নাতের একজন ইমাম শেখ ইউসুফ বিন ইসমাঈল নিবহানী তার জামালুল আউলিয়া গ্রন্থের 151-152 পৃষ্ঠায় (থানা ভবন ,ভারত থেকে প্রকাশিত) লিখেছেন যে ,মুহাম্মদ পার্সা বুখারার অধিবাসী । তিনি নকশাবন্দী সিলসিলার ইমাম এবং একজন নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক ।

সূত্র : তেহরান থেকে প্রকাশিত আত তাওহীদ ,সেপ্টেম্বর অক্টোবর 2003 সংখ্যা ।