ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 81155
ডাউনলোড: 9314

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 81155 / ডাউনলোড: 9314
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

1. হযরত মূসা (আ.) ও হযরত ইউশা (আ.) এর যুগ

হযরত মূসা (আ.) 120 বছর জীবিত ছিলেন । তিনি তাঁর জীবনের প্রায় প্রথম 30 বছর মিশরের ফিরআউনের প্রাসাদে এবং হযরত শুআইব (আ.)-এর কাছে ক্বাদাশ বারনী নামক স্থানে 10 বছর অতিবাহিত করেছিলেন । উল্লেখ্য যে ,এ স্থানটি ফিলিস্তিনের দিক থেকে সীনাই পর্বতের শেষ প্রান্তে আরাবাহ্ উপত্যকার অদূরে অবস্থিত ।

বর্তমান তাওরাতের সিফরে খুরুজ পুস্তিকার 12তম অধ্যায়ের 37 নং আয়াতে এবং সিফরে আদাদ-এর 33তম অধ্যায়ের 36 নং আয়াতে যে সব ইসরাইলীয় হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে হিজরত করেছিল তাদের সন্তানদেরকে বাদ দিয়ে তাদের সংখ্যা ছয় লক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । তবে কতিপয় পাশ্চাত্য গবেষকের মতে ,তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় হাজার ।

ঐতিহাসিকগণ অধিকতর সম্ভাবনার ভিত্তিতে বলেছেন : খ্রিস্টপূর্ব 13 শতাব্দী আগে অর্থাৎ প্রায় খ্রি.পূ. 1230 সালে ফিরআউন মিনফাতাহ্-এর আমলে ইসরাইলীরা মিশর ত্যাগ করেছিল ।

হযরত মূসা (আ.) কাদাশ পর্বতের কাছে মারা যান এবং তাঁর উত্তরাধিকারী ইউশা বিন নূন তাঁকে ঐ স্থানে দাফন করেন এবং তিনি তা গোপন রাখেন । হযরত মূসা (আ.) তাঁর জীবদ্দশায় ,এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেও বনি ইসরাইলের কাছ থেকে বহু কষ্ট ও যাতনা পেয়েছিলেন । ইহুদীদের তাওরাতে তাঁর ও হযরত হারূন (আ.)-এর ব্যাপারে উল্লিখিত আছে যে ,আল্লাহ্ মূসা (আ.)-কে বলেছিলেন : যেমন করে তোমার ভাই হারূন হুর পর্বতে মৃত্যুবরণ করেছে ঠিক তেমনি তুমিও এ পর্বতে মৃত্যুবরণ করবে । কারণ তোমরা দু জন সীনাই দেশে কাদাশ ভূ-খণ্ডের জলাভূমিতে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করনি আর এভাবে তোমরা দু জন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ!! অতএব ,তুমি যমীনকে ঠিক এর বিপরীত (দিক) থেকে দেখবে ,অথচ যে ভূ-খণ্ড আমি বনি ইসরাইলকে প্রদান করেছি সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না । 61

আরো বলা হয়েছে : ইউশা বিন নূন সেখানে প্রবেশ করবেন । 62

মূসা (আ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরি নবী ইউশা বনি ইসরাইলের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । তিনি তাদেরকে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে নিয়ে যান এবং আবীহা (জেরিকো) শহর থেকে শুরু করে আরো 31টি ক্ষুদ্র রাজ্য জয় করেন যার প্রতিটি ছিল শহর বা ছোট শহর এবং এগুলোর প্রতিটির অধীনে বেশ কিছু কৃষিনির্ভর গ্রাম ছিল । উল্লেখ্য যে ,এ সব নগররাজ্যের অধিবাসীরা ছিল কিনআন গোত্রীয় পৌত্তলিক ।

তখন তিনি ঐ অঞ্চলকে ইয়াকূব (আ.)-এর বংশধরদের মধ্যে বণ্টন করে দেন যারা একে অপরের প্রতি হিংসা-দ্বেষ পোষণ করত । ইউশার পুস্তিকায় 15 থেকে 19 অধ্যায়ে উক্ত অঞ্চলের নগর ও ক্ষুদ্র শহরের সংখ্যা 216 বলে উল্লেখ করা হয়েছে । হযরত ইউশা (আ.) খ্রিস্টপূর্ব 1130 সালে প্রায় 110 বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন ।

2 .বিচারকদের যুগ

অস্থিতিশীল যুগের বিচারকদের শাসন কর্তৃত্ব এবং ইহুদী জাতির ওপর স্থানীয় শাসক ও রাজন্যবর্গের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার : হযরত ইউশা ইবনে নূনের পর বনি ইসরাইলের নেতৃত্ব বিচারকদের কাছে স্থানান্তরিত হয় এবং তাদের মধ্যে 15 জন শাসনকর্তা হয়েছিল । তাদের যুগের দু টি বৈশিষ্ট্য সবসময় বনি ইসরাইলের মাঝে লক্ষ্য করা যায় ।

একটি বৈশিষ্ট্য হলো মহান নবীদের পথ থেকে তাদের (বিচারকদের) বিচ্যুতি এবং অপর বৈশিষ্ট্য হলো মহান আল্লাহ্ কর্তৃক এমন সব ব্যক্তিকে তাদের ওপর কর্তৃত্বশীল করা যারা তাদের অত্যন্ত বেদনাদায়ক শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবে ;আর এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ।

তৃতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়ে বিচারকদের পুস্তিকায় হযরত ইউশা (আ.)-এর পর বনি ইসরাইলের বিচ্যুতির কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে :

কিনাআনী ,হেইথী ,আমূরী ,ফার্যী ,হেভী ও ইয়াবুসীয়দের মাঝে তারা বসবাস করতে থাকে এবং ঐসব জাতির মেয়েদেরকে তারা স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিল এবং নিজেদের কন্যাসন্তানদেরকে তারা তাদের ছেলেদের কাছে বিবাহ দিয়েছেল । তারা ঐ সব জাতির প্রতিমা এবং দেব-দেবীদেরও পূজা করত ।

তৃতীয় অধ্যায়ের 8 নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে : বিচারকদের মধ্য থেকে যে সর্বপ্রথম বনি ইসরাইলের ওপর শাসনকর্তৃত্ব লাভ করেছিল এবং তাদেরকে 8 বছর শাসন করেছিল সে ছিল আরামুন নাহরাইনের শাসনকর্তা রাশ্তাআম ।

তখন বনি আম্মোন এবং আমালিকারা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আরীহা (জেরিকো) শহর দখল করে নেয় । 63 এরপর কিনআন দেশের শাসনকর্তা ইযারীন হাসূর অঞ্চলে তাদের ওপর 10 বছর শাসন করেছিল । 64

এরপর বনি আমোন ও ফিলিস্তিনীরা তাদেরকে 18 বছর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছিল । 65

এরপর ফিলিস্তিনীরা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল এবং চল্লিশ বছর তাদেরকে নিজেদের আধিপত্যাধীন রেখেছিল । 66

ইউশা ইবনে নূনের পর বিচারকদের শাসন নবী হযরত সামূঈল (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল । হযরত সামূঈল (আ.) ছিলেন ঐ নবী পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ নিম্নোক্ত আয়াতে যাকে এভাবে স্মরণ করেছেন :

আপনি কি বনি ইসরাইলের ঐ গোত্রকে দেখেছেন যারা মূসার পরে তাদের নবীর (সামূঈল) কাছে এ প্রার্থনা করেছিল : আপনি আমাদের জন্য এমন একজন বাদশাহ্ নিযুক্ত করে দিন যাতে করে আমরা মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করতে পারি । তাদের নবী বলেছিলেন : তোমাদের ওপর জিহাদ অবধারিত (ফরয) হয়ে গেলে কি তোমরা নাফরমানী করবে ?তারা বলেছিল : এটি কিভাবে সম্ভব যে ,আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করব না । অথচ তারা আমাদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে । অতঃপর যখন তাদের ওপর জিহাদ নির্ধারণ করা হলো তখন তাদের মধ্য থেকে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ব্যতীত সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং মহান আল্লাহ্ অত্যাচারীদের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত আছেন । 67

ঐতিহাসিকরা এ যুগকে খ্রিস্টপূর্ব 1130 সাল থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1025 সাল পর্যন্ত একশ বছর অর্থাৎ হযরত তালুত ও হযরত দাউদ (আ.)-এর শাসনকালের শুরু পর্যন্ত বলে মনে করেন ,অথচ তাওরাতে বিচারকদের পুস্তিকায় এ সময় কাল (বিচারকদের শাসনকাল) একশ বছরের চেয়েও অধিক  বলে উল্লিখিত হয়েছে ।

3. হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সুলাইমান (আ.)-এর শাসনামল

রাজা তালুতের যুগকে আমরা হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সুলাইমান (আ.)-এর শাসনামলের অংশবিশেষ বলে গণ্য করব । কারণ যদিও তালূত নবী ছিলেন না ,কিন্তু তিনি ছিলেন মহান নবীদের ধারার একজন শাসক । ঐতিহাসিকরা তাঁর শাসনামল খ্রি.পূ. 1025 থেকে 1015 সাল পর্যন্ত দীর্ঘ 10 বছর বলে উল্লেখ করেছেন । তারপর হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সুলাইমান (আ.) খ্রি.পূ. 1010 সাল থেকে খ্রি.পূ. 931 সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন । হযরত সুলাইমান (আ.) খ্রি.পূ. 931 সালে ইন্তেকাল করেন ।

বর্তমান তাওরাত (পুরাতন নিয়ম)-এর রচয়িতারা হযরত মূসা (আ.) ,হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ওপর জুলুম করেছে এবং জঘন্য চারিত্রিক ,রাজনৈতিক ও বিশ্বাসগত মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে ।

পাশ্চাত্যের অধিকাংশ খ্রিস্টান ঐতিহাসিকরা কেবল এ সব রচয়িতার অনুসরণ করেই ক্ষান্ত হয় নি ,বরং তাঁদের বক্তব্যের সাথে আরো বেশ কিছু ভিত্তিহীন বিষয়ও যোগ করেছেন । অতঃপর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমর্থক মুসলমান নামধারীরাও পাশ্চাত্যের এসব লেখকের অনুসরণ করেছে । মহান আল্লাহর দরূদ ও সালাম তাঁর সকল নবী-রাসূলদের ওপর বর্ষিত হোক । আর যে সব ব্যক্তি এ সব মহামানবের ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে মহান আল্লাহর দরবারে আমরা তাদের থেকে সম্পর্কোচ্ছেদ ঘোষণা করছি ।

হযরত দাউদ (আ.) ইসরাইলীদেরকে পৌত্তলিকতা ও মুশরিকদের আধিপত্য থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং তাঁর ঐশ্বরিক শাসন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহেও বিস্তার লাভ করেছিল । যে সব জাতি তাঁর শাসনাধীন ছিল তিনি তাদের সাথে এমন সদাচরণ করতেন যে ,মহান আল্লাহর পবিত্র কোরআনে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কণ্ঠে তা বর্ণনা করেছেন । হযরত দাউদ (আ.) আল কুদসে মারীয়া পাহাড়ের ওপর তাঁর শ্রদ্ধেয় প্রপিতামহ হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ইবাদত-বন্দেগী করার স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু সেখানে আরুনা নামের আল কুদসের ইয়াবূস বংশীয় একজন বাসিন্দার শস্যক্ষেত্র ছিল । হযরত দাউদ (আ.) ঐ লোকের কাছ থেকে ঐ জমি 50 শাকোল (ওজনের পিণ্ড) রূপার বিনিময়ে ক্রয় করেন । বর্তমান তাওরাতের বক্তব্য অনুসারে সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ এবং নামায কায়েম করেছিলেন । আর তিনি এর একটি অংশে মহান আল্লাহর জন্য কোরবানীও করতেন । 68

হযরত সুলাইমান ( .) হযরত দাউদ ( .)- এর রাজত্ব ও শাসনকর্তৃত্বের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন তাঁর হুকুমত ও রাজত্ব ঐ পর্যায়ে বিস্তার লাভ করেছিল যার উল্লেখ পবিত্র কোরআন এবং মহানবী ( সা .)- এর সুন্নাহ্য় বিদ্যমান তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা হযরত দাউদ ( .) এবং শ্রদ্ধেয় প্রপিতামহ হযরত ইবরাহীম ( .)- এর মসজিদটিকে একটি জাঁকজমকপূর্ণ ইমারতে রূপান্তরিত করেছিলেন যা   মা বাদ - ই সুলাইমান অর্থাৎ The temple of King Solomon নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে

হযরত সুলাইমান (আ.)-এর শাসনামল মহান নবীদের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমধর্মী যুগ । এ যুগে মহান আল্লাহ্ তাঁর আশ্চর্যজনক ও বিচিত্র নেয়ামতসমূহের কিছু নমুনা মানব জাতির কাছে প্রকাশ করেছিলেন । যদি জাতিসমূহ মহান নবী এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীদের নেতৃত্বের রাজনৈতিক ধারাটি বহাল রাখত এবং মহান আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ,যুদ্ধ-বিগ্রহ ও দমন কার্যে ব্যবহার না করত ,তাহলে মহান আল্লাহ্ তাদেরকে এ সব নেয়ামত নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রদান করতে থাকতেন । মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

মহান আল্লাহ্ যদি মানব জাতির জন্য অজস্র জীবিকার ব্যবস্থা করতেন ,তাহলে তারা পৃথিবীতে অন্যায়-অত্যাচার করত । কিন্তু মহান আল্লাহ্ যতটুকু চান কেবল ততটুকুই তিনি অবতীর্ণ করেন । আর তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে জ্ঞাত এবং তাদের সব কিছু দেখেন । 69

হযরত সুলাইমান (আ.) নিজ সিংহাসনের ওপর উপবিষ্টাবস্থায় প্রাণ ত্যাগ করেন । ঐতিহাসিকরা তাঁর মৃত্যুর তারিখ খ্রিস্টপূর্ব 931 সাল বলে উল্লেখ করেছেন ।

হযরত সুলাইমানের মৃত্যুর সাথে সাথেই বনি ইসরাইলের মধ্যে বিচ্যুতি এবং তাদের হুকুমত ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিভক্তি দেখা দেয় । আর এ কারণেই মহান আল্লাহ্ তাদের ওপর এমন ব্যক্তিকে কর্তৃত্বশীল করে দিয়েছিলেন যে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করিয়েছিল ।

বর্তমান তাওরাতের রাজন্যবর্গ ও শাসকদের প্রথম পুস্তিকায় সুলাইমান (আ.)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হয়েছে এভাবে যে ,তিনি মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী বর্জন করে মূর্তি পূজা করতেন । তাওরাতে উল্লিখিত হয়েছে : তিনি সুলাইমানকে বললেন : এ শাস্তির কারণ তুমি নিজেই । যে সব চুক্তি এবং ওয়াজিব বিধান পালন করার আদেশ আমি তোমাকে দিয়েছিলাম ,তুমি সেগুলো সংরক্ষণ কর নি । আমিও তোমার হাত থেকে রাজত্ব কেড়ে নিয়ে তা টুকরো টুকরো করে ফেলব । 70

4. অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের যুগ

তাদের অধঃপতন এতটাই হয়েছিল যে ,তারা একে অপরের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য তাদের মধ্যকার পৌত্তলিকরা মিশরের ফিরআউন ,আশুরীয় ও ব্যাবেলনীয়দের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল ।

হযরত সুলাইমান (আ.)-এর মৃত্যুর পর ইহুদীরা শেকীম (নাবলুস) নামক স্থানে সমবেত হয়ে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইয়ারবাআম বিন নাবাত-এর হাতে বাইআত করে । উল্লেখ্য যে ,এ ইয়ারবাআম বিন নাবাত হযরত সুলাইমানের অন্যতম শত্রু ছিল । সে সুলাইমান (আ.)-এর শাসনামলে মিশরে পালিয়ে যায় এবং ফিরআউনদের কাছে আশ্রয় নেয় । হযরত সুলাইমান (আ.)-এর মৃত্যুর পর সে ফিরে আসলে ইহুদীরা তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল । সে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে ইসরাইল নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল যার রাজধানী ছিল শেকীম বা সামেরাহ্ । খুব অল্প সংখ্যক ইহুদী হযরত সুলাইমানের পুত্র রাহাবাআমের হাতে বাইআত করে । রাহাবাআমের রাজ্য ইয়াহুদা নামে পরিচিত ছিল । এ রাজ্যের রাজধানী ছিল আল কুদ্স (জেরুজালেম) । 71

কিন্তু আসিফ বিন বারখিয়া যিনি ছিলেন হযরত সুলাইমান (আ.)-এর উত্তরাধিকারী ,মহান আল্লাহ্ তাঁর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলেছেন : ( عنده علم من الكتاب ) অর্থাৎ তার কাছে কিতাবের কিছু জ্ঞান ছিল । বনি ইসরাইল তাঁর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছিল । তিনি বনি ইসরাইলের কাছ থেকে মিথ্যা অপবাদ লাভ করা ছাড়া আর কিছুই পান নি ।

তাওরাতে বর্ণিত হয়েছে : কুফর ও মূর্তিপূজা ইয়ারাবাআম-এর অনুসারীদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিদ্যমান ছিল । সে স্বর্ণ দিয়ে দু টি গোবৎস মূর্তি বানিয়ে এগুলোর একটি আল কুদসে এবং অপরটি দানে স্থাপন করেছিল । সে প্রতিটি মূর্তির পাশে একটি করে কোরবানী করার জায়গাও নির্মাণ করেছিল এবং তাদেরকে বলেছিল : তোমাদের খোদারাই তোমাদেরকে মিশর থেকে বের করে শেকীমে এনেছেন । অতএব ,তাঁদের সামনে তোমরা কোরবানী করবে এবং ঊরশালিমে যাবে না । আর ইহুদী জাতিও তার কথা মেনে নিয়েছিল । 72

গোবৎস উপাসনা করার পাশাপাশি ইয়ারাবাআম তাদেরকে অন্যান্য দেব-দেবী ,যেমন- সাইদূনীদের দেবতা আশতারুত ( عشتروت ) ,মুআবীদের দেবতা কামুশ ( كموش ) এবং আমোনদের দেবতা মাকলুম ( مكلوم )-এর উপাসনা করার আদেশ দিয়েছিল । 73

আদি রাজা ও শাসকবর্গের কাহিনীসমূহ সংক্রান্ত পুস্তিকার বক্তব্য অনুসারে ইয়াহুদা রাজ্যও তিন বছর পরে এই একই পরিণতি বরণ করেছিল (অর্থাৎ সেখানেও মূর্তিপূজা ,পৌত্তলিকতা এবং শিরকের প্রসার হয়েছিল) । 74

মিশরের ফিরআউন শীশক ( شيشق ) এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ইয়ারাবাআমকে সাহায্য ও ইয়াহুদা রাজ্যের ধ্বংস সাধন করার জন্য খ্রি.পূ. 926 সালে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর পুত্র রাহাবাআম ও তাঁর অনুসারীদেরকে পরাজিত করে আল কুদ্স দখল করে এবং বেথ-ঈল (মহান আল্লাহর গৃহ)-এর ধনভাণ্ডার ,শাসনকর্তার সিংহাসন ,এমনকি হযরত সুলাইমান (আ.) যে সব স্বর্ণের ঢাল বানিয়েছিলেন সেগুলো নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিল ।

সম্ভবত মিশরের ফিরআউনের নিজ রাজ্যে দুর্বল অবস্থানের কারণে নিজে অথবা তার সহযোগীর (ইয়ারাবাআম) মাধ্যমে ইয়াহুদা রাজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে পারে নি ।

অতএব ,শীশকের পশ্চাদপসরণ করার পর এ ক্ষুদ্র রাজ্যটি নিজ অবস্থান কিছুটা ফিরে পেয়েছিল এবং তারা ইয়ারাবাআমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল । আরামীরা উক্ত রাজ্যদ্বয়ের দুর্বলতার সুযোগ নেয় এবং ইয়াহুদা রাজ্য আক্রমণ করে সেখানকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে বন্দী করে নিজেদের রাজধানী দামেশকে নিয়ে যায় । তারা বিজিতদের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করে । এ ঘটনা আরামী বিন হুদের রাজত্বকালে (খ্রি.পূ. 879- খ্রি.পূ. 843) ঘটেছিল । 75

অতঃপর আখাব বিন আওমেরীর রাজত্বকালে খ্রি.পূ. 874- খ্রি.পূ. 853 সালের মধ্যে আরামীয়রা ইয়ারাবাআমের রাজ্যের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করে সে দেশকেও তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করেছিল ।

একইভাবে তাওরাতে ইয়েহুরামের শাসনকালে ইয়াহুদা রাজ্যের সাথে কোশেসীয়ীদের যুদ্ধে আরবদের সাথে ফিলিস্তিনীদের যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে ,তারা আল কুদ্স দখল করে শাসনকর্তার প্রাসাদে সংরক্ষিত ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে বন্দী করেছিল । 76

তাওরাতে আরো বর্ণিত আছে : আরামীয় সেনাবাহিনী বাইতুল মুকাদ্দাসে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং সেখানকার সকল নেতাকে হত্যা করতঃ সকল ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করে । অতঃপর তারা সে সব লুণ্ঠিত ধন-সম্পদ আরামীয়দের রাজা হাযাঈলের কাছে অর্পণ করে । 77

ঠিক একইভাবে ইসরাইল রাজ্যের শাসনকর্তা ইউআশ ইয়াহুদা রাজ্য আক্রমণ করে নগরীর দুর্গ ধ্বংস করেছিল । সে মহান আল্লাহর ঘরে সংরক্ষিত যাবতীয় স্বর্ণ ,রৌপ্য ,বাসন-কোসন এবং রাজকীয় কোষাগার লুণ্ঠন করেছিল । 78

আশুরীয়দের দখল করার আগ পর্যন্ত বনি ইসরাইলের মধ্যে এ ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় অবস্থা এবং তাদের ওপর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কর্তৃত্ব অব্যাহত থাকে ।

5. আশুরীয়দের আধিপত্য বিস্তারের যুগ

খ্রি. পূ. 859 সাল থেকে খ্রি. পূ. 824 সাল পর্যন্ত আরামীয় রাজ্য ও ইসরাইলে আশুরীয় রাজ তৃতীয় শালমান্নাসরের আক্রমণের মাধ্যমে ইহুদীদের ওপর আশুরীয়দের আধিপত্যের সূত্রপাত ঘটে । পুরো অঞ্চলই তার এবং তার পরবর্তী আশুরীয় রাজন্যদের শাসনাধীনে চলে যায় । তবে সম্ভবত প্রথমে ইসরাইল রাজ্যের পরিবর্তে ইয়াহুদা রাজ্যটি আশুরীয়দের শাসনাধীনে এসেছিল ।

কারণ তাওরাতের বর্ণনানুসারে সেখানকার শাসনকর্তা আহায বিন ইউসাম আশুর রাজ্যের নৃপতি তাঘলিস ফালাসারকে ইসরাইল ও আরামীয়দের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য আহবান করেছিল ;আর আশুর রাজও তার সর্বশেষ আবেদন গ্রহণ করে খ্রি.পূ. 732 সালে আক্রমণ করার উদ্যোগ নেন । আশুর রাজের উত্তরাধিকারী নৃপতি 5ম শালমান্নাসরও তাঁর পূর্বসূরির কর্মপন্থা অব্যাহত রাখেন । কিন্তু তিনি ইসরাইলের রাজধানী শেকীম (নাবলুস) অবরোধকালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত নৃপতি দ্বিতীয় সিরজাওন সামেরাহ্ নগরী পুরোপুরি দখল করেছিলেন এবং এভাবে তিনি এ দেশটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন । ইসরাইল আক্রমণ করার মাধ্যমে ইহুদীদেরকে তাদের দেশ ও মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হয় । তাঘলিস ফালাসার ইহুদীদেরকে বন্দী করে নিজ দেশে নিয়ে আসেন এবং আশুরীয়দেরকে তাদের দেশে আবাসন দেন । 79

তারপর সুলতান ফাকাহ্ উক্ত পরিকল্পনা সমাপ্ত করেন এবং তিনি মানসীর বংশধরদের ও ইহুদী জনসংখ্যার অর্ধেকাংশকে বন্দী করেছিলেন । 80

দ্বিতীয় সিরজাওন প্রায় ত্রিশ হাজার ইহুদীকে হাররান ,খাবূর নদীর তীর এবং মিডিয়ায় নির্বাসিত করেন এবং তাদের স্থলে আরামীয়দেরকে আবাসন দেন । 81

হিযকিয়ার শাসনামলে ইয়াহুদা রাজ্য আশুরীয়দের হাত থেকে বের হয়ে আসে । বাহ্যত তিনি মিশরীয়দের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছিলেন । তাঁর এ উদ্যোগে আশুর রাজ্যের নৃপতি সিনহারীব তার ওপর খুব ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং খ্রি. পূ. 701 সালে ইয়াহুদা রাজ্যকে বশীভূত করার জন্য এবং আশুরীয়দের সর্বশেষ আক্রমণের মাধ্যমে উক্ত অঞ্চল নিজ শাসনাধীনে আনেন এবং আল কুদ্স দখল করেন । হিযকিয়া মহান আল্লাহর গৃহে বিদ্যমান যাবতীয় রৌপ্য এবং শাসনকর্তার প্রাসাদে গচ্ছিত সকল ধন-সম্পদ তাঁর কাছে অর্পণ করেছিলেন । 82

বর্তমান তাওরাতে আশুর দেশের যে সব নৃপতির বিবরণ প্রদান করা হয়েছে তাঁরা ব্যতীত আসরহাদ্দুন এবং তাদের সর্বশেষ নৃপতি আশুর বানিবাল সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেছে : এ দু জন আশুর রাজ্য থেকে বেশ কিছু সম্প্রদায়কে সামেরাহ্ নগরীতে এনে আবাসন দিয়েছিলেন । 83

6. বাবেলীয়দের আধিপত্য বিস্তারের যুগ

মাদ ও বাবেলীয়দের (কালদানীদের) হাতে খ্রি.পূ. 612 সালে আশুরীয়দের রাজধানী নেইনাভার পতন ঘটে এবং উক্ত রাজ্যকে বিজয়ীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় । ইরাক ,শাম ও ফিলিস্তিন বাবেলীয়দের ভাগে পড়ে । তাদের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন বাখতুন নাসর -যিনি শাম ও ফিলিস্তিনকে নিজ শাসনাধীনে আনার জন্য খ্রি.পূ. 597 সালে প্রথম বার এবং খ্রি.পূ. 586 সালে দ্বিতীয় বার সেখানে আক্রমণ করেছিলেন ।

প্রথম আক্রমণে তিনি আল কুদ্স অবরোধ ও জয় করেন । তিনি সেখানকার শাসনর্তার প্রাসাদের যাবতীয় ধন-রত্ন ও সম্পদ হস্তগত করেন । বিরাট সংখ্যক ইহুদী ,এমনকি সুলতান ইয়াহুভা ইয়াকীন ও তাঁর সমর্থকদেরকে বন্দী করেন এবং ধৃত সুলতানের পিতৃব্য সিদিকইয়াকে অবশিষ্ট ইহুদীদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন । তিনি বন্দীদেরকে বাবিলের (ব্যাবিলনের) খাবূর নদীর কাছে নাইবূর এলাকায় নির্বাসিত করেন । 84

দ্বিতীয় আক্রমণ : বাখতুন নাসর ও মিশরের ফিরআউন খোফরার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় আক্রমণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে । কারণ ,ফিরআউন খোফরা শাম ও ফিলিস্তিনের শাসনকর্তাদের ,যেমন আল কুদসের নয়া শাসক সিদিকইয়াকে বাবেলীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকে এবং তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে । তারাও তা মেনে নেয় এবং মিশরের ফিরআউন অত্র অঞ্চলে আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে । কিন্তু বাখতুন নাসর দ্রুত আরেকটি আক্রমণ পরিচালনা করে মিশরীয়দেরকে পরাজিত করেন এবং সমগ্র অঞ্চল তাঁর করায়ত্তে চলে আসে । ইহুদীদের উপাসনালয়ে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস এবং তাদের ধন-ভাণ্ডারসমূহ লুণ্ঠন করা হয় । তাদের সব ঘর-বাড়ি ধ্বংস এবং প্রায় পঞ্চাশ হাজার ইহুদীকে বন্দী করা হয় । সিদিকইয়ার সন্তানদেরকে বাখতুন নাসরের সামনে জবাই এবং তারপর সিদিকইয়ার দু চোখ উপড়ে ফেলা হয় । তাকেও পায়ে বেড়ী পড়িয়ে বন্দীদের সাথে নিয়ে যাওয়া হয় । আর এভাবেই ইয়াহুদা রাজ্য বিলুপ্ত হয়ে যায় । 85

7. ইরানীদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

পারস্য-সম্রাট সাইরাস (কোরুশ) বাবেল নগরী ও রাজ্য দখল করে খ্রিস্টপূর্ব 539 সালে সেখানকার সরকার ও প্রশাসনের পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটান । তিনি শাম ও ফিলিস্তিন আক্রমণ করে সে দেশগুলো নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । তিনি বাখতুন নাসরের বন্দীদেরকে এবং যে সব ইহুদী বাবেলে বসবাস করত তাদেরকে আল কুদসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি এবং সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহের ধন-সম্পদসমূহ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেন । তিনি তাদেরকে তাদের উপাসনালয় সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করার অনুমতি দেন এবং যেরবাবেলকে তাদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন । 86

সাইরাস কর্তৃক নিযুক্ত ইহুদী শাসনকর্তা ,হযরত সুলাইমান (আ.)-এর ইবাদতগাহ্ পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়ায় হাত দিলে তৎসংলগ্ন এলাকার জনগণ ভয় পেয়ে সম্রাট সাইরাসের উত্তরাধিকারী কামবুজিয়ার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করে । তিনি ইবাদতগাহ্ নির্মাণ কার্য বন্ধ রাখার নির্দেশ জারী করেন । অতঃপর 1ম দারা (দারায়ূশ) তাদেরকে ইবাদতগাহ্ পুনঃনির্মাণের অনুমতি দিলে খ্রি. পূ. 515 সালে ইবাদতগাহের ইমারত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ।

খ্রি. পূ. 539 সাল থেকে খ্রি. পূ. 331 সাল পর্যন্ত ইহুদীদের ওপর ইরানী জাতির আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল । এ দীর্ঘ সময় সম্রাট সাইরাস ,কামবুজিয়াহ্ ,প্রথম দারায়ূশ ,খেশার ইয়ার্শা এবং হযরত উযাইর (আ.)-এর সমসাময়িক আরদাশীর ইহুদীদের শাসন করেছেন । এদের পর আরো কতিপয় ইরানী সম্রাট ,যেমন দ্বিতীয় দারায়ূশ ,দ্বিতীয় ও তৃতীয় আরদাশীর রাজত্ব করেছেন । তৃতীয় আরদাশীর ছিলেন শেষ পারস্য সম্রাট যিনি গ্রীক সম্রাট ইস্কান্দারের (আলেকজান্ডার) 87 হাতে পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন । বর্তমান তাওরাতে এ সব সম্রাট ও রাজা-বাদশার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ।

8. গ্রীকদের আধিপত্য ও কর্তৃত্বের যুগ

গ্রীকসম্রাট ইস্কান্দার আলেকজান্ডার মিশর ,শাম ও ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ঐ সব অঞ্চল পদানত ও নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । ইরানী সামন্তরা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাঁর মুখোমুখি হলে তিনি তাদের পরাজিত করে আল কুদসে প্রবেশ করেন এবং উক্ত অঞ্চল পূর্ণরূপে নিজ শাসনাধীনে আনয়ন করেন । অতঃপর সম্রাট ইস্কান্দার উত্তর ইরাকের আরবীলে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে পারস্য সম্রাট তৃতীয় আরদাশীরের শাসনকর্তৃত্ব ও সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নির্মূল করেন । এরপর তিনি সম্মুখপানে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে পারস্য ও আরো অন্যান্য অঞ্চল দখল করেন । আর এভাবে খ্রি.পূ. 331 সালে ইহুদীরা গ্রীকদের অধীন হয়ে যায় ।

ইস্কান্দারের মৃত্যুর পরে তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের ওপর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় যা 20 বছর স্থায়ী হয়েছিল । বাতালিসা (বাতলীমূসীয়রা) মিশর সরকারের অধিকাংশ অঞ্চলের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং সেলূকীয়রা (সেলূকূস-এর সাথে সংশ্লিষ্ট) সিরিয়া ও অন্যান্য অংশের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন ।

আর এভাবেই আল কুদ্স খ্রি.পূ. 312 সালে বাতলীমূসীয়দের নিয়ন্ত্রণে আসে । কিন্তু তৃতীয় সেলূকীয় নৃপতি আনতিয়োকূস খ্রি. পূ. 198 সালে বাতলীমূসীয়দের নিয়ন্ত্রণ থেকে আল কুদ্স মুক্ত করেন । অতঃপর আবারও বাতলীমূসীয়রা আল কুদসের ওপর নিজেদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং খ্রি. পূ. 64 সালে রোম কর্তৃক উক্ত অঞ্চল বিজিত হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে নিজেদের শাসনকর্তৃত্ব অব্যাহত রাখে ।

বর্তমান তাওরাত ছয় জন বাতলীমূসীয়কে প্রথম ,দ্বিতীয় ,তৃতীয় এভাবে ষষ্ঠ বাতলীমূসীয় পর্যন্ত স্মরণ করে বলেছে : তাদের মধ্যকার প্রথম ব্যক্তি শনিবার ঊরশালিমে প্রবেশ করে বিপুল সংখ্যক ইহুদীকে বন্দী করে মিশরে প্রেরণ করেছিলেন । 88

ঠিক একইভাবে তাওরাত পাঁচ জন সেলূকীয় শাসনকর্তাকে প্রথম ,দ্বিতীয় এভাবে পঞ্চম আনতিয়োকূস নামে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে : তাদের মধ্যকার চতুর্থ ব্যক্তি খ্রি.পূ. 175 সাল থেকে খ্রি.পূ. 163 সাল পর্যন্ত আল কুদসে সেনাভিযান পরিচালনা করেন এবং হযরত সুলাইমান (আ.)-এর উপাসনালয়ের যাবতীয় মূল্যবান জিনিস লুণ্ঠন করেন এবং দু বছর পরে আল কুদসের ওপর এক বিরাট আঘাত হানেন । সেখানে যা কিছু ছিল তা লুণ্ঠন এবং উক্ত নগরীর বাড়ি-ঘর ও প্রাচীরসমূহ ধ্বংস করা হয় । আক্রমণকারী চতুর্থ আনতিয়োকূস নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেন । তিনি নিজেদের উপাস্য যিউসের প্রতিমা উক্ত ইবাদতগাহে স্থাপন করেন এবং ইহুদীদেরকে উক্ত প্রতিমার উপাসনা করার আহবান জানান । তাদের অনেকেই তাঁর এ আহবানে সাড়া দিয়েছিল । অথচ মেকাবী ইহুদীদের আন্দোলনের কারণে খ্রি. পূ. 168 সালে তাদের অনেকেই গোপন স্থান ও গুহাসমূহে আশ্রয় নিয়েছিল । 89

ইহুদীরা নিজেদের যে বিপ্লব ও আন্দোলনের ব্যাপারে গর্ব করে তা গেরিলা গোষ্ঠীসমূহের যুদ্ধের সাথেই বেশি সদৃশ ছিল । ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসীরা মূর্তিপূজারী গ্রীকদের বিরুদ্ধে এ সব যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল । তারা বিভিন্ন সময়ে সীমিত সাফল্য লাভ করেছিল এবং এ অবস্থা রোমীয়দের চূড়ান্ত আধিপত্য ও কর্তৃত্ব স্থাপন করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ।