বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের জবাব
আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) কারা এ ব্যাপারে
ইসলামের প্রথম যুগের মতৈক্যের বরখেলাফে কোনো কোনো মহল
থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে
।
অবশ্য তাদের বিভ্রান্তি
এক ধরনের নয়
,বরং বিভিন্ন ধরনের
।
এখানে আমরা তাদের কয়েকটি
ব্যাপক প্রচারিত বিভ্রান্তির জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করছি
।
তাদের একটি বিভ্রান্তিকর মত হচ্ছে এই যে
,রাসূলুল্লাহ্
(সা.)-এর আহলে বাইত হচ্ছেন কেবল তাঁর স্ত্রীগণ
-যা কথাটির
আভিধানিক অর্থের দাবী
।
তাদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর মত হচ্ছে এই
যে
,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইত হচ্ছেন মূলতঃ তাঁর স্ত্রীগণ
,তবে নবী করীম (সা.)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা
‘
আলা তাঁর
কন্যা
,জামাতা ও নাতিদেরকে এর অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন
।
তাদের এ দাবী যে ভিত্তিহীন তা আমরা ওপরে সুস্পষ্টভাবে
তুলে ধরেছি
-যা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে
,আহলে বাইতের শা
’
নে
নাযিলকৃত আয়াত্
-যা
“
আয়াতে তাতহীর
”
নামে মশহুর
-তাঁর
স্ত্রীদের বেলায় প্রযোজ্য নয়
।
সুতরাং তাঁরা এককভাবে বা হযরত
ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি
‘
আলাইহা) এবং হযরত আলী
,হযরত
ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর সাথে আহলে
বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন
।
তাদের সৃষ্ট আরেকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হচ্ছে এই যে
,ইসলামে রক্তধারার বিশেষ মর্যাদা নেই
।
এর ভিত্তিতে তারা প্রশ্ন
তুলেছে যে
,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বংধরদের মধ্যকার পাপাচারী
লোকদেরকেও আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) হিসেবে সম্মান
দিতে হবে কিনা
?
বলা বাহুল্য যে
,তাদের এ বিভ্রান্তি একটি অপযুক্তি (ফ্যালাসি)
মাত্র
।
কারণ
,নবুওয়াত্ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামতের
গুরুদায়িত্ব কেবল পবিত্র রক্তধারার মানুষের পক্ষেই বহন করা সম্ভব
এবং এ কারণে আল্লাহ্ তা
‘
আলা এ দায়িত্ব কেবল পবিত্র রক্তধারার
মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন
।
এ ব্যাপারে আমরা পরে আলোচনা
করেছি
।
আর রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধরদের মধ্যকার পাপাচারীদেরকে
সম্মান প্রদর্শনের প্রশ্নটি একটি অবান্তর প্রশ্ন
।
কারণ
,আলোচ্য ক্ষেত্রে
আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) কথাগুলো পারিভাষিক অর্থে
ব্যবহার করা হয়
,আভিধানিক অর্থে নয়
।
তাই কেউই রাসূলুল্লাহর
(সা.) বংশধরদের মধ্যকার পাপাচারীদেরকে আহলে বাইত ও আলে
মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন না
,বরং
‘
বিশেষভাবে
’
হযরত হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি
‘
আলাইহা) ও হযরত আলী
(আ.) এবং তাঁদের বংশে আগত এগারো জন ইমামকে এর অন্তর্ভুক্ত
বলে গণ্য করা হয়
,যদিও
‘
সম্প্রসারিত অর্থে
’
অনেকে রাসূলুল্লাহর
(সা.) বংশধরদের মধ্যকার সমস্ত নেককার ও বুযুর্গ ব্যক্তিদেরকে
আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করে
থাকেন
।
আর হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) কে প্রদত্ত আল্লাহ্ তা
‘
আলার
প্রতিশ্রুতি কেবল আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর ক্ষেত্রে
বিশেষ ও পারিভাষিক অর্থেই প্রযোজ্য
।
তাদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হচ্ছে এই যে
,আলে
মুহাম্মাদ্ (সা.) বলতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অন্যান্য শীর্ষস্থানীয়
ছ্বাহাবীও অন্তর্ভুক্ত
।
এমনকি কেউ কেউ এমনটিও দাবী করছে যে
,আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) বলতে গোটা উম্মাতে মুহাম্মাদী (সা.)কেই
বুঝানো হয়েছে
।
এ দু
’
টি সংজ্ঞার মধ্যে কোনোটিই
“
আল্
”
কথাটির
প্রচলিত সংজ্ঞার পর্যায়ভুক্ত নয় এবং আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর ক্ষেত্রে
কোনোটির প্রযোজ্যতার সপক্ষে কোনো অকাট্য দলীল নেই
,তবে
দ্বিতীয়টি নিয়ে আলোচনা অবান্তর
।
কারণ
,জ্ঞানী-মূর্খ ও নেককার-
বদকার নির্বিশেষে প্রচলিত সংজ্ঞার উম্মাতে মুহাম্মাদীর (সা.) সকলে
আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত এবং নামাযে আমরা তাঁদের প্রতি
দরূদ পাঠাবার জন্য আল্লাহ্ তা
‘
আলার কাছে আবেদন জানাই এমন
দাবী পাগল ছাড়া কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না
।
তবে প্রথমটি যদি আমরা যুক্তির খাতিরে মেনে নেই তো সে
ক্ষেত্রে আমরা এর প্রবক্তাদের কাছে সেই ব্যক্তিদের নামের তালিকা
চাইতে পারি যাদেরকে তারা আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে
দাবী করতে চাচ্ছে
।
অতঃপর তাঁদের আমল বিচার করে দেখতে হবে
যে
,আয়াতে তাতহীর তাঁদের বেলা প্রযোজ্য কিনা
।
তাঁদের কারো
আমলে আল্লাহ্ তা
‘
আলার বিধানের লঙ্ঘন পাওয়া গেলে [উদাহরণ
স্বরূপ
,শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে প্রমাণিত যেনাকারকে শাস্তিদান
থেকে বিরত থাকা
,কারো বৈধ সম্পদ বাযেয়াফ্ত করা
,কোরআনের
সুস্পষ্ট বিধানের বরখেলাফে আইন্ জারী করা
,কোরআনে ঘোষিত
যাকাতের হক্ব্ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা
,স্বজনপ্রীতির পরিচয় দেয়া
ইত্যাদি] নিঃসন্দেহে আয়াতে তাতহীর তাঁর বেলা প্রযোজ্য হবে না
।
আমরা তাঁদের সমালোচনার দফতর খুলে বসতে চাই না
,কিন্তু যে
মর্যাদা তাঁদের নয় সে মর্যাদা তাঁদেরকে দিতে চাইলে অবশ্যই
তাঁদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অধিকার মানতে হবে
।
কারণ
,তাঁরা
আল্লাহ্ তা
‘
আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নবী-রাসূল বা ইমাম এবং
মা
‘
ছুম্ নন যে
,তাঁদেরকে সমালোচনার উর্ধে গণ্য করে চোখ বুঁজে
আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নিতে হবে
।
প্রকৃত পক্ষে যারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বিবিগণকে ও
ছ্বাহাবীদেরকে তাঁর আহলে বাইত (আ.)-এর বা আল্-এর অন্তর্ভুক্ত
বলে দাবী করছে তাদের এ দাবীর সাথে সাধারণভাবে আহলে
সুন্নাতের আহলে বাইত সংক্রান্ত
‘
আক্বীদাহর সম্পর্ক নেই
।
কারণ
,আহলে সুন্নাতের মধ্যে নামাযের বাইরে বিভিন্নভাবে দরূদ পাঠ করতে
দেখা যায়
।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :
اللهم صل علی سیدنا و نبینا و شافعنا و مولانا محمد و علی آله و اصحابه و ازواجه اجمعین
.
-“
হে আল্লাহ্! আমাদের নেতা
,আমাদের নবী
,আমাদের শাফা
‘
আত্কারী ও আমাদের মাওলা মুহাম্মাদের প্রতি এবং
তাঁর আল্
,তাঁর ছ্বাহাবীগণ ও তাঁর স্ত্রীদের
-সকলের
-প্রতি দরূদ
প্রেরণ করো
।
”
আবার এভাবেও পড়া হয় :
اللهم صل علی سیدنا و نبینا و شافعنا و مولانا محمد. صل الله علیه و علی آله و اصحابه و ازواجه اجمعین
-“
হে আল্লাহ্! আমাদের
নেতা
,আমাদের নবী
,আমাদের শাফা
‘
আত্কারী ও আমাদের মাওলা
মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ প্রেরণ করো
;আল্লাহ্ তাঁর প্রতি এবং তাঁর
আল্
,তাঁর ছ্বাহাবীগণ ও তাঁর স্ত্রীদের
-সকলের
-প্রতি দরূদ প্রেরণ
করেন
।
”
যারা এ দরূদ পাঠ করেন তাঁরা নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর
ছ্বাহাবীগণকে ও তাঁর স্ত্রীগণকে তাঁর আল্-এর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না
বলেই তাঁদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেন
।
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর অপযুক্তি হচ্ছে
এই যে
,আয়াতে তাত্হীরে আল্লাহ্ তা
‘
আলা আহলে বাইতকে পবিত্র
করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন
,তাঁদেরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেন নি
অর্থাৎ তাঁদেরকে পবিত্র হতে বলেন নি
।
তারা এ ব্যাপারে ওযূ প্রসঙ্গ
উত্থাপন করে এবং বলে যে
,আল্লাহ্ তা
‘
আলা সে ক্ষেত্রে মু
’
মিনদেরকে
পবিত্র করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন যার মানে তিনি মু
’
মিনদেরকে পবিত্র
হতে বলেছেন
,তাদেরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেন নি
।
এদের এ অপযুক্তির প্রথম জবাব হচ্ছে এই যে
,ওযূর মাধ্যমে
পবিত্র করণের যে ইচ্ছা আল্লাহ্ তা
‘
আলা ব্যক্ত করেছেন তাতে আহলে
বাইতের সদস্যগণও শামিল রয়েছেন
,তাহলে আয়াতে তাত্হীরে
তাঁদেরকে পুনরায় পবিত্র করতে চাওয়ার মানে কী
?এ থেকে সুস্পষ্ট
যে
,এতদুভয় ক্ষেত্রে দুই ধরনের পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে :
সাধারণ ও বিশেষ
।
ওযূর ক্ষেত্রে পবিত্রতার মানে হচ্ছে
‘
ইবাদতের
পূর্বপ্রস্তুতি ও পূর্বশর্ত হিসেবে এক ধরনের শারীরিক-মানসিক
পবিত্রতা
।
আর আয়াতে তাত্হীরে
‘
পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা
’
র মানে
হচ্ছে সর্বাবস্থায় মানসিক
,আত্মিক ও চৈন্তিক পবিত্রতা
-যা গুনাহ্ ও
ভুল থেকে ফিরিয়ে রাখে
।
এদের অপযুক্তির দ্বিতীয় জবাব হচ্ছে এই যে
,আল্লাহ্
তা
‘
আলা জানেন যে
,আহলে বাইতের সদস্যগণ তাঁদের পবিত্র
রক্তধারার কারণে সর্বাবস্থায় মানসিক
,আত্মিক ও চৈন্তিক ক্ষেত্রে
‘
পরিপূর্ণ পবিত্রতা
’
র অধিকারী থাকা এবং গুনাহ্ ও ভুল থেকে মুক্ত
থাকার
‘
উপযুক্ততার অধিকারী
’
,অতঃপর তাঁরা চাইলে এরূপ থাকতে
পারেবন
।
কিন্তু অন্যরা এ জন্য
‘
উপযুক্ততার অধিকারী
’
নয়
,সুতরাং
তারা চেষ্টা করলে পবিত্রতার অধিকারী থাকতে ও বড় বড় গুনাহ্ থেকে
মুক্ত থাকতে পারবে বটে
,তবে যে কোনো সময়ই তাদের ভুল ও
বিচ্যুতির সম্ভাবনা রয়েছে
,তাই তাদের পক্ষে
‘
পরিপূর্ণ
’
পবিত্রতার
অধিকারী হওয়া সম্ভব হবে না
।
[আল্লাহ্ তা
‘
আলা যে
,তাঁর মনোনীত
নবী-রাসূল ও ইমামগণ এবং অন্যান্য খাছ্ব
বান্দাহর কাছ থেকে গুনাহে
লিপ্ত হবার ক্ষমতা কেড়ে নেন নি এবং কেন নেন নি সে সম্পর্কে পরে
আলোচনা করা হয়েছে এবং তাঁদের
‘
ইছ্বমাত্ বা পাপমুক্ততা এ
অর্থেই
।
]