রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ 0%

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইতিহাস

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 12749
ডাউনলোড: 2718

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 22 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12749 / ডাউনলোড: 2718
সাইজ সাইজ সাইজ
রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইসলামে আহলে বাইত - এর মর্যাদা

কোরআন মজীদে ও বিভিন্ন হাদীছে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত (আ.)-এর দ্বীনী মর্যাদা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু উল্লেখ রয়েছে । বিশেষ করে কোরআন মজীদের যে সব আয়াতে এ সম্বন্ধে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইখলাছের সাথে ও নিরপেক্ষভাবে অর্থগ্রহণ ও ব্যাখ্যা করা হলে সে সব আয়াত থেকেও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত-এর বিশেষ দ্বীনী মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে । তেমনি বিভিন্ন মুতাওয়াতির হাদীছেও এ সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে । কিন্তু এখানে আমরা কেবল সেই সব দলীলেরই আশ্রয় নেবো যার তাৎপর্যের ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই ।

এ পর্যায়ে প্রথমেই আমরা যা উল্লেখ করতে চাই তা হচ্ছে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসাকে মু মিনদের জন্য অপরিহার্য করেছেন ;এরশাদ হয়েছে :

) قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى (

(হে রাসূল!) বলুন ,আমি এজন্য (আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে) তোমাদের কাছে আমার ঘনিষ্ঠতমদের জন্য ভালোবাসা ব্যতীত কোনো বিনিময় চাই না । (সূরা আশ্- শূরা : 23)

এ আয়াতে মু মিনদের জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)- এর স্বজনদের ( قربی ) প্রতি ভালোবাসাকে অপরিহার্য করা হয়েছে । কারণ ,এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে ,এতে স্বজন ( قربی ) বলতে তাঁর আহলে বাইতকেই বুঝানো হয়েছে । আর এতে যদি ব্যাপকতর অর্থে তাঁর আত্মীয়-স্বজন বা বানী হাশেমকে বুঝানো হয়ে থাকে তাহলেও তাঁদের মধ্যে আহলে বাইত অগ্রগণ্য ।

ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্কাহর সূত্রে হযরত ফাতেমাহ্ যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং হযরত আলী ,হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার বিষয়বস্তুসমূহ মুতাওয়াতির পর্যায়ে উপনীত হয়েছে । অবশ্য তা সত্ত্বেও কেউ হয়তো সে সবের তাওয়াতুর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারেন ,কিন্তু এ সবের মধ্যে এমন কতোগুলো বিষয় রয়েছে যা বিতর্কের উর্ধে এবং যে সব ব্যাপারে সকলেই একমত । এ সব বিতর্কাতীত বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই যে ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর উম্মাতের মধ্যে হযরত আলী (আ.) ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী ।

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেন :

انا مدینة العلم و علی بابها

আমি জ্ঞানের নগরী ,আর আলী তার দরযা ।

এর মানে হচ্ছে ,কোরআন ও সুন্নাতে রাসূলের (সা.) তথা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ও পুরোপুরি নির্ভুল জ্ঞান কেবল হযরত আলী (আ.)-এর কাছেই ছিলো এবং ইসলামের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান পেতে হলে তাঁর দ্বারস্থ হওয়া অপরিহার্য ।

অন্যদিকে মুসলমানদের মধ্যে এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে এবং এ কারণে জুমু আহ্ নামাযের খোত্ববাহ্ সমূহে উল্লেখ করা হয় যে ,হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) বেহেশতে নারীদের নেত্রী ( سیدة نساء اهل الجنة ) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.) বেহেশতে যুবকদের নেতা ( سید شباب اهل الجنة )।

এ হচ্ছে এমন মর্যাদা যা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর কোনো বিবি বা অন্য কোনো ছ্বাহাবীর জন্য বর্ণিত হয় নি ।

অন্যদিকে ,অত্র পুস্তকের ভূমিকায় যেমন উল্লেখ করা হয়েছে ,যে কোনো নামাযের শেষ রাক্ আতে বসা অবস্থায় হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাথে তাঁর আহলে বাইত-এর প্রতি দরূদ প্রেরণ অপরিহার্য ,নচেৎ নামায ছ্বহীহ্ হবে না । বিশেষ করে হানাফী মায্হাবের অনুসারীরা এ দরূদটি এভাবে পড়ে থাকেন :

اللهم صلّ علی محمد و علی آل محمد کما صلّیت علی ابراهیم و علی آل ابراهیم انک حمید مجید. اللهم بارک علی محمد و علی آل محمد کما بارکت علی ابراهیم و علی آل ابراهیم انک حمید مجید.

হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত করো ঠিক যেভাবে শান্তি বর্ষিত করেছো ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের প্রতি ;অবশ্যই তুমি পরম প্রশংসিত মহামহিম । হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের প্রতি বরকত নাযিল করো ঠিক যেভাবে বরকত নাযিল করেছো ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের প্রতি ;অবশ্যই তুমি পরম প্রশংসিত মহামহিম ।

এ দরূদটি দরূদে ইব্রাহীমী নামে প্রসিদ্ধ । এ দরূদের মধ্যে বিরাট চিন্তার খোরাক রয়েছে । তা হচ্ছে ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর প্রতি শান্তি বর্ষিত করা ও বরকত নাযিলের জন্য আবেদনের সাথে সাথে তাঁর আহলে বাইত-এর প্রতি কেবল ছ্বালাত্ করা ও বরকত নাযিলের আবেদনই করা হয় নি ,বরং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর প্রতি ঠিক সেভাবে শান্তি বর্ষিত করা ও বরকত নাযিলের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন করা হয়েছে যেভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রতি আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত করা ও বরকত নাযিল করা হয়েছিলো । অন্যদিকে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত-এর প্রতি ঠিক সেভাবে শান্তি বর্ষিত করা ও বরকত নাযিলের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যেভাবে আলে ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রতি আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত করা ও বরকত নাযিল করা হয়েছিলো । এখানে সুস্পষ্ট ভাষায় হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইতকে আলে ইব্রাহীমের (আ.)-এর সমপর্যায়ের গণ্য করা হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ,আলে ইব্রাহীম (আ.) কা রা ছিলেন ?

এখানে আলে ইব্রাহীম্ কথাটি যে আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নি ,বরং পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সে ব্যাপারে বিতর্কের কোনোই অবকাশ নেই । কারণ ,এখানে আলে ইব্রাহীম বলতে নিঃশর্তভাবে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর পরিবার ,বা সন্তানগণ বা বংশধরগণকে বুঝানো হয় নি । কারণ ,তাঁর বংশধরগণের মধ্যকার নাফরমানদেরকে মুসলমানদের নামায-মধ্যস্থ দরূদে শরীক করা হবে এ প্রশই ওঠে না ।

আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজের পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)কে মানব জাতির জন্য ইমাম বা নেতা মনোনীত করণ সম্পর্কে এরশাদ করেন :

) وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ (

আর ইব্রাহীমকে যখন তার রব কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করলেন এবং সে তা (সাফল্যের সাথে) সমাপ্ত করলো (তাতে উত্তীর্ণ হলো) তখন তিনি (তার রব/ আল্লাহ্) বললেন : অবশ্যই আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য নেতা (ইমাম) মনোনীতকারী । (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 124)

তখন হযরত ইব্রাহীম (আ.) বললেন : وَمِنْ ذُرِّيَّتِي আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও কি (ইমাম নিয়োগ করা হবে) ? (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 124)

জবাবে আল্লাহ্ তা আলা বললেন :

(হ্যা ,অবশ্যই নিয়োগ করবো ,তবে) আমার এ অঙ্গীকার যালেমদের জন্য নয় । (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 124)

এ থেকে সুস্পষ্ট যে ,এখানে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে পরিপূর্ণ নেককার দের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার করা হয়েছে । আর আমরা জানি যে ,তাঁর বংশধরদের মধ্য থেকে বহু নবী-রাসূলের (আ.) আবির্ভাব হয়েছিলো এবং তাঁদের অনেকে নিজ নিজ যুগে দ্বীনী নেতৃত্বের (ইমাতের) অধিকারী ছিলেন । এছাড়াও তাঁদের মধ্যে অনেকে নবুওয়াত্ ছাড়াই ঐশী হেদায়াতপ্রাপ্ত ইমাম ছিলেন । অতএব ,এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই যে ,আমরা নামাযে যে দরূদ পাঠ করি তাতে যে আলে ইব্রাহীম -এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার দ্বারা মূলতঃ হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর বংশে আগত নবী-রাসূলগণ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামগণকে (আ.) কে বুঝানো হয়েছে । আর আলে মুহাম্মাদের (সা.) প্রতি আলে ইব্রাহীমের অনুরূপ দরূদ করার মাধ্যমে তাঁদের জন্য আলে ইব্রাহীমের সমতুল্য মর্যাদার কথা বলা হয়েছে । অর্থাৎ আলে মুহাম্মাদ (সা.)-এর তথা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত-এর সদস্যগণ নবী-রাসূল না হলেও তাঁদের মর্যাদা আলে ইব্রাহীমের তথা হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর বংশে আগত নবী-রাসূলগণের (আ.) সমতুল্য ।

এখানে স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে যে ,আলে মুহাম্মাদ (সা.)-এর তথা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত-এর সদস্যগণ যখন নবী-রাসূল নন তখন কীভাবে ও কী কারণে তাঁদের মর্যাদা হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর বংশে আগত নবী-রাসূলগণ (আ.)-এর মর্যাদার সমতুল্য হতে পারে ?

এ প্রশ্নের জবাব আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) কে নেতা বা ইমাম নিয়োগ এবং এরপর পরবর্তী নেতা বা ইমামগণ সম্বন্ধে তাঁর প্রশ্ন ও আল্লাহ্ তা আলার জবাবের মধ্যে নিহিত রয়েছে ।

আমরা সাধারণতঃ দ্বীনী মর্যাদার ক্ষেত্রে নবী-রাসূলের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা বলে মনে করে থাকি । কিন্তু হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) কে ইমাম নিয়োগের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে ,মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা হচ্ছে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নেতা বা ইমামের মর্যাদা । কারণ ,হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) দীর্ঘ বহু বছর যাবত রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেন এবং বহু কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ;কেবল এর পরেই আল্লাহ্ তা আলা তাঁকে নেতা বা ইমাম মনোনীত করেন । অতএব ,এতে সন্দেহ নেই যে , আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নেতা বা ইমামের মর্যাদা তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত নবী বা রাসূলের মর্যাদার ওপরে । 3 তাই হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) ও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) সহ খুব সীমিত সংখ্যক রাসূলই (আ.) আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে ইমাম মনোনীত হয়েছিলেন ।

আল্লাহ্ তা আলা হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর নেককার বংশধরদেরকে ইমামত প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দেন তদনুযায়ী হযরত

ইসহাক ও হযরত ইয়া ক্বূব (আ.) সহ অনেককে ইমামত প্রদান করেন । এরশাদ হয়েছে :

) وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ (

আর আমি তাকে (ইব্রাহীমকে) দান করলাম ইসহাককে ও অতিরিক্ত (দান করলাম) ইয়াকূবকে এবং (তাদের) প্রত্যেককেই আমি সৎকর্মশীল বানিয়েছি । আর তাদেরকে ইমাম বানিয়েছি যারা আমার আদেশে লোকদেরকে পরিচালিত করতো এবং তাদেরকে উত্তম কর্ম সম্পাদন ,নামায ক্বায়েম রাখা ও যাকাত প্রদানের বিষয়ে ওয়াহী করেছি ,আর তারা ছিলো আমার ইবাদতকারী (অনুগত বান্দাহ্) । (সূরা আল্-আম্বিয়া : 72-73)

উপরোদ্ধৃত আয়াত দু টির মধ্যে প্রথম আয়াতে দু জন নবীর কথা বলা হলেও দ্বিতীয় আয়াতে ইমাম বানানো প্রসঙ্গে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ,দ্বিবচন নয় । এ থেকে প্রমাণিত যে ,হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে কেবল উপরোক্ত দু জন নবী (আ.) ই ইমাম মনোনীত হন নি ,বরং দু জন নবীর নামোল্লেখ ও অন্য ইমামগণের নামোল্লেখ না করার ফলে এ সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে যে ,অন্য ইমামগণ নবী ছিলেন না ,তবে নবী না হলেও তাঁরা ঐশী ইলহাম-এর 4 ভিত্তিতে লোকদেরকে পরিচালনা করতেন ।

কেউ হয়তো উপরোক্ত আয়াত থেকে এরূপ অর্থ গ্রহণ করতে পারেন যে ,এতে স্বয়ং হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে শামিল করে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ,সুতরাং নবী নন আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত এমন কোনো ইমামের অস্তিত্ব ছিলো না । কিন্তু তাঁদের এ ধারণা ঠিক নয় । কারণ ,আল্লাহ্ তা আলা অন্যত্র হযরত মূসা (আ.)কে কিতাব প্রদান ও তাকে বানী ইসরাঈলের জন্য পথপ্রদর্শক বানানোর কথা উল্লেখ করার পর এরশাদ করেছেন :

) وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ (

আর যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা (বানী ইসরাঈল) ধৈর্য ধারণ করে এবং আমার আয়াত সমূহের প্রতি ইয়াক্বীন পোষণ করতো ততোক্ষণ পর্যন্ত আমার আদেশক্রমে পথপ্রদর্শনের জন্য আমি তাদের মধ্য থেকে (বহু ব্যক্তিকে) ইমাম বানিয়েছিলাম । (সূরা আস্-সাজদাহ : 24)

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে ,হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর বংশধরদের মধ্যকার নেককার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে ইমাম নিয়োগের বিষয়টি কেবল নবী-রাসূলগণের (আ.) মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ,আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূল ও ইমাম মনোনয়নের উদ্দেশ্য বিনা কারণে কেবল তাঁর কতক বান্দাহকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা নয় ,বরং এ সব পদ হচ্ছে কতক দায়িত্ব পালনের পদ ;দায়িত্বের প্রয়োজনে ব্যতীত আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে এ সব পদে কাউকে মনোনীতকরণ অকল্পনীয় । আর আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নবী-রাসূলগণের (আ.) দায়িত্ব ছিলো তাঁর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া । অন্যদিকে আল্লাহর মনোনীত নেতা বা ইমামের দায়িত্ব ঐশী হেদায়াত অনুযায়ী আল্লাহর বান্দাহদেরকে সঠিক পথ দেখানো ও সে পথে পরিচালিত করা ,আর যে সব নবী-রাসূল (আ.) একই সাথে ইমাম বা নেতা ছিলেন তাঁরা আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার সাথে সাথে এ দায়িত্বও পালন করেছেন ।

এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই যে ,আল্লাহ্ তা আলার পূর্ণাঙ্গ বাণী (কোরআন মজীদ) নাযিল করা ও তা সংরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর আর আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নতুন কোনো নবী বা রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা থাকে নি । কিন্তু আল্লাহ্ তা আলার বাণীর সঠিক তাৎপর্য গ্রহণ ও ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ এবং তদনুযায়ী আল্লাহর বান্দাহদেরকে পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা একইভাবে থেকে যায় । আর বলা বাহুল্য যে ,পাপমুক্ততা ও নির্ভুলতার নিশ্চয়তা বিহীন কোনো ব্যক্তির পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় । অতএব ,নবীর অবর্তমানে এ দায়িত্ব পালন করার জন্য আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নিষ্পাপ ও ভুলমুক্ত নেতা বা ইমাম মনোনীত হওয়া অপরিহার্য । নচেৎ বান্দাহদের জন্য আল্লাহ্ তা আলার হুজ্জাত্ পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয় ,ফলে বান্দাহ্ ইখলাছ্ব সহকারে সঠিক ফয়ছ্বালায় উপনীত হবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ভ্রান্তিতে নিপতিত হলে সে জন্য পাকড়াও-এর উপযোগী হবে না । আরো এগিয়ে বলতে হয় যে ,আল্লাহ্ তা আলা নবীর অবর্তমানে তাঁর বান্দাহদেরকে এরূপ একটি অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলে রাখবেন তিনি এ ধরনের দুর্বলতা থেকে প্রমুক্ত ।

এ প্রসঙ্গে আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে ,নবী-রাসূল নন এমন ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নেতা বা ইমাম নিয়োগের বিষয়টি যে কেবল হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওফাতের পরেই প্রাসঙ্গিক হয়েছে ,এর পূর্বে প্রাসঙ্গিক ছিলো না তা নয় -যা ইতিমধ্যেই আমরা কোরআন মজীদের আয়াত উল্লেখ করে প্রমাণ করেছি । বস্তুতঃ অতীতে বিভিন্ন নবী-রাসূলের (আ.) আবির্ভাবের মধ্যবর্তী অন্তর্বর্তী কালে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে এ ধরনের নেতা বা ইমাম নিয়োগ করা হয়েছে তা পুরোপুরি সুনিশ্চিত । আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন :

) وَنُرِيدُ أَنْ نَمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ (

আর আমি ইচ্ছা করি যে ,ধরণীর বুকে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে তাদের ওপর অনুগ্রহ করি এবং তাদেরকে নেতা (ইমাম) বানাই আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাই । (সূরা আল্- ক্বাছ্বাছ্ব : 5)

এ আয়াতে যে কেবল এমন নেতার কথা বলা হয়েছে যারা একই সাথে নবী-রাসূল ছিলেন তা নয় । বরং বুঝা যায় যে ,কোনো নবীর কাছে আগত হেদায়াত বিকৃত হওয়া ও নতুন করে হেদায়াত সহকারে নতুন নবীর আগমন ঘটার পূর্ববর্তী অন্তবর্তীকালে পূর্ববর্তী অবিকৃত হেদায়াত অনুযায়ী লোকদেরকে পরিচালনা করার জন্য আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলের গুণাবলী সম্পন্ন বিভিন্ন নেতা বা ইমাম প্রেরণ করা হয়েছিলো এবং উক্ত আয়াতে তাঁদের কথাই বলা হয়েছে ।

অন্যদিকে আয়াত সমূহের পূর্বাপর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী দৃশ্যতঃ এ আয়াতে বানী ইসরাঈলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার কথা বলা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলেও এ থেকে আল্লাহ্ তা আলার একটি স্থায়ী নীতির দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় যা কোনো স্থান ও কালের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ।

শুধু তা-ই নয় ,বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে ,আল্লাহ্ তা আলা এ আয়াতে বর্তমান ও ভবিষ্যতকাল ( مضارع ) বাচক ক্রিয়াপদ نرید (আমি ইচ্ছা করি) ব্যবহার করেছেন ,অতীত কাল বাচক ক্রিয়াপদ ( ارادت/ارادنا ) ব্যবহার করেন নি । এখানে কেবল বানী ইসরাঈলের বিষয়টি বুঝানো উদ্দেশ্য হলে অতীত কালের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করাই বিধেয় হতো । তার পরিবর্তে বর্তমান ও ভবিষ্যতকাল ( مضارع ) বাচক ক্রিয়াপদ ব্যবহার থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে ,উক্ত আয়াত নাযিলকালের পরবর্তীকালের জন্যও আল্লাহ্ তা আলার এ ইচ্ছা প্রযোজ্য ।

অবশ্য এখানে অতীত কালের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হলেও তার প্রয়োগ ভবিষ্যতের সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য হতো ,কারণ ,আল্লাহ্ তা আলা এ আয়াতে সুনর্দিষ্টভাবে বানী ইসরাঈলের কথা বলেন নি ,বরং ধরণীর বুকে দুর্বল করে রাখা লোকদেরকে ব্যবহার করেছেন -যা থেকে সুস্পষ্ট যে ,এটি একটি সাধারণ নীতি । তা সত্ত্বেও কারো পক্ষে হয়তো তাঁর এ ইচ্ছা কেবল বানী ইসরাঈলের জন্য ছিলো বলে মনে করা সম্ভব হতো ,কিন্তু বর্তমান ও ভবিষ্যত কাল বাচক ক্রিয়াপদ ব্যবহারের ফলে কোরআন নাযিলের সময় থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এর প্রযোজ্যতা অস্বীকার করার আর কোনো সুযোগই থাকছে না ।

অন্যদিকে যদিও অন্য অনেক ভাষার ন্যায় আরবী ভাষায়ও ক্ষেত্রবিশেষে অতীত কালের জন্য বর্তমান কালের ক্রিয়াপদ ব্যবহারেরও সুযোগ আছে ,তবে তাতে যদি এমন নিদর্শন না থাকে যে ,তার কার্যকরিতা কেবল অতীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ সে ক্ষেত্রে তার কার্যকরিতা অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত তিন কালেই পরিব্যাপ্ত হবে । আলোচ্য আয়াতের ক্ষেত্রেও তা-ই ।

কোরআন মজীদের উক্ত দলীল সমূহ এবং নামাযে পঠিত দরূদের (যা আমলের ক্ষেত্রে ইজমা প্রমাণ করে) বক্তব্যের আলোকে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওফাতের পরে তাঁর আহলে বাইত-এর আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামতের ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ থাকে না । আর এ থেকে গ্বাদীরে খুম্-এ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) যে ,হযরত আলী (আ.)কে উম্মাতের জন্য মাওলা বলে পরিচিত করিয়ে দেন তাতে মাওলা শব্দের তাৎপর্য যে নেতা ও শাসক তথা তাঁর পরে তাঁর খলীফাহ্ এতেও সন্দেহের অবকাশ নেই ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ,গ্বাদীরে খুম্ সংক্রান্ত হাদীছগুলো মূল বিষয়বস্তুর বিচারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাওয়াতুরের অধিকারী । এ সব হাদীছ প্রতিটি স্তরে বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে এবং সকল মাযহাব ও ফির্কাহর ধারাবাহিকতায় সংকলিত প্রায় সকল হাদীছ-গ্রন্থেই স্থানলাভ করেছে ।

গ্বাদীরে খুম্ সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদীছের বর্ণনায় কতক বিষয়ে সামান্য বিভিন্নতা থাকলেও কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে কোনোই মতপার্থক্য নেই । সংক্ষেপে তা হচ্ছে ,বিদায় হজ্বের পর হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) মক্কাহ্ ত্যাগ করে মদীনাহর উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে 18ই যিল্-হাজ্ব তারিখে মক্কার অদূরে গ্বাদীরে খুম্ নামক স্থানে উপনীত হওয়ার পরে প্রচণ্ড গরম সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গীদেরকে যাত্রাবিরতি করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং যে সব ছ্বাহাবী এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন ,আর যারা তখনো এসে পৌঁছেন নি তাঁদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করেন । তাঁর নির্দেশে কতগুলো উটের হাওদার গদী একত্র করে একটি মঞ্চের মতো বানানো হয় এবং সকলে এসে পৌঁছলে তিনি হযরত আলী (আ.) কে সাথে নিয়ে সে মঞ্চে আরোহণ করেন । অতঃপর ভূমিকাস্বরূপ একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ প্রদানের পর তিনি হযরত আলী (আ.)-এর হাত উঁচু করে তুলে ধরে বলেন :

من کنت مولاه فهذا علی مولاه

আমি যার মাওলা ,অতঃপর এই আলী তার মাওলা ।

হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) যে গ্বাদীরে খুমের সমাবেশে এ কথা বলেছিলেন এ ব্যাপারে কোনোই দ্বিমত নেই ,কিন্তু এ কথার তাৎপর্য সম্পর্কে দ্বিমত করা হয়েছে । অনেকে এখানে মাওলা (مولي )শব্দের অর্থ করেছেন বন্ধু পৃষ্ঠপোষক ;এর অন্যতম অর্থ শাসক হলেও তাঁরা তা গ্রহণ করেন নি । অবশ্য ব্যাপক অর্থবোধক এ শব্দটি কোরআন মজীদে বন্ধু পৃষ্ঠপোষক অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে । কিন্তু তিনটি কারণে এ ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয় ।

প্রথমতঃ কোরআন মজীদে মু মিনদেরকে পরস্পরের বন্ধু পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা আল্-মায়েদা : 55) ,ফলে স্বাভাবিকভাবেই হযরত আলী (আ.)ও মু মিনদের বন্ধু পৃষ্ঠপোষক । এমতাবস্থায় হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) কর্তৃক হযরত আলী (আ.) কে মু মিনদের বন্ধু পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো মানে হয় না । আর বলা বাহুল্য যে ,তিনি কোনো অর্থহীন কাজ করতে পারেন না ।

দ্বিতীয়তঃ কেউ কেউ যেমন দাবী করেন যে ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছ্বাহাবীর শা নে উৎসাহব্যঞ্জক ও প্রশংসাসূচক কথা বলতেন এবং হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে তাঁর এ উক্তিটিও তদ্রূপ । যদিও যথার্থতা ছাড়া কেবল উৎসাহ প্রদানের জন্য কোনো ভিত্তিহীন কথা বলা বা ভিত্তিহীন প্রশংসা করার মতো অভ্যাস থেকে নবী-রাসূলগণ (আ.) মুক্ত ছিলেন ,তথাপি যুক্তির খাতিরে তা সম্ভব মনে করলেও এ জন্য প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ছ্বাহাবীদেরকে সেখানে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা সহ যে আনুষ্ঠানিকতার আশ্রয় নেয়া হয়েছিলো এরূপ একটি মামূলী বিষয়ের জন্য তার আশ্রয় নেয়া এক ধরনের রসিকতার শামিল -আল্লাহর মনোনীত যে কোনো নবী- রাসূলই (আ.) যা থেকে মুক্ত ।

তৃতীয়তঃ বিচারবুদ্ধি ( আক্বল্)-এর দাবী অনুযায়ী নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা ও ওয়াহী নাযিল সমাপ্ত হওয়ার পরে মওজূদ ওয়াহীর সঠিক ব্যাখ্যা ও উম্মাতের পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নিষ্পাপ ও নির্ভুল ইমাম মনোনীত হওয়া প্রয়োজন অথচ অন্য কাউকে এ দায়িত্বের জন্য মনোনীত করা হয় নি ,এমতাবস্থায় গ্বাদীরে খুমে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর এ উক্তিতে উল্লিখিত মাওলা (مولی )শব্দ থেকে শাসক অর্থ গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই ।

এবার আমরা বিষয়টিকে ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থাৎ বাস্তবতার আলোকে দেখতে চাই । তা হচ্ছে ,আমরা যদি ধরে নেই যে ,নবুওয়াত্ ও রিসালাতের ধারাবাহিকতা সমাপ্তির পরে মুসলমানদের নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্বের জন্য আল্লাহ্ তা আলা কাউকে মনোনীত করে দেন নি ,বরং বিষয়টিকে মুসলিম উম্মাহর নির্বাচনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ,সে ক্ষেত্রে উম্মাহর জন্য কী ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অপরিহার্য ?

যেহেতু বিষয়টি কোনো আদর্শনিরপেক্ষ নিরেট পার্থিব বিষয়ের (যেমন : রাস্তাঘাট নির্মাণ ,বাজার বা কারখানা পরিচালনা ,গৃহের ডিজাইন করা ইত্যাদির) সাথে জড়িত নয় ,বরং দ্বীন ও শরী আহর বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সেহেতু ইখ্লাছের দাবী হচ্ছে এই যে ,দ্বীনী দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির ওপরে এ দায়িত্ব অর্পণ করা হবে । কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয় নি ।

দ্বীনী নেতৃত্বের জন্য সাধারণভাবে যে গুণাবলী অপরিহার্য এবং যে গুণাবলীর ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে : ইলম , আমল্ ও দূরদৃষ্টি । এ ক্ষেত্রে ইলম-এর অবস্থান সর্বাগ্রে ,কারণ ,যথাযথ ইলম-এর অধিকারী নন এমন ব্যক্তি ইখলাছ্ব ও তাক্বওয়া -র অধিকারী হলেও তাঁর ইখ্লাছ্ব তাঁকে দ্বীনী ও শর ঈ বিষয়াদিতে সঠিক ফয়ছ্বালা প্রদানের যোগ্যতার অধিকারী করবে না । অন্যদিকে যথাযথ ইলম ব্যতিরেকে কারো পক্ষে প্রকৃত অর্থে তাক্বওয়া -র অধিকারী হওয়া আদৌ সম্ভব নয় । কারণ ,যথাযথ ইলম-এর অধিকারী নন এমন ব্যক্তি ফরযকে মুস্তাহাব ,মুস্তাহাবকে ফরয ,মোবাহকে হারাম ও হারামকে মোবাহ্ গণ্য করে বসতে পারেন এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে বসতে পারেন । যেহেতু তাক্বওয়া -র মানে বিশেষ ধরনের দাড়ি ,বিশেষ কাটিং-এর পোশাক ,নফল ইবাদত ও তাসবীহ্-তাহলীল নয় ,বরং তাক্বওয়া -র মানে আল্লাহ্ তা আলার আদেশ-নিষেধকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা এবং কোনো ক্ষেত্রে কমতি-বাড়তি বা বাড়াবাড়ি না করা -যে জন্য যথাযথ ইলম থাকা অপরিহার্য । আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ (

নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দাহদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে । (সূরা আল্-ফাতির : 28)

আর ইলমের অধিকারী ব্যক্তির সাথে অন্যদের তুলনা হতে পারে না । আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ (

(হে রাসূল!) আপনি বলুন : যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে ? (সূরা আয-যুমার : 9)

অবশ্য কেবল প্রকৃত অর্থে ও যথাযথ জ্ঞানের অধিকারী হলেই কারো পক্ষে আল্লাহকে ভয় করা সম্ভব এবং এ আয়াতে জ্ঞানী (আলেম) বলতে এ ধরনের লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে ,আলেম হিসেবে পরিচিত যে কোনো লোককে নয় । অতএব ,সত্যিকারের আলেম হলে তিনি অবশ্যই যথাযথ আমলের তথা তাক্বওয়ার অধিকারী হবেন এবং ওপরে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে ,তাক্বওয়ার অধিকারী ব্যক্তি দ্বীন ও শারী আহর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা আলার নির্ধারণের চেয়ে কমতি-বাড়তি করতে পারেন না তথা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে পারেন না । সুতরাং তিনি হবেন চরম পন্থা (ইফরাত্) ও শিথিল পন্থা (তাফরীত্) থেকে মুক্ত তথা ভারসাম্যের (আদ্ল্-এর) অধিকারী মধ্যম পন্থার অনুসারী (উম্মাতে ওয়াসাত্ব) । যেহেতু আল্লাহ্ তা আলা ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন :

) لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ (

- তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অগ্রবর্তী হয়ো না । (সূরা আল্-হুজুরাত্ : 1) সেহেতু তিনি নিজস্ব বিবেচনায় ইসলামের স্বার্থচিন্তা থেকেও আল্লাহ্ ও রাসূলের (সা.) নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করবেন না ।

তৃতীয়তঃ দ্বীনী নেতৃত্বের জন্য এমন ব্যক্তিকে বেছে নেয়া অপরিহার্য যার মধ্যে উপরোক্ত দু টি গুণ ছাড়াও দূরদৃষ্টি ( بصیرت ) রয়েছে যাতে তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে উম্মাহকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে পারেন । আমরা নবী-রাসূলগণের (আ.) জীবনেও -যাদের সকলেই ছিলেন গুনাহ্ ও ভুলের উর্ধে -এর দৃষ্টান্ত দেখতে পাই । তাঁরা পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মনীতি গ্রহণ করেন ।

তার চেয়েও বড় কথা ,এককভাবে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবনে পরিস্থিতি বিবেচনায় যথোপযুক্ত বিভিন্ন কর্মনীতি অনুসরণের অনেকগুলো দৃষ্টান্ত রয়েছে । যেমন : তিনি নবুওয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ লাভের পর প্রথম তিন বছর অত্যন্ত গোপনে বেছে বেছে সুনির্দিষ্ট ও স্বল্পসংখ্যক লোকের কাছে তাঁর দাওয়াত পেশ করেন । এরপর তিনি মক্কায় আরো দশ বছর অহিংস ও প্রতিরোধবিহীন কর্মনীতি অনুসরণ করে প্রচারতৎপরতা চালান ;এ সময়ের মধ্যে তিনি মুসলমানদের কতককে হিজরতে পাঠান এবং কিছুদিন অবরুদ্ধ জীবনও কাটান । এরপর তিনি হিজরত করেন ,উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে মদীনায় হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে হুকুমতে ইয়াহূদীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানের সুযোগ দিয়ে ঘোষণাপত্র জারী করেন । মদীনার জীবনে তিনি যুদ্ধ করেন ,সন্ধি করেন ও পত্রযোগাযোগ করেন তথা কূটনৈতিক তৎপরতা চালান । তিনি এমন সব শর্তাবলী সহকারে হুদায়বীয়ার সন্ধি সম্পাদন করেন যা দৃশ্যতঃ তাঁর ও ইসলামের জন্য অপমানজনক ছিলো যে কারণে কতক ছ্বাহাবী এতে আপত্তি করেছিলেন ,কিন্তু এ সন্ধি ইসলামের জন্য বিরাট কল্যাণ বয়ে এনেছিলো -সন্ধি সম্পাদিত হবার পর পরই আল্লাহ্ তা আলা আয়াত নাযিল করে এ সন্ধিকে সুস্পষ্ট বিজয় বলে আখ্যায়িত করে যে কল্যাণ সম্বন্ধে অগ্রিম সুসংবাদ প্রদান করেন ।

বস্তুতঃ পাপ ও ভুল থেকে মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা নেই এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষে এতো বিচিত্র ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথ কর্মনীতি গ্রহণ করা সম্ভব নয় ।

মোদ্দা কথা ,আমরা যদি ধরে নেই যে ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর অবর্তমানে মুসলমানদের পরিচালনা ,নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের জন্য আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে কাউকে মনোনীত করে দেয়া হয় নি ,তথাপি ইখলাছের দাবী অনুযায়ী মু মিনদের কর্তব্য হচ্ছে এ ধরনের গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তির ওপরে এ দায়িত্ব অর্পণ করা । অতএব ,এ থেকে সুস্পষ্ট যে ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওফাতের পরে মুসলমানদের জন্য হযরত আলী (আ.)-এর ওপর নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করা অপরিহার্য ছিলো । কিন্তু তা হয় নি এবং না হওয়ার ফলে ইসলামী উম্মাহর মধ্যে যে বিভেদ -অনৈক্য ও বিভ্রান্তির ধারাবাহিকতার সূচনা হয় তা কারোই অজানা নয় ।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা জরূরী বলে মনে করি ।

আমাদের অনেকের মধ্যে মুসলমানদের ইতিহাস ,বিশেষ করে ছ্বাহাবীগণের ব্যাপারে এমন একটি প্রবণতা আছে যা বিচারবুদ্ধি ( আক্বল) ও কোরআন মজীদ সমর্থন করে না । তা হচ্ছে ,ঢালাওভাব্ ছ্বাহাবীগণের প্রতি অন্ধ ভক্তি পোষণ করা -যার ফলে তাঁদের অনেকের ভুলত্রুটি আমাদের মধ্যে অব্যাহত থেকে যাচ্ছে । মুসলমানদের অকাট্য ঐতিহাসিক বর্ণনা ও ছ্বহীহ্ হিসেবে চিহ্নিত বহু হাদীছ থেকে যেখানে তাঁদের অনেকের বহু ভুল-ত্রুটির কথা জানা যায় ,এমনকি জানা যায় যে ,স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) তাঁদের কতককে বিভিন্ন ধরনের কঠিন অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছেন এবং তাঁর পরে তাঁরা পরস্পর যুদ্ধ করেছেন ও পরস্পরকে হত্যা করেছেন ,তা সত্ত্বেও ঢালাওভাবে ছ্বাহাবীদের সকলকে নক্ষত্রতুল্য ,অনুসরণীয় ও সমালোচনার উর্ধে গণ্য করা হচ্ছে এবং সারা দুনিয়া যে বিষয়গুলো জানে তা থেকে স্বয়ং মুসলমানদের না-ওয়াক্বিফ্ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে । যারা তা করছেন তাঁরা ভেবে দেখতে প্রস্তুত নন যে ,ছ্বাহাবীদের সকলের নক্ষত্রতুল্য হওয়া সংক্রান্ত হাদীছটি হাদীছ-বর্ণনার সুদীর্ঘ পরম্পরার মধ্যে কোনো এক পর্যায়ে মিথ্যা রচিত হয়ে থাকতে পারে অথবা হয়তো হাদীছ সঠিক কিন্তু ছ্বাহাবী র যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা ঠিক নয় ,অর্থাৎ কেবল ঈমানের ঘোষণা সহকারে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)কে দেখাই ছ্বাহাবী হওয়া প্রমাণ করে না ,বরং শারীরিক ও আত্মিক উভয় দিক থেকে তাঁর সাহচর্যই ( معیت جسمانی و روحانی ) কারো ছ্বাহাবী হওয়া প্রমাণ করে ।

এ অন্ধ ভক্তির কারণেই অনেককে ছ্বাহাবীগণের শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে চার খলীফাহকে তাঁদের পর্যায়ক্রম অনুযায়ী সকলের উর্ধে স্থান দিতে দেখা যায় । এটা কতোই না ভুল নীতি যে ,যেহেতু তাঁরা চারজন পর্যায়ক্রমে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেহেতু তাঁদেরকে পর্যায়ক্রমে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে! ঘটনাক্রমে যদি তাঁদের পরিবর্তে অন্য ছ্বাহাবীদের মধ্য থেকে কয়েক জন ছ্বাহাবী খলীফাহ্ হতেন তাহলে এরা তাঁদেরকেই পর্যায়ক্রমে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিতেন । উদাহরণস্বরূপ ,ছয় সদস্যের নির্বাচনী কমিটির মধ্য থেকে যদি অন্য কেউ তৃতীয় খলীফাহ্ হতেন তাহলে তাঁরা তাঁকেই তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ছ্বাহাবীর মর্যাদা দিতেন । (!!)

অথচ গুণাবলীর বিচারে অনস্বীকার্য সত্য হলো এই যে ,ছ্বাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী (আ.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ । বিশেষ করে তিনি সাবালেগ হওয়ার তথা শিরক ও গুনাহ্ প্রযোজ্য হওয়ার বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই ইসলামের ছায়াতলে স্থানলাভ করেন এবং মুহূর্তের তরেও শিরকী জীবন যাপন করেন নি ।

সন্দেহ নেই যে ,ইসলাম গ্রহণ অতীতের শিরক ও গুনাহকে মুছে দেয় এবং ব্যক্তি আর সে জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না । কিন্তু এ সত্ত্বেও এরূপ ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তি জীবনে কখনো শিরক বা অন্য কোনো গুনাহে লিপ্ত হন নি এ দুই ব্যক্তি কখনো এক হতে পারেন না ,ঠিক যেভাবে একটি নতুন কাগজে ছবি আঁকা হলে এবং একই ছবি একটি ছবিযুক্ত কাগজের ছবি মুছে তার ওপরে আঁকা হলে দু টি ছবি গুণের দিক থেকে অভিন্ন হতে পারে না ।

এমনকি এ প্রশ্নটি বাদ দিলেও এবং তাক্বওয়া ও বাছ্বীরাতের দৃষ্টিতে কে অগ্রগণ্য সে প্রশ্নও পাশে সরিয়ে রাখলে যেহেতু সর্বসম্মত মত অনুযায়ী ইলমের ক্ষেত্রে ছ্বাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী (আ.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহ্ তা আলা কোরআন মজীদে আলেমের যে মর্যাদা বর্ণনা করেছেন তার ভিত্তিতে তিনি যে ছ্বাহাবীগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন তা অস্বীকার করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয় । অতঃপর ,কেবল এর ভিত্তিতে ক্রমবিন্যাস করা হলে (এবং আহলে বাইতের অপর ব্যক্তিত্ববর্গের -যারা ছ্বাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ,তাঁদের বিষয়টি বিবেচনায় না নিলেও) শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে হযরত আলী (আ.)- এর মর্যাদা সবার ওপরে ,অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মর্যাদা ; (তর্কের খাতিরে মেনে নিলে) অপর তিন খলীফাহর মর্যাদা বড় জোর তৃতীয় থেকে পঞ্চম হতে পারে ।

অনুরূপভাবে ,অর্থাৎ আমরা যদি ধরে নেই যে ,আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পরে কাউকে নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের জন্য মনোনীত করেন নি ,তাহলেও সকল বিচারে যে হযরত আলী (আ.)কে এবং তাঁর পরে যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)কে খেলাফতে অধিষ্ঠিত করা অপরিহার্য ছিলো সে ব্যাপারে দ্বিমতের কোনোই অবকাশ নেই । এমনকি যারা চার খলীফাহর খেলাফত্কেই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে গণ্য করেন তাঁরাও হযরত আলী (আ.)-এর পরে যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর খেলাফতের অধিকারকে স্বীকার করেন ।