রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ 16%

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইতিহাস

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 22 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14933 / ডাউনলোড: 3929
সাইজ সাইজ সাইজ
রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

1

আদর্শিক ও বংশগত উত্তরাধিকারের অভিন্নতা প্রসঙ্গে

এমনও কেউ কেউ আছেন যারা আহলে বাইতের নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের অধিকারকে অস্বীকার করার লক্ষ্যে যুক্তি উপস্থাপন করেন যে ,ইসলামে বংশগত শ্রেষ্ঠত্বের তথা বংশগত নেতৃত্ব ও শাসন- কর্তৃত্বের কোনো স্থান নেই । কেউ কেউ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ ব্যাপারে কঠোর ভাষা প্রয়োগ করে থাকেন এবং আহলে বাইতের নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের অধিকার প্রত্যাখ্যানের লক্ষ্যে এ মতকে কটাক্ষ করে রাজতন্ত্রের সাথে তুলনা করে বলেন ,ইসলামে রাজতন্ত্রের স্থান নেই । আর এতে কিছু লোকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় । তাই এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা অপরিহার্য ।

ইসলামে যে বংশগত শ্রেষ্ঠত্বের তথা বংশগত নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের এবং রাজতন্ত্রের স্থান নেই ,এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই । কিন্তু আহলে বাইতের দ্বীনী নেতৃত্বের সাথে এর কোনোই সম্পর্ক নেই । কারণ ,যাদেরকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা করা হয়েছে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাথে তাঁদের বংশগত ও আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে নয় ,বরং তাঁদের গুণাবলীর কারণে । অতীতের নবী-রাসূলগণের (আ.) ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ তা আলার একই নীতি কার্যকর ছিলো ।

অতীতের নবী-রাসূলগণ (আ.) নবী-রাসূলগণের (আ.) বংশধারায়ই আগমন করেন ,কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় এই যে ,কেবল নবী- রাসূলগণের (আ.) বংশধর হওয়ার কারণেই কাউকে নবুওয়াত্ প্রদান করা হয় নি এবং নবী-রাসূলগণের (আ.) বংশধরদের সকলকেই নবী- রাসূল মনোনীত করা হয় নি ।

আল্লাহ্ তা আলা নবী-রাসূলগণের (আ.) মনোনয়ন সম্বন্ধে এরশাদ করেন :

) إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِنْ بَعْضٍ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (

অবশ্যই আল্লাহ্ জগতবাসীদের ওপরে আদম ,নূহ্ ,আলে ইব্রাহীম্ ও আলে ইমরান-কে নির্বাচিত করেছেন ;তাদের কতক অপর কতকের বংশধর । (সূরা আলে ইমরান : ৩৩-৩৪)

ইমামত বা দ্বীনী নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের বিষয়টিও অনুরূপ । আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)কে ইমাম নিয়োগের কথা জানানো হলে ইব্রাহীম্ (আ.) এ অঙ্গীকার তাঁর বংশধরদের বেলায়ও প্রযোজ্য কিনা জানতে চান ,তখন আল্লাহ্ তা আলা যে জবাব দেন -যা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে -তা থেকে এটি প্রমাণিত হয় ।

আল্লাহ্ তা আলার ফয়ছ্বালার যথার্থতা সম্বন্ধে কারো মনে কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্বের উদ্রেক হলে তা সুস্পষ্টই ঈমানের পরিপন্থী । তবে এর যথার্থতার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা সহকারে বাস্তবতার আলোকে এর কারণ জানার চেষ্টা করা দূষণীয় নয় ,বরং তা ঈমান মযবুত হবার কারণ হতে পারে ।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি যে ,নবুওয়াত-রিসালত ও দ্বীনী ইমামতের দায়িত্ব পালনের জন্য পাপ ও ভুলের উর্ধে থাকার নিশ্চয়তা থাকা অপরিহার্য । আর এ নিশ্চয়তার জন্য রক্তধারার পরিপূর্ণ পবিত্রতাও অপরিহার্য ।

অবশ্য পবিত্র রক্তধারার অধস্তন বংশধরদের মধ্যে পাপ ও অপবিত্রতা প্রবেশ করতে পারে ,কিন্তু পাপ ও অপবিত্রতার অধিকারী কোনো ব্যক্তির পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে এ থেকে মুক্ত থাকা অসম্ভব না হলেও তার নিশ্চয়তা থাকে না এবং বাস্তবে এ ধরনের কোনো ব্যক্তির মনস্তাত্বিক গঠন সর্বস্তরে পবিত্রতার অধিকারী রক্তধারায় আগত নিষ্পাপ ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে না । তাই বিচারবুদ্ধির দাবী হচ্ছে এই যে ,আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিলক্ষ্যের চূড়ান্ত বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা বিধানের স্বার্থে তিনি সৃষ্টিপরিকল্পনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ই এর মৌলিক কাঠামো তথা যাদেরকে নবী-রাসূল ও নিষ্পাপ দ্বীনী ইমাম হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করবেন তাঁদেরকে সুনির্দিষ্ট করে রাখবেন ,আর সে ক্ষেত্রে তাঁদেরকে নিষ্পাপ ও পবিত্র রক্তধারার মধ্যেই নির্ধারণ করে রাখবেন এটাই স্বাভাবিক ;যাদের পাপমুক্ততা ও ভুলের উর্ধে হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত তাদের মধ্য থেকে নয় ।

অধিকতর বাস্তব সত্য এই যে , আল্লাহ্ তা আলা তাঁর নবী - রাসূল ও নিষ্পাপ দ্বীনী ইমাম সহ যে সব খাছ্ব বান্দাহকে সৃষ্টি করার বিষয়টি তাঁর সৃষ্টিপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৃষ্টির শুরুতে নির্ধারণ করে রাখেন তাঁরা ব্যতীত অন্য সকলের দুনিয়ার বুকে আগমনের বিষয়টি ছিলো এজমালী এবং আল্লাহ্ তা আলার নির্ধারিত কারণ ও ফলশ্রুতি (Cause and Effect-علت و معلول )বিধির ওপর নির্ভরশীল , সুনির্দিষ্ট নয়

এর মানে হচ্ছে , আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিপরিকল্পনা অনুযায়ী হযরত আদম ( .)- এর বংশে হাজার হাজার কোটি মানুষ আগমনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও আপনার - আমার মতো লোকদের আগমন নির্ধারিত ছিলো না , বরং কারণ ও ফলশ্রুতি বিধির আওতায় আপনার - আমার আগমন অপরিহার্য হয়ে ওঠার কারণেই আপনার - আমার মতো লোকদের আগমন ঘটে অর্থাৎ আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিপরিকল্পনায় নবী - রাসূলগণ , নিষ্পাপ দ্বীনী ইমামগণ ও আরো কতক খাছ্ব বান্দাহর [ যেমন : হযরত মারইয়াম ( .) হযরত ফাতেমাহ্ ( সা . .)] অন্তর্ভুক্তি ছিলো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ( Proper Noun) হিসেবে এবং অন্য সকলের অন্তর্ভুক্তি ছিলো কেবল মানুষ (Comon Noun) হিসেবে

রক্তধারার পবিত্রতা : একটি বিভ্রান্তির নিরসন

ইতিপুর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে ,কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে (সূরা আলে ইমরান : ৩৩-৩৪) নবী-রাসূলগণ (আ.) ذُرِّیَّةً بعضها من بعضٍ (কতক অপর কতকের বংশধর) । এ আয়াতাংশ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে ,কোনো নবী-রাসূলের (আ.) (তেমনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত যে কোনো নিষ্পাপ ইমামের) পূর্বতন রক্তধারায় কখনোই শিরক ও গুনাহের সংমিশ্রণ ঘটে নি । যদিও

ذُرِّیَّةً بعضها من بعضٍ বলতে কেবল একে অপরের অব্যবহিত বংশধরই বুঝায় না ,বরং মধ্যবর্তী স্তরে এক বা একাধিক অ-নবী সহ পরবর্তী বংশধরও বুঝায় ,কিন্তু এ মধ্যবর্তী স্তরগুলোতে যদি শিরক ও গুনাহের সংমিশ্রণ ঘটে তাহলে পরবর্তী স্তরের নবীকে (এবং সেই সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত নবীর গুণাবলী সম্পন্ন নিষ্পাপ ইমামকে) পূর্ববর্তী নবীর বংশধর বুঝাতে

ذُرِّیَّةً بعضها من بعضٍ -এর উল্লেখ অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায় । কারণ ,সে ক্ষেত্রে কথাটি দাঁড়ায় আল্লাহর নবী হযরত আদম (আ.)-এর বংশধর হিসেবে নমরূদ ও ফিরআউন সহ সমস্ত মানুষকে নবীর বংশধর বলে উল্লেখ করার অনুরূপ - যার উল্লেখ অর্থহীন বৈ নয় । আর আল্লাহ্ তা ‘ আলা যে কোনো ধরনের অর্থহীন কথা ও কাজ থেকে প্রমুক্ত । অতএব ,সন্দেহ নেই যে ,এটি আল্লাহ্ তা ‘ আলার একটি নীতি যে ,তিনি যে কোনো নবী- রাসূলকেই (এবং তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত নবীর গুণাবলী সম্পন্ন নিষ্পাপ ইমামকে) এমন রক্তধারায় পাঠিয়েছেন যাতে কখনোই শিরক বা গুনাহের সংমিশ্রণ ঘটে নি ।

কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর পিতৃপরিচয় সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার কারণে অনেকেই এটিকে আল্লাহ্ তা ‘ আলার একটি নীতি হিসেবে গণ্য করতে প্রস্তুত নন ।

যদিও এ বিষয়টি নবী-রাসূলগণের (আ.) পাপমুক্ততা ( عصمة الانبیاء ) সম্পর্কিত আলোচনায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা সর্বোত্তম এবং অত্র গ্রন্থকারের রচনাধীন গ্রন্থ নবী-রাসূলগণের (আ.) পাপমুক্ততা-য় এ সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ,তবে আলোচ্য পুস্তকের বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক বিধায় এখানেও আমরা সংক্ষেপে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করছি ।

কোরআন মজীদের সূরা আল্-আন্আমের ৭৪ নং আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কর্তৃক আযর ও তার সম্প্রদায়ের মূর্তি পূজার সমালোচনার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ابیه آزر (তার আব্ ” আযার) উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ থেকেই আযর-কে হযরত ইব্রাহীম্ (আ.)-এর জন্মদাতা পিতা ’ বলে গণ্য করা হয়েছে । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিতরূপে ধরে নেয়া সম্ভব নয় যে ,আযর তাঁর জন্মদাতা পিতা ছিলো । কারণ ,আরবী ভাষায় আব্ ” (বাক্যমধ্যে ভূমিকাভেদে ابو/ابی/ابا ) শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক যা দ্বারা জন্মদাতা পিতা ছাড়াও দাদা ,চাচা ,পালক পিতা ও বিপিতাকে এবং দাদার পূর্ববর্তী যে কোনো পূর্বপুরুষকেও বুঝানো হয় । কিন্তু শুধু জন্মদাতা পিতা বুঝানো উদ্দেশ্য হলে ওয়ালেদ ” (ولاد )বলা হয় ।

এমতাবস্থায় কয়েকটি কারণে উক্ত আয়াতে আযরকে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর জন্মদাতা পিতা বুঝানো হয়েছে বলে মনে করা যায় না । তা হচ্ছে :

১) আল্লাহ্ তা ‘ আলা জানতেন যে ,এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে ,এমতাবস্থায় জন্মদাতা পিতা বুঝানো উদ্দেশ্য হলে ابیه না বলে والده বললে বিভ্রান্তির কোনোই অবকাশ থাকতো না । অথবা শুধু ابیه বলা হতো ,আযরের নামোল্লেখ করার প্রয়োজন ছিলো না । কারণ ,যেহেতু শব্দটির প্রথম অর্থ জন্মদাতা পিতা ’ সেহেতু এর সাথে অন্য অর্থজ্ঞাপক নিদর্শন না থাকলে এ থেকে জন্মদাতা পিতা ’ ছাড়া অন্য অর্থ গ্রহণের কোনোই কারণ থাকতো না । এমতাবস্থায় নিদর্শন জুড়ে দেয়া অর্থাৎ আযরের নামোল্লেখ থেকে সুস্পষ্ট যে ,এখানে শব্দটিকে এর প্রথম অর্থে ব্যবহার করা হয় নি ,বরং বুঝানো হয়েছে যে ,এখানে ابیه বলতে তাঁর জন্মদাতাকে বুঝানো হয় নি ,বরং আযরকে (যে সম্ভবতঃ তাঁর পালক পিতা ছিলো) বুঝানো হয়েছে ।

২) বিদ্যমান তাওরাতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর জন্মদাতা পিতার নাম তেরহ্ ’ বা তারেহ্ ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এমতাবস্থায় কোরআন মজীদে তাঁর জন্মদাতা পিতার নাম আযর ” বলে উল্লেখ করা হলে তৎকালীন ইয়াহূদী ও খৃস্টান পণ্ডিতরা এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানাতো ও এর ভিত্তিতে দাবী করতো যে ,কোরআন আল্লাহর কালাম নয় বলেই এতে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে তারা ব্যাপক প্রচার চালাতো । কিন্তু এ ধরনের প্রতিবাদ ও দাবীর কথা জানা যায় না । এ থেকে বুঝা যায় যে ,তৎকালীন ইয়াহূদী ও খৃস্টান পণ্ডিতরা ابیها থেকে তার জন্মদাতা পিতা ’ অর্থ গ্রহণ করে নি ।

৩) হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর নম্রহৃদয় বৈশিষ্ট্যের কারণে আযরের জন্য আল্লাহ্ তা ‘ আলার কাছে মাগফেরাত কামনা করতেন ,কিন্তু তাঁর কাছে যখন অকাট্যভাবে সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে ,সে আল্লাহর শত্রু তখন তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন (এবং তার জন্য মাগফেরাত কামনা বন্ধ করে দিলেন) । (সূরা আত্-তাওবাহ্ : ১১৪) ।

এটা কখনকার ঘটনা কোরআন মজীদে তা উল্লেখ করা হয় নি (উল্লেখের প্রয়োজনও ছিলো না) ,তবে এটা নিঃসন্দেহে ধরে নেয়া যায় যে ,হযরত ইব্রাহীম (আ.) অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে বেরিয়ে এসে ফিলিস্তিনে হিজরতের আগেই তাঁর কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে ,আযরের ঈমান আনার আর কোনোই সম্ভাবনা নেই । এ কারণে তিনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার জন্য মাগফেরাত কামনা বন্ধ করে দেন (সূরা আত্-তাওবাহ্ : ১১৪) । কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে ,হিজরতের বহু বছর পরে তরুণ হযরত ইসমাঈল (আ.) কে মক্কায় আল্লাহর ঘরের পাশে রেখে আসার (সূরা ইব্রাহীম : ৩৭) সময় - যার আগেই হযরত ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয়েছে ও তিনি [ইব্রাহীম (আ.)] বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন (সূরা ইব্রাহীম : ৩৯) (যখন তাঁর বয়স একশ ’ বছর পেরিয়ে গেছে) ,তখন তিনি তাঁর পিতা-মাতার ( والدی ) মাগফেরাতের জন্য আল্লাহ্ তা ‘ আলার কাছে দো ‘ আ করেন (সূরা ইব্রাহীম্ : ৪১) । এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে ,আযর তাঁর জন্মদাতা পিতা ছিলো না ।

এ উপসংহার থেকে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে ,যেহেতু হযরত আলী (আ.)-এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ,উম্মাতে মুহাম্মাদীর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি হওয়ার ,দ্বীনী নেতৃত্ব ও শাসন-কর্তৃত্বের জন্য উপযুক্ততম ব্যক্তি হওয়ার এবং নবী না হয়েও পাপমুক্ততা সহ নবী-রাসূলগণের (আ.) গুণাবলী সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত সেহেতু তাঁর পিতৃপুরুষদের রক্তধারায় কখনো শিরক ও গুনাহের সংমিশ্রণ ঘটে নি । অতএব ,তাঁর পিতা হযরত আবু তালিবের মুশরিক হওয়ার ও ইসলাম গ্রহণ না করার দাবী চরম রাজনৈতিক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই ছিলো না । বরং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ্ ও দাদা আবদুল মুত্তালিবের ন্যায় তাঁর চাচা ও হযরত আলী (আ.)-এর পিতা হযরত আবু তালিব-ও শিরক ও গুনাহ্ থেকে মুক্ত তাওহীদবাদী ছিলেন ,আর নবী করীম (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের সূচনাতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । এ কারণেই তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নবী করীম (সা.)কে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করেছিলেন ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে ,হযরত আবু তালিব কর্তৃক নবী করীম (সা.) কে আশ্রয় ,পৃষ্ঠপোষকতা ও সর্বাত্মক সাহায্য- সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসের একটি বিতর্কাতীত বিষয় যে ব্যাপারে ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্কাহর মধ্যে ইজমা রয়েছে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে ,এটা কি সম্ভব যে ,নবীকুল শিরোমণি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ লাভের পরেও বছরের পর বছর ধরে একজন মুশরিকের আশ্রয়ে থাকবেন এবং তার কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করবেন ?এরূপ হলে তা কি ইসলামের জন্য একটি লজ্জাজনক ও অপমানজনক বিষয় হতো না ?এমনকি স্বয়ং আল্লাহ্ তা ‘ আলার জন্যও কি তাঁর শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূলকে এরূপ লজ্জাজনক ও অপমানজনক অবস্থায় রেখে দেয়া সম্ভব ?অতএব ,হযরত আবু তালিব মুশরিক ছিলেন বলে যে দাবী করা হয়েছে তা যে স্রেফ রাজনৈতিক মিথ্যাচার ছিলো এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই ।

পাপমুক্ত তা ও এখতিয়ার-এর সমন্বয় কীভাবে

অনেকের ধারণা যে ,নবী - রাসূলগণ এবং আল্লাহ্ তা আলার মনোনীত ইমামগণ ও অন্যান্য খাছ্ব বান্দাহর পাপমুক্ততা ( عصمة )- এর মানে এই যে ,তাঁদের মধ্যে গুনাহ্ করার ক্ষমতাই দেয়া হয় নি । কিন্তু এটা ভুল ধারণা । কারণ ,তাঁদের মধ্যে গুনাহ্ করার ক্ষমতা না থাকলে তাঁরা ফেরেশতার পর্যায়ে গণ্য হতেন এবং সে ক্ষেত্রে তাঁরা মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হতেন না । বস্তুতঃ তাঁদের মধ্যে গুনাহ্ করার ক্ষমতাই ছিলো না বলে ধরে নেয়ার কারণে অনেক লোক নিজেদের গুনাহর সপক্ষে এটিকে বাহানা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে । কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো তাঁদের মধ্য থেকে গুনাহ্ করার ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয় নি ,সুতরাং তাঁদের অবস্থাকে বাহানা হিসেবে গণ্য করে কারো পক্ষে গুনাহ্ করে পার পেয়ে যাবার কোনোই সুযোগ নেই ।

এ বিষয়টিও মূলতঃ নবী - রাসূলগণের ( আ .) পাপমুক্ততা সংক্রান্ত আলোচনায় আলোচিতব্য বিষয় এবং উপরোক্ত শিরোনামে অত্র গ্রন্থকারের রচনাধীন গ্রন্থে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে । তবে অত্র পুস্তকের আলোচ্য বিষয়ের সাথে এর সম্পর্ক থাকায় এখানেও বিষয়টির ওপর সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো ।

বস্তুতঃ নিষ্পাপ ব্যক্তিগণের মধ্যে গুনাহ্ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা স্বেচ্ছায় গুনাহ্ থেকে বিরত থাকেন । এটা সম্ভব হয় তাঁদের রক্তধারার পবিত্রতা ,ঈমানের গভীরতা ও দৃঢ়তা এবং পূত - পবিত্র জীবন যাপনে অভ্যস্ততার কারণে । এর ফলে তাঁদের মধ্যে পাপ না করার বিষয়টি তাঁদের গোটা সত্তার ( শরীর ও নাফ্স্ উভয়ের ) অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে যায় । ফলে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই তাঁরা গুনাহে লিপ্ত হন না এবং তাঁদের সত্তা গুনাহকে গ্রহণ করে না ।

কিন্তু যেহেতু তাঁদের গুনাহ্ করার ক্ষমতা হরণ করা হয় নি সেহেতু এ সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি হলেও একেবারে শূন্য নয় । এ কারণেই আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) সম্পর্কে বলেছেন যে ,তিনি যদি আল্লাহর নামে কোনো কথা বানিয়ে বলতেন তাহলে তাঁকে কঠিনভাবে পাকড়াও করা হতো ( সূরা আল - হাক্বক্বাহ্ : ৪৪ - ৪৬ ) । এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ,তাঁর থেকে আল্লাহর নামে কোনো কথা বানিয়ে বলার তথা যে কোনো ধরনের গুনাহে লিপ্ত হবার ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয় নি । [ অবশ্য ইন্তেকালের পরে রাসূলুল্লাহ্ (সা .) সহ যে কোনো মা ছুম ব্যক্তিরই মা ছুম থাকার বিষয়টি সম্পর্কে আর কোনোরূপ অনিশ্চয়তা থাকে নি । ]

সুতরাং কারো জন্য মা ছুমগণের নিষ্পাপ অবস্থাকে নিজের জন্য গুনাহর অনুকূলে বাহানা তৈরীর সুযোগ নেই । অন্যদিকে মা ছুম না হওয়ার মানেও এ নয় যে ,কারো পক্ষেই সারা জীবন পাপমুক্ত থাকা সম্ভব নয় ,বরং সারা জীবন ছোট - বড় যে কোনো ধরনের গুনাহ্ থেকে মুক্ত থাকা অন্যদের জন্য খুবই দুরূহ তথা প্রায় অসম্ভব হলেও পুরোপুরি অসম্ভব নয় ।

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত কারা ?

আমরা ভূমিকায় যেমন উল্লেখ করেছি ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর যুগ থেকে শুরু করে এ ব্যাপারে যে সর্বসম্মত মত (ইজমা )চলে এসেছে তা হচ্ছে ,কোরআন মজীদে আহলে বাইত বলতে ন্যূনকল্পে হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং হযরত আলী ,হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-কে বুঝানো হয়েছে তেমনি আলে মুহাম্মাদ (সা.) বলতেও ন্যূনকল্পে তাঁদেরকেই বুঝানো হয়েছে । এ বিষয়ের সমর্থনে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত প্রচুর হাদীছ রয়েছে ।

বর্ণনাসূত্রের বিচারে এ বিষয়ক হাদীছগুলো মুতাওয়াতির কিনা সে বিষয়ে পর্যালোচনায় না গিয়েও আমরা বলতে পারি যে ,প্রথমতঃ এ সব হাদীছের বিষয়বস্তু ইসলামের চারটি অকাট্য জ্ঞানসূত্রের কোনোটির সাথেই সাংঘর্ষিক নয় এবং দ্বিতীয়তঃ সংশ্লিষ্ট আয়াত নাযিলকালে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পুত্রসন্তান না থাকা ও কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে তাঁর বিবিগণ মা ছুম্ না হওয়া তথা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ক হাদীছগুলো গ্রহণ করা ছাড়া সংশ্লিষ্ট আয়াতাংশের প্রায়োগিকতা থাকে না । কারণ ,সে ক্ষেত্রে আদৌ তাঁর কোনো আহলে বাইত থাকে না এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতাংশ অর্থহীন হয়ে যায় -যে ধরনের উক্তি থেকে চির জ্ঞানময় সর্বজ্ঞাতা আল্লাহ্ তা আলা পরম প্রমুক্ত ।

অধিকন্তু আয়াতে মুবাহালাহ্ (সূরা আলে ইমরান : 61) অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) যে আমল করেন তদ্সংক্রান্ত যে তথ্যের ওপরে উম্মাহর মধ্যে ইজমা রয়েছে তা থেকেও উক্ত চারজন মহান ব্যক্তিত্বের আহলে বাইত বা আলে মুহাম্মাদ (সা.) হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য সমর্থন পাওয়া যায় ।

নাজরানের খৃস্টান ধর্মনেতাদের কাছে ইসলামের সত্য দ্বীন ও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সত্যিকারের পয়গাম্বর হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তারা ইসলাম ও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিরোধিতার ব্যাপারে ,বিশেষ করে হযরত ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারে একগুঁয়েমি করতে থাকলে আল্লাহ্ তা আলা তাদেরকে লা নতের চ্যালেঞ্জ দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কে নির্দেশ দেন ;এরশাদ করেন :

) فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِين (

(হে রাসূল!) আপনার কাছে প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও যে আপনার সাথে এ ব্যাপারে (ঈসার ব্যাপারে) বিতর্ক করে তাকে বলুন : এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে ,আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে ,অতঃপর আমরা প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা নত করি । (সূরা আলে ইমরান : 61)

ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্কাহর সূত্রে বর্ণিত হাদীছ সমূহের ভিত্তিতে সমগ্র উম্মাহর কাছে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত তথ্য অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং হযরত আলী ,হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-কে স্বীয় চাদর বা আবা-র নীচে নিয়ে নাজরানের খৃস্টানদের সাথে মুবাহালাহ্ করতে যান এবং এ সময় আল্লাহ্ তা আলার কাছে যে দো আ করেন তাতে তাঁদেরকে এরাই আমার আহলে বাইত বলে উল্লেখ করেন । এ সংক্রান্ত হাদীছগুলোরও বিষয়বস্তু এমন যা ইসলামের অকাট্য জ্ঞানসূত্র সমূহের কোনোটির সাথেই সাংঘর্ষিক নয় এবং এ ব্যাপারে এতদ্ব্যতীত অন্য কোনো বর্ণনা নেই । এমতাবস্থায় এটিকে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই । নচেৎ ধরে নিতে হয় যে ,রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এ আয়াত অনুযায়ী আমল করেন নি -যে ধারণা নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যানযোগ্য ।

লক্ষণীয় যে ,সংশ্লিষ্ট আয়াত অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জন্য তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে মুবাহালাহ্ করতে যাওয়া অপরিহার্য ছিলো । এ আয়াতে উভয় পক্ষে মুবাহালায় অংশগ্রহণকারীকে তিন ধরনের লোকদেরকে নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয় ,তা হচ্ছে : انفسنا (আমরা নিজেরা) ,ابنئنا (আমাদের পুত্রগণ/ বংশধর পুরুষগণ) ও نسائنا (আমাদের নারীগণ/ স্ত্রী-কন্যাগণ) । এ আয়াতে প্রদত্ত নির্দেশের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) যাদেরকে নিয়ে মুবাহালাহ্ করতে গেলেন সুস্পষ্ট যে ,তাঁদের মধ্য থেকে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)কে ابنئنا (আমাদের পুত্রগণ/ পুরুষ বংশধরগণ) হিসেবে ,হযরত ফাতেমাহ্ (আ.)কে نسائنا (আমাদের নারীগণ অর্থাৎ প্রিয়তম নারীগণ) ও হযরত আলী (আ.)কে انفسنا (আমরা নিজেরা) হিসেবে সাথে নিয়ে যান । অর্থাৎ তিনি তাঁর পুরো আহলে বাইতকে সাথে নিয়ে যান ।

এখানে আরো গভীরভাবে তলিয়ে চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে এই যে ,মুবাহালাহর আয়াতে যাদেরকে সাথে নিয়ে মুবাহালাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয় তাঁদের সম্পর্কে আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হলে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্য কন্যাকে নয় ,বরং তাঁর স্ত্রীগণকে সাথে নিতে হতো ,অথবা কন্যার সাথে সাথে স্ত্রীগণকেও সাথে নিতে হতো । অবশ্য জীবিত পুত্রসন্তান না থাকা অবস্থায় নাতিদ্বয়কে নিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও আভিধানিক তাৎপর্যের দৃষ্টিতে জামাতাকে সাথে নেয়ার বিষয়টি এর আওতায় আসে না । কিন্তু যেহেতু মুবাহালাহর ক্ষেত্রে রক্ত বা বৈবাহিক সম্পর্কের নিকটতম ব্যক্তিদেরকে সাথে নেয়ার যৌক্তিকতা ছিলো না এবং প্রতিপক্ষও তা দাবী করতো না ,বরং দু টি আদর্শিক পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতার জন্য আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে যারা তাঁর নিকটতম ও পরবর্তী উত্তরাধিকারী তথা নেতার সাথে যারা ধ্বংস হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আদর্শের চিরবিলুপ্তি ঘটবে তাঁদেরকে সাথে নিয়েই মুবাহালাহ্ করা অপরিহার্য ছিলো ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ,ইসলামের সকল মত-পথের সূত্রে বর্ণিত হাদীছ-ভিত্তিক সর্বসম্মত মত অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত আলী (আ.)-এর সাথে তাঁর সম্পর্ককে হযরত মূসা ও হযরত হারূন (আ.)-এর মধ্যকার সম্পর্কের অনুরূপ বলে উল্লেখ করেছেন । এর মানে হচ্ছে ,হযরত হারূন (আ.) যেরূপ হযরত মূসা (আ.)-এর আদর্শিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন ,ঠিক সেভাবেই হযরত আলী (আ.) হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আদর্শিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন । এমতাবস্থায় তাঁকে সাথে নিয়ে না গেলে মুবাহালাহ্ অসম্পূর্ণ থাকতো । সম্ভবতঃ প্রতিপক্ষও এ বিষয়টি অবগত ছিলো এবং এ কারণে তাঁকে সাথে নিয়ে না গেলে তা প্রতিপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো না ।

অনুরূপভাবে বুঝা যায় ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) জানতেন যে ,তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে আমাদের নারীগণ হিসেবে তথা আহলে বাইতের নারী সদস্য হিসেবে সাথে না নেয়ায় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে প্রতিবাদের আশঙ্কা ছিলো না অর্থাৎ প্রতিপক্ষও জানতো যে ,তাঁর স্ত্রীগণ আদর্শিক-পারিভাষিক দিক থেকে তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না ।

এ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে ,পারিভাষিক অর্থে কোনো নবী বা রাসূলের আহলে বাইত বা আলে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অভিধানিক অর্থে পরিবারের সদস্য বা বংশধর হওয়া অপরিহার্য নয় ,বরং এর বাইরে থেকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে । অর্থাৎ পারিভাষিক অর্থে একজন নবী বা রাসূলের আহলে বাইত বা আলে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত তাঁরাই যারা তাঁর আদর্শিক সত্তার অংশ এবং তাঁর আদর্শিক উত্তরাধিকারী । হযরত মূসা (আ.) ও হযরত হারূন (আ.) এবং হযরত মূসা ও হযরত ইউশা বিন্ নূন্ (আ.)-এর মধ্যে যে সম্পর্ক ছিলো তা এ ধরনেরই এবং এ কারণেই হযরত ইউশা বিন্ নূন্ (আ.) হযরত মূসা (আ.)-এর পুত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আদর্শিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন । একই কারণে হযরত আলী (আ.) হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পুত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ,পারিভাষিক অর্থে একজন নবীর আহলে বাইতের সদস্যগণের জন্য পবিত্র রক্তধারা থেকে আগত হওয়া অপরিহার্য হলেও (যে সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হয়েছে) কেবল নবীর বংশধর হওয়ার কারণেই যে কেউ তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না । এ কারণেই আল্লাহ্ তা আলা যেমন হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পাপাচারী বংশধরদেরকে ইমামতের প্রতিশ্রুতির বাইরে রেখেছেন (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 124) ,অনুরূপভাবে তিনি হযরত নূহ্ (আ.) কে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ,তাঁর পাপাচারী পুত্র তাঁর আহল্- এর অন্তর্ভুক্ত নয় (সূরা হূদ্ : 46) । এর মানে হচ্ছে ,একজন নবীর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্তি পবিত্র রক্তধারা থেকে হলেও কেবল পবিত্র রক্তধারার কারণে নয় ,বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুণগত অবস্থার কারণে হয়ে থাকে ।

বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের জবাব

আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) কারা এ ব্যাপারে ইসলামের প্রথম যুগের মতৈক্যের বরখেলাফে কোনো কোনো মহল থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে । অবশ্য তাদের বিভ্রান্তি এক ধরনের নয় ,বরং বিভিন্ন ধরনের । এখানে আমরা তাদের কয়েকটি ব্যাপক প্রচারিত বিভ্রান্তির জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করছি ।

তাদের একটি বিভ্রান্তিকর মত হচ্ছে এই যে ,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইত হচ্ছেন কেবল তাঁর স্ত্রীগণ -যা কথাটির আভিধানিক অর্থের দাবী । তাদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর মত হচ্ছে এই যে ,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইত হচ্ছেন মূলতঃ তাঁর স্ত্রীগণ ,তবে নবী করীম (সা.)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা আলা তাঁর কন্যা ,জামাতা ও নাতিদেরকে এর অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন ।

তাদের এ দাবী যে ভিত্তিহীন তা আমরা ওপরে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি -যা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে ,আহলে বাইতের শা নে নাযিলকৃত আয়াত্ -যা আয়াতে তাতহীর নামে মশহুর -তাঁর স্ত্রীদের বেলায় প্রযোজ্য নয় । সুতরাং তাঁরা এককভাবে বা হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং হযরত আলী ,হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর সাথে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন ।

তাদের সৃষ্ট আরেকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হচ্ছে এই যে ,ইসলামে রক্তধারার বিশেষ মর্যাদা নেই । এর ভিত্তিতে তারা প্রশ্ন তুলেছে যে ,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বংধরদের মধ্যকার পাপাচারী লোকদেরকেও আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) হিসেবে সম্মান দিতে হবে কিনা ?

বলা বাহুল্য যে ,তাদের এ বিভ্রান্তি একটি অপযুক্তি (ফ্যালাসি) মাত্র । কারণ ,নবুওয়াত্ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামতের গুরুদায়িত্ব কেবল পবিত্র রক্তধারার মানুষের পক্ষেই বহন করা সম্ভব এবং এ কারণে আল্লাহ্ তা আলা এ দায়িত্ব কেবল পবিত্র রক্তধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন । এ ব্যাপারে আমরা পরে আলোচনা করেছি । আর রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধরদের মধ্যকার পাপাচারীদেরকে সম্মান প্রদর্শনের প্রশ্নটি একটি অবান্তর প্রশ্ন । কারণ ,আলোচ্য ক্ষেত্রে আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) কথাগুলো পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করা হয় ,আভিধানিক অর্থে নয় । তাই কেউই রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধরদের মধ্যকার পাপাচারীদেরকে আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন না ,বরং বিশেষভাবে হযরত হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও হযরত আলী (আ.) এবং তাঁদের বংশে আগত এগারো জন ইমামকে এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয় ,যদিও সম্প্রসারিত অর্থে অনেকে রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধরদের মধ্যকার সমস্ত নেককার ও বুযুর্গ ব্যক্তিদেরকে আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করে থাকেন । আর হযরত ইব্রাহীম্ (আ.) কে প্রদত্ত আল্লাহ্ তা আলার প্রতিশ্রুতি কেবল আহলে বাইত ও আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর ক্ষেত্রে বিশেষ ও পারিভাষিক অর্থেই প্রযোজ্য ।

তাদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হচ্ছে এই যে ,আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) বলতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ছ্বাহাবীও অন্তর্ভুক্ত । এমনকি কেউ কেউ এমনটিও দাবী করছে যে ,আলে মুহাম্মাদ্ (সা.) বলতে গোটা উম্মাতে মুহাম্মাদী (সা.)কেই বুঝানো হয়েছে । এ দু টি সংজ্ঞার মধ্যে কোনোটিই আল্ কথাটির প্রচলিত সংজ্ঞার পর্যায়ভুক্ত নয় এবং আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর ক্ষেত্রে কোনোটির প্রযোজ্যতার সপক্ষে কোনো অকাট্য দলীল নেই ,তবে দ্বিতীয়টি নিয়ে আলোচনা অবান্তর । কারণ ,জ্ঞানী-মূর্খ ও নেককার- বদকার নির্বিশেষে প্রচলিত সংজ্ঞার উম্মাতে মুহাম্মাদীর (সা.) সকলে আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত এবং নামাযে আমরা তাঁদের প্রতি দরূদ পাঠাবার জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন জানাই এমন দাবী পাগল ছাড়া কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না ।

তবে প্রথমটি যদি আমরা যুক্তির খাতিরে মেনে নেই তো সে ক্ষেত্রে আমরা এর প্রবক্তাদের কাছে সেই ব্যক্তিদের নামের তালিকা চাইতে পারি যাদেরকে তারা আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করতে চাচ্ছে । অতঃপর তাঁদের আমল বিচার করে দেখতে হবে যে ,আয়াতে তাতহীর তাঁদের বেলা প্রযোজ্য কিনা । তাঁদের কারো আমলে আল্লাহ্ তা আলার বিধানের লঙ্ঘন পাওয়া গেলে [উদাহরণ স্বরূপ ,শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে প্রমাণিত যেনাকারকে শাস্তিদান থেকে বিরত থাকা ,কারো বৈধ সম্পদ বাযেয়াফ্ত করা ,কোরআনের সুস্পষ্ট বিধানের বরখেলাফে আইন্ জারী করা ,কোরআনে ঘোষিত যাকাতের হক্ব্ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা ,স্বজনপ্রীতির পরিচয় দেয়া ইত্যাদি] নিঃসন্দেহে আয়াতে তাতহীর তাঁর বেলা প্রযোজ্য হবে না । আমরা তাঁদের সমালোচনার দফতর খুলে বসতে চাই না ,কিন্তু যে মর্যাদা তাঁদের নয় সে মর্যাদা তাঁদেরকে দিতে চাইলে অবশ্যই তাঁদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অধিকার মানতে হবে । কারণ ,তাঁরা আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মনোনীত নবী-রাসূল বা ইমাম এবং মা ছুম্ নন যে ,তাঁদেরকে সমালোচনার উর্ধে গণ্য করে চোখ বুঁজে আলে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত বলে মেনে নিতে হবে ।

প্রকৃত পক্ষে যারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বিবিগণকে ও ছ্বাহাবীদেরকে তাঁর আহলে বাইত (আ.)-এর বা আল্-এর অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করছে তাদের এ দাবীর সাথে সাধারণভাবে আহলে সুন্নাতের আহলে বাইত সংক্রান্ত আক্বীদাহর সম্পর্ক নেই । কারণ ,আহলে সুন্নাতের মধ্যে নামাযের বাইরে বিভিন্নভাবে দরূদ পাঠ করতে দেখা যায় । এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :

اللهم صل علی سیدنا و نبینا و شافعنا و مولانا محمد و علی آله و اصحابه و ازواجه اجمعین .

- হে আল্লাহ্! আমাদের নেতা ,আমাদের নবী ,আমাদের শাফা আত্কারী ও আমাদের মাওলা মুহাম্মাদের প্রতি এবং তাঁর আল্ ,তাঁর ছ্বাহাবীগণ ও তাঁর স্ত্রীদের -সকলের -প্রতি দরূদ প্রেরণ করো ।

আবার এভাবেও পড়া হয় :

اللهم صل علی سیدنا و نبینا و شافعنا و مولانا محمد. صل الله علیه و علی آله و اصحابه و ازواجه اجمعین

- হে আল্লাহ্! আমাদের নেতা ,আমাদের নবী ,আমাদের শাফা আত্কারী ও আমাদের মাওলা মুহাম্মাদের প্রতি দরূদ প্রেরণ করো ;আল্লাহ্ তাঁর প্রতি এবং তাঁর আল্ ,তাঁর ছ্বাহাবীগণ ও তাঁর স্ত্রীদের -সকলের -প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন ।

যারা এ দরূদ পাঠ করেন তাঁরা নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ছ্বাহাবীগণকে ও তাঁর স্ত্রীগণকে তাঁর আল্-এর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না বলেই তাঁদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেন ।

বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের আরেকটি বিভ্রান্তিকর অপযুক্তি হচ্ছে এই যে ,আয়াতে তাত্হীরে আল্লাহ্ তা আলা আহলে বাইতকে পবিত্র করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ,তাঁদেরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেন নি অর্থাৎ তাঁদেরকে পবিত্র হতে বলেন নি । তারা এ ব্যাপারে ওযূ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এবং বলে যে ,আল্লাহ্ তা আলা সে ক্ষেত্রে মু মিনদেরকে পবিত্র করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন যার মানে তিনি মু মিনদেরকে পবিত্র হতে বলেছেন ,তাদেরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেন নি ।

এদের এ অপযুক্তির প্রথম জবাব হচ্ছে এই যে ,ওযূর মাধ্যমে পবিত্র করণের যে ইচ্ছা আল্লাহ্ তা আলা ব্যক্ত করেছেন তাতে আহলে বাইতের সদস্যগণও শামিল রয়েছেন ,তাহলে আয়াতে তাত্হীরে তাঁদেরকে পুনরায় পবিত্র করতে চাওয়ার মানে কী ?এ থেকে সুস্পষ্ট যে ,এতদুভয় ক্ষেত্রে দুই ধরনের পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে : সাধারণ ও বিশেষ । ওযূর ক্ষেত্রে পবিত্রতার মানে হচ্ছে ইবাদতের পূর্বপ্রস্তুতি ও পূর্বশর্ত হিসেবে এক ধরনের শারীরিক-মানসিক পবিত্রতা । আর আয়াতে তাত্হীরে পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা র মানে হচ্ছে সর্বাবস্থায় মানসিক ,আত্মিক ও চৈন্তিক পবিত্রতা -যা গুনাহ্ ও ভুল থেকে ফিরিয়ে রাখে ।

এদের অপযুক্তির দ্বিতীয় জবাব হচ্ছে এই যে ,আল্লাহ্ তা আলা জানেন যে ,আহলে বাইতের সদস্যগণ তাঁদের পবিত্র রক্তধারার কারণে সর্বাবস্থায় মানসিক ,আত্মিক ও চৈন্তিক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ পবিত্রতা র অধিকারী থাকা এবং গুনাহ্ ও ভুল থেকে মুক্ত থাকার উপযুক্ততার অধিকারী ,অতঃপর তাঁরা চাইলে এরূপ থাকতে পারেবন । কিন্তু অন্যরা এ জন্য উপযুক্ততার অধিকারী নয় ,সুতরাং তারা চেষ্টা করলে পবিত্রতার অধিকারী থাকতে ও বড় বড় গুনাহ্ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে বটে ,তবে যে কোনো সময়ই তাদের ভুল ও বিচ্যুতির সম্ভাবনা রয়েছে ,তাই তাদের পক্ষে পরিপূর্ণ পবিত্রতার অধিকারী হওয়া সম্ভব হবে না । [আল্লাহ্ তা আলা যে ,তাঁর মনোনীত নবী-রাসূল ও ইমামগণ এবং অন্যান্য খাছ্ব বান্দাহর কাছ থেকে গুনাহে লিপ্ত হবার ক্ষমতা কেড়ে নেন নি এবং কেন নেন নি সে সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হয়েছে এবং তাঁদের ইছ্বমাত্ বা পাপমুক্ততা এ অর্থেই । ]


4

5

6

7

8

9

10

11

12