রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ 0%

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইতিহাস

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 12732
ডাউনলোড: 2710

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 22 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12732 / ডাউনলোড: 2710
সাইজ সাইজ সাইজ
রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টানো কেন

অনেককেই ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসের বিরোধ - বিসম্বাদ সংক্রান্ত পৃষ্ঠাগুলো ওল্টানোর বিরোধিতা করতে দেখা যায় । তাঁদের মতে ,এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান বিভেদ - অনৈক্যই কেবল বৃদ্ধি পাবে এবং তা ফির্কাহ্ ও মায্হাবের উর্ধে উঠে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়টিকে সুদূরপরাহত করে তুলবে ।

আসলেও ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুগের তিক্ত বিষয়গুলোর স্মৃতিচারণ না করাই ভালো । প্রথমতঃ এর সাথে যারা জড়িত তাঁদের কেউই বেঁচে নেই এবং এখন ইতিহাসকে বদলে দেয়া যাবে না । আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমল সহকারে আল্লাহ্ তা আলার কাছে হাযির হবেন । আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যেমন এরশাদ করেছেন :

) تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَا كَسَبْتُمْ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُون (

তারা ছিলো একটি জনগোষ্ঠী যারা অতীত হয়ে গিয়েছে ; তারা ( ভালো ) যা কিছু অর্জন করেছে তা তাদেরই জন্য এবং তারা ( মন্দ ) যা কিছু অর্জন করেছে তা তাদেরই ওপরে আপতিত হবে । আর তারা যা কিছু করেছে সে জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না । (সূরা আল্ - বাক্বারাহ্ : 134 )

দ্বিতীয়তঃ শিয়া মাযহাবের অনুসারীরা যে বারো জন বুযুর্গ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা ‘ আলার পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম বলে আক্বীদাহ্ পোষণ করে তাঁদের মধ্য থেকে এগারো জন এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যকার দ্বাদশ ইমাম - শিয়া মাযহাবের অনুসারীরা যাকে ইমাম মাহ্দী (আ.) বলে আক্বীদাহ্ পোষণ করে ,তাদের আক্বীদাহ্ অনুযায়ীই আল্লাহ্ তা ‘ আলা তাঁকে দীর্ঘজীবী করলেও তিনি আল্লাহর ইচ্ছায়ই আত্মপরিচয় গোপন করে আছেন এবং উপযুক্ত সময়ে আত্মপ্রকাশ করবেন ।

যেহেতু শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকল মুসলমানই হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও তাঁর দ্বারা বিশ্বব্যাপী ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আক্বীদাহ্ পোষণ করে ,সেহেতু তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন কি করেন নি এ প্রশ্নে মতপার্থক্য থাকলেও তাঁর আত্মপ্রকাশের পর তাঁকে গ্রহণ-বর্জনের ওপরই যে কারো হেদায়াত ও গোমরাহী নির্ভর করবে । কিন্তু এখন যেহেতু উক্ত বারো জন বুযুর্গ ব্যক্তির কেউই আমাদের সামনে ইমামতের দাবী নিয়ে উপস্থিত নন ,এমতাবস্থায় তাঁদের ইমামত নিয়ে বিতর্ক প্রধানতঃ একটি তাত্ত্বিক বিতর্ক বৈ নয় ,যদিও শারী ‘ আতের গৌণ বিষয়াদিতে খবরে ওয়াহেদ হাদীছ ও রেওয়াইয়াত্ গ্রহণের ব্যাপারে এর ভূমিকা আছে । এর মানে হচ্ছে ,ইমামতের আক্বীদাহ্ পোষণ করলে যে কোনো হাদীছ ও রেওয়াইয়াতের রাভী বিচার শুরু হবে মা ‘ ছুম্ (আ.)-এর পর থেকে ।

অবশ্য এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই যে ,আসলেই আমাদের উচিত অতীত হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের আমলের সাথে নিজেদেরকে না জড়ানো । কারণ ,আমাদের বিতর্ক তাঁদের আমলের ভালো-মন্দ কোনো কিছুতেই কিছু হরাস-বৃদ্ধি ঘটাতে পারবে না । কিন্তু আমরা যখন নিজেদেরকে তাঁদের আমলের সাথে জড়িয়ে ফেলি তখন অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের আমলের পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।

বিশেষ করে অনেক সময় বলা হয় যে ,অন্যান্য ছ্বাহাবায়ে কেরাম ও অতীতের মনীষীগণ ইসলাম সম্পর্কে ও কোরআন মজীদের তাৎপর্য আমাদের চেয়ে কম বুঝতেন না । অথচ এটা অনস্বীকার্য যে ,তাঁরা না মা ‘ ছুম্ ছিলেন ,না অকাট্যভাবে ঐশী ইলহামের অধিকারী ছিলেন । অতএব ,তাঁদের পক্ষে ভুল করা সম্ভব এবং পূর্বোল্লিখিত আয়াত অনুযায়ী ,তাঁরা ভুল করে থাকলে আমাদের জন্য তার অনুসরণ করা উচিত হবে না । এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের কথা ও কাজের বর্ণনা কতোখানি সঠিকভাবে আমাদের কাছে পৌঁছেছে তা-ও প্রশ্নের উর্ধে নয় ।

আরো বলা হয় যে ,আমরা তো কোরআন মজীদ ও ইসলাম ছ্বাহাবীদের মাধ্যমেই পেয়েছি ,সুতরাং তাঁদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না ।

কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো ,আমরা কোরআন ও ইসলাম তাঁদের ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে পাই নি ,বরং মুতাওয়াতির সূত্রে তাঁদের সকলের কাছ থেকে ’ পেয়েছি - যার নির্ভুলতা ও গ্রহণযোগ্যতা সন্দেহাতীত । এর সাথে যে সব বিষয়ে তাঁদের নিজেদের মধ্যেই পারস্পরিক মতপার্থক্য ছিলো সে সব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাঁদেরকে নির্ভুল গণ্য করা ঠিক হবে না । আর ইসলাম ও কোরআনকে পরবর্তী প্রজন্মসমূহের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেই যে তাঁরা তা পরবর্তী প্রজন্ম সমূহের তুলনায় অধিকতর সঠিকভাবে বুঝেছিলেন এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই । কেননা ,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) এরশাদ করেছেন যে ,জ্ঞানপূর্ণ কথা অনেক সময় কেউ এমন ব্যক্তির কাছে বহন করে নিয়ে যায় যে বহনকারীর তুলনায় অধিকতর সমঝদার । 15

বস্তুতঃ আমরা যদি বিচারবুদ্ধির কাছে গ্রহণযোগ্য ইসলামের সর্বজনগ্রহণযোগ্য চারটি অকাট্য সূত্রের ওপর নির্ভর করে তার দাবী অনুযায়ী আমাদের জীবনে সকল ক্ষেত্রে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ,হযরত রাসূলে কর্মনীতি ও বিধিবিধান লাভের ও তদনুযায়ী চলার চেষ্টা করতাম তাহলে উপরোল্লিখিত ঐতিহাসিক বিতর্ক এমনিতেই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতো । কিন্তু আমরা তা না করার কারণেই এ বিতর্কের উপযোগিতা থেকে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে । কারণ ,বিচারবুদ্ধি ( আক্বল্) ,কোরআন মজীদ ,মুতাওয়াতির হাদীছ ও ইজমা-এ উম্মাহর মানদণ্ডে যেখানে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইতের পবিত্রতা ও পাপমুক্ততা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় এবং জ্ঞানগত যোগ্যতার সাথে পবিত্রতা ও পাপমুক্ততা যুক্ত হওয়ার কারণে কেবল তাঁদের কাছ থেকেই নির্ভুল দ্বীনী জ্ঞান লাভ করা যেতে পারে এমতাবস্থায় আমরা যদি অন্য কারো কাছ থেকে এ সব মানদণ্ডের কোনো না কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক কোনো ফয়ছ্বালা মেনে না চলতাম এবং তার ওপরে একগুঁয়েমি না করতাম তাহলে আজ আর ইতিহাস পর্যালোচনার প্রয়োজন হতো না ।

উদাহরণ স্বরূপ এক বৈঠকে তিন তালাক্ব সংক্রান্ত ফত্ওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে ।

আল্লাহ্ তা ‘ আলা যেখানে ফেরতযোগ্য তালাক্ব ( طلاق رجعی ) সম্পর্কে এরশাদ করেছেন যে ,الطلاق مرتان -তালাক্ব দুই বার (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 229) অতঃপর ভালোভাবে রাখতে হবে অথবা (তৃতীয় দফা তালাক্ব দিয়ে) ভদ্রভাবে বিদায় করে দিতে হবে (সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : 229) এমতাবস্থায় কেউ যে কোনো কথা বলেই (যেমন : তিন তালাক্ব ’ শব্দ উচ্চারণ করে বা তালাক্ব ’ শব্দটি তিন বার পুনরাবৃত্তি করে) স্ত্রীকে তালাক্ব দিক না কেন অবশ্যই তা এক বার ’ তালাক্ব হবে ,অতঃপর তাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত তার পক্ষে ঐ স্ত্রীকে দ্বিতীয় বার তালাক্ব দেয়া সম্ভব নয় । কারণ ,প্রথম বার তালাক্ব দেয়ার সাথে সাথেই সে আর তার স্ত্রী থাকলো না এবং যে সব কাজের দ্বারা তালাক্ব দেয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা ’ প্রমাণিত হয় এমন কোনো কাজের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে এনে স্ত্রীর মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আগে তাকে দ্বিতীয় বার ’ তালাক্ব দেয়া সম্ভব নয় ।

কিন্তু এ সত্ত্বেও কেবল দ্বিতীয় খলীফাহর মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে মুসলমানদের মধ্যকার বৃহত্তর অংশের মধ্যে এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাক্ব ’ কে ফেরত-অযোগ্য চূড়ান্ত তালাক্ব বলে গণ্য করা হচ্ছে ।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই যে ,প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী ,স্বয়ং হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহ্ঃ) - যার নামে হানাফী মায্হাবের প্রচলন করা হয়েছে - যেখানে এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাক্ব ’ কে ফেরতযোগ্য এক বার ’ তালাক্ব বলে গণ্য করতেন সেখানে পরবর্তীকালে গৃহীত হানাফী মাযহাবের মত ’ হচ্ছে এই যে ,এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাক্ব ’ ফেরত-অযোগ্য চূড়ান্ত তালাক্ব বলে গণ্য হবে । আর এর ফলে যে কেবল আল্লাহর বিধানে মানুষের জীবনের জন্য প্রদত্ত প্রশস্ততা ও সহজতা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শুধু তা-ই নয় ,বরং অনেককে কঠিন ধরনের গুনাহে লিপ্ত হবার পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে । 16

এখানে মাত্র একটি দৃষ্টান্ত দেয়া হলো । এ ধরনের আরো অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে । এভাবে অনেক ছ্বাহাবীর - যাদের নিষ্পাপ হওয়ার সপক্ষে কোনোই দলীল নেই - মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে এ ধরনের আরো অনেক ভ্রান্ত ফত্ওয়া দেয়া হয়েছে - যা মুসলমানদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণ হয়েছে ।