ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব 22%

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 31 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 41881 / ডাউনলোড: 5858
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

‘ইসলাম ও শীয়া মাযহাব’ নামক এ গ্রন্থে ইসলামের দু’টি বৃহৎ উপদলের (শীয়া ও সুন্নী) অন্যতম শীয়া মাযহাবের প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে । শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি, বিকাশ ও চিন্তাধারার প্রকৃতি এবং ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে শীয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গী এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে ।


1

বুদ্ধিগত , দার্শনিক ও কালামশাস্ত্রীয় চিন্তা

ইতিপূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি যে পবিত্র কুরআন বুদ্ধিবৃত্তিগত চিন্তাধারাকে সমর্থন করে এবং একে ধর্মীয় চিন্তাধারার অংশ বলে গণ্যও করে । অবশ্য এর বিপরীতেও বুদ্ধিবৃত্তিগত চিন্তাধারাই মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত ও তার সততাকে প্রমাণ করেছে । এছাড়া ঐশীবাণী কুরআনের বাহ্যিকরূপ , মহানবী (সা.) ও তার পবিত্র আহলে বাইতের পবিত্র বাণীকে বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য দলিলের সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে । মানুষ খোদাপ্রদত্ত স্বভাব (ফিতরাত) অনুযায়ী যেসব বুদ্ধিবৃত্তিগত অকাট্য দলিলের সাহায্যে নিজস্ব মতামত প্রমাণ করার প্রয়াস পায় তা প্রধানত দু ধরণের : (১) বুরহান (২) জাদাল বা তর্ক ।

বুরহানঃ এমন এক ধরণের দলিল , যার ভিত্তি বাস্তব সত্যের উপর রচিত । যদিও চাক্ষুষ অথবা দ্বিধাহীন না হয় । আরও সহজ ভাষায় , এমন কোন খবর যা মানবসত্তা তার খোদাপ্রদত্ত অনুভুতির মাধ্যমে প্রমাণিত সত্য হিসেবে উপলদ্ধি করে । যেমনি ভাবে আমরা জানি তিন সংখ্যাটি পরিমাণ গত দিক থেকে চার হতে ক্ষুদ্র । এ জাতীয় চিন্তা প্রক্রিয়াও বুদ্ধিগত চিন্তার অন্তর্ভুক্ত । আর যদি ঐ বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের অস্তিত্ব ও পরিচালনার সত্যতা বা বাস্তবতা উদঘাটনের চেষ্টা করা হয় , তাহলে সেটি হবে দার্শনিক চিন্তা । উদাহরণ স্বরূপ সৃষ্টির আদি , অন্ত ও বিশ্ববাসীর অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা ।

জাদালঃ তর্ক এমন একটি প্রমাণ পদ্ধতি যার প্রাথমিক ভিত্তির আংশিক বা সমস্তটাই শতঃসিদ্ধ বাস্তবতা থেকে সংগৃহীত হয় । যেভাবে প্রতিটি ধর্ম মাযহাবের মধ্যে প্রচলিত আছে । তারা তাদের অভ্যন্তরীণ মাযহাবী সূত্র প্রমাণে ঐ মাযহাবের শতঃসিদ্ধ মূলসূত্রের সাথে পরস্পর তুলনা করে থাকে । পবিত্র কুরআনও উপরোক্ত পদ্ধতিদ্বয়কে কাজে লাগিয়েছে । তাই পবিত্র কুরআনে ঐ পদ্ধতিদ্বয়ের ভিত্তিতে অসংখ্য আয়াত বিদ্যমান ।

প্রথমতঃ পবিত্র কুরআন সমগ্র বিশ্বব্রম্ভান্ড ও বিশ্বের নিয়ম শৃংঙ্খলা সম্পর্কে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছে । শুধু তাই নয় , আমাদের দৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত ঐশী নিদর্শন সমূহ আসমান , জমিন , দিন , রাত , বৃক্ষ , প্রাণী , মানুষ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও গভীর চিন্তার নির্দেশ দেয় । এ জাতীয় চিন্তার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে মহান প্রভু স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তি পরিচালনাকে সমুন্নত ভাষায় প্রসংশা করেছেন ।

দ্বিতীয়তঃ সাধারণত বুদ্ধিবৃত্তিক তর্ক পদ্ধতিকে কালাম শাস্ত্রের একটি মাধ্যম হিসেবে গন্য করা হয় । তবে এই শর্তে যে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থায় উপস্থাপন করা উচিত ।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দনীয় পন্থায় । (সূরা আন্ নাহল ১২৫ নং আয়াত ।)

ইসলামে দর্শন ও কালামশাস্ত্রীয় চিন্তার বিকাশে শীয়াদের অবদান

এটা অত্যন্ত স্পষ্ট ব্যাপার যে জন্মলগ্ন থেকেই শীয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হয় । ফলে সেদিন থেকেই বিরোধীদের মোকাবিলায় তাদেরকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয় । এ জন্যে তারা তর্কযুদ্ধে নামতে বাধ্য হন । স্বাভাবিক ভাবেই তর্কযুদ্ধের দু পক্ষই সমান ভাবে অংশ গ্রহণ করে । কিন্তু এ ক্ষেত্রে শীয়ারা সর্বদাই আক্রমণকারী এবং বিপক্ষীয়রা আত্মরক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করেছে । তাই এ তর্কযুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম আয়োজনের দায়িত্ব সাধারণত আক্রমণকারীকেই পালন করতে হয় । এভাবে কালাম (যুক্তি ভিত্তিক মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র) শাস্ত্রের ক্রমোন্নতি ঘটে । হিজরী ২য় শতক ও ৩য় শতকের প্রথম দিকে মু তাযিলা সম্প্রদায়ের প্রসারের পাশাপাশি উক্ত কালামশাস্ত্র উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করে । আর এক্ষেত্রে আহলে বাইতের আদর্শের অনুসারী শীয়া আলেম ও গবেষকগণের স্থান ছিল মুতাকাল্লিমদের ( কালাম শাস্ত্রের পণ্ডিত) শীর্ষে । এছাড়াও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আশআরিয়া মু তাযিলা সম্প্রদায়সহ কালাম শাস্ত্রের অন্য সকল পৃষ্ঠপোষকরাও সূত্র পরস্পরায় শীয়াদের প্রথম ইমাম হযরত ইমাম আলী (আ.)-এ গিয়ে মিলিত হয় ।১২৭ মহানবীর (সা.) সাহাবীদের জ্ঞান বিষয়ক রচনাবলী ও অবদান সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে (প্রায় বার হাজরের মত সাহাবীর মাধ্যমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে) তারা সবাই জানেন যে , এসবের একটিও আদৌ কোন দার্শনিক চিন্তাধারা প্রসূত নয় । এর মধ্যে কেবল মাত্র আমিরুল মু মিনীন হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক বর্ণনাযুক্ত সর্বস্রষ্টা আল্লাহ সংক্রান্ত বিষয়াবলীই সুগভীর দার্শনিক চিন্তাধারা প্রসূত । সাহাবীগণ তাদের অনুসারী তাবেঈন আলেমগণ ও পরবর্তী উত্তরাধিকারীগণ এবং তদানিন্তন আরবরা মুক্ত দার্শনিক চিন্তাধারার সাথে আদৌ পরিচিত ছিলেন না । এমনকি হিজরী প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর ইসলামী পণ্ডিতগণের বক্তব্যেও দার্শনিক অনুসন্ধিৎসার আদৌ কোন নমুনা খুজে পাওয়া যায় না । একমাত্র শীয়া ইমামদের বক্তব্য , বিশেষ করে প্রথম ও অষ্টম ইমামের বাণী সমূহেই সুগভীর দার্শনিক চিন্তাধারার নিদর্শন খু্জে পাওয়া যায় । তাদের সেই মূল্যবান বাণী সমূহই দর্শনের অনন্ত ভান্ডার স্বরূপ । তারা একদল শিষ্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দার্শনিক চিন্তাধারার প্রকৃতির সাথে তাদেরকে পরিচিত করে তুলেছেন । হ্যাঁ , আরবরা হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত দর্শনের সাথে আদৌ পরিচিত ছিল না । অতঃপর হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম ভাগে গ্রীক দর্শনের কিছু বই তাদের হাতে আসে । এরপর হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম ভাগে গ্রীক ও সুরিয়ানী ভাষায় রচিত বেশ কিছু দার্শনিক গ্রন্থ আরবী ভাষায় অনুদিত হয় , এর ফলে আরবরা গণভাবে দার্শনিক চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসে । কিন্তু তদানিন্তন অধিকাংশ ফকিহ্ (ইসলামী আইন শাস্ত্রবিদ) এবং মুতাকাল্লিমগণই (কালাম শাস্ত্রীয় পণ্ডিত) নবাগত ঐ অতিথিকে (দর্শন ও অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিজাত জ্ঞান বিজ্ঞান) হাসি মুখে বরণ করেননি ।

দর্শন ও বুদ্ধিবৃত্তিগত শাস্ত্রের বিরোধীতায় তারা তৎকালীন প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে ছিলেন । কিন্তু এতদসত্ত্বেও ঐ বিরোধীতা বাস্তবে তেমন একটা কার্যকর হয়নি । কিছুদিন পরই ইতিহাসের পাতা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল । দর্শনশাস্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পাশাপাশি দর্শন সংক্রান্ত সকল বই পুস্তক সাগরে নিক্ষিপ্ত হল । ইখওয়ানুস সাফা (বন্ধু বৎসল ভ্রাতৃ সংঘ) নামক একদল অজ্ঞাত পরিচয় লেখকের রচনাবলী (রিসাইলু ইখওয়ানুস সাফা) ঐসব ঘটনাবলীর সাক্ষী ও স্মৃতি বাহক । ঐসব ঘটনাবলী আমাদেরকে সে যুগের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । এর বহুদিন পর হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর প্রথমভাগে আবু নাসের ফারাবীর মাধ্যমে দর্শনশাস্ত্র পুনরায় জীবন লাভ করে । এরপর হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমভাগে বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক আবু আলী সীনার আপ্রাণ সাধনায় দর্শনশাস্ত্র সামগ্রিকভাবে প্রসার লাভ করে । হিজরী ৬ষ্ঠ শতকে জনাব শেইখ সোহরাওয়ার্দী , আবু আলী সীনার অনুসৃত ঐ দার্শনিক মতবাদের সংস্কার ও বিকাশ সাধান করেন । আর এই অপরাধেই তিনি সুলতান সালাহ্ উদ্দীন আইয়ুবী কর্তৃক নিহত হন । এর ফলে ধীরে ধীরে জনসাধারণের মাঝে দর্শনের যবনিকা পতন ঘটে । এরপর আর উল্লেখযোগ্য কোন দার্শনিকের সৃষ্টি হয়নি । হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামী খেলাফত সীমান্ত আন্দালুসে (বর্তমান স্পেন) ইবনে রূশদ নামক এক ইসলামী দার্শনিকের জন্ম হয় । তিনিও ইসলামী দর্শনের সংস্কার ও বিকাশে আপ্রাণ সাধানা করেন ।১২৮

দর্শন ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের বিকাশে শীয়াদের অন্তহীন প্রচেষ্টা

দার্শনিক চিন্তাধারার সৃষ্টি ও বিকাশে শীয়া সম্প্রদায়ের অবদান তার উন্নতির ক্ষেত্রে এক বিরাট কারণ হিসেবে কাজ করেছিল । এ ছাড়াও এজাতীয় চিন্তাভাবনা ও বুদ্ধিবৃত্তিজাত বিজ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রেও শীয়া সম্প্রদায় ছিল মূলভিত্তি স্বরূপ । তারা এক্ষেত্রে অবিরামভাবে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে । তাই আমরা দেখতে পাই যে , ইবনে রূশদের মৃত্যুর পর যখন আহলে সুন্নাতের মধ্যে দার্শনিক চিন্তাধারার গণবিস্মৃতি ঘটে , তখনও শীয়া সম্প্রদায়ের মাঝে দার্শনিক চিন্তাধারার প্রবল গণজোয়ার পূর্ণোদ্দমে অব্যাহত ছিল । তারপর শীয়াদের মধ্যে খাজা তুসী , মীর দামাদ ও সাদরূল মুতাআল্লিহীন নামক বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামী দার্শনিকদের অভ্যুদয় ঘটে । তারা একের পর এক দর্শন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন , বিকাশ সাধান ও তার রচনায় আত্মনিয়োগ করেন । একইভাবে দর্শন ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তি অন্যান্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খাজা তুসী , বীরজান্দিসহ আরও অনেক ব্যক্তিত্বের অভ্যুদয় ঘটে । এসকল বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান , বিশেষ করে অধিবিদ্যা [ Metaphsics] শীয়াদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সুগভীর উন্নতি সাধিত হয় । খাজা তুসী , শামসুদ্দীন তুর্কী , মীর দামাদ সাদরুল মুতাআল্লিহীনের রচনাবলীই এর সুস্পষ্ট উদাহরণ ।

শীয়াদের মধ্যে দর্শনশাস্ত্র টিকে থাকার কারণ

আমরা পূর্বেই বলেছি যে , দার্শনিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান চর্চার উদ্ভব ও বিকাশের মূলভিত্তির রচয়িতা ছিল শীয়া সম্প্রদায় । এর কারণ ছিল শীয়াদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানের অমূল্য ভান্ডারের উপস্থিতি ।

আর ছিল শীয়াদের ইমামদের রেখে যাওয়া স্মৃতি স্বরূপ অমূল্য জ্ঞানভান্ডার । শীয়ারা আজীবন ঐ অমূল্য জ্ঞানভান্ডারকে অত্যন্ত পবিত্রতা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে । এ বক্তব্য প্রমাণের লক্ষ্যে পবিত্র আহলে বাইতগণের (আ.) জ্ঞানভান্ডারকে এযাবৎ রচিত ঐতিহাসিক দার্শনিক গ্রন্থাবলীর সাথে মিলিয়ে দেখা উচিত । তাহলে আমরা দেখতে পাব যে ইতিহাসে দর্শনশাস্ত্রের বিকাশধারা ক্রমেই আহলে বাইতগণের (আ.) জ্ঞানভান্ডারের নিকটবর্তী হয়েছে । এভাবে হিজরী একাদশ শতাব্দীতে এসে বর্ণনাগত সামান্য কিছু মতভেদ ছাড়া এ দু টো ধারাই প্রায় সম্পূর্ণ রূপে মিলিত হয়ে গেছে ।

কয়েকজন ক্ষণজন্মা শীয়া ব্যক্তিত্ব

ক) সিকাতুল ইসলাম মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব কুলাইনী (মৃত্যু : ৩২৯ হিঃ) :

শেইখ কুলাইনী ছিলেন শীয়াদের সর্বপ্রথম ব্যক্তি , যিনি শীয়াদের সংগৃহীত হাদীসগুলোকে উসুল (মুহাদ্দিসগণ আহলে বাইতগণের (আ.) হাদীস সমূহকে আসল নামক গ্রন্থে সংগৃহীত করেন । আসল এর বহুবচন উসুল ) থেকে সংগ্রহ করে সেগুলোকে বিষয়বস্তু অনুসারে বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত করেন । ফিকহ্ (ইসলামী আইন) ও মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত বিষয়ের ভিত্তিতে হাদীসগুলোকে সুসজ্জিত করেন । তার সংকলিত হাদীস গ্রন্থের নাম কাফী । এ গ্রন্থটি মূলত : তিনভাগে বিভক্ত : উসুল (মৌলিক বিশ্বাস অধ্যায়) , ফুরূঊ (ইসলামের আইন সংক্রান্ত অধ্যায়) এবং বিবিধ অধ্যায় । উক্ত গ্রন্থে সংকলিত মোট হাদীস সংখ্যা ষোল হাজার , একশত নিরানব্বইটি ।

উক্ত হাদীস গ্রন্থই শীয়াদের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত । এ ছাড়া আরও তিনটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ রয়েছে যা , কাফী র পরবর্তী পর্যায়ের । কাফীর পরবর্তী পর্যায়ে তিনটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থগুলো হচ্ছে :

১. মান লা ইয়াহযুরুল ফাকীহ

২. আত তাহযীব

৩. আল ইসতিবসার

মান লা ইয়াহযুরুল ফাকীহ নামক হাদীস গ্রন্থের সংকলক হচ্ছেন , জনাব শেইখ সাদুক মুহাম্মদ বিন বাবাওয়াই কুমী । তিনি হিজরী ৩৮১ সনে মৃত্যুবরণ করেন । আত তাহযীব আল ইসতিবসার নামক হাদীস গ্রন্থদ্বয়ের সংকলক ছিলেন জনাব শেইখ তুসী । তিনি হিজরী ৪৬০ সনে মৃত্যু বরণ করেন ।

খ) জনাব আবুল কাসিম জাফার বিন হাসান বিন ইয়াহইয়া হিল্লী ওরফে মুহাক্কিক :

তিনি হিজরী ৬৭৬ সনে মৃত্যুবরণ করেন । তিনি ফিকহ্ (ইসলামী আইন শাস্ত্র) শাস্ত্রে এক অসাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন । তিনি ছিলেন শীয়া ফকিহদের কর্ণধার স্বরূপ । তাঁর রচিত ফিকহ্ শাস্ত্রীয় মুখতাসারূন নাঈম ও আশ্ শারায়িঈ অন্যতম । দীর্ঘ সাত শতাব্দী পার হওয়ার পরও এ দু টো গ্রন্থ আজও ফকিহদের (ইসলামী আইনবিদ) বিস্ময় ও সম্মানের পাত্র হিসেবে টিকে আছে । জনাব মুহাক্কিকের পরই ফিকহ্ শাস্ত্রের জনাব শহীদে আউয়াল (ফকীহদের মধ্যে প্রথম শহীদ) শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন মাক্কির নাম উল্লেগযোগ্য । হিজরী ৭৮৬ সনে শুধুমাত্র শীয়া মাযহাবের অনুসারী হওয়ার অপরাধে সিরিয়ার দামেস্কে তাকে হত্যা করা হয় । ফিকহ শাস্ত্রে তার বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে আল্ লুমআতুদ্ দামেস্কীয়া র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তিনি জেলে থাকাকালীন সময়ে মাত্র সাতদিনের মধ্যে এ গ্রন্থটি রচনা করেন । জনাব শেইখ জাফর কাশিফুল গিতা , তিনি হিজরী ১২২৭ সনে মৃত্যুবরণ করেন । তিনি ফেকহ্ শাস্ত্রে শীয়াদের আরেকজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন । তার বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থের নাম কাশফুল গিতা

গ) জনাব শেইখ মুর্তজা আনসারী শুশতারী (মৃত্যু -১২৮১ হিঃ) :

তিনি ইলমূল উসুলের (ইসলামী আইন প্রণয়নের মূলনীতি শাস্ত্র) সংস্কার সাধান করেন । ইলমূল উসুলের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ব্যবহারিক বিষয়ক মূলনীতি (উসুলুল আ মালিয়াহ) অংশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধান ও পুস্তক আকারে তা রচনা করেন । তার রচিত ইতিহাস বিখ্যাত ঐ জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থটি এক শতাব্দী পর আজও শীয়া ফকীহদের একটি অন্যতম পাঠ্য পুস্তক হিসেবে প্রচলিত ।

ঘ) জনাব খাজা নাসির উদ্দিন তুসী (মৃত্যু -৬৫৬ হিঃ) :

তিনিই সর্বপ্রথম কালাম শাস্ত্রকে (মৌলিক বিশ্বাস বিষয়ক শাস্ত্র) একটি পূর্ণাংগ শৈল্পিক রূপ দান করেন । তাজরীদুল কালাম নামক গ্রন্থটি তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থাবলীর অন্যতম । আজ প্রায় সাত শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পরও ঐ গ্রন্থটি কালাম শাস্ত্রের জগতে এক বিস্ময়কর গ্রন্থ হিসেবে নিজস্বমান বজায় রেখে চলেছে । এমন কি তার রচিত ঐ বিখ্যাত গ্রন্থটির ব্যাখা স্বরূপ বহু শীয়া ও সুন্নী পণ্ডিত অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন । কালাম শাস্ত্র ছাড়া দর্শন ও গণিতশাস্ত্রে জনাব খাজা তুসী তার সমসাময়িক যুগের এক অসাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন । বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার রচিত অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থই একথার সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য স্বরূপ । ইরানের মারাগে অঞ্চলের বিখ্যাত মাণমন্দিরটি তারই প্রতিষ্ঠিত ।

ঙ) জনাব সাদরুদ্দিন মুহাম্মদ সিরাজী (জন্ম -হিঃ ৯৭৯ ও মৃত্যু : হিঃ ১০৫০ সন) :

তিনিই সর্বপ্রথম ইসলামী দর্শনকে বিক্ষিপ্ত ও বিশৃংখল অবস্থা থেকে মুক্তি দেন । তিনি ইসলামী দর্শনের বিষয়গুলোকে গণিতের মত একটি সুশৃংখল শাস্ত্রে রূপায়িত করেন । তার ঐ ঐতিহাসিক অবদানের ফলে ইসলামী দর্শনের ক্ষেত্রে এক নবযুগ সাধিত হয় ।

প্রথমতঃ যেসব বিষয় ইতিপূর্বে দর্শনের আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব ছিলনা ,তা তারই অবদানে দর্শন শাস্ত্রের আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত ও তার সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ ইসলামের আধ্যাত্মিকতা (ইরফান) সম্পর্কিত কিছু বিষয় যা ইতিপূর্বে সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা উপলদ্ধির নাগালের বাইরে বলেই গণ্য হত , তাও খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে ।

তৃতীয়তঃ কুরআন ও আহলে বাইতগণের (আ.) অনেক জটিল ও দূর্বোধ্য সুগভীর দার্শনিক বাণীসমূহ যা শতশত বছর যাবৎ সমাধানের অযোগ্য ধাঁধা ও মুতাশাবিহাত (সংশয়যুক্ত দূর্বোধ্য বিষয়) বিষয় হিসেবে গণ্য হত , তারও সহজ সমাধান পাওয়া গেল । যার ফলে ইসলামের বাহ্যিক দিক , আধাত্মিকতা (ইরফান) ও দর্শন পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হল এবং একই গতিপথে প্রবাহিত হতে শুরু করল । সাদরুল মুতা আল্লিহীনের পূর্বেও হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে হিকমাতুল ইশরাক গ্রন্থের লেখক জনাব শেইখ সোহরাওয়ার্দী এবং হিজরী অষ্টম শতাব্দীর দার্শনিক জনাব শামসুদ্দিন মুহাম্মদ তুর্কের মত প্রমুখ পণ্ডিতবর্গ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন । কিন্তু কেউই এপথে পূর্ণাংগ সাফল্য অর্জন করতে পারেননি । একমাত্র জনাব সাদরুল মুতাআল্লিহীনই এ ব্যাপারে পূর্ণ সাফল্য অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেন । জনাব সাদরুল মুতাআল্লিহীন , সত্তার গতি (হারাকাতে জওহারী) নামক মতবাদের সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হন । চতুর্থদিক (বো দু রাবি ই) ও আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত মতবাদও তিনিই আবিস্কার করেন । এ ছাড়াও তিনি প্রায় পঞ্চাশটির মত গ্রন্থ ও পুস্তিকা রচনা করেন । তার অমূল্য অবদানের মধ্যে চার খণ্ডে সমাপ্ত আসফার নামক বিখ্যাত দর্শনশাস্ত্রের গ্রন্থটি অন্যতম ।

4

উটের কোমর বাঁধা

কাফেলাটি বহুক্ষণ পথ চলেছিল। সকলের চেহারাতেই ক্লান্তির ছাপ। বহনকারী পশুগুলোও। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এমন একটি স্থানে উপস্থিত হলো যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেল। রসুলুলাহ (সাঃ) ও এ কাফেলার সাথে ছিলেন। তিনিও উটের পিঠ থেকে নেমে এলেন। সকলেই চেষ্টা করছিল যে , তাড়াতাড়ি পানির কাছে গিয়ে অযু ইত্যাদি সেরে নামাযের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

মহানবী (সাঃ)ও নামার পর পানির দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন। রাসূলের সাহাবী ও সাথীগণ আশ্চর্য হয়ে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগলেন যে , মনে হয় যাত্রা বিরতির জন্য এ স্থানটি আল্লাহর নবীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেবেন। সকলেই রাসূলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং নতুন হুকুমের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। লোকেরা আরো অধিক আশ্চর্য হলেন তখন , যখন তারা দেখলেন যে , মহানবী (সাঃ) নিজের উটের কোমরবন্ধনী (উটের কোমর বাঁধার রশি বিশেষ) হাতে নিলেন এবং নিজের উটের কোমর বাঁধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ।

চারদিক থেকে লোকেরা এসে বললেন , হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না ? আপনি কেন এ কাজটি করতে গেলেন ? এ কাজটির জন্য আপনি আবার ফিরে গেলেন। আমরা তো অত্যন্তগর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম

প্রিয় নবী (সাঃ) তাদের কথার জবাবে বললেন , নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সেটা একটি মেসওয়াকের ব্যাপারই হোক না কেন অর্থাৎ কাজটি ছোট হোক অথবা বিরাট ,অপরের ভরসায় বসে থাকার চেয়ে নিজেই করা উচিত5

5

হজ্বের সফর সঙ্গী

হজ্ব থেকে ফিরে এসে এক ব্যক্তি তার নিজের ও তার সঙ্গীদের হজ্বের সফরের কাহিনী ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ)-কে বর্ণনা করছিল। সে তার সাথীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির বিশেষ প্রশংসা করছিল। সে বলতে লাগলো যে , প্রকৃতপক্ষেই সে ব্যক্তিটি খুবই মোত্তাকী-পরহেযগার ও অত্যন্ত ইবাদতকারী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সব সময়ই মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়েছেন। আমরা যখনই কোথাও রাত্রি যাপন করার উদ্দেশ্যে যাত্রা বিরতি করতাম তখনই তিনি এক কিনারে চলে যেতেন এবং সাথে সাথেই জায়নামায বিছিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যেতেন।

ইমাম সাদিক (আঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তার কাজ-কর্মগুলো আঞ্জাম দিত কে ? কে তার জন্তুটির দেখাশোনা করতো ?

জবাবে লোকটি বললো : তার সমস্তকাজগুলো করে দেবার সৌভাগ্য আমাদেরই হয়েছিল। তিনি তো শুধু তাঁর নেক আমলের কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকতেন। এসব কাজের প্রতি তার কোন মনোযোগ ছিল না।

ইমাম (আঃ) বললেন , এ কারণেই তোমরা সকলে উক্ত মোত্তাকী পরহেযগার ও ইবাদতকারীর চেয়ে অধিক উত্তম

6

বনভোজন

হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গী দল নিজ নিজ বাহনের পিঠ থেকে নিচে নামলেন। মাল সামানগুলোকে খুলে মাটিতে রাখলেন। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন যে , একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরী করা হবে।

একজন সাহাবী বললেন , দুম্বা জবাই করা আমার দায়িত্বে রইলো

আরেকজন বললেন দুম্বার চামড়া ছাড়ানো এবং গোশত কাটার দায়িত্ব আমার।

তৃতীয় জন বললেন , গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার।

চতুর্থ জন বললেন ,

রসুলুলাহ (সাঃ) বললেন , কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার।

সকল সাহাবী এক সাথে বলে উঠলেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন ? আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা গর্বের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাক সেটে নিব।। রাসূল (সাঃ) বললেন , আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনো ভালোবাসেন না যে নিজের বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে এবং নিজেকে অপরের চেয়ে বিশেষ ব্যক্তিত্ব জ্ঞান করে6 এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানী কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন।7

7

হজ্বযাত্রী এক কাফেলা

মুসলমানদের একটি কাফেলা মক্কা যাচ্ছিল। মদীনা পৌঁছেই কাফেলার লোকেরা কয়েক দিনের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। কয়েক দিন বিশ্রাম গ্রহণের পর তারা আবার মদীনা থেকে মক্কার দিকে রওয়ানা হলো।

মক্কা ও মদীনার মাঝে এক স্থানে এসে কাফেলা আবার বিশ্রাম গ্রহণের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। এ সময় কাফেলার লোকদের সাথে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটলো যিনি কাফেলার সকল লোককে চিনতেন ও জানতেন। লোকটি যখন কাফেলার লোকদের সাথে আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত তখন তাঁর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি অত্যন্তহাসি মুখে কাফেলার লোকদের খেদমতে ব্যস্তছিলেন। লোকটি প্রথম দৃষ্টিতেই সে ব্যক্তিকে চিনতে পারলেন , যিনি খুব আনন্দমনে লোকদের খেদমত করে চলছিলেন। তাই অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে কাফেলার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা কি এ ব্যক্তিকে চেনো যিনি তোমাদের খেদমতে লেগে আছেন ? জবাবে তারা বললো , না ,আমরা এ লোকটিকে মোটেই চিনি না। এ লোকটি তো মদীনা থেকে আমাদের কাফেলার সাথে শামিল হয়েছে। তবে এ কয়েক দিনের সফরের সাথী হিসেবে এতোখানি বলতে পারি যে , এ লোকটি একজন সৎ লোক এবং অত্যন্ত মোত্তাকী-পরহেযগার। আমরা তাকে বলিনি ,আমাদের কাজ করে দাও। কিন্তু সে নিজেই অপরের খেদমতে লেগে আছে এবং সকলেরই সাহায্য-সহযোগিতা করে চলছে

কাফেলার লোকদের বন্ধুটি বললেন , আমি জানি তোমরা তাকে মোটেও চেনো না। যদি তোমরা তাকে চিনতেই পারতে তাহলে কখনও এমন অপরাধজনক কাজ করতে পারতে না যে , একজন সাধারণ খাদেমের ন্যায় তোমাদের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যেতে থাকবেন তিনি । এ কথা শুনে সকলে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , তিনি কে ?

লোকটি বললেন , তিনি হলেন আলী ইবনুল হোসাইন (আঃ) অর্থাৎ ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ)

এ কথা শুনেই কাফেলার সমস্তলোক হতবাক হয়ে গেল এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অত্যন্ত আদবের সাথে ইমামের হাতে চুমু খাওয়ার আশায় তাঁর দিকে এগিয়ে গেল। সমস্তলোক ইমামের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে অনুযোগের সুরে বলতে লাগলো , হে ইমাম! আপনি আমাদের সাথে এমনটি কেন করলেন ? সম্ভাবনা ছিল যে , আমরা অজ্ঞতাবশত আপনার সাথে মারাত্মক কোন অপরাধ করে বসতাম তাতে আমরা বড় গুণাহগার-পাপী হতাম

ইমাম বললেন , যেহেতু তোমরা কেউ আমাকে চিনতে না ,এ জন্যই আমি তোমাদের সফর সঙ্গী হয়েছি । কেননা আমি যখন চেনা-জানা লোকদের সাথে সফর করি তখন লোকেরা রাসূলে খোদা (সাঃ)-এর খাতিরে আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে আমার সাথে সদয় আচরণ করে। আর তারা আমাকে ছোটখাটো কোন কাজও করতে দেয় না। এ জন্যই আমি সফরের জন্য এমন একটি কাফেলা বেছে নিয়েছি যাদের কেউ আমাকে চেনে না যাতে করে আমি নিজের কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতে পারি। আর আমি লোকদের কাছে আমার পরিচয় এজন্য গোপন রেখেছি যাতে করে আমি আমার সাথীদের খেদমত করার সুযোগ লাভ করতে পারি8

8

এক মুসলমান ও এক আহলে কিতাব

সে সময় কুফা নগরী ছিল ইসলামী শাসনেরা প্রাণকেন্দ্র। সিরিয়া ছাড়াও ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্য সকল স্থানের সকল লোকের নজর তখন সে নগরীর দিকেই নিবন্ধ থাকতো এ জন্য যে , সেখান থেকে কখন কোন নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম জারী করা হয়।

এ শহর থেকে অনেক দূরে দুই ব্যক্তির সাথে রাস্তায় দেখা হলো। একজন মুসলমান আর অপরজন আহলে কিতাব (আহলে কিতাব মানে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান কিংবা যারথুস্ত্রীয়)। দুই জনেই একে অপরের গন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জানা গেল যে ,মুসলমান লোকটি কুফা শহরে যাবে। আর আহলে কিতাব লোকটি কুফার নিকটেই অন্য এক স্থানে যাবে। দুইজনে মিলে স্থির করলে যে , তারা এক সাথে সফর করবে। কেননা ,অনেক দূর পর্যন্ত দুইজনের রাস্তা একই। এক সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে পথ চলা যাবে।

দুজনের আন্তরিক আলাপ-আলোচনা ও বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পথ শেষ হয়ে এলো। অবশেষে তারা একটি দুই রাস্তার মোড়ে এসে উপস্থিত হলো যেখান থেকে দু জনের রাস্তা দু দিকে চলে গেছে। আহলে কিতাব লোকটি তার নিজের পথ ধরে চলতে লাগলো। কিছু দূর পথ চলার পর পিছনে ফিরে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো। সে দেখতে পেলো তার মুসলমান বন্ধুটি কুফার দিকে না গিয়ে তারই পিছে পিছে চলে আসছে। এ অবস্থা দেখে সে দাড়িয়ে গেল এবং তার মুসলমান বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসা করলো : কি ভাই! তুমি না বলেছিলে যে , তুমি কুফা যাবে ?

জবাবে মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি তো এখনো বলছি যে ,আমি কুফা যাবো

আহলে কিতাব লোকটি বললো , তাহলে তুমি এদিকে আসছো কেন ? এটা তো কুফার রাস্তা নয়। কুফা যাবার রাস্তা তো ঐটা।

মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি জানি। কিন্তু আমার মন চাইলো যে , কিছু দূর পর্যন্তআমি তোমার সঙ্গ দেবো। কেননা আমাদের নবী বলেছেন যখন দু ব্যক্তি এক সাথে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে পথ চলে তখন একে অপরের প্রতি অধিকার লাভ করে। এখন তোমারও আমার ওপর। সতরাং আমি অধিকার রয়েছে। আমি সে অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য কিছু দূর পর্যন্ততোমার সাথে চলতে চাই। এরপর তো আমি আমার পথেই ফিরে যাবো

আহলে কিতাব বললো , ওহ্! তোমাদের নবী যে মানুষের উপর এতোই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এতো দ্রুত বিশ্বে প্রসার লাভ করেছি ,এটা নিশ্চয় তাঁর এই উত্তম চরিত্রেরই গুণে ছিল।

আহলে কিতাব লোকটি আরো বেশী অবাক হলো তখন যখন সে জানতে পারলো যে , তার সফর সঙ্গী মুসলমান বন্ধুটি আর কেউ নন ,বরং মুসলিম মিলাতের বর্তমান খলিফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ)। তৎক্ষণাত সে আহলে কিতাব লোকটি ইসলাম গ্রহণ করে মসলমান হয়ে গেল এবং হযরত আলীর একজন বিশ্বস্তও অনুগত সাহাবীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো।9

9

খলিফার সান্নিধ্যে

হযরত আলী (আঃ) কুফার দিকে আসছিলেন। পথে আম্বার নামক এক শহরে উপস্থিত হলেন। যেখানকার বেশীর ভাগ অধিবাসী ছিল ইরানী। ইরানী কৃষক ও মাতব্বররা যখন জানতে পারলো যে , তাদের প্রিয় খলিফা তাদেরই শহর দিয়ে অতিক্রম করবেন তখন তাদের আর আনন্দের সীমা রইলো না। সকলে তাদের খলিফাকে স্বাগতম ও খোশ আমদেদ জানাবার জন্য দৌঁড়ে এলো। হযরত আলী (আঃ)-এর বাহন যখন এগিয়ে চললো তখন লোকেরাও বাহনের আগে আগে দৌঁড়াতে লাগলো। হযরত আলী (আঃ) নিজের বাহন থামিয়ে দিয়ে লোকদেরকে ডেকে পাঠালেন। লোকেরা যখন তার কাছে এলো তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা এভাবে দৌঁড়াদৌড়ি করছো কেন ? এভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ির পেছনে তোমাদের উদ্দেশ্য কি ?

লোকেরা বললো , আসলে এটা শাসকবর্গ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা রীতি। বহুকাল আগ থেকে প্রচলিত আমাদের একটি প্রথা

হযরত আলী (আঃ) তাদেরকে বললেন , তোমাদের এ কাজ দুনিয়াতে তোমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে আর পরকালেও এর কারণে অনেক শাস্তিভোগ করতে হবে। এমন কাজ কখনো করবে না ,যা তোমাদের অপমান ও লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আর তোমরাই দেখো যে ,তোমাদের এ কাজের দ্বারা তোমাদের 1 নেতা ও অমীরেরই বা কি লাভ হয় ?10

10

ইমাম বাক্বের ( আঃ ) ও এক খ্রিস্টান

ইমাম বাক্বের (আঃ)। নাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনিল হোসাইন (আঃ) । যার উপাধি ছিল বাক্বের । বাক্বের শব্দের আভিধানিক অর্থ ভাগ-বিশেষণকারী। তাকে বলা হতো বাক্বেরুল উলুম যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাগ-বিশেষণ ও ব্যাখ্যাকারী।

এক খ্রিস্টান বাক্বের শব্দের বিকৃত উচ্চারণ করে ইমামের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে চাইলো। সে ইমামকে উদ্দেশ্যে করে বললো , [আনতা বাক্বার] অর্থাৎ তুমি গাভী

ইমাম কোন প্রকার অসন্তুষ্টি বা রাগান্বিত না হয়ে অত্যন্তসরল ও সহজ ভাষায় বললেন , না ভাই! আমি বাক্বার (গাভী) নই। আমি বাক্বের (বিশেষণকারী)

অতঃপর খ্রিস্টান লোকটি বললো , তুমি একটা রাঁধুনির ছেলে। ইমাম বললেন ,এটা তার পেশা ছিল । এতে কোনো লজ্জা বা ঘৃণার কিছু নেই।

খ্রিস্টান লোকটি আরো বললো , তোমার মা ছিল কালো কুৎসিত। তার লজ্জা-শরম কিছুই ছিল না। আর তার ভাষাও ছিল বিশ্রী

এবারও ইমাম অত্যন্তসহজ-সরল ভাষায় বললেন , আমার মাতা সম্পর্কে তুমি যে সব অপবাদ দিচ্ছো তা যদি সত্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ যেন তার গুণাহ খাতা মাফ করে দেন। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে যেনো তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দেন। কেননা কারো সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া বড়ই গুণাহের কাজ

একজন মানুষ যার জন্যে ইসলামের বহির্ভূত একজন লোককে শাস্তি দেয়ার সব ধরনের সামর্থ্য তার ছিল ,অথচ এতটা ধৈর্য্য ধরলেন। এটুকুই ঐ খ্রিস্টান লোকটির মনের ভেতরে বিপ্লব সংঘটনের জন্য এবং তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

পরবর্তীতে খ্রিস্টান লোকটি মসলমানু হয়।

11

এক আরব বেদুঈন ও রাসূলে আকরাম ( সাঃ )

এক আরব বেঈদুন মদীনা শহরে এসে সোজা মসজিদে নববীতে চলে গেল। তার উদ্দেশ্য ছিল মহানবী (সাঃ)-এর কাছ থেকে সোনা-দানা টাকা-পয়সা নিবে। সে সময় প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। বেদুঈন লোকটি রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সামনে এসে তার আরজ পেশ করলো এবং তাকে কিছু দান করার জন্য আবেদন জানালো। আল্লাহর নবী (সাঃ) তাকে কিছু দান করলেন। কিন্তু তাতে সে সন্তুষ্ট হলো না। সে রাসূলের (সাঃ) দানকে সামান্য গণ্য করলো। তাছাড়া সে কিছু বিশ্রী শব্দ ব্যবহার করে রাসল (সাঃ) এর প্রতি বেয়াদবি করলো। এ অবস্থা দেখে রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীরা প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং ঐ লোকটিকে কঠিন শাস্তিদেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কিন্তু মহানবী (সাঃ) তাদেরকে থামিয়ে দিলেন।

এরপর রাসূলে খোদা (সাঃ) লোকটিকে সাথে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গেলেন এবং তাকে আরো কিছু সাহায্য দান করলেন। এ সময় বেদুঈন লোকটি নিজের চোখে দেখতে পেলো যে ,রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জীবন ও অন্যান্য নেতা ও শাসকদের জীবনের অবস্থার মধ্যে কোন মিল নেই। আর সে রাসূলের কাছে যে সোনা দানা আশা করেছিলো আসলেই তা তারঁ কাছে নেই।

বেদুঈন আরব সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো এবং মুখে কতৃজ্ঞতার ভাষা উচ্চারণ করলো। তখন মহানবী (সাঃ) আরব বেদঈনকে বললেন , গতকাল তুমি আমার সম্পর্কে বিশ্রী কথাবার্তা বলেছ যা আমার সাহাবীদেরকে উত্তেজিত করে দেয়। তারা তোমার উপর খুবই অসন্তুষ্ট। এখন আমার ভয় হচ্ছে যে ,তারা তোমার কোন ক্ষতি করে বসতে পারে। এখন তুমি আমার সামনে কৃতজ্ঞতার কথা বলেছ। অতএব এটা কি সম্ভব যে ,তুমি তোমার এ কথাটি তাদের সামনেও প্রকাশ করবে যাতে তাদের রাগ দূর হয়ে যায় ? জবাবে সে বললো , এতে আমার কোন আপত্তি নেই

পরদিন বেদুঈন লোকটি মসজিদে নববীতে গেল। যখন সবাই সেখানে সমবেত ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , লোকসকল! এ লোকটি বলছে যে আমার প্রতি সে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। কি ? এ কথা কি সঠিক ?

বেদুঈন লোকটি বললো , জ্বি ,এটাই সঠিক। অতঃপর সে ঐ কথাটাই বিড়বিড় করে বললো যা ইতোপূর্বে বলেছিল। রসূলে খোদা (সাঃ) এর সাহাবীরা তখন হেসে ফেললেন।

এ সময় আল্লাহর নবী (সাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন , এ লোকটি আর আমার ঘটনাটির উদাহরণ হলো সে ব্যক্তির মতো ,যার উট স্বীয় মালিকের প্রতি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। আর লোকেরা উটের মালিককে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে শোরগোল শুরুকরে দিল এবং সে পলায়নকারী উটটির পিছে পিছে দৌঁড়াতে লাগলো। উটটি আরো আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত পালাতে লাগলো। এ অবস্থা দেখে উটের মালিক সকল লোককে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিয়ে বললো , ভাইসব! অনুরোধ করছি আমার উটের পিছনে কাউকে দৌঁড়াতে হবে না। আমার উটকে কিভাবে শান্তকরতে হয় সেটা আমি ভালো জানি।

তার এ আহ্বান শুনে উটের পিছে দৌঁড়ানো লোকজন থেমে গেল। তারপর উটের মালিক এক মুষ্টি ঘাস নিজের হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে উটের কাছে পৌঁছে গেল। আর খুব সহজে উটের বলা (লাগাম বিশেষ) নিজের হাতে নিয়ে নিল। উটটি তখন মালিকের সাথে ফিরে এলো।

গতকাল যদি আমি তোমাদেরকে বারণ না করতাম তাহলে এ আরব বেদুঈনকে তার জীবন হারাতে হতো। তোমরা তাকে জীবিত ছেড়ে দিতে না। তাতে লোকটি কুফরী ও মূর্তি পূজারীর অবস্থায় মারা যেতো। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি তোমাদেরকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেইনি। আর এখন তোমরা নিজেরাই দেখতে পেলে যে ,আমি আমার ভালোবাসা ও নম্র ব্যহার দ্বারা লোকটিকে একেবারেই মুগ্ধ করে ফেলেছি11

12

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি ও ইমাম হোসাইন ( আঃ )

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি হজ্ব অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য মদীনায় আসলো। মসজিদে নববীতে একদিন হঠাৎ তার নজর গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি মসজিদের এক কোণে বসেছিলেন। সে ভাবতে লাগলো যে ,এ লোকটি কে ? নিকটেই দাঁড়ানো অপর এক লোককে জিজ্ঞাসা করলো , এ লোকটি কে ভাই ? সে বললো , তিনি হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) । পূর্ব থেকেই ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা12 তার মন-মগজকে (ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে) বিগড়ে রেখেছিল।

সুতরাং এ নামটি শোনার সাথে সাথেই ক্রোধ ও ক্ষোভে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। আর সে খোদার সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে গালি-গালাজের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলো। অশ্রাব্য ,বিশ্রী ও কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে সে ইমামকে গালি দিয়ে তার অন্তরের জ্বালা মিটালো এবং তার মনের ক্ষোভ-দুঃখ প্রকাশ করলো। ইমাম হোসাইন (আঃ) তার গালাগালিতে মোটেও রাগ করলেন না , বরং অত্যন্ত ভালোবেসে ও সদ্ব্যবহারের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আল-কোরআনের সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন ,যে আয়াতগুলোতে ভালো ব্যবহার , ক্ষমা প্রদর্শন ও মার্জনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলো পাঠ করার পর ইমাম হোসাইন (আঃ) সিরিয়ার অধিবাসী সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন , আমি তোমার যে কোন খেদমত ও সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি । তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি কি সিরিয়ার অধিবাসী ? জবাবে সে বললো , হ্যা! আমি একজন সিরিয়ার অধিবাসী । তখন ইমাম তাকে বললেন , সিরিয়াবাসীদের এরূপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আমি খব ভালোভাবে জানি ,এ দুর্ব্যবহার ও শত্রুতার কারণ কি ?

অতঃপর ইমাম লোকটিকে বললেন , তুমি এ শহরে একজন মুসাফির । বিদেশের বাড়িতে যদি তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি আমাকে বলো। আমি তোমার যে কোন খেদমত করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তোমাকে আমার মেহমান করতে চাই এবং তোমাকে পোশাক-পরিচ্ছদ ও টাকা-পয়সা ইত্যাদিও দিতে চাই । সিরিয়াবাসী লোকটি তার দুর্ব্যবহার ও গালিগালাজের জন্য একটা কঠোর পরিণতির অপেক্ষা করছিল। সে এমনটি কখনোই আশা করছিল না যে , তার এ অপরাধ ও ধৃষ্টতা একেবারেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে। ইমামের এ সুন্দর ব্যবহার তার মধ্যে এক আত্মিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সে নিজে নিজে বলতে লাগলো , আমার মন চায় যে , মাটি ফেটে দ্বিখন্ডিত হয়ে যাক আর আমি তাতে ঢুকে পড়ি। হায় আফসোস! নিজের অজ্ঞতার কারণে আমি যদি এ অপরাধ না করতাম! এর আগ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চেয়ে বড় দুশমন আর কেউ ছিল না। আর এখন আমার দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক প্রিয় আর কেউ নেই13

13

উপদেশ প্রার্থী এক ব্যক্তি

এক আরব বেদুঈন মদীনা শহরে এসে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আবেদন করলো , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন । মহানবী (সাঃ) তাকে বললেন , ক্রোধান্বিত হয়ো না । এর বেশি তাকে আর কিছুই বললেন না।

অতঃপর লোকটি তার গোত্রের মাঝে ফিরে গেল। বাড়ি ফিরেই সে জানতে পারলো যে , তার অনুপস্থিতিতে এক মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে। তারই গোত্রের যুবকরা অপর এক গোত্রের কিছু মালামাল জোরপূর্বক লুটপাট করে নিয়ে এসেছে। এর জবাবে সে গোত্রের লোকেরাও এদের অনেক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এভাবে লুটপাটের এ ধারা উভয় গোত্রের মাঝে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে ,এখন দুই গোত্রের লোকেরাই এক মারাত্মক যুদ্ধ-বিগ্রহ ও খুনাখুনির পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ খবর শোনা মাত্রই সে লোকটি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তৎক্ষণাত সে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলো এবং রণাঙ্গনের দিকে ছুটলো নিজের গোত্রের সঙ্গ দেবার জন্য।

ঠিক এমন সময় তার মনে পড়লো যে , সে মদীনায় গিয়েছিল এবং রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কাছে উপদেশ প্রার্থনা করেছিল , তখন মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন , নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখো

অতঃপর সে মনে মনে ভাবতে লাগলো , কেন আমি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলাম কোন কারণে আমি এভাবে যুদ্ধ করতে এবং খুনাখুনি করতে তৈরি হয়ে গেলাম ? কেনই বা আমি এরূপ ক্রোধান্বিত হয়ে গেলাম ? এসব প্রশ্ন তার মনে জেগে ওঠার পর সে ভাবলো : এখনই উপযুক্ত সময় , রসুলুলাহ (সাঃ) ছোট্ট উপদেশটি পালন করার।

এরপর সে এগিয়ে গেল এবং বিরোধী গোত্রের সরদারকে ডেকে বললো , এ সংঘাত কি জন্যে ? যদি এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য হয় সে সমস্ত মালামাল ফিরে পাওয়া যা আমাদের গোত্রের যুবকরা বোকামি করে তোমাদের থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে , তাহলে এসো আমি আমার নিজস্ব সম্পদ থেকে তোমাদের ক্ষতিপূর ণ করে দেই। এটা একটা ভালো কথা নয় যে , এর কারণে আমরা একে অপরের রক্তপিপাসু হয়ে যাবো

প্রতিপক্ষ গোত্রের লোকেরা যখন এ ব্যক্তির যুক্তিপূর্ণ ও উদারতাপূর্ণ কথাগুলো শুনলো তখন তাদের মধ্যেও বীরত্ববোধ জেগে উঠলো। বললো , আমরাও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে কম নই। যদি এমনটিই হয় তাহলে আমরা আমাদের দাবি প্রত্যাহার করলাম

তখন উভয় গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেল।14

4

উটের কোমর বাঁধা

কাফেলাটি বহুক্ষণ পথ চলেছিল। সকলের চেহারাতেই ক্লান্তির ছাপ। বহনকারী পশুগুলোও। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এমন একটি স্থানে উপস্থিত হলো যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেল। রসুলুলাহ (সাঃ) ও এ কাফেলার সাথে ছিলেন। তিনিও উটের পিঠ থেকে নেমে এলেন। সকলেই চেষ্টা করছিল যে , তাড়াতাড়ি পানির কাছে গিয়ে অযু ইত্যাদি সেরে নামাযের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

মহানবী (সাঃ)ও নামার পর পানির দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন। রাসূলের সাহাবী ও সাথীগণ আশ্চর্য হয়ে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগলেন যে , মনে হয় যাত্রা বিরতির জন্য এ স্থানটি আল্লাহর নবীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেবেন। সকলেই রাসূলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং নতুন হুকুমের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। লোকেরা আরো অধিক আশ্চর্য হলেন তখন , যখন তারা দেখলেন যে , মহানবী (সাঃ) নিজের উটের কোমরবন্ধনী (উটের কোমর বাঁধার রশি বিশেষ) হাতে নিলেন এবং নিজের উটের কোমর বাঁধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ।

চারদিক থেকে লোকেরা এসে বললেন , হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না ? আপনি কেন এ কাজটি করতে গেলেন ? এ কাজটির জন্য আপনি আবার ফিরে গেলেন। আমরা তো অত্যন্তগর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম

প্রিয় নবী (সাঃ) তাদের কথার জবাবে বললেন , নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সেটা একটি মেসওয়াকের ব্যাপারই হোক না কেন অর্থাৎ কাজটি ছোট হোক অথবা বিরাট ,অপরের ভরসায় বসে থাকার চেয়ে নিজেই করা উচিত5

5

হজ্বের সফর সঙ্গী

হজ্ব থেকে ফিরে এসে এক ব্যক্তি তার নিজের ও তার সঙ্গীদের হজ্বের সফরের কাহিনী ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ)-কে বর্ণনা করছিল। সে তার সাথীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির বিশেষ প্রশংসা করছিল। সে বলতে লাগলো যে , প্রকৃতপক্ষেই সে ব্যক্তিটি খুবই মোত্তাকী-পরহেযগার ও অত্যন্ত ইবাদতকারী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সব সময়ই মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়েছেন। আমরা যখনই কোথাও রাত্রি যাপন করার উদ্দেশ্যে যাত্রা বিরতি করতাম তখনই তিনি এক কিনারে চলে যেতেন এবং সাথে সাথেই জায়নামায বিছিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যেতেন।

ইমাম সাদিক (আঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তার কাজ-কর্মগুলো আঞ্জাম দিত কে ? কে তার জন্তুটির দেখাশোনা করতো ?

জবাবে লোকটি বললো : তার সমস্তকাজগুলো করে দেবার সৌভাগ্য আমাদেরই হয়েছিল। তিনি তো শুধু তাঁর নেক আমলের কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকতেন। এসব কাজের প্রতি তার কোন মনোযোগ ছিল না।

ইমাম (আঃ) বললেন , এ কারণেই তোমরা সকলে উক্ত মোত্তাকী পরহেযগার ও ইবাদতকারীর চেয়ে অধিক উত্তম

6

বনভোজন

হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গী দল নিজ নিজ বাহনের পিঠ থেকে নিচে নামলেন। মাল সামানগুলোকে খুলে মাটিতে রাখলেন। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন যে , একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরী করা হবে।

একজন সাহাবী বললেন , দুম্বা জবাই করা আমার দায়িত্বে রইলো

আরেকজন বললেন দুম্বার চামড়া ছাড়ানো এবং গোশত কাটার দায়িত্ব আমার।

তৃতীয় জন বললেন , গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার।

চতুর্থ জন বললেন ,

রসুলুলাহ (সাঃ) বললেন , কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার।

সকল সাহাবী এক সাথে বলে উঠলেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন ? আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা গর্বের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাক সেটে নিব।। রাসূল (সাঃ) বললেন , আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনো ভালোবাসেন না যে নিজের বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে এবং নিজেকে অপরের চেয়ে বিশেষ ব্যক্তিত্ব জ্ঞান করে6 এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানী কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন।7

7

হজ্বযাত্রী এক কাফেলা

মুসলমানদের একটি কাফেলা মক্কা যাচ্ছিল। মদীনা পৌঁছেই কাফেলার লোকেরা কয়েক দিনের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। কয়েক দিন বিশ্রাম গ্রহণের পর তারা আবার মদীনা থেকে মক্কার দিকে রওয়ানা হলো।

মক্কা ও মদীনার মাঝে এক স্থানে এসে কাফেলা আবার বিশ্রাম গ্রহণের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। এ সময় কাফেলার লোকদের সাথে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটলো যিনি কাফেলার সকল লোককে চিনতেন ও জানতেন। লোকটি যখন কাফেলার লোকদের সাথে আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত তখন তাঁর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি অত্যন্তহাসি মুখে কাফেলার লোকদের খেদমতে ব্যস্তছিলেন। লোকটি প্রথম দৃষ্টিতেই সে ব্যক্তিকে চিনতে পারলেন , যিনি খুব আনন্দমনে লোকদের খেদমত করে চলছিলেন। তাই অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে কাফেলার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা কি এ ব্যক্তিকে চেনো যিনি তোমাদের খেদমতে লেগে আছেন ? জবাবে তারা বললো , না ,আমরা এ লোকটিকে মোটেই চিনি না। এ লোকটি তো মদীনা থেকে আমাদের কাফেলার সাথে শামিল হয়েছে। তবে এ কয়েক দিনের সফরের সাথী হিসেবে এতোখানি বলতে পারি যে , এ লোকটি একজন সৎ লোক এবং অত্যন্ত মোত্তাকী-পরহেযগার। আমরা তাকে বলিনি ,আমাদের কাজ করে দাও। কিন্তু সে নিজেই অপরের খেদমতে লেগে আছে এবং সকলেরই সাহায্য-সহযোগিতা করে চলছে

কাফেলার লোকদের বন্ধুটি বললেন , আমি জানি তোমরা তাকে মোটেও চেনো না। যদি তোমরা তাকে চিনতেই পারতে তাহলে কখনও এমন অপরাধজনক কাজ করতে পারতে না যে , একজন সাধারণ খাদেমের ন্যায় তোমাদের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যেতে থাকবেন তিনি । এ কথা শুনে সকলে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , তিনি কে ?

লোকটি বললেন , তিনি হলেন আলী ইবনুল হোসাইন (আঃ) অর্থাৎ ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ)

এ কথা শুনেই কাফেলার সমস্তলোক হতবাক হয়ে গেল এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অত্যন্ত আদবের সাথে ইমামের হাতে চুমু খাওয়ার আশায় তাঁর দিকে এগিয়ে গেল। সমস্তলোক ইমামের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে অনুযোগের সুরে বলতে লাগলো , হে ইমাম! আপনি আমাদের সাথে এমনটি কেন করলেন ? সম্ভাবনা ছিল যে , আমরা অজ্ঞতাবশত আপনার সাথে মারাত্মক কোন অপরাধ করে বসতাম তাতে আমরা বড় গুণাহগার-পাপী হতাম

ইমাম বললেন , যেহেতু তোমরা কেউ আমাকে চিনতে না ,এ জন্যই আমি তোমাদের সফর সঙ্গী হয়েছি । কেননা আমি যখন চেনা-জানা লোকদের সাথে সফর করি তখন লোকেরা রাসূলে খোদা (সাঃ)-এর খাতিরে আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে আমার সাথে সদয় আচরণ করে। আর তারা আমাকে ছোটখাটো কোন কাজও করতে দেয় না। এ জন্যই আমি সফরের জন্য এমন একটি কাফেলা বেছে নিয়েছি যাদের কেউ আমাকে চেনে না যাতে করে আমি নিজের কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতে পারি। আর আমি লোকদের কাছে আমার পরিচয় এজন্য গোপন রেখেছি যাতে করে আমি আমার সাথীদের খেদমত করার সুযোগ লাভ করতে পারি8

8

এক মুসলমান ও এক আহলে কিতাব

সে সময় কুফা নগরী ছিল ইসলামী শাসনেরা প্রাণকেন্দ্র। সিরিয়া ছাড়াও ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্য সকল স্থানের সকল লোকের নজর তখন সে নগরীর দিকেই নিবন্ধ থাকতো এ জন্য যে , সেখান থেকে কখন কোন নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম জারী করা হয়।

এ শহর থেকে অনেক দূরে দুই ব্যক্তির সাথে রাস্তায় দেখা হলো। একজন মুসলমান আর অপরজন আহলে কিতাব (আহলে কিতাব মানে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান কিংবা যারথুস্ত্রীয়)। দুই জনেই একে অপরের গন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জানা গেল যে ,মুসলমান লোকটি কুফা শহরে যাবে। আর আহলে কিতাব লোকটি কুফার নিকটেই অন্য এক স্থানে যাবে। দুইজনে মিলে স্থির করলে যে , তারা এক সাথে সফর করবে। কেননা ,অনেক দূর পর্যন্ত দুইজনের রাস্তা একই। এক সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে পথ চলা যাবে।

দুজনের আন্তরিক আলাপ-আলোচনা ও বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পথ শেষ হয়ে এলো। অবশেষে তারা একটি দুই রাস্তার মোড়ে এসে উপস্থিত হলো যেখান থেকে দু জনের রাস্তা দু দিকে চলে গেছে। আহলে কিতাব লোকটি তার নিজের পথ ধরে চলতে লাগলো। কিছু দূর পথ চলার পর পিছনে ফিরে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো। সে দেখতে পেলো তার মুসলমান বন্ধুটি কুফার দিকে না গিয়ে তারই পিছে পিছে চলে আসছে। এ অবস্থা দেখে সে দাড়িয়ে গেল এবং তার মুসলমান বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসা করলো : কি ভাই! তুমি না বলেছিলে যে , তুমি কুফা যাবে ?

জবাবে মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি তো এখনো বলছি যে ,আমি কুফা যাবো

আহলে কিতাব লোকটি বললো , তাহলে তুমি এদিকে আসছো কেন ? এটা তো কুফার রাস্তা নয়। কুফা যাবার রাস্তা তো ঐটা।

মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি জানি। কিন্তু আমার মন চাইলো যে , কিছু দূর পর্যন্তআমি তোমার সঙ্গ দেবো। কেননা আমাদের নবী বলেছেন যখন দু ব্যক্তি এক সাথে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে পথ চলে তখন একে অপরের প্রতি অধিকার লাভ করে। এখন তোমারও আমার ওপর। সতরাং আমি অধিকার রয়েছে। আমি সে অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য কিছু দূর পর্যন্ততোমার সাথে চলতে চাই। এরপর তো আমি আমার পথেই ফিরে যাবো

আহলে কিতাব বললো , ওহ্! তোমাদের নবী যে মানুষের উপর এতোই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এতো দ্রুত বিশ্বে প্রসার লাভ করেছি ,এটা নিশ্চয় তাঁর এই উত্তম চরিত্রেরই গুণে ছিল।

আহলে কিতাব লোকটি আরো বেশী অবাক হলো তখন যখন সে জানতে পারলো যে , তার সফর সঙ্গী মুসলমান বন্ধুটি আর কেউ নন ,বরং মুসলিম মিলাতের বর্তমান খলিফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ)। তৎক্ষণাত সে আহলে কিতাব লোকটি ইসলাম গ্রহণ করে মসলমান হয়ে গেল এবং হযরত আলীর একজন বিশ্বস্তও অনুগত সাহাবীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো।9

9

খলিফার সান্নিধ্যে

হযরত আলী (আঃ) কুফার দিকে আসছিলেন। পথে আম্বার নামক এক শহরে উপস্থিত হলেন। যেখানকার বেশীর ভাগ অধিবাসী ছিল ইরানী। ইরানী কৃষক ও মাতব্বররা যখন জানতে পারলো যে , তাদের প্রিয় খলিফা তাদেরই শহর দিয়ে অতিক্রম করবেন তখন তাদের আর আনন্দের সীমা রইলো না। সকলে তাদের খলিফাকে স্বাগতম ও খোশ আমদেদ জানাবার জন্য দৌঁড়ে এলো। হযরত আলী (আঃ)-এর বাহন যখন এগিয়ে চললো তখন লোকেরাও বাহনের আগে আগে দৌঁড়াতে লাগলো। হযরত আলী (আঃ) নিজের বাহন থামিয়ে দিয়ে লোকদেরকে ডেকে পাঠালেন। লোকেরা যখন তার কাছে এলো তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা এভাবে দৌঁড়াদৌড়ি করছো কেন ? এভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ির পেছনে তোমাদের উদ্দেশ্য কি ?

লোকেরা বললো , আসলে এটা শাসকবর্গ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা রীতি। বহুকাল আগ থেকে প্রচলিত আমাদের একটি প্রথা

হযরত আলী (আঃ) তাদেরকে বললেন , তোমাদের এ কাজ দুনিয়াতে তোমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে আর পরকালেও এর কারণে অনেক শাস্তিভোগ করতে হবে। এমন কাজ কখনো করবে না ,যা তোমাদের অপমান ও লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আর তোমরাই দেখো যে ,তোমাদের এ কাজের দ্বারা তোমাদের 1 নেতা ও অমীরেরই বা কি লাভ হয় ?10

10

ইমাম বাক্বের ( আঃ ) ও এক খ্রিস্টান

ইমাম বাক্বের (আঃ)। নাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনিল হোসাইন (আঃ) । যার উপাধি ছিল বাক্বের । বাক্বের শব্দের আভিধানিক অর্থ ভাগ-বিশেষণকারী। তাকে বলা হতো বাক্বেরুল উলুম যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাগ-বিশেষণ ও ব্যাখ্যাকারী।

এক খ্রিস্টান বাক্বের শব্দের বিকৃত উচ্চারণ করে ইমামের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে চাইলো। সে ইমামকে উদ্দেশ্যে করে বললো , [আনতা বাক্বার] অর্থাৎ তুমি গাভী

ইমাম কোন প্রকার অসন্তুষ্টি বা রাগান্বিত না হয়ে অত্যন্তসরল ও সহজ ভাষায় বললেন , না ভাই! আমি বাক্বার (গাভী) নই। আমি বাক্বের (বিশেষণকারী)

অতঃপর খ্রিস্টান লোকটি বললো , তুমি একটা রাঁধুনির ছেলে। ইমাম বললেন ,এটা তার পেশা ছিল । এতে কোনো লজ্জা বা ঘৃণার কিছু নেই।

খ্রিস্টান লোকটি আরো বললো , তোমার মা ছিল কালো কুৎসিত। তার লজ্জা-শরম কিছুই ছিল না। আর তার ভাষাও ছিল বিশ্রী

এবারও ইমাম অত্যন্তসহজ-সরল ভাষায় বললেন , আমার মাতা সম্পর্কে তুমি যে সব অপবাদ দিচ্ছো তা যদি সত্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ যেন তার গুণাহ খাতা মাফ করে দেন। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে যেনো তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দেন। কেননা কারো সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া বড়ই গুণাহের কাজ

একজন মানুষ যার জন্যে ইসলামের বহির্ভূত একজন লোককে শাস্তি দেয়ার সব ধরনের সামর্থ্য তার ছিল ,অথচ এতটা ধৈর্য্য ধরলেন। এটুকুই ঐ খ্রিস্টান লোকটির মনের ভেতরে বিপ্লব সংঘটনের জন্য এবং তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

পরবর্তীতে খ্রিস্টান লোকটি মসলমানু হয়।

11

এক আরব বেদুঈন ও রাসূলে আকরাম ( সাঃ )

এক আরব বেঈদুন মদীনা শহরে এসে সোজা মসজিদে নববীতে চলে গেল। তার উদ্দেশ্য ছিল মহানবী (সাঃ)-এর কাছ থেকে সোনা-দানা টাকা-পয়সা নিবে। সে সময় প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। বেদুঈন লোকটি রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সামনে এসে তার আরজ পেশ করলো এবং তাকে কিছু দান করার জন্য আবেদন জানালো। আল্লাহর নবী (সাঃ) তাকে কিছু দান করলেন। কিন্তু তাতে সে সন্তুষ্ট হলো না। সে রাসূলের (সাঃ) দানকে সামান্য গণ্য করলো। তাছাড়া সে কিছু বিশ্রী শব্দ ব্যবহার করে রাসল (সাঃ) এর প্রতি বেয়াদবি করলো। এ অবস্থা দেখে রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীরা প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং ঐ লোকটিকে কঠিন শাস্তিদেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কিন্তু মহানবী (সাঃ) তাদেরকে থামিয়ে দিলেন।

এরপর রাসূলে খোদা (সাঃ) লোকটিকে সাথে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গেলেন এবং তাকে আরো কিছু সাহায্য দান করলেন। এ সময় বেদুঈন লোকটি নিজের চোখে দেখতে পেলো যে ,রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জীবন ও অন্যান্য নেতা ও শাসকদের জীবনের অবস্থার মধ্যে কোন মিল নেই। আর সে রাসূলের কাছে যে সোনা দানা আশা করেছিলো আসলেই তা তারঁ কাছে নেই।

বেদুঈন আরব সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো এবং মুখে কতৃজ্ঞতার ভাষা উচ্চারণ করলো। তখন মহানবী (সাঃ) আরব বেদঈনকে বললেন , গতকাল তুমি আমার সম্পর্কে বিশ্রী কথাবার্তা বলেছ যা আমার সাহাবীদেরকে উত্তেজিত করে দেয়। তারা তোমার উপর খুবই অসন্তুষ্ট। এখন আমার ভয় হচ্ছে যে ,তারা তোমার কোন ক্ষতি করে বসতে পারে। এখন তুমি আমার সামনে কৃতজ্ঞতার কথা বলেছ। অতএব এটা কি সম্ভব যে ,তুমি তোমার এ কথাটি তাদের সামনেও প্রকাশ করবে যাতে তাদের রাগ দূর হয়ে যায় ? জবাবে সে বললো , এতে আমার কোন আপত্তি নেই

পরদিন বেদুঈন লোকটি মসজিদে নববীতে গেল। যখন সবাই সেখানে সমবেত ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , লোকসকল! এ লোকটি বলছে যে আমার প্রতি সে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। কি ? এ কথা কি সঠিক ?

বেদুঈন লোকটি বললো , জ্বি ,এটাই সঠিক। অতঃপর সে ঐ কথাটাই বিড়বিড় করে বললো যা ইতোপূর্বে বলেছিল। রসূলে খোদা (সাঃ) এর সাহাবীরা তখন হেসে ফেললেন।

এ সময় আল্লাহর নবী (সাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন , এ লোকটি আর আমার ঘটনাটির উদাহরণ হলো সে ব্যক্তির মতো ,যার উট স্বীয় মালিকের প্রতি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। আর লোকেরা উটের মালিককে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে শোরগোল শুরুকরে দিল এবং সে পলায়নকারী উটটির পিছে পিছে দৌঁড়াতে লাগলো। উটটি আরো আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত পালাতে লাগলো। এ অবস্থা দেখে উটের মালিক সকল লোককে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিয়ে বললো , ভাইসব! অনুরোধ করছি আমার উটের পিছনে কাউকে দৌঁড়াতে হবে না। আমার উটকে কিভাবে শান্তকরতে হয় সেটা আমি ভালো জানি।

তার এ আহ্বান শুনে উটের পিছে দৌঁড়ানো লোকজন থেমে গেল। তারপর উটের মালিক এক মুষ্টি ঘাস নিজের হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে উটের কাছে পৌঁছে গেল। আর খুব সহজে উটের বলা (লাগাম বিশেষ) নিজের হাতে নিয়ে নিল। উটটি তখন মালিকের সাথে ফিরে এলো।

গতকাল যদি আমি তোমাদেরকে বারণ না করতাম তাহলে এ আরব বেদুঈনকে তার জীবন হারাতে হতো। তোমরা তাকে জীবিত ছেড়ে দিতে না। তাতে লোকটি কুফরী ও মূর্তি পূজারীর অবস্থায় মারা যেতো। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি তোমাদেরকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেইনি। আর এখন তোমরা নিজেরাই দেখতে পেলে যে ,আমি আমার ভালোবাসা ও নম্র ব্যহার দ্বারা লোকটিকে একেবারেই মুগ্ধ করে ফেলেছি11

12

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি ও ইমাম হোসাইন ( আঃ )

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি হজ্ব অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য মদীনায় আসলো। মসজিদে নববীতে একদিন হঠাৎ তার নজর গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি মসজিদের এক কোণে বসেছিলেন। সে ভাবতে লাগলো যে ,এ লোকটি কে ? নিকটেই দাঁড়ানো অপর এক লোককে জিজ্ঞাসা করলো , এ লোকটি কে ভাই ? সে বললো , তিনি হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) । পূর্ব থেকেই ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা12 তার মন-মগজকে (ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে) বিগড়ে রেখেছিল।

সুতরাং এ নামটি শোনার সাথে সাথেই ক্রোধ ও ক্ষোভে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। আর সে খোদার সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে গালি-গালাজের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলো। অশ্রাব্য ,বিশ্রী ও কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে সে ইমামকে গালি দিয়ে তার অন্তরের জ্বালা মিটালো এবং তার মনের ক্ষোভ-দুঃখ প্রকাশ করলো। ইমাম হোসাইন (আঃ) তার গালাগালিতে মোটেও রাগ করলেন না , বরং অত্যন্ত ভালোবেসে ও সদ্ব্যবহারের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আল-কোরআনের সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন ,যে আয়াতগুলোতে ভালো ব্যবহার , ক্ষমা প্রদর্শন ও মার্জনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলো পাঠ করার পর ইমাম হোসাইন (আঃ) সিরিয়ার অধিবাসী সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন , আমি তোমার যে কোন খেদমত ও সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি । তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি কি সিরিয়ার অধিবাসী ? জবাবে সে বললো , হ্যা! আমি একজন সিরিয়ার অধিবাসী । তখন ইমাম তাকে বললেন , সিরিয়াবাসীদের এরূপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আমি খব ভালোভাবে জানি ,এ দুর্ব্যবহার ও শত্রুতার কারণ কি ?

অতঃপর ইমাম লোকটিকে বললেন , তুমি এ শহরে একজন মুসাফির । বিদেশের বাড়িতে যদি তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি আমাকে বলো। আমি তোমার যে কোন খেদমত করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তোমাকে আমার মেহমান করতে চাই এবং তোমাকে পোশাক-পরিচ্ছদ ও টাকা-পয়সা ইত্যাদিও দিতে চাই । সিরিয়াবাসী লোকটি তার দুর্ব্যবহার ও গালিগালাজের জন্য একটা কঠোর পরিণতির অপেক্ষা করছিল। সে এমনটি কখনোই আশা করছিল না যে , তার এ অপরাধ ও ধৃষ্টতা একেবারেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে। ইমামের এ সুন্দর ব্যবহার তার মধ্যে এক আত্মিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সে নিজে নিজে বলতে লাগলো , আমার মন চায় যে , মাটি ফেটে দ্বিখন্ডিত হয়ে যাক আর আমি তাতে ঢুকে পড়ি। হায় আফসোস! নিজের অজ্ঞতার কারণে আমি যদি এ অপরাধ না করতাম! এর আগ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চেয়ে বড় দুশমন আর কেউ ছিল না। আর এখন আমার দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক প্রিয় আর কেউ নেই13

13

উপদেশ প্রার্থী এক ব্যক্তি

এক আরব বেদুঈন মদীনা শহরে এসে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আবেদন করলো , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন । মহানবী (সাঃ) তাকে বললেন , ক্রোধান্বিত হয়ো না । এর বেশি তাকে আর কিছুই বললেন না।

অতঃপর লোকটি তার গোত্রের মাঝে ফিরে গেল। বাড়ি ফিরেই সে জানতে পারলো যে , তার অনুপস্থিতিতে এক মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে। তারই গোত্রের যুবকরা অপর এক গোত্রের কিছু মালামাল জোরপূর্বক লুটপাট করে নিয়ে এসেছে। এর জবাবে সে গোত্রের লোকেরাও এদের অনেক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এভাবে লুটপাটের এ ধারা উভয় গোত্রের মাঝে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে ,এখন দুই গোত্রের লোকেরাই এক মারাত্মক যুদ্ধ-বিগ্রহ ও খুনাখুনির পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ খবর শোনা মাত্রই সে লোকটি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তৎক্ষণাত সে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলো এবং রণাঙ্গনের দিকে ছুটলো নিজের গোত্রের সঙ্গ দেবার জন্য।

ঠিক এমন সময় তার মনে পড়লো যে , সে মদীনায় গিয়েছিল এবং রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কাছে উপদেশ প্রার্থনা করেছিল , তখন মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন , নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখো

অতঃপর সে মনে মনে ভাবতে লাগলো , কেন আমি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলাম কোন কারণে আমি এভাবে যুদ্ধ করতে এবং খুনাখুনি করতে তৈরি হয়ে গেলাম ? কেনই বা আমি এরূপ ক্রোধান্বিত হয়ে গেলাম ? এসব প্রশ্ন তার মনে জেগে ওঠার পর সে ভাবলো : এখনই উপযুক্ত সময় , রসুলুলাহ (সাঃ) ছোট্ট উপদেশটি পালন করার।

এরপর সে এগিয়ে গেল এবং বিরোধী গোত্রের সরদারকে ডেকে বললো , এ সংঘাত কি জন্যে ? যদি এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য হয় সে সমস্ত মালামাল ফিরে পাওয়া যা আমাদের গোত্রের যুবকরা বোকামি করে তোমাদের থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে , তাহলে এসো আমি আমার নিজস্ব সম্পদ থেকে তোমাদের ক্ষতিপূর ণ করে দেই। এটা একটা ভালো কথা নয় যে , এর কারণে আমরা একে অপরের রক্তপিপাসু হয়ে যাবো

প্রতিপক্ষ গোত্রের লোকেরা যখন এ ব্যক্তির যুক্তিপূর্ণ ও উদারতাপূর্ণ কথাগুলো শুনলো তখন তাদের মধ্যেও বীরত্ববোধ জেগে উঠলো। বললো , আমরাও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে কম নই। যদি এমনটিই হয় তাহলে আমরা আমাদের দাবি প্রত্যাহার করলাম

তখন উভয় গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেল।14

4

উটের কোমর বাঁধা

কাফেলাটি বহুক্ষণ পথ চলেছিল। সকলের চেহারাতেই ক্লান্তির ছাপ। বহনকারী পশুগুলোও। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এমন একটি স্থানে উপস্থিত হলো যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেল। রসুলুলাহ (সাঃ) ও এ কাফেলার সাথে ছিলেন। তিনিও উটের পিঠ থেকে নেমে এলেন। সকলেই চেষ্টা করছিল যে , তাড়াতাড়ি পানির কাছে গিয়ে অযু ইত্যাদি সেরে নামাযের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

মহানবী (সাঃ)ও নামার পর পানির দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন। রাসূলের সাহাবী ও সাথীগণ আশ্চর্য হয়ে পরস্পরে বলাবলি করতে লাগলেন যে , মনে হয় যাত্রা বিরতির জন্য এ স্থানটি আল্লাহর নবীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেবেন। সকলেই রাসূলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং নতুন হুকুমের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। লোকেরা আরো অধিক আশ্চর্য হলেন তখন , যখন তারা দেখলেন যে , মহানবী (সাঃ) নিজের উটের কোমরবন্ধনী (উটের কোমর বাঁধার রশি বিশেষ) হাতে নিলেন এবং নিজের উটের কোমর বাঁধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ।

চারদিক থেকে লোকেরা এসে বললেন , হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না ? আপনি কেন এ কাজটি করতে গেলেন ? এ কাজটির জন্য আপনি আবার ফিরে গেলেন। আমরা তো অত্যন্তগর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম

প্রিয় নবী (সাঃ) তাদের কথার জবাবে বললেন , নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সেটা একটি মেসওয়াকের ব্যাপারই হোক না কেন অর্থাৎ কাজটি ছোট হোক অথবা বিরাট ,অপরের ভরসায় বসে থাকার চেয়ে নিজেই করা উচিত5

5

হজ্বের সফর সঙ্গী

হজ্ব থেকে ফিরে এসে এক ব্যক্তি তার নিজের ও তার সঙ্গীদের হজ্বের সফরের কাহিনী ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ)-কে বর্ণনা করছিল। সে তার সাথীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির বিশেষ প্রশংসা করছিল। সে বলতে লাগলো যে , প্রকৃতপক্ষেই সে ব্যক্তিটি খুবই মোত্তাকী-পরহেযগার ও অত্যন্ত ইবাদতকারী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সব সময়ই মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে কাটিয়েছেন। আমরা যখনই কোথাও রাত্রি যাপন করার উদ্দেশ্যে যাত্রা বিরতি করতাম তখনই তিনি এক কিনারে চলে যেতেন এবং সাথে সাথেই জায়নামায বিছিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়ে যেতেন।

ইমাম সাদিক (আঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তার কাজ-কর্মগুলো আঞ্জাম দিত কে ? কে তার জন্তুটির দেখাশোনা করতো ?

জবাবে লোকটি বললো : তার সমস্তকাজগুলো করে দেবার সৌভাগ্য আমাদেরই হয়েছিল। তিনি তো শুধু তাঁর নেক আমলের কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকতেন। এসব কাজের প্রতি তার কোন মনোযোগ ছিল না।

ইমাম (আঃ) বললেন , এ কারণেই তোমরা সকলে উক্ত মোত্তাকী পরহেযগার ও ইবাদতকারীর চেয়ে অধিক উত্তম

6

বনভোজন

হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গী দল নিজ নিজ বাহনের পিঠ থেকে নিচে নামলেন। মাল সামানগুলোকে খুলে মাটিতে রাখলেন। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন যে , একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরী করা হবে।

একজন সাহাবী বললেন , দুম্বা জবাই করা আমার দায়িত্বে রইলো

আরেকজন বললেন দুম্বার চামড়া ছাড়ানো এবং গোশত কাটার দায়িত্ব আমার।

তৃতীয় জন বললেন , গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার।

চতুর্থ জন বললেন ,

রসুলুলাহ (সাঃ) বললেন , কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার।

সকল সাহাবী এক সাথে বলে উঠলেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন ? আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা গর্বের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাক সেটে নিব।। রাসূল (সাঃ) বললেন , আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনো ভালোবাসেন না যে নিজের বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে এবং নিজেকে অপরের চেয়ে বিশেষ ব্যক্তিত্ব জ্ঞান করে6 এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানী কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন।7

7

হজ্বযাত্রী এক কাফেলা

মুসলমানদের একটি কাফেলা মক্কা যাচ্ছিল। মদীনা পৌঁছেই কাফেলার লোকেরা কয়েক দিনের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। কয়েক দিন বিশ্রাম গ্রহণের পর তারা আবার মদীনা থেকে মক্কার দিকে রওয়ানা হলো।

মক্কা ও মদীনার মাঝে এক স্থানে এসে কাফেলা আবার বিশ্রাম গ্রহণের জন্য যাত্রা বিরতি করলো। এ সময় কাফেলার লোকদের সাথে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত ঘটলো যিনি কাফেলার সকল লোককে চিনতেন ও জানতেন। লোকটি যখন কাফেলার লোকদের সাথে আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত তখন তাঁর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি অত্যন্তহাসি মুখে কাফেলার লোকদের খেদমতে ব্যস্তছিলেন। লোকটি প্রথম দৃষ্টিতেই সে ব্যক্তিকে চিনতে পারলেন , যিনি খুব আনন্দমনে লোকদের খেদমত করে চলছিলেন। তাই অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে কাফেলার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা কি এ ব্যক্তিকে চেনো যিনি তোমাদের খেদমতে লেগে আছেন ? জবাবে তারা বললো , না ,আমরা এ লোকটিকে মোটেই চিনি না। এ লোকটি তো মদীনা থেকে আমাদের কাফেলার সাথে শামিল হয়েছে। তবে এ কয়েক দিনের সফরের সাথী হিসেবে এতোখানি বলতে পারি যে , এ লোকটি একজন সৎ লোক এবং অত্যন্ত মোত্তাকী-পরহেযগার। আমরা তাকে বলিনি ,আমাদের কাজ করে দাও। কিন্তু সে নিজেই অপরের খেদমতে লেগে আছে এবং সকলেরই সাহায্য-সহযোগিতা করে চলছে

কাফেলার লোকদের বন্ধুটি বললেন , আমি জানি তোমরা তাকে মোটেও চেনো না। যদি তোমরা তাকে চিনতেই পারতে তাহলে কখনও এমন অপরাধজনক কাজ করতে পারতে না যে , একজন সাধারণ খাদেমের ন্যায় তোমাদের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যেতে থাকবেন তিনি । এ কথা শুনে সকলে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , তিনি কে ?

লোকটি বললেন , তিনি হলেন আলী ইবনুল হোসাইন (আঃ) অর্থাৎ ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ)

এ কথা শুনেই কাফেলার সমস্তলোক হতবাক হয়ে গেল এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অত্যন্ত আদবের সাথে ইমামের হাতে চুমু খাওয়ার আশায় তাঁর দিকে এগিয়ে গেল। সমস্তলোক ইমামের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে অনুযোগের সুরে বলতে লাগলো , হে ইমাম! আপনি আমাদের সাথে এমনটি কেন করলেন ? সম্ভাবনা ছিল যে , আমরা অজ্ঞতাবশত আপনার সাথে মারাত্মক কোন অপরাধ করে বসতাম তাতে আমরা বড় গুণাহগার-পাপী হতাম

ইমাম বললেন , যেহেতু তোমরা কেউ আমাকে চিনতে না ,এ জন্যই আমি তোমাদের সফর সঙ্গী হয়েছি । কেননা আমি যখন চেনা-জানা লোকদের সাথে সফর করি তখন লোকেরা রাসূলে খোদা (সাঃ)-এর খাতিরে আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে আমার সাথে সদয় আচরণ করে। আর তারা আমাকে ছোটখাটো কোন কাজও করতে দেয় না। এ জন্যই আমি সফরের জন্য এমন একটি কাফেলা বেছে নিয়েছি যাদের কেউ আমাকে চেনে না যাতে করে আমি নিজের কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতে পারি। আর আমি লোকদের কাছে আমার পরিচয় এজন্য গোপন রেখেছি যাতে করে আমি আমার সাথীদের খেদমত করার সুযোগ লাভ করতে পারি8

8

এক মুসলমান ও এক আহলে কিতাব

সে সময় কুফা নগরী ছিল ইসলামী শাসনেরা প্রাণকেন্দ্র। সিরিয়া ছাড়াও ইসলামী সাম্রাজ্যের অন্য সকল স্থানের সকল লোকের নজর তখন সে নগরীর দিকেই নিবন্ধ থাকতো এ জন্য যে , সেখান থেকে কখন কোন নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম জারী করা হয়।

এ শহর থেকে অনেক দূরে দুই ব্যক্তির সাথে রাস্তায় দেখা হলো। একজন মুসলমান আর অপরজন আহলে কিতাব (আহলে কিতাব মানে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান কিংবা যারথুস্ত্রীয়)। দুই জনেই একে অপরের গন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জানা গেল যে ,মুসলমান লোকটি কুফা শহরে যাবে। আর আহলে কিতাব লোকটি কুফার নিকটেই অন্য এক স্থানে যাবে। দুইজনে মিলে স্থির করলে যে , তারা এক সাথে সফর করবে। কেননা ,অনেক দূর পর্যন্ত দুইজনের রাস্তা একই। এক সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে পথ চলা যাবে।

দুজনের আন্তরিক আলাপ-আলোচনা ও বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পথ শেষ হয়ে এলো। অবশেষে তারা একটি দুই রাস্তার মোড়ে এসে উপস্থিত হলো যেখান থেকে দু জনের রাস্তা দু দিকে চলে গেছে। আহলে কিতাব লোকটি তার নিজের পথ ধরে চলতে লাগলো। কিছু দূর পথ চলার পর পিছনে ফিরে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো। সে দেখতে পেলো তার মুসলমান বন্ধুটি কুফার দিকে না গিয়ে তারই পিছে পিছে চলে আসছে। এ অবস্থা দেখে সে দাড়িয়ে গেল এবং তার মুসলমান বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসা করলো : কি ভাই! তুমি না বলেছিলে যে , তুমি কুফা যাবে ?

জবাবে মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি তো এখনো বলছি যে ,আমি কুফা যাবো

আহলে কিতাব লোকটি বললো , তাহলে তুমি এদিকে আসছো কেন ? এটা তো কুফার রাস্তা নয়। কুফা যাবার রাস্তা তো ঐটা।

মুসলমান বন্ধুটি বললো , আমি জানি। কিন্তু আমার মন চাইলো যে , কিছু দূর পর্যন্তআমি তোমার সঙ্গ দেবো। কেননা আমাদের নবী বলেছেন যখন দু ব্যক্তি এক সাথে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে পথ চলে তখন একে অপরের প্রতি অধিকার লাভ করে। এখন তোমারও আমার ওপর। সতরাং আমি অধিকার রয়েছে। আমি সে অধিকার আদায় করার উদ্দেশ্য কিছু দূর পর্যন্ততোমার সাথে চলতে চাই। এরপর তো আমি আমার পথেই ফিরে যাবো

আহলে কিতাব বললো , ওহ্! তোমাদের নবী যে মানুষের উপর এতোই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এতো দ্রুত বিশ্বে প্রসার লাভ করেছি ,এটা নিশ্চয় তাঁর এই উত্তম চরিত্রেরই গুণে ছিল।

আহলে কিতাব লোকটি আরো বেশী অবাক হলো তখন যখন সে জানতে পারলো যে , তার সফর সঙ্গী মুসলমান বন্ধুটি আর কেউ নন ,বরং মুসলিম মিলাতের বর্তমান খলিফা হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ)। তৎক্ষণাত সে আহলে কিতাব লোকটি ইসলাম গ্রহণ করে মসলমান হয়ে গেল এবং হযরত আলীর একজন বিশ্বস্তও অনুগত সাহাবীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো।9

9

খলিফার সান্নিধ্যে

হযরত আলী (আঃ) কুফার দিকে আসছিলেন। পথে আম্বার নামক এক শহরে উপস্থিত হলেন। যেখানকার বেশীর ভাগ অধিবাসী ছিল ইরানী। ইরানী কৃষক ও মাতব্বররা যখন জানতে পারলো যে , তাদের প্রিয় খলিফা তাদেরই শহর দিয়ে অতিক্রম করবেন তখন তাদের আর আনন্দের সীমা রইলো না। সকলে তাদের খলিফাকে স্বাগতম ও খোশ আমদেদ জানাবার জন্য দৌঁড়ে এলো। হযরত আলী (আঃ)-এর বাহন যখন এগিয়ে চললো তখন লোকেরাও বাহনের আগে আগে দৌঁড়াতে লাগলো। হযরত আলী (আঃ) নিজের বাহন থামিয়ে দিয়ে লোকদেরকে ডেকে পাঠালেন। লোকেরা যখন তার কাছে এলো তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন , তোমরা এভাবে দৌঁড়াদৌড়ি করছো কেন ? এভাবে দৌঁড়াদৌঁড়ির পেছনে তোমাদের উদ্দেশ্য কি ?

লোকেরা বললো , আসলে এটা শাসকবর্গ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা রীতি। বহুকাল আগ থেকে প্রচলিত আমাদের একটি প্রথা

হযরত আলী (আঃ) তাদেরকে বললেন , তোমাদের এ কাজ দুনিয়াতে তোমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে আর পরকালেও এর কারণে অনেক শাস্তিভোগ করতে হবে। এমন কাজ কখনো করবে না ,যা তোমাদের অপমান ও লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আর তোমরাই দেখো যে ,তোমাদের এ কাজের দ্বারা তোমাদের 1 নেতা ও অমীরেরই বা কি লাভ হয় ?10

10

ইমাম বাক্বের ( আঃ ) ও এক খ্রিস্টান

ইমাম বাক্বের (আঃ)। নাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনিল হোসাইন (আঃ) । যার উপাধি ছিল বাক্বের । বাক্বের শব্দের আভিধানিক অর্থ ভাগ-বিশেষণকারী। তাকে বলা হতো বাক্বেরুল উলুম যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাগ-বিশেষণ ও ব্যাখ্যাকারী।

এক খ্রিস্টান বাক্বের শব্দের বিকৃত উচ্চারণ করে ইমামের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে চাইলো। সে ইমামকে উদ্দেশ্যে করে বললো , [আনতা বাক্বার] অর্থাৎ তুমি গাভী

ইমাম কোন প্রকার অসন্তুষ্টি বা রাগান্বিত না হয়ে অত্যন্তসরল ও সহজ ভাষায় বললেন , না ভাই! আমি বাক্বার (গাভী) নই। আমি বাক্বের (বিশেষণকারী)

অতঃপর খ্রিস্টান লোকটি বললো , তুমি একটা রাঁধুনির ছেলে। ইমাম বললেন ,এটা তার পেশা ছিল । এতে কোনো লজ্জা বা ঘৃণার কিছু নেই।

খ্রিস্টান লোকটি আরো বললো , তোমার মা ছিল কালো কুৎসিত। তার লজ্জা-শরম কিছুই ছিল না। আর তার ভাষাও ছিল বিশ্রী

এবারও ইমাম অত্যন্তসহজ-সরল ভাষায় বললেন , আমার মাতা সম্পর্কে তুমি যে সব অপবাদ দিচ্ছো তা যদি সত্য হয় তাহলে মহান আল্লাহ যেন তার গুণাহ খাতা মাফ করে দেন। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে যেনো তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দেন। কেননা কারো সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া বড়ই গুণাহের কাজ

একজন মানুষ যার জন্যে ইসলামের বহির্ভূত একজন লোককে শাস্তি দেয়ার সব ধরনের সামর্থ্য তার ছিল ,অথচ এতটা ধৈর্য্য ধরলেন। এটুকুই ঐ খ্রিস্টান লোকটির মনের ভেতরে বিপ্লব সংঘটনের জন্য এবং তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

পরবর্তীতে খ্রিস্টান লোকটি মসলমানু হয়।

11

এক আরব বেদুঈন ও রাসূলে আকরাম ( সাঃ )

এক আরব বেঈদুন মদীনা শহরে এসে সোজা মসজিদে নববীতে চলে গেল। তার উদ্দেশ্য ছিল মহানবী (সাঃ)-এর কাছ থেকে সোনা-দানা টাকা-পয়সা নিবে। সে সময় প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। বেদুঈন লোকটি রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সামনে এসে তার আরজ পেশ করলো এবং তাকে কিছু দান করার জন্য আবেদন জানালো। আল্লাহর নবী (সাঃ) তাকে কিছু দান করলেন। কিন্তু তাতে সে সন্তুষ্ট হলো না। সে রাসূলের (সাঃ) দানকে সামান্য গণ্য করলো। তাছাড়া সে কিছু বিশ্রী শব্দ ব্যবহার করে রাসল (সাঃ) এর প্রতি বেয়াদবি করলো। এ অবস্থা দেখে রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীরা প্রচণ্ড রেগে গেলেন এবং ঐ লোকটিকে কঠিন শাস্তিদেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। কিন্তু মহানবী (সাঃ) তাদেরকে থামিয়ে দিলেন।

এরপর রাসূলে খোদা (সাঃ) লোকটিকে সাথে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গেলেন এবং তাকে আরো কিছু সাহায্য দান করলেন। এ সময় বেদুঈন লোকটি নিজের চোখে দেখতে পেলো যে ,রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জীবন ও অন্যান্য নেতা ও শাসকদের জীবনের অবস্থার মধ্যে কোন মিল নেই। আর সে রাসূলের কাছে যে সোনা দানা আশা করেছিলো আসলেই তা তারঁ কাছে নেই।

বেদুঈন আরব সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো এবং মুখে কতৃজ্ঞতার ভাষা উচ্চারণ করলো। তখন মহানবী (সাঃ) আরব বেদঈনকে বললেন , গতকাল তুমি আমার সম্পর্কে বিশ্রী কথাবার্তা বলেছ যা আমার সাহাবীদেরকে উত্তেজিত করে দেয়। তারা তোমার উপর খুবই অসন্তুষ্ট। এখন আমার ভয় হচ্ছে যে ,তারা তোমার কোন ক্ষতি করে বসতে পারে। এখন তুমি আমার সামনে কৃতজ্ঞতার কথা বলেছ। অতএব এটা কি সম্ভব যে ,তুমি তোমার এ কথাটি তাদের সামনেও প্রকাশ করবে যাতে তাদের রাগ দূর হয়ে যায় ? জবাবে সে বললো , এতে আমার কোন আপত্তি নেই

পরদিন বেদুঈন লোকটি মসজিদে নববীতে গেল। যখন সবাই সেখানে সমবেত ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , লোকসকল! এ লোকটি বলছে যে আমার প্রতি সে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। কি ? এ কথা কি সঠিক ?

বেদুঈন লোকটি বললো , জ্বি ,এটাই সঠিক। অতঃপর সে ঐ কথাটাই বিড়বিড় করে বললো যা ইতোপূর্বে বলেছিল। রসূলে খোদা (সাঃ) এর সাহাবীরা তখন হেসে ফেললেন।

এ সময় আল্লাহর নবী (সাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন , এ লোকটি আর আমার ঘটনাটির উদাহরণ হলো সে ব্যক্তির মতো ,যার উট স্বীয় মালিকের প্রতি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। আর লোকেরা উটের মালিককে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে শোরগোল শুরুকরে দিল এবং সে পলায়নকারী উটটির পিছে পিছে দৌঁড়াতে লাগলো। উটটি আরো আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত পালাতে লাগলো। এ অবস্থা দেখে উটের মালিক সকল লোককে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিয়ে বললো , ভাইসব! অনুরোধ করছি আমার উটের পিছনে কাউকে দৌঁড়াতে হবে না। আমার উটকে কিভাবে শান্তকরতে হয় সেটা আমি ভালো জানি।

তার এ আহ্বান শুনে উটের পিছে দৌঁড়ানো লোকজন থেমে গেল। তারপর উটের মালিক এক মুষ্টি ঘাস নিজের হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে উটের কাছে পৌঁছে গেল। আর খুব সহজে উটের বলা (লাগাম বিশেষ) নিজের হাতে নিয়ে নিল। উটটি তখন মালিকের সাথে ফিরে এলো।

গতকাল যদি আমি তোমাদেরকে বারণ না করতাম তাহলে এ আরব বেদুঈনকে তার জীবন হারাতে হতো। তোমরা তাকে জীবিত ছেড়ে দিতে না। তাতে লোকটি কুফরী ও মূর্তি পূজারীর অবস্থায় মারা যেতো। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি তোমাদেরকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেইনি। আর এখন তোমরা নিজেরাই দেখতে পেলে যে ,আমি আমার ভালোবাসা ও নম্র ব্যহার দ্বারা লোকটিকে একেবারেই মুগ্ধ করে ফেলেছি11

12

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি ও ইমাম হোসাইন ( আঃ )

সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি হজ্ব অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য মদীনায় আসলো। মসজিদে নববীতে একদিন হঠাৎ তার নজর গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি মসজিদের এক কোণে বসেছিলেন। সে ভাবতে লাগলো যে ,এ লোকটি কে ? নিকটেই দাঁড়ানো অপর এক লোককে জিজ্ঞাসা করলো , এ লোকটি কে ভাই ? সে বললো , তিনি হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) । পূর্ব থেকেই ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা12 তার মন-মগজকে (ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে) বিগড়ে রেখেছিল।

সুতরাং এ নামটি শোনার সাথে সাথেই ক্রোধ ও ক্ষোভে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। আর সে খোদার সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে গালি-গালাজের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলো। অশ্রাব্য ,বিশ্রী ও কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে সে ইমামকে গালি দিয়ে তার অন্তরের জ্বালা মিটালো এবং তার মনের ক্ষোভ-দুঃখ প্রকাশ করলো। ইমাম হোসাইন (আঃ) তার গালাগালিতে মোটেও রাগ করলেন না , বরং অত্যন্ত ভালোবেসে ও সদ্ব্যবহারের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আল-কোরআনের সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন ,যে আয়াতগুলোতে ভালো ব্যবহার , ক্ষমা প্রদর্শন ও মার্জনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলো পাঠ করার পর ইমাম হোসাইন (আঃ) সিরিয়ার অধিবাসী সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন , আমি তোমার যে কোন খেদমত ও সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি । তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি কি সিরিয়ার অধিবাসী ? জবাবে সে বললো , হ্যা! আমি একজন সিরিয়ার অধিবাসী । তখন ইমাম তাকে বললেন , সিরিয়াবাসীদের এরূপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আমি খব ভালোভাবে জানি ,এ দুর্ব্যবহার ও শত্রুতার কারণ কি ?

অতঃপর ইমাম লোকটিকে বললেন , তুমি এ শহরে একজন মুসাফির । বিদেশের বাড়িতে যদি তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি আমাকে বলো। আমি তোমার যে কোন খেদমত করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তোমাকে আমার মেহমান করতে চাই এবং তোমাকে পোশাক-পরিচ্ছদ ও টাকা-পয়সা ইত্যাদিও দিতে চাই । সিরিয়াবাসী লোকটি তার দুর্ব্যবহার ও গালিগালাজের জন্য একটা কঠোর পরিণতির অপেক্ষা করছিল। সে এমনটি কখনোই আশা করছিল না যে , তার এ অপরাধ ও ধৃষ্টতা একেবারেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে। ইমামের এ সুন্দর ব্যবহার তার মধ্যে এক আত্মিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সে নিজে নিজে বলতে লাগলো , আমার মন চায় যে , মাটি ফেটে দ্বিখন্ডিত হয়ে যাক আর আমি তাতে ঢুকে পড়ি। হায় আফসোস! নিজের অজ্ঞতার কারণে আমি যদি এ অপরাধ না করতাম! এর আগ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চেয়ে বড় দুশমন আর কেউ ছিল না। আর এখন আমার দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক প্রিয় আর কেউ নেই13

13

উপদেশ প্রার্থী এক ব্যক্তি

এক আরব বেদুঈন মদীনা শহরে এসে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আবেদন করলো , হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন । মহানবী (সাঃ) তাকে বললেন , ক্রোধান্বিত হয়ো না । এর বেশি তাকে আর কিছুই বললেন না।

অতঃপর লোকটি তার গোত্রের মাঝে ফিরে গেল। বাড়ি ফিরেই সে জানতে পারলো যে , তার অনুপস্থিতিতে এক মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে। তারই গোত্রের যুবকরা অপর এক গোত্রের কিছু মালামাল জোরপূর্বক লুটপাট করে নিয়ে এসেছে। এর জবাবে সে গোত্রের লোকেরাও এদের অনেক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এভাবে লুটপাটের এ ধারা উভয় গোত্রের মাঝে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে ,এখন দুই গোত্রের লোকেরাই এক মারাত্মক যুদ্ধ-বিগ্রহ ও খুনাখুনির পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ খবর শোনা মাত্রই সে লোকটি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তৎক্ষণাত সে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলো এবং রণাঙ্গনের দিকে ছুটলো নিজের গোত্রের সঙ্গ দেবার জন্য।

ঠিক এমন সময় তার মনে পড়লো যে , সে মদীনায় গিয়েছিল এবং রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর কাছে উপদেশ প্রার্থনা করেছিল , তখন মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন , নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখো

অতঃপর সে মনে মনে ভাবতে লাগলো , কেন আমি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলাম কোন কারণে আমি এভাবে যুদ্ধ করতে এবং খুনাখুনি করতে তৈরি হয়ে গেলাম ? কেনই বা আমি এরূপ ক্রোধান্বিত হয়ে গেলাম ? এসব প্রশ্ন তার মনে জেগে ওঠার পর সে ভাবলো : এখনই উপযুক্ত সময় , রসুলুলাহ (সাঃ) ছোট্ট উপদেশটি পালন করার।

এরপর সে এগিয়ে গেল এবং বিরোধী গোত্রের সরদারকে ডেকে বললো , এ সংঘাত কি জন্যে ? যদি এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য হয় সে সমস্ত মালামাল ফিরে পাওয়া যা আমাদের গোত্রের যুবকরা বোকামি করে তোমাদের থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে , তাহলে এসো আমি আমার নিজস্ব সম্পদ থেকে তোমাদের ক্ষতিপূর ণ করে দেই। এটা একটা ভালো কথা নয় যে , এর কারণে আমরা একে অপরের রক্তপিপাসু হয়ে যাবো

প্রতিপক্ষ গোত্রের লোকেরা যখন এ ব্যক্তির যুক্তিপূর্ণ ও উদারতাপূর্ণ কথাগুলো শুনলো তখন তাদের মধ্যেও বীরত্ববোধ জেগে উঠলো। বললো , আমরাও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে কম নই। যদি এমনটিই হয় তাহলে আমরা আমাদের দাবি প্রত্যাহার করলাম

তখন উভয় গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেল।14


6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18