ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব 0%

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক: আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 38178
ডাউনলোড: 4744

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 31 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 38178 / ডাউনলোড: 4744
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

‘ইসলাম ও শীয়া মাযহাব’ নামক এ গ্রন্থে ইসলামের দু’টি বৃহৎ উপদলের (শীয়া ও সুন্নী) অন্যতম শীয়া মাযহাবের প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে । শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি, বিকাশ ও চিন্তাধারার প্রকৃতি এবং ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে শীয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গী এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে ।

তৃতীয় পদ্ধতি

অর্ন্তদর্শন বা ( কাশফ )

মানুষ ও আধ্যাত্মিক উপলদ্ধি

বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই জীবনের বস্তুগত চাহিদা মেটানোর স্বার্থে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে অথচ আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানোর জন্য সামান্য পরিশ্রমও করছেনা । তবুও এর পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের হৃদয়েই জন্মগত ভাবে সত্য দর্শনের প্রবল বাসনা নিহিত রয়েছে । আত্মিক এ বাসনার অনুভুতি অনেক মানুষের মধ্যেই সক্রিয় , যার ফলে তা তাদেরকে এক প্রকারের আত্মিক উপলদ্ধির ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করে । প্রতিটি মানুষই বাস্তবতায় বিশ্বাসী এমনকি বাস্তবতা অস্বীকারকারী সুফিষ্ট (যেমতে সত্যকে আপেক্ষিক গণ্য করা হয়) বা সংশয়বাদীরাও প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতায় বিশ্বাসী । মানুষ যখন স্বচ্ছ ও পবিত্র হৃদয়ে এ সৃষ্টিজগত অবলোকন করে তখন সে এ সৃষ্টিজগতের নশ্বরতা উপলদ্ধি করে । এসময়ে সে এ বিশ্বের সৃষ্টিকূলকে আয়না স্বরূপ দেখতে পায় , যার মধ্যে অবিনশ্বর বাস্তবতার সৌন্দর্য প্রতিফলিত দৃশ্যের অসহ্য সৌন্দর্য , তার দৃষ্টি থেকে অন্য যে কোন সৌন্দর্যকেই নগণ্য ও অম্লান করে দেয় । এ আধ্যাত্মিক উপলদ্ধি পার্থিব জীবনের অস্থায়ী অথচ আপাত: মধুর বিষয়ের আস্বাদ গ্রহণ থেকে তাকে বিরত রাখে । এটাই সেই আধ্যাত্মিক (ইরফানি) আকর্ষণ , যার ফলে স্রষ্টার প্রতি অনুরাগী মানুষের মনোযোগ আরও উচ্চতর জগতের প্রতি আকৃষ্ট হয় । তখন তা ঐশী যৌক্তিকতাকে মানুষের হৃদয়ে স্থান দেয় এবং এ ছাড়া অন্যসব কিছুই তখন সে ভুলে যায় । এসময় তার মনের অন্তহীন কামনা-বাসনার বিচ্ছেদ ঘটে । তখন সে দর্শন ও শ্রবণের চেয়েও স্পষ্টতর উপলদ্ধিযোগ্য অথচ বাহ্যতঃ অদৃশ্য স্রষ্টার উপাসনায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে । অবশ্য এটা মানুষের হৃদয়ে লুকায়িত স্রষ্টাপুজার এক জন্মগত স্বভাব , যা পৃথিবীর মানুষকে আল্লাহর উপাসনায় উদ্বুদ্ধ করে । সেই প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক পুরুষ , যে মহান আল্লাহকে কোন পুরস্কার প্রাপ্তির আশা129 অথবা শাস্তির ভয় ছাড়াই শুধুমাত্র ভালবাসার কারণেই আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করে । অতএব , এখান থেকে এটাই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে , ইরফান বা আধ্যাত্মিকতাকে অবশ্যই ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবের মতই অন্য একটি মাযহাব হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে না । বরঞ্চ , ইরফান বা আধ্যাত্মিকতাতো আল্লাহর ইবাদতেরই একটি পন্থা । আর এটা (পুরস্কার প্রাপ্তির আশায় বা শাস্তির ভয়ে নয় , বরঞ্চ ভালবাসার ভিত্তিতে ইবাদতের পন্থা) হচ্ছে ধর্মের বাহ্যিকরূপ ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধর্মীয় উপলদ্ধির মোকাবিলায় ধর্মের নিগূড় রহস্য উপলদ্ধির একটি পন্থা । এমনকি প্রতিটি ধর্মেই একটি আত্মিক পদ্ধতির অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে । যেমন : মূর্তি পুজারী , অগ্নি উপাসক , ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও আধ্যাত্মবাদী ও অ-আধ্যাত্মবাদীদের অস্তিত্ব রয়েছে ।

ইসলামে ইরফান বা আধ্যাত্মিকতার অভ্যুদয়

মহানবী (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে ( ইলমে রিজালে র গ্রন্থসমূহে প্রায় বারো হাজার সাহাবীর পরিচিতি লিপিবদ্ধ হয়েছে) একমাত্র হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর পাঞ্জল বর্ণনাই ইরফানি বা আধ্যাত্মিক নিগূঢ়তত্ব সম্পন্ন এবং আধ্যাত্মিক জীবনের স্তরসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট , যা ইসলামের এক অমূল্য সম্পদ ভান্ডার । কিন্তু অন্যান্য সাহাবীদের বক্তব্য বা রচনায় এধরণের বিষয়ের কোন সন্ধানই পাওয়া যায় না । এমনকি হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মত মহান শিষ্যও আর কারও ছিল না । যাদের মধ্যে হযরত সালমান ফারসী (রা.) , হযরত রশিদ হাজারী (রা.) , হযরত মাইসাম তাম্মার (রা.) অন্যতম । এযাবৎ পৃথিবীতে যত আরেফ বা আধ্যাত্মিক পুরুষই এসেছেন , সবাই হযরত আলী (আ.) এর পর উপরোক্ত মহান শিষ্যদেরকে তাদের আধ্যাত্মিক গুরুদের তালিকার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন । ইসলামে আধ্যাত্মিক পুরুষদের উপরোক্ত স্তরের পরবর্তী স্তর দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীতে যারা জন্ম গ্রহণ করেছেন , তাদের মতে তাউসে ইয়ামানী , মালিক বিন দিনার , ইব্রাহীম আদহাম , এবং শাকিক বালখীর নাম উল্লেখযোগ্য । তবে এরা আরেফ বা সুফী (আধ্যাত্মিক পুরুষ) হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিবর্তে কৃচ্ছতা সাধানকারী (যাহেদ) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । এবং জনগণের কাছে ওয়ালি আল্লাহ বা সতঃসিদ্ধ পুরুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । কিন্তু এরা কোনক্রমেই নিজেদের আত্মগঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়টিকে তাদের পূর্ববর্তী স্তরের মহান পুরুষদের সাথে কখনও সংশ্লিষ্ট করেননি । এর পরবর্তী স্তরে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষভাগে এবং হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমদিকে আরেকটি আধ্যাত্মবাদী দলের অভ্যুদয় ঘটে । জনাব বায়েজীদ বোস্তামী , মারূফ কিরখী , জুনাইদ বাগদাদী প্রমূখ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত এরা সবাই আধ্যাত্মবাদের প্রক্রিয়ার অনুসারী ছিলেন এবং আরেফ বা সুফী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন । এরা সবাই কাশফ (আত্মঃউপলদ্ধি) এবং শুহুদের (অর্ন্তদর্শন) ভিত্তিতে বক্তব্য প্রদান করেছেন । তাদের ঐধরণের কথা ইসলামে বাহ্যিকরূপের সাথে ছিল সাংঘর্ষিক । ফলে তাদের ঐসব কর্মকান্ড সমসাময়িক ফকীহ (ইসলামী আইন বিশারদ) ও মুতাকাল্লিমিন দের (ইসলামী বিশ্বাস শাস্ত্রবিদ) তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে । যার পরিণতিতে তারা অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন । তাদের অনেকের জেলে বন্দীজীবন কাটাতে হয় । অনেকেই নৃশংস অত্যাচারের সম্মুখীন হন । আবার অনেকেরই ফাঁসির কাষ্ঠে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে । এতকিছুর পরও তারা তাদের আধ্যাত্মবাদী প্রক্রিয়ার স্বপক্ষে বিরোধীদের সাথে লড়াই করে যেতে থাকেন । আর একারণেই তাদের তরীকত বা আধ্যাত্মিকপন্থা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে থাকে । এভাবে সপ্তম ও অষ্টম হিজরী শতাব্দীতে এসে এই তরীকত বা আধ্যাত্মবাদ পূর্ণ শক্তিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে । এরপর তখন থেকে আজ পর্যন্ত আধ্যাত্মবাদ কখনওবা শক্তিমত্তার সাথে আবার কখনও দূর্বলাবস্থায় আত্মপ্রকাশ করেছে । আর এভাবে আজও সে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে ।130

ইতিহাসের এই এরফান বা আধ্যাত্মবাদের অধিকাংশ মাশায়েখগণই (সিদ্ধপুরুষ) বাহ্যতঃ আহলে সুন্নাতের মাযহাবের অনুসারী ছিলেন । বর্তমান তরীকত পন্থীদের বিশেষ আচরণ বিধি ও সংস্কৃতি সবই তাদের পূর্ব পুরুষদেরই স্মৃতি বাহক , যার সাথে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পদ্ধতির তেমন কোন সংহতি নেই । অবশ্য তাদের বেশ কিছু নিয়মনীতি ও সংস্কৃতি শীয়াদের মধ্যেও কিছুটা সংক্রমিত হয়েছে । একদল লোক এব্যাপারে বলেছেন যে , ইসলামে আধ্যাত্মবাদের প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি । তবে মুসলমানরা নিজেরাই আত্মউপলদ্ধি ও আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া আবিস্কার করেছে , যা আল্লাহর কাছেও গৃহীত হয়েছে । যেমনঃ খৃষ্টানদের মধ্যে চিরকুমার জীবন যাপনের ব্যাপারে হযরত ঈসা মসীহ্ (আ.) কিছুই বলেননি । বরং খৃষ্টানরাই তা আবিস্কার করেছে এবং তা সর্বজনগ্রাহ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে ।131 এভাবে প্রত্যেক তরিকত পন্থী দলের প্রতিষ্ঠাতা মুর্শেদ যে বিশেষ নিয়মনীতি বা কর্মপদ্ধতিকে উপযোগী বলে নির্ধারণ করেছেন , তাই তার মুরিদগণকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন । আর সেটাই পরবর্তীতে একটি ব্যাপক ও স্বকীয় আধ্যাত্মিক পদ্ধতি হিসেবে গড়ে উঠেছে । উদাহরণ স্বরূপ , বিশেষ পদ্ধতিতে যিকিরের অনুষ্ঠান , আধ্যাত্মমূলক সংগীত চর্চা ও যিকিরকালীন চরম উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । এমনকি কোন কোন তরিকত পন্থীদের কার্যকলাপ কখনও কখনও এমন পর্যায়ে গিয়ে দাড়ায় যে , ইসলামী শরীয়ত একদিকে আর তরীকত পদ্ধতি তার বিপরীত দিকে অবস্থান গ্রহণ করে । এসব তরীকত পন্থীরা বাস্তবে বাতেনী বা গুপ্ত পন্থীদেরই দলভুক্ত হয়েছে । কিন্তু পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর মাপকাঠি অনুসারে শীয়াদের দৃষ্টিতে ইসলামের স্বরূপ তথাকথিত তরীকতপন্থীদের বিপরীত । যদি এপথই সঠিক হত , তাহলে ইসলামের নির্দেশাবলীও অবশ্যই মানুষকে এবাস্তব সত্যের দিকেই পরিচালিত করত । এটা কখনোই সম্ভব নয় যে , ইসলাম তার কিছু কর্মসূচীর ব্যাপারে অবহেলা করবে অথবা হারাম বা ওয়াজিব কোন বিষয় লংঘনের ব্যাপারে কাউকে ক্ষমা করে দেবে ।

কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত আত্মশুদ্ধিমূলক আধ্যাত্মিকতার কর্মসূচী

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহুস্থানে বলেছেন যে , মানুষ কুরআনের অর্থ উপলদ্ধির জন্য যেন গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করে । সে সামান্য কিছু বাহ্যিক অর্থ বোঝার মাধ্যমেই যেন তুষ্ট না হয় । পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে এ সৃষ্টিজগতকে মহান আল্লাহর অসীম মহিমার নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । পবিত্র কুরআনে উদ্ধৃত ঐসব নিদর্শনাবলীর প্রতি একটু গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলেই বোঝা যাবে যে , নিদর্শনগুলো অন্য কিছুর প্রতিই নির্দেশ করছে , নিজের প্রতি নয় । যেমন : লাল বাতি সাধারণতঃ বিপদের সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয় । কোন ব্যক্তি লাল বাতি দেখা মাত্রই বিপদের আশাংকা করে । তখন সে বিপদের আশাংকা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না । কারণ: তখন যদি সে ঐ বাতির রং , কাঁচ ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা করে তাহলে সে সেখানে বিপদের কোন চিত্রও খুজে পাবে না । সুতরাং এ সৃষ্টিজগত যদি মহান আল্লাহর নিদর্শন হয়ে থাকে , তাহলে এ সৃষ্টিজগতের কোন স্বাধীন ও সার্বভৌম অস্তিত্ব থাকে না । তখন যেদিকেই আমরা তাকাই না কেন , শুধুমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্ব আমরা খুজে পাব না ।

তাই যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ও হেদায়েতের দ্বারা আলোকিত হয়ে ঐ দৃষ্টিতে এ সৃষ্টিজগতের দিকে তাকাবে , সেও পবিত্র ও মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর অস্তিত্বই উপলদ্ধি করবে না । অন্যরা পৃথিবীর বাহ্যিক সৌন্দর্য অবলোকন করে । কিন্তু সে এই সংকীর্ণ পৃথিবীর জানালা দিয়ে সর্বস্রষ্টা আল্লাহর অনন্ত ও অনুপম সৌন্দর্য অবলোকন করে , যা এ সৃষ্টিজগতের মধ্যে আত্মপ্রকাশিত হয়ে আছে । তখন সে নিজের সমগ্র অস্তিত্বকে ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহর ভালবাসার কাছে স্বীয় হৃদয় সমর্পণ করে । এটা অত্যন্ত স্পষ্ট বিষয় যে , এই বিশেষ উপলদ্ধি নিঃসন্দেহে মানুষের পঞ্চোন্দ্রিয় বা কল্পনা বা বুদ্ধিবৃত্তির কাজ নয় । বরঞ্চ এসব মাধ্যম নিজেই আল্লাহর এক বিশেষ নিদর্শন স্বরূপ । আর ঐসব মাধ্যমের দ্বারা মানুষ প্রকৃত হেদায়েত পেতে সক্ষম নয় ।132

আর আল্লাহর এ পথের সন্ধান প্রাপ্তি সম্পূর্ণ রূপে আত্মবিস্মৃত হয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে স্মরণ করার মত যোগ্যতা অর্জন করা ছাড়া সম্ভব নয় । মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেনঃ হে মুমিনগণ , তোমরা তোমাদের আত্মার অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা কর । তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ , তখন কেউ পথভ্রষ্ট হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই । (সূরা আল মায়েদা , 105 নং আয়াত ।)

অর্থাৎ মানুষ তখন বুঝতে সক্ষম হবে যে , মহান আল্লাহর হেদায়েত প্রাপ্তির একমাত্র পথই হচ্ছে মানুষের নিজের বিবেকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা । আর মহান আল্লাহ ই্ তার পথ নির্দেশকারী । তার বিবেক ও মহান আল্লাহ মানুষকে তখন তার নিজের প্রকৃতরূপকে ভালভাবে চিনতে ও উপলদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করে । যাতে করে অন্যসকল পথত্যাগ করে একমাত্র আত্মউপলদ্ধির পথ সে অনুসরণ করে । তখন সে স্বীয় আত্মার সংকীর্ণ জানালা দিয়ে স্বীয় স্রষ্টার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে সক্ষম হয় । আর এভাবেই সে নিজের অস্তিত্বের প্রকৃতপক্ষে রহস্যের সন্ধান প্রায় । এ ব্যাপারে আমাদের মহানবী (সা.) বলেছেন : যে নিজেকে চিনতে পেরেছে , সে আল্লাহকে-ও চিনতে পেরেছে ।133 মহানবী (সা.) আরও বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহকে ভালভাবে জানেন , যে নিজের আত্মাকে ভাল করে চিনেছে ।134

আর এপথ অনুসরণের কর্মসূচীর ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত উদ্ধৃত হয়েছে । সেখানে মহান আল্লাহ তাকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন । বলেছেনঃ তোমরা আমাকেই স্মরণ কর , তাহলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব । (সূরা আল বাকারা , 152 নং আয়াত) ।

এছাড়া পবিত্র কুরআনও সুন্নাহর সর্বত্র বিস্তারিত ভাবে সৎকাজের প্রতি আদেশ করা হয়েছে । অবশেষে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ । (সূরা আহজাব , 21 নং আয়াত ।)

তাহলে এটা কি করে সম্ভব যে , ইসলাম আল্লাহর পথের সন্ধান দিয়েছে অথচ জনসাধারণের কাছে তা বর্ণনা করেনি । অথবা সেই সত্যপথের সন্ধানের বিষয়টি মানুষের কাছে বর্ণনা করার ব্যাপারে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি ও এ ব্যাপারে অবহেলা করেছে ?

অথচ , পবিত্র কুরআনের অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেন যে , প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে হতে আমি একজন বর্ণনাকারী দাড় করাব যে তাদের মধ্য থেকেই তাদের বিপক্ষে এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব । আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তাতে প্রত্যেকটি বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা , হেদায়েত , রহমত এবং আত্মসমর্পণকারীদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ । (সূরা আল নাহল , 89 নং আয়াত ।)

তৃতীয় অধ্যায়

দ্বাদশ ইমামপন্থী শীয়াদের দৃষ্টিতে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস

অস্তিত্ব ও বাস্তব জগতের প্রতি দৃষ্টিপাত