ইমাম আসকারী (আ.)

ইমাম আসকারী (আ.)0%

ইমাম আসকারী (আ.) লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইমাম হাসান বিন আলী আল আসকারী (আ.)

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 17 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 4390 / ডাউনলোড: 2011
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম আসকারী (আ.)

ইমাম আসকারী (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইমামের দুনিয়া বিমুখতা

‘ কামেল মাদানী ’ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জন্য ইমামের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন। তিনি বলেন :

যখন ঐ মহান ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করলাম , তিনি সাদা মসৃণ পোশাক পরেছিলেন। মনে মনে বললাম : আল্লাহর ওলি ও হুজ্জাত নরম ও মসৃণ পোশাক পরিধান করেন অথচ আমাদেরকে এ ধরনের পোশাক পরিধানে নিষেধ করেন। ”

ইমাম মুচকি হেসে জামার হাতা উঠিয়ে দেখালেন ঐ জামার নিচে কালো রুক্ষ পোশাক পরে আছেন। অতঃপর বললেন : ওহে কামেল ! (هَذا لِلَّهِ وَ هَذا لَكُمْ ) এই রুক্ষ পোশাক পরেছি আল্লাহর জন্য আর উপরে যা দেখতে পাচ্ছো তা তোমাদের জন্য।24

দুই অভাবীর আগমন

মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুসা ইবনে জা ফর বলেন : একবার প্রকট অভাব অনটনে পড়ে গিয়েছিলাম। বাবা বললেন , চল প্রখ্যাত দানশীল ইমাম আসকারী (আ.) - এর কাছে যাই।

জিজ্ঞেস করলাম : তাঁকে তুমি চেন ?

বললেন : না , তাঁকে কখনও দেখিনি।

একসাথে রওনা হলাম। রাস্তার মাঝে বাবা বললেন , হায় আল্লাহ্ ! কি ভাল হতো যদি ইমাম আমাকে 500 দেরহাম সাহায্য করতেন। 200 দেরহাম ঋণ পরিশোধ করতাম , 200 দেরহাম দিয়ে জামা - কাপড় কিনতাম ও বাকী 100 দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাতাম। ”

আমিও মনে মনে বললাম , হায় আল্লাহ্ ! যদি তিনি আমাকেও 300 দেরহাম দান করতেন। 100 দেরহাম দিয়ে একটা উট কিনতাম , 100 দেরহাম দিয়ে জামা - কাপড় কিনতাম ও বাকী 100 দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাতাম। অতঃপর জাবাল শহরে যেতাম। ইমামের বাড়ীতে পৌঁছা মাত্রই তাঁর ভৃত্য এসে বললেন , আলী ইবনে ইবরাহীম ও তাঁর পুত্রকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ” আমরা সেখানে প্রবেশ করে ইমামকে সালাম করলাম। তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন , ওহে আলী তোমার কি হয়েছে ! এ পর্যন্ত আমার কাছে আসনি ?

বাবা বললেন : এমন দরিদ্র দশায় আপনার সাথে দেখা করতে আসতে লজ্জিত হচ্ছিলাম।

যখন বাইরে এলাম ইমামের ভৃত্য আমাদের দু ’ জনকে দু ’ থলি টাকা দিয়ে বললেন : তোমার এখানে ( বাবাকে দেয়া থলিতে ) 500 দেরহাম আছে , 200 দেরহাম ঋণ পরিশোধের জন্য , 200 দেরহাম জামা - কাপড় কেনার জন্য , বাকী 100 দেরহাম অন্যান্য খরচাদির জন্য। এবং আমাকে বললেন : তোমার এখানে 300 দেরহাম আছে। 100 দেরহাম দিয়ে উট কিনবে , 100 দেরহাম দিয়ে জামা - কাপড় ও বাকী 100 দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাবে। কিন্তু জাবাল শহরের দিকে যেওনা। ইরাকের শুরা শহরের দিকে যাও। তা তোমার জন্য ভাল হবে ।25

ইমামের ইবাদত

ইমাম আসকারী (আ.) নিজেও তাঁর সম্মানিত পূর্ব পূরুষদের ন্যায় ইবাদত ও বন্দেগীতে আদর্শ দৃষ্টান্ত পেশ করেন। নামাজের সময় হলে সব কাজ বাদ দিয়ে প্রথমেই নামাজ আদায় করতেন। আবু হাশেম জা ফরী বলেন :

একদা ইমাম আসকারী (আ.) - এর সাক্ষাতে হাজির হলাম। তিনি কোন একটা বিষয়ে লেখায় মগ্ন ছিলেন এমন সময় নামাজের ওয়াক্ত হলো। তিনি এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন ।26

ইমামের নামাজের ধরণ অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে (ইবাদতে ) আকৃষ্ট করতো। এমনও দেখা গিয়েছে পথভ্রষ্ট কোন লোককে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ইমাম যখন সালেহ্ ইবনে ওয়াসিফের কারাগারে বন্দী ছিলেন তৎকালীন খলিফা কারাধ্যক্ষ কে নির্দেশ দিয়েছিল যাতে সে ইমামের সাথে রূঢ় আচরণ করে ও কঠিন শাস্তি দেয়। এজন্য দু ’ জন নিকৃষ্ট জল্লাদ নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তারা ইমামের সঙ্গ পেয়ে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে পরহেজগার হয়ে যায়।

কারাধ্যক্ষ জল্লাদদ্বয়কে ডেকে বলল : তোদের প্রতি ধিক্কার , এই বন্দীর সাথে কেমন আচরণ করেছিস ?

তারা বললো : আমরা কি করব , যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে সারা রাত নামাজে মগ্ন থাকেন , এবং ইবাদত ব্যতীত অন্য কিছুই করেন না। যখনই আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করতেন আমরা নিজেদের অজান্তেই কাঁপতে থাকতাম এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতাম ।27

মুলসমানদের সত্য পথ প্রদর্শন

ইবনে সাব্বাগ মালেকী আবু হাশেম জা ফারী এর মত কয়েকজন প্রখ্যাত সুন্নি আলেম বর্ণনা করেন :

“ ...একবার সামাররায় কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তৎকালীন খলিফা মো তামেদ দেশবাসীকে ইসতেসকার নামাজ ( বৃষ্টি কামনা করে যে নামাজ পড়া হয় ) পড়ার জন্য আদেশ জারি করে। জনগণ পর পর তিন দিন নামাজ পড়ে দোয়া করা সত্ত্বেও বৃষ্টি হয় নি। অতঃপর চতুর্থদিনে খৃস্টানদের প্রধান পাদ্রী তার মাযহাবের লোকজনদের সাথে নিয়ে মরুভূমিতে গেলেন। তাদের মধ্যে এক সন্ন্যাসী ছিল যখনই হাত তুলে দোয়া করতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি হতো। সেদিনও সন্ন্যাসীদের দিয়ে দোয়া করালো এবং এত বৃষ্টি হলো যে ,দেশবাসীর আর বৃষ্টির প্রয়োজন রইলো না। এই বিস্ময়কর ঘটনা দেখে মানুষের মনে সন্দেহ দ্বিধা - দ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং অনেক মুসলমান খৃস্টান ধর্মের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লো। ঘটনা খলিফার কাছে একেবারে অপ্রীতিকর মনে হলো। খলিফা ইমাম আসকারী ( আ.) - এর শরণাপন্ন হলো। ইমামকে কারাগার থেকে মুক্ত করে বলল :

আপনার পূর্বপুরুষদের উম্মত গোমরাহ্ পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে , এদেরকে ঠেকান।

ইমাম বললেন : প্রধান পাদ্রী ও ঐ সন্ন্যাসীকে আগামীকাল মঙ্গলবার মরুভূমিতে আসতে বলো।

খলিফা বলল : আমাদের তো আর বৃষ্টির প্রয়োজন নেই। মরুভূমিতে গিয়ে কি হবে ?

ইমাম বললেন : এ কারণে যে , ইনশাআল্লাহ্ এই সন্দেহের অবসান ঘটাবো।

খলিফা ইমামের কথা মত আদেশ জারি করে দিল। ইমাম নিজেও জনগণের সাথে মরুভূমিতে গেলেন। সন্ন্যাসী ও তার লোকজন হাত তুলে দোয়া শুরু করলো , আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলো এবং বৃষ্টি এলো। ইমাম সন্ন্যাসীর হাত ধরে তার হাতে লুকায়িত বস্তুটি বের করে আনার আদেশ দিলেন। সন্ন্যাসীর আঙ্গুলের ফাঁকে কালো রংয়ের একটা মানব হাড় রাখা ছিল। ইমাম ঐ হাড়টি নিয়ে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিলেন এবং বললেন এখন তুমি বৃষ্টির জন্য দোয়া কর। সন্ন্যাসী এবারও দোয়া করতে লাগলো কিন্তু মেঘ সরে গিয়ে সূর্য স্পষ্ট হলো। মানুষের বিস্ময় ভেঙ্গে গেল। খলিফা ইমামকে জিজ্ঞেস করলো : এটা কিসের হাড় ?

ইমাম : আল্লাহর কোন এক নবীর শরীরের হাড়। কোন এক নবীর সমাধিস্থল থেকে সে এটি সংগ্রহ করেছে এবং নবীদের শরীরের হাড় প্রকাশ পেলে অবশ্যই বৃষ্টি হবে।

খলিফা ইমামের প্রশংসা করলো এবং পরীক্ষা করে দেখলো তিনি যা বলেছেন তাই ঠিক ।28

ইরাকী দার্শনিককে দিক নির্দেশনা

বস্তুবাদী ইরাকী দার্শনিক ইসহাক কিন্দি বই লেখার উদ্যেগ নেয়। সে প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে , কোরআনে বহু বৈপরীত্য বিদ্যমান। এজন্য জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। একদা তার এক শিষ্য ইমামের সাক্ষাত লাভ করলে ইমাম জিজ্ঞেস করেন : তোমাদের মাঝে এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নেই যে , তাকে এই অনর্থক কাজের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখবে ?

বলল : আমরা তার শিষ্য , কিভাবে সম্ভব আমরা তার কাজে বিরোধিতা করব !

ইমাম বললেন : আমি যা বলবো তার কাছে তা পৌঁছাতে পারবে ?

বললো : হ্যাঁ , পারবো।

ইমাম বললেন : তার কাছে যাও এবং তার সাথে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্টতা সৃষ্টি কর , তার ঐ কাজে সহযোগিতা কর। অতঃপর তাকে এভাবে বল যে , আমার একটা প্রশ্ন আছে , আপনি অনুমতি দিলে তা ব্যক্ত করতে পারি। সে তোমাকে অনুমতি দিবে। অতঃপর তাকে বলবে : এমন কি হতে পারে না যে , মহান আল্লাহ্ যিনি পবিত্র কোরআনের প্রেরক , তার উদ্দেশ্য তুমি যা বুঝেছো তা থেকে ভিন্ন কিছু হবে। সে বলবে : হতে পারে। কারণ যদি সে তোমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তবে তা বুঝতে পারবে। যখন এরূপ জবাব দিবে তখন জিজ্ঞেস কর : কিভাবে নিশ্চিত হলে যে , কোরআনের বিষয়ে তুমি যে ধারণা রাখ তাই সঠিক ? এমনও হতে পারে আল্লাহর উদ্দেশ্য এক রকম এবং কোরআনের শব্দসমূহ ও বাক্য বিন্যাস থেকে তুমি তার ভিন্ন অর্থ বুঝেছো।

ঐ লোকটি ইসহাক কিন্দির নিকট গেল এবং ইমামের নির্দেশিত পন্থায় তার সাথে সদাচরণ করলো। অতঃপর একসময় প্রশ্ন উত্থাপন করলো। কিন্দি তাকে প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করতে বলল। অতঃপর চিন্তায় মগ্ন হলো এবং অর্থ ও ব্যাকরণগত দৃষ্টিতে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করে বিষয়টি সম্ভব বলে স্বীকার করলো। অতঃপর তার শিষ্যকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই প্রশ্ন তুমি কোথা থেকে পেয়েছো ? শিষ্য বলল : হঠাৎ করেই আমার মাথায় এসেছে ।

কিন্দি বলল : তুমি এবং তোমার মত লোকের মাথায় এমন প্রশ্ন আসতেই পারে না , সত্যি করে বল কে শিখিয়েছে তোমাকে ?

শিষ্য বলল : আবু মুহাম্মদ (ইমাম আসকারী) আমাকে এরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন।

কিন্দি বলল : এতক্ষণে সত্য কথা বলেছো। এমন প্রশ্ন ঐ বংশের লোক ব্যতীত অন্য কারো চিন্তায় আসতে পারে না।

অতঃপর তার ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটলো এবং তার ঐ ভিত্তিহীন লেখাগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেললো ।29

কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর

ক ) আবু হাশেম জা ফরী বলেন : এক ব্যক্তি ইমামকে জিজ্ঞেস করেন ,অসহায় সত্ত্বেও নারী জাতি পিতার সম্পত্তির একভাগ পায় অথচ ছেলে পায় তার দ্বিগুণ ?

ইমাম বললেন : কারণ জিহাদ করা , সাংসারিক খরচাদি চালানো পুরুষের দায়িত্ব এবং ভুলবশত কাউকে হত্যা করলে তার জরিমানাও ( দীয়া 30 ) পুরুষের উপর অর্পিত। এর সব কিছুই মহিলাদের দায়িত্ব বহির্ভূত।

আবু হাশেম বলেন : আমি মনে মনে বললাম এর আগেও শুনেছি যে , ইবনে আবিল উজজা ইমাম সাদিক (আ.) - এর কাছে ঠিক একই প্রশ্ন করেছিল এবং ঠিক এরকমই জবাব পেয়েছিল।

ইমাম আসকারী (আ.) তখন আমার দিকে ফিরে বললেন : হ্যাঁ , ঠিক একই প্রশ্ন ইবনে আবিল উজজা করেছিল। আমাদের যে কারো কাছেই এক প্রশ্ন করা হবে তার উত্তরও আমরা একই রকম দিয়ে থাকি। পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ইমামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জ্ঞানগত বিষয়ে আমাদের প্রথম ও শেষ সমমর্যাদার অধিকারী তবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও আমিরুল মু মিনিন আলী (আ.) - এর বিশেষত্ব ও মর্যাদা অতুলনীয়।31

খ ) হাসান ইবনে জারিফ ইমাম আসকারী (আ.) - এর নিকট লিখেন : হযরত আমিরুল মু মিনিন আলী (আ.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) - এর বাণী , (مَنْ كُنْتُ مَوْلاهُ فَعَلىُّ مَوْلاَهُ ) এর অর্থ কি ?

ইমাম বললেন : রাসূল (সা.) - এর উদ্দেশ্য ছিল আলী (আ.) কে ইমামতের পদে নিযুক্ত করবেন যাতে তার উম্মতের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদ ও অনৈক্যের ক্ষেত্রে সত্যপন্থী সহজে চেনা যায়।32 গ ) হারভী বলেন : আসবাতের এক ছেলে আমাকে বললো , একদা ইমাম আসকারী (আ.) - কে লিখে জানালাম যে , তাঁর প্রতি ভালবাসা পোষণকারীদের মধ্যে বিভেদ বিদ্যমান। এ জন্য আমি চাইলাম ইমাম যাতে এমন কিছু মুজেজা দেখান যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়।

ইমাম জবাবে লিখেন : সত্য এই যে আল্লাহ্ তা য়ালা শুধুমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে কথা বলেন। রাসূল (সা.) যে সকল নিদর্শন (মুজেজা ) দেখিয়ে ছিলেন তার অধিক কোন নিদর্শন আর কেহই কখনও দেখাতে পারবে না। তথাপি তার সম্প্রদায় তাকে যাদুকর বলে আখ্যায়িত করেছিল। যে সকল লোক হেদায়েত পাওয়ার যোগ্য ছিল তাদেরকে তিনি হেদায়েত করেছেন। তবে কিছু লোক এমনও আছে যারা মুজেজার মাধ্যমে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আর এই মুজেজা একমাত্র আল্লাহ তা য়ালার অনুমতি সাপেক্ষে। আল্লাহ্ তা য়ালা যেখানে আমাদেরকে নিষেধ করেন আমরা সেখানে একটি কথাও বলি না।

যদি আল্লাহ্ তা য়ালা না চাইতেন সত্য প্রকাশিত হোক তাহলে রাসূলগণকে মানুষের সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্র্রেরণ করতেন না। আল্লাহর নবী রাসূলগণ দুর্বল অথবা সবল যে অবস্থায়ই ছিলেন সত্যকে প্রকাশ করেছেন। তারা মাঝে মাঝে কিছু কিছু আদেশ ও হুকুম প্রদান করতেন আর আল্লাহ্ তা য়ালার অনুমতিক্রমে তা কার্যকর ও বাস্তবায়িত হতো।

মানুষ কয়েক ভাবে বিভক্ত ; একদল এমন যে , জেনে বুঝে মুক্তির পথে অবস্থিত , সত্য প্রাপ্ত ও দীনের মুখ্য ও গৌণ বিষয়ে আমল করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। তাদের অন্তরে নেই কোন সন্দেহ , দ্বিধা - দ্বন্দ্ব আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন আশ্রয়স্থলও তারা খোঁজে না।

আর একদল লোক এমন যে , সত্যকে তার ধারক ও বাহকের কাছ থেকে গ্রহণ করেনা ; এরা সমুদ্রে ভ্রমণকারী ঐ লোকদের ন্যায় যারা সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে তাদের হৃদয় চমকিত হয় আবার সমুদ্র যখন শান্ত হয় তাদের হৃদয়ও শান্ত হয়।

তৃতীয় দলটি এমন যে , শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। তারা হিংসার বশবর্তী হয়ে সত্যের বিরোধিতা করে এবং সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখে। যারা (সত্য ও সঠিক পথ বাদ দিয়ে ) ডানে - বায়ে চলছে তুমি তা করিও না। রাখাল তার সুশৃংখল পশু পালকে সহজেই একত্রিত করতে পারে। ঠিক তেমন যারা আমাকে অনুসরণ করে আমিও তাদের পরিচালনা করতে সক্ষম।

অনারব মুসলমান (মাওয়ালী ) ও আমাদের অনুসারীদের মাঝে মত পার্থক্যের কথা উল্লেখ করেছো ; যদি মহত্ত্বই সত্যের মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি ইমামতের পদে নিযুক্ত , তিনি সিদ্ধান্ত নেয়া ও আদেশ দানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। যাদের সম্পর্কে তুমি অভিযোগ করেছো তাদের সাথে সদাচরণ কর , আমাদের গোপন তথ্যাদি প্রকাশ ও নেতৃত্বের লিপ্সা থেকে বিরত থাক। এই কাজ দুটি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

পারস্যে যাওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করেছো , যেতে পারো , আল্লাহর কাছে তোমার মঙ্গল কামনা করি , ইনশাআল্লাহ্ সুস্থ ও নিরাপদে মিসরে যাবে।

আমার নির্ভরযোগ্য সহযোগীদের নিকট আমার সালাম পৌঁছাবে। তাদেরকে বলো : আমাদের গোপন তথ্যাদি নিয়ে আলোচনা করা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করা আমাদের সাথে যুদ্ধের সমতুল্য। ”

হারভী বলেন : ইমামের এ কথাটি সুস্থ ও নিরাপদে মিশরে যাবে ” প্রথমে বুঝতে পারি নি। যখন বাগদাদে এলাম পারস্যের দিকে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলো। ফলে সেদিকে আর যাওয়া হলো না। অতঃপর মিশরে গেলাম এবং তখন বুঝতে পারলাম ইমাম কেন ঐ কথাটি বলেছিলেন।33

ঘ ) মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে মায়মুন বলেন : একবার ইমাম আসকারী (আ.) - এর নিকট আমার অভাব অভিযোগের কথা জানিয়ে অনুযোগ করে চিঠি লিখলাম ; অতঃপর মনে মনে বললাম , ইমাম সাদিক (আ.) তো বলেছেন :

الْفَقْرُ مَعَناخَيْرٌ مِنَ الْغِنىَ مَعَ غَيْرِنا وَ الْقَتْلُ مَعَنا خَيْرٌ مِنَ الْحَياةِ مَعَ عَدوِّنا

-সম্পদশালী অবস্থায় অন্যদের সাথে থাকার চেয়ে অভাবী হয়ে আমাদের সাথে থাকাও উত্তম , ঠিক তেমন আমাদের শত্রুদের সাথে থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে আমাদের সাথে থেকে মৃত্যুবরণ করাও শ্রেয়।

জবাবে ইমাম (আ.) লিখেন : আল্লাহর ওলি ও আমাদের অনুসারীরা যখন অনেক বেশী গুনাহ করে ফেলে তখন আল্লাহ্ তা য়ালা তাদেরকে অভাব অনটন দিয়ে সে ওসিলায় গুনাহ ও ভুলত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং অধিকাংশ গুনাহ এইভাবে মাফ হয়ে যায়। যেমনটি তুমি নিজেই বলেছো , সম্পদশালী অবস্থায় অন্যদের সাথে থাকার চেয়ে অভাবী হয়ে আমাদের সাথে থাকাও উত্তম , ঠিক তেমন আমাদের শত্রুদের সাথে থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে আমাদের সাথে থেকে মৃত্যুবরণ করাও শ্রেয়। যারা আমাদের কাছে জ্ঞান কামনা করে আমরা তাদেরকে জ্ঞান দিয়ে থাকি এবং আমাদেরকে যারা আঁকড়ে ধরে আমরা তাদেরকে পাহারা দিয়ে রাখি , যারা আমাদেরকে ভালবাসে তারা আমাদের কাছে গর্বিত এবং যারা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় তারা আগুনে পতিত হয়।34

কোমের এক বিশিষ্ট আলেমের নিকট ইমামের চিঠি

বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ইমাম তাঁর অনুসারী ও সহযোগিদের চিঠি লিখে দিক নির্দেশনা দিতেন। এমনই এক চিঠি কোমের মহান শিয়া ফকীহ্ আলী ইবনে হুসাইন ইবনে বাবুইয়ে কোমীকে লিখেন। চিঠির ভূমিকা নিম্নরূপ :

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمْ اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعالَمِين وَ الْعاقِبَةُ لِلمُتَّقِين وَ الْجَنَّةُ لِلمُوحِّدِين وَ النَّارُ لِلمُلحِدِين وَ لاَ عُدوانَ اِلاَّ عَلى الظالِمين وَ لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللَّه اَحْسُنُ الْخالِقِين وَ الصَّلوةُ عَلى خَيْرِ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَ عِتْرَتِهِ الطاهرين

- মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম দাতা ও দয়ালু , সকল প্রশংসা তার জন্যই যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক। পরকালের মঙ্গল মুত্তাকিদের জন্য , বেহেশত একত্ববাদীদের জন্য ও দোযখের আগুন কাফেরদের (মুরতাদ ) জন্য। প্রকাশ্য দুশমনি ও যুদ্ধ শুধুমাত্র জালিমদের জন্য। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন উত্তম সৃষ্টিকর্তা নেই। মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের উপর দরূদ ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি , তিনি তোমাকে একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক। নামাজ কায়েম করা , যাকাত আদায় করা ও পরহেজগারীতার জন্য তোমাকে আদেশ করছি (কারণ যাকাত না দিলে তার নামাজ কবুল হয় না )। তোমাকে আরও আদেশ করছি যে , মানুষের ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করে দিবে , নিজের ক্রোধ দমন করবে , আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবে , তাদের সুসময়ে ও দুঃসময়ে সহযোগিতা করবে । অজ্ঞ ও মুর্খদের প্রতি নম্র ও সহনশীল থাকবে , সচ্চরিত্রতা , সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে। আল্লাহ্ তা য়ালা বলেন :

) لاَ خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْويَهُمْ اِلاَّ مَنْ اَمَرَ بِصَدقَةٍ اَوْ مَعْرُوفٍ اَوْ اِصْلاحٍ بَيْنَ النَّاسِ(

-একমাত্র যারা মানুষকে ছদকা , সৎ কাজ ও মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করার আদেশ দেয় তারা ব্যতীত অধিকাংশ লোকের কথায় কোন মঙ্গল নেই। (সূরা নিসা : 114 )

সব ধরণের অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত থাকবে , তাহাজ্জুত নামাজ পড়বে ঠিক যেমনটি মুহাম্মদ (সা.) আলী (আ.) - কে তাহাজ্জুত নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিয়ে বলতেন , আমিও তোমাকে তা পড়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছি।

يا عَلىُّ عَلَيْكَ بِصَلَوةِ الْليْلِ، عَلَيْكَ بِصَلَوةِ الْليْلِ، عَلَيْكَ بِصَلَوةِ الْليْلِ وَ مَنْ اسْتَحَفَّ بِصَلَوةِ الْلَيْلِ فَلَيْسَ مِنَّا

-হে আলী ! তাহাজ্জুত নামাজের প্রতি যত্নবান হও , তাহাজ্জুত নামাজের প্রতি যত্নবান হও , তাহাজ্জুত নামাজের প্রতি যত্নবান হও। যে ব্যক্তি তাহাজ্জুতের প্রতি গুরুত্ব দেয় না সে আমাদের মধ্যে শামিল নয়।

অতএব , আমার নির্দেশনানুসারে আমল কর এবং ঠিক যেভাবে তোমাকে আমল করার জন্য পরামর্শ দিলাম আমার অনুসারীদেরকেও সেভাবে আমল করতে বল। ছবর ও ধৈর্য ধারণ কর এবং শেষ ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর আবির্ভাবের প্রত্যাশায় অধীর অপেক্ষায় থাকবে , এ ব্যাপারে মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের জন্য শ্রেষ্ঠ আমল হল ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর জন্য প্রতীক্ষা করা। ” আমার সন্তান ইমাম মাহদী (আ.) - এর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের অনুসারিগণ দুঃখ বেদনায় নিমজ্জিত থাকবে। অতঃপর যেমন রাসূল (সা.) সুখবর দিয়েছেন জুলুম ও নির্যাতনে ভরপুর পৃথিবীকে ইমাম মাহ্দী ন্যায় বিচার ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করবে।35

হে আমার বিশ্বাসভাজন মহান আবুল হাসান , নিজেও ধৈর্যাবলম্বন কর এবং আমার অনুসারীদেরকেও ধৈর্যের পরামর্শ দাও , আল্লাহর জমিনে তাঁর বান্দাদেরই রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। পরকালের শান্তি পরহেজগারদের জন্যই। আমার সালাম , আল্লাহর শান্তি ও বরকত আমার অনুসারী এবং তোমার উপর বর্ষিত হোক।

وَ حَسْبُنا اللَّهُ وَ نِعْمَ الوَكيلْ نِعْمَ المَولىَ وَ نِعْمَ النَّصير36