বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)0%

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 15045
ডাউনলোড: 3077

পাঠকের মতামত:

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15045 / ডাউনলোড: 3077
সাইজ সাইজ সাইজ
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

পরিষদ এবং ইমামত ও খেলাফত

কিছু লেখক বলেন : ইমামত ও খেলাফত , কমিশন এবং অধিকাংশের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কোরআনের কয়েকটি আয়াত যেখানে বলা হচ্ছে তোমাদের কার্য ক্ষেত্রে পরামর্শ কর দলিল হিসাবে ব্যবহার করেছে। তারা এরূপ মনে করে যে , নির্বাচন হলো ইসলামের একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি কিন্তু বোঝেনা যে :

1.ইমামত বিষয়টি হলো নবুওয়াতের পরিসমাপ্তির প্রধান ভিত্তি। নবুওয়াত যেমন নির্বাচনের মাধ্যমে হয়না ইমামতও তেমনি একই মর্যাদার অধিকারী এবং তা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারে না।

2.পরামর্শ সেখানে প্রয়োজন যেখানে স্বয়ং আল্লাহ্ এবং রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে কোন কর্তব্য নির্ধারিত হয়নি। যেমনটি আমরা লক্ষ্য করেছি যে , রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় নিজের উত্তরাধিকারীকে নির্ধারন করেন। এর পর আর কোন পরামর্শ বা পরিষদের কোন ধারণাই অবশিষ্ট থাকে না।

3.যদি ধরেও নেই যে , এ ব্যাপারে পরামর্শ করা সঠিক , তাহলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতেন এবং নির্বাচনকারী ও নির্বাচিত ব্যক্তির শর্তসমূহকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন , যার মাধ্যমে জনগণ যে ব্যাপারটি ইসলামী সমাজের অস্তিত্ব এবং উন্নতির প্রধান ভিত্তি ও দীনের অস্তিত্ব যার উপর নিহিত সে বিষয়ে সচেতন ও হুশিয়ার থাকতে পারত । কিন্তু আমরা দেখি যে , এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেন নি । বরং তার বিপরীত বলেছেন। যখন বনি আমের রাসূল (সা.)-এর কাছে আসল তাদের একজন রাসূলকে বলল :

যদি আমরা আপনার সাথে বাইয়াত করি , যার মাধ্যমে আল্লাহ্ আপনাকে আপনার শত্রুদের উপর বিজয়ী করবেন ; সম্ভব কী আপনার পর খেলাফত আমাদের কাছে থাকবে ? রাসূল (সা.) বললেন :

খেলাফতের বিষয়টি আল্লাহর হাতে , তিনি তা যেখানে ইচ্ছা সেখানে প্রদান করবেন।159

) الامر الي الله يضعه حيث يشاءُ(

শিয়ারা উপরোক্ত নিদর্শনসমূহের ভিত্তিতেই বিশ্বাস করে যে , রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারীরা , যাদেরকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন , তাদের সকলেই আল্লাহর মনোনীত। আরও প্রয়োজন মনে করেন যে , সকল বিষয়ে যারা প্রকৃত ও সুরক্ষিত দীনের অধিকারী তাঁদের অনুসরণ করা একান্ত জরুরী। সৌভাগ্যবশতঃ এই বিশ্বাসের ফলেই তারা মাসুম ইমামগণের সান্নিধ্যে জ্ঞান , হাকিকাত এবং ইসলামী হুকুম আহকামের বহু তথ্য একত্রিত করতে সক্ষম হন। যা জীবনের সর্বস্তরের সমস্যার জবাব দিতে পারে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে শিয়া মাযহাব একটি সম্ভ্রান্ত মাযহাব হিসাবে পরিগণিত।

খেলাফতের ঐতিহাসিক পরিক্রমণের সংক্ষিপ্ত চিত্র

রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী প্রাপ্ত হয়েছিলেন যে , তাঁর পর আলী ইবনে আবি তালিবকে তাঁর খলিফা এবং উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করবেন। আর এ মহান বাণীকে জনগণের নিকট পৌঁছে দিতে আদিষ্ট হন ।

ইসলাম প্রচারের শুরুতেই নিজের আত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করেন এবং বলেন : আলী হচ্ছে আমার ওয়াসী ও উত্তরাধিকারী। সকলের কর্তব্য হলো তাঁর অনুসরণ করা।160

তাবুকের যুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে হযরত আলীকে বলেন : তোমার আর আমার সম্পর্ক হারুন এবং মূসার সম্পর্কের অনুরূপ। পার্থক্য হলো আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। এটা উত্তম নয় কী যে আমার পর তুমি আমার উত্তরাধিকারী থাকবে।161

জীবনের শেষ বছরে বিদায় হজের পর পথিমধ্যে গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক জনতার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন : আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা এবং অভিভাবক।162

অনুরূপ তাঁর শেষ জীবনে জনগণ , সাহাবা এবং বন্ধুদেরকে বলেন : আমি তোমাদের মাঝে দুটি অতি উত্তম ও মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ কোরআন ও অপরটি আমার ইতরাত ও আহলে বাইত। যদি এ দুটিকে দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধর , তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না।163

তাছাড়া অসংখ্য রেওয়ায়েতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে , মহানবী (সা.) এ বিষয়টিকে বর্ণনা করেছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন যে ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব স্বাভাবিক ভাবেই আলী (আ.)-এর উপর ন্যাস্ত হবে। এমনকি এ পর্যন্তই তিনি তুষ্ট থাকেননি। তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে বিভিন্ন প্রকার আকর্ষণীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন যেন যারা ইসলামী খেলাফত লুণ্ঠনের নীল-নকশা এঁটে ছিল তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

উসামার নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনীকে রোমের দিকে প্রেরণ করেন। মদীনার সকল মুহাজির এবং আনসারদেরকে যেমন : আবু বকর , ওমর সকলকেই এ বাহিনীতে অংশ গ্রহণ করার জন্যে এবং মদীনা থেকে বেরিয়ে পড়ার আদেশ দেন। কয়েকবার তিনি এ নির্দেশ দান করেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ ফিরে এলে তিনি পুনরায় তাদেরকে উসামার বাহিনীতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।164

রাসূল (সা.) শুধুমাত্র একারণেই মৃত্যু সজ্জায় উসামার নেতৃত্বে মদীনার বাইরে সেনা বাহিনী পাঠিয়ে ছিলেন যেন মদীনা শহর সকল প্রকার বিরোধী তার উপকরণ থেকে মুক্ত থাকে এবং স্বাভাবিক ভাবেই ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব আলী (আ.)-এর উপর বর্তায়। আর এ জন্যেও যে সকলেই জানুক ; নেতৃত্বের শর্ত বার্ধক্য নয় বরং যোগ্যতাই হলো এর মূল শর্ত। যেন কেউ আলী (আ.)-এর বয়স কম হওয়াটাকে খেলাফতের মর্যাদার জন্যে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার না করে। তাছাড়া অপর একটি কারণ হলো যে , হযরত তাঁর মৃত্যু মুখে কোন প্রকার বিরোধিতা ছাড়াই ওসিয়াত করবেন এবং জনগণের সামনে খেলাফতের লিখিত দলিল রেখে যাবেন।

কিন্তু বিরোধীরা ওসামার বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে মদীনায় ফিরে আসে। রাসূল তাঁর অন্তিম মুহূর্তে কিছু সাহাবাদেরকে বললেন : কাগজ কলম নিয়ে এস , আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে যেতে চাই যার প্রতি অটল থাকলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না । কিন্তু তারা হৈ চৈ করতে লাগল এবং বলল : এই লোক প্রলাপ বলছে , আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর এ কথা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিল।

রাসূল (সা.) এ অন্যায় অভিযোগে খুবই দুঃখিত হন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে , এ পরিস্থিতিতে তার লেখা এ মতভেদকে দূরীভূত করতে পারবে না । এমনকি এ কারণে অনেকে ইসলামের মূলে আঘাত হানতে পারে। এ কারণেই তাদেরকে বললেন : তোমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাও।165

যারা রাসূল (সা.)-কে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করেছিল , তারা দীনের পরিমাপক সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। অথবা না বোঝার ভান করেছিল এবং সত্যকে মাথা পেতে নিতে চায়নি। কেননা প্রত্যেক মুসলমানই জানে যে , আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে সকল প্রকার ত্রুটি থেকে রক্ষা করেছেন। কখনোই এ মহান রাসূলকে প্রলাপ বলছে এ অভিযোগে অভিযুক্ত করা উচিত নয়। পবিত্র কোরআন বলছে :

) وما ينطق عن الهوا ان هوالاّ وحي يحي(

রাসূল (সা.) নিজের থেকে কিছুই বলেন না , যতক্ষণ পর্যন্ত না তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করা হয়।

সকীফা , খেলাফত আত্মসাতের স্থান

11 হিজরীর 28 শে সফর মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন। মদীনা শোকে নিমজ্জিত হয়।

কিছু সংখ্যক মুসলমান , যারা ক্ষমতালোভী এবং পদলোভী ছিল তারা উসামার বাহিনী থেকে ফিরে এসেছিল। আর এরাই মহানবী (সা.)-কে তাঁর অন্তিম ওসিয়ত লিখতে বাধা প্রদান করে। মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর তারা উত্তম সুযোগ পেয়ে যায় এবং রাসূল (সা.)-এর মৃত দেহ ফেলে রেখে সকীফায়ে বনি সায়েদায় একত্রিত হয়।

আনসাররা তাদের দলপতি সা দ ইবনে আবু ওবাদাকে রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী হিসাবে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আবু বকর এবং ওমর তার বিরোধিতা করে। আবু বকর তার বক্তব্যে মুহাজিরদের মর্যাদা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয় এবং বলে : তারা তোমাদের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তারা রাসূল (সা.)-এর গোত্র (কুরাইশ) হতে। সুতরাং আমির (খলিফা) আমাদের মধ্যে হতে এবং উজির তোমাদের মধ্যে থেকে হবে। অতঃপর মুহাজিরদের মধ্য থেকে একজন বলল : তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমির নির্বাচন কর আর আমরা আমাদের মধ্য থেকে একজন আমির নির্বাচন করব। আবু বকর আবারো তাদেরকে বুঝালে তারা মেনে নিল যে মুহাজিরদের মধ্য থেকেই আমির নির্বাচিত হবে। অতঃপর তারা মুহাজির ও আনসারদের অনুপস্থিতিতে সকলের সাথে কোনরূপ আলোচনা এবং তাদেরকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা ছাড়াই ইসলামের সর্বে সর্বা হয়ে পড়ে। আবু বকর এবং ওমর একে অপরকে খেলাফত গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে থাকে ; এমতাবস্থায় ওমর আবু বকরের হাতে বাইয়াত করে।166 ওমরের পর যারা চাচ্ছিল না যে , সা দ ইবনে ওবাদা খলিফা হোক , তারা আবু বকরের হাতে বাইয়াত করে।167 তারা একটুও চিন্তা করলনা যে , যদি ফজিলতের মানদণ্ড রাসূল (সা.)-এর নৈকট্য এবং তাঁর বংশের থেকে হওয়া , হয়ে থাকে ; তাহলে আবু বকরের চেয়ে রাসূলের নিকটতম ব্যক্তি রয়েছেন , যিনি এ কাজের জন্য সার্বিক ভাবে সকলের চেয়ে উত্তম। আকস্মিক এ নির্বাচনে সা দ ইবনে ওবাদা ও তাঁর সমর্থকরা হেরে যায় এবং আবু বকর ও ওমর জয়ী হয়। আরো কিছু সংখ্যক বিরোধীদেরকে জোর পূর্বক বাইয়াত করতে বাধ্য করে।168 অতঃপর আবু বকর ওমর এবং তাদের সমর্থকরা সকীফা থেকে বেরিয়ে মসজিদে নববীর দিকে রওনা করে। পথিমধ্যে কাউকে দেখলে তাকে আবু বকরের সাথে বাইয়াত করতে বাধ্য করে।169

বনি হাশিম এবং মুহাজির ও আনসারদের বিশিষ্ট সাহাবীগণ যেমন : রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্বাস , যুবাইর , হাব্বাব ইবনে মুনযার , মেকদাদ , আবু যার গিফারী , সালমান ফারসী , আম্মার ইয়াসির , বারাত ইবনে আযেব , উবাই বিন কাব , উতবা ইবনে আবী লাহাব , খালেদ ইবনে সাঈদ , খুযাইমা ইবনে ছাবিত এবং ফারওয়া ইবনে আমর যারা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। অকস্মাৎ জানতে পারলেন যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ঘটনা জানতে পেরে তাঁরা খুবই আশ্চর্য বোধ করেন170 এবং বাইয়াত করেন নি। তারা চিন্তাও করতে পারেন নি যে , এত বেশি রেওয়ায়েত ও স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর মনোনয়ন সত্ত্বেও এত শীঘ্র খেলাফত আত্মস্যাৎ করে ফেলবে এবং রাসূল (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতকে উপেক্ষা করা হবে। সংগত কারণেই সকলে এ অন্যায় এবং ষড়যন্ত্রমূলক বাইয়াতের সরাসরি প্রতিবাদ করেন।

হযরত আলী (আ.)ও আবু বকর ও ওমরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। আবু বকরের সমর্থক আবু উবাইদা বলে , আলী তুমি এখনো যুবক এবং খেলাফতের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা তোমার নেই। এর জবাবে আলী (আ.) বলেন : আল্লাহকে ভয় কর , রাসূল (সা.)-এর ইসলামী হুকুমাতকে তার ঘর থেকে নিজেদের ঘরে নিয়ে যেয়ো না এবং এই মর্যদার প্রকৃত অধিকারী থেকে তা আত্মসাৎ করনা। হে মুহাজিরগণ (ও আনসার) আমরাই (নবী পরিবার) এবং আমরাই এ খেলাফতের জন্য যোগ্যতম।

তবে কি কিতাব যার আয়ত্বে রয়েছে এবং আল্লাহর দীনের যে ফকীহ। আর মুসলমানদের সার্বিক ব্যবস্থপনার যে যোগ্য তিনি আমাদের মধ্য হতে নয় ? আল্লাহর শপথ! এ খেলাফত আমাদের , প্রবৃত্তির পূজারী হয়ো না। কেননা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে।171

সকীফার ঘটনার পর যখন সর্বসাধারণের কাছে বাইয়াত ঘোষণা করা হয় , আলী (আ.) প্রতিবাদের সুরে ঘর থেকে বাইরে আসেন এবং আবু বকরকে বলেন :

আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছ এবং পরামর্শ করনি। আর সম্পূর্ণরূপে আমাদের অধিকারকে পদদলিত করেছ। আবু বকর বলল : হ্যাঁ কিন্তু ফেৎনা ও বিশৃঙ্ক্ষলা থেকে ভয় পেয়েছিলাম। এভাবে হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) যতদিন জীবিত ছিলেন বনি হাশিমের কেউই আবু বকরের নিকট বাইয়াত করেননি।172

রাসূল (সা.)-এর তিরোধানের পূর্বে ও পরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মানুষের সামনে ষড়যন্ত্রের এক বিকট মূর্তি উপস্থিত হয়। আর এ ষড়যন্ত্রের ভিত্তি ছিল ক্ষমতা লিপ্সা এবং নেতৃত্বের লোভ। যদি তাদের কোন উদ্দেশ্যই (ক্ষমতার লোভ) না থাকবে কেন বনি হাশিম এবং রাসূল (সা.)-এর সম্মানিত সাহাবীদেরকে না জানিয়ে গোপনে সকীফায় গিয়েছিল ? যদি ধরে নেই যে , রাসূল (সা.) কাউকে খলিফা বা উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যাননি ; তাহলে কি ইসলামী বিশ্বের ভাগ্য হযরত আলী (আ.) ও তাঁর সাথিরা যেমন : বনি হাশিম এবং সম্মানিত। সাহাবারা যেমন : সালমান , আবু যার এবং মেকদাদের পরামর্শ ব্যতীতই নির্ধারিত হবে ?

তারা কি হযরত আলীর চেয়ে বড় চিন্তাবিদ ছিলেন ? রাসূল (সা.) কি হযরত আলী সম্পর্কে বলে জাননি যে :

علي مع الحق والحق مع العلي

আলী হকের সাথে আর হক আলীর সাথে। 173

علي اقضيكم

আলী তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম বিচারক ?174

انا مد ينة العلم وعلي با بها

আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা।175

হযরত আলী (আ.) কী জ্ঞান ও ফজিলতের প্রাণকেন্দ্র ছিলেন না ? তাহলে কেন তাঁর নিকট বাইয়াত করল না , এমনকি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ পর্যন্ত করতে রাজি হলো না।

হযরত আলীর বয়স কম হওয়া কি কোন অজুহাত হতে পারে! রাসূল (সা.) যোগ্যতা ও অগ্রাধিকারের মানদণ্ডকে তাকওয়া নির্ধারণ করেছেন। আর উক্ত কারণেই উসামাকে আবু বকরদের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সুতরাং কেন হযরত আলী অন্যদের উপর প্রাধান্য পাবেন না ?

যারা এই অজুহাতে যে , আলী (আ.) ইসলামের বিভিন্ন যুদ্ধে অগণিত (কাফেরের) রক্ত ঝরিয়েছেন , তারা তাঁর নিকট নতি স্বীকার করেনি এবং তাঁর খেলাফতের অবাধ্যতা করেছে। তারা আলী (আ.) সম্পর্কে মহানবী (সা.)-এর সকল বাণী ও রেওয়ায়েতকে উপেক্ষা করেছে। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ হকের কাছে নতি স্বীকার না করে তাকে বাধ্য করতে হবে , না কি সে হককে উপেক্ষা করবে!

তা ছাড়াও এ অজুহাতের যদি কোন ভিত্তি থাকত এবং তা যদি ঠিক হতো। তাহলে আল্লাহ তায়ালা হযরত আলী (আ.)-কে মনোনীত করতেন না এবং রাসূল (সা.)ও তাঁকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করতেন না।

একটি প্রশ্ন :

কিছু মুসলমান ভাই যারা ন্যায় সংগত বিচার করেন , তারা বলেন :

গাদীরের ঘটনা এবং অন্যান্য অসংখ্য দলিল প্রমাণ যা হযরত আলীর খেলাফতকে প্রমাণিত করে তা অনস্বীকার্য। কিন্তু কেন রাসূল (সা.)-এর তিরোধানের পর আলী (আ.) তাঁর ন্যায্য অধিকার রক্ষা করলেন না। অথচ তাঁর খেলাফত কালে যারা তাঁর বিরুদ্ধে উত্থান করত এবং তাঁর হুকুমতকে আত্মসাৎ করতে চাইত , তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতেন।

উত্তর :

হযরত আলী (আ.) আবু বকরের খেলাফতকে অবৈধ মনে করতেন। আর এ কারণেই তার জুমার নামাজে এবং জামাতের নামাজে অংশ গ্রহণ করতেন না। তিনি তাঁর ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে নিতে জনগণের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি হযরত ফাতেমা যাহরাকে নিয়ে রাত্রে আনসারদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছে সাহায্য চান এবং বলেন : তোমরা আমার অধিকার ফিরিয়ে নিতে সাহায্য কর। আনসাররা জবাব দিল : আমরা আবু বকরের নিকট বাইয়াত করে ফেলেছি , এখন আর কিছু করার নেই যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।176

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে , রাসূল (সা.)-এর পর আলী (আ.) সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ে ছিলেন এবং তাঁর কোন সাহায্যকারী ছিলনা , যাদের মাধ্যমে কিয়াম করবেন। অন্যথায় তিনি তাঁর ন্যায্য অধিকার আদায় করে ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব দান করতেন। যখন জনগণ ওসমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে হত্যা করে এবং হতবুদ্ধি হয়ে আলী (আ.)-এর দিকে বাইয়াতের হাত বাড়িয়ে দেয় , তখন আলী (আ.) বললেন : যেহেতু সাহায্যকারী পেয়েছি ইসলামী হুকুমতকে গ্রহণ করাই প্রয়োজন মনে করছি। সুতরাং ইসলামী সমাজের নেতৃত্বকে হাতে তুলে নেন এবং নেতৃত্বদান করেন।177

কিন্তু রাসূল (সা.)-এর তিরোধানের পর যখন দেখলেন কোন সাহায্যকারী নেই এবং এ মুহূর্তে কিয়াম করলে অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য বৃদ্ধি পাবে , যা ইসলামের জন্য কল্যাণকর নয়। কেননা ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে ওৎ পেতে বসেছিল এবং ইসলাম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল।

হযরত আলী (আ.) শুধুমাত্র ইসলামের খাতিরে কিয়াম করেননি , কেননা তিনি ইসলামকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন ইসলাম শিকড় গেড়ে বসুক এবং শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করুক ও পুষ্প এবং ফল দান করুক। আলী (আ.) হলেন সেই মহান বীর যিনি সর্বদা রাসূল (সা.)-এর সাথে থেকে ইসলামের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি যুদ্ধ না করাটাকে ইসলামের জন্য কল্যাণকর মনে করেছিলেন এবং সকল তিক্ততায় ধৈর্য্য ধারণ করে ছিলেন।

আলী (আ.) কখনোই নেতৃত্বের লোভ করেন নি। অন্যথায় তিনি যে কোন উপায়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারতেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যখন আবু সুফিয়ান হযরত আলীকে বলেছিল : হাত বাড়িয়ে দিন আপনার সাথে বাইয়াত করব , আল্লাহর কসম! যদি চান তাহলে মদীনাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈন্যে পরিপূর্ণ করে দিতে পারি। আলী (আ.) তা গ্রহণ না করে বললেন : আল্লাহর শপথ! তুমি ইসলামের শুভাকাঙ্ক্ষী নও এবং ফেৎনা ফাসাদ করাই হচ্ছে তোমার একমাত্র লক্ষ্য।178

এ আলোচনায় মনোনিবেশ করার উদ্দেশ্যে এই যে , আমাদের সুন্নী ভাইয়েরা ইতিহাসের এ মহা সত্যের উপর (যা তাদেরই নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে) বেশি বেশি অনুসন্ধান করবেন। যার মাধ্যমে একে অপরের সহযোগিতা এবং সহমর্মিতায় আমরা পূর্বের তিক্ততার ক্ষতিপূরণ করতে পারব এবং নিষ্ঠার সাথে বিশ্বের সকল মুসলমানদের মধ্যে প্রকৃত ঐক্য সৃষ্টির পথে সচেষ্ট হতে পারব।

ولا حولا ولا قوة الا بالله العلي العظيم