বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)0%

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 15050
ডাউনলোড: 3080

পাঠকের মতামত:

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15050 / ডাউনলোড: 3080
সাইজ সাইজ সাইজ
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

রাসূল (সা.)-এর সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ

পারস্পরিক সমঝোতার আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামের রাসূল (সা.) বিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকদের ন্যায় সীমানা বৃদ্ধি করতে বা জনগণের উপর শোষণ চালাতে কিংবা বিভিন্ন জাতির ধনসম্পদ হস্তগত করতে যুদ্ধ করেন নি। বরং কোরআন ও ইসলামী আইনের মশাল নিয়ে এগিয়ে যেতেন। তরবারিকে শুধুমাত্র জরুরী ক্ষেত্রে যেমন : অত্যাচার ও জুলুম ঠেকাতে এবং সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডাকে উন্নীত করতে অথবা সত্য প্রচারের পথের বাধা দূর করতে ব্যবহার করতেন।

রাসূল (সা.)-এর সময়ে যে সকল যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিল তা ছিল স্বার্থপর ও জালিম লোকদেরকে উৎখাত করতে। কেননা তারা আল্লাহর পবিত্র বান্দাদের উপর জুলুম করত এবং সত্য ও ইসলামের আকিদা প্রচারের পথে বাধা সৃষ্টি করত। এছাড়া যেন মানুষ ইনসাফ ও ন্যায় সংগত হুকুমতের ছায়ায় আন্তর্জাতিক পারস্পরিক সমঝোতার অন্তর্ভূক্ত হতে পারে , সে উদ্দেশ্যেই ঐসকল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

এরূপ যুদ্ধকে কি অবৈধ বলা যেতে পারে ?! অবশ্য প্রত্যেক নবীর জন্যেই এ সংগ্রাম একান্তভাবে জরুরী এবং প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তিই এর প্রশংসা করবে। কেননা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে এটা ছাড়া আর অন্য কোন পথ খোলা থাকে না।

যেহেতু হযরত ঈসা (আ.)-এর নবুওয়াতকাল কম ছিল এবং উপযুক্ত পরিবেশ ছিলনা , তাই তিনি যুদ্ধ করেন নি। অন্যথায় তিনিও সমাজের আগাছাগুলোকে উৎখাত করতেন। খ্রিস্টানদের ধর্মপ্রচারমূলক প্রতিষ্ঠান সমূহ ইসলামী বিশ্বের মনোবলকে দুর্বল করার জন্যে এবং উপনিবেশ ও অনাচারের সাথে সংগ্রামের মানসিকতা নিস্পাণ করতে এবং ইসলামের উত্তরোত্তর অগ্রগতিতে বাধা দেয়ার জন্যে রাসূল (সা.)-এর যুদ্ধ সমূহকে উল্টোভাবে ব্যাখ্যা করে। আর হতাহতের সংখ্যাকে লোমহর্ষক ভাবে উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে তারা মধ্যযুগে খ্রিস্টান ধর্মযাজকগণ কর্তৃক ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞানীদের ব্যাপক হত্যাসহ মুসলমানদের সাথে সংঘটিত ক্রুসেডের যুদ্ধকে (যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন নিরাপরাধ লোককে হত্যা করা হয়) সামান্য এবং সাধারণ বলে উপস্থাপন করতে চায়।

প্রথমে আমরা মহানবী (সা.)-এর প্রসিদ্ধ যুদ্ধ সমূহের উদ্দেশ্য এবং শেষে মৃতের সংখ্যা তুলে ধরব। যার মাধ্যমে সত্য সুস্পষ্ট হবে এবং পাঠকবৃন্দ মহানবী (সা.)-এর এর যুদ্ধ সমূহের দর্শন উপলব্ধি করতে পারবেন। তাছাড়া জানতে পারবেন যে কত নগণ্য সংখ্যক মানুষ এ সকল যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিল।

1 বদরের যুদ্ধ : মহানবী (সা.) ও তাঁর সাথীরা তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর হতে 13 বৎসর যাবৎ মক্কায় কুরাইশদের হাতে নির্যাতিত হন। অবশেষে রাসূল (সা.) ও তাঁর সাথীরা জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু মক্কার কাফেররা তাদের অত্যাচার অব্যাহত রেখেছিল এবং অসহায় মুসলমানদেরকে নির্যাতন করত। তারা তাদেরকে মক্কা থেকে হিজরত করার ও অনুমতি দিত না।87

অন্যদিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে , মদীনায় এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করবে। নির্দেশ দেয় যে , কোন কাফেলাই যেন মদীনায় কোন খাদ্য-সামগ্রী না নিয়ে যায়। বেশ কিছু দিন এ অবরোধ চলার পর মদীনার লোকজন বেশ কষ্টে ও বিপদে পড়ে। খাদ্য সামগ্রী আনার জন্যে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে লোহিত সাগর উপকূলে যেতে হত।88

আবু জেহেল ও রাসূল (সা.)-এর হিযরতের পর রূঢ় ভাষায় এক পত্র লেখে এবং রাসূল (সা.)-কে সাবধান করে দেয় যে কুরাইশদের হামলার প্রতীক্ষায় থাকতে।89

এ পর্যায়ে আল্লাহ্ বললেন : যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে তাদেরকে (আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধ করার) অনুমতি দেওয়া হইল। কারণ তাদের উপর জুলুম করা হচ্ছে এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদেরকে সাহায্য করতে পূর্ণ ক্ষমতাবান। (সূরা হজ : 39)

যাদেরকে তাদের ঘর বাড়ী হতে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে যে , তারা বলে : আল্লাহ্ আমাদের প্রতিপালক। আল্লাহ্ যদি এই সকল মানুষের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন তা হইলে সাধু-সন্ন্যাসীগণের মঠ , গীর্জা , ইহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ যাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয় সেগুলো অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেত এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদেরকে সাহায্য করবেন , যারা তাঁর সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতিশয় শক্তিমান , মহা পরাক্রমশালী। (সূরা হজ : 40)

রাসূল (সা.) দ্বিতীয় হিজরীতে ইসলাম রক্ষার্থে ও মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে এবং কুরাইশদের মারাত্মক নীল নকশা পণ্ড করতে উঠে দাঁড়ান। অবশেষে বদরে কুরাইশদের মুখোমুখী হন। মুসলমান মুজাহিদদের সংখ্যা কুরাইশদের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ হলেও ঈমানের শক্তিতে এবং আল্লাহর সাহায্যে তারা কুরাইশদেরকে পরাজিত করেন।90

2 ওহুদের যুদ্ধ : যেহেতু বদরের যুদ্ধে কিছু সংখ্যক কাফের নিহত হয়েছিল , তাই কুরাইশ বিশেষ ভাবে রণ সাজে সজ্জিত হয়ে প্রতিশোধ নিতে তৃতীয় হিজরীতের মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং ওহুদে মুসলমানদের মুখোমুখী হয়। এ যুদ্ধে কিছু সংখ্যক মুসলমান কর্তৃক রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করা হলে , মুসলমানরা পরাজিত হয়।91

3 খন্দকের যুদ্ধ : পঞ্চম হিজরীতে বনী নাযির গোত্রের কিছু সংখ্যক ইহুদী মক্কায় যেয়ে কুরাইশদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। কুরাইশ এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন গোত্র থেকে লোক নিয়ে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করে।

মুসলমানরা মদীনা শহরের চারপাশে পরিখা খনন করলেন এবং 10 হাজার শত্রু সৈন্যের বিপক্ষে সারিবদ্ধ হলেন।

হযরত আলী (আ.) বীরদর্পে শত্রুদলের সেনাপতিকে ধরাশায়ী করেন এবং মুসলমানরা বিজয়ী হয়।92

4 বনি কুরাইযার যুদ্ধ : বনি কুরাইযা93 রাসূল (সা.)-এর সাথে সন্ধি চুক্তি করেছিল কিন্তু খন্দকের যুদ্ধে সে চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদেরকে সাহায্য করেছিল।94 যেহেতু রাসূল (সা.) তাদেরকে ভয়ানক হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন তাই তাদেরকে উৎখাত করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।

খন্দকের যুদ্ধের পর রাসূল (সা.) মুসলমানদেরকে বনী কুরাইযাদের দিকে যাত্রা করতে আদেশ দিলেন। 25 দিন মুসলমানরা তাদেরকে অবরোধ করে রাখে অবশেষে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আওস গোত্র রাসূল (সা.)-এর কাছে অনুরোধ করল তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে। রাসূল (সা.) বললেন : তোমারা কি রাজি আছ সা দ ইবনে মায়ায যে হুকুম করে তা মেনে নিতে ? সকলেই মেনে নিল , তারা মনে করেছিল যে সা দ তাদের পক্ষপাতিত্ব করবে। কিন্তু সে পুরুষদেরকে হত্যা , সম্পদসমূহকে বন্টন এবং নারীদেরকে বন্দী করার নির্দেশ দেয়। রাসূল (সা.) বললেন : এদের ব্যাপারে সা দ যে হুকুম করেছে তা আল্লাহরই হুকুম। এ নির্দেশ অনুসারে তাদের সকল যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হয়।95

5 বনি মুসতালিকের যুদ্ধ : বনি মুসতালিক খাযায়া গোত্রের একটি দল ছিল , যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কিছু ষড়যন্ত্র এঁটেছিল। রাসূল (সা.) তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হয়ে সৈন্য নিয়ে তাদের দিকে যাত্রা করেন , যেন তাদের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকেন। মুরাইসী নামক স্থানে তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং বিজয়ী হন। এ যুদ্ধ 6ষ্ঠ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল।

6 খায়বরের যুদ্ধ : খায়বরের দূর্গসমূহে ইহুদীদের অনেকগুলো দল একত্রে বসবাস করত। মুশরিকদের সাথে তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল। যেহেতু তাদের পক্ষ থেকে মুসলমানদের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল ; তাই 7ম হিজরীতে মুসলমানরা শত্রুদের প্রাণকেন্দ্র খায়বার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। অবরোধ এবং যুদ্ধের পর অবশেষে ইহুদীরা ইসলামী হুকুমতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। (এ যুদ্ধে আলী (আ.)-এর ঢাল ভেঙ্গে গেলে তিনি খায়বার দূর্গের দরজা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন এবং যুদ্ধ শেষে তা ছুড়ে ফেলে দেন। ঐ দরজা এত বড় এবং ভারী ছিল যে , পরবর্তীতে 40 জনেরও বেশী সংখ্যক লোক তা তুলতে ব্যর্থ হয়)।

7 মুতার যুদ্ধ : অষ্টম হিজরীতে রাসূলে আকরাম (সা.) হারেছ ইবনে উমাইরকে একটি পত্র দিয়ে বসরার96 বাদশার নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু রাসূল (সা.) দূত সেখানে পৌঁছলেই তারা তাকে হত্যা করে। মুসলমানরা মহানবীর নির্দেশে শত্রুর দিকে যাত্রা করে। অবশেষে মুতায় রোমের বাদশা হিরাকিলাসের এক লক্ষ সৈন্যের মুখোমুখী হয় এবং তাদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে যাইদ ইবনে হারেছ , জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা যারা ইসলামের সেনাপতি ছিলেন শহীদ হন। শেষ পর্যন্তমুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অপারগ হয়ে পড়ে এবং মদীনায় ফিরে আসে।

8 মক্ কা বিজয় : কুরাইশরা হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তিতে মহানবী (সা.)-এর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে , মুসলমান ও তাদের সাথে যারা চুক্তি বদ্ধ তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু তারা এ অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং বনি বাকর গোত্রকে খায়যা গোত্র (যারা মুসলমানদের সাথে চুক্তি বদ্ধ ছিল) তাদেরকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

রাসূল (সা.) তাদের অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে রুখে দাঁড়ান। অতঃপর মক্কায় প্রবেশ করেন এবং মক্কা বিজয় হয়। তিনি খোদার ঘর যিয়ারত করেন। অতঃপর তার ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন : জেনে রাখ , তোমরা রাসূল (সা.)-এর জন্যে অতি নিকৃষ্ট প্রতিবেশী ছিলে , তাকে অস্বীকার করেছিলে এবং তার প্রতি অত্যাচার করেছিলে। আমাদেরকে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলে এমনকি তাতেও তুষ্ট থাকনি। মদীনাতে এবং অন্যান্য স্থানেও আমাদের বিরোধিতা করেছিলে। যেখানে যেতে চলে যাও তোমরা সকলেই স্বাধীন।97

এই ক্ষমা এবং মহত্ত্বের কারণে মক্কার লোকেরা মুসলমান হয়ে যায়। এ বিজয়ে রাসূল (সা.) মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করতে নিষেধ করেন। তবে আত্মরক্ষা এবং মুশরিকদের হামলা প্রতিহত করতে অনুমতি দেন। আর 8 জন পুরুষ ও 4 জন নারীকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তার মধ্যে মাত্র 4 জনকে হত্যা করা হয়েছিল। খালিদ ইবনে ওয়ালিদের সেনাদল এবং মুশরিকদের মধ্যে কিছুটা দাঙ্গা দেখা দেয় এবং তাতেও কয়েক ব্যক্তি নিহত হয়।

9 হুনাইন ও তায়েফের যুদ্ধ : হাওয়াযেন গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে সৈন্য গঠন করে। রাসূল (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে 12 হাজারের এক বাহিনী নিয়ে তাদের দিকে যাত্রা করেন এবং হুনাইনে যুদ্ধ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত কাফেররা হেরে যায় এবং আত্মসমর্পন করে। এ যুদ্ধের পর রাসূল (সা.) তায়েফের দিকে দৃষ্টি দেন এবং ছাকিফ গোত্রকে (যারা হাওয়াযেন গোত্রের সাথে এক হয়েছিল) উৎখাত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিন তাদেরকে অবরোধ করে রাখার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং মক্কায় ফিরে আসেন।

এ যুদ্ধসমূহ ব্যতীত রাসূল (সা.)-এর সময়ে কয়েকটি সফর এবং ছোট খাট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এখন প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর সময়ে সংঘটিত সকল যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ভরযোগ্য দলিলের মাধ্যমে নিম্নে তুলে ধরা হলো :

ব্যাখ্যা

1.এই সংখ্যা উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে মত পার্থক্যের স্থানে সর্বোচ্চ সংখ্যাকে ধরা হয়েছে। যেখানে সংখ্যা জানা যায়নি সে ঘরটি খালি রাখা হয়েছে।

2.তারিখে খামিস যা আমাদের একটি তথ্যসূত্র তা একাধিক তাফসীর , হাদীস ও ইতিহাস বইয়ের সমন্বয়।

3.বিঃদ্রঃ তারিখে খামিসকে সংক্ষেপে তাঃ খাঃ , সীরাতে ইবনে হিশামকে সীঃ হিঃ , তারিখে ইয়াকুবীকে তাঃ ইঃ তাবাকাতকে তাবাঃ বিহারুল আনোয়ারকে বিঃ আঃ এবং তারিখে তাবারীকে তাঃ তাঃ আকারে লেখা হয়েছে।

যে সামান্য সংখ্যক হতাহতের সংখ্যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন তা কখনোই খ্রিস্টানদের বিভিন্ন ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ ও ক্রুসেডের যুদ্ধে মৃতের সংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য।

পাঠক মহাদয় লক্ষ্য করেছেন যে , রাসূল (সা.)-এর কোন যুদ্ধই সীমানা বৃদ্ধি , প্রতিশোধ বা অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে ছিলনা। বরং অনুপ্রবেশ রোধ , প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে , স্বাধীনতা রক্ষার্থে , মুসলমানদের সীমানা প্রতিরক্ষা ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে তা সংঘটিত হয়েছিল।

ড. গুস্তাভলুবুন , মিশুড থেকে বর্ণনা করেন :

ইসলাম জিহাদকে ওয়াজিব করেছে কিন্তু জনগণকে অন্যন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ইনসাফ , ন্যায় বিচার ও সদয় আচরণের দাওয়াত দিয়েছে এবং সকল ধর্মকে স্বাধীনতা দিয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিশ্বজনীন রেসালত

ইসলাম পূর্ব ও পশ্চিমের (অর্থাৎ সর্বজনীন) দীন

ইসলাম প্রথম দিন থেকেই স্বচ্ছ ঝর্ণার ন্যায় প্রকাশ লাভ করে। অতঃপর ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক বিশাল সমুদ্রে পরিণত হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পানি সিঞ্চন করে ও জনগণকে পরিতৃপ্ত করে। এখনো যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই গভীর হচ্ছে ও বিস্তৃতি লাভ করছে। সত্যিই (এ দীন) সকল ভ্রান্ত রীতিসমূহকে ধুয়ে জনগণকে সর্বদা এবং সকল ক্ষেত্রে হেদায়েত ও পথ প্রদর্শন করতে সক্ষম।

ইসলাম স্বৈরাচারী রাজনীতির সকল বাধা উপেক্ষা করে অগ্রগতি সাধন করে চলছে। শত্রুরা ইসলামের ভিত্তি নষ্ট করবার জন্যে ইসলামকে মিথ্যা ভাবে উপস্থাপন করেও কোন ফায়দা লুটতে পারেনি।

ইসলাম বিজয়ের রহস্যকে নিজের হাতে রেখেছে এবং সেই মোতাবেক নিজের আইন ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে।

সে মহান রহস্য ও সূত্রটি হলো এই যে , ইসলাম মানুষের প্রকৃতির সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রাখে এবং তাদের জীবনধারণের মূল ভিত্তি তারই উপর প্রতিষ্ঠিত।

অতএব , যারা বলে : পূর্ব , পূর্বই এবং পশ্চিম , পশ্চিমই। পূর্বের রাসূল (সা.) পশ্চিমাদের নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। তারা ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত। কেননা পূর্ব ও স্বভাবগত দিনের প্রয়োজন বোধ করে , পশ্চিমারাও একই ভাবে তা অনুভব করে। রাসূল (সা.) মক্কা থেকে সারা বিশ্বের জনগণকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেন।

সেদিন রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে মক্কার অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে তৌহীদের ধ্বনি বেজে উঠেছিল। এই আন্দোলনের ঝাণ্ডা বাহকের দৃষ্টি কেবল মাত্র হেজাজ ও আরবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার দায়িত্ব এটা ছিল যে , তাঁর বিশ্বজনীন রেসালতকে আরব থেকে শুরু করবেন।

এর দৃষ্টান্ত হলো সেই বাক্য যা রাসূল (সা.) তাঁর দাওয়াতের শুরুতেই তাঁর আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন :

اني رسول الله اليكم خاصة والي الناس عامة

অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ করে তোমাদের জন্যে এবং সর্বসাধারণের জন্য প্রেরিত হয়েছি।98

কোরআনের আয়াতও এ বিষয়টিকে স্বীকার করে বলছে :

1.( قل يا ايها الناس اني رسول الله اليكم جميعا ) বল , হে মানুষ ! আমি তোমাদিগের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল। 99

2.( وما ارسلناك الا رحمة للعالمين ) “ আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করিয়াছি। 100

3.( و اوحي الي هذا القران لا نذركم به ومن بلغ ) ... এই কোরআন আমার নিকট প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট এটি পৌঁছবে তাদেরকে...। 101

উপরোক্ত আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে , রাসূল (সা.)-এর বিশ্বব্যাপী রেসালত মদীনায় হিজরতের পর এবং ইসলামের প্রসারের পর হয়নি। বরং প্রথম দিনেই তিনি সর্ব সাধারণের জন্য দাওয়াত শুরু করেন।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনকে কোন নির্দিষ্ট সময় বা কোন বিশেষ গোত্রর জন্য প্রেরণ করেন নি। একারণেই কিয়ামত পর্যন্ত তা সকল সময়ের জন্য নতুন ও প্রত্যেক জাতির জন্য নিপূন হয়ে আছে এবং থাকবে। ইসলাম যে বিশ্বজনীন ধর্ম এটি তার অপর এক দৃষ্টান্ত।

মহানবী (সা.) 6ষ্ঠ হিজরীতে তাঁর প্রতিনিধিদেরকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসকদের নিকট চিঠি দিয়ে পাঠান যার উপর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ নামক মোহরাঙ্কিত ছিল এবং ইসলামের দাওয়াত দেন। এ চিঠিগুলোর সবই এক অর্থ বহন করছিল এবং তা ছিল তৌহীদের ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাওয়াত।

যেহেতু মহানবীর দাওয়াতসমূহ আল্লাহর নির্দেশে এবং জনগণকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য ছিল , তা মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।

এমনকি সত্য পিয়াসী ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করেন। যেমন : নাজজাশী , মুকুস এবং অন্যান্যরা...।102

গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে , রাসূল (সা.) বিভিন্ন দেশের বাদশা এবং গোত্রপতিদের কাছে মোট 62টি পত্র লিখেছিলেন। যার 29টি আমাদের নিকট রয়েছে।103

বিভিন্ন দেশের বাদশা এবং গোত্রপতিদের কাছে প্রেরিত পত্র

এখানে রাসূল (সা.)-এর কয়েকটি পত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করব

1.ইরান সম্রাটের প্রতি প্রেরিত পত্র

بسم الله الرحمن الرحيم

মুহাম্মদের পক্ষ থেকে পারস্যের বাদশাকে। দরুদ তাঁর প্রতি যে হেদায়াতের পথে চলে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে এবং যে এক আল্লাহর উপাসনা ও তাঁর বান্দা মুহম্মদকে স্বীকৃতি দেয়।

আমি আল্লাহর নির্দেশে তোমাকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত করছি। আমি সকল মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি , এই জন্য যে , যাদের অন্তঃকরণ জীবিত তাদের ভীতি প্রদর্শন করব , যেন কাফেররাও কোন অজুহাত দেখাতে না পারে। যদি সন্ধি ও শান্তির সাথে থাকতে চাও তাহলে ইসলাম গ্রহণ কর। যদি অবাধ্য হও মাজুসদের (জারথুষ্ট্র বা অগ্নি উপাসক) গোনাহ তোমার উপর বর্তাবে।104

2.রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি প্রেরিত পত্র

بسم الله الرحمن الرحيم

আমি তোমাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। যদি ইসলামের গণ্ডিতে আস তাহলে মুসলমানদের লাভ লোকসানের শামিল হবে। যদি তা না কর তবে জনগণকে স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দাও ; যেন ইসলাম গ্রহণ করতে পারে অথবা জিযিয়া কর দিতে পারে। তুমি তাদেরকে বাধা দিও না।105

রাসূল (সা.)-এর পত্রসমূহ শুধুমাত্র বাদশাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতিও তিনি পত্র দিয়েছিলেন। যেন সকলেই ইসলামের উদিত সূর্য সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।

3.ইয়ামামার শাসকের উদ্দেশ্যে প্রেরিত পত্র

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহর বার্তাবাহক মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে হুযাহকে। তার প্রতি দরুদ যে পথ প্রদর্শন করে হেদায়েত ও দীনকে অনুসরণ করে।

হে ইয়ামামার শাসক! তুমি জেনে রাখ যে , আমার দীন মানুষ যে পর্যন্ত যাবে তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছবে। অতএব , যদি নিরাপদ থাকতে চাও তাহলে ইসলাম গ্রহণ কর।106

4.ইহুদীদের প্রতি

পত্রটি মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে যিনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। তিনি মূসা ইবনে ইমরানের ভাই ও সাথি। আল্লাহ্ তাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন যা মূসা কালিমুল্লাহকে দিয়ে ছিলেন। তোমাদেরকে আল্লাহ্ যা কিছু সিনাই পর্বতে মূসার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তার কসম দিচ্ছি ।

তোমরা কী তোমাদের আসমানী কিতাবে ইহুদী সমাজ এবং সমগ্র মানবজাতির প্রতি রাসূল হিসেবে আমার প্রেরিত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জেনেছ ?! যদি জেনে থাক তাহলে আল্লাহকে ভয় কর এবং ইসলাম গ্রহণ কর। আর যদি এরূপ কিছু না পেয়ে থাক তাহলে তোমরা বাহানা করতে পার।107

5.নাজরানের পাদ্রীকে

بسم الله الرحمن الرحيم

শুরু করছি ইবরাহীমের প্রভুর নামে। পত্রটি মুহাম্মদের পক্ষ থেকে নাজরানের পাদ্রীকে। আমি তোমাকে বান্দার উপাসনা থেকে , আল্লাহ্ পূজার দিকে যিনি প্রকৃত মাবুদ দাওয়াত করছি।108

ইসলাম প্রচারে আমাদের দায়িত্ব

ইসলামের দ্রুত অগ্রগতি প্রকৃত পক্ষে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ইসলামের প্রিয় নবী (সা.) ও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গীদের অহর্নিশ অক্লান্ত শ্রমের ফল। মহানবী (সা.) ইসলামের প্রচারের জন্যে দুটি শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন : একটি হলো বাগ্মী বক্তাগণ , যারা ইসলামের সত্যতাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং মহানবীর প্রতি ছিল যাদের অকৃত্রিম বিশ্বাস ও ভালবাসা। আর অপরটি ছিল ইসলামের প্রাণবন্ত ও পরিপূর্ণ শিক্ষা সম্বলিত পত্রসমূহ।

মহানবী (সা.) যথাযথ মাধ্যমের অভাবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দূত পাঠাতেন।

এখন মহানবী (সা.)-এর আত্মা মুসলিম সমাজের জন্যে উদ্বিগ্ন যে , কিরূপে ইসলামের ঐশী মিশনের পথে কর্মতৎপরতা চালানো হবে। মুসলমানরা কি ইসলামী শিক্ষার সর্বজনীন প্রচারের জন্য আধুনিক প্রচার ব্যবস্থা ও যুগোপযোগী পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করছে কি ?

বিশ্বজনীন রেসালাত ইসলামের প্রচারের জন্য আমরা আমাদের সর্ব শক্তি নিয়োগ করব এবং ইসলামের প্রসারের জন্যে সকল ধরনের ত্যাগ তিতিক্ষার ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ পরিমাণে পিছপা হবো না। হোক সে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের কিন্তু সকল ভাই বোনকে এ প্রাণবন্ত ও জীবন সঞ্চারনী ঝর্ণা ধারা থেকে পিপাসা নিবারণের জন্যে আহবান করব ; আর কল্যাণ ও খেদমতের অধিকারী হব। যেমনটি মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বলেছিলেন :

আল্লাহর শপথ , যদি মহান আল্লাহ্ কোন মানুষকে তোমার মাধ্যমে হেদায়াত দান করেন , তবে সূর্য যাদের উপর আলোক প্রদান করে ও অস্তমিত হয় , তোমার জন্যে তার চেয়ে উত্তম কিছু রয়েছে...। (বিহারুল আনওয়ার , 21তম খণ্ড , পৃ. 361)