একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন11%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44400 / ডাউনলোড: 5202
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

সংকলন ও অনুবাদ

মীর আশরাফ - উল - আলম

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

সংকলন অনুবাদ : মীর আশরাফ-উল-আলম ।

সম্পাদনা : আবুল কাসেম মোঃ আনওয়ার ।

প্রকাশনায় : আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় , কোম-ইরান ।

প্রকাশকাল : ১৪২৯ হিঃ , ১৪১৫ বাং , ২০০৮ খ্রীঃ ।

মুদ্রণে : আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেস ।

Akjon Muslim Narir Abossoi Za Jana Proozon

( Must Knowing For Muslim Woman)

Collected & Translated by: Mir Ashraf-ul-Alam.

Published by: Al-Mustafa International Univercity, Qum-I.R.Iran.

প্রকাশকের কথা

) مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ‌ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً(

যে ব্যক্তি নেক কাজ আঞ্জাম দিবে , সে পুরুষই হোক অথবা নারীই হোক এবং যদি সে ঈমানদার হয় তবে তাকে এক প্রশান্তিময় জীবন দান করব ।

সেই প্রাচীন কাল থেকেই নারী বিষয়টি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলে এবং চিন্তাবিদগণের আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে পরিগণিত হয়েছে । সাথে সাথে প্রসিদ্ধ লেখক ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানকারীগণও এ বিষয়ের উপর বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন । আর তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে এ বিষয়সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকরেছেন , যা বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে । যেহেতু এ গুলোর মধ্যে ইসলাম পরিপূর্ণ একটি দ্বীন তাই মানুষ ও তার অধিকার , দায়িত্ব ইত্যাদির প্রতি গভির নজর রেখে ; নারীর স্থান ও মর্যাদার বিষয়টিকে বিশেষ ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণ ও আলোচনা - পর্যালোচনায় স্থান দিয়েছে । আর নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও গঠনগত তারতম্যের উপর দৃষ্টি রেখেই তার অধিকার বর্ণনা করেছে । যা কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করেই গভির দৃষ্টির আলোকে অবশ্যই বলতে হয় : ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীনেই এরূপে নিখুঁতভাবে নারীর অধিকার সম্পর্কে র্বণনা এবং তার শান ও মর্যাদায় নিরাপত্তা দেয়া হয় নি ।

কেননা , আমরা দেখতে পাই যে ; ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নারীর সাথে অশোভনীয় আচারণ করা হত এবং সর্বনিম্ন সমাজিক অধিকারটুকুও তাকে দেয়া হত না । ঠিক এমনই বিষাক্ত এক পরিবেশে রাসূলে আকরাম (সা.) নারীর উচ্চ শান ও মর্যাদাকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরলেন এবং মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখেই আইন প্রণয়ন করেলন । কিন্তু অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে ,

এখনো পর্যন্ত এ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে এমন সব উক্তি শোনা যায় যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এটা ফুটে ওঠে যে ; তারা নারীর শান ও মর্যাদা সম্পর্কে ইসলামের দেয়া দর্শন বুঝে উঠতে পারে নি ।

তাই বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রে ( ইসলামী দর্শন ও ইরাফন শাস্ত্রে ) অধ্যয়নরত গবেষক ও চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মীর আশরাফ - উল - আলম বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন নামে বর্তমান বইটি সংকলন ও বাংলা ভাষায় রূপান্তর করেছেন । আমরা তাকে এবং যারা বইটি প্রকাশে বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন সকলকেই আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি । আর আশা করি বইটি অধ্যয়ন করে পাঠক মহল বিশেষ উপকৃত এবং ইসলামের দেয়া নারীর প্রকৃত ও উপযুক্ত স্থান , মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে অবগত হবেন ।

গবেষণা বিভাগ ,

বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র , কোন - ইরান ;

২৩ রমযানুল মুবারাক , ১৪২৭ হিজরী ।

দুটি কথা

সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ ,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ ।

বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই এই বইটি সংকলন ও বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে । কারণ এক শ্রেণীর পুজিবাদী , দ্বীনহীন , পাপাচারী ও দুনিয়া প্রেমী ব্যক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্বের নারী সমাজকে দিনের পর দিন উচ্ছৃঙ্খলতা ও বেহায়াপনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা এটাকে নারী স্বাধীনতা বলে প্রচার চালাচ্ছে ।

অবশ্য আমাদের এ লেখনিটি বিশ্বের সমগ্র নারী সমাজকে নিয়ে নয় বরং মুসলিম নারী সমাজের প্রতিই আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে । কারণ ইসলামই সর্ব প্রথম ধর্ম যা নারী সমাজকে দিয়েছে পরিপূর্ণ মর্যাদা ও স্বাধীনতা । এটা অবশ্যই বোঝা প্রয়োজন যে , ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা ও স্বাধীনতা দিয়েছে তার সাথে বর্তমানে নারী মর্যাদা ও স্বাধীনতার নামে যে লজ্জাহীনতা ও অসভ্যতার চর্চা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান । আমরা বিশ্বাস করি যে , ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মই নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা ও স্বাধীনতা প্রদান করে নি বা করতে পারবেও না ।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও তার অধিকারসমূহ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ( যা দ্বীনের আহ্কামে লিপিবদ্ধ রয়েছে ) যে , তার ব্যক্তিত্ব হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা য়ালার হকের শামিল না মানুষের । আর তাকে কোন প্রকার অপমান করা কারো জন্যে বৈধ নয় এবং সকলের উচিত তার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা ।

ইসলাম নারীর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব রক্ষায় সদা-সচেষ্ট । তাই যদি কেউ কোন নারীর ব্যক্তিত্বহানী করে বা সম্ভ্রমহানী ঘটায় তবে অবশ্যই ঐ ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত (হদ প্রাপ্ত) হবে এবং তা কোন প্রকারেই লংঘনীয় নয় । না তার স্বামীর সম্মতিক্রমে আর না তার নিজের । কেননা , তার ব্যক্তিত্ব বা সম্ভ্রম হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু তা য়ালার হকের শামিল । এটা অর্থ বা মালামাল নয় যে , যদি তা চুরি হয়ে থাকে তবে চুরিকৃত অর্থ বা মালের মালিক সন্তুষ্টি মুলক সম্মতি দিলেই চোর শাস্তিভোগ করা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে । কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে , পশ্চিমা সমাজে নারীর ব্যাক্তিত্ব বা সম্ভ্রমকে অনুরূপ পণ্যের ন্যায় মনে করা হচ্ছে । তাই সেখানকার সম্ভ্রমহীন নারীর বা তার স্বামীর সন্তুষ্টি মুলক সম্মতিতে অপরাধী অব্যহতি পেয়ে যাচ্ছে । ঠিক যেমনটি সেই জাহেলিয়াতের যুগে হত । কিন্তু ইসলাম আসাতে সমাজে জাহেলিয়াতের কোন স্থান নেই , তা পুরাতন বা নুতনই হোক না কেন । যেরূপে পবিত্র কোরআন বলছে :

﴿ قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيدُ

বল : হক এসেছে আর বাতিলের না সূচনা হবে আর না পুনরাবৃত্তি ।

নারী সমাজকে ইসলাম যে স্বাধীনতা বা মর্যাদা দান করেছে সে সম্পর্কে বর্তমান নারী সমাজের অজ্ঞতার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের মত কিছু আলেম যারা লেখা-লেখি করি তারা এই বিষয়টিকে সুন্দর ও সঠিকভাবে নারী সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারি নি । ইসলাম নারীকে যে প্রকৃত স্বাধীনতা ও মর্যাদা দিয়েছে তা যদি আমরা তাদের সামনে উপযুক্ত ভাবে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে আজ এই লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না । তবুও দেরি হলেও সময় ফুরিয়ে যায় নি , এখনো সম্ভব আমাদের সন্তানদেরকে উপযুক্ত ইসলামী দিক-নির্দেশনায় গড়ে তোলা । কেননা , যখনই ক্ষতির পথরোধ করতে পারব তখনই লাভ শুরু হবে ।

যদিও সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে পারিনি তবুও আশা করছি এ সংকলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও স্বাধীনতার বিষয়টি সার্বিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছি । ইনশাআল্লাহ আগামীতে আমরা এ ধরনের আরো লেখনি প্রকাশ করে সমাজ জীবনে ইসলামের সঠিক নির্দেশাবলী আপনাদের মত সচেতন পাঠক মহলে পৌঁছে দেয়ার সর্বোপরি চেষ্টা করব ।

এই সংকলনটি নারী সমাজকে নিয়ে রচিত হয়েছে তার অর্থ এই নয় যে , সমস্তনিয়ম-কানুন ও বাধ্য-বাধকতা শুধুমাত্র নারীদের জন্যেই । ইসলামে নারীর ব্যাপারে যেভাবে নিয়ম-কানুন ও বাধ্য-বাধকতা এসেছে পুরুষের জন্যও রয়েছে অনুরূপ নিয়ম-কানুন ও বাধ্য-বাধকতা । তবে যেহেতু বর্তমান বিশ্বে নৈতিকতাকে নষ্ট করার ক্ষেত্রে নারীকেই ব্যবহার করা হচ্ছে , তাই প্রথমে নারী নিয়েই এ সংকলনের প্রকাশ । আগামীতে পুরুয়ের ব্যাপারেও অনুরূপ সংকলন প্রকাশ করার চেষ্টা করব ইন্শাআল্লাহ তা য়ালা ।

এই বইটির জন্য অনেকেই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন , তাদের অনুপ্রেরণাই আমাকে সাতটি অধ্যায়ে এ বইটি সংকলিত ও অনুদিত করতে শক্তি যুগিয়েছে । আর বইটি সম্পাদনা ও প্রকাশে যারা ভূমিকা পালন করেছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহ তা য়ালার দরবারে উত্তম পুরস্কার কামনা করছি ।

প্রিয় পাঠক মহল আশা করি বইটি অধ্যয়ন করে উপকৃত হবেন । আর আপনারা উপকৃত হলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে । বইটি অধ্যয়নে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না । আপনাদের দিক-নির্দেশনা পেলে আমরা আমাদের কাজে আরো অনুপ্রেরণা পাব ।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্

( رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ)

মীর আশরাফ-উল-আলম

তৌহিদী ব্যবস্থার দৃষ্টিতে নারী সমাজ দু শ্রেণীতে বিভক্ত

প্রথম শ্রেণী

যে সকল নারী আল্লাহর নির্দেশ ও নীতিমালাকে নিজেদের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন , তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন , মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের ইমামগণ (আ.) -এর হাদীসসমূহে প্রশংসামূলক বাণী উচ্চারিত হয়েছে । এখন এ পর্যায়ে আমরা সংক্ষিপ্তাকারে আপনাদের সামনে উক্ত আয়াত ও রেওয়ায়েতসমূহকে তুলে ধরার চেষ্টা করব ।

1- পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

) إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا(

নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী , ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী , অনুগত পুরুষ ও নারী , ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী , সত্যবাদী পুরুষ ও নারী , ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী , খোদাভীরুপুরুষ ও নারী , ছদকা দানকারী পুরুষ ও নারী , রোযাদার পুরুষ ও নারিগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে , তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ তা য়ালার কাছে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার3

এই পবিত্র আয়াতে , পুরুষ ও নারীকে পাশা-পাশি উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহ্ তা য়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি ।

) يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ(

হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি এ কারণে যে , তোমরা যেন একে অপরকে চিনতে পার (এবং বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়) । তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম যে অন্যের থেকে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন । নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন ।4

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা ’ য়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাঁর ও একক , পবিত্র সত্তাকে উত্তমরূপে জানা বলে উল্লেখ করেছেন । আর বংশ , ক্ষমতা , ধন-দৌলত , জ্ঞান , রং , ভাষা ও ভৌগলিকতার (আমেরিকা , ইউরোপ , এশিয়া ইত্যাদি) ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেন নি বরং আল্লাহর কাছে উত্তম বস্তু হচ্ছে তাকওয়া , আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা ।

) مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ(

পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে এবং উত্তম কাজ আঞ্জাম দিবে , তাদেরকে আমরা পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদের কাজের তুলনায় উত্তম পুরস্কার দান করব5

এই আয়াতেও আল্লাহ্ তা য়ালা উত্তম কাজের বিনিময় স্বরূপ পুরস্কার ও সওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন , আর সৎকর্ম সম্পাদনকারী পুরুষই হোক অথবা নারী হোক কোন পার্থক্য করেন নি বরং যে কোন বান্দাই এই ভাল কাজ আঞ্জাম দিবে আল্লাহ তা য়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন ।

) وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ(

আল্লাহ্ তা য়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে যে , তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সহধর্মিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার , আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে । 6

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা য়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন । তিনি উল্লেখ করেছেন যে , নারীরা হচ্ছে ভালবাসা , রহমত ও প্রশান্তির কারণ । বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবাই (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন , পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যারা উভয়ই পূর্ণতা অর্জন করে এবং এ দু য়ের মিলনের মাধ্যমে মানব জাতির বংশ বিস্তার ঘটে থাকে , আর তারা একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ ।

আল্লাহ্ তা য়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন : এই বিষয়টি তাদের জন্য নিদর্শন যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন । তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে , পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক । আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং এর সদস্যদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে । যে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত । শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই তারা এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না ।

কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দু টি দিক বিদ্যমান । তার একটি হচ্ছে ঐশী ও ভালবাসার দিক অপরটি হচ্ছে পাশবিক দিক । তবে মানুষ তার ঐ ঐশী ও ভালবাসার বোধের মাধ্যমেই পূর্ণতায় পৌঁছে থাকে ।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি তা হচ্ছে , অনেক মুফাসসির উল্লিখিত আয়াত ও এ ধরনের আরো কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে , নারী পুরুষের শরীরের অংশ । কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ , নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয় । এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :

) يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً(

হে মানব সকল ! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর । যিনি তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন । আর তা থেকে তার সহধর্মিণীকেও এবং ঐ দু জন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন ।7

) هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا(

তিনিই তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রী ।8

) خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا(

তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃি ষ্ট করেছেন এবং তা থেকে তার স্ত্রীকেও ।9

) وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا(

আর এটা তাঁর নিদর্শনমূহের নমুনা স্বরূপ যে , তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন ।10

) وَاللَّـهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً(

আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী নির্দিষ্ট করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান ও পৌত্রদের সৃষ্টি করেছেন ।11

) جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا(

তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন ।12

বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে , প্রথম তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ একটি নফস (সত্তা) থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্ত্রীগণও ঐ নফস থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ।

কিন্তু পরের তিনটি আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে সমস্তপুরুষের প্রতি ইশারা করে বলা হচ্ছে যে , তোমাদের স্ত্রীগণকে তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে । যদি আমরা একটুখানি এই বিষয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেই তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে , এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা য়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে , তাদের স্ত্রীগণ উৎসের দৃষ্টিতে তাদেরই প্রকৃতির , অন্য প্রকৃতির নয় । এটা নিশ্চয় বুঝাতে চাননি যে , স্ত্রীগণ তাদের দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যে , প্রতিটি স্ত্রীই তার স্বামীর দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । পরবর্তী তিনটি আয়াত প্রথম তিনটি আয়াতকে ব্যাখ্যা করেছে , যাতে করে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় ।

আল্লামা তাবাতাবাই এই আয়াতের তফসিরে বলেছেন : ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে যে , স্ত্রীদের পুরুষের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের উভয়েরই সৃষ্টির উৎস হচ্ছে এক ।

এই আয়াতে মিন শব্দটি উৎস বর্ণনা অর্থে এসেছে অর্থাৎ এখানে মিন কোন কিছু সৃষ্টির উৎসকে বর্ণনা করছে । এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতই পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির উৎস বর্ণনা করেছে , যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে ।

অতএব , এটা আমাদের কাছে পরিস্কার এবং বিভিন্ন তফসির গ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ তা য়ালা নারীকে পুরুষের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলিলহীন উক্তি । 13

উপরোল্লিখিত ভ্রান্ত ধারণাটির পক্ষে রয়েছেন আহলে সুন্নাতের মুফাসসিরগণ যেমন : ওয়াহ্বাহ্ যুহাইলী এবং ফাখরুদ্দীন রাযি তারা তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন ও গ্রহণ করেছেন ।

সুতরাং কোরআনের আয়াত থেকে আমাদের কাছে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে , পবিত্র কোরআন পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উৎসগত আলোচনা করেছে এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যকে তুলে ধরেছে । এর পক্ষে আমাদের আরো জোরাল যুক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ :

ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে , একদল লোক বলে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ’ এ ব্যাপারে আপনার মত কি ?

তিনি বললেন : আল্লাহ তা য়ালা এমন ধরনের কাজ করা থেকে পবিত্র । এরপর তিনি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন : আল্লাহর কি ক্ষমতা ছিল না যে , হযরত আদমের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করবেন যে তার পাজরের হাড় থেকে হবে না ? যাতে করে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে যে , হযরত আদম নিজেই নিজের সাথে বিয়ে করেছেন । আল্লাহ তাদের ও আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে ফায়সালা করুন । 14

(অর্থাৎ এখানে ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে , আল্লাহ যখন হযরত আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তবে তার সৃষ্টির জন্য , তার পাজরের হাড় থেকে করতে হবে কেন ? যেহেতু আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তাই এ কথা বললে তাঁর অক্ষমতাকেই তুলে ধরা হয় , নয় কি ? -নাউযুবিল্লাহ । )

অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে , আল্লাহ তা ’ য়ালা হযরত আদম সৃষ্টির পরে অবশিষ্ট কাদা-মাটি থেকে হযরত হাওয়াকে (হযরত আদমের মতই) স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন ।15

) وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ(

আমরা মুসার মায়ের প্রতি এরূপ এলহাম করেছিলাম যে , তাকে দুধ দাও এবং যখনই তার ব্যাপারে ভয় পাবে তখনই তাকে ( নীল নদের ) পানিতে নিক্ষেপ কর , তুমি ভয় করো না ও দুঃখিত হয়োনা আমরা তাকে পুনরায় তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্যে স্থান দিব16

এই আয়াতে এ বিষয়টি পরিস্কার যে , আল্লাহ তা য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর মায়ের প্রতি এলহাম করেছেন , আল্লাহ একজন নারীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন এটা হচ্ছে নারীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয় ।

) إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّـهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ(

(ঐ সময়কার কথাকে স্মরণে আন ) যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেন : হে মারিয়াম ! আল্লাহ তা য়ালা তোমাকে তার পক্ষ থেকে এক বাণীর সুসংবাদ দান করছেন যে , তার নাম হচ্ছে মাসিহ্ ঈসা ইবনে মারিয়াম , সে এই দুনিয়া ও আখেরাতেও একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে । 17

তাহলে আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে , একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব যে , সে পরিপূর্ণতার এমন পর্যায়ে পৌছাবে , যার কারণে আল্লাহ তা য়ালা আসমানী কিতাবে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলবেন । আর আল্লাহর ফেরেশ্তাগণ ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আ.) তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলবেন । আর এমন নজির পুরুষদের মধ্যেও কম দেখা যায় ।

) وَضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ(

আল্লাহ্ তা য়ালা মু মিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন , যখন সে বলেছিল যে , হে আল্লাহ ! বেহেশ্তে তোমার কাছে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে ফিরআউনের কু -কর্ম ও তার অত্যাচারী দলবল থেকে রক্ষা কর18

1-আল্লাহ তা য়ালা এই আয়াতে সকল পুরুষ ও নারীর সামনে একজন নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ।

2-আছিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) সকল নারীকে এটাই শিক্ষা দিলেন যে , আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন বাদশাহর প্রাসাদে জীবন-যাপন করার (সেখানে সব ধরনের সুব্যবস্থা থাকা সত্বেও) থেকেও উত্তম । তিনি আরো প্রমাণ করলেন যে , কোন নারীরই উচিৎ নয় এই দুনিয়ার বাহ্যিক রূপের মোহে ভুল করা । কেননা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে । আর শুধুমাত্র আল্লাহ্ই থাকবেন ।

3-তিন আরো শিক্ষা দিলেন যে , নারীদের স্বাধীনতা থাকবে (যতটুকু আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন) এবং তারা জুলুম ও জালিমের প্রতি ঘৃণা রাখবে ; যদিও ঐ জালিম তার স্বামীও হয়ে থাকে ।

) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿١﴾ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿٢﴾ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

হে রাসূল ! আমরা তোমাকে অফুরন্ত নেয়ামত - নবুওয়াত , শাফা ’ য়াতের ন্যায় উচ্চ মর্যাদাসহ কাউসার ( ফাতিমাকে ) - দান করেছি । সুতরাং তুমি এই নে ’ য়ামতসমূহের শুকরিয়া স্বরূপ নামায আদায় এবং কুরবানী কর । আর প্রকৃতপক্ষে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে নির্বংশ । ”19

সূরা কাউছারের তিনটি আয়াতের তিনটি অলৌকিকত্ব

প্রথম অলৌকিকত্ব

যেহেতু রাসূল (সা.) -এর সব পুত্র সন্তান মারা গিয়েছিল তাই শত্রুরা মনে করেছিল যে , তাঁর ইন্তেকালের পর তারা জুলুম ও অত্যাচারের ব্যাপারে স্বাধীন । কিন্তু আল্লাহ্ তা ’ য়ালা হযরত যাহরা (আ.) -কে দান করলেন , যাতে তাঁর সন্তানগণ বিশ্ব জুড়ে ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করতে পারেন এবং আবু সুফিয়ান বংশের আর কেউ ইসলামের সাথে শত্রুতা করে সফল হতে না পারে ।

দ্বিতীয় অলৌকিকত্ব

যদিও রাসূলে খোদা (সা.) তাঁর রিসালাতের প্রথম দিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তা ’ য়ালা তাকে এত পরিমানে ধন-সম্পদ দান করেছিলেন যে , তিনি হজ্জ মৌসুমে একটি উট অথবা তারও বেশী পরিমান কুরবানী করতেন ।

তৃতীয় অলৌকিকত্ব

রাসূল (সা.) -এর শত্রুরা বিশাল সৈন্য বাহিনী ও সামরিক শক্তির অধিকারী হওয়া সত্বেও কিছু দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের কোন অস্তিত্বই আর অবশিষ্ট ছিল না । এতে করে শত্রুদের বংশই ধ্বংস হয়েছিল , রাসূলে খোদার (সা.) নয় । এরপর দিনের পর দিন হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মাধ্যমে রাসূলে খোদা (সা.) -এর বংশের বিস্তৃতি হতে থাকলো ।

সাধারণ মানুষেরা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে কিছু বলতে অক্ষম । কেননা তিনি হলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ (ইনসানে কামেল) ও চরম আধ্যাত্মিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব । আর সাধারণ মানুষ হচ্ছে অপূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত । সে কারণেই তাদের পক্ষে হযরত ফাতিমা (সা.আ.) এর মত একজন পরিপূর্ণ মানুষকে বুঝে উঠার ক্ষমতা নেই । তাই তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই আশরাফুল মাখলুকাত খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর উত্তরসূরী মা ’ সুম ইমামগণ (আ.)-এর মুখ থেকেই শুনতে হবে:

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ). :ﺍﻥ ﺍﷲ ﺗﻌﺎﱃ ﻟﻴﻐﻀﺐ ﻟﻐﻀﺐ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭ ﻳﺮﺿﻰ ﻟﺮﺿﺎﻫﺎ

রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ্ তা য়ালা ফাতিমা ( আ .)- এর ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তার সন্তুষ্টিতে তিনি সন্তুষ্ট হন ।20

: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): ﺍﻭﻝ ﺷﺨﺺ ﺗﺪﺧﻞ ﺍلجنّة ﻓﺎﻃﻤﺔ

রাসূল (সা.) বলেছেন : সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি বেহেশ্তে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে ফাতিমা (সা.আ.) ।21

ﻗﺎﻝ الحسن (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ) ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ: ما ﻛﺎﻥ ﰱ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻋﺒﺪ ﻣﻦ ﻓﺎﻃﻤﺔ علیها السلام ﻛﺎﻧﺖ ﺗﻘﻮﻡ ﺣﱴ ﺗﺘﻮﺭﻡ ﻗﺪﻣﺎﻫﺎ

ইমাম হাসান (আ.) বলেছেন : ফাতিমা (আ.)-এর মত ইবাদতকারী পৃথিবীতে আর কেউ ছিল না , কেননা তিনি এত বেশী ইবাদত করতেন যার কারণে তার পদযুগল ফুলে যেত ।22

ইমাম হাসান (আ.) বলেছেন : আমার মা ফাতিমা (আ.) প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভোর পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন । তাকে মু মিন বান্দাদের জন্য প্রচুর দোয়া করতে শুনতাম কিন্তু নিজের জন্য দোয়া করতেন না । মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে , হে জননী ! অন্যদের জন্য এত দোয়া করেন , কেন আপনার নিজের জন্য দোয়া করেন না ? তিনি বললেন :

یا بنی الجار ثم الدار

হে আমার সন্তান! প্রথমে প্রতিবেশী তারপর নিজের বাড়ি ও নিজে ।23

রাসূল (সা.) বলেছেন : ফাতিমা (আ.) পৃথিবীর সকল (প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত) নারীদের নেত্রী এবং সে যখন মেহরাবে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন 70 হাজার ফেরেশ্তা তাকে সালাম করতে থাকে ও তাকে বলে : হে ফাতিমা! আল্লাহ তা য়ালা তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করেছেন , আর তোমাকে পৃথিবীর সমস্ত নারীদের উপরে স্থান দিয়েছেন । 24

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর ব্যাপারে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর উক্তি

হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মধ্যে একটি মানুষের জন্য পূর্ণতার যত দিক চিন্তা করা যায় তার সবগুলোই পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল । কেননা তিনি একজন সাধারণ নারী ছিলেন না । তিনি একজন মালাকুতি ও রূহানী (অলৌকিক ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের) নারী ছিলেন । একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন । তিনি একজন মালাকুতি (বস্তুজগতের উর্ধ্বের অদৃশ্য জগতের) অস্তিত্ব যিনি মানুষ রূপে এ ধরাধামে এসেছিলেন । তিনি এলাহী ও জাবারুতী (ফেরেশতাদেরও উর্ধ্বের ঐশী জগতের) এক অস্তিত্ব যিনি নারী রূপে প্রকাশিত হয়েছেন । তাঁর সমগ্র অস্তিত্বে নবীদের বৈশিষ্ট্যসমুহ পরিলক্ষিত হয় । তিনি এমন এক নারী , যদি তিনি পুরুষ হতেন তবে হয়তো নবী হতেন । তাঁর মধ্যে এলাহী , মালাকুতি , জাবারুতী , মুলকী ও নাসুতি (উর্ধ্ব ও বস্তুজগতের সকল উচ্চতর) বৈশিষ্ট্যসমূহ একত্রে একত্রিত হয়েছে ।25

তিনি এমন এক নারী যিনি হযরত যয়নাব (আ.)-এর মত প্রশিক্ষিত এক সন্তান মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন । পরবর্তীতে সেই যয়নাবই তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে নির্ভয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছিলেন , ইয়াযিদকে দোষী প্রমাণ করেন । তিনি ইয়াযিদকে বলেন : তুই মানুষ না , মানুষ হওয়ার যোগ্যতাও তোর নেই ।26

তিনি এমন এক নারী , যার গুণাবলী মহানবীর (সা.) গুণাবলীর অনুরূপ অসীম এবং তিনি হচ্ছেন পবিত্র ও নিষ্পাপ নবী পরিবারের সদস্য । তিনি এমন নারী , যার মর্যাদার ব্যাপারে সবাই তার নিজের বোঝার ক্ষমতানুযায়ী কথা বলে থাকে । এখনো পর্যন্ত কেউই তাঁর যথার্থ প্রশংসা করতে সক্ষম হয় নি । তাঁর ব্যাপারে তাঁর পরিবারের মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে ততটুকু বর্ণিত হয়েছে যতটুকু শ্রোতাদের ধারণক্ষমতা ছিল ও তাদের জন্য বোধগম্য হতো । সাগরকে কখনো কলসীতে আবদ্ধ করা যায় না । তাই তাঁর সম্পর্কে ইমামরা শ্রোতাদের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কথা বলেছেন । এক্ষেত্রে আমাদের জন্য উত্তম হলো এ সীমাহীন রহস্যময় প্রান্তরকে আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে আবদ্ধ করার চেষ্টা না করা ।27

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর ব্যাপারে শহীদ মুর্তযা মুতাহ্হারীর উক্তি

তিনি বলেছেন : ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মহিলা অনেক রয়েছে । খুব কম পুরুষই আছে যে হযরত খাদিজার সমান যোগ্যতা রাখে । আর নবী (সা.) ও আলী (আ.) ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ নেই যাদেরকে হযরত ফাতিমা (আ.) -এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে । তিনি তাঁর সন্তানগণের (যারা সকলেই হচ্ছেন ইমাম) উপর এবং শেষ নবী (সা.) ব্যতীত অন্য সকল নবীর উপরে অবস্থান করছেন ।28

এই বর্ণনায় এটা পরিস্কার হয়েছে যে , হযরত ফাতিমা (আ.) -এর মর্যাদা কোন সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারবে না । আর তিনি শুধুমাত্র পৃথিবীর নারীদের উপরেই নয় বরং বেহেশ্তী নারীদের উপরেও শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন । আল্লাহ তা ’ য়ালা আমাদেরকে তাঁর শাফা ’ য়াত থেকে বঞ্চিত না করুন ইনশাআল্লাহ । আর আল্লাহ তা ’ য়ালা আমাদের নারীদেরকে হযরত ফাতিমাকে অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন ।

2 - হাদীসের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিস :-

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیر ﺍﻭﻻﺩﻛﻢ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ

রাসূল (সা.) বলেছেন : কন্যারাই হচ্ছে তোমাদের উত্তম সন্তান ।29

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیرﻛﻢ خیرﻛﻢ ﻟﻨﺴﺎﺋﻪ ﻭ ﻟﺒﻨﺎﺗﻪ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের নারী ও কন্যাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে ।30

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ):. خیرﻛﻢ خیر ﻛﻢ ﻻﻫﻠﻪ ﻭ ﺍﻧﺎ خیرﻛﻢ ﻻﻫﻠﻰ ﻣﺎ ﺍﻛﺮﻡ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺍﻻ ﻛﺮﱘ ﻭ ﻻ ﺍﻻ ﻟﺌﻴﻢ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার পরিবারের সাথে উত্তম ব্যবহার করে থাকে । আমি আমার পরিবারের সাথে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যবহারকারী । কেবল মহান ব্যক্তিরাই নারীগণকে সম্মান দিয়ে থাকেন এবং নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিরাই কেবল নারীদেরকে অপমান ও অপদস্থ করে থাকে ।31

রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির তিনটি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান থাকবে অথবা তিনটি (পবিত্র) বোনের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে , তার জন্য বেহেশ্ত ওয়াজিব হবে ।

রাসূল (সা.) -এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে , ইয়া রাসূলুল্লাহ্! দু টি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান অথবা দু টি (পবিত্র) বোনের ভরণ-পোষণকারীও কি এই ছওয়াব পাবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ , তাকেও এই পুরস্কার দেয়া হবে ।

আবারও প্রশ্ন করা হল যে , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! একটি ( পবিত্র ) কন্যা সন্তান অথবা একটি ( পবিত্র ) বোনের ভরণ - পোষণকারীও কি এই সওয়াব পাবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ , তাকেও এই একই পুরস্কার দেয়া হবে ।32

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺼﺎﺩﻕ (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ): .. ﺍﺫﺍ ﺁﺫﺍﻫﺎ ﱂ ﻳﻘﺒﻞ ﺍﷲ ﺻﻼﺗﻪ ﻭ ﻻ ﺣﺴﻨﺔ ﻣﻦ ﻋﻤﻠﻪ ﻭ ﻛﺎﻥ ﺍﻭﻝ ﻣﻦ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﻨﺎﺭ

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তার ¯ স্ত্রীকে কষ্ট দেয় , তাহলে আল্লাহ্ তার নামাযকে কবুল করবেন না এবং তার ভাল ও উত্তম কাজ সমূহকে তার আমলনামায় লেখা হবে না । আর তার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার কারণে সে প্রথম ব্যক্তি যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।33


3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18