একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন11%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44438 / ডাউনলোড: 5208
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

1

2

হিজাব বিরোধীদের বক্তব্য

হিজাব বিরোধীদের বক্তব্য এখানে হিজাব সম্পর্কে পর্দা বিরোধীদের কিছু আপত্তি নিয়ে আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ।

তাদের প্রথম আপত্তি :

তাদের সবাই হিজাব নিয়ে সাধারণত যে কথাটা বলে থাকে তা হচ্ছে যে , নারীরা হচ্ছে সমাজের অর্ধেক অংশ , তাই যদি তারা হিজাব বা পর্দার মধ্যে থাকে তবে তারা ঘরকুনো বা কোণঠাসা হয়ে যাবে এবং এর ফলে তারা চিন্তাগত , সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পিছনে পড়ে থাকবে । বর্তমানে যেহেতু বিশ্ব অর্থনৈতিক সাবলম্বিতার দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে এবং তার জন্য অনেক মানুষের শ্রম ও ভূমিকা থাকা প্রয়োজন । পর্দার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের শ্রম হতে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয় এবং সাথে সাথে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও কোন ভূমিকা থাকছে না । আর এ কারণে তারা শুধুমাত্র ভোক্তা হিসেবে বিদ্যমান থাকে , উৎপাদনে কোনরূপ ভূমিকা রাখে না ।

তাদের আপত্তির বিপক্ষে আমাদের জবাব :

যারা এই সূত্রের ভিত্তিতে হিসাব করে থাকে তারা কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে বেখবর অথবা না জানার থাকার ভান করে থাকে । কেননা প্রথমত কে বলেছে যে , ইসলামী হিজাব নারীকে ঘরকুনো বা কোণঠাসা করে দেয় ? যদি অতীতকালে আমাদের সামনে এমন প্রশ্ন করা হতো তবে আমরা তার উত্তর দেয়ার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতাম কিন্তু ইরানে ইসলামী বিপ্লব কায়েম হওয়ার পরে আমাদের কষ্ট করে উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই । কেননা নিজের চোখে দলে দলে নারীদেরকে দেখছি যারা হিজাব পরা অবস্থাতেই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে ও করছে । যেমন : অফিস-আদালতে , কল-কারখানাতে , ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ও রাজনৈতিক মিছিলে , রেডিও ও টেলিভিশনে , হসপিটালগুলোতে ডাক্তার ও নার্স হিসেবে বিশেষ করে যুদ্ধাহতদের সেবায় , স্কুল , কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও ।

পরিশেষে , ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নারীদের বর্তমান অবস্থা এই ধরনের আপত্তি উত্থাপনকারীদের জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব । কারণ পূর্বে আমরা এমন হওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে আলোচনা করতাম আর এখন তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে । দার্শনিকগণ বলেছেন : কোন বিষয়ের সম্ভাবনার উপযুক্ত দলিল হচ্ছে তা বাস্তবে রূপ লাভ করা । যে জবাব চোখে দেখা যায় তা আর বলে বুঝানোর প্রয়োজন হয় না ।

দ্বিতীয়ত প্রথম যুক্তি ছাড়াও প্রশ্ন হচ্ছে যে , পরিবারের সুষ্ঠ পরিচালনা , প্রতিভাবান সন্তান তৈরী করা অর্থাৎ এমন সন্তান যারা আগামীতে তাদের মস্তিস্ক ও বাহুর শক্তি দিয়ে সমাজকে গড়ে তুলবে তাদেরকে সঠিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা কি কোন কাজ নয় ? যারা নারীর এই মহান কর্মকে সমাজের জন্য ইতিবাচক এক কর্ম বলে মনে করে না , তারা পরিবারের প্রকৃত দর্শন ও উপযুক্ত সমাজ গঠনে নারীদের প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখে না । তারা মনে করে প্রকৃত পথ হচ্ছে এটাই যে , আমাদের নারী-পুরুষরা পশ্চিমা দেশগুলোর মত প্রত্যহ সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ করবে এবং তাদের শিশুদেরকে শিশু লালন-পালন কেন্দ্রে রেখে আসবে অথবা তাদেরকে ঘরে রেখেই ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাবে । আর শিশুরা এই সময় থেকেই জীবনের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবে অথচ তখন কিনা তাদের উপযুক্ত ভালবাসা পেয়ে বেড়ে ওঠার কথা । এ ধরনের চিন্তার ব্যক্তিরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ভাবে উদাসীন যে , এতে করে ঐ শিশুদের মনের উপর অত্যন্তনেতিবাচক প্রভাব পড়ে যার কারণে তারা ভালবাসাহীন হৃদয় নিয়ে বেড়ে ওঠে যা একটি সমাজের জন্য অতিব ক্ষতিকারক দিক ।

তাদের দ্বিতীয় আপত্তি :

তারা বলে থাকে যে , পর্দা হচ্ছে এমন এক ধরনের পোশাক যা হাত-পা জড়িয়ে থাকে তা পরিধান করে বর্তমানের যান্ত্রিক যুগে কাজ করা সম্ভবপর নয় , বিশেষ করে বোরকা যা বর্তমানের সমাজ ব্যবস্থার সাথে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ।

তাদের এ আপত্তির বিপক্ষে আমাদের জবাব :

যারা এ ধরনের কথা বলে থাকে , প্রথমত একটি বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন । আর তা হচ্ছে পর্দা সকল সময় বোরকা অর্থে ব্যবহৃত হয় না । বরং তা নারীর আবৃত থাকার অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । যদিও নারীর দেহ আবৃত রাখার সব থেকে উত্তম পন্থা হচ্ছে চাদর বা বোরকা ব্যবহার করা । কেননা চাদর দেহ নারীকে বেগানা (পর-পুরুষের) দৃষ্টি থেকে দূরে রাখে এবং শরীরের আকর্ষণীয় স্থানগুলোকে ফুটিয়ে তোলে না । কিন্তু শুধু কামিস বা লম্বা পোশাক এমনটি নয় । কারণ তা পরলে সহজেই নারীর শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো বুঝা যায় এবং পর-পুরুষের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করে ।

দ্বিতীয়ত ইরানের নারী কৃষকগণ ও গ্রামের মহিলা শ্রমিকরা যারা ধানক্ষেতে বা অন্য স্থানে অনেক কষ্টকর কাজ যেমন বীজ তলা তৈরী , আগাছা পরিষ্কার ও ফসল কেটে ঘরে আনা ইত্যাদি করে । তারা হিজাবের (পর্দার) মধ্যে থেকে এ কাজগুলো করে উল্লিখিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন । সাথে সাথে এটাও প্রমাণ করেছেন যে , গ্রামের নারীরাও ইসলামী পর্দার মধ্যে থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে এবং তা তাদের কাজে কোন বাধার সৃষ্টি করে না ।

তাদের তৃতীয় আপত্তি :

হিজাব (পর্দা) যেহেতু নারী ও পুরুষের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করার সাথে সাথে পুরুষের কামভাবকে উত্তেজিত করে এবং তা ধ্বংস না করে বরং তাদের যৌনতার প্রতি আকর্ষণকে বাড়িয়ে থাকে । আর তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যখন কোন বাধাই মানে না ।

তাদের এ আপত্তির বিপরীতে আমাদের জবাব :

বর্তমান সময়ে যখন ইরানের সকল স্থানে পর্দার সংস্কৃতি বিরাজমান তার সঙ্গে ইরানের তাগুতী সরকারের আমলে বিদ্যমান সমাজের তুলনা মূলক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , তখন ফিতনা-ফ্যাসাদের পরিমান আকাশ চুম্বি ছিল ও নারীরা ছিল উলঙ্গ বা এ সংস্কৃতি অনেক আর পরিবারের মধ্যেও প্রবেশ করেছিল , যার কারণে তালাকের পরিমান দিনের পর দিন বেড়েই চলেছিল ও অবৈধ সন্তান জন্ম নিচ্ছিল কিন্তু যখন ইসলামী বিপ্লব সফল হলো এবং হিজাব প্রতিষ্ঠিত হলো তখন এ সমস্যা থেকে সমাজ মুক্তি পেল । তবে এটা দাবী করব না যে , ঐ সমস্যার একশত ভাগই সমাধান হয়ে গেছে তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে , তা প্রায় সত্তর ভাগের কাছাকাছি সমাধান হয়ে গেছে । আর যদি দেশের সকল মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে তবে ইসলামী সমাজ ফিতনা-ফ্যাসাদ মুক্ত হবে ।

তাদের চতুর্থ আপত্তি :

সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ এবং পর্দাহীনতার প্রধান কারণ হচ্ছে অভাব ও অর্থনৈতিক সংকট । যদি অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তবে জনগণের পক্ষ থেকে এরূপ আচরণ প্রকাশ পাবে না।

তাদের এ আপত্তির বিপক্ষে আমাদের জবাব :

যদিও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা কোন কোন মানুষের ঈমানের দুর্বলতা সৃষ্টি করে থাকে এবং যার কারণে সে ব্যক্তি ভ্রান্তপথে চলে যায় । এর কারণেই ইসলামও অভাব ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাকে দূর করার উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে । কিন্তু ফ্যাসাদ ও গোনাহের সূত্রপাত কখনোই অভাব বা অর্থনেতিক অসচ্ছলতা থেকে নয় , বরং ঈমানের দুর্বলতা ও সাংস্কৃতিক দৈন্য এজন্য দায়ী । ঈমানের দুর্বলতা যত প্রকট হবে গোনাহের পরিমান ততই বেশী হবে । যদি অর্থ ও প্রাচুর্য্য এবং স্বচ্ছল জীবন ফিতনা- ফ্যাসাদকে ঠেকাতে সক্ষম হতো তবে অবশ্যই পৃথিবীর ধনী দেশগুলো তাদের তরুণদেরকে এবং সমাজকে অধিক পবিত্র রাখতে সমর্থ হতো । কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ফিতনা-ফ্যাসাদ ঐ সমস্তদেশগুলো থেকে সৃষ্টি হচ্ছে । সুতরাং অবশ্যই মানুষের ঈমান ও আক্বীদা-বিশ্বাসের উপর কাজ করা প্রয়োজন । যদি মানুষ তাদের অন্তর দিয়ে আল্লাহ্ ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তবে সকল কিছুই যথার্থ ও সুন্দর হয়ে উঠবে এবং ভীরুতা , কর্মহীনতা ,অলসতা , অসতীত্ব , যৌনতা , অর্থের লালসা , মানসিক অস্থিরতা , অশান্তি প্রভৃতির স্থলে সাহসিকতা , কর্মে একনিষ্ঠতা , কর্মচঞ্চলতা ,সতীত্ববোধ , অসহায়কে সাহায্য করার মানসিকতা , অল্পে তুষ্টি ও মানসিক প্রশান্তি বিরাজ করত ।

হিজাবের বিশেষ গুরুত্বসমূহ

-হিজাব বা পর্দার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা যায় বেপর্দা ও সঠিক পর্দা না করা নারী শয়তানকে খুশি করে থাকে ।

-হিজাব কলুষতা থেকে রক্ষা করে থাকে ।

-নারীর শোভা হিজাবের মধ্যে লুক্কায়িত ।

-পর্দানশিন নারী তার স্বামীর কাছে বেশী প্রিয় ।

-হিজাব , রূহের প্রশান্তিবয়ে আনে ।

-হিজাব , নারীর আত্মিক পবিত্রতা ও আত্মমর্যাদাবোধের সাক্ষ্য বহন করে ।

-হিজাব আয়ু ও সংসার জীবন দীর্ঘায়িত হতে সাহায্য করে ।

-পর্দানশিন নারীদের থেকে বেপর্দা নারীদের মধ্যে মানসিক অশান্তিবেশী থাকে ।

-হিজাব মর্যাদা বা নিরাপত্তা দান করে কিন্তু সীমাবদ্ধতা সষ্টিকরে না ।

-হিজাব নারীর সতীত্ব ও সচ্চরিত্রতার বহিঃপ্রকাশ ।

-পর্দানশীল মেয়ে দ্রুত স্বামী লাভ করে থাকে ।

-হিজাব , নারীর মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে ।

-হিজাব , প্রবৃত্তির শৃঙ্খল ভেঙ্গে তা থেকে নারীকে মুক্তি দেয় ।

-নৈতিক অনাচার এবং গর্ভপাত পর্দানশিন নারীদের মধ্যে কম দেখতে পাওয়া যায় ।

-পর্দানশিন নারী , কামুক পুরুষকে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা থেকে নিরাশ করে থাকে ।

-হিজাব , নারীর লজ্জাশীলতা ও আত্মিক পবিত্রতার পরিচয় বহন করে ।

-পর্দানশিন নারী , জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে অধিক সফলকাম হয়ে থাকে ।

-হিজাব ও তাকওয়া , মানুষকে বেহেশ্তী করে থাকে ।

-হিজাব , অবৈধ সন্তান জন্মদানের পথে বাধা হয়ে থাকে ।

-হিজাব , স্বাধীন ধর্মীয় ও দেশীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে ।

-নারীর কালো বোরকা ও তার পর্দা শয়তানের অন্তরে বিষাক্ত তীরের ন্যায় আঘাত হানে ।

-হিজাব , বখাটেদের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করে থাকে ।

-পর্দানশিন ও তাকওয়া সম্পন্ন নারীদের মধ্যে তালাক ও সংসার ভাঙ্গার ঘটনা কম দেখা যায় ।

-পর্দানশিন নারী , নিজের ও স্বামীর জন্য মর্যাদা ও গর্বের বিষয় হয়ে থাকে ।

-পর্দানশিন থাকার অর্থ হচ্ছে শয়তানের প্রভাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করা ।

-নারী তার পর্দার মাধ্যমে ইসলামের শত্রুদের অসৎ উদ্দেশ্যের (ইসলামের ক্ষতি সাধনের) পথে অন্তরায় হয়ে থাকে ।

-নারী তার হিজাবের মাধ্যমে ইসলামের শহীদদের আত্মাকে প্রফুল্ল করে থাকে এবং শহীদের প্রকৃত অনুসারী বলে পরিগণিত হয় ।

-পর্দানশিন নারী , তার স্বামীর অধিকারকে নষ্ট করে না বা তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে না ।

-নারীর কালো বোরকা বা হিজাব শয়তান ও তার দোসরদের অন্তরে দুঃখ বয়ে আনে এবং মু ’ মিনদের অন্তরে বয়ে আনে সুখ ।

-নারীর হিজাব , বাবা , ভাই ও স্বামীর আত্মসম্মানবোধের পরিচায়ক ।

-হিজাব , আল্লাহ্ ও কিয়ামতের উপর নারীর বিশ্বাস ও ঈমানের পরিচায়ক ।

-হিজাব , নারীর প্রকৃত ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে থাকে , কিন্তু বেপর্দা নারী তার প্রকৃত ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে ।

-পর্দানশিন নারী , আল্লাহর আনুগত্যকারী । কিন্তু বেপর্দা নারী শয়তানের আনুগত্যকারী ।

-পর্দানশিন নারী , শয়তানের প্রকৃত উদ্দেশ্য যা হচ্ছে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা তা থেকে তাকে নিরাশ করে থাকে ।

-পর্দানশিন নারী , পবিত্র কোরআন , আহলে বাইতের (আ.) ইমামগণ এবং শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে চলে , কিন্তু বেপর্দা নারী এসব কিছুর প্রতি ভ্রুকুটি দেখায় ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করে থাকে ।

-পর্দানশিন নারী ও মেয়েরা মানসিক ও নৈতিক দিক দিয়ে উত্তম কিন্তু বেপর্দা নারী তার প্রেমিকাসুলভ আচরণ ও ভাবভঙ্গীর মাধ্যমে নিজের ত্রুটিকে ঢেকে রাখতে ও অপূর্ণতাকে ঢেকে রাখতে চায় ।

-পর্দানশিন নারী পর্দার মাধ্যমে তার সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য্যকে শুধুমাত্র তার স্বামীর জন্য নির্দিষ্ট করে , কিন্তু বেপর্দা নারী অভিসারের মাধ্যমে চায় স্বামী ছাড়াও অন্য সকলের প্রিয় হয়ে থাকতে ।

-হিজাব পরিহিতা নারী , ঠিক ঝিনুকের মধ্যে মুক্তার ন্যায় যা শুধুমাত্র তার স্বামীর জন্যেই । কিন্তু বেপর্দা নারী , ঠিক ইমিটেশনের অলঙ্কারের ন্যায় যা যে কোন স্থানে পাওয়া যায় ।

-পর্দানশিন নারী , তার প্রথম ভালবাসা ও অভ্যন্তরীণ শোভাকে তার স্বামীর প্রতি নিবেদন করে থাকে । কিন্তু বেপর্দা ও তাকওয়াহীন নারী , অবিরাম মেলামেশা ও একত্রে ওঠাবসার কারণে অনেকের দৃষ্টি পড়ে থাকে । সে হয়ত সর্বশেষ ভালাবাসাটা তার স্বামীকে দিয়ে থাকে ।

-আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে নারী হচ্ছে একটি সু-গন্ধযুক্ত ফুলের মত ।১৭২

পর্দার কারণেই নারীর কোমলতা ও প্রকৃতি নষ্ট হয় না । যেমন : সে এমন একটি ফুলের ন্যায় হয়ে যায় যে , তা সকলের নাগালের বাইরে থাকে । আর সে কারণেই তা দ্রুত ঝরে যায় না । কিন্তু বেপর্দা নারী ঐ ফুলের মত যা সর্বসাধারণের যাতায়াতের রাস্তায় পাশে রয়েছে ফলে সকলেই তা স্পর্শ করতে পারে বা তার গন্ধ উপভোগ করতে পারে । আর তার কারণেই তা দ্রুত নিজের কোমলতা ও প্রকৃতি নষ্ট করে ফেলে এবং দ্রুত ঝরে যায় । তাই শেষের দিকে ঐ ফুলকে আর কেউ মূল্যায়ন করে না এমন কি তার প্রকৃত মালীও (স্বামী) তাকে উপেক্ষা করে ।

-পর্দা করা নারী খুব কম দেখা যায় যে , কারো দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছে কিন্তু যদি হয়েও যায় তবে তা পছন্দনীয় ।

পর্দা করা নারীর বক্তব্য

যখন পর্দা করা নারী , ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে দৃঢ়ভাবে পা ফেলে এবং কথা বলার সময় অন্যরা যাতে চিন্তায় কাজে লিপ্ত না হয় সে জন্য নিজের কণ্ঠকে মোটা করে এবং বাড়ীর বাইরে অহংকারী ভঙ্গিতে পথ চলে প্রকৃতপক্ষে তখন সে তার এই ধরনের কাজের মাধ্যমে এ বক্তব্যই তুলে ধরে : আমাকে ভয় কর , তোমাদের অন্তরে আমার প্রতি আকাংখার দুঃসাহস কর না । আমি একটি সু-গন্ধযুক্ত ফুল , শুধুমাত্র একজন যার গন্ধ উপভোগ করবে , সকলে নয় । আমার পর্দা হচ্ছে কাটার ন্যায় যা আমার ফুলের ন্যায় অস্তিত্বকে সংরক্ষণ করে । আমার পর্দা অপবিত্র ব্যক্তিদের চোখকে অন্ধ করে দেয় এবং তাদের শয়তানী উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে নিরাশ করে থাকে ।

আমি আমার সৌন্দর্য্যকে পর্দার দীপ্তিময় প্রকাশেই খুঁজে পাই । আমার পর্দা আমার হৃদয়ের পবিত্রতা ও ঈমানের দৃঢ়তার পরিচয় দান করে । আমি বলতে চাই যে , আমি প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাস নই এবং নিজের মধ্যে কোনরূপ ঘাটতি অনুভব করি না । সব ধরনের দাসত্বের বন্ধন মুক্ত এবং আল্লাহর অভিভাবকত্বের ছায়ায় রয়েছি , যেমনভাবে ঝিনুকের মাঝে মুক্তা থাকে ।

আমি আমার পর্দা বা হিজাবের মাধ্যমে এটা দেখাতে চাই যে , আমি প্রকৃত দ্বীনদার ব্যক্তি এবং কোরআন , রাসূল (সা.) , পবিত্র ইমামগণ (আ.) ও হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) -এর প্রকৃত ও সত্য অনুসারী যিনি উত্তম ও সুন্দর সকল মানবীয় বৈশিষ্ট্যসমূহের চূড়ান্তে পৌঁছেছিলেন ও পৃথিবী হাজার বছর পরেও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে এবং আগামীতেও করবে । তিনি প্রতিটি স্বাধীন ও পবিত্র নারীর জন্য আদর্শ ছিলেন , আছেন ও থাকবেন । আমি এমন এক নারীর (হযরত যয়নাব) অনুসারী যিনি ইয়াযিদ ও তার দোসরদের মিথ্যা মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করেছিলেন এবং উত্তম জীবন পদ্ধতি প্রতিটি নারী-পুরুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন ।

বেপর্দা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীদের বক্তব্য :

পর্দানশিন নারীদের বিপরীতে বেপর্দা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় পোশাক পরে , আকর্ষনীয় ভঙ্গিমায় কথা বলে এবং প্রেমিকাসুলভ আচরণের মাধ্যমে সে নিজের অজান্তেই বলে থাকে যে , কামুক পুরুষেরা আমার পিছে পিছে আস , আমাকে বিরক্ত কর । আমাকে টিটকারী কর , আমার সম্মুখে নতজানু হও এবং আমার প্রতি প্রেম নিবেদন কর ও আমাকে পূজা কর । আমাকে পাওয়ার আশায় দিন কাটাও , তোমাদের মনগুলো আমাকে দাও । আমি বাহ্যিকভাবে মুসলমান কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের মান সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করি । আমার অন্তরে আল্লাহ্ ও কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস খুব দুর্বল । আমার বাহ্যিক রূপই আমার ভেতরের বহিঃপ্রকাশ ।

আল্লাহ্ তা য়ালা বলেছেন যে ,

) قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَىٰ شَاكِلَتِهِ فَرَ‌بُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ أَهْدَىٰ سَبِيلًا(

হে নবী , বল সবাই যার যার নিজস্ব পদ্ধতি ও অভ্যন্তরীণ রূপ অনুযায়ী কাজ করে , সুতরাং তোমাদের পালনকর্তা উত্তম পথের অনুসারীদেরকে খুব ভাল ভাবেই জানেন ও চেনেন ।১৭৩

ফার্সী প্রবাদে আছে : কলসির মধ্য থেকে তাই বেরিয়ে আসবে যা তার মধ্যে আছে ” ।

আমার এই কামনা উদ্দীপক আচরণসমূহ যা শত শত মানুষের হৃদয় জয় করে থাকে বলতে চাই যে , আমার স্বামী , পিতা ও ভাইদের তাদের স্ত্রী , কন্যা ও বোনের ব্যাপারে কোন প্রকার ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানবোধ নেই । কেননা যদি তাদের তা থাকত তবে আমাকে এভাবে বাড়ীর বাইরে পা রাখার অনুমতি দিত না ।

আমি আমার এই অশালীন পোশাক ও গুনাহয় কলুষিত বাহ্যিক রূপ নিয়ে বলতে চাই যে , আমি সেই সব নারীর অনুসারী যারা তাদের সারা জীবন অন্যদের বিপথে পরিচালিত করেছে , আল্লাহ , কোরআন ও ইসলামের প্রতি ভ্রকুটি দেখিয়েছে , যারা পশুর মৃতদেহের চেয়েও দুর্গন্ধ নিয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে এবং পৃথিবীতে অনাচার , ধ্বংস আর অপমান ছাড়া কিছুই রেখে যায় নি । আমি আমার কাজের মাধ্যমে এটাই দেখিয়ে থাকি যে , আমি পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসারী যা বিশ্বকে অনাচার ও বিশৃংখলায় পূর্ণ করেছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার যুবককে অবক্ষয় ও অধঃপতনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।

আমি এমন এক সু-গন্ধযুক্ত ফুল , যার সু-গন্ধ সকলেই উপভোগ করে থাকে । আমি ঘন্টার পর ঘন্টা সাজ-সজ্জার পিছনে সময় ব্যয় করে , চুল রং করে নিজেকে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করি যাতে করে কামুক ও প্রবৃত্তি পূজারী পুরুষদের অন্তরসমূহ নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হই । আর এই সকল কাজের মাধ্যমে তাদের নজর কাড়বো এবং প্রসিদ্ধ হয়ে উঠবো এবং এর দ্বারাই আমার মধ্যে যে সকল অপূর্ণতা রয়েছে তা পূরণ হয়ে যাবে । কেননা এটা দেখছি যে , কিছু কিছু মানুষের অন্তরজুড়ে আছে এবং তারা সম্মানিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে । আমিও তাই চাই যে , আমার এই প্রেমিকাসুলভ আচরণ এবং উত্তেজনাকর দৈহিক ভঙ্গিমার মাধ্যমে মানুষের নিকট সম্মানের পাত্র এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হতে । এই কাজের মাধ্যমে এটা দেখাতে চাই যে , অজ্ঞতা আমার ও আমার অনুরূপ নারীদের মধ্যে বিদ্যমান এবং ইসলামের আলোকিত পথ সম্পর্কে তেমন কিছুই আমাদের জানা নেই । কিন্তু আফসোস হচ্ছে এটাই যে , যখন কোন কামুক ও ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ আমার প্রতি তাকায় তখন নিজের মধ্যে অলীক এক ব্যক্তিত্ব অনুভব করি , কিন্তু পরক্ষণেই মানসিক অশান্তি এবং বিষন্নতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি ফলে আমার অপূর্ণতার হতাশা দূর না হয়ে আরো প্রকটভাবে প্রকাশিত হতে থাকে । আর যদি কাউকে শিকার করতে না পারি এবং তাকওয়া ও আত্মসম্মানবোধের কারণে যদি কোন যুবক আমাকে না দেখার ভান করে চলে যায় তবে তা হয় আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার । তখন মনে হয় দেহের অভ্যন্তর থেকে এখনই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠবে এবং তা আমার সমগ্র অস্তিত্বকেই পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে ।

কিন্তু আমরা আপনার শুভাকাঙ্খী হিসেবে বলতে চাই যে : ওহে বেপর্দা নারী , যদি ভাল , সম্মানিত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চাও সেই সাথে নিজেকে ভেতর হতে দগ্ধ হওয়া থেকে মুক্তি পেতে চাও তবে সতীত্ব ও আত্মমর্যাদা লাভের চেষ্টা কর । কেননা , যতই আবৃত থাকবে ততই ভাল , চরিত্রবান , ধার্মিক ও সৎ যুবককে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারবে যারা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করবে । আর এর মাধ্যমেই তুমি তোমার স্বামীকে তোমার প্রতি বেশী আকৃষ্ট করতে পারবে । আর যতই অনাবৃত থাকবে ততই অন্যদের দৃষ্টি থেকে ঝরে পড়বে ।

ওহে বেপর্দা নারী সম্মান ও প্রসিদ্ধি এই সব নষ্ট কাজের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না । কেননা কোন পুরুষের যত কষ্ট করে (তোমার দুয়ারে ধরনা দিয়ে তোমাকে মোহরানা পরিশোধ করে তোমার সকল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে) তোমাকে পাওয়ার কথা তুমি নিজেকে অনাবৃত করে অতি সহজেই তাকে তার অবৈধ উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করছো । তাই তারা তা সহজেই পাওয়ার কারণে বিয়ে করে পরিবার গঠন ও সংসারের দায়িত্ব নিতে চায় না । আর যদি ঐ পুরুষ তোমাকে বিয়ে করেও তবে তোমাকে দাসী বানানো ও বাচ্চা লালন-পালন করার জন্যেই চাইবে । যে স্বামীর মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকে না ও দ্বীনি বিশ্বাস দুর্বল সে যে কয় দিনই তোমার সাথে সংসার করবে যেহেতু তাতে কোন নতুনত্ব পাবে না তাই অন্য করো পিছনে ছুটবে । আর যখনই ঐ তাকওয়াহীন পুরুষ অন্য করো পিছু নিবে তখন তোমার জীবনটাই পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে । তা ঐ আগুন যা তুমি নিজেই প্রজ্জলিত করেছো এবং তাতে তুমিই পুড়ে মরবে ।

পাশ্চাত্য ও ধর্মহীন ধনীদের মধ্যে দিন দিন তালাকের পরিমান ও অবৈধ সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া , নৈতিক অনাচার , বিশৃংখলা , আত্মহত্যা প্রবণতা , মানসিক অশান্তি প্রভৃতি ব্যাপক হওয়ার কারণ ও পর্দাহীনতার মধ্যে নিহিত ।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর অধিকারসমূহ

নারীর দেনমোহর :

আল্লাহ্ তা য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً(

নারীর দেনমোহরকে যা তার উপহার স্বরূপ এবং শুধুমাত্র তারই প্রাপ্য তা তাকে দাও ।44

অন্যত্র আল্লাহ তা য়ালা বলেছেন :

) وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا(

যদি অনেক বেশী পরিমানেও দেনমোহর হিসেবে ¯ স্ত্রীকে দিয়ে থাক তা থেকে কিয়দংশও নিও না ।45

যখন ইউরোপ ও অন্যান্য দেশগুলো নারীদের কোন অধিকার দানের ব্যাপারে চিন্তাও করতো না এবং তাদের ব্যাপারে ছিল সম্পূর্ণরূপে উদাসীন তখন মহান ধর্ম ইসলাম তাদের জন্য দেনমোহরের ব্যবস্থা করে । আর এই দেনমোহরের সম্পূর্ণটাই হচ্ছে তাদের এবং তারা এ ব্যাপারে যা ভাল মনে করবে তাই করবে তাতে কেউ বাধা দিতে পারবে না ।

স্ত্রীদের দেনমোহরের উপর ইসলাম এতই গুরুত্বারোপ করেছে যে , অবশেষে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে বলেছে : যদি কোন ব্যক্তি কোন মহিলার সাথে শুধু আক্বদ করে এবং ঐ আক্বদ আনুষ্ঠানিকতার পর্যায় পর্যন্ত না পৌঁছায় (অর্থাৎ সংসার শুরুর এবং দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার আগেই আলাদা হয়ে যাওয়া) তথাপিও সে যেন ঐ মহিলাকে অর্ধেক দেনমোহর প্রদান করে ।46

রাসূল (সা.) বলেছেন :ﻣﻦ ﻇﻠﻢ ﺍﻣﺮﺍﺓ ﻣﻬﺮﻫﺎ ﻓﻬﻮ ﻋﻨﺪ ﺍﷲ ﺯﺍﻥ -যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর উপর দেনমোহরের ক্ষেত্রে জুলুম করে (তা না দিতে চেয়ে তার উপর অত্যাচার করে অথবা দিতে গিয়ে তাকে কষ্ট দেয়) এই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ব্যভিচারী হিসেবে চিহ্নিত হবে ।47

জাহেলিয়াতের যুগে সমাজে একটি খারাপ অভ্যাস বিদ্যমান ছিল তা হচ্ছে মহিলাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হত যাতে করে তারা দেনমোহর ব্যতীতই তালাক নিয়ে নেয় । এটা তখনই হত যখন কোন মহিলার দেনমোহরের পরিমান অনেক বেশী থাকতো । কিন্তু ইসলাম এই ধরনের কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ।

আল্লাহ্ তা লায়া পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّـهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا(

যা তোমরা দেনমোহর হিসেবে নির্দিষ্ট করেছো তার একটি অংশকেও নিজেদের হস্তগত করার জন্য তাদের উপর অত্যাচার - জুলূম করোনা ; তবে যদি তারা প্রকাশ্যে কোন অশ্লীল কাজ করে থাকে ভিন্ন কথা এবং তাদের সাথে উপযুক্ত ব্যবহার কর । আর যদি তাদেরকে কোন কারণে অপছন্দ করো তবে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার চিন্তা করো না , কেননা এমনও তো হতে পারে তোমরা যেটা অপছন্দ করছো আল্লাহ হয়তো তার মধ্যে অনেক ভাল কিছু নিহিত রেখেছেন ।48

নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব :

ইসলাম পুরুষের উপর নারীর ভরণ-পোষণকে ওয়াজিব (ফরজ) করেছে , যেমন তার খোরাক , পোশাক , থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি । যদি কোন নারীর অনেক সম্পদ ও নিজস্ব আয়ের উৎস থাকে তথাপিও ঐ নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর উপর থাকবে ।

মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম বলেন ইমাম সাদিক (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে : একজন পুরুষের উপর কাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে ? ইমাম সাদিক (আ.) জবাবে বললেন : পিতা-মাতা , স্ত্রী ও সন্তান ।49

নারীর উত্তরাধিকার :

ইসলাম নারীর জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেছে । যদি উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন পুত্র ও একজন কন্যা সন্তান থাকে তবে কন্যা পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে । আবার কখনো কখনো মেয়েরা অর্ধেকের থেকেও বেশী পেয়ে থাকে যেমন যদি কোন মৃত পিতা অথবা মাতার একটি মাত্র সন্তান থাকে এবং ঐ সন্তান যদি মেয়ে হয় সেক্ষেত্রে চার ভাগের এক ভাগ পাবে মা অথবা বাবা আর চার ভাগের তিন ভাগ পাবে ঐ মেয়ে । আবার কখনো কখনো মেয়ে সম্পূর্ণ সম্পত্তিরই ভাগিদার হয় যেমন মৃতের মেয়ে ব্যতীত অন্য কোন উত্তরাধিকার না থাকে ।

স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকেও চার ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি পেয়ে থাকে যদি তাদের কোন সন্তান না থেকে থাকে । আর যদি সন্তান থেকে থাকে তবে আট ভাগের এক ভাগ পাবে ।

মা আবার তার সন্তানদের কাছ থেকে ছয় ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি পেয়ে থাকে । কোন কোন ক্ষেত্রে এর থেকেও বেশী পেয়ে থাকে ।

এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ইসলাম নারীদের জন্য উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেছে । নারিগণ কয়েকদিক থেকে সম্পত্তি পেয়ে থাকে যেমন : মেয়ে হিসেবে বাবার কাছ থেকে , মা হিসেবে সন্তানদের কাছ থেকে এবং স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে ।

নারীর অধিকার নিশ্চিত করা :

জাহেলিয়াতের যুগে এটা রেওয়াজ ছিল যে , শুধুমাত্র পুরুষকেই সবাই উত্তরাধিকারী হিসেবে মনে করতো । আর এটায় বিশ্বাসী ছিল যে , যারা অস্ত্র হাতে নিজের আত্ম-সম্ভ্রম রক্ষার লক্ষ্যে যুদ্ধ ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে তারাই হচ্ছে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার যোগ্য । আর যারা তা পারবে না তারা উত্তরাধিকারী হওয়া সত্বেও সম্পত্তি পাবে না । আর এই দলিলের ভিত্তিতে নারিগণকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতো এবং মৃতের সম্পত্তিকে পুরুষদের মধ্যে বণ্টন করে দিত । অনেক দূরের পুরুষ আত্মীয়-স্বজনও এই সম্পত্তির ভাগ পেতো । ইসলাম সম্পত্তি বণ্টনে এই ভুল প্রক্রিয়ার তীব্রভাবে বিরোধিতা করে এবং নারী ও শিশুদের যোগ্য অধিকার যা অন্যরা অন্যায়ভাবে ভোগ করছিল তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে প্রকৃত পাওনাদারের হাতে অর্পণ করছে । এ পর্যায়ে পবিত্র কোরআন বলেছে :

) لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا(

পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে যেমন পুরুষের অংশ রয়েছে তেমনি পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীরও অংশ রয়েছে । তা সে যতই কম বা বেশী হোক না কেন । আর এই অংশ তাদেরকে দেয়াটা হচ্ছে ওয়াজিব (ফরজ) ।50

জাহেলি যুগের আরো একটি অন্যায় প্রথা ছিল যে , তখনকার পুরুষরা অসুন্দরী বয়স্ক ধনী মহিলাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হত এবং পরবর্তীতে বিয়ের পূর্বেকার অবস্থায় রেখে দিত অর্থাৎ না তাদেরকে স্ত্রীর মর্যাদা দিত না তাদেরকে তালাক দিত । এ কাজের অর্থ হচ্ছে তারা শুধুমাত্র দিন গুনতো যে , কবে তারা মৃত্যুবরণ করবে । কারণ তারা মৃত্যুবরণ করলেই স্বামী হিসেবে তারা ঐ সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে । কিন্তু ইসলাম তাদের এরূপ জুলুম ও অত্যাচারমূলক কাজের নিন্দা করেছে ও তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :

) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا(

যারা ঈমান এনেছো , তোমাদের জন্য এটা বৈধ নয় যে , জবরদস্তি করে (তাদেরকে কষ্ট দিয়ে) তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে ।51

কেন নারী , পরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে ?

ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে : কেন নারী , পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে ?

ইমাম এই প্রশ্নের জবাবে বললেন : এর কারণ হচ্ছে যে , জিহাদ করা , সংসার পরিচালনার খরচ এবং দিয়াহ্ ( রক্তপণ ) দেয়া নারীর উপর ওয়াজিব ( ফরজ ) নয় ।52

যেভাবে ইমাম বলেছেন , জিহাদ করা নারীর উপর ওয়াজিব নয় । প্রথমত প্রয়োজনে পুরুষকে দ্বীন রক্ষার লক্ষ্যে অবশ্যই জিহাদ করতে হবে , দ্বিতীয়ত নারীর ভরণ-পোষণের খরচ স্বামীকেই বহন করতে হবে যদিও স্ত্রী অনেক ধনী হয়ে থাকে , তৃতীয়ত কখনো ভুলবশত পরিবারের কোন সদস্যের হাতে বাইরের কেউ নিহত হলে সেক্ষেত্রে পুরুষকেই ঐ হত্যা বাবদ দীয়াহ্ (রক্তপণ) প্রদান করতে হয় কিন্তু নারী এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়হীন ।

চতুর্থত যখন নারী বিয়ে করে তখন সে দেনমোহর বাবদ স্বামীর পক্ষ থেকে কিছু গ্রহণ করে থাকে । এ সব কারণে বলা যায় যে , নারীরা হচ্ছে গ্রহণকারী এবং পুরষরা হচ্ছে খরচকারী । আর তাই পুরুষের সম্পত্তির অংশ নারীর দ্বিগুণ হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত যাতে করে ভারসাম্যের সৃষ্টি হয় ।

দুধ প্রদানের অধিকার :

) فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ(

যদি নারিগণ তোমাদের বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় তবে তাকে তার পারিশ্রমিক দান কর ।53 .

1 .এটা ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় নয় যে , মা বিনামূল্যে অথবা পারিশ্রমিক গ্রহণ পূর্বক তার শিশুকে দুধ প্রদান করবে । তবে এটা এই ক্ষেত্রে যে , যখন শিশুর খাদ্য শুধুমাত্র মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল নয় এবং শিশুকে অন্যান্য খাদ্য (অন্য দুধও) প্রদান করাও যায় তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তাতে যেন শিশুর কোন ক্ষতি না হয় ।

2 .যখন শিশুর খাদ্য শুধুমাত্র মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল , সেক্ষেত্রে ওয়াজিব নয় যে , মা বিনামূল্যে অর্থাৎ কোন পারিশ্রমিক না নিয়ে শিশুকে দুধ খাওয়াবেন , বরং শিশুর অর্থ থেকে (যদি তার অর্থ থেকে থাকে) । আর যদি তার অর্থ না থাকে তবে তার পিতার কাছ থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে ।

3 .যদি শিশু ও তার পিতা এবং তার দাদা অর্থশালী না হয় তবে সেক্ষেত্রে মা অবশ্যই শিশুকে বিনামূল্যে দুধ প্রদান করবে অথবা কোন নারীকে দুধ প্রদানের জন্য নিয়োগ করবে । তবে তাতে যেন শিশুর কোন ক্ষতি না হয় । তবে অন্য পন্থাও অবলম্বন করতে পারে যেমন গরুর দুধ অথবা গুড়ো দুধ শিশুর জন্য ব্যবহার করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে তার খরচের ভার মায়ের উপর পড়বে ।

4 .শিশুর দুধ প্রদানের জন্য তার মাতাই হচ্ছে সর্বাধিক উত্তম । যদিও মা বিনামূল্যে , সমমূল্য অথবা অন্যদের থেকে কম পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন ।54

স্বামীর মৃত্যুর পরে নারী :

কোন এক সময় কোন কোন দেশে যেমন ভারতে রেওয়াজ ছিল কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে ঐ নারীকে তার স্বামীর সাথে জীবিত পুড়িয়ে দেয়া হত অথবা তাকে মৃতের উত্তরাধিকার সম্পত্তি হিসেবে কোন এক অংশীদার নিজের জন্য নিয়ে যেত । ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে যে , স্বামীর মৃত্যুর পরে একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর ঐ নারী পুনরায় বিয়ে করতে পারবে । হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষারও প্রয়োজন নেই ।55

যদি কোন নারীর স্বামীর মৃত্যু হয়ে থাকে এবং তার ছোট সন্তান থাকে তবে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার সন্তান বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ । তবে শর্ত হচ্ছে যে , এই অপেক্ষা করতে গিয়ে সে যেন কোন পাপে লিপ্ত না হয়ে যায় । কেননা দ্বিতীয় বিয়ের ফলে এটার সম্ভাবনা আছে যে , মা এবং সন্তানদের মধ্যে ভালবাসার ঘাটতি হতে পারে যা সন্তানের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারে ।

হিদাদ :

যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে , তার মৃত্যুর ইদ্দত পালনের জন্য ইসলাম যে সময় নির্দিষ্ট করেছে সে সময়ে ঐ নারীর সাজ-গোজ না করা ওয়াজিব , যেমন : সুরমা দেয়া , আতর দেয়া , মেহ্দী লাগানো এবং লাল , হলুদ রংয়ের পোশাক পরিধান করা , আর যা তাকে সুন্দরী করে তুলে এমন কিছু পরা । তবে এগুলো যার যার এলাকা ভিত্তিক রসম-রেওয়াজ অনুযায়ী হওয়া ভাল । আর উক্ত সময়ে সাজসজ্জা পরিহারের এ প্রথাকে হিদাদ বলা হয় ।

তবে জীবন পরিচালনার জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু কেনা-কাটার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হওয়া , শরীর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা , চুল আচড়ানো , নখ কাটা , গোসল করা , সুন্দর বাড়ীতে থাকা , পিতা-মাতাকে দেখতে যাওয়া এবং হজ্জে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই । কেননা এগুলো হিদাদের আওতায় পড়বে না ।

যদি কোন নারীর স্বামীর মৃত্যু হয়ে থাকে এবং তার ছোট ছোট বাচ্চা থাকে তবে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার সন্তান বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ । তবে যদি সে বুঝতে পারে অপেক্ষার ফলে পাপে লিপ্ত হতে পারে সেক্ষেত্রে তার বিয়ে করাতে কোন অসুবিধা নেই বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা প্রয়োজনীয় ও ওয়াজিব হয়ে যায় ।

রাসূল (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিনে তিনটি দল আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে যেদিন ঐ ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না , আর তারা হচ্ছে :

1 .যারা ছেলেহ্ রাহেম পালন করে অর্থাৎ আত্মীয় - স্বজনদের খোজ খবর নেয় ও বিশেষ করে পিতা - মাতার দেখা - শুনা করে , তাদের আয়ু ও রিজিক বৃদ্ধি পায় ।

2 .যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করে এবং তার ছোট সন্তান থাকে আর ঐ নারী এ সন্তানদের কারণে বলে যে , আমি বিয়ে করবো না , তবে যদি তারা মারা যায় অথবা আল্লাহ তাদেরকে ধনী করে দেন তবে ভিন্ন কথা ।

3 .কেউ যদি খাবার তৈরী করে মেহমানদেরকে খেতে দেয় এবং সাথে সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইয়াতিম ও মিসকিনদেরও খেতে দেয় ।56

(যেহেতু আমাদের এই বইয়ের বিষয়টি একটু ভিন্ন তাই নারীর অধিকার সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে কিছু বর্ণনা করা হল । তবে এ বিষয়ে আরো বেশী জানার জন্য এই বিষয়ের উপর লিখিত বইসমূহ দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল । )

যখন ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের সাথে তুলনা করা হবে তখন দেখা যাবে যে , ইসলাম নারীর অধিকারের ব্যাপারে কত গুরুত্বই না দিয়েছে । আর এ কারণেই ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেছেন : আল্লাহ জানেন , ইসলাম নারীর যতটা কল্যাণ করেছে কোন পুরুষের ততটা কল্যাণ করে নি... ।57

ক)- ইসলামের প্রথম দিকে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পরবর্তীকালে সমাজিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা :

) وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ(

ঈমানদার নারী-পুরুষ হচ্ছে একে অপরের সাহায্যকারী , (তারা একে অপরকে) ভাল কাজে উপদেশ এবং খারাপ কাজে নিষেধ করেন ।58

উল্লিখিত আয়াতটি আমাদেরকে এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে , ইসলাম ঈমানদার নারী-পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপন করেছে । আর তারা অবশ্যই সামাজিক কাজ কর্মে যেমন ভালকাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজের নিষেধ করা প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করবেন এবং এরূপ ঐশী দায়িত্বকে সঠিকভাবে পালন করবেন । এই বিষয়টি শুধুমাত্র পুরুষের উপর অর্পিত কোন বিষয় নয় বরং ঈমানদার নারিদেরকেও অবশ্যই এই কাজে নিয়োজিত হতে হবে । এমন কিছু বিষয়ে ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীগণের ভূমিকা তুলে ধারার চেষ্টা করবো ।

1.নাসিবাহ্ নামের এক নারী যিনি পরবর্তীতে উম্মে আম্মারাহ্ ’ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন , তিনি দুই শহীদের মাতাও ছিলেন । তিনি রাসূল -এর যুগে প্রতিটি যুদ্ধে (সা.) আহতদের চিকিৎসা ও তাদেরকে পানি পান করানোর কাজে নিয়োজিত থাকতেন ।

2.উম্মে সানান নবীর স্ত্রী উম্মে সালামাহর সহযোগিতায় খাইবারের যুদ্ধে আহতদের শুশ্রূযা ও পানি পৌঁছানোর কাজে সাহায্য করেছিলেন ।

3.ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : ওহুদের যুদ্ধে হযরত আলীর শরীরে 60 টি ক্ষতের সৃষ্টি হয় যার কারণে রাসূল (সা.) দুইজন মহিলা যথাক্রমে : উম্মে সালামাহ্ ও উম্মে আতিয়াহকে তাঁর শরীরের ঐ ক্ষতের চিকিৎসা করার জন্য দায়িত্ব দেন ।

যে সমস্ত নারী ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে ভূমিকা পালন করেছিল এবং আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের কাজে সাহায্য করেছিল তাদের সংখ্যা অনেক ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন : ইমাম মাহ্দী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন তাঁর সাথে 13 জন মহিলা থাকবে । প্রশ্ন করা হলো কি কারণে ? তিনি জবাবে বললেন : এই মহিলাগণ আহ্ত ব্যক্তিদের সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য (সা.) থাকবে । যেমনভাবে রাসূল এর যুগে ছিল ।

খ)- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা :

মক্কা নগরী অষ্টম হিজরীতে মহানবী (সা.) ও আলী (আ.)-এর সক্রিয় উপস্থিতিতে ইসলামের সৈন্যদের হাতে বিজিত হয় এবং মুসলমানদের (সা.) আয়ত্বে আসে । কাফেররা আত্মসর্মপন করে মহানবী (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো । মহিলারাও বাইয়াত করার জন্য নবী এর কাছে গেল । এমন সময় এই মর্মে আয়াত নাজিল হলো যে , তাদের সঙ্গে 6 টি শর্তে বাইয়াত গ্রহণ কর ।

হে নবী! যখন নারিগণ ঈমানের সাথে বাইয়াত করার তোমার কাছে আসবে তখন নিম্নলিখিত শর্তে যথা :

1- আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না ,

2- চুরি করবে না ,

3- ব্যভিচার করবে না ,

4- নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না ,

5- অন্যকে অপবাদ দিবে না ,

6- ভাল কাজের ক্ষেত্রে তোমার নির্দেশ অমান্য করবে না , তুমি তাদের হতে বাইয়াত গ্রহণ করবে । আর তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে , কেননা আল্লাহ অতিশয় দয়ালু ।59

যখন মহিলারা বাইয়াত করার জন্য তৈরী হল তখন উম্মে হাকিমা জিজ্ঞাসা করলো : কিভাবে বাইয়াত করবো ?

নবী (সা.) বললেন : আমি কখনই তোমাদের হাতের সাথে হাত স্পর্শ করবো না । অত:পর পানি ভর্তি একটি পাত্র আনতে বললেন এবং তার মধ্যে তিনি হাত দিয়ে তা বরকতময় করে হাত উঠিয়ে নিলেন । এরপর মহিলাদেরকে একে একে ঐ পানির মধ্যে হাত দিতে বললেন ।60

গ)- ইমাম খোমেনীর দৃষ্টিতে সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা :

আমি ইরানের বিভিন্ন শহরের যেমন কোম ও মাশহাদের নারীদের সাহসিকতা দেখে গর্ববোধ করি । আপনারা সাহসী নারীরাই এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন । আপনারাই পুরুষদেরকে সাহস যুগিয়েছিলেন । আমরা সকলেই আপনাদের সাহসিকতার কাছে কৃতজ্ঞ । ইসলাম নারীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রেখেছে । ইসলাম নারীদের প্রতি যতটা অবদান রেখেছে তা পুরুষদের প্রতি অবদানের চেয়েও বেশী । আর এই বিপ্লবের বিজয়ের ব্যাপারেও নারীদের ভূমিকা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশী ছিল ।

নারীরা অবশ্যই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সক্রিয় অংশ্রগ্রহণ করবেন । আপনারা যেভাবে বিপ্লব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং এক্ষেত্রে অংশীদার ছিলেন তদ্রূপ এখন এই বিজয়ের সাথে অবশ্যই অনুরূপ অংশীদার থাকুন । আর এটা ভুলে যাবেন না যে , যখনই জাতির প্রয়োজন তখনই কিয়াম করবেন (দায়িত্ব পালনের জন্য বেরিয়ে আসবেন) । কেননা এই দেশটা তো আপনাদের ।

ইনশাআল্লাহ তা য়ালা আপনারা অবশ্যই এই দেশটিকে গড়ে তুলবেন । ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলারা পুরুষের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন । আর আমরা তাদেরকে কখনো কখনো পুরুষদের মতই ভূমিকা পালন করতে দেখেছি আবার কখনো তারা পুরুষদের থেকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন । নিজেকে , নিজের সন্তানদেরকে বিশেষ করে যুবকদেরকে উৎসর্গ করেছিলেন তাতেও তারা হতোদ্যম হন নি , বরং শক্ত হাতে শত্রুকে প্রতিরোধ করেছিলেন । আমরা তো এটাই চাই যে , নারীরা মনুষ্যত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাক । আর নারীরা অবশ্যই তাদের ভাগ্য নির্ধারণী বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন ।

ইসলাম বিপ্লব পূর্ব প্রশাসন আমাদের সাহসী ও যোদ্ধা নারীগোষ্ঠীকে কোণ ঠাসা করে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ্ তা চান নি । তারা নারীকে পণ্যের ন্যায় ব্যবহার করতে চেয়েছিল , কিন্তু ইসলাম নারীকে পুরুষের অনুরূপ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের অনুমতি দিয়েছে ।61

শেষ কথা :

উল্লিখিত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে , রাসূল (সা.)-এর সময় নারিগণ বাইয়াতের মত একটি রাজনৈতিক বিষয়েও বিশেষ শর্তে অংশ গ্রহণ করেছিলেন । সাথে সাথে তারা যুদ্ধের ময়দানে আহতদের সেবা- শুশ্রূষা করার কাজেও অংশগ্রহণ করেছিলেন । তারা যুদ্ধে তাদের স্বামী , সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনদের শহীদ হওয়াতে গর্ববোধ করতেন । কেননা তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে , এটাই হচ্ছে আল্লাহর পথ । এমনকি তাদের স্বামী , সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনদের শহীদ হওয়ার পর তারা যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন ।

ফেরাউনের বিরুদ্ধে হযরত আসিয়ার সংগ্রাম , ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে হযরত খাদিজা (আ.)-এর সংগ্রাম , হযরত ফাতিমা (আ.)-এর ইমাম আলী (আ.)-এর বেলায়াত ও ইমামতের পক্ষে শত্রুর মুকাবিলা করা , হযরত যয়নাব (আ.)-এর ইমাম হুসাইন (আ.) -এর বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ইয়াযিদ ও তার দোসরদের ইসলামের শত্রু হিসেবে প্রমাণ করে দেয়া , এসব কিছুই এটার প্রমাণ দেয় যে , ইসলামের পূর্বে অন্যান্য নবীদের যুগে এবং ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা পালন করেছিল । আর ইসলাম কোন পক্ষপাতিত্ব না করেই নারী ও পুরুষ উভয়ের অধিকারের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত কথা বলেছে , যা পবিত্র কোরআন , নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের ইমামদের (আ.) হাদীসে প্রমাণিত । আর আমরা নারী ও পুরুষের মধ্যে যে বিধানগত পাথর্ক্য দেখতে পাই তা হচ্ছে তাদের সৃষ্টিগত ও প্রকৃতিগত পার্থক্যের কারণে । তাই আল্লাহ্ তা ’ য়ালা তাদের উভয়েরই কর্মক্ষেত্র ও দায়িত্বের পরিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন । এই পার্থক্যের কারণে হয়তো অধিকারের ক্ষেত্রেও একে অপরের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে ।

ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেছেন : ইসলাম নারীদেরকে পুরুষের পাশাপাশি স্থান দিয়েছে । কেননা নবী (সা.) -এর আসার আগে পর্যন্ত নারীদেরকে কোন মূল্যই দেয়া হতো না । ইসলাম নারীদেরকে ক্ষমতা দান করেছে এবং পুরুষ ও মহিলাকে একে অপরের পরিপূরক করেছে । যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট আইন-কানুন আছে এবং মহিলাদেরও তদ্রূপ কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে , ইসলাম তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছে ।


5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18