একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন0%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক: মীর আশরাফ-উল-আলম
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 41459
ডাউনলোড: 3897

পাঠকের মতামত:

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 41459 / ডাউনলোড: 3897
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

উত্তম নারী কারা ?

ফাতিমা যাহরা (আ.) বলেছেন : উত্তম নারী হচ্ছে তারাই যারা না পুরুষদেরকে এবং না পুরুষরা তাদেরকে দেখতে পায় । অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন : ফাতিমা আমা হতে ।174

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : রাসূল (সা.) আমাদের কাছে প্রশ্ন করলেন যে , নারীর জন্য উত্তম জিনিস কোনটি ?

আমাদের মধ্য থেকে কেউ রাসূলে খোদা (সা.)-এর প্রশ্নের উত্তর দিল না । আমি ঐ প্রশ্নটি হযরত ফাতিমা (আ.)-এর নিকট বললাম । হযরত ফাতিমা (আ.) ঐ প্রশ্নের উত্তরে বললেন : নারীর জন্য উত্তম কাজ হচ্ছে যে , না পুরুষ তাকে এবং না সে পুরুষকে দেখতে পায় । পরে হযরত ফাতিমার (আ.)এই উত্তরটি রাসূলে খোদা (সা.) -এর কাছে বললাম । রাসূলে খোদা (সা.) বললেন : ফাতিমা হচ্ছে আমার দেহের অংশ ।175

এই রেওয়ায়েতটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে । এ হাদীসে যে বিষয়ের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে যে , নারীরা যতটুকু সম্ভব নামাহরাম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে । যদি কোন বিশেষ প্রয়োজনে যেমন : চাকুরি বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজে নামাহরামের মুখোমুখি হতেই হয় তবে সে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামী বিধান যেন লঙ্ঘিত না হয় যেমন : পর্দা করা এবং নিজের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করা ।

মোট কথা নারী যখন কোন নামাহরামের সম্মুখে অবস্থান করবে তখন সে যেন এমন কোন কাজ বা আচরণ না করে যাতে করে তার প্রতি ঐ নামাহরামের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় এবং তাকে প্ররোচিত করে । এ বিষয়গুলো সে যেন অবশ্যই পরিহার করে চলে , বিশেষ করে ঐ সব স্থানে যেখানে নারী ও পুরুষ এক সঙ্গে কাজ করে । বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখা দরকার যে , বিশেষ কোন কারণ ব্যতীত নারী ও নামাহরাম পুরুষ যেন এক কক্ষে কাজ না করে । আর এই বিষয়গুলে মেনে চলার জন্য এই সমস্ত কেন্দ্রগুলোতে মহিলা শাখা ও পুরুষ শাখা করা যেতে পারে । আশা করি আল্লাহ তা ’ য়ালার বিশেষ করুণায় এমন একটি দিন আসবে যে , সেদিন নারীদের যোগ্যতা এত অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পাবে যার কারণে নারী ও পুরুষের আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং সে সব প্রতিষ্ঠানে নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে । রাসূল (সা.) তাঁর সাথে নারীদের বাইয়াত করার (অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া) সময় শর্ত রেখেছিলেন যে ,

ﺍﻥ ﻻ ﳛﺪﺛﻦ ﻣﻊ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﺍﻻ ﺫﺍ ﳏﺮﻡ

পুরুষের সাথে কথা বলবে না , শুধুমাত্র তোমাদের মাহরাম ব্যতীত ।176

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :

ﳏﺎﺩﺛﺔ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻣﻦ ﻣﺼﺎﺋﺪ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ

নামাহরাম নারীর সাথে কথা বলাটা শয়তানের ফাঁদ ।177

রাসূল (সা.) বলেছেন :

যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে , সে ব্যক্তি এমন স্থানে রাত কাটায় না যেখানে নামাহরাম নারীর শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পায় ।178

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.) নারীদের কাছ থেকে যে বাড়িগুলো নিয়ে নিয়েছিলেন তা এই কারণেই যে , অবসর সময়ে তারা সেখানে যেন বেগানা পুরুষের সাথে আসা-যাওয়া ও ওঠা-বসা না করে ।179

আল্লাহ্ না করুন যদি এমন হয় যে , ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না এবং এ সকল বিষয়ে শয়তানের ভুল ব্যাখ্যায় আমরা প্রতারিত হই তবে গোনাহ্সমূহ অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে । আর এর কারণে অবশ্যই তালাকের হার , অবৈধ সন্তানের পরিমান , হত্যা ও রাহাজানি ইত্যাদিও বেড়ে যাবে । শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এর সাথে সাথে সরকার , বিচার বিভাগ , নিরাপত্তা বাহিনী , শিক্ষা বিভাগ সব কিছুতেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে । আর এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা ’ য়ালার করুণা , রহমত ও বরকত সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে । আর তাঁর ঐ করুণা , রহমত ও বরকত বন্ধ হয়ে যাওয়াটা একটি সমাজের জন্য সব থেকে বড় মুসিবত বৈ অন্য কিছুই নয় ।

পর্দার সব থেকে উত্তম উপায় কী ?

পর্দা হচ্ছে পবিত্র ইসলাম ধর্মের একটি অতিব প্রয়োজনীয় বিষয় । যদি কেউ দীনের কোন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়কে অস্বীকার করে তবে সে আল্লাহ্ তা ’ য়ালা ও রাসূল (সা.)-কে অস্বীকার করল । আর এই কারণে সে মুরতাদ বা কাফের হয়ে যাবে ।180

পর্দার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে এই যে , নারী পর্দা করার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করবে এবং সাথে সাথে সমাজকেও ফিতনা-ফ্যাসাদের হাত থেকে রক্ষা করবে । কেননা বেপর্দা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী যুবকদের প্ররোচিত করার কারণ হয়ে থাকে । যার ফলশ্রুতিতে সমাজে অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়ে থাকে । সুতরাং নারী পর্দা করার সাথে সাথে অবশ্যই যুবক ও পুরুষদের প্ররোচিত করতে পারে এমন আচরণ থেকে দূরে থাকবে।

এখানে এই প্রশ্নটি আসতে পারে যে , কি করলে উত্তমরূপে পর্দা হবে ?

উত্তরে বলতে হয় যে , সব থেকে উত্তম পর্দা হচ্ছে নামাহরামের দৃষ্টি থেকে নারী নিজেকে দূরে রাখবে । আর তা একমাত্র বোরকার মাধ্যমে যা নারীর সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখে তাতেই সম্ভব । এ সম্পর্কে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ্ আল্ উ ’ যমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী (মুদ্দা যিল্লুহুল আলী) বলেছেন :

বোরকা হচ্ছে পর্দার সব থেকে উত্তম পন্থা এবং আমাদের জাতির পরিচিতির প্রতীক ।181 যদিও মানতু (ইরানী নারীদের পরিধেয় আটসাট পোশাক) ও তার অনুরূপ কিছু পোশাক আকর্ষণীয় রংয়ের না হয়ে উপযুক্ত রংয়ের হয় এবং চাপা না হয় তবে তাতে বাহ্যিকভাবে কোন সমস্যা নেই । কিন্তু এ ধরনের পোশাক যদি রং ও মডেলের দিক দিয়ে উপযুক্ত হয়ে থাকে এবং আকর্ষণ সৃষ্টি না করে তথাপিও এতে অন্যান্য সমস্যা রয়েছে ।

যথা :

1- আটসাট মানতু (চাপা বোরকা) বা ঐ জাতীয় পোশাক পরলে তাতে বাইরের দিক থেকে শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গসমূহের আকৃতি বোঝা যায় যা নারীর ব্যক্তিত্ব ও সচ্চরিত্রতার পরিপন্থী । আর একজন মুসলমান নারীর জন্য শোভনীয় নয় যে , এমন পোশাক পরবে এবং একজন মুসলমান পুরুষের জন্য এটি মর্যাদাহানিকর ব্যাপার যে , তার স্ত্রী বা বোন তেমন পোশাক পরে মানুষের সামনে যাবে ।

2- পবিত্র কোরআন ও নিষ্পাপ ইমামদের (আ.) রেওয়ায়েতে পর্দার একটি মূলনীতি পরিস্কার ভাবে বর্ণিত হয়েছে যা কোন ক্রমেই পরিবর্তনশীল নয় তা হচ্ছে যে , নারীরা এমন পোশাক পরবে না যা কামোদ্দীপক এবং প্ররোচক । এ দিক দিয়ে এ পোশাকগুলো উপরিউক্ত দোষে দুষ্ট । আটসাট মানতু বা ঐ জাতীয় পোশাক নামাহরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে এবং লম্পট মানুষগুলোকে নারীর প্রতি আকৃষ্ট করে ।

3- বোরকা ইসলামী সংস্কৃতির প্রতীক , তাই যদি কোন নারী চাদর বিহীন অবস্থায় (বোরকা ছাড়া) বাইরে আসে সে এই সাংস্কৃতিক ঐহিহ্যের প্রতি কোন গুরুত্বই দিল না । আর এই সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব না দিলে তার সাথে একাত্ম হওয়া যায় না । তাই ওস্তাদ শহীদ মোতাহারী (রহঃ) ইসলাম পূর্ব ইরানীদের পর্দা সম্পর্কে বলেন : আমার জানা মতে প্রাচীন ইরান ও ইহুদী সম্পদায়্র এবং সম্ভবত ভারতেও পর্দার প্রচলন ছিল ; আর ইসলামী বিধানে যা এসেছে তখনকার প্রচলিত পর্দা এর থেকে কঠিন ছিল ।182

4- প্রচণ্ড বাতাস বা ঝড়ের মুখে মানতু , কামিস বা ঐ জাতীয় পোশাক যারা ব্যবহার করে তাদের শরীরের গঠন প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু যারা বোরকা ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম ।

উল্লিখিত বিষয়সমূহ এই উদ্দেশ্যে বলা হলো যে , মানতু বা ঐ জাতীয় পোশাক প্রস্তুতকারকরা যেন এমনভাবে তা প্রস্তুত করেন যাতে বে- গানা পুরুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি না করে এবং এমন পোশাক পরিহিতারা রাস্তায় চলার সময় ভদ্রভাবে চলাচল করে ও সব সময় কামোদ্দীপক আচরণ থেকে দূরে থাকবে অন্যথায় তা ব্যবহার করা কোন ক্রমেই জায়েয হবে না । যদি এমন কেউ করে তবে সে হারাম কাজ করল । কেননা এ কাজের মাধ্যমে (তা জেনে-বুঝেই হোক অথবা অজ্ঞতা বশতই হোক না কেন) সমাজকে সে ফিতনা-ফ্যাসাদের দিকে ঠেলে দিল এবং শয়তানকে তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলে সাহায্য করল ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য :

আমরা অবশ্যই এটার প্রতি দৃষ্টি রাখব যে , বিশ্বের প্রতিটি ইসলামী দেশের সম্মানিত নারীরা হচ্ছেন মুসলমান এবং তারা সকলেই স্বভাবগত কারণেই প্রিয় ইসলাম ও তার আদেশ-নিষেধকে পছন্দ করেন । বিশেষত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নারীরা বিভিন্নরূপ সমস্যায় ধৈর্যধারণ ও মহান আল্লাহর পথে সন্তানদের বিসর্জন দেয়ার মাধ্যমে এই বিষয়টিকে প্রমাণ করেছে যে , তারা জানে আল্লাহ তা ’ য়ালার নির্দেশসমূহ হচ্ছে বান্দার জন্যে মঙ্গল স্বরূপ এবং কিছু কিছু নারী বেপর্দা বা সঠিকভাবে পর্দা না করার কারণ হচ্ছে তারা জানে না যে , পর্দার মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল নিহিত রয়েছে । আশা করব যে , এই সকল নারীরা ইসলামী বিভিন্ন গ্রন্থসমূহের সাথে নিজেরা আরো অধিক পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করবেন যাতে করে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় । কেননা মানুষ দ্বীন সম্পর্কে যতই জানবে ততই তার ঈমান ও বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং কম পথভ্রষ্ট হবে । আর যতই তার জ্ঞান কম হবে ততই তার ঈমান ও বিশ্বাস দুর্বল হবে এবং ভুল পথে পরিচালিত হবে ও সত্য পথ থেকে দূরে সরে যাবে ।

উপরে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে মানতু সম্পর্কে যা বোরকা ছাড়াই পরা হয়ে থাকে । তা বোরকার নিচে পরা অতি উত্তম । যদিও অনেক নারীই মানতুকে হিজাব হিসেবে ব্যবহার করে থাকে , কিন্তু উত্তম হচ্ছে বোরকা ব্যবহার করা ।