একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন11%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44797 / ডাউনলোড: 5262
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

1

2

3

পর্দার বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে বোরকার গুরুত্বের কারণ

১ -পবিত্র কোরআন :

) يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا(

হে নবী , তোমার স্ত্রী ও কন্যাগণ এবং মু ’ মিনদের স্ত্রীগণকে বল যে , তারা যেন নিজেদেরকে জালবাব (বড় ওড়না , চাদর) দিয়ে আবৃত করে রাখে যাতে করে সহজেই তাদের (সম্মানিত নারী হিসেবে) চেনা যায় এবং এতে তাদের উত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ তা ’ য়ালা হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।১৮৩

উল্লিখিত আয়াতে জালবাব সম্পর্কে মুফাসসের ও আভিধানিকগণ বিভিন্ন অর্থ করেছেন যা নিম্নরূপ :

১- সেলাইকৃত মস্তকাবরণ (বোরকার অংশ বিশেষ) ।

২- এমন পোশাক যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দেয় ।

৩- এমন পোশাক যা নারীরা তাদের অন্য পোশাকের উপর পরে থাকে ।

৪- আবা ’ র (ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত ঢিলা পোশাক) অনুরূপ পোশাক বিশেষ ।

৫- মিলহাফাহ্ (চাদর) ।

৬- এমন পোশাক যা ওড়নার থেকে বড় এবং বহিরাবরণের (রিদা) থেকে ছোট ।

৭- বড় ওড়না যা বাড়ী থেকে বাইরে যাওয়ার সময় মাথা ও মুখ মণ্ডল ঢেকে রাখার জন্য পরা হয়।১৮৪

জালবাবের জন্য যে অর্থ গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটির পার্থক্য রয়েছে । কিন্তু অর্থ গুলোর মধ্যে যে বিষয়টি অভিন্ন তা হচ্ছে এটি এমন পোশাক যা ওড়নার থেকে বড় এবং আবা ’ র থেকে ছোট ।

যদিও অর্থ গুলোর মধ্যে বোরকা শব্দটি উল্লিখিত হয় নি (কিন্তু কোন কোন আভিধানিক তা বোরকা অর্থও করেছেন) । কিন্তু তার নিকটবর্তী অর্থের কথা চিন্তা করে অনেকেই বোরকার প্রতি ইশারা করেছেন ।

আমাদের আলোচনা শব্দ নিয়ে নয় বরং তার অর্থ নিয়ে । আর চাদরের অর্থ বা তার অনুরূপ অর্থ জালবাব শব্দের অর্থ থেকে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

) وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ(

বৃদ্ধা মহিলারা যাদের বিয়ে হওয়ার আর কোন আশা নেই তারা এমন পোশাক (সেলাইকৃত মস্তকাবরণ , জালবাব ও চাদরের ন্যায়) যা দ্বারা মুসলমান নারীরা সাধারণত নিজেদেরকে ঢেকে রাখে , নাও পরতে পারে কিন্তু শর্ত হচ্ছে যে , তারা যেন সাজ-সজ্জা করে বাইরে না আসে । তবে ঐ বয়সেও যদি তারা ইচ্ছা করে যে , নিজেদেরকে আবৃত রাখবে তবে তা অতি উত্তম । আল্লাহ তা ’ য়ালা সব কিছুই শোনেন এবং জানেন ।১৮৫

ক)- উপরোক্ত আয়াতটি যে অতিরিক্ত আবরণ ত্যাগ করাকেই বস্ত্র পরিহার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে , আর এই খুলে রাখার অনুমতিটি অন্যান্য পোশাকের থেকে বোরকার সাথেই মানানসই।

খ)- যেখানে পবিত্র কোরআন বৃদ্ধ নারীদেরকেও (যাদের বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা নেই) সাজ-সজ্জা না করার জন্য উপদেশ দিচ্ছে এবং তাদেরকেও এক্ষেত্রে সচেতন থাকার প্রতি উৎসাহিত করছে । সেক্ষেত্রে তরুণী ও যুবতী নারীদেরকে হরেক রংয়ের পোশাক পরে (যদিও তা তাদের শরীরকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে) বের হওয়ার অনুমতি কি ইসলাম দিয়েছে ?

গ)- যেহেতু বৃদ্ধ নারীদেরকেও বলা হয়েছে যে , বড় ওড়না , চাদর পরা হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম তাহলে তরুণী ও যুবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হবে অতি উত্তম ।

২- পবিত্র কোরআন ও রেওয়ায়েত থেকে মৌলিক এবং সার্বিক বিধান :

ক)- মহান আল্লাহ্ নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন :

) يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (৩২) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ(

হে নবী (সা.)-এর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্যদের মত সাধারণ নারী নও । যদি তাকওয়া অর্জন করতে চাও তবে এমন ভঙ্গিমায় কথা বল না যাতে করে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমাদের প্রতি কুবাসনা না করে । আর তোমরা উত্তম কথা বলবে । তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যেই থাকবে এবং জাহেলী যুগের মত (যখন নারীরা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য্য এবং সাজ-সজ্জাকে অন্যদের সামনে প্রকাশ করত) মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়ো না । আর নামায আদায় ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলবে ।১৮৬

) وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ(

(হে আমার রাসূল! নারীদেরকে বলে দাও) তারা যেন মাটির উপর এমন ভাবে না চলে যাতে করে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশিত (এবং তাদের পায়ের নুপুরের শব্দ (অন্যের) কানে পৌঁছায়।১৮৭

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

নারীরা যেন রাস্তার মধ্য দিয়ে পারাপার না হয় বরং দেয়ালের পাশ দিয়ে অথবা ফুটপাত দিয়ে যাওয়া-আসা করে ।১৮৮

হযরত আলী (আ.) শিশুদের মাথার অধিকাংশ চুল ফেলে কোন এক অংশে রেখে দিতে নিষেধ করেছেন । তিনি বলেছেন যে , নারীরা যেন তাদের চুল অতিরিক্ত পরিমানে ফুলিয়ে না রাখে , কখনই যেন তারা কপালের উপর কিছু চুল বের করে না রাখে এবং হাতে ও হাতের তালুতে এমন ভাবে যেন রং না করে যাতে করে নামাহরামদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ।১৮৯

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

মহান আল্লাহ তাঁর একজন নবীকে ওহী পাঠালেন এই মর্মে যে , মু ’ মিনদেরকে বলে দাও : পোশাক পরার ক্ষেত্রে আল্লাহর শত্রুদের অনুসৃত রীতি ও প্রথাকে যেন তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ না করে । যদি তেমন করে তাহলে তারাও তাদের মত আল্লাহর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে ।

রাসূল (সা.) হাউলা নামের এক নারীকে বলেন :

হে হাউলা এটা জায়েয নয় যে , কোন নারী তার হাতের কব্জি এবং পায়ের গোড়ালী স্বামী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সামনে উম্মুক্ত করবে । আর যদি তা করে তবে সব সময়ের জন্য আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের ক্রোধ ও অভিশাপের উপযুক্ত হয়ে যায় এবং তার জন্য কঠিন আজাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।১৯০

রাসূলে খোদা (সা.) হাউলার উদ্দেশ্যে আরো বলেন :

হে হাউলা এটা জায়েয নয় যে , নারী কোন নামাহরাম তরুণ বা বাচ্চা ছেলে যে বালেগ হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে তাকে ঘরের ভিতরে আসার অনুমতি দিবে । (আর যদি ঘরে প্রবেশ করে) তবে নিজের দৃষ্টির প্রতি সাবধান থাকে যেন তার প্রতি কোন খারাপ দৃষ্টিতে না তাকায় , তদ্রূপ ঐ তরুণ ছেলেও যেন নারীর প্রতি অবৈধ দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে । নারীর জন্য এটা জায়েয নয় যে , তার সাথে খাদ্য গ্রহণ বা কোন কিছু পান করবে শুধুমাত্র মাহরাম ব্যতীত (আর মাহরামের সাথে এই খাওয়া বা পান করার সময় যেন তার স্বামী পাশে থাকে) ।১৯১

বনী হাশিমের কয়েকজন ইমাম রেযা (আ.) -কে মেহমান হিসেবে দাওয়াত করল , সে পরিবারে ছোট একটি মেয়ে ছিল ; মুসলমানরা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ঐ মেয়েটিকে নিজেদের কাছে নিয়ে আদর করতে লাগল (তারা তাদের কোলের (আ.) উপর বসিয়ে তাকে চুমু দিচ্ছিল) । এরপর মেয়েটি ইমাম রেযা -এর কাছে আসলে ইমাম জানতে চাইলেন যে , তার বয়স কত ? বলা হলো যে : তার বয়স হচ্ছে পাঁচ বছর । তারপর (ইমামের নির্দেশে) ইমামের সামনে থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হলো ।১৯২

ফলাফল :

উল্লিখিত আয়াত ও রেওয়ায়েত যা পবিত্র কোরআন ও হাদীস গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ আছে সেগুলো থেকে সর্বজনীন কিছু মৌলনীতি হস্তগত হয় । যেমন :

প্রতিটি নারীই বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা যেন শরীয়ত নির্ধারিত প্রয়োজন ব্যতীত নামাহরামের সাথে সম্পর্ক না রাখে এবং যত সম্ভব তাদের সাথে কম কথা বলে ও তাদের দৃষ্টির আওতা থেকে দূরে থাকে এটি তার নিজের জন্য এবং সমাজের জন্য হচ্ছে অতি উত্তম । আর এটাও হচ্ছে ওয়াজিব যে , তারা যেন সতীত্ব , লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখে এবং এমন পোশাক যেন না পরে যে , যা পরলে নামাহরামদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ।

যৌন চাহিদা এমন কোন বিষয় নয় যাকে কোরআন ও হাদীসসমূহের বিরোধিতা করে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দলিলের অনুসরণে দমন করতে হবে , বরং বৈধ ও প্রবণতা ইসলামের অতিসুন্দর নির্দেশের অনুসরণে অর্থাৎ মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের নির্দেশিত পথে নৈতিক বল ও আধ্যাত্মিকতা অর্জনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । আমরা যেন প্রবৃত্তি পূজারী কিছু ব্যক্তির অনুসরণে এই আয়াত ও রেওয়ায়েতকে যেন ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা না করি বরং অবশ্যই এক্ষেত্রে মানুষকে মহান ইসলামের সঙ্গে পরিচিত করাব । কেননা ইসলাম মানুষের আমলসমূহের জন্য উত্তম মানদন্ড । অন্য ভাবে বললে বলতে হয় যে , মানুষকে অবশ্যই সত্যের মাপ-কাঠিতে পরিমাপ করা উচিত , সত্যকে মানুষের মাপ-কাঠিতে নয় । তাহলে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে । আর মুসলমান নারিগণ সাবধান থাকবেন তারা যেন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির প্রভাবিত না হন ।

প্রশ্ন : কোন পোশাকটি পর্দার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ?

উত্তর : বোরকা একমাত্র পোশাক যা পূর্বোক্ত মৌলনীতির সকল বৈশিষ্ট্য যুক্ত । কেননা ,

প্রথমতঃ বোরকার কারণেই শরীরের আকৃতি সঠিকভাবে বোঝা যায় না । আর এটাই নারীর সতীত্ব , তাকওয়া ও আত্মসম্মানবোধের পরিচায়ক ।

দ্বিতীয়তঃ বোরকা পরার কারণেই নারীদের উপর নামাহরামের দৃষ্টি পড়ে না এবং দুঃশ্চরিত্র ও লম্পট ব্যক্তিদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার পথে বোরকা বাধা হয়ে থাকে ।

তৃতীয়তঃ বোরকা পরিহিতা নারী ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতিতে রক্ষা করে থাকে এবং এই পন্থায় অনৈসলামী ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আঘাত হানে ।

চতুর্থতঃ প্রবল বাতাস বা ঝড় বা দুর্ঘটনার সময় বোরকা পরিহিতা নারী উত্তম রূপে নিজেকে আবৃত করতে পারে । কিন্তু অন্যান্য পোশাকের মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য সমূহ পাওয়া যায় না ।

উল্লিখিত আলোচনার আলোকে আমরা বলব : পড়াশুনা করছি , কাজ করছি এরূপ বিভিন্ন রকম অজুহাত দেখিয়ে যেন এই সত্যকে উপেক্ষা বা ভিন্ন রূপে ব্যাখ্যা না করা হয় । আর যেন তরুণ - তরুণীর অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে না দেয়া হয় । আর যদি এরূপ করা হয় তবে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটা উচিৎ ছিল না তাই ঘটবে । এর ফলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা করুণা ও রহমত বন্ধ হয়ে যাবে । এটা কি হতে পারে যে , নামাহরাম নারী পুরুষ কোন বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত একে অপরের সাথে কথা বলবে , বিশেষ করে যে ব্যক্তিরা ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল তাদের সাথে মেলামেশাতে কি অঘটন ঘটবে না ।

৩- মহানবী (সা.) ও আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) বাস্তব কর্ম জীবন :

উসূলে ফিকাহ ’ য় একটি আলোচনা রয়েছে তাতে বিশিষ্ট ফকীহ্গণ শরীয়তি উৎস থেকে বিধান বের করার ক্ষেত্রে এ দলিল নিয়ে আসেন যে , আহলে বাইতের ( আ .) নিষ্পাপ ব্যক্তিবর্গের উক্তি , কাজ এবং আচরণ এ তিনটিই হচ্ছে হুজ্জাত ( দলিল ) । তাই মুসলমানগণ সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমল করতে পারেন ।১৯৩

হযরত ফাতিমা ( আ .) বোরকা পরে মসজিদে এসেছিলেন তাঁর মুখমণ্ডলও ঢাকা ছিল এবং তিনি এক গভীর অর্থ সম্পন্ন খুৎবা দিয়েছি লেন যার মধ্যে দ্বীনের সার্বিক দিক সম্পর্কে কথা ছিল । তাঁর এরূপে মসজিদে আসাটা কি আমাদের কাছে দলিল নয় যে , বোরকা হচ্ছে পর্দার উত্তম পন্থা এবং মুসলমান নারীদের কি উচিৎ নয় তাঁর হিজাবকে সব থেকে উত্তম হিজাব হিসেবে মনে করা ? এবং পুরুষদের কি উচিৎ নয় যে , নারীদেরকে বিশেষভাবে তাঁর হিজাবের প্রতি উৎসাহী করে তোলা ?১৯৪

তিনি এমনই এক অসাধারণ রমনী ছিলেন যার ব্যাপারে ওস্তাদ শহীদ মোতাহহারী ( রহ .) বলেন : নবী ( সা .) আলী ( আ .) ব্যতীত অন্য কোন পুরুষই হযরত ফাতিমা ( আ .)- এর সমমর্যাদায় পৌঁছাবে না । তিনি তাঁর সন্তানগণ যারা হচ্ছেন ইমাম এবং অন্যান্য সকল নবিগণের থেকেও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ।১৯৫

হযরত ফাতিমা ( আ .) নবী ( সা .)- এর স্ত্রীগণ এবং মুসলমান নারীদের অনুসৃত পথ , কোরআনের আয়াত ও ইমামদের হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত সমূহ হতে যদি চাদর পরিধান ফরজ তা প্রমাণ নাও করা যায় তবে অন্ততপক্ষে তা যে পর্দার ক্ষেত্রে অন্য পোশাকের উপর প্রাধান্য পায় ও সেটি পরিধান করা যে মুসতাহাবে মুয়াক্কাদ ( যে মুস্তাহাব পালনের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে ) তা প্রমাণ করা সম্ভব ।

হে মুসলমান বোনেরা ! আপনাদের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব জুড়ে যেহেতু হযরত ফাতিমা ( আ .) ও তাঁর পিতা নবী ( সা .) এবং তাঁর প্রিয় স্বামী হযরত আলী ( আ .) ও তাঁর সন্তানগণের ( আ .) প্রতি ভালবাসা রয়েছে এবং তাদের নির্দেশিত ও অনুসৃত পথ হচ্ছে ইসলামেরই পথ , সে পথে চলার জন্যে সব কিছু পরিত্যাগ করতে আপনারা প্রস্তুত ; যা আপনারা অতীতেও প্রমাণ করেছেন তাই বোরকাকে উত্তম আবরণ হিসেবে গ্রহণ করুন । আর এই কাজের মাধ্যমে হযরত ফাতিমা ( আ .) - এর অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিন এবং শত্রুদেরকে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা থেকে নিরাশ করুন । আমাদের সমাজে অবশ্যই বোরকা মূল্যবোধের প্রতীক হওয়া উচিৎ । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারীদের জন্য চাদরকে আদর্শ পোশাক হিসেবে নির্বাচন করা উচিত এবং কর্মস্থলগুলোতে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বোরকা পরিহিতা নারী কর্মচারীদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা অতি প্রয়োজন । আর যারা ভুল ক্রমে অজ্ঞতাবশত শত্রুদের অনুসরণে চলতে শুরু করছে তাদেরকে হয় বুঝাতে হবে নয়তো তিরস্কার করতে হবে । যাতে করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ।

৪- কালের প্রেক্ষাপট :

বর্তমানে ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন ভাবে হারাম বিষয়ের নিকৃষ্টতার ধারণা , লজ্জা এবং সতীত্বের মর্যাদা ও বোরকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চায় । তাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুবকদের বুঝাতে চায় যে , পাশ্চাত্যের পোশাকের মধ্যেই সভ্যতা , ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ নিহিত রয়েছে । এরূপ পরিস্থিতিতে অবশ্যই মুসলমান নারী ও তরুণীরা হুসিয়ার থাকবেন এবং বোরকার মাধ্যমে তাদেরকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবেন এবং অন্যদেরকেও বোরকা পরার জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন ।

হয়তো কারো কারো ধারণায় এটা আসতে পারে যে , বর্তমান সময়ের দাবী হচ্ছে এমন যে , যতটুকু পর্যন্ত হিজাব করা ওয়াজিব ততটুকু পরিমান করলেই যথেষ্ট হবে । আর এ ব্যাপারে বেশী কঠোরতা করা ঠিক হবে না ।

এরূপ ভাবাটা ঠিক নয় । কেন সব সময় বিষয়ের নেতিবাচক দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় এবং ইতিবাচক দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না , যখন কিনা শত্রু পক্ষ এই ইতিবাচক দিকটা ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে । আমরা অব্যশই সেটাই করব যা শত্রুকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয় । আর বোরকা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে একটি । ইসলামী বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কঠোরতা করা ঠিক হবে না জাতীয় কথা বলে শতকরা কতজন নারী নিজে থেকেই পরিশুদ্ধ হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমানেই কেবল বর্তমানে (ইরানের অনেক শহরে) অবশিষ্ট রয়েছে ? শুধু তাই নয় , ঐ কথার কারণে তাদের সুযোগের অসদ্ব্যবহারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে । আর দিনের পর দিন তাদের ঔদ্ধত্য ও নোংরা কাজের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের অপকর্ম শহীদ ও বিপ্লবীদের অন্তরে ক্ষত সৃষ্টি করছে । অন্যদিকে সঠিক জ্ঞানের অভাব , অসচেতনতা এবং ঐ কথাগুলোর কারণেই অনেকের মধ্যে ঈমানের দুর্বলতা এসেছে এবং অজ্ঞ মেয়েদের তিরস্কারের ভয়ে অনেক বোরকা পরিহিতা এখন বেপর্দা হয়ে গেছে । এমনও দেখা যায় যে , তাদের মা চাদর পরেছে এবং ধার্মিক কিন্তু মেয়ে এরূপ নয় । আর এমন কাজ শত্রুদের পথকে পরিষ্কার করে থাকে এবং আমাদেরকে আমাদের সৎ উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় । অথচ আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানো । ইসলামের শত্রুরা ফিতনা-ফ্যাসাদ , নোংরামো , নৈতিকতা বিরোধী অসামাজিক এবং পাপ কাজের প্রচলনের মাধ্যমে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে চায় । তাই চাদর , বড় ওড়না ও বোরকার আবরণ পরিত্যাগ করানোটাই হচ্ছে তাদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটানো যায় । তাই ফারানতিস ফানুন আলজিরিয়ার ব্যাপারে বলেছে :

“ যে বোরকাটাই দূরে ছুড়ে ফেলা হবে , তার মাধ্যমে এমন এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে যা ছিল এতদিন নিষিদ্ধ ” ।১৯৬

আমাদের অবশ্যই এটা জানা থাকা দরকার যে , শত্রুরা কোন প্রকার আবরণই - চাই তা বোরকা , মানতু বা অন্য কিছু - পছন্দ করে না । যা কিছু তারা পছন্দ করে তা হচ্ছে উলঙ্গপনা , বেহায়াপনা এবং সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া , আর এর মাধ্যমে ঐ দেশের উপর আধিপত্য কায়েম করা । তাই বোরকা পরিত্যাগ করানোর মাধ্যমে তাদের অপচেষ্টা শুরু করেছে এবং এর মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় ।

ঐ সব ব্যক্তি যাদের সংখ্যা অত্যন্তকম তারা পরিপূর্ণ আবরণের বিপক্ষে বিভিন্ন রকম অপযুক্তি দিয়ে থাকে । আমাদেও বুঝতে হবে তখনই তারা আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে যখন তাগুত সরকারের সময়কার পরিবেশের অনুরূপ বা তার থেকেও জঘন্যতম পরিবেশ সৃষ্টি হবে । কেননা যখন অন্তর কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন যে ইসলামী আহ্কামের সম্পূর্ণটাই হচ্ছে নূরানী তা তাদের অন্তরে আর প্রবেশ করে না । তাই ইমাম আলী (আ.) ঐ সংখ্যালঘুদেরকে ছেড়ে দিয়ে সর্বসাধারণকে নৈতিকতা শিক্ষা দানে রত হয়েছেন । আর সে কারণেই আমাদেরও উচিৎ হচ্ছে অবশ্যই ঐ মহান ব্যক্তির পদ্ধতিকে অনুসরণ করা । অন্যথায় ঐ প্রবৃত্তিপূজারী অমানুষরা ঐ বৃহৎ জনসমষ্টির উপরও প্রভাব বিস্তার করবে এবং আস্তে আস্তে এমন এক সময় আসবে যে , আমরা দুই পক্ষকেই হাত ছাড়া করব ।১৯৭

মহান আল্লাহ্ নবী (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন :

) وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى(

কখনোই ইয়াহুদ ও নাছারা তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্তনা (তাদের অসৎ চাওয়া-পাওয়ার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করছো এবং তাদের দীনের (ভ্রান্ত দীনের) অনুসরণ করছো । (হে আমার নবী!) বলে দাও যে , মহান আল্লাহর পথই হচ্ছে একমাত্র সঠিক পথ ।১৯৮

প্রশ্ন : কর্মস্থলে বোরকা কি দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে নারীদেরকে বাধার সম্মুখীন করে ?

উত্তর: প্রথমত যে কোন জিনিসই মানুষ ব্যবহার করে থাকে তা কোন কষ্ট ব্যতীত সম্ভব নয় । যেমন ধরুন খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান করা । কিন্তু খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান করার কারণে যে বড় উপকার আমাদের হয় সেজন্য ঐ কষ্ট , কষ্ট বলে মনে হয় না । উপরোল্লিখিত আলোচনাতে আমরা বোরকার ব্যাপারে যে সকল দলিল পেশ করেছি তাতে প্রমাণ করেছি যে , বোরকা পরাতে তেমন কোন কষ্ট হওয়ার কথা নয় ; কারণ তাতে রয়েছে কষ্টের তুলনায় অধিক উপকার ।

দ্বিতীয়ত এমন অনেক বোরকা আছে যা পরা অনেক সহজ এবং হাতও স্বাধীন থাকে যার মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজ করতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয় । নারী কর্মস্থলে কাজের সময় এই ধরনের বোরকা ব্যবহার করতে পারেন ।

তৃতীয়ত বিশ্বে এমন অনেক নারী আছেন যারা এই বোরকা পরেই কাজ করে যাচ্ছেন এমন কি সাংবাদিকতা , টেলিভিশনের উপস্থাপনা ও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ । তাদের তো বোরকা পরেও কাজ করতে কোন অসুবিধা হয় না ।

যা কিছু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে , বোরকা ও চাদর হচ্ছে হিজাব করার সব থেকে উত্তম উপায় । আর যাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান ও ঈমান আছে তারা বোরকা ও চাদরের উপকার সম্পর্কে জানেন তাই একেই পর্দা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন এবং অন্যদের অহেতুক ও ভিত্তিহীন কথায় কান দেন না । তাই বোরকা সম্পর্কে ভিত্তিহীন কথা বলাটা হচ্ছে এক ধরনের বাহানা । প্রকৃতপক্ষে কথা হচ্ছে যখন ঈমান ও ধর্মীয় বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায় তখনই মানুষ বাহানা করে থাকে যাতে করে আল্লাহ্ তা ’ য়ালার আদেশ-নিষেধ মানা থেকে দূরে সরে যেতে পারে ।

বোরকা পরিহিতা নারীর উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা

১- মুসলমান বোনেরা এর প্রতি দৃষ্টি রাখবেন যে , বোরকা হচ্ছে সব থেকে উত্তম আবরণ কেননা তার রয়েছে অনেক উপকার । তবে তখনই তা তার পক্র ৃত মূল্য পায় যখন নারীরা তা দিয়ে নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে আবৃত করে । আর যদি আল্লাহ না করুন এমন হয় যে , একেবারে পাতলা কাপড়ের বোরকা পরে বাইরে আসে অথবা মাথা খোলা , বুক খোলা এবং হাতা ছোট জামা পড়ে বাইরে বের হন তবে বড় ধরনের পাপে লিপ্ত হলেন । কোন মু ’ মিন নারীর পক্ষে ঐরূপ কাজ করা মর্যাদাকর নয় ।

বরং বোরকা পরার সাথে সাথে মস্তকাবরণ এবং হাতা লম্বা পোশাক ও পায়ে মোটা মোজা পরে বাড়ীর বাইরে আসবেন এবং প্রয়োজনে এ পোশাকেই নামাহরামের সাথে কথা বলবেন এতে আল্লাহ তা ’ য়ালা সন্তুষ্ট হবেন । আর এর মাধ্যমে বাহানাকারীদের দিনের পর দিন বাহানা করার পথরোধ করবেন ।

২- নারীরা অবশ্যই চেষ্টা করবেন বিশেষ করে যারা যুবতী মেয়ে এবং বাড়ির বাইরে থাকেন অবশ্যই যেন বোরকা ব্যবহার করেন । আর তারা যদি পরিপূর্ণভাবে নিজেদেরকে আবৃত করেন তবে তো তাদের জন্যই ভাল । আর এই ধরনের নারীদেরই ইবাদত ও পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন । কেননা অন্যদের থেকে তারা বেশী শয়তানের ধোকার সম্মুখীন হন । তারা গোনাহ্ করার ক্ষমতা বেশী রাখে তাই ইবাদত ও পর্দা হচ্ছে গোনাহর সম্মুখে একটি বাঁধ সরূপ , যাতে করে শয়তানের ধোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।

পুরুষ ও নারীর মধ্যে পার্থক্যসমূহ

1- শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে :

সাধারণভাবে পুরুষরা হচ্ছে বৃহৎ গড়নের আর নারীরা হচ্ছে ক্ষুদ্র গড়নের , পুরুষেরা অপেক্ষাকৃত লম্বা আর নারীরা খাট । পুরুষের শরীর সুঠাম আর নারীর শরীর কোমল । পুরুষের কণ্ঠস্বর মোটা আর নারীরর কণ্ঠস্বর হচ্ছে মোলায়েম । নারীদের শরীরের বৃদ্ধি দ্রুত হয় কিন্তু পুরুষের শরীরের বৃদ্ধি হয় ধীরে । এমনকি মায়ের গর্ভে কন্যা শিশু , ছেলে শিশুর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পায় । নারীদের শরীরিক শক্তির থেকে পুরুষের শারীরিক শক্তি বেশী । তবে অসুস্থতার ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী । নারীরা পুরুষের আগেই বালেগ (বয়ঃপ্রাপ্ত) হয় এবং পুরুষের অনেক আগেই তারা সন্তান জন্মদান ক্ষমতা হারায় । কন্যা সন্তান ছেলে সন্তানের আগে কথা বলতে শিখে । মধ্যম আকারের পুরুষের মগজ একজন মধ্যম আকারের নারীর মগজের থেকে বড় । পুরুষের ফুসফুস নারীর ফুসফুসের থেকে বেশী হাওয়া ধারন করে । পুরুষের হৃদ-স্পন্দন থেকে নারীর হৃদ-স্পন্দনের গতি দ্রুত ।

2- মানসিক দিক থেকে :

শিকার করা এবং অনেক কঠিন কাজ করার নেশা নারীদের থেকে পুরুষের অনেক বেশী । পুরুষেরা যুদ্ধ ও প্রতিরোধ করার মন মানসিকতা সম্পন্ন কিন্তু নারীরা সব সময় সন্ধি ও শান্তির পক্ষে । পুরুষেরা একটুখানি রুক্ষ স্বভাবের কিন্তু নারীরা হচ্ছে নরম স্বভাবের । নারীরা সাধারণত অপরের সাথে বিবাদ করতে অপছন্দ করে আর এ কারণেই তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা অতিমাত্রায় কম । আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও পুরুষ নারীর থেকে অনেক নিষ্ঠুর প্রকৃতির , কেননা পুরুষ আত্মহত্যা করলে নিজেকে গুলি করে অথবা গলায় দড়ি দিয়ে অথবা ছাদের উপর থেকে নিচে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে কিন্তু নারীরা আত্মহত্যা করলে বিষ খেয়ে অথবা ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করে ।

মহিলারা পুরুষদের থেকে অধিক মাত্রায় আবেগপ্রবণ ও অনুভূতিশীল অর্থাৎ যে বিষয়টি নারীদের অধিক পছন্দনীয় অথবা ভয় পায় সে বিষয়টি তার সামনে আসলেই দ্রূত গতিতে তার আবেগ প্রকাশ করে কিন্তু এসব ক্ষেত্রে পুরুষ অধিক শান্তও স্থির প্রকৃতির । মহিলারা প্রকৃতিগত কারণেই পুরুষের থেকে অধিকমাত্রায় গহনা , সাজ-গোজ , দামী পোশাক ইত্যাদি পছন্দ করে । নারীদের আবেগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না , কিন্তু পুরুষের তার উল্টো । মহিলারা পুরুষের থেকে অধিক ধর্মভীরু , অধিক সাবধানতা অবলম্বনকারী , অধিক কথা বলে , অধিক ভীতু ও অধিক আনুষ্ঠানিকতার ভাব সম্পন্ন । নারীর আবেগ হচ্ছে মায়ের আবেগ , আর এই আবেগ তারা সেই ছোট বেলা থেকেই অর্জন করে থাকে । পরিবারের প্রতি নারীদের ভালবাসা ও সামাজিক এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার বৈশিষ্ট্যটি তাদের মধ্যে পুরুষের থেকে অধিক । মহিলারা সাধারণত যুক্তিভিত্তিক জ্ঞানের দিকে বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করে না তবে কাব্য , উপন্যাস , অংকন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে কোন অংশে কম নয় । পুরুষেরা মহিলাদের থেকে অধিক পরিমানে গোপন কথা এবং দুঃখকে নিজেদের বুকে চেপে রাখতে পারে । মহিলারা পুরুষের থেকে অধিক নরম হওয়ায় দ্রুত কেঁদে ফেলে এবং অজ্ঞানও হয়ে পড়ে ।

3- অন্যান্য আবেগের দৃষ্টিতে :

পুরুষেরা কামনার দাস কিন্তু নারীরা পুরুষের ভালবাসার অপেক্ষায় থাকে । পুরুষ এমন নারীকে পছন্দ করে , যে তাকে পছন্দ করবে । আর নারী এমন পুরুষকে পছন্দ করে , যে তার মূল্যকে বুঝবে ও মর্যাদাকে অনুভব করবে এবং যে তার ভালবাসাকে পূর্বেই প্রকাশ করে দিবে । পুরুষ সাধারণত জোর করেই নারীর উপর কর্তৃত্ব অর্জন করতে চায় কিন্তু নারী পুরুষের অন্তর জয় করার মাধ্যমে তার উপর কর্তৃত্ব করতে চায় । মহিলারা চায় তার স্বামী যেন সাহসী হয় আর পুরুষ চায় তার স্ত্রী যেন সুন্দরী হয় । নারী পুরুষের সাহায্যকে এক অমূল্য সম্পদ বলে মনে করে থাকে । নারী পুরুষের থেকেও তার কামভাবের উপর অধিক কর্তৃত্বশীল হয়ে থাকে , পুরুষের কামভাব হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের এবং আক্রমণাত্মক কিন্তু নারীর কামভাব হচ্ছে প্রতিক্রিয়া ও উস্কানীমূলক ।62

শেষ কথা :

যা কিছু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে , তা থেকে আমরা এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে ,

প্রথমতঃ পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে পার্থক্য বিদ্যমান তা আল্লাহ প্রদত্ত আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যা এ গ্রন্থেও তৌহিদী ব্যবস্থায় নারী শীর্ষক আলোচনাতে বর্ণিত হয়েছে ।

দ্বিতীয়তঃ পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে বৈবাহিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তা শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই নয় । কেননা যদি দৈহিক চাহিদার কারণেই এই সম্পর্কের সৃষ্টি হতো তাহলে অবশ্যই পরিবারের বন্ধনসমূহ কিছু দিন পরেই শেষ হয়ে যেত । অতএব পুরুষ ও নারীর বন্ধনের প্রকৃত কারণ যেটা সেটা হচ্ছে এই দৈহিক চাহিদার থেকেও অন্য কিছু , আর তা সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা ’ য়ালা তাঁর আসমানী কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে :

) وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَ‌حْمَةً(

আল্লাহর অন্যতম (নিদর্শন) হচ্ছে এই যে , তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তোমরা প্রশান্তি অনুভব কর এবং তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।63

সুতরাং যে বৈশিষ্ট্যটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধনকে দৃঢ় করে তার ভিত্তি হচ্ছে ফিতরাত যা আল্লাহ তা ’ য়ালা তাদের উভয়ের মধ্যে দিয়েছেন । আর ঐ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভালবাসা ও পারস্পরিক রহমত।

যে নারী বাড়ীর লোকদের খেদমত করে তার সওয়াব ও মর্যাদা

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

الامراة الصالحة خیر من الف رجل غیر صالح و ایما امرآة جدمت زوجها سبعة ایام اغلق الله عنها سبعة ابواب و فتح لها ثمانیة ابواب الجنة تدخل من ایها شاءت

একজন উপযুক্ত নারী হাজার জন অনুপযুক্ত পুরুষের থেকে উত্তম এবং যে নারী সাত দিন অন্তর দিয়ে স্বামীর সেবা করবে , আল্লাহ্ তা য়ালা তার জন্য দোযখের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন ও বেহেশতের আটটি দরজা তার জন্য উম্মুক্ত করে দিবেন , আর সে যে দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে চায় প্রবেশ করবে । 64

স্বামীকে পানি দেয়ার সওয়াব :

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ﻣﺎ ﻣﻦ ﺍﻣﺮﺍﺓ ﺗﺴﻘﻲ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﺷﺮﺑﺔ ﻣﻦ ﻣﺎﺀ ﺍﻻ ﻛﺎﻥ خیرﺍ لها ﻣﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺳﻨﺔ ﺻﻴﺎﻡ ﰱ نهارها و قیام لیلها و یبنی الله لها بکل ﺷﺮﺑﺔ ﺗﺴﻘﻲ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﻣﺪﻳﻨﺔ فی الجنة و غفرلها ستین خطیئة -

কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে পানি পান করায় তবে তার এ কাজ এক বছরের ইবাদত যার দিনগুলোতে রোযা রাখা হয় এবং রাতগুলোতে নামায পড়া হয় তা থেকেও উত্তম । আর আল্লাহ তার পুরস্কার স্বরূপ যে পানি তার স্বামীকে দিয়েছে তার প্রতিটি ফোটা থেকে বেহেশতে শহর তৈরী করবেন এবং তার 60 টি গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন ।65

পুরুষ ও নারী অবশ্যই একে অপরকে সাহায্যকারী মনে করা উচিৎ । আর নারী বাড়ীর যে সকল কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে তা শুধুমাত্র আল্লাহকে রাজী ও খুশি করার উদ্দেশ্যে যেন হয়ে থাকে । আর যখনই আল্লাহকে রাজী ও খুশি করার উদ্দেশ্যে বাড়ীর কাজগুলো আঞ্জাম দেয়া হবে তখনই ঐ বাড়ী বেহেশতের ন্যায় হয়ে উঠবে এবং একে অপরের মধ্যে গড়ে উঠবে ভালবাসার বন্ধন । সাথে সাথে পুরুষও যেন পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র ব্যবস্থা করার কাজকে একটি ইবাদত মনে করে তা করে । যেরূপ হযরত আলী (আ.)ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর পদ্ধতি ছিল ।

উত্তম নারী পৃথিবীর বুকে হচ্চে আল্লাহর কর্মী এবং সে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত :

ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺇﱃ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ) ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﺎﻳﻬﻤﻚ: ﺍﻥ ﱃ ﺯﻭﺟﺔ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻠﺖ ﺗﻠﻘﺘنی ﻭ ﺇﺫﺍ ﺧﺮﺟﺖ ﺷﻴﻌﺘنی ﻭ ﺇﺫﺍ ﺭﺍﺗنی ﻣﻬﻤﻮﻣﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﱃ : ما یهمک ان کنت تهتم ﻟﺮﺯﻗﻚ ﻓﻘﺪ ﺗﻜﻔﻞ ﻟﻚ ﺑﻪ ﻏیرﻙ ﻭ ﺍﻥ ﻛﻨﺖ تهتم ﻻﻣﺮ ﺁﺧﺮﺗﻚ ﻓﺰﺍﺩﻙ ﺍﷲ هما ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ) ﺍﻥ ﺍﷲ ﻋﻤﺎﻻ ﻭ ﻫﺬﻩ ﻣﻦ ﻋﻤﺎﻟﻪ ﳍﺎ ﻧﺼﻒ ﺍﺟﺮ ﺷﻬﻴﺪ

একজন রাসূল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল : আমি যখন বাড়ী ফিরে আসি তখন আমার স্ত্রী আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসে । আর যখন আমি বাড়ী থেকে বেরিয়ে যাই তখন সে আমাকে বিদায় দিতে আসে । আর আমি যখন দুঃখিত থাকি তখন সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে , কোন বিষয় তোমাকে দুঃখিত করেছে ? যদি তুমি আয় ও বাড়ীর খরচ নিয়ে দু:খিত তবে তা তো আল্লাহর হাতে , আর যদি আখিরাতের বিষষ ভেবে তুমি দুঃখিত হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ যেন তা আরো বেশী করে দেন । এ সব শুনে রাসূল (সা.) বললেন : পৃথিবীর বুকে আল্লাহর কর্মীরা রয়েছে এই নারী আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীর বুকে তাঁর ঐ কর্মীদের একজন এবং সে একজন শহীদের পুরস্কারের অর্ধেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হবে ।66

নারীর জিহাদ

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :ﺟﻬﺎﺩ ﺍﳌﺮﺍﺓ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺘﺒﻌﻞ -নারীর জিহাদ হচ্ছে , তার স্বামীকে উত্তমভাবে দেখা-শুনা করা ।67

আসমা , সে ছিল এক আনসারের স্ত্রী । সে রাসূল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল : আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে উৎসর্গীত হোক! আমি এক দল মহিলার পক্ষ থেকে আপনার কাছে এসেছি । আমার জীবন আপনার জন্যে উৎসর্গীত হোক । পূর্ব ও পশ্চিমের এমন কোন মহিলা নেই যে আমার এ কথার সাথে একমত হবে না । আল্লাহ আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে মানুষের মধ্যে পাঠিয়েছেন । আমরা আপনার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনি যে , তাঁর পক্ষ থেকেই এসেছেন তাও বিশ্বাস করেছি । আমরা মহিলারা বাড়ীতে বসে থাকি এবং আপনাদের চাওয়া- পাওয়াকে পূরণ করে থাকি , আপনাদের সন্তানদের দায়-দায়িত্ব বহন করে থাকি । আর আপনারা পুরুষেরা জামা ’ য়াতের ও জুময়ার নামায পড়েন , অসুস্থদেরকে দেখতে যান , জানাজার নামায পড়েন , হজ্জ করতে যান , তার থেকেও বড় হলো জিহাদ করতে যান , অন্য দিকে আপনাদের একজন যদি সফরে অথবা হজ্জে যায় আমরাই বাড়ী-ঘর দেখে রাখি , পোশাক তৈরী করি , সন্তানদেরকে লালন পালন করি । এখন আপনি বলুন , হে আল্লাহর (সা.) রাসূল ! আমরা আপনাদের পুরস্কারের শরীক নই কি ?

রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবাদের দিকে ফিরে বললেন : তোমরা এই নারীর প্রশ্নের মত উত্তম কোন প্রশ্ন দ্বীনের ব্যাপারে শুনেছো কি ? তারা বলল : না , ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা ধারণাও করতে পারি নি যে , কোন মহিলা (সা.) এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে কথা বলতে পারে । তারপর রাসূল ঐ মহিলার দিকে ফিরে বললেন : হে আসমা! ফিরে যাও এবং অন্য সমস্ত মহিলাদের মধ্যে ঘোষণা করে দাও যে , তোমাদের মধ্যে যে তার স্বামীর সাথে উত্তম ব্যবহার করবে এবং তার ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করবে সে পুরুষের ঐ সমস্তভাল আমলের সমান সওয়াব পাবে ।

ঐ মহিলা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তকবির ধ্বনি দিতে দিতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো ।68

উপসংহার :

রাসূল (সা.) ও নিষ্পাপ ইমামদের (আ.) বাণী অনুসারে এটা পরিস্কার যে , ইসলাম পরিবারের আন্তরিক ও উষ্ণ পরিবেশে নারীর কাজ-কর্মের ব্যাপারে কত অধিক মূল্য দেয় । আর যখন মানুষ ইসলামের আলোকিত নীতিমালাকে অন্যান্য ধর্মের সাথে তুলনা করবে তখন বুঝতে পারবে যে , শুধুমাত্র ইসলামই নারীকে এত অধিক মূল্য দিয়েছে ও এমন ব্যক্তিত্বপূর্ণ মর্যাদা প্রদান করেছে । আর মুসলমানগণ যদি নিজের অস্তিত্বকে এই আসমানী দ্বীনকে রক্ষার লক্ষ্যে বিলিয়ে দেয় তবে এটা এজন্য যে , শুধুমাত্র ইসলামই তাকে মুক্তি দিতে পারে । আর দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ইজ্জত ও সম্মান পাওয়াটা পবিত্র ইসলাম ধর্ম অনুসরণের মধ্যেই নিহিত আছে । আল্লাহ্ তা ’ য়ালা পরিবারে নারীদের কাজের ব্যাপারে এত সওয়াব দেয়ার কারণ হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অধ:পতন এবং বিকাশ ও অবক্ষয় পরিবারের উপর নির্ভরশীল । যদি একটি শিশু পরিবারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠামুক্ত পরিবেশে উপযুক্ত ভালবাসা , আদর ও প্রশিক্ষণে বেড়ে উঠে তবেই জাতির ভবিষ্যত বলে গণ্য ঐ শিশু পরবর্তী কালে দেশ ও জাতির সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম । সেই সাথে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন , তালাক , ঝগড়া-বিবাদ , মানসিক চাপ , উত্তেজনা , অশান্তিও মানসিক বিভিন্ন রোগসমূহ কমে যাবে । কারণ এ সমস্যাগুলোই আইন শৃংখলার অবনতি ঘটায় ও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে ।

পশ্চিমা এবং অনৈসলামী দেশগুলোতে এত অধিক পরিমানে তালাক , চুরি , ছিনতাই , খুন , রাহাজানী , ফ্যাসাদ ও আরো অন্যান্য খারাপ কাজ বেড়েই চলেছে যা পুলিশ ও বিচার বিভাগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না , তার কারণ হচ্ছে মহিলাদের গৃহকর্মের প্রতি মূল্য না দেয়া , পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটির আন্তরিক পরিবেশের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা এবং যে নারী পরিবার গঠনের মাধ্যমে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে তাকে ভোগ্যপণ্য গণ্য করে আমোদ ফূর্তির অনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে নিযুক্ত করা । এরফলে শিশুরা তাদের মায়ের ভালবাসা ও আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তারাও ঐ অসভ্যতা শিক্ষা নিচ্ছে , ভালবাসা , আদর যে কাকে বলে তা তারা জানতেই পারছে না । কারণ সভ্য ভাবে বেড়ে উঠার প্রথম পাঠশালা হচ্ছে প্রতিটি শিশুর বাড়ী ও ঐ পাঠশালার প্রথম শিক্ষক হচ্ছে তাদের বাবা-মা । যেখানে তাদের বাবা-মা অসভ্যতার শিকার সেখানে সন্তানের কাছে এর থেকে উত্তম আর কি আশা করা যায় ?

যদি আমরা সুন্দর পরিচ্ছন্ন দেশ পেতে চাই তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের পরিবার নামক ছোট্ট সমাজটিকে উন্নত ছকে তৈরী করব । আর ইসলামও এই বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছে । যার কারণে ইমাম (রহ.) খোমেনী বলেছেন : এই দায়িত্বটি (মায়ের দায়িত্ব) হচ্ছে নবীদের দায়িত্বের ন্যায় ।69

আর যদি আমরা আমাদের দেশকে ইসলামী আঙ্গিকে সাজাতে চাই তবে অবশ্যই মহিলাদেরকে অনেক লেখা-পড়া করাতে হবে , এ জন্য যে :

এক : শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠানে তাদের ভূমিকা রাখার প্রয়োজন রয়েছে সেখানে যেন শরীয়তী নীতিমালা বজায় রেখে কর্মকান্ড চালাতে পারে ।

দুই : তাদের জ্ঞান ও সংস্কৃতিগত উন্নয়ন ঘটানো যা তাদের সন্তান প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অধিক সাহায্য করবে , কেননা মায়ের আসল দায়িত্বই হচ্ছে তার সন্তানকে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা । এ কারণে আল্লাহ্ তা ’ য়ালা বিভিন্ন দিক থেকে নারীদেরকে সন্তান পালনের এই গুরুদায়িত্বের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন । তবে এটাও লক্ষ্য রাখা দরকার যে , নারীদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে যেয়ে তারা যেন সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার মূল দায়িত্বকে ভুলে না যায় ।

শিশু লালন-পালনের সওয়াব

আল্লাহ্ তা ’ য়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের হিদায়েতের জন্য নবীদের প্রেরণ করেছেন । যে কেউ মানুষের সৌভাগ্যের জন্য এবং তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য দানের প্রচেষ্টায় পদক্ষেপ নিবে এবং তাকে অন্যায় , অনাচার ও বিচ্যুতি থেকে দূরে সরাবে সেই আল্লাহর নবীদের পথে পা বাড়ালো । আর ধর্মীয় আলেম , ধর্মভীরু বাবা-মা , শিক্ষক-শিক্ষিকারাই এ পথে পা বাড়িয়ে থাকেন । তাই উত্তম মা যদি সমাজকে উত্তম সন্তান উপহার দেয় তবে সে মা মহান নবীদের মতই কাজ করলো । সে কারণে ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেছেন : সন্তানকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার কাজ হচ্ছে সমস্তকাজের থেকে উত্তম । যদি আপনারা একটি উত্তম সন্তান সমাজে উপহার দেন তা সমগ্র পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা থেকেও অনেক বেশী । যদি আপনারা একজন মানুষকে উপযুক্ত মানুষ রূপে গড়ে তুলতে পারেন তবে তাতে যে কি পরিমান সম্মান রয়েছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ।70

শিশুর মানসিক জটিলতার জন্য দায়ী সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তাকে তার মায়ের কাছ থেকে পৃথক করা সুতরাং এই দায়িত্বটি মায়ের দায়িত্ব নবীদের দায়িত্বের ন্যায় । কেননা নবিগণও এসেছিলেন মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরী করার জন্য ।71

স্বামীর অনুমতি নিয়ে স্ত্রীর বাড়ীর বাইরে যাওয়া এবং স্বামীর কথা মেনে চলা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচুর পরিমানে রহমত বর্ষিত হওয়ার কারণ :

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ان رجلا من الانصار علی عهد رسول الله (صلی الله علیه و آله) ﺧﺮﺝ ﰱ ﺑﻌﺾ ﺣﻮﺍﺋﺠﻪ ﻭ ﻋﻬﺪ ﺇﱃ ﺍﻣﺮﺍﺗﻪ ﻋﻬﺪﺍ ﺍﻥ ﻻ ﲣﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﺣﱴ ﻳﻘﺪﻡ، قال : ﻭ ﺍﻥ ﺍﺑﺎﻫﺎ ﻣﺮﺽ. ﻓﺒﻌﺜﺖ ﺍﳌﺮﺍﺓ ﺍﱃ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (صلی الله علیه و آله) ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﺍﻥ ﺯﻭﺟﻰ ﺧﺮﺝ ﻭ ﻋﻬﺪ ﺍﱃ ﺍﻥ ﻻ ﺍﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﱴ ﺣﱴ ﻳﻘﺪﻡ ﻭ ﺍﻥ ﺍﰉ ﻣﺮﺽ ﺍﻓﺘﺎﻣﺮﱏ ﺍﻥ ﺍﻋﻮﺩﻩ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (صلی الله علیه و آله) : لا، اجلسی ﺑﻴﺘﻚ ﻭ ﺍﻃﻴﻌﻰ ﺯﻭﺟﻚ، قال : فمات، ﻓﺒﻌﺜﺖ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻘﺎﻟﺖ : یا ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (صلی الله علیه و آله) ﺍﻥ ﺍﰉ ﻗﺪﻣﺎﺕ ﻓﺘﺎﻣﺮﱏ ﺍﻥ ﺍﺣﻀﺮﻩ ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ) لا، اجلسی ﺑﻴﺘﻚ ﻭ ﺍﻃﻴﻌﻰ ﺯﻭﺟﻚ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺪﻓﻦ ﺍﻟﺮﺟﻞ فبعث الیها رسول الله (صلی الله علیه و آله) ان الله تبارک و تعالی قد غفرلک و لأبیک بطاعتک لزوجک

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন : নবী (সা.)-এর সময়ে আনসারদের মধ্যে থেকে একজন পুরুষ সংসারের কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য সফরে গেল এবং সে তার স্ত্রীকে বলে গেল যে , সে ফিরে না আসা পর্যন্তযেন তার স্ত্রী বাইরে না যায় । এমতাবস্থায় ঐ মহিলার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়লো । ঐ মহিলা রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বলল : আমার পিতার খুব অসুখ আর আমার স্বামী সফরে গেছে কিন্তু আমি তার সাথে ওয়াদা করেছি যে , সে বাড়ী ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি বাড়ীর বাইরে যাব না । এ মূহুর্তে আপনি আমাকে অনুমতি দিবেন কি আমার পিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য । রাসূল (সা.) তাকে বললেন : না , অনুমতি দিব না । বাড়ী ফিরে যাও এবং তোমার স্বামীর নির্দেশ পালন কর । ইমাম সাদিক (সা.) (আ.) বলেন : ঐ মহিলার পিতা মৃত্যুবরণ করলে , সে পুনরায় রাসূল -এর কাছে এসে বলল : হে রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন , আমাকে অনুমতি দিবেন কি তাকে দেখার জন্য ? রাসূল (সা.) বললেন : না , অনুমতি দিব না , বরং তুমি বাড়ী ফিরে যাও এবং তোমার স্বমীর নির্দেশ পালন কর । ইমাম সাদিক (আ.)বলেন : ঐ মৃত ব্যক্তি দাফন হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (সা.) ঐ মহিলাকে খরব পাঠালেন যে , স্বামীর নির্দেশ পালন করার জন্য আল্লাহ্ তা ’ য়ালা তোমার এবং তোমার পিতার গোনাহ্সমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ।72

যদিও প্রত্যেক ব্যক্তির দ্বীনি দায়িত্ব হলো আত্মীয়দের হক আদায় করা এবং পিতা-মাতার প্রতি সম্মান দেখানো । ইসলামের নৈতিক শিক্ষা হলো পুরুষ তার স্ত্রীকে পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাবে এবং তার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করবে ।

যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে সম্মান দেয় না , সে স্ত্রীর প্রতি তার দায়িত্বকেই আঞ্জাম দিল না । আর এ কারণে সে প্রকৃত মুসলমান হিসেবে গণ্যও হবে না । অপর দিকে স্ত্রীরও স্বামীর প্রতি দায়িত্ব রয়েছে যেমন তার বিনা নির্দেশে বাড়ীর বাইরে না যাওয়া ইত্যাদি । যদিও কিছু কিছু ওয়াজিব কাজের ব্যাপারে স্বামীর অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই যেমন , হজ্জ করতে যাওয়া ইত্যাদি ।

এই হাদীসটি এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে যে , স্ত্রী অবশ্যই তার স্বামীর আনুগত্য করবে । আর তাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করবে ।

দ্বিতীয় শ্রেণী

দ্বিতীয় শ্রেণীর নারীরা হচ্ছে এমনই যাদের মাধ্যমে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে ফ্যাসাদ ও অপরাধ সংঘটিত হয়েছে । এমনকি তারা কোন কোন নবী ও ইমাম এবং সৎ মানুষের হত্যার কারণও হয়েছে , যেমন হযরত লুত ও নূহ (আ.)-এর স্ত্রীদ্বয় , হিন্দা , যে নবী -এর চাচা হযরত হামযার কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল । তেমনি ইমাম হাসান (আ.)-এর স্ত্রী , যার মাধ্যমে ইমামের শাহাদত হয়েছিল । ইতিহাসে এ ধরনের নারীর সংখ্যা অনেক । বর্তমান সময়েও ইসলামের শত্রুরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে , সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে , নিজেদের কামভাব চরিতার্থ করতে এবং কালো টাকার পাহাড় গড়তে এ ধরনের নারীদেরকে ব্যবহার করে থাকে । এখানে ঐ ধরনের নারীদের সম্পর্কে কিছু তুলে ধরা হল ।


6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18