একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন0%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক: মীর আশরাফ-উল-আলম
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 41449
ডাউনলোড: 3894

পাঠকের মতামত:

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 41449 / ডাউনলোড: 3894
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহ আলাইহা)-এর শিক্ষা

আসমা বিনতে উ ’ মাইস বলেন : একদিন হযরত ফাতিমা (আ.) আমাকে বললেন : আমি মদীনার মানুষদের অনুসৃত পদ্ধতির (যেমন তারা তাদের স্ত্রীদের মৃত্যুর পর তাদেরকে এমন ভাবে দাফন করার জন্য নিয়ে যায় যে মৃতদেহের উপর শুধুমাত্র এক খণ্ড কাপড় থাকে যার নিচ দিয়ে ঐ মৃতের শরীর দেখা যায়) প্রতি অসন্তুষ্ট ।

আসমা বলল : আমি আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) এমন কিছু দেখেছি যাতে করে তারা মৃত ব্যক্তিদেরকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল । তারপর সে খেজুর গাছের শক্ত শাখা দিয়ে একটি তাবুত (খাটিয়া) তৈরী করল এবং পরবর্তীতে ঐ তাবুতের চারপাশে কাপড় দিয়ে ঘিরে দিল । সে আরো বলল যে , আবিসিনিয়ার লোকেরা মতৃ দেহটিকে এমন একটি তাবুতের মধ্যে শুইয়ে দেয় যাতে করে ঐ মৃত দেহটি দেখা না যায় ।

হযরত ফাতিমা (আ.) যখন সেটি দেখলেন তখন তিনি বললেন : এটা অতি উত্তম আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তখন আমাকে এইরূপ কিছুতে করে নিয়ে যাবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন :

ইসলামে প্রথম যার পবিত্র মৃতদেহটি তাবুতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনি হচ্ছেন হযরত ফাতিমা (আ.) ।199

ইবনে আব্বাস বলেন : যখন হযরত ফাতিমা (আ.) (তার উপর আপতিত বিভিন্নরূপ মুসিবত ও নির্যাতনে) অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন তিনি আসমাকে বলেন : আমার জানাযাটি এমন ভাবে নিয়ে যেও না যাতে করে আমার শরীরের আকৃতি বাইরে থেকে বুঝা যায় । আসমা বিনতে উ ’ মাইস খেজুর গাছের শাখা দিয়ে তাঁর জন্য একটি তাবুত তৈরী করেছিল এবং সেটাই ছিল ইসলামের প্রথম তাবুত । যখন হযরত ফাতিমা (আ.) তা দেখলেন তখন একটু মুচকি হেসে ছিলেন । এ সম্পর্কে আসমা বলেন , রাসূল (সা.) ওফাতের পর থেকে ঐ দিন পর্যন্ত তাকে এত খুশি দেখি নি । তারপর তাঁর পবিত্র জানাযাটি তাতে করে রাতে নিয়ে যাওয়া এবং দাফন করা হয় ।200

হিজাব সম্পর্কে আমিরুল মু মিনিন হযরত আলী (আ.)-এর অতি মর্যাদা সম্পন্ন কন্যার কথা

হযরত জয়নাব (আ.) সিরিয়ার দামেস্ক শহরে অভিশপ্ত ইয়াযিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন :

এই মুক্তি প্রাপ্ত লোকের ছেলে (ইয়াযিদ) এটা কি ন্যায়পরায়ণতা যে , নিজের স্ত্রী ও কাজের মেয়েদেরকে ভাল স্থানে পর্দার মধ্যে রাখবে আর রাসূল (সা.)-এর কন্যাদেরকে বন্দী , উম্মুক্ত মুখ মণ্ডল ও পর্দাহীন অবস্থায় তাদের শত্রুদের সাথে এ শহর থেকে ও শহরে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবে এবং সেসব স্থানের লোকজন তাদেরকে দেখবে আর কাছের ও দূরের খারাপ ও ভাল (সকল প্রকৃতির) লোক তাদের চেহারার উপর দৃষ্টি ফেলবে ?201

হযরত যয়নাব (আ.) কারবালার ঐ মর্মান্তিক ঘটনা যার মত বড় শোকাবহ ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে নি সেই মসিবতের মধ্যেও তিনি নারীদের পর্দার প্রতি ইশারা করেছেন । ঐ সময়ে তাকে যে বিষয়টি বেশী পীড়া দিয়েছে এবং অন্তরে জালার সৃষ্টি করেছিল তা হচ্ছে বেপর্দা অবস্থায় নামাহরামদের সামনে থাকাটা । হে মুসলমান নারীরা হযরত জয়নাবের এই কাজটি আমাদের জন্য শিক্ষা স্বরূপ নয় কি ? হে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন যুবকরা! পৌরুষত্বের অধিকারী কেউ কি এটা মেনে নিতে পারে যে , তাদের স্ত্রী , কন্যা , বোন ও নারীরা পাতলা পোশাক পরে নামাহরামদের দৃষ্টিতে পড়ুক এবং তার মাধ্যমে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হোক ?

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কন্যার কাছ থেকে হিজাব ও সচ্চরিত্রতার শিক্ষা

শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর বিশ্বস্ত সাহাবাদের শাহাদতের পর তাঁর পরিবারবর্গের তাঁবুর উপর শত্রুপক্ষ আক্রমণ চালায় এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তাদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালায় । এর সাথে সাথে তারা ইমাম হুসাইন (আ.) -এর স্ত্রী ও কন্যাদের চাদর ও অলঙ্কার সমূহ চুরি করে নিয়ে যায় । এই করুণ ঘটনার পর ইমাম হুসাইন (আ.) -এর কন্যা পিতার মৃতদেহের পাশে এসে অন্তরের ব্যথা জানিয়ে শহীদদের সর্দারকে বলে:

প্রিয় পিতা , দেখ শত্রুরা আমাদের সাথে কী করেছে , আমাদের মাথাগুলো অনাবৃত অবস্থায় আছে । আমাদের অন্তরসমূহে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে , আমার ফুফু জয়নারকে তারা মেরেছে ।202

উম্মে কুলসুম , হযরত আলী (আ.)-এর কন্যা শিমারকে উদ্দেশ্য করে বলেন :

যখন আমাদেরকে শামে (সিরিয়ায়) নিয়ে যাবে তখন আমাদেরকে এমন একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করাবে যেখানে খুব কম লোক আমাদেরকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে যাতে করে আমাদেরকে খুব কম লোকে দেখে । আর বলে দাও : এই কাটা মাথাগুলো (ইমাম হুসাইন ও অন্যান্য শহীদের মাথা) যাতে উটের পিঠের হাওদার বাইরে না নিয়ে যায় কারণ ঐ মাথাগুলোর কারণে মানুয়ের দৃষ্টিসমূহ সেদিকে নিবদ্ধ থাকে এবং আমাদের দিকে না পড়ে । কেননা আমরা নামাহরামদের দৃষ্টির কারণে অনেক কষ্ট ও আজাব ভোগ করেছি ।203

কিন্তু শিমার তা করল না এই কারণে যে , রাসূলে খোদা (সা.) -এর পরিবারবর্গ যেন আরো বেশী কষ্ট পায় ।

যেহেতু ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কন্যার মহান পিতা , চাচা ও ভাইয়েরা শহীদ হয়ে গিয়েছিল এবং তিনিসহ নবী পরিবারের অন্যরা তাদের শত্রু যেমন ওমর ইবনে সা ’ দ ও শিমারের মত পাপিষ্ঠ ও অত্যাচারীদের হাতে বন্দী ও অত্যাচারিত হয়েছিলেন এবং শত্রুরা তাদের তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ও সব কিছু লুট করে নিয়েছিল , ক্ষুধা-পিপাসায় এবং আরো অন্যান্য মুসিবত যা বলার নয় তাদের উপর আপতিত হয়েছিল যা তার অন্তরে যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছিল এবং তার সারা শরীর ব্যথায় কাতর হয়ে গিয়েছিল । এমতাবস্থায় তার কাছে যে বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হচ্ছে উম্মুক্ত চুলে না মাহরামদের সামনে থাকাটা ।

হে মুসলমান নারীরা , ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) -এর এই দু ’ কন্যার কাজ ও আচরণ কী হিজাবের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয় না ? অবশ্যই গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয় । মুসলমান নারী ও মেয়েদের উদ্দেশ্যে তিনি এই কথাই বলেছেন যে , যদি সব প্রিয়জন , ধন-সম্পদ ও নিজের জীবনকে তোমার সত্য বিশ্বাসের পথে বিসর্জন দিতে হয় তবুও তোমার দ্বীন ও পর্দাকে বিসর্জন দিও না । তাই তো তিনি বলেন : যে কোন মুসিবতকে সহ্য করা সম্ভব কিন্তু বেপর্দা অবস্থায় নামাহরামের দৃষ্টিতে পড়া সহ্য করা যায় না ।