একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন0%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক: মীর আশরাফ-উল-আলম
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 41455
ডাউনলোড: 3897

পাঠকের মতামত:

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 41455 / ডাউনলোড: 3897
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

একজন নারীর ব্যক্তিগত ,নৈতিক , সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব

1- চোখের নিয়ন্ত্রণ :

পবিত্র কোরআন মু মিন নারী এবং পুরুষদের চক্ষুকে অবনত রাখার নির্দেশ দিচ্ছে :

) قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (30) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ(

ঈমানদার পুরুষদেরকে বলে দাও : তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখে এবং সচ্চরিত্রতা অবলম্বন করে । আর এটা তাদের জন্য হচ্ছে পবিত্রতম বিষয় । কেননা আল্লাহ যা কিছু করেন তা জানেন । আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও : তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং সচ্চরিত্রতা অবলম্বন করে ।225

দৃষ্টিকে অবনত রাখার অর্থ এই নয় যে , তা বন্ধ করে রাখবে বরং অসৎ উদ্দেশ্যে তাকানোর থেকে দূরে থাকার কথা বলা হচ্ছে ।

অন্যভাবে উক্ত দুই আয়াতে নিষেধ করা হয় নি বা বলা হয় নি যে , (ﻻ ﺗﻨﻈﺮﻭﺍ ) দেখো না বরং বলা হয়েছে যে , তোমাদের দৃষ্টিকে নত রাখ ।

আবু সাঈদ খুদরী নবী (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে , রাসূল (সা.) বলেছেন : রাস্তার পাশে ঘরের দরজায় বসা থেকে বিরত থাকো । বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা.) উপায় নেই কি করবো বসতে হয় । তখন তিনি বললেন : যখন এমনই তাহলে রাস্তার হকটি আদায় করবে । জিজ্ঞেস করল : সেটা কি ? তিনি বললেন : চোখ নিচের দিকে রাখা , কষ্ট না দেয়া , সালামের উত্তর দেয়া , সৎ কাজে উপদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা ।226

এরূপ আরো অনেক হাদীসে দেখা যায় যেমন : ইবনে আব্বাস বলেন : নবী (সা.) আব্বাসের ছেলে ফাযলকে কোরবানীর ঈদের দিন নিজের ঘোড়ার পিছনে উঠিয়ে ছিলেন । ফাযল দেখতে খুব সুদর্শন ছিল । রাসূল (সা.) মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন ।

সে সময় খাছআ ’ ম গোত্রের এক সুন্দরী নারী নবীর কাছে প্রশ্ন করার জন্য আসল । ফাযল ঐ নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এবং ঐ নারীকে তার পছন্দ হয়েছিল ।

রাসূল (সা.) যখন এই ঘটনাটি দেখলেন তখন ফাযলের মুখটি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন ।

2- নারীর কথা বলার ধরন কেমন হবে :

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى(

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য সাধারণ নারীদের মত নও , যদি তাকওয়া অবলম্বন কর । তাহলে আকষর্ণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না যাতে করে অসুস্থ অন্তরসমূহ তোমাদেরকে পাওয়ার আশা করে , বরং উপযুক্ত ভাবে কথা বল এবং তোমাদের ঘরে থাক ও প্রাথমিক জাহেলিয়াতের যুগের মত মানুষের মাঝে বের হয়ো না ।227

নারী নামাহরামদের সামনে অবশ্যই অতি সাধারণ ,অনাকর্ষণীয় ভঙ্গীতে এবং দৃঢ় ভাবে কথা বলবে ।

কথা বলার সময় নারী তার কণ্ঠকে কোমল ও আকর্ষণীয় করবে না আবার তার কথার বিষয়বস্তুও যেন উত্তম হয় । তার মধ্যে কোন অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কথা যেন না থাকে । তাতে যেন কোন অসত্য ও পাপের ছোয়া না থাকে ।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে , নারীরা শিক্ষা-দীক্ষা , রসম-রেওয়াজ (সামাজিক প্রথা ও আদব কায়দা) , শিল্প-সংস্কৃতি , সংসার-ধর্ম এবং যে বিষয়গুলো শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য উত্তম সে সকল বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতিবেশীর সাথে দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করে । এমনকি পরচর্চার মত গুনাহর কাজও করে থাকে । এই নারীদেরকে বলা উচিত যে , যে বিষয়গুলোর সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের আজাব ও অপমান জড়িত রয়েছে সে সব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে নিজের জীবনটা আত্মপ্রশিক্ষণ ও নিজ সন্তানদেরকে গড়ে তোলার কাজে ব্যয় করাটা উত্তম নয় কি । যেমন : কোরআন , ইসলামী বিধি-বিধান , ফুল তৈরী , দর্জির কাজ প্রভৃতি শিক্ষা করা এবং শিশুদেরকে আঁকা-আঁকি , উত্তম চরিত্র ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া ।

3- বাড়ির বাইরে নারীর পোশাক কেমন হবে :

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

যখন নারী বাড়ী থেকে বের হবে তখন তার জন্য এটা ঠিক নয় যে , সে তার পোশাক সুগন্ধিযুক্ত করবে ।228

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃষ্টির দিনে রাসূল (সা.)-এর সাথে জান্নাতুল বাকিতে বসে ছিলাম , এমন সময় এক নারী গাধার পিঠে চড়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল । পশুর পা গর্তে পড়ে যাওয়ায় তার পিঠে বসে থাকা নারীও মাটিতে পড়ে গেল । তা দেখে রাসূল (সা.) তাঁর চেহারা মুবারক ঘুরিয়ে নিলেন । বলা হলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ নারী পায়জামা পরে আছে । নবী পাক (সা.) তিনবার বললেন : হে আল্লাহ্! যে নারীরা পায়জামা পরে তাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখ । হে মানব সকল! তোমরা পায়জামা ব্যবহার কর , কেননা পায়জামা হচ্ছে তোমাদের পোশাকের মধ্যে সব থেকে বেশী আবৃতকারী পোশাক । আর তোমাদের নারীরা যখন বাড়ী থেকে বের হয় তখন তা তাদেরকে রক্ষা করবে ।

4- নারীর জুতা কেমন হবে :

আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ(

রাস্তায় হাঁটার সময় নারীরা যেন মাটিতে সজোরে আঘাত না করে (এবং তাদের নুপুরের শব্দ যেন অন্যের কানে না যায়)যাতে করে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য অন্যরা জানতে পারে ।229

এই আয়াতটি আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে , ইসলাম সামাজিক পবিত্রতার বিষয়ে কতটা কঠোরতা অবলম্বন করেছে এবং সূক্ষ দৃষ্টি দিয়েছে । একারণেই বলা হয়েছে যে , নারীরা যেন তাদের জুতা দিয়ে মাটিতে এমন ভাবে আঘাত না করে যাতে করে সেই আঘাতের শব্দে বোঝা যায় একজন নারী হেঁটে যাচ্ছে ।

5- রাস্তায় এবং গলিতে নারীর চলা-ফেরা কেমন হবে :

ইমাম সাদিক (আ.) নবী (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন :

নারীরা যেন রাস্তার মধ্য দিয়ে চলা-ফেরা না করে বরং তারা যেন ফুটপাত দিয়ে অথবা দেয়ালের পাশ দিয়ে চলা-ফেরা করে ।230

ঈমানদার নারী অবশ্যই যান-জটপূর্ণ এলাকা যেখানে মানুষের আসা-যাওয়া বেশী এবং যেখানে অনেক নামাহরামের চোখ তার দিকে চেয়ে থাকবে সেখান থেকে চলা-ফেরা না করে । আর চেষ্টা করবে যে , যে সময়গুলো সাধারণত রাস্তা-ঘাট একটু খালি থাকে তখন তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নেয়ার এবং চলা-ফেরা করার সময় রাস্তার কিনার দিয়ে অথবা ফুটপাত দিয়ে যাওয়া-আসা করবে যাতে করে কম লোকের দৃষ্টিতে পড়ে ।

আল্লাহ্ সুবহানাহু তা ’ য়ালা বলেছেন :

) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ(

হে রাসূল! ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চোখকে নিচের দিকে রাখে (এবং নামাহরামদের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকে) ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে ।231

6- মুসলমান নারীর অলংকার :

রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন :

সচ্চরিত্রতা বা সতীত্ব হচ্ছে নারীর অলংকার ।232

রাসূল (সা.) বলেছেন :

সর্বোত্তম যে জিনিসটি দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা ’ য়ালা তাঁর বান্দাদেরকে অলংকৃত করিয়েছেন তা হচ্ছে ধর্ম ও সতীত্বের ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র থাকা ।233

7- নির্জনতা পরিহার করা :

আর যে বিষয়ে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে যে , নারী ও নামাহরাম পুরুষ নির্জনে থাকাকে অর্থাৎ এমন স্থানে অবস্থান করা যেখানে তারা ব্যতীত অন্য আর কেউ নেই এবং মানুষের যাওয়া-আসার ব্যবস্থাও সেখানে নেই ।

অনেক রেওয়ায়েতে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে যেমন :

ইবনে আব্বাস রাসুল (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : কোন পুরুষ যেন নারীর সাথে নির্জনে না থাকে যদি তার মাহরাম উপস্থিত না থাকে ।234

নারীদেরনির্ধারিত গোসলগুলি

ওয়াজিব গোসলগুলির মধ্যে তিনটি গোসল , অর্থাৎ ঋতুস্রাব , ইসতেহাযা ও নেফাসের গোসল যা শুধুমাত্র নারীদের উপর ওয়াজিব । জরায়ু থেকে রক্তপাত হওয়াটাই এ গোসলগুলির কারণ এবং প্রত্যেকটির কিছু বৈশিষ্ট্যও আছে যা নিম্নরূপ :

ঋতুস্রাবের গোসল

যখন ঋতুস্রাবের রক্তপাত শেষ হয়ে যাবে , তখন নারীকে নামায এবং অনান্য যে কাজগুলির জন্য পবিত্র থাকা আবশ্যক সেগুলির জন্য গোসল করতে হবে ।235

ঋতুস্রাবের রক্তের লক্ষণসমূহ :

এ রক্ত বালেগ হওয়ার আগে দেখা যায় না , আর যদি কোন মেয়ে বালেগ হওয়ার আগে দেখতে পায় তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না । (হতে পারে কোন মেয়ে বালেগ হয়েছে কিন্তু ঋতুস্রাবের রক্তপাত হয় নি কারণ এর উপর বংশগত , আবহাওয়া ও খাওয়া দাওয়ার বিশেষ প্রভাব রয়েছে । যেমন বর্তমানে সাধারণত 12-13 বছরে মেয়েদের প্রথম রক্তপাত হয় । )

ক) - যে সব নারীরা সৈয়দ বংশের তাঁরা 60 বছর পর্যন্তও যারা সৈয়দ নয় তারা 50 বছর পর্যন্তএ রক্ত দেখতে পায় , আর যদি এরপরও কোন রক্ত দেখে তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না ।

খ) - রক্তপাত 3 দিনের কম হবে না , অতএব যদি তিন দিনের আগে শেষ হয়ে যায় , তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত নয় । (তবে যদি প্রথমে তিন দিন অথবা তার বেশি রক্তপাত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় , অতঃপর পুনরায় কয়েকদিন রক্তপাত হয় ও প্রথম ও দ্বিতীয় রক্তপাত মাঝে বন্ধ থাকা দিনগুলি সহ দশ দিনের বেশী না হয় তাহলে ঋতুস্রাব বলে গণ্য হবে না । )

গ) - রক্তপাত দশ দিনের বেশী থাকবে না , অতএব যদি দশ দিনের বেশী থাকে তাহলে দশ দিন পর থেকে ঋতুস্রাবের রক্ত নয় বরং তা এসতেহাযার রক্ত বলে পরিগণিত হবে ।

ঘ) - রক্তপাত প্রথম তিন দিন একাধারে অব্যাহত থাকবে -যদিও ভিতরে রক্ত থাকে ও বেরিয়ে না আসে- সুতরাং যদি দুই দিন রক্তপাতের পর এক দিনের জন্য রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্য আরেকদিন রক্তপাত হয় , তাহলে প্রথম থেকেই তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না ।

ঙ) - দুই মাসের ঋতুস্রাবের মধ্যে অবশ্যই দশ দিন ব্যবধান থাকতে হবে । অতএব ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবার পর যদি দশ দিন ব্যবধানের আগেই রক্তপাত হয় তবে দ্বিতীয় রক্তপাতটি ঋতুস্রাবের রক্ত নয় ।

চ) - ঋতুস্রাবের রক্ত সাধারণত ঘন , গাঢ় ও গরম হয়ে থাকে এবং অল্প জ্বালাপোড়া ও চাপের সাথে বেরিয়ে আসে ।236

ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান :

ঋতুস্রাব অবস্থায় এই কাজগুলি নারীদের জন্যে হারাম

(ক) নামাজ পড়া ও কাবাঘরের তাওয়াফ করাসহ যেসব ইবাদতের জন্যে ওযু , গোসল অথবা তায়াম্মুম করতে হয় ।

(খ) যে সমস্ত কাজগুলি জুনুব ব্যক্তির (যে ব্যক্তি সহবাসের পর শরীয়ত নির্ধারিত গোসল করে পবিত্র হয় নি) জন্যে হারাম যেমন মসজিদে অবস্থান করা ।

(গ) সহবাস যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই হারাম ।237

এ অবস্থায় নামাজ ও রোযা নারীর জন্য ওয়াজিব নয় এবং এ সময় না পড়া নামাজগুলির কাযা করতে হবে না , তবে অবশ্যই রমযান মাসে ঋতুস্রাব অবস্থায় যে রোযাগুলি রাখে নি পরে তা কাজা করতে হবে ।238

ইসতিফতায়াত (ধর্মীয় মাসয়ালার জবাব) :

প্রশ্ন : হজ্জের সময় কিংবা অন্যান্য কোন সময়ে যে মহিলারা চায় না ঋতুস্রাব হোক , তা বন্ধ রাখার জন্য ঔষধ খাওয়াতে কি অসুবিধা আছে ?

উত্তর : ক্ষতিকর না হলে অসুবিধা নেই ।239

ঋতুস্রাবের শুরুতে নারীর কর্তব্য240 :

রক্তপ্রবাহের বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং সে অবস্থায় থাকা নারীদের জন্য ব্যবহৃত ইসলামী পরিভাষা ও তাদের করণীয় বিষয়সমূহ

(1) এতদিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব ছিল না , এমন কোন মেয়ের প্রথমবার ঋতুস্রাব হলে তাকে মুবতাদি ” বলা হয় ।

(2) প্রথম ঋতুস্রাব নয় , তবে এখনও পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট অভ্যাস হয়ে ওঠে নি এমন নারীকে মুযতারেব ” বলা হয় ।

(3) ঋতুস্রাব নিয়মিত দিনগুলিতে হয় , যেমন সর্বদা পাঁচ দিন রক্তপাতের পর বন্ধ হয়ে যায় , কিন্তু ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার সময়টি নিয়মিত নয় এমন নারীকে আদাদিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লেখিত তিন ধরনের নারীর করণীয় : এ তিন ক্ষেত্রে রক্তপাতের প্রথম থেকেই যদি ঋতুস্রাবের রক্তের লক্ষণগুলি থাকে অথবা বিশ্বাস হাসিল হয় যে , এ রক্তপাত তিন দিন ধরে অব্যাহত তাহলে তা ঋতুস্রাবের রক্ত হিসেবে ধরা হবে এবং ঋতুস্রাবের আহ্কাম অনুসরণ করতে হবে । )

(4) ঋতুস্রাবের দিনগুলি নিয়মিত নয় যেমন কখনও পাঁচ দিন পর বন্ধ হয়ে যায় , আবার কখনও ছয় দিন পর , কিন্তু ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার দিনটি নিয়মিত যেমন সর্বদা পঁচিশ দিন বন্ধ ও পবিত্র থাকার পর পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হয় তাকে ওয়াক্তিয়া ” বলা হয় ।

(5) ঋতুস্রাবের দিনগুলি এবং রক্তপাত শুরুর সময় (তারিখ) নিয়মিত যেমন সর্বদা বিশ তারিখে রক্তপাত শুরু হয় এবং পাঁচ দিন পর বন্ধ হয়ে যায় তাকে ওয়াক্তিয়া ও আদাদিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লিখিত দুই ধরনের নারীর করণীয় : এ দুই ক্ষেত্রে , যেহেতু রক্তপাত শুরু হওয়ার সময় নির্দিষ্ট আছে সেহেতু প্রথম থেকেই ঋতুস্রাবের রক্ত হিসেবে ধরা হবে এবং ঋতুস্রাবের আহ্কাম অনুসরণ করতে হবে । )

(6) ঋতুস্রাবের নিয়মিত রীতি অনুযায়ী ছিল কিন্তু এখন ভুলে গিয়েছে তাকে না ’ সিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লিখিত ক্ষেত্রে করণীয় : যদি রক্তপাতে ঋতুস্রাবের লক্ষণগুলি দেখা যায় এবং নিশ্চিত থাকে যে এ রক্তপাত তিন দিন ধরে অব্যাহত থাকবে তাহলে সেটিকে ঋতুস্রাব বলে হিসেব করা হবে এবং ঐ আহ্কামের অনুসরণ করতে হবে । )

রক্তপাত শেষে নারীর করণীয় :

1- ঋতুস্রাব শেষে যখন রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে , তখন নারীকে অবশ্যই ঋতুস্রাবের গোসল করতে হবে এবং নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতগুলো শুরু করতে হবে ।241

2- ঋতুস্রাবের ও জানাবাতের গোসলের মধ্যে শুধুমাত্র নিয়ত ছাড়া অন্য কোন তফাৎ নেই ।242 3- শুধুমাত্র ঋতুস্রাবের গোসল করে নামাজ পড়া যাবে না বরং গোসলসহ ওযু করতে হবে । আর যদি গোসলের আগে ওযু করে তবে তা বেশী ভাল 243

ইসতিহাযা ও নিফাসের গোসল :

ইসতিহাযা : অন্য আরেকটি রক্ত যা কখনো কখনো মহিলাদের জরায়ু থেকে বের হয়ে থাকে , তাকে ইসতিহাযা বলা হয় । ইসতিহাযার রক্ত সাধারণত হলুদ রং , ঠান্ডা , চাপ ও জ্বালাপোড়া ছাড়াই প্রবাহিত হয় । এ রক্ত সাধারণতঃ ঘন নয় , তবে কখনো আবার গাঢ় রঙ্গের , ঘন এবং কিছুটা উষ্ণ হয়ে থাকে ও চাপের সাথে বের হওয়ার সম্ভাবনাও আছে ।244 যে নারীর ইসতিহাযার রক্তপাত হয় , তাকে মুসতাহাযা ” বলা হয় । ”

ইসতিহাযার প্রকারভেদ :

ইসতিহাযার রক্ত কম ও বেশীর দিক থেকে তিন ভাগে বিভক্ত হয় । অল্প পরিমান , মধ্যম পরিমান ও বেশী পরিমান । এই শ্রেণী বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে প্রতিটির ক্ষেত্রে নারীর কর্তব্যগুলিও ভিন্ন রকম হবে ।245

রক্তপাত অল্প পরিমান হলে মুসতাহাযার কর্তব্য :

যদি রক্তের প্রবাহ শুধু প্যাডের ( PAD) একপাশে লেগে থাকে কিন্তু তার ভিতরে প্রবেশ না করে এবং তার অপর দিক থেকে বেরও না হয় এমন রক্তপাতকে অল্প পরিমানের ইসতেহাযা বলা হয়।

নারীকে তখন নামাজ পড়ার জন্য নিজের শরীরকে পবিত্র করতে হবে । প্যাডটি পাল্টাতে হবে ও ওযু করতে হবে । সুতরাং অল্প পরিমানের ইসতেহাযা হলে গোসল করতে হবে না ।246

রক্তপাত মধ্যম পরিমান হলে মুসতাহাযার কর্তব্য :

যখন রক্তের প্রবাহ প্যাডের ভিতরে প্রবেশ করে কিন্তু অপরদিক দিয়ে বের হয় না এমন রক্তপাতকে মধ্যম পরিমানের ইসতেহাযা বলে ।

তখন নারীকে যে নামাযটির আগে রক্তপাত মধ্যম পরিমানে হয়েছে সে নামাযটি পড়ার জন্য , যে কর্তব্যগুলি অল্প পরিমান রক্তপাতের জন্য বলা হয়েছে সেগুলি সহ গোসলও করতে হবে এবং যতদিন পর্যন্ত এই রক্তপাত চলবে প্রত্যেক দিনের জন্য মাত্র একবার প্রথম নামাজ পড়ার আগে গোসল করতে হবে । সুতরাং মধ্যম পরিমানের ইসতেহাযার জন্য প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় একবার গোসল করলেই যথেষ্ট হবে এবং সম্পুর্ণভাবে রক্তপাত শেষ হয়ে গেলেও প্রবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করতে হবে ।247

রক্তপাত বেশী পরিমান হলে মুসতাহাযার কর্তব্য :

যখর রক্তপাত এতই বেশি পরিমানে হয় যে প্যাডের অপর পাশ থেকে বের হয়ে যায় তখন তাকে বেশি পরিমানের ইসতেহাযা বলা হয় । তখন নারীর কর্তব্য হচ্ছে , যে সমস্ত কাজগুলি রক্তপাত অল্প পরিমান হলে বলা হয়েছে (প্যাড পাল্টানো অথবা ধোয়া) সেগুলিসহ প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসলও করতে হবে । তবে যদি যোহর ও আসরের নামায একসাথে পড়ে এবং দুই নামাযের মধ্যে কোন ব্যবধান না রাখে , তাহলে দুই নামাযের জন্য একটি গোসলই যথেষ্ট এবং মাগরিব ও এশার নামাজের জন্যও এরূপ করতে হবে ।248

কয়েকটি মাসয়ালা :

1- মধ্যম পরিমান ও বেশি পরিমান রক্তপাত শেষে নারীকে অবশ্যই গোসল করতে হবে ।249

2- শুধুমাত্র নিয়ত ছাড়া ইসতেহাযার গোসলের সাথে অন্যান্য গোসলের কোন তফাৎ নেই ।

3- শুধুমাত্র ইসতেহাযার গোসল করাতেই নামাজ পড়া যাবে না , গোসলসহ ওযুও করতে হবে।250

নিফাসের গোসল :

নিফাসের গোসল শুধুমাত্র সন্তান প্রসবের সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন সময়ের জন্য নয় এবং সন্তান প্রসবের পর যে রক্তপাত হয়ে থাকে তা শেষে নারীকে প্রবিত্র হওয়ার জন্য এ গোসল করতে হয় ।

1- নিফাসের রক্তপাত এক মুহুর্তের জন্যও হতে পারে আবার কয়েকদিন ধরেও হতে পারে তবে দশ দিনের বেশি হবে না । আর যদি হয় তাহলে দশ দিনের পর থেকে নিফাসের রক্ত হিসাব হবে না ।251

2- নারীকে অবশ্যই নিফাসের রক্তপাত শেষে গোসল করতে হবে এবং নামায ও অন্যান্য ইবাদতগুলি আঞ্জাম দিতে হবে । তবে কিছু কিছু এলাকায় প্রচলন আছে যে সাতদিন অথবা দশদিন পরই গোসল করতে হবে -যদিও তার আগেই রক্তপাত শেষ হয়ে যায়- তা সম্পূর্ণ ভুল ও সঠিক নয় ।252

3- যে সমস্তকাজগুলি ঋতুস্রাবের সময় নারীদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল নিফাসের সময়ও সেগুলি নিষিদ্ধ বা হারাম ।253

4- নিফাসের গোসল ও অন্যান্য গোসলগুলির সাথে শুধুমাত্র নিয়ত ছাড়া অন্য কোন তফাৎ নেই এবং নামাযের জন্য শুধু গোসলই যথেষ্ট নয় বরং নারীকে গোসলসহ ওযুও করতে হবে ।254