একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন11%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44431 / ডাউনলোড: 5205
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

1

১৮- বেপর্দা ও সঠিক পর্দা না করা নারীর মূল্য মাটির থেকেও কম :

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭ ﺍﻟﻔﻀﺔ، ﻫﻰ خیر ﻣﻦ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭ ﺍﻟﻔﻀﺔ ﻭ ﺍﻣﺎ ﻃﺎﳊﺘﻬﻦ ﻓﻠﻴﺲ ﺧﻄﺮﻫﺎ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ، ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ خیر ﻣﻨﻬﺎ

নারীর কোন মূল্য নেই , না ভালদের আর না মন্দদের । তবে যারা ভাল তাদের মূল্য স্বর্ণ ও রৌপ্যের সাথে তুলনা যোগ্য নয় , কেননা তারা সেগুলোর থেকেও অনেক বেশী উত্তম । আর যারা মন্দ তারা মাটির সমতূল্য নয় কেননা মাটি তাদের থেকে অনেক উত্তম ।১২৪

এই হাদীসটি এ কথাই বলতে চায় যে , নৈতিক মানদন্ডে নারীর মূল্য আছে এবং তার মর্যাদা এই পৃথিবীর কোন বস্তুর সাথে তুলনা করা সম্ভব নয় । তবে এটা তো প্রকৃতিগত ব্যাপার যে , সমাজে যে যতটা বেশী ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে ততটা বেশী নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকাও সেই রাখতে পারে । তাই সমাজে যে যত বেশী ভাল ভুমিকা রাখতে পারবে সে ততবেশী সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত হবে । আর যে যত বেশী মন্দ ভূমিকা রাখবে সে ততবেশী তিরস্কৃত হবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : পবিত্র নারী স্বর্ণ ও রৌপ্যের থেকেও উত্তম । কেননা উত্তম সন্তান গড়ে তোলার যে দায়িত্ব নারীর উপর রয়েছে সে যদি ঐ দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে তবে সমাজের প্রতিটি শিশুকে বিশিষ্ট ব্যক্তি রূপে গড়ে তোলা সম্ভব যার দ্বারা এ পৃথিবীকেও পরিবর্তন করা সম্ভব । তাই যে নারী একটি শিশুকে যোগ্যভাবে গড়ে তুললো সে নারীর মূল্য স্বর্ণ ও রৌপ্যের সাথে তুলনা করা যায় না । অন্য দিকে , যদি খোদাভীতিশূন্য কোন নারী সমাজকে ফিতনা-ফ্যাসাদের দিকে নিয়ে যায় এবং সমাজের সকলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় তাহলে সে অন্য সকল প্রাণীর থেকে অধম । তাকে মাটি বা কোন পশুর সাথেও তুলনা করা যায় না । কেননা মাটি , প্রাণী ও গাছ-পালা তো সমাজের উপকার করে থাকে । কিন্তু যে সমাজকে নবীগণ (আ.) , সৎ মানুষ ও শহীদগণ তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সাজিয়েছেন ঐ অধম নারী সে সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ।

১৯- বে-পর্দা ও সঠিক পর্দা না করা নারীরা হচ্ছে শয়তানের চোখের জ্যোতি :

ইবলিস সকল নবীর নিকটে যেত । তবে নবীদের মধ্যে হযরত ইয়াহিয়া (আ.)-এর কাছে বেশী যেত । একদিন তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন যে , কিভাবে মানুষকে পথভ্রষ্ট কর ? ততক্ষণাৎ ইবলিস তার পথভ্রষ্ট করার উপকরণগুলো গুণতে শুরু করলো । তারপর তিনি তার কাছে প্রশ্ন করলেন :

এই উপকরণগুলোর মধ্যে কোনটি তোমার চোখ ও অন্তরকে আলোকিত করে ? শয়তান বলল : নারী , তারাই হচ্ছে আমার শিকারের উত্তম স্থান ও ফাঁদ স্বরূপ যখন বেশী সংখ্যায় ভাল মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চাই তখন নারীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে থাকি । আর তাদের মাধ্যমেই আমার চোখ ও অন্তর আলোকিত করে থাকি ।১২৫

দ্রষ্টব্য:

১- এই হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় যে , মানুষের দূর্ভাগ্যের কারণ হচ্ছে তাকওয়াহীন নারী । যা অতীতেও ইতিহাস সাক্ষ্য দিয়েছে ।

আর এই যে , শয়তান বলেছে : (ভাল ও উত্তম মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য নারীদেরকে ব্যবহার করে থাকি) এর দ্বারা এটা বুঝা যায় যে , তাকওয়াহীন নারী ঈমানদার ব্যক্তির জন্য বিশেষ হুমকি স্বরূপ । আর এটা মুত্তাকিদের জন্যও বিপদ সংকেত হতে পারে যাদের কিনা বিন্দু মাত্র সময়ের জন্যও আল্লাহ তা ’ য়ালার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় না ।

বিবেকও সমাজের দৃষ্টিতে বেপর্দা ও কঠিনভাবে পর্দা না করার কঠিন পরিণতি

বে - পর্দায় থাকা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী স্বামীর অধিকারকে নষ্ট করে :

আল্লাহ্ তা ’ য়ালা শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে দিয়েছেন । এগুলোর প্রকৃত মালিক হচ্ছেন তিনিই । যখন কোন নারীর বিয়ে হয়ে যায় তখন তার দেহ , মন ও সাজসজ্জা সব কিছুই স্বামীর সাথে সম্পর্কিত হয়ে যায় । আর তা সর্বসাধারণের সামনে উপস্থাপন করা তার জন্য কখনই বৈধ নয় ।

রাসূল (সা.) বলেছেন :

যে নারী নিজেকে তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্যে সুগন্ধিযুক্ত ও সাজসজ্জা করে , আল্লাহ তা ’ য়ালা তার নামাযকে ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন না — যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানাবাতের গোসলের (শারীরিক অপবিত্রতাজনিত বিশেষ গোসল) ন্যায় গোসল করে (যদিও এটি মুস্তাহাব গোসল হিসেবে গণ্য) ।১২৬

বে-পর্দায় থাকা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী স্বামীর অন্তর জয় করতে পারে না :

যে নারীর লজ্জা যত বেশী সে তার স্বামীর উপর তত বেশী অধিকার রাখে । আর যে নারীর লজ্জা-শরমের কোন বালাই নেই এবং আল্লাহকে ভয় করে না সে তার স্বামীর আদর-ভালবাসা অর্জন করতে পারে না ।

বে - পর্দায় থাকা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা জ্ঞান অর্জনেও সফল নয় :

যে নারী যত বেশী শালীন , সে লেখা-পড়াতেও তত বেশী সফল । কেননা জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় স্থির মস্তিস্কের , তাই যে নারী বা মেয়ে সকল সময় নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার জন্য ব্যস্ত থাকে । প্রতিনিয়ত অন্যদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে নিজেকে বিভিন্ন রূপে সাজিয়ে থাকে । যেহেতু লেখা-পড়ায় সে ভালভাবে মনোযোগ দিতে পারে না তাই জ্ঞান অর্জনে সফল হতে পারে না ।

বে-পর্দায় থাকা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী এ অপছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে নিজের অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে :

এর কারণ হলো সে তার সৌন্দর্য্যকে না - মাহরাম বা বেগানা মানুষদের সামনে উপস্থাপন করে । সে তার এ কাজের মাধ্যমে কোন হৃদয়সমূহকে আকর্ষণ করে ? অবশ্যই বলতে হয় : উক্ত কাজের মাধ্যমে সে নষ্ট যুবক , চরিত্রহীন খারাপ প্রকৃতির লোকদের হৃদয়কে আকর্ষণ করে । প্রকৃত মুসলমান ও মু মিন ব্যক্তিগণ এ সব কাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ । এই ধরনের ব্যক্তিদের হৃদয় কাড়াতে দুনিয়া বা আখিরাতে কোন উপকার হবে কী ? অবশ্যই বলতে হয় : দুনিয়া ও আখিরাতে এ সবের কোন মূল্য নেই । আল্লাহ্ তা য়ালা নেয়ামত হিসেবে শরীরের সুস্থতা ও সৌন্দর্য্য আমাদেরকে দিয়েছেন । আর তা আমানত হিসেবে দিয়েছেন । আমাদের কোন অধিকার নেই যে , আমাদের হৃদয় বা অন্তর যেভাবে চায় এবং যা করতে চায় তাই করবো । যেহেতু আল্লাহ তা য়ালা আমাদেরকে এত নেয়ামত দান করেছেন সেগুলোর আমানতদারীর উত্তম পন্থা হচ্ছে তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করবো । ঐরূপ মানুষের হৃদয় কাড়ার কোন প্রয়োজন নেই যারা নিজেদের শয়তানী ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে নারীদেরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । আসলে কি এটা উচিৎ যে , নারী দুষ্ট লোকের হৃদয় হরণের মাধ্যম হবে ?

বে-পর্দায় থাকা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা হচ্ছে ব্যক্তিত্বহীন :

ইতিহাসের পাতায় নারী সেই প্রথম থেকেই পুরুষের পাশাপাশি তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে । উদাহরণ স্বরূপ , আসিয়া তার স্বামী ফিরআউনের সাথে , হযরত খাদিজা (আ.) রাসূল (সা.)-এর পাশে থেকে আবু সুফিয়ানের সাথে , হযরত ফাতিমা (আ.) ইমাম আলী (আ.)-এর পাশে থেকে মুনাফিকদের সাথে , হযরত যয়নাব (আ.) তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন (আ.) এর পাশে থেকে ইয়াযিদের সাথে ইত্যাদি । প্রকৃত পক্ষে পুরুষেরা হচ্ছে তলোয়ার চালনায় পারদর্শী আর নারীরা হচ্ছে যোদ্ধা তৈরীতে পারদর্শী । যে নারী এরূপ মর্যাদার অধিকারী , কেন সে চুপ হয়ে বসে থাকবে যখন কিনা সমাজের এক শ্রেণীর লম্পট লোক নারীদেরকে কামভাব চরিতার্থ করার উপকরণ বানানোর চেষ্টায় নিয়োজিত ।

সমাজে হয়তো এমন অনেক নারী রয়েছে যারা সঠিক শিক্ষা পায় নি , নিজেদের ব্যক্তিত্বকে সঠিকভাবে গড়ার সুযোগ তাদের হয় নি , পরিবারে আদর , ভালবাসার ঘাটতি হয়েছে কিন্তু তাই বলে তো তারা নিজেদের না পাওয়ার ব্যথা নিবারণের জন্য নিজেদেরকে অসভ্য , চরিত্রহীন ও দুষ্ট প্রকৃতির ব্যক্তিদের সামনে তুলে ধরতে পারে না । কেননা তাদের এই না পাওয়ার ব্যথা নিবারণ করা এ ধরনের শয়তানী কাজ করার মাধ্যমে সম্ভব নয় , বরং এগুলো করাতে তারা মানসিক দিক দিয়ে আরো বেশী পরিমানে হতাশা অনুভব করবে এবং শরীরিকভাবে কুৎসিত ও সমাজের দৃষ্টিতে ঘৃণার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হবে । আর শেষ পর্যায়ে এ কাজগুলো তাদের জন্য লজ্জা , অপমান ব্যতীত অন্য কিছুই বয়ে আনবে না ।

বে-পর্দায় থাকা ও সঠিকভাবে পর্দা না করাটা হচ্ছে এক ধরনের শিরক :

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা আল্লাহর উপাসনা করার স্থলে নতুন নতুন মডেল বা ফ্যাশনের উপাসনা করে থাকে , আর তা হচ্ছে এক ধরনের শিরক । যদি কোন নারীর কয়েকটি পোশাক থাকে এবং তা যদি অপচয়ের মাত্রায় না পড়ে ও তা পরলে তার স্বামী খুশি হয় তবে তা পরা অত্যন্ত পছন্দনীয় ও উত্তম ব্যাপার । তবে এরূপ যেন না হয় যে , নারীর সব সময়ের চিন্তা এ জাতীয় বিষয়কে নিয়ে আবর্তিত হবে । কেননা যদি এমন হয় যে , ফ্যাশন করার উদ্দেশ্যে স্বামীকে তা কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং তা কিনে দিতে ধার-দেনা করতে গিয়ে স্বামীকে লজ্জায় পড়তে হয় , তবে এটা ঐ নারীর জন্য একটি বড় ধরনের পাপ ।

বে-পর্দায় থাকা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী কোন কিছু উৎপাদন করার স্থলে খরচ করে থাকে :

বে-পর্দায় থাকা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা কোন কিছু উৎপাদন তো করেই না বরং খরচ করে থাকে । আর সে যে খরচ করে তাতে কোন লাভও আসে না । কিন্তু অন্য নারীরা খরচ করলেও সমাজের জন্য তা সুফল বয়ে নিয়ে আসে । যেমন উপযুক্তভাবে সন্তান লালন-পালন , সংসার চালনা , হাতের কাজ , লেখা-পড়া করা ইত্যাদি । অন্য দিকে বে-পর্দায় থাকা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীরা এ সব কিছু না করেই নিজেদের ব্যাপারে যে খরচ করে থাকে তা সমাজের তো কোন উপকারেই আসে না , বরং তা ক্ষতিকারকও বটে । কেননা তাদের ঐ নষ্ট কাজের কারণেই সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয় এবং তার মাধ্যমে মানুষ ধ্বংস প্রাপ্ত হয় ।

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে হিজাব না করা নারীরা মানসিক অশান্তিতে ভোগে :

যখন কেউ নতুন নতুন পোশাক ও ফ্যাশনের পেছনে ছোটাকেই তার লক্ষ্য মনে করে তখন সে মশুধাত্র তা জোগাড় করার কাজেই ব্যস্ত থাকে । যেহেতু তা জোগাড় করা কোন সহজ ব্যাপার নয় বা কোন কোন সময় তা পাওয়াই যায় না , তখন তার মনে সব সময় অশান্তিও অস্থিরতা বিরাজ করে । এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে , সে যেন কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে তা আর খুঁজে পাচ্ছে না । পোশাক বা ফ্যাশনের পেছনে ছোটা এই বে-পর্দা বা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীদের এই ধরনের অস্থিরতা কখনোই শেষ হয় না । কেননা মানুষ সত্তাগত ভাবেই লোভী প্রকৃতির তাই যদি তার কাজের ক্ষেত্রে তাকওয়া ও ধার্মিকতা না থাকে তবে সে কখনোই কোন কিছু থেকেই যেমন পদমর্যাদা , অর্থ-বিত্ত ও কামভাব থেকে তুষ্ট হয় না । আর যতক্ষণ তারা পরিতৃপ্ত না হয় ততক্ষণ তাদের মানসিক অশান্তি অব্যাহত থাকে ।

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা ও তাকওয়াহীন নারী দেরীতে বিয়ে করে :

যখন কোন যুবক বিয়ে করতে চায় তখন সে চিন্তা করে যে , তার এমন একজন জীবন সঙ্গী দরকার যে হবে দ্বীনদার , সুশ্রী , নৈতিকতা সম্পন্ন এবং ভদ্র পরিবারের । সাথে সাথে মেয়েটি এমন হবে যেন তার সাথে সংসার করতে পারে । যেন সে প্রতিনিয়ত তার জন্য নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি না করে । তাই মেয়ে দেখার সময় তারা তাদের মা , বড় বোন বা বয়োজ্যোষ্ঠদেরকে এ কথাগুলো বলে থাকে যাতে করে তারা যেন মেয়ের মধ্যে ঐসব বৈশিষ্ট্য গুলো খুটিয়ে দেখেন । এ থেকে এটা বুঝা যায় যে , যুবকরা বে-পর্দা ও তাকওয়াহীন নারীকে (যারা প্রতিনিয়ত সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে) ঘৃণা করে থাকে ।

সুতরাং একজন বিবেক সম্পন্ন যুবক অবশ্যই বিয়ের আগে তার স্ত্রী সম্পর্কিত ব্যাপারে উক্ত বিষয়গুলো চিন্তা করে থাকে । অতএব তারা কখনোই ঐ সব নারী যারা বে-পর্দায় থাকে ও তাকওয়াহীন তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না । যে মেয়েকে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখতে যাবে তার ব্যাপারে যদি জানতে পারে যে , সে মেয়ে ঐরূপ বাজে স্বভাবের তবে তাকে দেখতে যাওয়া থেকেও বিরত হয়ে যায় । এরূপ অনেক ঘটনাই আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে রয়েছে , এসব কারণেই তাকওয়াহীন বেপর্দা মেয়েদের দেরিতে বিয়ে হয়ে থাকে । আর সে কারণে তারা মানসিক দিক দিয়ে অনেক কষ্টও পেয়ে থাকে । অনেক সময় এই মানসিক কষ্টের কারণে তারা শরীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে ।

যে সকল যুবক বা পুরুপ ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যদা বোধ সম্পন এবং তাদের এই ব্যক্তিত্ববোধ দৃঢ় ঈমান ও আত্মিক পবিত্রতা হতে উৎসারিত হয়েছে তারা কখনোই এটা মেনে নিতে পারে না যে , এমন মেয়ের সাথে বিয়ে করবে যারা হচ্ছে বে-পর্দা ও তাকওয়াহীন এবং যাদের বর্ণনা লোকের মুখে মুখে রয়েছে । তবে যদি কোন মেয়ের ব্যাপারে বুঝা যায় যে , সে তার অতীত বিষয়ে অনুতপ্ত সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্নরূপ নিতে পারে ।

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীর সংসার দ্রুত ভেঙ্গে যায় :

যদি ফ্যাশন ও আধুনিকতাই জীবনের সকল কিছুর মানদণ্ড হয়ে থাকে তবে যেহেতু তা অতি দ্রুত পুরাতন হয়ে যায় ও তার কাঙ্খিত অবস্থায় থাকে না , সেহেতু নিজের চাওয়া-পাওয়া অপূর্ণ থেকে যায় ।

যেহেতু এই ধরনের পরিবারগুলোতে জীবন সঙ্গী নির্বাচনের সময় বুদ্ধি ও বিবেকের আশ্রয় নেয়া হয় না সেহেতু উক্ত পরিবারগুলো দ্রুত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং যে কোন সময় সংসার জীবন ধ্বংস বা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে পারে । শেষ পর্যন্ত তাদের তালাক নেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা থাকে না । আর এই অপরাধের শাস্তিভোগ করে থাকে তাদের সন্তানরা এবং সন্তানরা বড় হয়ে অধিকাংশই হয় পথভ্রষ্ট ।

বে-পর্দা ও সঠিক পর্দা না করা নারী আল্লাহর খলিফা না হয়ে মানুষের হাতের খেলার পুতুল হয়ে থাকে :

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী পৃথিবীর বুকে আল্লাহ তা ’ য়ালার খলিফা না হয়ে নিজেকে চরিত্রহীন লোকদের হাতের খেলার পুতুলে পরিণত হয় । যেখানে বলা হচ্ছে যদি কোন নারী তার সম্ভ্রম রক্ষা করে এবং লজ্জাবোধকে জীবনের মূল হিসেবে গ্রহণ করে ও তার সন্তানদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলে সমাজে উপহার দেয় তবে তার এই কাজ নবীদের কাজের সমতুল্য । সুতরাং নারী নিজেকে খেলার পুতুল রূপ না দিয়ে নবীদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী অর্থহীন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করে :

একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব যে , সে জ্ঞান চর্চা , হস্তশিল্প , কারু শিল্প প্রভৃতি বিষয়ে অন্যদের সাথে প্রতিয়োগিতা করে এবং নিজে নৈতিক ও সামাজিকভাবে পরিপূর্ণতায় পৌঁছাবে , যেভাবে অনেক নারীই বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে পুরুষের থেকে এগিয়ে রয়েছে । কিন্তু বে-পর্দা ও তাকওয়াহীন নারীরা আধুনিকতার নামে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে সাজসজ্জা , ফ্যাশন , প্লাস্টিক সার্জারী , ভ্রুতোলা , নখ রাখা ও তার পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়ে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় । এ বস্তুগুলো সুতা , পশম ও প্লাস্টিক নির্মিত কিছু বস্তু বৈ কিছু নয় । বস্তুত ফ্যাশন , সাজসজ্জা নিয়ে প্রতিযোগিতা এসব বস্তু নিয়েই প্রতিযোগিতার শামিল যা কিছু দিন পর আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয় ।

বে-পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা তাকওয়াহীন নারী নিজেকে মূল্যহীন করে থাকে :

যেখানে নারীদের জন্যে লজ্জা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তা রক্ষা করা একান্ত জরুরী , আর তা রক্ষা করলে সকলেই তাকে মূল্য দেয় ও বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে কিন্তু তাকওয়াহীন তা না করে নিজেকে বে- পর্দা করে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার মাধ্যমে নিজেকে মূল্যহীন করে ফেলে ।

বেপর্দা ও সঠিক পর্দা না করা নারীরাও বেপর্দার মন্দ প্রভাবের শিকার হয় :

বেপর্দা ও তাকওয়াহীন নারীদের অশালীন ভাবভঙ্গীও বিভিন্ন শয়তানী কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের প্রতি ঈমানহীন লোকেরা আকৃষ্ট হয়ে থাকে । সে কারণেই কখনো দেখা যায় যে , এ ধরনের নারীদের কারণে অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যায় । অবশেষে এই তাকওয়াহীন নারীরা একটি বা কয়েকটি পরিবার ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে থাকে । আর এভাবেই তারা এই ন্যাক্কার জনক কাজের মাধ্যমে মহা পাপে লিপ্ত হয়ে থাকে ।

তবে অবশ্যই বলতে হয় যে , হে নারী আপনি তো এমন করলেন তবে এটাও জেনে রাখুন আপনার থেকেও অধিক সুন্দরী নারী রয়েছে এবং সে আপনার সংসার ও আপনার পরিবারেও অশান্তির সৃষ্টি করবে । প্রকৃত পক্ষে আপনি একটি পাথর ছুড়েছেন , কিন্তু পাথরটি ফিরে এসে আপনার দিকেই ফিরে আসবে । ”

পাশ্চাত্যেরন্যায় বেপর্দা ও তাকওয়াহীন নারীদের মধ্যে নৈতিক অনাচার , জুলুম এবং গর্ভপাতের মত আরো অনেক জঘন্য কাজ করার প্রবণতা বেশী দেখা যায় :

যদি কোন রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র না হয়ে থাকে , তাহলে এমন কোন ক্ষমতা নেই যে সে রাষ্ট্রের জুলুম-অত্যাচার , খুন , রাহাজানি ইত্যাদিকে বন্ধ করতে পারে , যদিও সে রাষ্ট্র আধুনিক অস্ত্র , সামরিক ও গোয়েন্দা বিভাগের ক্ষেত্রে যত শক্তিশালীই হোক না কেন । কেননা সে রাষ্ট্রের সরকার হয়তো পুলিশ দিয়ে বাহ্যিকভাবে ঐ সবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে । কিন্তু কোন কিছুই করতে পারবে না । কেননা যদি পারতো তবে সারা বিশ্বে জুলুম-অত্যাচার , খুন , রাহাজানি , ইত্যাদির পরিমান এত অধিক হতো না ।

সুতরাং অবশ্যই এই বাহ্যিক শক্তির সাথে অন্য আরো একটি শক্তির সমন্বয় প্রয়োজন । যাতে করে সমাজ অবক্ষয় থেকে মুক্তি পায় । আর ঐ অন্য একটি শক্তি অবশ্যই দ্বীনের কাছ থেকে নিতে হবে । কেননা যদি প্রকৃত ধর্মীয়বোধ মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে তবে গোপন ও প্রকাশ্যে অর্থাৎ সকল সময়ই মানুষের সাথে এ বোধের সহাবস্থান রয়েছে যা মানুষকে ভাল কাজের জন্য উৎসাহ এবং মন্দ কাজ করতে বাধা দিয়ে থাকে । এই শক্তি সেই আল্লাহ ও কিয়ামতের বিশ্বাস হতে উৎসারিত যা মিলিয়ন মিলিয়ন পুলিশের থেকেও সমাজের জন্য অনেক বেশী ফলদায়ক । তাই যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই বিশ্ব এই অভ্যন্তরীণ শক্তিতে পরিপূর্ণ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ ধরনের অন্যায়-অনাচার , জুলুম-নিপীড়ন চলতেই থাকবে এমনকি বর্তমান অবস্থা থেকে আরো খারাপ দিকে চলে যেতে পারে ।

পাশ্চাত্য ও ইউরোপের দেশগুলো প্রচার প্রপাগাণ্ডার মাধ্যমে বিশ্বের অধিকাংশ জাতিকে বিশেষ করে যুবকদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে , এই পৃথিবীর মানুষদেরকে বিশেষত আমেরিকাই কেবলমাত্র সকলকে সৌভাগ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিতে পারে তারা ব্যতীত অন্য কারো এমন ক্ষমতা নেই । তাদের এই ধরনের প্রচারণার মাধ্যম হচ্ছে বিশ্বের বড় বড় সংবাদ সংস্থাগুলো যেমন , আমেরিকান সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) , ইউনাইটেড প্রেস (ইউপি) , ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার , ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা (এফ পি) । এই সংবাদ সংস্থাগুলো গড়ে দৈনিক ৪৫ মিলিয়ন শব্দ ১১০ টি দেশে প্রেরণ করে থাকে । এই চার সংবাদ সংস্থা আনুমানিক ৫০০ টি রেডিও স্টেশন এবং টেলিভিশন সেন্টার থেকে খবর পরিবেশন করে থাকে । অন্যদিকে রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস হতেও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ শব্দ প্রচার হচ্ছে । এর বাইরে সি এন এন ও বিবিসি তো রয়েছেই । শুধু বিবিসির কর্মচারীর সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের অধিক । আর এই সংবাদ সংস্থাগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে কেউ কারো থেকে কম নয় । বর্তমান সময় যেহেতু স্যাটেলাইটের যুগ তাই তারা যে কত প্রকারের খবর তাতে দিচ্ছে তা গণনার বাইরে ।

প্রকৃতপক্ষে বলতে হয় যে , বর্তমান সময়টি হচ্ছে পুরাতন সেই দাস প্রথারই ধারাবাহিকতা , তবে নতুন আঙ্গিকে । কেননা অতীতে হামলা , লুট , হত্যা , রাহাজানি ইত্যাদির মাধ্যমে শাসকরা রাজ্য শাসন করতো । বর্তমান দুনিয়া যেহেতু অগ্রগতি লাভ করেছে তাই শাসকরা সেই পুরাতন পদ্ধতিকেই নতুন আঙ্গিকে রূপ দান করে দুনিয়ার সবাইকে নিজেদের গোলাম বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে । কেননা উক্ত সংবাদ সংস্থাগুলো প্রতিদিন নতুন নতুন মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে দুনিয়ার সাধারণ মানুষদের চিন্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে । আর এর মাধ্যমেই তারা তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শগুলো এবং নষ্ট সংস্কৃতিকে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে থাকে । আর এই পদ্ধতিতে তারা মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে ঐ সকল দেশসমূহের উপর অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক ও সামরিক দিক দিয়ে কর্তৃত্ব অর্জন করে থাকে । আর যখন কোন দেশ বা বিপ্লবী জাতি তাদের এই সব অপসংস্কৃতি ও অন্যায়- অত্যাচারের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ায় তখন এই সব সংবাদ সংস্থাগুলো মিথ্যা খরব পরিবেশন করে ঐ সব দেশ ও বিপ্লবী জাতিকে বিশ্বের সামনে অপরাধী ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে । কিন্তু আল্লাহ্ তা ’ য়ালার একান্ত কৃপায় ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়াতে শয়তান উপযুক্ত শিক্ষা পেয়েছে । কেননা আল্লাহ্ তা ’ য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন যে , যদি মু ’ মিনগণ জিহাদের ব্যাপারে দুর্বলতার পরিচয় না দেয় এবং পবিত্র অন্তর ও খাঁটি নিয়তে শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে যায় তাহলে তিনি তাদেরকে বিজয় দান করেন । আর এটাই হচ্ছে তাঁর সব সময়ের রীতি ।

পাশ্চাত্যের দেশসমূহ এই বিষয়গুলো ছাড়াও নিজেদের নষ্ট সংস্কৃতিকে বাহ্যিক চাকচিক্যের মোড়কে সাজিয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রচার করছে যাতে করে পৃথিবীর মানুষদের বিশেষ করে যুব সমাজকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে পারে । এক্ষেত্রে মূলত তারা যৌনতাকে পুঁজি করে তাদেরকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । তাদের লক্ষ্য হলো যুবকরা যেন এ সব বিষয় নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং তাদের দেশের জরাজীর্ণ রাজনীতি , অর্থনীতি , সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে চিন্তার অবকাশ না পায় এবং তা নিয়ে সোচ্চার না হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক দুর্বৃত্ত ইউরোপ ও আমেরিকার বিরুদ্ধাচারণ না করে । তবে তারা অন্যান্য দেশগুলোকে নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য যে ফাঁদ পেতেছে সেই ফাঁদে তাদের দেশের মানুষ অন্য সকলের আগে পা দিয়েছে এবং ধ্বংস হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে । যদিও পাশ্চাত্য আজ বস্তুগতভাবে উন্নতি করেছে কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের যে বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তা তাদের নেই । যেমন আত্মসম্মানবোধ , পারস্পরিক সহমর্মিতা , লজ্জা , ভালবাসা , সাহসিকতা , পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস , নারীর সতীত্ববোধ ইত্যাদি সকল মানবীয় গুণাবলী তারা হারিয়ে ফেলেছে ।

আমরা এখানে আমাদের প্রিয় দেশবাসী বিশেষ করে যুব সমাজের সামনে পাশ্চাত্যের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো যাতে করে তাদের প্রকৃত অবস্থা কিছুটা হলেও সবার সামনে পরিষ্কার হয়:

ইসলাম পূর্ব নারীগণ

ইসলামের ইতিহাসে ঈমানদার , সাহসী , জুলুম বিরোধী অনেক নারী ছিলেন , যাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই ছিল আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকৃত এবং আত্মত্যাগ ও শাহাদাতের চেতনাপূর্ণ তাদের সংখ্যা অনেক কিন্তু আমরা এখানে এরূপ কয়েকজনের কথা উল্লেখ করব :

1- হাযবিল নাজ্জারের (কাঠ মিস্ত্রি) স্ত্রী : এই মহিলার ঘটনাটি হচ্ছে হযরত মুসা (আ.) এর সময়কার । সে হযরত মুসা (আ.)-এর উপর ঈমান আনয়ন করে । ঘটনা বশত: সে ফেরাউনের প্রাসাদে তার কন্যার পরিচর্যার কাজে নিয়োগ প্রাপ্ত হয় । একদিন ফিরআউনের কন্যার চুল চিরুণী দিয়ে আচড়ে দেয়ার সময় তার হাত থেকে চিরুনিটি পড়ে যায় , যেহেতু সে সব সময় আল্লাহর যিকির করতো তাই চিরুনিটি পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সে বলে উঠল : ইয়া আল্লাহ্! ফেরাউনের কন্যা তাকে জিজ্ঞাসা করলো যে , তোমার ইয়া আল্লাহ বলার উদ্দেশ্য কি আমার বাবা ?

সে বলল : না , বরং আমি এমন কাউকে উপাসনা করি যিনি তোমার বাবাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে আবার ধ্বংসও করবেন ।

মেয়ে তার বাবাকে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করলে ফেরাউন তাকে ডেকে পাঠালো । সে উপস্থিত হলে তাকে বলল : আমি যে খোদা এটা তুমি বিশ্বাস কর না ?

সে বলল : না , কখনই নয়! আমি প্রকৃত আল্লাহকে ছেড়ে তোমার উপাসনা করবো না ।

ফেরাউন এই কথায় অত্যন্ত রাগান্বিত হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিল আগুনের চুল্লী তৈরী করার এবং তা লাল রং ধারণ করলে ঐ মহিলার সব সন্তানকে আগুনের লেলিহান শিখায় ফেলে দিতে । মহিলার সব সন্তানকে তার চোখের সামনে আগুনে পুড়িয়ে মারা হল । শুধুমাত্র একটি দুধের শিশু তার কোলে অবশিষ্ট ছিল । জল্লাদ তার কোল থেকে ঐ দুধের শিশুটিকেও ছিনিয়ে নিয়ে বলল : তুই যদি মুসার দ্বীনকে অনুসরণ না করিস তাহলে তোর বাচ্চাকে বাচিয়ে রাখবো । দুধের শিশুটির অন্তর ধক-ধক করতে শুরু করলো । মহিলাটি বাহ্যিকভাবে এ কথা স্বীকার করে বলতে চাইল যে , ঠিক আছে কিন্তু হঠাৎ দুধের শিশুটি কথা বলে উঠলো । সে তার মাকে বলল : ধৈর্য ধারণ কর , তুমি সত্যের পথে আছো ।

মহিলাটি তাই করল । অবশেষে ঐ দুধের বাচ্চাটিকেও পুড়িয়ে মারা হল । তারপর তাকেও তারা পুড়িয়ে মারলো । এভাবেই এক সাহসী ও মু মিন মহিলা যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত ছিল বাতিলের কাছে মাথা নত করেনি , বরং বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে ।

নবী (সা.) বলেন : মি ’ রাজের রাতে একটি স্থান থেকে আকর্ষণীয় এক সুগন্ধ আমার নাকে আসছিল , আমি জিব্রাঈলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলাম যে , এই সুবাস কোথা থেকে আসছে ? জিব্রাঈল আমাকে উত্তরে বলল : এই গন্ধ হাযবিলের স্ত্রী ও তার সন্তানদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেহের থেকে আসছে , যা এই পৃথিবীর সমান্তরাল মহাশূন্যে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে । আর ঐ স্থান থেকে এই সুগন্ধ কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আসতে থাকবে ।34

2- হযরত ইব্রাহীম খালিলুল্লাহ্ (আ.)-এর মা :

এই ঘটনাটি অনেকটা উপরোল্লিখিত ঘটনার মতই । নমরুদ তার অধীনস্থ জ্যোতিষীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল যে , একটি শিশু জন্মলাভ করে তাকে ধ্বংস করবে । এ কারণে সে (বর্ণনামতে) 77 হাজার থেকে এক লক্ষ শিশুকে হত্যা করে । এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে ইব্রাহীমের (আ.) আত্মত্যাগী মা বিরলভাবে নিজেকে নমরুদের লোক-লস্কর থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হন । তিনি প্রসব বেদনা শুরু হলে ঋতুস্রাবের বাহানায় (কারণ তখন নিয়ম ছিল যে , কোন মহিলার ঋতুস্রাব হলে তাকে শহরের বাইরে চলে যেতে হত) শহর থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং শহর থেকে অনেক দুরে একটি পাহাড়ের গুহা খুঁজে পেলেন । সেখানেই ইব্রাহীম (আ.) ভুমিষ্ট হন । ক্লান্তিহীন পরিশ্রমী এই মা 13 বছর ধরে নমরুদের লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে , কখনো রাতে আবার কখনো প্রত্যুষে সকালে পাহাড়ের ঐ গুহার মধ্যে যেতেন তার সন্তানের সাথে দেখা করতে । এ সময় তিনি গায়েবীভাবেও সাহায্যপ্রাপ্ত হতেন । যেহেতু তিনি আল্লাহর উপর নির্ভর করেছিলেন সেহেতু আল্লাহও তাকে সাহায্য করেছেন । অবশেষে 13 বছর পরে ইব্রাহীম (আ.) খোদায়ী বিশেষ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে সমাজে ফিরে এলেন এবং আস্তে আস্তে মূর্তিপুজকদের সাথে মুকাবিলা করতে শুরু করলেন । আর দিনের পর দিন তিনি সফলকাম হতে থাকলেন ।35

3- হযরত আইয়্যুবের স্ত্রী :

রুহামাহ (রাহিমাহ্) ছিলেন হযরত আইয়্যূবের স্ত্রী এবং হযরত শোয়াইবের কন্যা । তিনি এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন । তার সকল সন্তান বাড়ীর ছাদের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় , বাগ-বাগিচা আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায় , সমস্ত সম্পত্তি এবং গৃহপালিত প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায় । এত কিছুর পরে হযরত আইয়্যূব এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হন । এমন পরিস্থিতিতে সবাই তাকে সান্তনা দেয়ার বদলে অপমান করলো এই বলে যে , নিঃশ্চয়ই তোমরা গোনাহ্গার ছিলে তাই আল্লাহ তোমাদেরকে এরূপ সাজা দিয়েছেন । সকলেই হযরত আইয়্যূবের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল । আর সে কারণেই তিনি শহর ছেড়ে জঙ্গলে চলে গিয়েছিলেন । অতপর আল্লাহ্ তাদেরকে উত্তম সন্তান দান করেন এবং অবস্থা পুর্বের পর্যায়ে ফিরে যায় ।36

হযরত আইয়্যূবের স্ত্রী আমাদেরকে যে শিক্ষা দেন তা হচ্ছে নিম্নরূপ :

প্রথমত : আল্লাহর নবিগণও বিভিন্ন অবস্থার মাধ্যমে পরীক্ষিত হতে পারেন ।

দ্বিতীয়ত : মু ’ মিনদের চেষ্টা করা উচিৎ এরূপ পরিস্থিতিতে ধৈয ধরে সফলতার সাথে তা থেকে বেরিয়ে আসার ।

তৃতীয়ত : উত্তম স্ত্রী সেই যে , কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তার স্বামীকে একা ত্যাগ করে না । আর হযরত আইয়্যূবের স্ত্রী ছিলেন তেমনই এক নারী । কারণ তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তার স্বামীকে কোন প্রকার দোষারোপ করেন নি বরং সকল সময় তার পাশে পাশে থেকেছেন এবং এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টা করেছেন । যদিও পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে হালাল রুটি- রুজীর জন্য কষ্ট করা এবং পরিবারে স্বাচ্ছন্দ আনয়ন করা ।

ইসলাম পূর্ব ইতিহাসে আরো অনেক নারীই ছিলেন যেমন : হযরত শোয়াইবের কন্যাগণ , হযরত মুসা (আ.)-এর মা ও বোন , হযরত মারিয়াম (আ.) , আসিয়া , হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর মা হাজার , নবী (সা.) -এর মা আমেনা , নবী (সা.) -এর দুধ মাতা হালিমা ও আরো অনেকে যাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি ।

ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের নারীগণ

1- হযরত খাদিজা (আ.) : হযরত খাদিজাহ্ (আ.) প্রথম পর্যায়ে খৃষ্টান ছিলেন । যেহেতু তিনি খৃষ্টানদের বিভিন্ন গ্রন্থে নবী পাক (সা.) সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন এবং অতি নিকট থেকে ঐ মহামানবকে দেখেছিলেন । তাঁর প্রতি ঈমান আনেন এবং তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এই মহান নারী আল্লাহ তা ’ য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সমস্ত সম্পত্তি নবীর (সা.) হাতে সমর্পন করেছিলেন । নবী (সা.) ঐ বিশাল সম্পদকে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে খরচ করেন । হযরত খাদিজাহ্ এ সম্পর্কে বলেন : আমার সম্পত্তি থেকে শুধূমাত্র দু ’ টি ভেড়ার চামড়া অবশিষ্ট ছিল , দিনের বেলা তার উপর ভেড়ার খাবার দিতাম এবং রাতে তা বিছিয়ে শুতাম ।

তিনি শুধুমাত্র তার সম্পদকেই দ্বীনের রাস্তায় দান করেননি বরং নবীকে (সা.) জীবন দিয়েও সাহায্য করেছিলেন । তিনি রাসূলের (সা.) শত দুঃখের সাথি ও সান্ত্বনাদানকারী ছিলেন । তিনি হচ্ছেন ইতিহাসের চারজন শ্রেষ্ঠ রমনীর একজন (যারা বেহেশ্তী নারী হিসেবে পরিচিত) । রাসূলে খোদা (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় কখনই হযরত খাদিজার ভালবাসা ও ত্যাগের কথা ভুলেন নি । আর যখনই তার কথা স্মরণ করতেন তখনই তার উপর দুরুদ পড়তেন ।

2 - প্রথম শহীদ নারী সুমাইয়্যা : সুমাইয়্যা , ইয়াসিরের স্ত্রী ছিলেন । তিনি এবং তার স্বামী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল বলে তাদেরকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল এবং শত্রুপক্ষ তাদেরকে শহীদ করেছিল । তারা সুমাইয়্যাকে বলেছিল : যদি তুমি নবীর (সা.) উপর ঈমান আনা থেকে বিরত না হও তবে তোমার দুই পায়ে দড়ি বেঁধে দুই উটের সাথে বেধে দিব এবং উট দু ’ টিকে দুই দিকে তাড়িয়ে দিব , ফলে তোমার শরীর দু ’ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে ।

সুমাইয়্যা তাদের কথায় ভয় না পাওয়ায় তারা তাদের উক্ত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করলো । তারা শুধু তাকেই নয় বরং তার স্বামীকেও হত্যা করলো । আম্মার ইয়াসির এই দুই মহান ব্যক্তির সন্তান জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলামের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন । অবশেষে তিনিও সিফ্ফিনের যুদ্ধে ইমাম আলী (আ.)-এর সৈন্য দলের পক্ষ হয়ে মুয়া ’ বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন ।37

3 - অন্যান্য নারীগণ : অন্যান্য মহিলাগণ যেমন , লুবাইনিহ্ , যিন্নিরিহ্ , নাহদিয়াহ্ , গাযযিয়াহ্ ও এরূপ আরো অনেকে যাদের নাম ইতিহাসে উল্লেখও হয় নি , ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনার ফলে শত্রুর অত্যাচারে শহীদ হন ।38

4- ফাতিমা বিনতে আসাদ (হযরত আলী (আ.)-এর মা) : ফাতিমা বিনতে আসাদের জন্য এই মর্যাদাই যথেষ্ট যে , তিনি পবিত্র কা ’ বা গৃহের মধ্যে আমিরুল মু ’ মিনিন আলী (আ.) -এর মত সন্তানকে জন্মদান করেছেন । কোন মহিলাই এ মর্যাদা পায় নি এবং পাবেও না ।

যখনই নবী (সা.) ক্লান্ত থাকতেন ফাতিমা বিনতে আসাদের বাড়ীতে আসতেন বিশ্রাম নেয়ার জন্য।

যখন তিনি এ দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন তখন নবী (সা.) কাঁদতে কাঁদতে মৃত দেহের পাশে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন : আল্লাহ্ তাঁকে বেহেশ্তবাসী করুন , তিনি শুধু আলীর মাতাই ছিলেন না বরং আমারও মা (সা.) ছিলেন । রাসূলে খোদা নিজের মাথার পাগড়ি ও আলখেল্লা খুলে দিয়েছিলেন তার কাফন করার জন্য । তার জানাজার নামাযে চল্লিশটি তাকবির বলেছিলেন । তারপর তিনি তার কবরে নেমে কিছু সময় সেখানে অবস্থান করেন এবং ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হাসানকে (আ.) অনুরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

আম্মার নবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন : কারো জন্যেই তো আপনি এরূপ করেন নি , ফাতিমা বিনতে আসাদের জন্য কেন এরূপ করলেন ?!

রাসূল (সা.) বললেন : তার জন্য এমনটা করাই উত্তম ছিল । কেননা তিনি নিজের সন্তানকে পেট ভরে খেতে না দিয়ে আমার পেট ভরাতেন । তার সন্তানদেরকে খালি পায়ে রাখতেন কিন্তু আমার পায়ে জুতা পরিয়ে দিতেন ।

আম্মার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন : কেন তার নামাযে চল্লিশবার তাকবির দিলেন ?

তিনি বললেন : তার জানাজার নামাযে ফেরেশতাগণ চল্লিশ কাতারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিল তাই তাদের প্রত্যেকটি সারির জন্য একটি করে তাকবির বলেছি ।

আর এই যে , আমার মাথার পাগড়ি ও গায়ের আলখেল্লা দিয়েছি তাঁকে কাফন করার জন্য এটার কারণ এই যে , একদিন তাঁর সাথে আমি কিয়ামতের দিনে মানুষের বস্ত্রহীন থাকার ব্যাপারে কথা বলছিলাম , তিনি এ কথা শুনে চিৎকার করে উঠেছিলেন এবং কিয়ামাতের দিনে বস্ত্রহীন থাকার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন । তাই আমার মাথার পাগড়ি ও গায়ের আলখেল্লা দিয়ে তাকে কাফন করিয়েছি , যাতে করে কিয়ামতের দিনে তিনি বস্ত্রহীন না থাকেন আর তা যেন পচে না যায় । যেহেতু তিনি কবরের প্রশ্নের ব্যাপারে অনেক ভয় পেতেন তাই আমি তাকে কবর দেয়ার আগে কিছুক্ষণ তার মধ্যে অবস্থান করেছি । আর এই অবস্থানের ফলে আল্লাহ তার কবরকে বেহেশ্তের একটি অংশে পরিণত করছেন এবং তার কবর এখন বেহেশতের বাগানে পরিণত হয়েছে ।39

5 - চার শহীদের জননী , খানিসা : তিনি একজন অভিজ্ঞ ইসলাম প্রচারক ছিলেন । তিনি তার গোত্রের সকলকে ইসলামের পথে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং অন্যদেরকেও ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতেন । 14 হিজরীতে সংঘটিত কাদিসিয়া যুদ্ধে তিনি তার সন্তানদেরকে ঐ যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন । তার সন্তানদের মধ্যে চারজন শহীদ হয় । তিনি তার সন্তানদের শহীদ হওয়াতে বলেন : আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া , কেননা তিনি তাদের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে আমাকে সম্মানিত করেছেন । আরো বলেন : আমার আশা এটাই যে , আল্লাহ্ তা ’ য়ালা আমাকেও তাঁর রহমত ও কৃপা দান করে ধন্য করবেন (অর্থাৎ তাকে শহীদ হওয়ার তৌফিক দান করবেন) ।40

6 - চার শহীদের জননী , উম্মুল বানিন : উম্মুল বানিন ছিলেন ইমাম আলী (আ.)-এর একজন আল্লাহ্ প্রেমিক স্ত্রী । তিনি তার চারজন সন্তান যথাক্রমে : হযরত আব্বাস , আব্দুল্লাহ্ , জা ’ ফার ও উসমান , কারবালায় তাদের ভাই ও নেতা ইমাম হুসাইনের সাথে শাহাদাত বরণ করেন ।

যখন বাশির মদীনায় ফিরে এসে কারবালার ঘটনাকে মসজিদে নববীতে বর্ণনা করছিল তখন উম্মুল বানিন উপস্থিতদের মধ্যে থেকে সামনে (আ.) এসে বললেন : হে বাশির! আমাকে শুধু ইমাম হুসাইন সম্পর্কে বল । আর আমার চার সন্তান খোলা আকাশের নিচে ঘোড়ার পায়ের তলে পিষ্ট হয়েছে তাতে কিছু যায় আসে না , কেননা আমি তাদেরকে ইমাম হুসাইনের জন্য উৎসর্গ করেছি । যখন তিনি বাশিরের মুখে ইমাম হুসাইনের উদ্দেশ্যে শহীদ হয়ে যাওয়ার কথা শুনলেন তখন চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন : আমার অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে ।

ইমাম হুসাইনের প্রতি তাঁর এই ভালবাসাই তাঁকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছিয়েছে , কেননা তিনি সন্তানদেরকে তাঁর নেতা ও দ্বীনের ইমামকে রক্ষার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন ।41

7- হযরত যয়নাব (আ.) আত্মত্যাগ,ধৈর্য ও দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি :

হযরত যয়নাবের মত এক মহিয়সী নারীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা কথা বলতে অক্ষম । কেননা তিনি হযরত ফাতিমার (আ.) গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর হাতে প্রশিক্ষিত হয়েছেন , আর আলী (আ.)-এর মত পিতা ও ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইনের মত ভাই যার ছিল । তবে আমরা এখানে আমাদের এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব তাই উল্লেখ করার চেষ্টা করবো ।

যে সমস্যা ও কষ্ট তার উপর এসেছিল তা যদি কোন পাহাড়ের উপর আসতো তবে পাহাড় ঐ সমস্যা ও কষ্টের ভারে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যেত । এই ধরনের এক মহিয়সী নারীর ব্যক্তিত্বকে কয়েকটি দিক থেকে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন ।

ক)- নিজের ইমাম বা নেতাকে সাহায্য করা :

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি তাকে প্রাণপণে সাহায্য করেছিলেন । ইমাম হুসাইনকে তিনি এত অধিক ভালবাসতেন যে , যখন তাঁর চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জা ’ ফর তাইয়ার তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল তখন তিনি তাকে বলেছিলেন যে , আমি একটি শর্তে এ বিয়েতে রাজী হব তা হচ্ছে আমার ভাই হুসাইন যখনই কোন সফরে যাবে আমাকেও তাঁর সাথে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে । যেহেতু আবদুল্লাহ্ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর একজন ভক্ত ছিল তাই সে এ কথা মেনে নিল । হযরত যয়নাব (আ.) ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের পরে , অসুস্থ ইমাম সাজ্জাদের সেবা-শুশ্রুষা করেন । আর যতবারই শত্রুপক্ষ ইমাম সাজ্জাদকে (আ.) হত্যা করতে এসেছিল ততবারই তিনি তাঁকে আগলে রেখেছিলেন এবং শত্রুদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন : যদি তোমরা তাকে হত্যা করতে চাও তবে প্রথমে আমাকে হত্যা কর ।

সাধারণত যে পুরুষ ও নারীই বেলায়াত ও ইমামতের পক্ষে কথা বলেছে তারাই কষ্ট , লাঞ্ছনা ও অপবাদের শিকার হয়েছে । যেমন : হযরত মারিয়ামকে ঈসা (আ.)-এর জন্য ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া হয় , হযরত আসিয়া হযরত মূসা (আ.)-কে সাহায্য করতে গিয়ে এবং তাঁর উপর ঈমান আনাতে ফিরাউনের অত্যাচারের শিকার হয়ে শহীদ হন ।

হযরত ইব্রাহীম ও হযরত মূসা (আ.)-কে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মাতাদের কত কষ্টই না পোহাতে হয়েছিল । রাসূল (সা.) কে সাহায্য করতে গিয়ে হযরত খাদিজাহ (আ.)কতই না কষ্ট পেয়েছিলেন । ইমাম আলী (আ.)-এর ইমামতের পক্ষে কথা বলার কারণে হযরত ফাতিমাকে (আ.) দরজা ও দেয়ালের মধ্যে পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়ে জীবন দিতে হয়েছে । তদ্রূপ ইমাম হুসাইন -কে সাহায্য করতে গিয়ে 55 বছর বয়সে হযরত যয়নাবকেও নিদারুণ কষ্টের শিকার হতে হয়েছে ।

খ)- শহীদদের সন্তানদেরকে দেখা-শুনা করা :

হযরত যয়নাব (আ.) কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার পরে , অভিভাবকহীন ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে দেখা-শুনা করতেন । তিনি নিজে না খেয়ে তাদেরকে খাওয়াতেন । যেহেতু বাচ্চারা তাদের পিতার জন্য কান্নাকাটি করতো , তাই তিনি তাদেরকে খুব বেশী মাত্রায় আদর করতেন এবং সান্ত্বনা দিতেন । আর এ দায়িত্বটি তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সুন্দরভাবে পালন করেছিলেন ।

গ)- ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর :

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পরে , তিনি যেখানেই যেতেন এবং যখনই সুযোগ পেতেন তখনই কারবালার শহীদদের বার্তা পৌঁছে দিতেন এবং জালিম ও অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করতেন । যদি হযরত যয়নাব না থাকতেন তবে ইসলামের শত্রুরা কারবালার ঘটনাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতো । তিনি নিজের চেষ্টায় কারবালার জালিম ও অত্যাচারীদের মুখোষ উম্মোচন করেন । আর এই পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আত্মত্যাগ চূড়ান্তে পৌঁছায় । যদি তাঁর উৎসর্গতা ও সাহসিকতা না থাকতো তাহলে শত্রুরা ইমাম সাজ্জাদ (আ.) -কে হত্যা করতো এবং ইসলামের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিত । প্রকৃতপক্ষে ইমাম হুসাইন (আ.) শত্রুর বিরুদ্ধে কিয়াম করেছিলেন আর হযরত যয়নাব (আ.) ঐ কিয়ামের ধারাকে টিকিয়ে রেখেছিলেন ।

ঘ)- হযরত যয়নাবের সাহসিকতা :

ফাসেক , অভিশপ্ত , মদখোর ও লম্পট ইবনে যিয়াদ তার প্রাসাদে বসে ছিল এবং ইমাম হুসাইন (আ.) -এর কাটা মাথাটি তার সামনে রাখা ছিল । সে হযরত যয়নাবকে (আ.) বলল : তোমার ভাইয়ের সাথে আল্লাহ্ যা করলেন তা কেমন দেখলে ? তিনি জবাবে বললেন

ﻣﺎﺭﺍﻳﺖ ﺍﻻ جمیلا আমি সুন্দর ছাড়া অন্য কিছু দেখি নি ।42 কেননা নবীর বংশধর এমন এক পরিবার যাদের জন্য আল্লাহ শাহাদাতকে মর্যাদা স্বরূপ করেছেন । আর তাঁরা স্বেচ্ছায়ই এ পথকে বেছে নিয়েছেন ।

হযরত যয়নাব এই কথার মাধ্যমে ইবনে যিয়াদকে এমনভাবে অপমান করলেন যে , যাতে করে সে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় ।

হযরত যয়নাব (আ.) শামে (সিরিযায়) ইয়াযিদের প্রাসাদে তাকে দারুণভাবে অপমান করলেন । তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন : তুমি মনে করছো যে , আমাদেরকে বন্দী করে তোমার সম্মান বেড়েছে , তা নয় তারপর বললেন : আমি তোমাকে অনেক নীচ ও হীন মনে করি ।43

তিনি এই কথাটি ইয়াযিদকে এমন এক সময় বললেন যখন তাঁর এবং অন্যান্য বন্দীদের নিহত হওয়ার আশংকা ছিল । এমন কথা একজন নারীর পক্ষে ইয়াযিদের মত জালিম , অত্যাচারী , মদখোর , লম্পট লোকের সামনে কথা বলা কোন সহজ ব্যাপার নয় । হযরত যায়নাব তাকে এত বড় কথা বলার অর্থ এই যে , তিনি এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলেন যা বুঝার ক্ষমতা আমাদের নেই ।

ঙ)- হযরত যয়নাবের ইবাদত :

কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনায় তার 6 জন ভাই যথা : ইমাম হুসাইন (আ.) , আব্বাস , জা ’ ফার , উসমান , আবদুল্লাহ্ ও মুহাম্মদ শহীদ হয়ে যাওয়া ছাড়াও তার দুই সন্তন আউন ও মুহাম্মদ এবং তার ভাইয়ের সন্তানগণ যথা : আলী আকবার , কাসিম , আবদুল্লাহ সহ চাচাত ভাইদের শহীদ হওয়ার ঘটনাকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন । আর এদিকে ছোট ছোট শিশুরা উমর ইবনে সা ’ দ ও তার মত অপবিত্র লোকদের হাতে অত্যাচারিত হচ্ছিল এবং যে কোন সময় ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর শহীদ হওয়ার আশংকা ছিল এরূপ কঠিন মুসিবতের সময়ও অর্থাৎ মুহররমের 10 তারিখের দিবাগত রাতেও তিনি তাহাজ্জুতের নামায আদায় করেন ।


4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18