জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 37390
ডাউনলোড: 3180

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 37390 / ডাউনলোড: 3180
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক

স্রষ্টা হচ্ছেন অপরিহার্য সত্তা এবং সৃষ্টিনিচয় সম্ভব সত্তা। সৃষ্টির সূচনাকারী অর্থাৎ অপরিহার্য সত্তা প্রথম বার5 যখন সৃষ্টি করেন তা অবশ্যই শূন্য থেকে অর্থাৎ কোনোরূপ উপাদান ব্যতিরেকেই করেছেন। আর পূর্ব থেকে কোনো উপাদান বিদ্যমান থাকার মানে সে উপাদানকেও অপরিহার্য সত্তা হতে হবে - যা সম্ভব নয়। কারণ , অপরিহার্য সত্তার জন্য সকল পূর্ণতার অধিকারী এবং পরিবর্তনশীলতার উর্ধে হওয়া অপরিহার্য।

সৃষ্টি স্রষ্টার অংশ নয়

শূন্য থেকে অর্থাৎ উপাদান ছাড়াই কীভাবে সৃষ্টির সূচনা সম্ভব - এটা অনেকের নিকট বোধগম্য নয়। তাই অনেকে সৃষ্টিকে স্রষ্টার অংশ বলে মনে করে। কিন্তু এরূপ ধারণা বিচারবুদ্ধির নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , সে ক্ষেত্রে স্রষ্টাকে যৌগিক সত্তা বলে গণ্য করতে হয় এবং যৌগিক সত্তা পরম পূর্ণতার অধিকারী বা অপরিহার্য সত্তা হতে পারে না। কারণ , যৌগিক সত্তা তার অংশসমূহের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া সদা পরিবর্তনশীলতাই প্রমাণ করে যে , সৃষ্টিনিচয় পরম পূর্ণতা ও অপরিহার্যতা গুণ থেকে শূন্য। তাই তর্কের খাতিরে কেউ স্রষ্টার যৌগিকত্বের সম্ভাবনাকে মেনে নিলে বলতে হয় যে , এ ধরনের পরিবর্তনশীল ও ধ্বংসোপযোগী অংশের অধিকারী সত্তা চিরন্তন ও অপরিহার্য সত্তা হতে পারে না।

স্রষ্টার মোকাবিলায় সৃষ্টির স্বরূপ বুঝাতে গিয়ে অনেকে পানি ও তরঙ্গের উপমা দিয়েছেন। অর্থাৎ যা সত্য তা হচ্ছে পানি , তরঙ্গ বলে কিছু নেই ; পানিতে আলোড়ন থেকে তরঙ্গরূপ আপেক্ষিক অস্তিত্ব রূপ লাভ করে।

এ উপমা দ্বারা বিষয়টির অবোধগম্যতা কিছুটা হ্রাস পেলেও এ হচ্ছে এক দুর্বল উপমা। বস্তুতঃ অস্তিত্ব হিসেবে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এমন সীমাহীন পার্থক্য রয়েছে যে , সৃষ্টিলোকের কোনো উপমা দ্বারা স্রষ্টাকে এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ককে বুঝানো সম্ভব নয়। তবে সম্ভবতঃ মানুষ ও মানুষের কল্পনা র উপমা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক বুঝাবার জন্য অধিকতর সহায়ক হতে পারে , যদিও তা-ও এক দুর্বল উপমা।

আমরা যখন কোনো কিছুর কল্পনা করি , কল্পনায় কিছু তৈরী করি বা কল্পনায় কোনো গল্প রচনা করি , তখন তার সাথে আমাদের যে সম্পর্ক অস্তিত্ব লাভ করে সৃষ্টিলোকের সাথে স্রষ্টার সম্পর্ককে তদ্রূপ গণ্য করা যায়।

আমরা কল্পনায় যা তৈরী করি তা-ও কিন্তু সত্য - কল্পনার সত্য , যদিও বস্তুজাগতিক সত্য নয়। তবে আমরা যখন কল্পনায় কিছু তৈরী করি তখন তাতে বস্তুগত উপাদান ছাড়া বাস্তব জগতের সব কিছুই থাকে। তাতে রং , রস , বর্ণ , গন্ধ , স্বাদ , দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বেধ , গতি , ছন্দ , সুর , কথা , হাসি-কান্না , আলো , আঁধারী , জন্ম , মৃত্যু , প্রবৃদ্ধি , ধ্বংস তথা সব কিছুই থাকে , শুধু বস্তু থাকে না। আমরা তা কোনোরূপ বস্তুগত উপাদান ব্যবহার না করেই অর্থাৎ শূন্য থেকেই সৃষ্টি করি। যাদের কল্পনাশক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী তারা তাদের কল্পনার কাহিনীর সৃষ্টিসমূহকে যতোক্ষণ ইচ্ছা টিকিয়ে ও গতিশীল রাখতে সক্ষম।

কল্পনার সৃষ্টি কিন্তু মিথ্যা নয় , সত্য। কল্পনার সৃষ্টিকে ঐ অর্থে মিথ্যা মনে করা হয় যে , তা বাস্তব সৃষ্টি নয়। অর্থাৎ কল্পনাকে বাস্তব মনে করা হলে বা দাবী করা হলে তা হবে মিথ্যা , কিন্তু তা কল্পনার সৃষ্টি হিসেবে সত্য।

কল্পনাকারী ও কল্পিত সৃষ্টির মধ্যে যে সম্পর্ক অপরিহার্য সত্তা ও সৃষ্টিলোকের মধ্যকার সম্পর্ককে তদ্রূপ মনে করা যেতে পারে। কল্পনাকারী ও কল্পিত সৃষ্টির মধ্যে যে সত্তাগত পার্থক্য বিরাজমান , অপরিহার্য সত্তা ও সৃষ্টিলোকের মধ্যে তদ্রূপ সত্তাগত পার্থক্য বিদ্যমান।

আগেই বলেছি , এ-ও এক দুর্বল উপমা। কারণ , মানুষের কল্পনা ও অপরিহার্য সত্তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যে কতক গুণগত পার্থক্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুণগত পার্থক্য এই যে , আমরা যখন কল্পনা করি তখন আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু অপরিহার্য সত্তার জন্যে মস্তিষ্ক ও তাতে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার ধারণা অবান্তর। বরং সৃষ্টি হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ও ইচ্ছাশক্তির অবদান।

এ ক্ষেত্রে আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে আমাদের কল্পনাশক্তির সৃজন ও সংরক্ষণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। আমরা একই সময় একাধিক বিষয় কল্পনা করতে বা একাধিক কল্পনাকে সক্রিয় ধরে রাখতে পারি না এবং অনেক কল্পনাকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে এগিয়ে নিতে পারি না। এছাড়া আমরা কল্পিত বিষয়কে হুবহু পুনঃকল্পনা করতে পারি না , বরং তা কমবেশী পরিবর্তিত হয়ে যায় (অবশ্য সম্ভবতঃ মানুষের শরীরের জিন্ -এর মধ্যে তা জেনেটিক কোড্ আকারে হুবহু লিপিবদ্ধ থাকে)। কিন্তু পরম সৃজনক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির অধিকারী অপরিহার্য সত্তা অবশ্যই এ সব দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে প্রমুক্ত।

আমাদের কল্পনারূপ সৃষ্টিকর্ম এবং অপরিহার্য সত্তা কর্তৃক সৃষ্টিকর্মের সূচনা ও তা অব্যাহত রাখার মধ্যে আরেকটি বড় ধরনের পার্থক্য এই যে , আমাদের কল্পনা আমাদের পূর্বাহ্নিক অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত। আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়নিচয় দ্বারা যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি , বিচারবুদ্ধির সাহায্যে তাতে পরিবর্তন সাধন করে আমরা কল্পনার জগতে নতুন কিছু সৃষ্টি করি। এমনকি আমাদের কল্পনার যে সব বিষয় বাস্তব জগতে কখনোই ছিলো না তা-ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত। উদাহরণ স্বরূপ: আমরা যে পঙ্খীরাজ ঘোড়া কল্পনা করেছি তাতে দ্রুতগামী ঘোড়ার সাথে পাখীর পাখার সংযোগ সাধন করে স্থলে ও অন্তরীক্ষে দ্রুততম গতিতে চলনক্ষম প্রাণী কল্পনা করেছি। কিন্তু অপরিহার্য সত্তা যখন সৃষ্টির সূচনা করেন তখন তা শূন্য থেকে করেন , অতএব , তা মানবকল্পনার ন্যায় কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তেমনি পরবর্তী কালে তিনি নতুন নতুন যা কিছুই সৃষ্টি করেন তা প্রথম বারের মতো সৃষ্টি করেন বিধায় তা কোনো কিছু দ্বারা অনুপ্রাণিত হবার ধারণা অবান্তর।