জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 37448
ডাউনলোড: 3207

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 37448 / ডাউনলোড: 3207
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার পথনির্দেশ

সৃষ্টিকর্তা বস্তুদেহধারী প্রাণী প্রজাতিসমূহের মধ্যে এক ধরনের সহজাত জ্ঞান প্রদান করেছেন যা তাদেরকে স্বীয় স্বাধীনতাকে সুনিয়ন্ত্রিত করার ও তা থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ হাসিলের কাজে সাহায্য করে। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে এক প্রাণীর কল্যাণ অন্য কোনো প্রাণীর জন্য ক্ষতির কারণ রূপে দেখা দিতে পারে। কারণ ও ফলশ্রুতি বিধির জগতে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা বিচারবুদ্ধির দ্বারা দেখতে পাই যে , প্রতিটি প্রাণীপ্রজাতির মধ্যে নিহিত সহজাত জ্ঞান ও প্রবণতা তার নিজের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।

এখানে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে: একটি খরগোশের শরীর এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যে , তার জন্য খাদ্য হিসেবে ঘাস ও তরিতরকারী উপযোগী , মাছ-মাংস উপযোগী নয়। তাই খরগোশের মাঝে ঘাস ও তরিতরকারী খাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয় , মাছ-মাংস খাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয় না। তাই খাওয়ার জন্য ঘাস ও তরিতরকারী পাওয়া না গেলেও এবং ঐ অবস্থায় ছোট ছোট পাখী তার সামনে চরে বেড়ালেও সে পাখী খাওয়ার আগ্রহ অনুভব করে না। অন্যদিকে একটি নেকড়ের শরীর এমনভাবে তৈরী হয়েছে যে , তার জন্য খাদ্য হিসেবে মাংস উপযোগী। তাই সে খরগোশ বা খেক শিয়াল বা এরূপ অন্য কোনো দুর্বল প্রাণীকে হত্যা করে ভক্ষণ করে। এভাবে দেখা যায় যে , প্রাণীকুলের সহজাত প্রবণতা তার অস্তিত্বরক্ষা ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য , যদিও কারো অস্তিত্বরক্ষার সহজাত প্রবণতা অন্য কারো জন্য বিনাশের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

অস্তিত্বরক্ষা ও বিকাশ-বিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষুধা-তৃষ্ণা , যৌন কামনা ও এ ধরনের অন্যান্য সহজাত প্রবণতা মানুষের মধ্যেও রয়েছে। সৃষ্টিপ্রকৃতিতে নিহিত এ ধরনের সহজাত প্রবণতা যে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই প্রদত্ত এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা দেখতে পাই , সৃষ্টির মধ্যে এসব প্রবণতা যেমন নিহিত রয়েছে তেমনি তা পূরণের ব্যবস্থাও সৃষ্টিজগতে রাখা হয়েছে। প্রাণীকুলের মধ্যে এমন কোনো সহজাত প্রয়োজন দেখা যায় না যা পূরণের ব্যবস্থা প্রকৃতিতে নিহিত রাখা হয় নি।

কিন্তু মানুষের মধ্যে আরো এক ধরনের সহজাত জ্ঞান রয়েছে। তা হচ্ছে ভালো-মন্দ , উচিত-অনুচিত ও কর্তব্য-অকর্তব্য সংক্রান্ত ধারণা। স্থান-কাল , জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সুস্থ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের নিকট কতগুলো কাজ ভালো ও কতগুলো কাজ মন্দ বলে পরিগণিত। যেমন: সত্য কথা বলা , পরোপকার করা , পিতামাতা ও বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন , ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন ইত্যাদি কতক কাজ অস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সকলের নিকটই ভালো বলে পরিগণিত হয় এবং মিথ্যাচার , চুরি , ধোঁকা-প্রতারণা , নিরীহ মানুষকে হত্যা করা , দুর্বলদের ওপর যুলুম করা , বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি কতক কাজ সকলের নিকটই খারাপ , ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য বলে পরিগণিত।

এমনকি যারা ভালো কাজগুলো সম্পাদন করে না তারাও সে সব কাজের ভালো হওয়ার কথা স্বীকার করে। তেমনি যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ সম্পাদন করে সে তার কাজের সপক্ষে কোনো না কোনো যুক্তি দাঁড় করালেও মূলতঃ কাজটি যে মন্দ তা সে স্বীকার করে। উদাহরণস্বরূপ , যে সেনাপতি স্বয়ং আনুগত্য-শপথ ভঙ্গ করে তথা বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজা বা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখল করেছে বা দখল করার চেষ্টা করছে সে-ও তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ গ্রহণকারী তার কোনো অনুগত সৈনিক শপথ ভঙ্গ করলে বা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করে। একইভাবে চোর বা ডাকাতের দলের কোনো সদস্য চুরি বা ডাকাতি করে আনা মাল থেকে চুপে চুপে কিছু সরিয়ে ফেললে তথা চুরি করলে বা সহযোগীর কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে নিলে সে কাজকে ঘৃণা করে ও অপরাধ বলে গণ্য করে।

যেহেতু ন্যায়-অন্যায় ও ভালো-মন্দের এ অনুভূতি কোনোরূপ শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল নয় , সেহেতু তা যে সহজাত অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা মানুষের সৃষ্টিপ্রকৃতিতে এ পথনির্দেশ নিহিত রেখেছেন তাতে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই।

এ তো গেলো সর্বজনীন পথনির্দেশের কথা। এমনকি মানুষ ব্যক্তিগতভাবেও পথনির্দেশ লাভ করে থাকে। অনেক সময় মানুষ কোনো কাজ করা-নাকরার ফলাফল সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারে না। কারণ ও ফলশ্রুতি বিধির আওতাধীন এ জগতে অনেক সময় সে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না যে , কাজটি তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে , নাকি অকল্যাণ। এরূপ অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে এমনও হতে দেখা যায় যে , সে যখন অনেক চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করেও কোনো উপসংহারে পৌঁছতে না পেরে ক্লান্ত-শ্রান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছে তখন সহসাই , দৃশ্যতঃ কোনোরূপ কারণ ছাড়াই , তার মন দৃঢ়তা সহকারে কোনো একদিকে ঝুঁকে পড়ে এবং কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই কাজটির শুভ বা অশুভ পরিণতি সম্বন্ধে তার অন্তরে প্রত্যয় সৃষ্টি হয়ে যায়। অতঃপর সে কাজটি সম্পাদন করে সত্যিই সুফল লাভ করে , অথবা সে তার অন্তরে জাগ্রত এ অবস্থার ভিত্তিতে যে কাজটি পরিত্যাগ করেছে সেই একই কাজ অন্য কেউ করে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা থেকে সুস্পষ্ট যে , সে এ কাজটি করলে সে-ও অনুরূপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , কাজটি করা না-করা সম্বন্ধে সৃষ্টিকর্তাই তাকে পথনির্দেশ দিয়েছিলেন। এভাবে মানুষ সামান্য চিন্তা করলেই বুঝতে পারে যে , সে শুধু তার সৃষ্টি ও অস্তিত্বরক্ষার জন্যই সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষী নয় , বরং মানুষ হিসেবে তার যে স্বাধীন চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্র রয়েছে সেখানেও সে সৃষ্টিকর্তার পথনির্দেশের আওতাধীন। অর্থাৎ সব সময় ও সর্বাবস্থায়ই তার ও সৃষ্টিকর্তার মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।