জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 37540
ডাউনলোড: 3219

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 37540 / ডাউনলোড: 3219
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

নবী চেনার ক্ষেত্রে স্থান - কালের ব্যবধানগত সমস্যা

কোনো নবীর সাথে অভিন্ন স্থান-কালে অবস্থানকারী ব্যক্তির পক্ষে নবীকে চেনা খুবই সহজ। নবীকে চেনার যে সব উপায় রয়েছে তার সবগুলো বা যে কোনো একটির মাধ্যমেই সে নবীকে চিনতে পারে। যিনি অকাট্যভাবেই নবীরূপে প্রমাণিত তিনি যখন কাউকে নবীরূপে পরিচয় করিয়ে দেন , তখন তিনি তাঁর অনুসারীদের মধ্যকার যে ব্যক্তিদের সামনে নতুন নবীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাদের মনে নতুন নবী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকতে পারে না। কারণ , এরূপ ক্ষেত্রে সংশয় মানে পূর্বতন নবী সম্পর্কেই সংশয় পোষণ করা।

কোনো নবী যদি ভবিষ্যতে আসবেন এমন কোনো নবী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন এবং ভাবী নবীর নাম , পরিচয় ও তাঁকে চেনার অন্যান্য নিদর্শন বর্ণনা করেন , সে ক্ষেত্রে যাদের সামনে এ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে বা অকাট্যভাবে পৌঁছেছে , তাদের জন্য নতুন নবীর সাক্ষাৎ পেলে তাঁকে চিনতে পারা খুবই সহজ। এতদসহ নবীর জীবনেতিহাস ও মু জিযাহ্ তাঁর পরিচিতিকে আরো শক্তিশালী করে। এমনকি যার নিকট নতুন নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী মওজূদ ছিলো না তার জন্যেও নবীর জীবন ও মু জিযাহ্ প্রত্যক্ষ করার কারণে নবীকে নবী হিসেবে চিনতে পারা খুবই সহজ হয়ে যায়।

কিন্তু নবীর সাথে যে ব্যক্তির স্থানগত ও কালগত ব্যবধান রয়েছে তার পক্ষে নবীকে চিনতে পারা ততো সহজ নয়। আর এ ব্যবধান যতো বেশী হবে তার মনে নবীর নবী হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয় সৃষ্টি ততোই কঠিন হবে। কিন্তু যেহেতু নবী বা সৃষ্টিকর্তার পথনির্দেশলাভকারী ব্যক্তির আগমন বিচারবুদ্ধির অপরিহার্য দাবী , সেহেতু তাকে অবশ্যই নবীর সন্ধান করতে হবে এবং নবুওয়াতের দাবীদারদের সম্পর্কে প্রাপ্ত সকল তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।

পূর্ববর্তী নবীদের অস্তিত্ব ও নবুওয়াত অন্ধ বিশ্বাস ভিত্তিক

বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা অতীতে বিভিন্ন নবীর আগমনের কথা বলে থাকে এবং তাদের ধর্মগ্রন্থসমূহেও তাঁদের নাম উল্লিখিত রয়েছে। ঐসব ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের অনুসারীরা অন্ধভাবে ঐ সব গ্রন্থ ও তাতে নবী হিসেবে উল্লিখিত ব্যক্তিদের ওপর বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। কিন্তু সুস্থ ও মুক্ত বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির পক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করা ব্যতীতই কোনো গ্রন্থের বা নবী বলে অভিহিত ব্যক্তিদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস পোষণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই সত্যাসত্য অনুসন্ধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার মনে বেশ কতগুলো প্রশ্ন জাগ্রত হয়। এগুলো হচ্ছে:

প্রথমতঃ যে ব্যক্তিকে নবী বলে দাবী করা হচ্ছে , আদৌ এরূপ কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব কখনো ছিলো কি ? নাকি ধর্মনেতা বা ধর্মযাজক সাজা ভণ্ড-প্রতারক ব্যক্তিরা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এরূপ কল্পিত ব্যক্তিত্ব তৈরী করেছে ?

দ্বিতীয়তঃ কথিত ব্যক্তি যদি ঐতিহাসিক হয়ে থাকে তো সত্যিই নবী ছিলো কি ? নাকি ভণ্ড নবী ছিলো এবং তার স্বার্থান্বেষী অনুসারীরা তাকে নবী বলে প্রচার করেছে ? নাকি নিজে নবুওয়াত দাবী না করলেও স্বার্থান্বেষীরা তাকে নবী বলে মিথ্যা পরিচয় পেশ করেছে ?

তৃতীয়তঃ তিনি যদি সত্যি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন তো তাঁর জীবনেতিহাস ও তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত পথনির্দেশ কি নির্ভুলভাবে আমাদের নিকটে পৌঁছেছে , নাকি বিকৃত হয়েছে ?

চতুর্থতঃ উক্ত নবীর জীবনেতিহাস ও পথনির্দেশসমূহ যদি অবিকৃতভাবে আমাদের কাছে পৌঁছে থাকে তো তা কি শুধু তাঁর স্থান-কালের প্রয়োজন পূরণের জন্যই ছিলো , নাকি আমাদের বর্তমান স্থান-কালের প্রয়োজন পূরণের জন্যও তা যথেষ্ট ?

পঞ্চমতঃ নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা কি উক্ত নবীর মাধ্যমে শেষ হয়ে গিয়েছে , নাকি তাঁর পরেও কোনো নবী এসেছেন বা আসার সম্ভাবনা আছে ?

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , কোনো ঘটনার বর্ণনা প্রত্যয় সৃষ্টিকারী হবার জন্য মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের হওয়া অপরিহার্য। মুতাওয়াতির্ হচ্ছে যুক্তিবিজ্ঞানের একটি পরিভাষা। এর মানে হচ্ছে , ঘটনাটি বর্ণনা ধারাক্রমে প্রতিটি স্তরে এতো বেশী সংখ্যক লোকের দ্বারা বর্ণিত হওয়া চাই যতো লোকের পক্ষে মিথ্যা রচনার জন্য মতৈক্যে উপনীত হওয়া বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে অসম্ভব। অর্থাৎ এরূপ সংখ্যক , ধরুন একশ জন বা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশী সংখ্যক লোক ঘটনাটি চাক্ষুষভাবে দেখে বর্ণনা করেছে। অতঃপর তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে শুনে অনুরূপ বিরাট সংখ্যক লোক (ধরুন কারো কাছ থেকে 50 জন , কারো কাছ থেকে 100 জন , কারো কাছ থেকে 200 জন ইত্যাদি) বর্ণনা করেছে এবং এই দ্বিতীয় স্তরের বর্ণনাকারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পূর্বানুরূপ সংখ্যক লোক বর্ণনা করেছে। এভাবে বর্ণনাটি লিপিবদ্ধকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করার সময় সকল স্তরের বর্ণনার ধারাক্রম ও প্রতিটি বর্ণনাকারীর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে বর্ণনাটি যে ঐ ব্যক্তি সংগ্রহ , সংকলন ও লিপিবদ্ধ করেছেন , পরবর্তীকালে কেউ তাঁর নামে চালিয়ে দেয় নি - এ ব্যাপারেও মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের বা অন্য ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ (যেমন: এ যুগে স্থান-কাল ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ সহ মুদ্রিত দলীল) মওজূদ থাকা প্রয়োজন।

অনুরূপভাবে ঘটনাটি যদি সরাসরি তা প্রত্যক্ষকারী কোনো ব্যক্তি কর্তৃক লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রেও মুতাওয়াতির্ সংখ্যক প্রত্যক্ষদর্শী কর্তৃক এ মর্মে সাক্ষ্য প্রয়োজন যে , লেখক ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন ও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সাক্ষ্যদাতাদের ঐতিহাসিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধেও প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ মওজূদ থাকা অপরিহার্য।

প্রতিটি স্তরে প্রত্যয় সৃষ্টিকারী বিপুল সংখ্যক নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনা ছাড়াও কারো সম্পর্কে তার প্রতিপক্ষের অনুকূল বা ইতিবাচক সাক্ষ্যও প্রত্যয় সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে , তবে প্রত্যয় উৎপাদনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের সাক্ষ্য-প্রমাণ ও বর্ণনা।

এ মানদণ্ডে বিচার করলে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী যে সব ব্যক্তিকে নবী বলে দাবী করা হয় তাঁদের নবী হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়া তো দূরের কথা , তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্বই সংশয়ের কবলে নিক্ষিপ্ত হয়। অবশ্য তাঁদের মধ্যকার কারো কারো নাম , নবী হওয়ার কথা ও তাঁদের গ্রন্থের কথা হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পেশকৃত গ্রন্থ কোরআন মজীদে উল্লিখিত রয়েছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব এবং নবী হওয়া ও গ্রন্থ রেখে যাওয়ার বিষয়টি গ্রহণ করতে চাইলে তা কোরআনের সত্যতা অর্থাৎ এর উপস্থাপনকারীর ঐতিহাসিকতা ও এটির ঐশী গ্রন্থ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল।

বস্তুতঃ মুসলমানদের দৃষ্টিতে ঐ সব নবী-রাসূল (আঃ) ও তাঁদের ওপর ঐশী গ্রন্থ নাযিল হওয়ার বিষয়টি যে সত্য বলে পরিগণিত হয়ে থাকে তা বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে বা মুতাওয়াতির্ বর্ণনার কারণে নয় , বরং কোরআন মজীদে উল্লেখ থাকার কারণে। যেহেতু মুসলমানদের নিকট কোরআন মজীদের ঐশিতা বিচারবুদ্ধি দ্বারা প্রমাণিত এবং মুতাওয়ইতর্ সূত্রে প্রমাণিত যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) এ গ্রন্থটি রেখে গেছেন , সেহেতু তাদের দৃষ্টিতে এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত সব কিছুই সত্য এবং এ কারণে এতে উল্লিখিত নবী-রাসূলগণ (আঃ) ও তাঁদের ওপর নাযিলকৃত গ্রন্থাবলীও সত্য।

কিন্তু অমুসলিমরা যেহেতু কোরআন মজীদকে ঐশী গ্রন্থ ও হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-কে নবী বলে মানে না , তাই তাদের নিকট কোরআন মজীদের বক্তব্য কোনো দলীল নয়। ফলে তাদের বিচারবুদ্ধির পক্ষে কোরআন মজীদে উল্লেখের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে (আঃ) নবী মনে করা ও তাঁদের ওপর আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিলো বলে মনে করা সম্ভব নয়।

এ থেকে বিচারবুদ্ধি উপসংহারে উপনীত হয় যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী যে সব ব্যক্তিকে নবী বলে দাবী করা হয় , সাধারণভাবে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হবার জন্য যে মুতাওয়াতির্ বর্ণনা প্রয়োজন তার অনুপস্থিতির কারণে , সর্বজনীন বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিঃসন্দেহ নয়। অবশ্য তাঁদের মধ্যকার কারো কারো অস্তিত্ব বিভিন্ন প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়। তবে ঐ সব ইতিহাস-গ্রন্থের অবিকৃত থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত নয়।

এমনকি প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে যে সব নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও তাঁদের নবী হওয়ার বিষয়টি বিচারবুদ্ধিগ্রাহ্যভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ , ইতিহাসে উল্লেখ থাকার কারণে পাত্রপাত্রীগণ ও তাঁদের সংশ্লিষ্ট বড় বড় ঘটনা সম্বন্ধে প্রত্যয় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হলেও পাত্রপাত্রীদের গুণাবলী ও তাঁদের প্রত্যেকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত ও ছোটখাট ঘটনাবলী সম্বন্ধে প্রত্যয় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ , এসব বর্ণনা সংশ্লিষ্ট পাত্রপাত্রীদের সাথে লেখকের বা তাঁর তথ্যসূত্রের সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকা খুবই স্বাভাবিক। এ কারণেই অনেক ক্ষেত্রে অভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে দুই ইতিহাসকার কর্তৃক বিপরীতভাবে চিত্রিত করতে দেখা যায়।

এমতাবস্থায় নবী হিসেবে পরিগণিত কোনো ব্যক্তির ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হলেও , এমনকি ইতিহাসে তাঁকে নবী বলে উল্লেখ করা হলেও , তা থেকে তাঁর নবুওয়াত সংশ্লিষ্ট প্রমাণ ও ঘটনাবলী সম্পর্কে সুস্থ ও মুক্ত বিচারবুদ্ধির জন্যে প্রত্যয় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ , নবীর ব্যক্তিচরিত্রের প্রকৃত অবস্থা এবং এতদ্সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী ও তথ্যাদি মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের অথবা বিরোধীদের ইতিবাচক সত্যায়নের অধিকারী না হলে বিচারবুদ্ধির কাছে তা প্রত্যয় উৎপাদক হয় না। আর বলা বাহুল্য যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ (আঃ) সম্পর্কে এ জাতীয় বিষয়াদি ইতিহাসে যেভাবে পাওয়া যায় তা এ ধরনের নয় , বিশেষতঃ তা মুতাওয়াতির্ সূত্রে আমাদের নিকট পৌঁছে নি।

এরপরও , ইতিহাসে যাদের নাম নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদেরকে নবী বলে ধরে নিলেও তাঁদের নামে যে সব ধর্মগ্রন্থ প্রচলিত আছে সেগুলো যে তাঁদেরই রেখে যাওয়া এবং তাঁদের রেখে যাওয়া হলে তা যে অবিকৃত রয়েছে এ ব্যাপারে প্রত্যয় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। আর নবীকে স্বীকার করার মানে কেবল তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ও তাঁদের নবী হওয়ার সত্যতা স্বীকার করা এবং তাঁদের প্রতি সম্মান , শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ মাত্র নয়। কারণ , নবীর আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন। তাই কোনো নবীর রেখে যাওয়া গ্রন্থ অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত না থাকলে তাঁর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ও তাঁর নবী হওয়ার সত্যতা স্বীকার এবং তাঁর প্রতি সম্মান , শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করা ও না করায় মানুষের জীবন গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য ঘটে না।

কোরআন ব্যতীত সব গ্রন্থই মানবরচিত

পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের (আঃ) নামে প্রচলিত ধর্মগ্রন্থসমূহ যে যে নবী-রাসূলের (আঃ) নামে প্রচলিত আছে তা যে তাঁদের পরে অন্য লোকদের দ্বারা রচিত হয়েছে এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। তেমনি সে সব গ্রন্থে পরবর্তীকালে যে বিকৃতি সাধিত হয়েছে সে ব্যাপারেও সন্দেহ নেই। সংশ্লিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের মধ্যকার পণ্ডিত-গবেষকগণ পর্যন্ত ঐ সব গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট নবী-রাসূলগণের (আঃ) পরে রচিত হওয়া ও পরবর্তীতে আরো বিকৃত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) নামে যে সব ধর্মগ্রন্থ প্রচলিত আছে সেগুলোর রচনার ধরন ও বাচনভঙ্গি থেকেই প্রমাণিত হয় যে , সেগুলো মানুষের - সাধারণ লেখকদের রচিত। এ সব গ্রন্থের ভাষা ও বাচনভঙ্গিতে সামগ্রিকভাবে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় না যা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সম্ভব যে , এ সব গ্রন্থ মনুষ্য-উর্ধ মহান সত্তা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।

অবশ্য এ সব গ্রন্থের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্তভাবে বহু উন্নত মানের , জ্ঞানপূর্ণ ও দিকনির্দেশক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু গ্রন্থ হিসেবে সামগ্রিক বিচারে এ সব গ্রন্থের কোনোটিই ঐশী গ্রন্থ নয়। এ সব গ্রন্থের বেশীর ভাগই মানবরচিত ইতিহাসগ্রন্থ মাত্র যার বিষয়বস্তু নবী-রাসূলগণের (আঃ) জীবন কাহিনী ও তাঁদের প্রচারিত কিছু কিছু শিক্ষা। অর্থাৎ একেক জন নবীর (আঃ) জীবনকাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁদের কিছু শিক্ষাও বিভিন্ন প্রসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। তাই নবী-সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ হিসেবে এগুলোকে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর জীবনী গ্রন্থের সাথে তুলনা করা যায় - যাতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কোরআন মজীদের কিছু আয়াতও উদ্ধৃত করা হয়েছে , কিন্তু এ সব গ্রন্থকে কিছুতেই কোরআন মজীদের সমপর্যায়ভুক্ত তথা ঐশী গ্রন্থ রূপে গণ্য করা চলে না। এখানে দু একটি দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।

বাইবেল-এর পুরাতন নিয়ম অংশের প্রথম পাঁচ পুস্তককে হযরত মূসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ তাওরাত বলে দাবী করা হয়। এ পঞ্চপুস্তকের সর্বশেষ পুস্তক দ্বিতীয় বিবরণ । পুস্তকটির 34তম অর্থাৎ সর্বশেষ অধ্যায়ে হযরত মূসা (আঃ)-এর মৃত্যুকালীন ঘটনা , মৃত্যুকালীন বয়স , তাঁকে কবর দেয়া , বনি ইসরাঈলের শোক প্রকাশ ও সবশেষে হযরত ইউশা বিন্ নূন্ (আঃ)-এর বিজ্ঞতার আত্মায় পরিপূর্ণতা র কথা বর্ণিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , এ অধ্যায়টি কি তাওরাতের সর্বশেষ অধ্যায় রূপে হযরত মূসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিলো ?

হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত ঐশী কিতাব ইনজীল্ বলে দাবীকৃত বাইবেলের নতুন নিয়ম অংশের প্রথম চার পুস্তকের অবস্থা সর্বাধিক করুণ। কারণ , বাইবেলের পুরাতন নিয়ম অংশের প্রথম পাঁচ পুস্তককে একই গ্রন্থের অর্থাৎ তাওরাত -এর পর্যায়ক্রমিক পাঁচটি খণ্ড বলে গণ্য করা গেলেও নতুন নিয়ম -এর প্রথম চার পুস্তক চার জন ভিন্ন ভিন্ন লেখক কর্তৃক লিখিত হযরত ঈসা (আঃ)-এর জীবনকাহিনী বিষয়ক চারটি স্বতন্ত্র পুস্তক। চারটি পুস্তকের নামকরণও চারজন লেখকের নামে করা হয়েছে।

ইনজীল্ নামে দাবীকৃত উক্ত পুস্তকগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন বিষয়ের বিবরণে বেশ কিছু পার্থক্য ও কমবেশী পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ: যোহন পুস্তকের সর্বশেষ দু টি পদ এরূপ: সেই শিষ্যই এ সকল বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং এ সকল লিখেছেন ; আর আমরা জানি , তাঁর সাক্ষ্য সত্য। যীশূ (ঈসা) আরো অনেক কাজ করলেন ; সে সব যদি এক এক করে লেখা হয় তাহলে , আমার মনে হয় , লিখতে লিখতে এতো গ্রন্থ হয়ে ঊঠবে যে , জগতেও তা ধরবে না। এ উদ্ধৃতি থেকে তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক পুস্তকটি লিখিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট।

তেমনি নতুন নিয়ম -এর লুক পুস্তকের সর্বশেষ দু টি পদে হযরত ঈসা (আঃ)-এর চূড়ান্তভাবে স্বর্গারোহণের পর তাঁর শিষ্যদের জেরূশালেমে প্রত্যাবর্তন ও সদাপ্রভুর প্রশংসাকীর্তণের কথা বলা হয়েছে। এটা কি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত কথা হিসেবে গণ্য হতে পারে ?

অন্যদিকে মার্ক্ পুস্তকের সর্বশেষ দুই পদে যীশূর স্বর্গে নীত হয়ে সদাপ্রভুর ডান পাশে বসার ও তাঁর শিষ্যদের ফিরে গিয়ে প্রচারকার্যে মনোনিবেশের কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে , উক্ত তিনটি পুস্তকের এ পদগুলো কি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিলো ? হয়ে থাকলে তা কখন ? কখন তিনি তাঁর শিষ্যদের নিকট এ ঐশী প্রত্যাদেশ পৌঁছে দিয়েছিলেন ?

আর মথি পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পূর্বপুরুষদের তালিকা (নসবনামা) দেয়া হয়েছে ; এটিও ঈশ্বরের পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিলো বলে মেনে নিতে হবে কি ?

হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থ সমূহের মধ্যে বাচনভঙ্গি ও কাঠামোগত বিচারে সম্ভবতঃ গীতা য় পরিবর্তন ও বিকৃতির মাত্রা সবচেয়ে কম। কিন্তু এটিও একটি মানবরচিত গ্রন্থ। কারণ , গ্রন্থটির বিষয়বস্তু হচ্ছে কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের কথোপকথন - যাতে অর্জুনের যুদ্ধে অস্বীকৃতির জবাবে প্রদত্ত শ্রীকৃষ্ণের ভাষণ অন্তুর্ভুক্ত হয়েছে। এতে কুরুক্ষেত্রের বর্ণনা ও অর্জুনের অস্বীকৃতিবাচক উক্তির অন্তর্ভুক্তি থেকে সুস্পষ্ট যে , কোনো তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক এটি রচিত হয়েছে অর্থাৎ পুরো গ্রন্থটি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক রচিত বা কথিত নয়।

পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহের বিষয়বস্তু পরীক্ষা করলে সে সবে এতো বেশী পরিমাণে বিকৃতি বের হবে যা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হলে বিশ্বকোষ রচনা করতে হবে।

বাইবেলের বিভিন্ন পুস্তকে বিভিন্ন নবী-রাসূলের (আঃ) চরিত্রে এমন সব কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে যা কোনো নবী সম্পর্কে তো দূরের কথা , কোনো সাধারণ মানুষ সম্পর্কেও চিন্তা করা কষ্টকর। তেমনি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে তথাকথিত দেবতাদের যে সব জঘন্য কাণ্ডকারখানার বর্ণনা রয়েছে তা ইতর শ্রেণীর মানুষ সম্বন্ধেও ভাবতে কষ্ট হয়।

বিকৃতির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত প্রায় সকল প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের অবস্থাই একই রকম।

অতএব , এটা সুস্পষ্ট যে , কোরআন-পূর্ববর্তী যে সব ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যায় সেগুলো পুরোপুরি মানবরচিত , যদিও সেগুলোতে কমবেশী ঐশী বাণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যে সব নবী-রাসূলের (আঃ) নামে প্রচলিত তাঁদের পরে অন্য লোকদের দ্বারা এসব গ্রন্থ রচিত হয় এবং কালের প্রভাবে আরো দারুণভাবে বিকৃত হয়। অতএব , না ঐ সব ধর্মগ্রন্থ পথনির্দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে , না তাতে নবী হিসেবে উল্লিখিত ব্যক্তিদের নবী হওয়া সম্পর্কে ঐসব গ্রন্থে উল্লেখের ভিত্তিতে প্রত্যয় হাছ্বিল হতে পারে। এমনকি তাঁরা যদি সত্যি সত্যিই নবী হয়েও থাকেন তথাপি তাঁদের ওপর অবতীর্ণ ঐশী কিতাব বর্তমান না থাকায় বা থাকলেও অবিকৃতভাবে না থাকায় তাঁদের নবী হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয়ের তেমন কোনো বাস্তব কার্যকরিতা (সুফল) থাকতে পারে না।

মোদ্দা কথা , বিচারবুদ্ধি হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ (আঃ) ও কোরআন-পূর্ববর্তী ঐশী কিতাব সমূহ সম্বন্ধে প্রত্যয়ে উপনীত হতে সক্ষম নয়। কারণ , তা মুতাওয়াতির্ সূত্রে আমাদের নিকট পৌঁছে নি।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , কোনো গ্রন্থ মুতাওয়াতির্ বা প্রামাণ্য হলে তাতে বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হওয়া বা মূল ভাষা থেকে তা হারিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং মূল ভাষায় তার একাধিক পাঠ ( text)হওয়াও সম্ভব নয়। অতএব , সকল বিচারেই কোরআন - পূর্ব ধর্মগ্রন্থসমূহ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যাত।

মু জিযাহ্ই চূড়ান্ত প্রমাণ

স্থান ও কালগত ব্যবধান থেকে উদ্ভূত সংশয় দূরীকরণের জন্যই মুতাওয়াতির্ বর্ণনা অপরিহার্য। কিন্তু বর্ণনা যতোই মুতাওয়াতির্ হোক না কেন , যে ব্যক্তি একজন নবীকে প্রত্যক্ষ করেছে , তাঁর জীবন ও আচরণ দেখেছে এবং তাঁর মু জিযাহ্ও প্রত্যক্ষ করেছে , তার মধ্যে নবীর নবী হওয়া সম্পর্কে যে ধরনের প্রত্যয় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব , যারা তাঁকে দেখে নি , তাঁর জীবন ও আচরণ প্রত্যক্ষ করে নি এবং যাদের সামনে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো মু জিযাহ্ সংঘটিত হয় নি , তাদের মধ্যে সে ধরনের প্রত্যয় তৈরী হওয়া সম্ভব নয়। আর তাদের মধ্যে প্রত্যয় সৃষ্টি হলেও তা মাত্রাগত দিক থেকে প্রত্যক্ষকারীদের প্রত্যয়ের তুলনায় দুর্বলতর হতে বাধ্য ; এমনকি তাদের মধ্যে আদৌ প্রত্যয় সৃষ্টি না-ও হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আরো স্মর্তব্য যে , কোনো নবীর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব ও ঐশী গ্রন্থ লাভের তথ্য এবং তা পরবর্তী প্রজন্মসমূহের নিকট পৌঁছার ঘটনাটি মুতাওয়াতির্ পর্যায়ে ঘটেছে কিনা তা কেবল জ্ঞানী-গুণী ও গবেষকদের পক্ষে দীর্ঘ ও সুগভীর গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ কাজ যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে গবেষকগণ এ বিষয়ে গবেষণা করবেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা চলে না এবং গবেষণা করলেও বিভিন্ন কারণে তাঁরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল সাধারণ মানুষের নিকট প্রকাশ না-ও করতে পারেন। অন্যদিকে তাঁরা যে সঠিক ফলাফল প্রকাশ করেছেন এ ব্যাপারে বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি না-ও হতে পারে। তাই লোকদের সামনে একজন নবীর নবুওয়াতের এমন প্রমাণ পেশ করা অপরিহার্য যা অবশ্যই সর্বোচ্চ মানের প্রত্যয় উৎপাদনে সক্ষম হবে। আর তা হচ্ছে একমাত্র মু জিযাহ্।

অতএব , কোনো নবীর মু জিযাহ্ যদি স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয় কেবল তখনই তাঁর নবী হওয়া সম্পর্কে স্থান ও কাল নির্বিশেষে সকলের জন্য সমভাবে সর্বোচ্চ মাত্রার প্রত্যয় উৎপাদন হওয়া সম্ভব। বলা বাহুল্য যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের (আঃ) কেউই এরূপ কোনো কালোত্তীর্ণ মু জিযাহর অধিকারী ছিলেন না। তাঁদের মু জিযাহ্ ছিলো তাঁদের স্থান ও কালের লোকদের জন্য এবং তাঁদের সাথে সাথে তাঁদের প্রদর্শিত মু জিযাহ্ও ইতিহাসের পাতায় আত্মগোপন করেছে। তাই তাঁদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব , প্রদর্শিত মু জিযাহর বিবরণ ও রেখে যাওয়া গ্রন্থাবলী এমনকি মুতাওয়াতির্ সূত্রে বর্ণিত বলে প্রমাণিত হলেও (যদিও বাস্তবে তা প্রমাণিত হয় না) , স্থান-কালের ব্যবধানের কারণে তাঁদের সম্পর্কে প্রত্যয়ের মাত্রা হতো দুর্বলতর। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বর্ণনাসমূহ মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের ও অকাট্যভাবে প্রামাণ্য না হওয়ায় সেগুলো আদৌ প্রত্যয় উৎপাদক হতে পারে না।