জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 37520
ডাউনলোড: 3216

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 37520 / ডাউনলোড: 3216
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম মানুষ

মানব জাতির ইতিহাসে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) যে শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম মানুষ এ সত্য তাঁর ধর্মের অনুসারী নন এমন জ্ঞানী-গুণীরাও স্বীকার করেছেন। একজন নবীর মধ্যে যে সব ইতিবাচক গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তিনি তার সবগুলোরই পূর্ণ মাত্রায় অধিকারী ছিলেন এবং যে সব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থেকে একজন নবীর মুক্ত থাকা অপরিহার্য তিনি তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত ছিলেন। এহেন ব্যক্তি যখন নিজেকে নবী বলে দাবী করেন তখন যে কোনো সত্যপন্থী সুস্থ বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তাঁকে নবী হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য। পার্থিব লাভ-লোভ , পদমর্যাদা এবং পাছে লোকে কিছু বলে ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংস্কারের কাছে আত্মসমর্পণ করে নি এমন সুস্থ বিচারবুদ্ধি অবশ্যই তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে , পাশ্চাত্যের অনেক মনীষী কোরআন মজীদের জ্ঞানগর্ভতা ও সাহিত্যিক সৌন্দর্যের বিচারে এবং তাঁর জীবনাচরণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-কে মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ও একক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী ও সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে কার্যতঃ কোরআনকে তাঁর রচিত গ্রন্থ বলে দাবী করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা তাঁকে নবী বলে মানতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নিরক্ষর অবস্থায় এরূপ মহাজ্ঞানী হওয়া কী করে সম্ভব হলো এবং দীর্ঘ চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর এ কথিত অসাধারণ প্রতিভার মোটেই বহিঃপ্রকাশ না ঘটাই বা কী করে সম্ভব হলো - তার জবাব এ সব মনীষী প্রদান করেন নি।

তার চেয়েও বড় কথা , তাঁরা যে ব্যক্তির [হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর] সর্বোত্তম গুণাবলীতে মোহিত হয়ে তাঁকে মানবজাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম মানুষ বলে অভিহিত করলেন , তিনি স্বয়ং যেখানে নিজেকে নবী বলে দাবী করেছেন , সেখানে তাঁকে অসাধারণ প্রতিভা বলে অর্থাৎ নবী নন বলে অভিহিত করে কার্যতঃ তাঁকে পরোক্ষভাবে নবী হওয়ার মিথ্যা দাবীদার বলে অভিহিত করেছেন।

এভাবে উক্ত মনীষীগণ স্ববিরোধিতার আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ , বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে তিনি প্রকৃতই মানব জাতির শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম মানুষ বলে যদি তাঁদের প্রত্যয় জন্মে থাকে তাহলে তাঁরা তাঁর নবুওয়াত-দাবীকে শ্রদ্ধাভরে মেনে নিতে বাধ্য। আর তাঁরা যদি তাঁর নবুওয়াতের দাবীকে মিথ্যা মনে করে থাকেন (যা করলে অবশ্য তার কারণ ও প্রমাণ পেশ করা অপরিহার্য - যা তাঁরা করেন নি) তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকে তাঁর এতো সব প্রশংসা ভণ্ডামি বৈ নয়। কারণ , কোনো ব্যক্তি নবী না হয়েও নিজেকে নবী বলে দাবী করলে তাঁকে মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম মানুষ বলে অভিহিতকরণ এক ধরনের ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

বস্তুতঃ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহ ঐতিহাসিক সূত্রে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে , তা অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই এ সব মনীষী তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন , কিন্তু স্বীয় অন্তরের ব্যাধিগ্রস্ততার কারণে তাঁরা তাঁকে নবী বলে স্বীকার করার পরিবর্তে অসাধারণ প্রতিভা বলে তাঁর প্রশংসাকীর্তণ করে তাঁর নবুওয়াত থেকে অন্যদের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেছেন।

প্রতিশ্রুত নবী

রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা কিছু উল্লেখ করা হলো বিচারবুদ্ধির নিকট তাঁর নবুওযাত-দাবী গ্রহণযোগ্য হবার জন্য তা-ই যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও এতদসংক্রান্ত প্রত্যয়কে অধিকতর শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে প্রতিশ্রুত নবী সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।

কোরআন-পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ সমূহের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ও প্রামাণ্যতা প্রমাণ করা সম্ভব নয় - এ এক অকাট্য সত্য। এ সব ধর্মগ্রন্থ হয় পুরোপুরি মানবরচিত , নয়তো ঐশী গ্রন্থের বিকৃত ও পরিবর্তিত রূপ - এতেও সন্দেহ নেই। তবে বিকৃত ও পরিবর্তিত হলেও এ সব গ্রন্থে যে মূল গ্রন্থাবলীর কিছু কিছু বক্তব্য রয়ে গেছে তাতেও বিচারবুদ্ধি সন্দেহ পোষণ করে না। এমনকি মানবরচিত হলেও তাতে যে ঐশী গ্রন্থের কিছু কিছু বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাতেও সন্দেহ করার কারণ নেই। দ্বিতীয়তঃ বিচারবুদ্ধি এ-ও স্বীকার করে যে , বিকৃতির নায়করা কোনো দলীলে কেবল সেই সব বিষয়ই পরিবর্জন , বিকৃত বা সংযোজন করে থাকে যা তাদের অন্যায় স্বার্থের হেফাযতের জন্য প্রয়োজন। যা কিছু তাৎক্ষণিকভাবে তাদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক নয় তা বিকৃত বা বর্জন না করাই স্বাভাবিক। এভাবে এসব গ্রন্থে অতীতের ঐশী গ্রন্থাবলীর অনেক বক্তব্য রয়ে গেছে বলে বিচারবুদ্ধি রায় প্রদান করে।

অতীতের এ সব ধর্মগ্রন্থে একটি অভিন্ন বিষয় পাওয়া যায় , তা হচ্ছে একজন প্রতিশ্রুত নবী বা ত্রাণকর্তা বা অবতার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী। এ সব ভবিষ্যদ্বাণীতে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বজনীন বাণী নিয়ে একজন নবী বা ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের কথা যেমন বলা হয়েছে , তেমনি তাঁর নাম , আবির্ভাবস্থল , পরিচয়বাচক বিভিন্ন নিদর্শন , কার্যকলাপ ও তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাত-প্রতিঘাতের কথাও বলা হয়েছে। এর সবগুলোই একমাত্র হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর সাথে মিলে যায়। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে মূল ভাষার গ্রন্থ হারিয়ে যাওয়া ও অন্য ভাষায় অনূদিত হওয়ার কারণে কতক মূল নামও হারিয়ে যায় এবং তদস্থলে অনূদিত নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি ও স্থানের নামকে গুণবাচক বিশেষ্য গণ্য করে অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এ সব নামকে আরবী ভাষায় অনুবাদ করলে মূল নাম পাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয় , বার্নাবাসের ইনজীল্ সহ কতক গ্রন্থে এখনো সুস্পষ্ট ভাষায় মুহাম্মাদ , আহমাদ্ [হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর অপর নাম] ইত্যাদি মূল নাম বহাল দেখতে পাওয়া যায়। [বলা বাহুল্য যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর জন্মের পূর্ব থেকে চলে আসা এ সব গ্রন্থ যে মুসলমানদের রচিত নয় এবং এ সব ভবিষ্যদ্বাণীর পিছনে যে মুসলমানদের কোনো কারসাজি থাকতে পারে না - সে ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই।] এ বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে।

এবার আমরা এ সব ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বিচারবুদ্ধির আলোকে সাধারণভাবে পর্যালোচনা করবো। এ পর্যালোচনা এ জন্য প্রয়োজন যে , প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ সমূহের অনুসারী হবার দাবীদারগণ তাঁদের ধর্মগ্রন্থে একজন প্রতিশ্রুত নবী বা ত্রাণকর্তার আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী থাকার কথা স্বীকার করা সত্ত্বেও হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-ই যে সেই নবী বা ত্রাণকর্তা তা মেনে নিতে রাযী নন। তাঁদের এ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কয়েকটি সর্বজনস্বীকৃত ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত সত্যের পুনরুল্লেখ করে অতঃপর প্রতিশ্রুত নবী বা ত্রাণকর্তার আবির্ভাব বিষয়ক প্রশ্নের সমাধান নির্দেশের চেষ্টা করবো।

এ প্রসঙ্গে অকাট্যভাবে প্রমাণিত ও সর্বজনস্বীকৃত বিষয়গুলো হচ্ছে এই:

*মুসলমানদের দ্বারা সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে অনুসৃত হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর পূর্ববর্তী কোনো নবী প্রতিশ্রুত নবী বা প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা নন। কারণ , পূর্ববর্তী প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ধর্মগ্রন্থেই এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এর মানে ঐ সব গ্রন্থ রচনাকালে বা তার পূর্বে প্রতিশ্রুত নবীর আগমন ঘটে নি।

হযরত মূসা (আঃ) উক্ত প্রতিশ্রুত নবী নন। কারণ , তিনি নিজেকে প্রতিশ্রুত নবী বলে দাবী করেন নি। বরং তাওরাতে প্রতিশ্রুত নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যা তাঁর প্রতিশ্রুত নবী না হওয়ার সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ।

হযরত ঈসা (আঃ)ও সেই প্রতিশ্রুত নবী নন। কারণ , ইয়াহূদীরা তাঁকে আদৌ নবী বলে মানে না। অতএব , তাদের কাছে তাঁর প্রতিশ্রুত নবী হবার প্রশ্নই ওঠে না। আর খৃস্টানরা তাঁকে খোদার পুত্র মনে করলেও তিনি নিজেকে প্রতিশ্রুত নবী বলে দাবী করেছেন এমন কথা খৃস্টানদের উপস্থাপিত ইনজীল্ বলে দাবীকৃত কোনো পুস্তকেই নেই , বরং এ সব পুস্তকে তাঁর পক্ষ থেকে ত্রাণকর্তা (পারাক্লিতাস্)-এর আগমনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই ইয়াহূদী ও খৃস্টান উভয় ধর্মের অনুসারীরাই প্রতিশ্রুত মেসিয়াহ্ বা পারাক্লিতাসের তথা প্রতিশ্রুত নবীর আবির্ভাবের জন্য প্রতীক্ষা করছে।

একইভাবে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরাও কলির অবতার -এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে।

*হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাব ও ঐশী গ্রন্থ হিসেবে কোরআন মজীদকে পেশ করার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত ধর্মগ্রন্থসমূহের তিনটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: (1) এ সব গ্রন্থ অবিকৃত নেই। (2) এ সব গ্রন্থে কালোত্তীর্ণ ও বিশ্বজনীন তথা সকল যুগের সকল মানুষের জন্য ব্যবহারযোগ্য বিধিবিধান ও পথনির্দেশ নেই। (3) এ সব গ্রন্থে মানবজীবনের সকল দিকের জন্য পথনির্দেশ ও বিধিবিধান নেই। অর্থাৎ এ সব গ্রন্থ পথনির্দেশক হিসেবে অপূর্ণ।

*হযরত ঈসা (আঃ)-এর অন্তর্ধানের9 পর প্রায় দুই হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে একমাত্র হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) ছাড়া নবুওয়াতের গুণ-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নবুওয়াতের দাবীদার দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির আবির্ভাব হয় নি।

*এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) যদি নবী না হয়ে থাকেন তো মেনে নিতে হবে যে , সৃষ্টিকর্তা সুদীর্ঘ কাল যাবত মানব জাতিকে পথনির্দেশ ও পথনির্দেশক বিহীন অবস্থায় ফেলে রেখেছেন। মানবতা পথভ্রষ্টতার পঙ্কিলাবর্তে পড়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী হাবুডুবু খাচ্ছে , কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছেন না। তারা পথনির্দেশক ও ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষা করছে , কিন্তু তিনি তাদের সে প্রয়োজন পূরণ করছেন না। তিনি যে প্রতিশ্রুত নবী ও ত্রাণকর্তা পাঠাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন সে প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রয়োজন অনুভব করছেন না। এ প্রতিশ্রুতি যদি আরো পরে পূরণ করা হয় , তো এ দীর্ঘ সময়ের হতভাগ্য পথভ্রষ্টদের অবস্থা কী হবে ? তাদের পথভ্রষ্টতার জন্য কে দায়ী হবে ? স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই কি দায়ী হবেন না ?

কিন্তু পরম দয়াবান ও মেহেরবান পরম জ্ঞানী সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা তথা পরম প্রমুক্ত অপরিহার্য সত্তা সম্বন্ধে এমন হীন , নীচ ও সঙ্কীর্ণ ধারণা পোষণ করা চলে কি ?

এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াত-দাবীর বিষয়টিকে নিরপেক্ষভাবে ও বিচারবুদ্ধির আলোকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই:

*হযরত ঈসা (আঃ)-এর অন্তর্ধানের প্রায় 580 বছরের মাথায় হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) নবুওয়াত দাবী করেন যখন হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত ঐশী গ্রন্থও (যা তখন পর্যন্ত সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ) ব্যাপকভাবে বিকৃত হয়েছে এবং এর অনেকগুলো ব্যাপক প্রচলিত বিকৃত সংস্করণের ভিড়ে অপেক্ষাকৃত নির্ভুল সংস্করণ পরিত্যক্ত ও বিস্মৃত হয়ে গেছে।

*একজন নবীর মধ্যে যে সব অপরিহার্য গুণ থাকা প্রয়োজন তার সবগুলোই তাঁর মধ্যে পাওয়া যায় এবং যে সব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থেকে নবীর মুক্ত থাকা প্রয়োজন তা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন।

*পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহে প্রতিশ্রুত নবী বা ত্রাণকর্তার যে নাম পাওয়া যায় (যেমন: বার্নাবাসের ইনজীলে উল্লিখিত মুহাম্মাদ আহমাদ ) তাঁর নাম-ও তা-ই , অথবা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থে বর্ণিত নাম আরবী ভাষায় অনুবাদ করলে তাঁর নামের শব্দেই অনুবাদ করতে হয়। প্রতিশ্রুত নবীর আবির্ভাব ও তৎপরতার স্থান (যেমন: উটের দেশ , ফারান পর্বত ইত্যাদি) সংক্রান্ত এবং তাঁর জীবনে ঘটিতব্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী ইত্যাদির ভবিষ্যদ্বাণী তাঁর সাথে মিলে যায়।

*ঐশী গ্রন্থ হিসেবে তিনি যে গ্রন্থ পেশ করেছেন তা বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত অবিকৃত রয়েছে - এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই।

*তিনি নিজেকে (স্থান-কাল নির্বিশেষে তাঁর যুগ ও পরবর্তীকালীন) সকল মানুষের জন্য আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করেছেন - যা পূর্ববর্তী কোনো নবী করেছেন বলে জানা যায় না। তিনি আরো দাবী করেছেন যে , পূর্ববর্তী গ্রন্থাবলীতে তাঁরই আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।

*তিনি যে গ্রন্থ পেশ করেছেন তা সাহিত্যিক সৌন্দর্য ও জ্ঞানগর্ভতার বিচারে পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর এবং মানবিক ক্ষমতার উর্ধে। এ গ্রন্থ অনুরূপ মানসম্পন্ন কোনো গ্রন্থ বা এর কোনো অধ্যায় (সূরা)-এর মানসম্পন্ন কোনো অধ্যায় রচনার জন্য সমগ্র মানব প্রজাতিকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছে এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রতিটি চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান রয়েছে।

*তিনি মানবজীবনের প্রতিটি দিক-বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান , মূলনীতি ও পথনির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি ঐশী গ্রন্থ হিসেবে দাবী করে যে গ্রন্থ (কোরআন) পেশ করেছেন তা মানবিক জীবনবিধানকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে বলে তথা পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান পেশ করেছে বলে দাবী করেছে।

*কোরআন সীমাহীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার। বিস্ময়কর প্রকাশকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মধ্যম আয়তনের এ গ্রন্থে সকল জ্ঞানকে এমনভাবে নিহিত রাখা হয়েছে যে , যতো বার নতুন করে অধ্যয়ন-গবেষণা করা হচ্ছে ততোই তা থেকে নতুন নতুন জ্ঞান-উপকরণ ও দিকনির্দেশ বেরিয়ে আসছে - যা মানবিক গ্রন্থে অসম্ভব। এমন কোনো যুগজিজ্ঞাসা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি যার জবাব দানে এ গ্রন্থ ও এ নবীর রেখে যাওয়া পথনির্দেশ অপারগ হয়েছে।

*তিনি নিজেকে সর্বশেষ নবী বলে দাবী করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে , তাঁর পরে আর কোনো নতুন নবীর আগমন ঘটবে না।

এ সব বিষয় বিবেচনা করার পর মুক্ত বিবেক ও সুস্থ বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-কে প্রতিশ্রুত নবী ও ত্রাণকর্তা বলে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানো সম্ভব কি ? কেবল স্বার্থান্ধতাই এ সত্য মেনে নেয়া থেকে কাউকে বিরত রাখতে পারে। তাঁর এ পরিচয় জানার পরেও যারা মুখে তাঁকে অস্বীকার করছে তাদের অন্তর অবশ্যই তাঁকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়। তাদের অন্তরের সাক্ষ্য ও মুখের অস্বীকৃতি উভয়ই তাদের দেহের প্রতিটি কোষে , হয়তোবা প্রতিটি পরমাণুতে , লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে যা একদিন তাদের সামনে উন্মোচিত হয়ে তাদের স্ববিরোধিতার অপরাধকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দেবে।