জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 37389
ডাউনলোড: 3180

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 37389 / ডাউনলোড: 3180
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

সৃষ্টিলোকের আয়তন ও বস্তুর গঠনকাঠামো

সৃষ্টিলোকের ব্যাপকতা কতোখানি ?

এ পর্যন্ত মানবিক জ্ঞান সৃষ্টিলোকের যতোখানি সম্বন্ধে জানতে পেরেছে তারই আয়তন চতুর্দিকে বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্ব। তবে নক্ষত্রবিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেন যে , নিঃসন্দেহে তাঁদের জ্ঞানের বাইরেও সৃষ্টিলোকের ব্যাপ্তি বিরাজমান।

এবার সৃষ্টিলোকের আয়তনের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টির প্রতি , বিশেষ করে বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সৃষ্টির প্রতি তাকানো যাক। বৃহত্তম সৃষ্টির দৃষ্টান্ত হচ্ছে নক্ষত্র ও ছায়াপথসমূহ। আর ক্ষুদ্রতম সৃষ্টি হচ্ছে পরমাণু - সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক ধারণায় ইলেক্ট্রন , প্রোটন ও নিউট্রন। আমাদের বাসস্থান এই পৃথিবীর বুকে বিরাজমান প্রাণশীল বা সচল সৃষ্টির মধ্যে ক্ষুদ্রতম হচ্ছে কোনো কোনো ধরনের রোগজীবাণু এবং বৃহত্তম হচ্ছে এক ধরনের তিমি মাছ। তবে এ বিশাল সৃষ্টিলোকের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা এবং থাকলে আমাদের এ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ও বৃহত্তম প্রাণশীল সৃষ্টির তুলনায় ক্ষুদ্রতর ও বৃহত্তর প্রাণশীল সৃষ্টি আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই , তবে থাকা অসম্ভব নয়।

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার জগতে যে সব সৃষ্টিকে ইন্দ্রিয়নিচয় দ্বারা বা জ্ঞানগতভাবে প্রত্যক্ষ করছি তার মৌলতম গঠনকাঠামোতে এমন বিস্ময়কর বৈচিত্র্য রয়েছে যে সম্পর্কে চিন্তা করলে আমাদের সকল সাধারণ জ্ঞান মিথ্যা প্রমাণিত হবে। উদাহরণস্বরূপ , আমরা জড় পদার্থকে কঠিন , তরল ও বায়বীয় এই তিন রূপে দেখতে পাই , তবে কোনো কোনো পদার্থ তাপমাত্রা ভেদে রূপ পরিবর্তন করে উপরোক্ত তিন রূপই পরিগ্রহ করে। আমরা কঠিন ( solid)বস্তুকে সংবদ্ধ বস্তুকণাসমূহ বলে ধারণা করি , কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা মোটেই সংবদ্ধ নয় ; যে কোনো কঠিন বস্তুরই অণুসমূহের মধ্যে বিরাট ফাঁক রয়েছে যদিও আমরা চর্মচক্ষে তা দেখতে পাই না। পদার্থের অণুসমূহের প্রকৃত আয়তন ও তার মধ্যকার ফাঁকের আয়তনের অনুপাত কেমন ? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে , এই ফাঁকসমূহ পুরোপুরি দূর করে পদার্থের অণুগুলোকে প্রকৃতই সংবদ্ধ করতে পারলে আমাদের এই পৃথিবীর আকার হয়তো একটি ফুটবলের চেয়েও ছোট হবে।

শুধু তা-ই নয় , আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে , প্রতিটি বস্তুর অণুই কতগুলো পরমাণু সমবায়ে গঠিত। আর প্রতিটি পরমাণু গঠিত এক বা একাধিক প্রোটন ও নিউট্রন এবং তাকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রনের আবর্তনের দ্বারা।

প্রায় উপবৃত্তাকারভাবে ইলেক্ট্রনের আবর্তন এমন এবং এতোই দ্রুতগতি যে , তার ফলে একটিমাত্র ইলেক্ট্রনই একটি প্রোটনের চারদিকে একটি দুর্ভেদ্য খোলস তৈরী করতে সক্ষম। প্রকৃত পক্ষে এ খোলসটি স্বয়ং কোনো প্রকৃত বস্তু নয় ; কেবল দ্রুতগতি ঘূর্ণনের কারণে ইলেক্ট্রনটি সময়ের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশের মধ্যেই তার ঘূর্ণনপথের প্রতিটি বিন্দুতে প্রত্যাবর্তন করে বিধায় খোলসরূপ এ আপেক্ষিক অস্তিত্বের উদ্ভব ঘটে।

বিষয়টি একটি বৈদ্যুতিক পাখার ব্লেডগুলোর ঘূর্ণন থেকে বুঝা যেতে পারে। একটি বৈদ্যুতিক পাখার তিনটি বা চারটি ব্লেড থাকে এবং প্রতি দুই ব্লেডের মাঝখানে বিরাট জায়গা ফাঁকা থাকে। পাখাটি যখন বন্ধ থাকে তখন খুব সহজেই দুই ব্লেডের মাঝখান দিয়ে তার কেন্দ্রে অবস্থিত বডি স্পর্শ করা যেতে পারে। কিন্তু পাখাটি চালু থাকা অবস্থায় কেউ কোনো লাঠি দ্বারা যে কোনো দুই ব্লেডের মাঝখান দিয়ে পাখাটির বডিতে আঘাত করার চেষ্টা করলে তাতে সফল হবে না ; পাখার ব্লেডগুলো একটি চাকতির ন্যায় কাজ করবে এবং পাখার বডি পর্যন্ত লাঠিটির পৌঁছা প্রতিহত করবে। মজার ব্যাপার হলো , পাখাটির ব্লেডগুলোর ঘূর্ণনের গতি যদি শতগুণ বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে বাহ্যতঃ তা পুরাপুরি চাকতিতে পরিণত হবে এবং ব্লেডগুলা অবিশ্বাস্য অল্প সময়ে তার পরিধি-পথের প্রতিটি বিন্দুতে ফিরে আসার ফলে কারো পক্ষে তার গতি অনুভব করাই সম্ভব হবে না , বরং তাকে একটি গতিহীন কঠিন চাকতি বলে মনে হবে এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করলেও তা-ই মনে হবে ; ঘূর্ণনরত পাখায় হাত দেয়ার যে বিপদ তা-ও ঘটবে না। তা সত্ত্বেও এটা অনস্বীকার্য যে , সেখানে কোনো চাকতির অস্তিত্ব নেই। কারণ , তার গতি বন্ধ হয়ে গেলে বা হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এলেই তার প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পাবে। পাখার ব্লেডের প্রান্তভাগ সমতলে অঙ্কিত বৃত্তের পরিধির ন্যায় পথে ঘুরে প্রতিবার ঘূর্ণনের সূচনাবিন্দুতে ফিরে আসে বিধায় সে একটি আপেক্ষিক চাকতি তৈরী করে।

কিন্তু পরমাণুকেন্দ্রের চতুর্দিকে পরিক্রমণরত ইলেক্ট্রন বৃত্তাকার পথে নয় , বরং প্রায় উপবৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে বিধায় সে প্রতিবার ঘূর্ণনের সময়ই তার পূর্ববর্তী ঘূর্ণনপথের বিন্দুগুলো থেকে কিছুটা দূর দিয়ে অতিক্রম করে , ফলে তার ঘূর্ণনপথের রেখাগুলো একটি বলের ওপর সূতা জড়িয়ে বলটিকে ঢেকে দেয়ার মতো একটি আপেক্ষিক বল তৈরী করে। এক্ষেত্রে উক্ত ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের প্রকৃত আয়তনের যোগফলের তুলনায় ঐ আপেক্ষিক খোলসটির আয়তন হয় অনেক বেশী (হয়তো হাজার হাজার গুণ বেশী)। আর প্রোটন , নিউট্রন ও ইলেক্ট্রন সম্বলিত এই আপেক্ষিক বলটিই পরমাণু নামে পরিচিত।

ইলেক্ট্রন , প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যা ও বিন্যাস ( pattern of combination)ভেদে বিভিন্ন ধরনের পরমাণু রয়েছে যা দ্বারা বিভিন্ন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আলো ও শক্তি। কিন্তু বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয় ; পরমাণুকেন্দ্রের একেকটি প্রোটন ও নিউট্রন গঠিত হয় আঠারো রকমের কোয়ার্কের মধ্য থেকে তিনটি কোয়ার্ক নিয়ে। কিন্তু কোয়ার্ক এবং ইলেক্ট্রনও অন্য কিছুর দ্বারা গঠিত যৌগিক সৃষ্টি কিনা বিজ্ঞান সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলতে পারে নি। প্রশ্ন হচ্ছে , বস্তুর মূল উপাদানের এহেন বিস্ময়কর গঠনকাঠামো গড়ে ওঠা কি কোন মহাবিজ্ঞানী ও মহাশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আদৌ সম্ভবপর ?

কোন্ সে কুশলী শিল্পী ?

আমরা এখানে সৃষ্টিলোকের সীমাহীন বিস্ময়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কতোগুলো বিস্ময়ের ওপর দৃষ্টিপাত করবো।

উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহের মধ্যে বৈচিত্র্য , অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কল্যাণকারিতা , পুষ্টি ও রোগনিরাময়ক্ষমতা , শিল্প-সভ্যতায় এ সবের অবদান ইত্যাদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা সেদিকে না গিয়ে যদি শুধু এর সৌন্দর্যের দিকে তাকাই তো আমাদেরকে ভেবে বিস্মিত হতে হয় যে , কতো বড় শিল্পী তিনি যিনি এ পৃথিবীকে উদ্ভিদরাজি দিয়ে এমন সুন্দর করে সাজিয়েছেন!

উদ্ভিদরাজির সামগ্রিক সৌন্দর্য ছাড়াও বিভিন্ন উদ্ভিদের নিজস্ব সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করলে অধিকতর বিস্মিত হতে হয়। কতক উদ্ভিদের গঠনপ্রকৃতি দেখে মনে হয় , কোনো সুনিপুণ শিল্পী বিশেষভাবে তাঁর পসন্দমাফিক একে সৃষ্টি করেছেন। সার্ভ্ নামক এক প্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষ আছে যা প্রায় একশ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। কিন্তু ছোট - বড় সর্বাবস্থায়ই দূর থেকে দেখে মনে হয় যে , একটি বিশালায়তন কলার মোচাকে বোঁটা নীচের দিকে রেখে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পান্থপাদক গাছের ( traveller s tree)দিকে লক্ষ্য করে চিন্তা করে দেখেছেন কি কীভাবে সে তার ডাগরগুলোকে দুই বিপরীত দিকে বিন্যস্ত করে বিস্তার করে দিয়েছে এবং ভুলেও অপর দুই দিকে একটি ডাগরও বিস্তৃত হচ্ছে না ! ? এর চেয়েও বিস্ময়কর এক ধরনের ছোট পুস্প - উদ্ভিদ যার ফুলের পাপড়িগুলো পূর্ণ বিকশিত হলে দেখা যায় যে , ফুলটির কেন্দ্রস্থল থেকে সবগুলো পাপড়ির গোড়ার দিক জুড়ে একটি কালো প্রজাপতি অঙ্কিত রয়েছে , যেন কোনো খেয়ালী শিল্পী রং - তুলি দিয়ে ফুলটির বুকে প্রজাপতির ছবি এঁকে দিয়েছেন।

কোন্ সে শিল্পী যিনি ফুলের বুকে এভাবে প্রজাপতি আঁকেন ? নাকি কোনো শিল্পী ছাড়াই এমনি এমনিই ফুলের বুকে এ ধরনের ছবি অঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে ?

কাঁচ গলিয়ে পেপারওয়েট বানানোর সময় যে কারিগর (আসলে শিল্পী) তার মাঝে সুপরিমিতভাবে রং ফুঁকে দিয়ে চমৎকার ফুল তৈরী করেন তাঁর কর্মকুশলতা ভেবে আমরা চমৎকৃত হই। একজন আতশবাযী প্রস্তুতকারক এমনভাবে রঙিন বারূদ বিন্যস্ত করে আতশবাযী তৈরী করেন যে , অগ্নিসংযোগের পর সেটি আকাশে উঠে একটি মনোরম সৌন্দর্যের অধিকারী ফুল বা অন্য কোন দৃশ্য তৈরী করলে আমরা চমৎকৃত হয়ে তার প্রশংসা করি। আতশবাযীটি তৈরী করার সময় হাযির না থাকলেও আমরা আকাশে তা দেখেই তার পিছনে কুশলী শিল্পীর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হই ; কখনো মনে করি না যে , এটি এমনি এমনিই তৈরী হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি রঙ ও বারূদ রাখা আছে এমন একটি গুদামে আগুন লেগে গেলে তা থেকে কেউ কখনো এ ধরনের দৃশ্যের উৎপত্তি হতে দেখে নি , যদিও তা-ও কার্যকারণবিহীন নয় , তবে তার পিছনে কোনো কুশলী শিল্পীর পরিকল্পনা থাকে না বলেই তাতে কোনো সুন্দর দৃশ্য তৈরী হয় না। কিন্তু কী আশ্চর্য! আমরা আতশবাযী দেখে তার পিছনে একজন শিল্পীর অস্তিত্ব স্বীকার করি বটে , কিন্তু ফুলের বুকে প্রজাপতির ছবি অঙ্কিত দেখে আমরা প্রীত বোধ করলেও তার পিছনে কোনো কুশলী শিল্পীর কম্পিউটারাইজড্ প্রোগ্রাম থাকার কথা মানতে চাই না!

সৃষ্টিলোকের বিস্ময় ক্ষুদ্রতম পিপিলিকা

খালি চোখে দেখার মতো ক্ষুদ্রতম প্রাণশীল সৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের ছোট পিঁপড়া যার শরীর একগাছি চুলের চেয়ে বেশী মোটা নয় এবং দৈর্ঘে সম্ভবতঃ এক সেন্টিমিটারের এক দশমাংশের বেশী নয়। আর তার পাগুলো তুলার আঁশের মত সরু , ফলে সে যখন পথ চলে তখন তার পাগুলো হাল্কা ছায়ার মতো মনে হয়। যে কোনো পিঁপড়াই তার শরীরের ওযনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী ওযন অনায়াসে বহন করে নিয়ে যেতে পারে। শরীরের আয়তন ও ওযনের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে সম্ভবতঃ পিঁপড়াই সর্বাধিক ভার বহনক্ষম প্রাণী বলে প্রমাণিত হবে। তেমনি শরীরের দৈর্ঘ্য অনুপাতে পথ অতিক্রমের বিবেচনায় সম্ভবতঃ পিঁপড়াই প্রাণীকুলের মধ্যে সর্বাধিক দ্রুতগামী। শুধু তা-ই নয় , পিঁপড়া হচ্ছে সমাজবদ্ধ জীবন যাপনকারী প্রাণী যার সমাজবদ্ধতার মান মানুষের সমাজবদ্ধতার মানের সমান না হলেও খুবই কাছাকাছি। তেমনি পিঁপড়ারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী , যদিও মানুষের মতো বুদ্ধিমান নয়।

ক্ষুদ্রতম প্রজাতির পিঁপড়া ও বৃহত্তম প্রাণশীল সৃষ্টি তিমির মাঝখানে অসংখ্য প্রাণশীল সৃষ্টি রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সৃষ্টিলোকে প্রাণশীল সৃষ্টিপ্রজাতিসমূহের সংখ্যা ও তার প্রকরণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা এখনো মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় নি। এ পর্যন্ত যে সব প্রজাতিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে তার এক অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি প্রাণী-প্রজাতি রয়েছে। 1948 সালে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঐ সময় পর্যন্ত ছয় লক্ষ 86 হাজার জাতের পোকা-মাকড় আবিষ্কৃত হয় এবং এর পর থেকে এ তালিকায় প্রতি বছর গড়ে ছয়-সাত হাজার জাতের নতুন পোকা-মাকড়ের নাম যোগ হচ্ছিলো। ধারণা করা হয়েছে যে , পৃথিবীর বুকে কম পক্ষে এক কোটি জাতের পোকা-মাকড় রয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত বিশ হাজার জাতের মাকড়শা , এক লাখ জাতের প্রজাপতি , বাইশ হাজার জাতের পিঁপড়া , আড়াই হাজার জাতের সাপ এবং এভাবে অন্যান্য প্রাণীর অসংখ্য জাত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

এবার সেই ক্ষুদ্রতম পিপিলিকা প্রসঙ্গে আসা যাক।

একটি অত্যাধুনিক সুপার কম্পিউটার তৈরী করাই বেশী কঠিন , নাকি ক্ষুদ্রতম পিপিলিকাটিকে সৃষ্টি করাই বেশী কঠিন ? নিঃসন্দেহে পিপিলিকাটিকে সৃষ্টি করাই বেশী কঠিন। এ কারণে বিজ্ঞানীরা সুপার কম্পিউটার তৈরী করতে সক্ষম হলেও এবং কারখানায় তা বিপুল সংখ্যায় উৎপাদন করা সম্ভব হলেও অন্য পিপিলিকার সাহায্য ব্যতীত গবেষণাগারে একটি ক্ষুদ্র পিপিলিকা সৃষ্টি করা বিজ্ঞানীদের পক্ষে আজো সম্ভব হয় নি। তাঁরা যদি ভবিষ্যতে তা করতে সক্ষম হন তো তাতেও প্রমাণিত হবে যে , পিপিলিকা সৃষ্টি করা সুপার কম্পিউটার তৈরীর তুলনায় অধিকতর কঠিন , এ কারণেই বিজ্ঞানের যে পরিমাণ উন্নতি সুপার কম্পিউটার তৈরীকে সম্ভব করেছে পিপিলিকা সৃষ্টির জন্যে তার তুলনায় অনেক বেশী বৈজ্ঞানিক উন্নতি অপরিহার্য। এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে , যে পিপিলিকা সৃষ্টি করা সুপার কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশী কঠিন ও জটিল কাজ তা কি কোনো মহাবিজ্ঞানী স্রষ্টা ছাড়াই কেবল প্রকৃতিতে ঘটনাক্রমে ( accidentally)সৃষ্টি হতে পেরেছে ?

মানুষ প্রাকৃতিক বিধিবিধানের স্রষ্টা নয় ; সে শুধু প্রাকৃতিক বিধিবিধান উদ্ঘাটন করতে পারে। এই উদ্ঘাটিত বিধিবিধানকে কাজে লাগিয়ে সে সুপার কম্পিউটার তৈরী করেছে। আমরা যদি কোথাও কোনো বিশালাকার কারখানা দেখতে পাই যেখানে কোনো মানুষ নেই , বরং বিভিন্ন যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে খনি ও অন্যান্য উৎস থেকে বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ ও রাসায়নিক দ্রব্য বা তার মৌল উপাদান সংগ্রহ করে এনে কারখানার নির্দিষ্ট অংশে বা যন্ত্রে পৌঁছে দিচ্ছে এবং কারখানার বিভিন্ন অংশ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেলিভিশন , কম্পিউটার , গাড়ী ইত্যাদি বেরিয়ে আসছে তখন আমরা বলবো না যে , এ যন্ত্রগুলো এমনি এমনিই গড়ে উঠেছে ও কাজ করছে। বরং আমরা বলবো যে , কেউ এগুলো তৈরী করে সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম দিয়ে চালু করে দিয়ে গেছে এবং এ কারণেই এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। কিন্তু কী আশ্চর্য! কতক লোক রোবট বা কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশী জটিল ও কঠিন কাজ পিপিলিকা সৃষ্টির জন্যে কোনো মহাজ্ঞানী স্রষ্টা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছে না।

একটি বড় আকারের (ধরুন এক ইঞ্চি লম্বা) পিপিলিকার যে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে একটি ক্ষুদ্রতম প্রজাতির পিপিলিকারও তা রয়েছে। তার ছ টি পা রয়েছে , খাদ্য খাবার জন্য মুখ , কামড় দেয়ার জন্যে দু টি দাঁত , তিনটি ক্ষুদ্র চোখ , শ্বাসপ্রশ্বাসযন্ত্র (তা যে ধরনের ও যতো সরলই হোক না কেন) , খাদ্য ধারণের জন্যে পেট ও তা হযমের জন্যে পরিপাকযন্ত্র (তা যে ধরনের ও যতো সরলই হোক না কেন) , মলদ্বার , যৌনাঙ্গ (ও স্ত্রী পিপিলিকার তলপেটে ডিম উৎপাদনের আধার) ইত্যাদি এবং মাথার মধ্যে মস্তিষ্ক তথা প্রয়োজনীয় সব কিছুই রয়েছে। সে তার মাথায় অবস্থিত দু টি শিং-এর সাহায্যে রাসায়নিক উপাদান , বায়ুপ্রবাহের দিক ও কম্পন নির্ণয় করে এবং বাণী পাঠায় ও গ্রহণ করে। কোনো কোনো অন্ধ প্রজাতির পিঁপড়া এর দ্বারা দর্শনের প্রয়োজনও পূরণ করে। তারা যৌন সংসর্গ করে এবং তার ফলে স্ত্রী পিপিলিকা ডিম পাড়ে যার মাধ্যমে তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটে। তারা খাদ্য সংগ্রহ করে এবং তা শুধু খায় না , বরং বে-মওসূমের জন্যে সঞ্চয় করেও রাখে।

পিঁপড়ারা সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করে ; তাদের সমাজে কর্মবিভাজন আছে ; যেমন: কাজ করার জন্যে শ্রমিক আছে , বাসা পাহারা দেয়া ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে সৈনিক আছে এবং সমাজকেন্দ্রে একজন রাণী আছে। তারা তাদের জন্যে ঠিক যেমনটি উপযোগী তেমন ধরনের বাসস্থান নির্মাণ করে থাকে।

পিঁপড়াদের শরীরে আত্মরক্ষার জন্যে শত্রুকে কামড়াবার উপযোগী দাঁত আছে এবং শত্রুর ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিয়ে তাকে কাবু করার জন্যে তাদের কাছে বিষের থলি আছে। এ বিষ এতোই মারাত্মক যে , সূচের ডগার ক্ষুদ্রতম বিন্দুতে যতোটুকু বিষ ধারণ করা সম্ভব মাত্র ততোটুকু বিষ একজন মানুষের চামড়ার সামান্য অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে দিলেই তাতে যে অসহনীয় তীব্র জ্বালা হয় তা ঐ মানুষটিকে পরমাণুর অস্তিত্ব ও পারমাণবিক শক্তির ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। আর একটি সূচের পিছন দিক এ বিষে স্পর্শ করলে তাতে যে পরিমাণ বিষ লেগে যাবে এ বিষ ততোটুকু পরিমাণে কোনো মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে সাথে সাথে তার মৃত্যু অনিবার্য।

কিন্তু এ ভয়ঙ্কর বিষ স্বয়ং পিপিলিকার শরীরেই উৎপন্ন হয় এবং এ বিষের থলি বয়ে বেড়ানো সত্ত্বেও এতে তার নিজের সামান্যতম ক্ষতিও হয় না। শুধু তা-ই নয় , এ বিষ কার বিরুদ্ধে কতোটুক ব্যবহার করতে হবে সে ব্যাপারে তার মাত্রাজ্ঞান বিস্ময়করভাবে নিখুঁত। আশ্চর্যের বিষয় এই যে , সে এ বিষ শুধু তার শত্রুকে কাবু করার জন্যেই ব্যবহার করে না , বরং খাদ্য সংগ্রহের জন্যে অর্থাৎ শিকার ধরার জন্যেও ব্যবহার করে।

সে তার নিজের চেয়ে অনেক গুণ বড় কীট-পতঙ্গও শিকার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সে এমন নির্ভুল হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে সঠিক মাত্রায় শিকারের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে যার ফলে শিকার মারা যায় না , বরং চলচ্ছক্তিরহিত হয়ে পড়ে। তারপর সে একাই অথবা অনেক বেশী বড় আকারের শিকার হলে সকলে মিলে শিকারকে তাদের বাসস্থানে টেনে নিয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হলে সবাই মিলে ভক্ষণ করে , নয়তো খারাপ মওসুমে ভক্ষণের জন্যে গুদামে জমা করে রাখে। শিকারের শরীরে প্রয়োগকৃত বিষের মাত্রা নির্ভুল না হলে তা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কম হলে শিকার চলচ্ছক্তি হারাবে না , বরং পালিয়ে যাবে ; অন্যদিকে পরিমাণ বেশী হলে বিষক্রিয়ার ফলে শিকারটি মারা যাবে এবং এমতাবস্থায় তা খেলে ভক্ষণকারীদের জন্যে স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি হবে , এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। আর তা গুদামজাত করে রাখলে তা পচে নষ্ট হয়ে যাবে ; এমন কি পচে না গেলেও তা খাওয়ার পরিণতি হবে ভয়াবহ। কিন্তু পিঁপড়া যখন শিকারের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে তখন ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে কম হলেও (শিকারী পিঁপড়ার থলিতে মওজূদ বিষ যথেষ্ট না হওয়ায় বা শিকারটির সহনশক্তি ধারণার চেয়ে বেশী হওয়ায়) কখনোই তা প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে বেশী হয় না। ফলে এ ধরনের শিকার দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত পিঁপড়াদের গুদামে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকে , মারা যায় না। (অবশ্য পিঁপড়ারা বিষ ছাড়া স্বাভাবিক কারণে মরে যাওয়া পোকা-মাকড়ের মৃতদেহও ভক্ষণ করে এবং এ ধরনের শুকনা মৃতদেহ গুদামজাত করেও রাখে।)

পিঁপড়াদের সমাজবদ্ধ জীবন যাপন সম্পর্কে সর্বসাম্প্রতিক আবিষ্কারসমূহ রূপকথার কল্পকাহিনীকেও হার মানায়।

এতোদিন যাবত ধারণা করা হতো যে , পিঁপড়াদের সমাজবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ জীবন আরো অনেক ইতর প্রাণীর সংঘবদ্ধ জীবনের ন্যায় স্রেফ সহজাত প্রবণতার ফল। কিন্তু সর্বসাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যাদি অনুযায়ী মোটেই তা নয় ; তাদের সমাজবদ্ধতা কোনো যান্ত্রিক ধরনের বা স্বয়ংক্রিয় সমাজবদ্ধতা নয়। বরং বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষের মতো তারাও বুদ্ধিমান প্রাণী এবং এ কারণে মানুষের সমাজের মতোই তারা সর্বজনীন কল্যাণের স্বার্থে জেনে-বুঝে স্বেচ্ছায় সমাজবদ্ধ জীবন গড়ে তোলে।

তারা তাদের সমাজের শাসিকা রাণীকে নিজেরা নির্বাচন করে , তবে মানুষের সমাজের সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীন রাজা বা রাণীর ন্যায় পিঁপড়াদের রাণী যে কেবল তাদের শৃঙ্খলার কেন্দ্র তা নয় , বরং সে একজন সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসিকা। মানব সমাজে যেমন কোনো কোনো শাসক বা শাসিকা লৌহমানব বা লৌহমানবী হয়ে থাকেন পিপিলিকাদের রাণী সর্বাবস্থায়ই সে ধরনের একজন লৌহপিপিলিকা হয়ে থাকে। এমনকি সে মানুষ-স্বৈরশাসকের মতোই পুরোপুরি স্বৈরাচারী হয়ে থাকে। অবশ্য মানুষ স্বৈরশাসক যেমন বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে আত্মসংযমের পরিচয় দিতে বাধ্য হয় ঠিক সেভাবেই পিপিলিকাদের রাণীও পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে আত্মসংযমের পরিচয় দিলেও সাধারণতঃ সে তার খেয়ালখুশী মোতাবেক সমাজ পরিচালনা করে থাকে এবং সে শুধু অন্যদেরকে খাটিয়ে ও অন্যদের শ্রমের ফল ভোগ করে আরাম-আয়েশ করেই ক্ষান্ত থাকে না , বরং কোনো কারণে কেউ তার বিরাগভাজন হলে তার আর রক্ষা নেই ; মৃত্যুদণ্ডই হচ্ছে তার একমাত্র প্রাপ্য। আর বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই যে , মানুষের সমাজে গুপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠনসমূহ যেভাবে দলের অভ্যন্তরীণ অপরাধীকে (বিশ্বাসঘাতককে) মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা আত্মহত্যার মাধ্যমে অপরাধীকে নিজের হাতেই কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেয় বলে শোনা যায় , ঠিক সেভাবেই পিপিলিকা সমাজে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য এটাকে সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে গণ্য করা হয়।

এর চেয়েও বিস্ময়কর হচ্ছে এই যে , অনেক সময় রাণীর চরম যুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রজাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অগ্রবর্তী হয়ে রাণীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং অত্যন্ত গোপনে সুসংগঠিত দল গঠন করে অতঃপর মওকা মতো একযোগে রাণীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করে , এরপর তারা নতুন রাণী নির্বাচিত করে। আর এটা করতে গিয়ে তাদেরকে রাণীর ঘনিষ্ঠতম অনুগত সৈনিকদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় এবং এ যুদ্ধে স্বভাবতঃই উভয় পক্ষেই বহু হতাহত হয় এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত পক্ষের কারোই আর আর বেঁচে থাকার অধিকার থাকে না।

এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে! এতো বুদ্ধিমান , এতো কর্মঠ ও এতো সুশৃঙ্খল এবং একই সাথে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এ ক্ষুদ্রতম সামাজিক প্রাণীর সৃষ্টি , জীবনধারা , বুদ্ধিমত্তা ও সমাজবদ্ধতা কি নিজে নিজেই এবং কোনো মহাজ্ঞানী ও নিখুঁত পরিকল্পনাকারী সৃষ্টিকর্তার ভূমিকা ছাড়াই অস্তিত্বলাভ করা সম্ভবপর ?

এভাবে সৃষ্টিলোকের কোটি কোটি প্রজাতির প্রতিটির গঠনপ্রকৃতিই একজন মহাজ্ঞানময় ও নিখুঁত পরিকল্পনাকারী সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করছে।

স্বয়ং মানুষের অস্তিত্বও সে সাক্ষ্যই দিচ্ছে। যে নাস্তিক মানুষটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করছে এবং নিজেকে বস্তুমাত্র ও বস্তুগত ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার ফসলমাত্র বলে দাবী করছে সে কি কোনোদিন তার শরীরের সকল রহস্য নিয়ে চিন্তা করে দেখেছে ? তার শরীরের রক্ত-মাংস , অস্থি-মজ্জা , নখ-চলু , শিরা-ধমনী , স্নায়ুতন্ত্র , মস্তিষ্ক , ফুসফুস , হৃদপিন্ড ইত্যাদি মিলিয়ে সে কতো বড় এক জটিল সৃষ্টি এবং কীভাবে তার এ শরীরযন্ত্রের প্রতিটি অংশ পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা কি সে লক্ষ্য করেছে ? তার শরীরের অভ্যন্তরে যে আরো কোটি কোটি স্বাধীন প্রাণশীল অস্তিত্ব (শ্বেতকণিকা , রোগজীবাণু , শুক্রকীট ইত্যাদি) বিরাজ করছে তা নিয়ে কি সে কখনো চিন্তা করে দেখেছে ?