ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস0%

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস লেখক:
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাযী
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ:

ভিজিট: 16473
ডাউনলোড: 3350

পাঠকের মতামত:

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16473 / ডাউনলোড: 3350
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বাংলা

64. ইজতিহাদের দরজা সব সময় উন্মুক্ত :

আমরা বিশ্বাস করি : ইজতিহাদের দরজা শারীয়াতের সমস্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্যে উন্মুক্ত এবং মতামতদানে যোগ্যতা সম্পন্ন সমস্ত ফকীহগণ আল্লাহর হুকুম- আহকামসমূহকে উল্লেখিত চারটি উৎস থেকে বের করতে পারেন। আর তা সে সমস্ত মানুষদের হাতে দিবেন যাদের মাসয়ালা-মাসায়েল নির্ণয় করার যোগ্যতা নেই। যদিও তা পূর্ববর্তী ফকীহ্গণের মতামতের সাথে তফাৎ পরিলক্ষিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি যে সমস্ত লোক ফীকাহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে মতামতদানের যোগ্যতা সম্পন্ন নয় তাদেরকে সব সময় সে সমস্ত জীবিত ফকীহগণের কাছে যেতে হবে যাঁরা স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জ্ঞাত এবং তাঁদের ফতোয়া মোতাবেক আমল করবে। যারা ফীকাহ্ শাস্ত্রে পণ্ডিত নন তারা যেন অবশ্যই যারা এ বিষয়ে পাণ্ডিত্ব অর্জন করেছেন তাদেরকে রুজু করে বা তাদেরকে তাকলীদ করে। আর তাদেরকে ফীকাহ্ শাস্ত্রের পণ্ডিতদের সাথে যোগাযোগ করাকে একটি স্বতঃসিদ্ধ কাজ বলে জানি। আমরা এ সমস্ত ফকীহ্গণকে মার্যায়ে তাকলীদ নামে স্মরণ করে থাকি। মৃত ফকীহর উপর তাকলীদের সূচনাকে জায়েয মনে করি না। অবশ্যই মানুষদেরকে জীবিত ফকীহর উপর তাকলীদ শুরু করতে হবে -যাতে করে ফীকাহ্ শাস্ত্র সব সময় আন্দোলিত ও পূর্ণতার দিকে এগুতে থাকে।

65. ইসলামে কোন বিষয়ই বিধানহীন নেই :

আমরা বিশ্বাস করি : ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই যার আইন-কানুন ও বিধি-বিধান অবর্তমান। অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয়াবলীর হুকুম-আহ্কাম কিয়ামত পর্যন্ত সময়- কালের জন্যে বর্ণিত হয়েছে -যা কখনো বিশেষভাবে আবার কখনো সাধারণ ও সামগ্রিকভাবে বা কোন বিষয়ের প্রসঙ্গক্রমে। এ কারণেই আমরা কোন ফকীহর আইন প্রণয়নের অধিকারে বিশ্বাসী নই। বরং তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর আইন-কানুনকে উল্লিখিত চারটি উৎস থেকে নির্ণয় ও বের করবে এবং তা সমস্ত মানুষের অধিকারে ছেড়ে দিবেন। আর কোরআন মজীদে কি আল্লাহ্ এ কথা বলেননি যে ,

আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম , আর তোমাদের জন্যে আমাদের নেয়ামতকে সম্পন্ন করলাম এবং ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম (সূরা : আল-মায়েদাহ , আয়াত নং 3)।

তা না হলে ইসলামী জীবন বিধান কেমন করে পূর্ণতা লাভ করতে পারতো , যদি ফীকাহ্গত হুকুম-আহ্কামসমূহ সর্বকালের ও সর্বযুগের জন্য পূর্ণাঙ্গ না থাকতো ? আমরা কি এ হাদীসটি পাঠ করি না , যা রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জের সময় বলেছেন : হে লোক সকল! আল্লাহর শপথ , যে সব বিষয় তোমাদেরকে বেহেশ্তের নিকটবর্তী ও দোযখের আগুন থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে সে বিষয়ে আমি তোমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছি। আর যে কাজ তোমাদেরকে নরকের নিকটবর্তী করবে ও স্বর্গ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে সে বিষয়ে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি (উসূলে কাফী 2য় খ : , পৃঃ 74 , বিহারুল আনোয়ার 67তম খঃ , পৃঃ নং 96)।

ইমাম জা 'ফর সাদিক (আঃ) বলেন : হযরত আলী (আঃ) ইসলামী হুকুম-আহ্কামের কোন কিছুই বাদ দিয়ে যাননি , লিখে রাখা ব্যতীত। (রাসূল (সঃ) এর নির্দেশ ও তাঁর বলা বক্তব্য মোতাবেক। এমনকি নখের আচড়ের দ্বারা সূষ্ট ক্ষতের রক্তমূল্যের বিষয়টিও (লিখে গেছেন) (জামেউল আহাদীস , খঃ-1ম , পৃঃ-18 , হাদীস নং 127 , এ ছাড়াও আরো বহু সংখ্যক হাদীস উক্ত গ্রন্থে এ পর্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে)।

এতো সব আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার পরও ধারণা প্রসূত , কিয়াস ও ইসতেহ্সানের মত দলীল-প্রমাণের অবকাশ আর থাকে কোথায় ?

66. তাকিয়্যা ও তার দর্শন :

আমরা বিশ্বাস করি : যখন কোন লোক একদল গোঁয়ার , যুক্তিহীন ও স্বদলীয় বিশ্বাসে অন্ধ লোকের মাঝখানে আটকা পড়ে যায় , আর তাদের মাঝে নিজের আকীদা-বিশ্বাসের প্রকাশ জীবনের হুমকী হয়ে দাঁড়ায় অথবা এ জাতীয় অন্য কোন পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয় , আর সেখানে আকীদা-বিশ্বাসের প্রকাশ দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোন কল্যাণও অর্জিত না হয় তাহলে এমন পরিস্থিতিতে তার কর্তব্য-কাজ হচ্ছে নিজের আকীদা-বিশ্বাসের কথা গোপন রাখা এবং নিজের জীবনকে অহেতুক ধবংস না করা। এরই নাম হচ্ছে তাকিয়্যা এ বিষয়টি আল-কোরআনের দু 'টি আয়াত ও বিবেক বুদ্ধিগত দলীলের ভিত্তিতে আমরা অনুসরণ করি। আল্লাহ্ আলে ফিরাউনের মধ্যে যারা মু 'মিন ছিল তাদের সম্পর্কে এরূপ বলেন :

(ফেরাউনের বংশধরদের এক পরামর্শ সভায়) , ফেরাউনের বংশধরেরই এক মুমিন ব্যক্তি যিনি এতদিন পর্যন্ত নিজের ঈমানের কথা গোপন করে আসছিলেন (হযরত মূসা (আঃ) এর রক্ষা কল্পে ফুলে উঠলেন এবং) বললেন : তোমরা কি একজন মানুষকে শুধুমাত্র এ কথার জন্যে হত্যা করতে চাও যে বলে : আমার প্রভু আল্লাহ। অথচ তিনি তোমাদের প্রভূর পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিদর্শনাদি সহ এসেছেন ? (সূরা : আল-মুমিন আয়াত নং 28)।

কোরআনে ব্যবহৃত এ পরিভাষা :یکتم ایمانه নিজের ঈমানের কথা গোপন রেখেছিলেন । তাকিয়্যার বিষয়টিকে এখানে স্পষ্ট করে দিচ্ছে। আলে ফেরাউনের এ মু মিনের জন্যে কি সংগত ছিল , এভাবে নিজের ঈমানের কথাটি প্রকাশ করে দিবে এবং নিজের জীবনকে সোপর্দ করে দিবে , আর নিজের কাজের অগ্রগতির পথ রোধ করে দিবে ?

ইসলামের প্রথম দিকে কোন কোন সংগ্রামী ও মুজাহিদ-মুমিন সম্পর্কে , যে গোড়া মুশরিকদের থাবার মুঠোয় ছিল , তাকে তাকিয়্যা করার নির্দেশ প্রদান করা হল এবং বলা হল : মুমিন লোকদের উচিৎ নয় যে ,মু 'মিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু ও অভিভাবক হিসাবে বেছে নিবে ; যে ব্যক্তি এ কাজটি করবে সে আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কের ছিন্নতা ঘটিয়েছে। কিন্তু সে অবস্থা ব্যতীত (যখন বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করবে) তখন তাদের সাথে তাকিয়্যার নীতি অবলম্বন করবে (সূরা : আলে ইমরান , আয়াত নং28)।

অতএব , তাকাইয়্যা অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাসের কথা গোপন করার বিষয়টি সে সমস্ত স্থানের সাথে নির্দিষ্ট , যেখানে মানুষের জান-মাল ও মান-ইজ্জত একদল গোঁয়ার যুক্তিহীন ও স্বদলীয় আকীদার অন্ধ বিশ্বাসী লোকদের মাঝে হুমকীর সন্মুখীন হয়। আর সেখানে ঈমানের প্রকাশ দ্বারা কোন সুফলও হাতে আসার অবস্থা নেই , এমন সব পরিস্থিতি ও পরিবেশে ঈমানদার লোকদেরকে অহেতুক নিজের জীবনকে বিপদের সন্মুখে ঠেলে দেয়া উচিৎ হবে না। বরং প্রয়োজনীয় সময়ের জন্যে সংরক্ষণ করা কতর্ব্য-কাজ। এ পযার্য়ে ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেন :অর্থাৎ তাকিয়্যা হচ্ছে মু 'মিনের আত্মরক্ষা মূলক ঢাল (অসায়েল 11শ খঃ , পৃঃ নং 461 হাদীস নং 6 , 44 অধ্যায়)।

কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে :

পৃথিবীতে আল্লাহর ঢ়াল। তাকাইয়্যাহকে ঢাল নামে আখ্যায়িত করে ইমাম বুঝিয়ে দিলেন যে , শত্রুর মোকাবেলায় (প্রয়োজন) আত্মরক্ষার একটি হাতিয়ার হচ্ছে তাকিয়্যা।

হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) এর মুশরিকদের মোকাবিলায় তাকিয়্যা করা এবং রাসূল (সাঃ) কর্তৃক তা অনুমোদিত হওয়া একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা।

এ হাদীসটি বহু সংখ্যাক মুফাস্সির ঐতিহাসিক ও হাদীসবেত্তাগণ নিজেদের বিখ্যাত গ্রন্থাবলীতে উল্লেখ করেছেন। যেমন : জনাব ওয়াহেদী তাঁর আসবাবুন-নূযুলে তাবারী , কোরতবী , যামাখশারী , ফাখরুদ্বীন রাযী , বায়যাভী , নিশাবুরী প্রমূখ অনেকেই তাঁদের নিজেদের তাফসীর গ্রন্থে সূরা আন নাহল্ এর 106 নং আয়াতের ব্যাখ্যা পূর্বে উল্লেখ করেছেন।

যুদ্ধের ময়দানে সৈন্য সংখ্যা ও অস্ত্রের মওজুদ গোপন রাখা-যাতে করে শত্রুপক্ষ অবগত হতে না পারে , এ জাতীয় আরো অনেক ব্যাপার আছে-যা গোপন রাখা দরকার , এ সমস্তই মানুষের জীবনে এক প্রকার তাকিয়্যা হিসাবে পরিগণিত। মোট কথা তাকিয়্যা অর্থাৎ এমনসব স্থানে নিজের বিশ্বাসের কথা গোপন রাখা যেখানে প্রকাশ করলে পরে তা বিপদের কারণ হিসাবে দেখা দিবে এবং গোপন রাখা অতিব জরুরী । আর প্রকাশের দ্বারা কোন কল্যাণও বয়ে আনবে না। এটা একটা বিবেক-বুদ্ধিগত শারয়াতী ব্যাপার। যা শুধুমাত্র শিয়ারাই নয় বরং বিবেকবান যে কোন , মতাবলম্বীই হোক না কেন অবশ্যই এ নীতি অনুসরণ করে চলবে।

এমতাবস্থায় অতি আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে , কোন কোন লোকেরা এ তাকিয়্যা নীতি অবলম্বনকে কেবলমাত্র শিয়া ও আহলে বাইতের অনুসারীদের জন্যে নির্দিষ্ট মনে করে এবং এটি তাঁদের একটা বড় আকারের আপত্তিকর বিষয় হিসাবে উপস্থাপিত হয়। অথচ বিষয়টি অতিশয় স্পষ্ট ও পরিস্কার। বস্তুতপক্ষে এর উৎস মূল হচ্ছে আল-কোরআন , হাদীস , রাসূল (সাঃ) এর সাথী ও বন্ধুদের নীতি-পদ্ধতি এবং জগৎ ব্যাপি বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোকদের কর্মসূচী।

67. যে সকল ক্ষেত্রে তাকিয়্যা হারাম :

আমরা বিশ্বাস করি : শিয়াদের সম্পর্কে ভুল-বুঝাবুঝির মূল কারণ হচ্ছে শিয়াদের আকীদা- বিশ্বাসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকা। অথবা তাঁদের আকীদা-বিশ্বাসের বিষয়টি তাদের শক্রদের কাছ থেকে নেয়া। আশাকরি উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গেছে।

অবশ্য , এ কথা অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে , কোন কোন ক্ষেত্রে তাকাইয়্যাহ করা হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ। আর তা হচ্ছে সেই সব স্থানে যেখানে যেখানে দ্বীন ও ইসলামের মূল ভিত্তি , কোরআন অথবা ইসলামের সুন্দর বিধি-বিধান হুমকীর সন্মুখীন হয়। এ জাতীয় পরিস্থিতি ও পরিবেশে নিজের আকীদা-বিশ্বাসকে প্রকাশ করতে হবে। তাতে যদি নিজেকে আত্মোৎসর্গও করতে হয়।

আমরা বিশ্বাস করি কারবালায় আশুরার দিন ইমাম হোসাইন (আঃ) এর রুখে দাঁড়ান ও শাহাদাত বরণ ঠিক এ উদ্দেশ্যেই ছিল। কেননা বনী উমাইয়্যা বংশের শাসকরা ইসলামকে এক বিপদজনক অবস্থায় নিয়ে উপনীত করেছিল। ইমাম হোসাইন (আঃ) এর বিল্পব ও আত্মোৎসর্গ উমাইয়্যাদের কৃতকর্মের উপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছে এবং ইসলামকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

68. ইসলামী ইবাদতসমূহ :

আমরা কোরআন ও হাদীসে গুরুত্বারোপকৃত সমস্ত ইবাদতসমূহের প্রতি আস্থাশীল ও বাধ্যগতভাবে অনুসরণকারী। যেমন দৈনিক পাচঁ ওয়াক্তের নামায যা আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে , রমজান মাসের রোজা যা ঈমানের শক্তিবৃদ্ধি , আত্মশুদ্ধি , তাকওয়া-পরহেযগারী ও প্রবৃত্তি পুজার বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার উত্তম উপায়।

কা 'বা ঘরের হর করা যা খোদাভীরুতা ও পরস্পরের প্রতি ভালবাসাকে দৃঢ় করে এবং মুসলমানদের মান-সন্মান উচ্চতর করার কারণ ; তা খরচ বহনে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্যে জীবনে একবার (হর করা) ফরয বলে জানি। মালের যাকাত , খুমস্ , সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজে নিষেধ এবং ইসলাম ও মুসলমানদের আগ্রাসন ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা স্বতঃসিদ্ধ ফরয হিসাবে গণ্য করি।

যদিও এসব বিষয়সমূহে আংশিক পার্থক্য আমাদের ও অন্য ফেরকার অনুসারীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। যেমন , পরিলক্ষিত হয় আহলে সুন্নাতের চার মাযহাবের ইবাদতের অনুষ্ঠানাদির মাঝে এবং এছাড়া বড় ধরনের কোন পার্থক্য দেখা যায় না।

69. দুই ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়া :

আমরা বিশ্বাস করি : যোহর ও আছরের নামায এবং মাগরিব ও এশার নামায একসাথে একই ওয়াক্তে পড়ার ব্যাপারে কোন বাধা নেই ( যদিও প্রত্যেক নামাযই আলাদা ও পৃথক পৃথকভাবে পড়াকে উত্তম ও ফজিলতের কাজ বলে জানি)। আর বিশ্বাস করি যে , দু নামাযকে এক সাথে পড়ার ব্যাপারে রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর পক্ষ থেকে সে সমস্ত লোকদের অবস্থার প্রতি বিবেচনা করে অনুমতি দিয়েছেন-যারা কষ্টে আছে।

ছহীহ্ তিরমিযিতে ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে এভাবে বর্ণিত আছে : হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) মদীনাতে যোহর ও আছরের নামাযকে এবং মাগরিব ও এশার নামাযকে এক সাথে পড়েছেন অথচ তখন না কোন ভয়ের কারণ ছিল আর না বৃষ্টি। লোকেরা ইবনে আনাসকে জিজ্ঞাসা করলেন : এ কাজের দ্বারা রাসূলে আকরাম (সঃ) এর উদ্দেশ্য কি ছিল ? তিনি বললেন : এ জন্যে যে , তিনি চাইলেন তাঁর উম্মতকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন না (অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে পৃথক করলে লোকদের বেশী কষ্ট হবে সে ক্ষেত্রে এ সুযোগের স্বদ্ব্যবহার করবে) । (সুনানে তিরমিযি 1ম খঃ , পৃঃ নং 354 , অধ্যায়- 138 , সুনানে বায়হাকী 3য় খ : পৃঃ নং 67।)

বিশেষতঃ আজকের আমাদের এ যুগে যেখানে সমাজ জীবনে বিশেষ করে কল- কারখানায় ও শিল্প বিষয়ক কেন্দ্রগুলোতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায পৃথক হওয়ার কারণে অনেকেই নামাযকে পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করছে। এমতাবস্থায় রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর এ কাজ ও কথার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে লোকেরা আরো অধিকতর নামাযের প্রতি দৃঢ় ও স্থায়ী হতে পারে। একটু ভেবে দেখুন।

70. মাটির উপর সেজদা করা :

আমরা বিশ্বাস করি : নামাযের সেজদা করার সময় মাটিতে অথবা মাটির অংশ বিশেষের উপর কিংবা সেই সব বস্তুর উপর যা জমীন থেকে গজায় (বৃক্ষলতা ইত্যাদি) তার উপর সেজদা করতে হবে। যেমন গাছের পাতা , কাঠ ও সবরকমের লতা পাতা গুল্ম , ঘাস , উদ্ভিদ ইত্যাদির উপর। (তবে খাবারযোগ্য বা পরিধানযোগ্য জিনিষ ব্যতীত)।

এ কারণে আমরা কার্পেটের উপর নামায পড়া জায়েজ মনে করি না। বিশেষ ভাবে আমরা মাটির উপর সেজদা করাকে অন্য সব কিছুর চাইতে প্রাধান্য দেই। এ জন্যই অনেক শিয়াগণই সহজ-সুবিধার জন্যে ছাঁচে ঢালাই করা এক খন্ড পাক-পবিত্র মাটি নিজেদের সাথে রাখেন এবং নামাযের সময় তাতে সেজদা করেন-যাকে আমরা মুহর বলি।

এ পর্যায়ে আমরা রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর এ প্রসিদ্ধ হাদীসকে দলীল হিসাবে উপাস্থাপন করি। রাসূল (সাঃ) বলেন : যমীনকে আমার জন্যে মাসজিদ (সেজদার জায়গাহ্) ও তাহুরান তাইয়ান্মুমের পাত্র) বানানো বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে

এ হাদীসে ব্যবহৃত মাসজিদ শব্দটির অর্থ আমরা সেজদার স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছি।

এ হাদীসটি ছিহাহ্ সিত্তাহ্ এর অধিকাংশ হাদীসগ্রন্থ ছাড়া আরো বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। ছহীহ্ বোখারী 1ম খঃ , পৃঃ নং 91 , তাইয়াম্মুমের অধ্যায়ে জনাব জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ্ আনছারী থেকে বর্ণিত হয়েছে।

অনুরূপভাবে সুনানে নাসাঈতেও উল্লেখিত রাবী থেকে বাবুত তায়াম্মুম বিস সাঈদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। (মুসনদে আহমদ ইবনে হাম্বল 1ম খ : পৃঃ নং 301।) জনাব ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। এবং শিয়া মাযহাবের উৎসগুলিতেও বিভিন্ন মাধ্যমে রাসূল আকরাম (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে।

সম্ভাবনা আছে যে , কেউ হয়তো বলতে পারেন যে , এ হাদীসে মাসজিদ শব্দের অর্থ সেজদার স্থান নয় বরং নামাযের স্থান , সে সমস্ত লোকদের বিপরীতে-যারা শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট স্থানে নামায পড়ে। কিন্তু এর মধ্যে তাহুরান তথা তায়াম্মুমের মাটি কথাটি এসে স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে , এখানে মাসজিদ কথাটির অর্থ সেজদার স্থান। অর্থাৎ পৃথিবীর মাটি পবিত্র এবং সিজদার স্থানও।

এ ছাড়াও আহলে বাইতের ইমামগণের কাছ থেকেও বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে যা মাটি , পাথর ও এ জাতীয় অনেক কিছুকে সেজদার স্থান বলে পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন।