ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস0%

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস লেখক:
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাযী
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ:

ভিজিট: 16527
ডাউনলোড: 3375

পাঠকের মতামত:

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16527 / ডাউনলোড: 3375
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বাংলা

71. নবী-রাসূল ও ইমামগণের কবর যিয়ারাত :

আমরা বিশ্বাস করি : হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর আহলে বাইতের ইমামগণের , বিজ্ঞ ওলামাদের ও খোদার পথে শহীদদের কবর যিয়ারত করা তাকিদকৃত মুস্তাহাব। আহলে সুন্নাতের ওলামাদের গ্রন্থাবলীতে রাসূল (সাঃ) এর কবর যিয়ারত সম্পর্কিত অসংখ্য হাদীস লিপিবদ্ধ আছে ; যেমনভাবে শিয়া ওলামাদের গ্রন্থাবলীতে ও এ সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ রয়েছে। যদি এ সমস্ত হাদীসসমূহকে সংগ্রহ করে একত্রে একটি গ্রন্থ সংকলন করা হয় তাহলে বেশ বড় ও স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থের আকার ধারণ করবে। (এ সমস্ত হাদীসসমূহ জানার জন্যে এবং এ পর্যায়ে বড় বড় ওলামাদের বক্তব্য ও তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগতির জন্য আল গাদীর গ্রন্থের যিয়ারত অধ্যায় পাঠ করুন , ( আল-গাদীর ,5ম খঃ ,পৃঃ 93-207)।

ইতিহাসের এ দীর্ঘ পাতায় ইসলামের ওলামাবৃন্দ , সর্বস্তরের ও সর্ব শ্রেণীর মানুষ এ কবর যিয়ারতের উপর গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। ইসলামী বই-পুস্তক ও গ্রন্থাবলীতে সে সমস্ত লোকদের হাল-অবস্থা বিস্তারিত ও বিশদভাবে লিখিত আছে-যাঁরা রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও সমস্ত বিশেষ ব্যক্তিদের কবর যিয়ারতে গমনাগমন করতেন।

(এ হাদীসসমূহ সম্পর্কে এবং বড় বড় ওলামাগণের এ পর্যায়ে বক্তব্য ও তাঁদের নিজেদের অবস্থা যেয়ারত পর্যায়ে কি ছিল তা জানার জন্যে পূর্বোল্লেখিত উদ্ধৃতি গ্রন্থ দেখুন)।

মোট কথা বলা যেতে পারে যে , এ বিষয়টি মুসলমানদের সকল দল ও ফেরকার ঐকমত্য ও সর্ব সম্মত বিষয়।

স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার হচ্ছে , কারো পক্ষেই উচিৎ হবে না যিয়ারত কে ইবাদতের সাথে ভুল করে বসা। ইবাদত ও উপাসনা কেবলমাত্র খোদার জন্যেই নির্দিষ্ট। আর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান ব্যক্তিত্বগণের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করা এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের থেকে সুপারিশ প্রার্থনা করা। এমনকি বিভিন্ন হাদীসে দেখা যায় , স্বয়ং রাসূলে আকরাম (সাঃ) নিজেই মাঝে মাঝে জান্নাতুল বাকীতে যিয়ারত করতে যেতেন এবং কবরবাসীদের প্রতি সালাম ও দরুদ পাঠাতেন। এ হাদীসটি ছহীহ্ মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল , ছহীহ্ তিরমিযি ও সুনানে বায়হাকী গ্রন্থে সমূহে দেখুন।

অতএব , কারোই পক্ষে উচিৎ নয় বা কারো অধিকারও নেই ফীকাহ্গত দৃষ্টিকোন থেকে এ কাজটি যে শারীয়াত সম্মত তাতে সন্দেহের অবকাশ প্রবেশ করানো।

72. শোকানুষ্ঠান পালন ও তার দর্শন :

আমরা বিশ্বাস করি : ইসলামের মহান শহীদদের জন্যে শোক-দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়টি বিশেষতঃ কারবালার শহীদদের জন্যে শোক-দুঃখ প্রকাশের কারণ হচ্ছে তাঁদের স্মরণকে জিইয়ে রাখা এবং ইসলামকে রক্ষার জন্যে তাদের ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের সংস্কৃতিকে ধরে রাখা । এ উদ্দেশ্যে , বিভিন্ন সময়ে বিশেষভাবে আশুরার দিনগুলোতে (মুহাররামের প্রথম দশ দিন) যা হযরত হোসাইন ইবনে আলী (আঃ) এর শাহাদাতের সময়-কাল ছিল , শোকানুষ্ঠান পালন করি। তিনি সেই ইমাম হোসাইন-যিনি বেহেশতের যুবকদের সরদার। রাসূল (সাঃ) বলেন : অর্থাৎ ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন বেহেশতের যুবকদের সরদার (ছহীহ্ তিরমিযিতে আবু সাঈদ খুদরী ও জনাব হোযাইফাহ্ থেকে বর্ণিত , 2য় খঃ ,পৃঃ নং306-307 ,ছহীহ্ ইবনে মাজাহ , ফাযায়েলে আছহাবে রাসূলিল্লাহ্ অধ্যায়ে ; মুস্তাদরাকুছ ছহীহহাইন , হুলইয়াতুল আওলিয়া , তারিখে বাগদাদ , আছাবিয়া ইবনে হাজার , কানযুল ওম্মাল , যাখায়েরুল উকবা এবং আরো বহু গ্রন্থাবলীতে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে)।

আমিরুল মু 'মিনীন হযরত আলী (আঃ) ও রাসূল কন্যা ফাতিমা যাহরার প্রাণ প্রিয় সন্তান। তাঁর জন্যে আমরা শোখ-দুঃখের অনুষ্ঠান পালন করি। এ সব অনুষ্ঠানে আমরা তাঁদের জীবন ইতিহাস ও তাঁদের বীরত্বের বিশ্লেষণ করি। আর তাঁদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরি এবং তাঁদের পাক-পবিত্র আত্মা সমূহের প্রতি দরূদ পাঠাই।

ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (আঃ) 61 হিজরী সালের মুহাররাম মাসে সে লম্পট ইয়াযীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন-যে ছিল পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত এক হীন প্রকৃতির লোক। ইসলাম সম্পর্কে না তার কোন ধারণা ছিল আর না সে ইসলামকে পছন্দ করত। দুঃখজনকভাবে এহেন এক চরিত্রহীন মদ্যপ ইসলামী খেলাফতের মুসনাদ দখল করে নেয়। যদিও ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর সাথী-বন্ধুগণ ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শহীদ হয়েছেন এবং তাঁর পরিবারের (রাসূল পরিবারের) নারীগণকে বন্দি করে বিভিন্ন শহরে শহরে ঘুরিয়েছে। কিন্তু তাঁদের শাহাদাতের রক্ত সে কালের মুসলমানদের মধ্যে আশ্চার্য উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। এরপর থেকে একের পর এক উমাইয়্যাদের বিরুদ্ধে যে সব বিদ্রোহের দাবানল রলে উঠল এবং তাদের অন্যায়-অবিচারের প্রাসাদের দোর গোড়ায় মারাত্মক আঘাত হেনে গুঁড়িয়ে দিতে লাগল। পরিণতিতে তাদের অপবিত্র জীবন ইতিহাস কুঞ্চিত হতে লাগল। এর মধ্যে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এ যে , আশুরার মর্মান্তিক ঘটনার পর যতগুলো বিদ্রোহ-বিল্পব উমাইয়্যা শাসকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত হয়েছে। তার শ্লোগান ছিল : মুহাম্মাদের বংশধরের সন্তুষ্টির জন্যে এবং হোসাইনের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে। এ শ্লোগান , এমনকি সৈরাচারী আব্বাসীদের শাসনকাল পর্যন্ত অব্যহত ছিল । (দেখুন :আবু মুসা খোরাসানী যিনি বনী উমাইয়্যাদের শাসন-ক্ষমতার জড় কেটে দিয়েছিলেন , তিনি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে এ শ্লোগানটির সাহায্য নিয়েছেন (কামেল ইবনে আছীর 5ম খঃ , পৃঃ নং 372 ,) তাওয়্যাবীনদের বিদ্রোহ্ ও বিল্পব সংঘটিত হয়েছিল এ শ্লোগানের মাধ্যমে : (কামেল ইবনে আছীর 4র্থ খঃ , পৃঃ নং 175)।

জনাব মোখতার ইবনে আবি ওবায়দাহ্ ছাফাফীর বিল্পবেও এ শ্লোগানগুলোর সাহায্য নিয়েছিলেন। (কামেল ইবনে আছীর 4র্থ খঃ , 288)।

বনী-আব্বাসীদের বিরুদ্ধে জনাব হোসাইন ইবনে আলী ফাখ যে বিদ্রোহ্ করেছিলেন তাঁর আহ্বান ছিল :অর্থাৎ তোমাদেরকে নবী বংশের সন্তুষ্টী অর্জনের জন্যে আহবান জানাচ্ছি (মাকাতেলুত-তালেবীন পৃঃ নং 299 , তারিখে তাবারী 8ম খঃ , পৃঃ নং 194)।

ইমাম হোসাইন (আঃ) এর রক্তে রঞ্ছিত বিল্পব আজকেও আমাদের শীয়া 'দের জন্যে এক মহান আদর্শ। যে কোন স্বৈরতন্ত্র উপনিবেসবাদ , নির্যাতন-নিপিড়ন ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কর্মসূচী গ্রহণের অনুপ্রেরনার উৎস সৃষ্টি করেছে আমাদের মধ্যে এ শ্লোগানগুলো : অপমান আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাক (আমরা অপমানের জীবন যাপন করতে চাই না)।

প্রকৃত জীবন হচ্ছে ঈমান ও জিহাদ । যার সূচনা হয়েছে রক্তঝরা কারবালায়। আর সব সময় আমাদেরকে সাহায্য করে আসছে জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং শহীদদের সরদার ইমাম হোসাইন ও তাঁর সাথীদের অনুসরণ করে জালিম শাসকদের অন্যায়-অবিচারকে উৎখাত করে দিতে। (ইসলামী বিল্পবের আন্দোলন চলাকালে ইরানের সবর্ত্র আমরা এ শ্লোগানগুলোকে প্রত্যক্ষ করেছি)।

সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে যে , ইসলামের মহান শহীদদের স্মৃতি বিশেষ করে কারবালার শহীদদের রক্তাক্ত স্মৃতি , ঈমান ও আকীদার পথে আত্মত্যাগ , সংগ্রাম , বীরত্ব সাহসীকতা ইত্যাদি সব সময় আমাদেরকে উজ্জীবিত করে রাখে এবং আমাদেরকে জালিমের সামনে মাথানত না করে উন্নত শিরে বেঁচে থাকার শিক্ষা দান করে। এ হচ্ছে শহীদদের স্মৃতি জীবিত করে ধরে রাখা এবং প্রতি বছর নতূন করে শোক-মাতমের অনুষ্ঠানাদি পালন করার দর্শন।

হয়তো বা কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা জানে না যে , আমরা শোক অনুষ্ঠানসমূহে কি করি এবং এ ঘটনাকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসাবে এভাবে চিন্তা করবে যে , ভুলে যাওয়ার ধুলাবালি এর উপর পড়ে গেছে। কিন্তু আমরা নিজেরা জানি , এ স্মৃতিসমূহকে জীবিত করে ধরে রাখার কারণে কী প্রতিফল অতিতে পাওয়া গেছে , বর্তমানে কী সুফল দিচ্ছে ও আগামীতে কী সুফল বয়ে আনবে।

অহুদের যুদ্ধের পর সাইয়্যেদুশ্শুহাদা হযরত হামযা (আঃ) এর উপর রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও অন্যান্য মুসলমানদের শোক অনুষ্ঠান পালনের কথা সমস্ত প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে লিপিবদ্ধ আছে যে , রাসূলে আকরাম (সাঃ) এক আনছারের বাড়ীর কিনারা দিয়ে যাচ্ছিলেন , রোনাজারী ও শোকগাঁথার শব্দ শুনতে পেলেন , রাসূলের চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হল , তাঁর গন্ডদেশ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন : কিন্তু আমার চাচা জনাব হামযাহর কোন শোকবহ ও শোকার্ত নেই। সা দ ইবনে মায়ায রাসূলের এ কথাটি শনুলেন এবং বনী আব্দুল আশহালের একটি গোত্রের নিকট গেলেন। সেখানকার নারীদেরকে বললেন : তোমরা রাসূলের চাচা হযরত হামযাহর বাড়ীতে যাও এবং সাইয়্যেদুশ্শুহাদা হযরত হামযার জন্য শোক মাতম করো। (কামেল ইবনে আছীর , 2য় খঃ , পৃঃ নং 163। সীরায়ে ইবনে হিশাম , 3য় খঃ , পৃঃ নং 104)।

এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে , এই কাজ ও এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র হযরত হামযার জন্যে নির্দিষ্ট ছিল না বরং এটা ছিল একটা গৃহিত কর্মসূচী-যা সমস্ত শহীদদের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। আর তাঁদের শাহাদাতের স্মৃতিকে বতর্মান বংশধর ও ভবিষ্যৎ উত্তরসুরীদের জন্যে বজায় রাখতে হবে। এখন আমি 1417 হিজরী সালের মুহররামের দশ তারিখ বা আশুরার দিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য লিখছি ; সত্যি সত্যি সমগ্র শিয়া জগতে এক বিরাট আবেগ উত্তেজনা ছেয়ে আছে। বালক-কিশোর , নব যুবক , যুবক , পৌড়-বৃদ্ধ সর্বস্তরের লোকেরা সকলেই কালো পোষাক পরিধান করে আছে , সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ইমাম হোসাইন ও কারবালার অন্যান্য শহীদদের শোকপালন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। তাদের জীবন-যিন্দেগী ও চিন্তা-ভাবনার মধ্যে এমন এক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে যে , এ মূহুর্তে যদি তাদেরকে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানানো হয় তাহলে সাথে সাথেই অস্ত্র হাতে নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যে কোন প্রকারের ত্যাগ ও কোরবানী দিতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করবেনা। মনে হয় যেন শাহাদতের রক্ত তাদের ধমনীতে ছুটাছুটি করছে। মনে হচ্ছে এ সময়ই ও এ মূহুর্তেই তাঁরা ইমাম হোসাইন ও তাঁর সাথীগণকে কারবালার ময়দানে ইসলামের পথে নিজেদেরকে উৎসর্গ করার জন্যে তাদেরই সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

বীরত্বগাথা যে সমস্ত কবিতা এ মহান অনুষ্ঠানে পাঠ করা হচ্ছে তা বিশ্ব সৌর শক্তি ও উপনিবেসবাদীদের উপর মারাত্মক আঘাত হানছে এবং জুলুম-নির্যাতনের সামনে আত্মসমর্পন না করার জন্যে আত্মবল সৃষ্টি করছে। আর অপমানের জীবনের চাইতে গর্ব ও বীরত্বের মৃত্যু অতি উত্তম বলে উৎসাহিত করছে।

আমরা বিশ্বাস করি : এ শোকানুষ্ঠানসমূহ একটা বিরাট আধ্যাত্মিক পুঁজি , যার হেফাজত করা দরকার এবং ইসলাম , ঈমান ও তাকওয়াকে জিইয়ে রাখার জন্যে এটা অত্যন্ত জরুরী।

73. অস্থায়ী বিবাহ্ :

আমরা বিশ্বাস করি : অস্থায়ী বা সাময়িক বিবাহ্ একটি শারীয়াত সম্মত বিষয় ; যা ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে মুতআহ্ নামে প্রসিদ্ধ। এ হিসাবে বিবাহ্ দু 'প্রকারের : এক প্রকারের বিয়ে হচ্ছে স্থায়ী যার সময়সীমা নির্দিষ্ট নয়। দ্বিতীয় প্রকারের বিয়ে হচ্ছে সাময়িক বা অস্থায়ী যার সময় সীমা দু 'পক্ষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

এ অস্থায়ী বিবাহ্ অনেক ক্ষেত্রেই স্থায়ী বিয়ের অনুরূপ , যেমন : মোহরানার বিষয় , স্ত্রী সব ধরণের বাধামুক্ত হতে হবে। এ বিয়ের মাধ্যমে যে সমস্ত সন্তানাদি জন্ম নিবে তাদের হুকুম- আহ্কামে স্থায়ী বিয়ের সন্তানাদিদের সাথে কোন তফাৎ নেই , সম্পর্ক ছিন্নের পর ইদ্দত সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের দৃষ্টিতে এ সব বিষয়গুলো স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। অন্য কথায় অস্থায়ী বা মুতআহ্ এক প্রকারের বিয়ে বন্ধন যার মধ্যে বিয়ের সমস্ত বৈশিষ্ট্যাবলী বিদ্যমান।

অবশ্য স্থায়ী বিয়ে ও সাময়িক বিয়ের মাঝে কিছু তফাৎও রয়েছে। যেমন অস্থায়ী বিয়েতে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর জন্যে ফরজ নয়। স্বামী-স্ত্রী কেউ করো সম্পদের ওয়ারিছ হবে না। কিন্তু তাদের সন্তানরা পিতা-মাতা উভয়ের সম্পদের উওরাধিকারী হবে এবং ভাই-বোন পরস্পরের সম্পদের ওয়ারিছ হবে। যা হোক , আমরা মুতআহ্ বিয়ের বিধানকে আল-কোরআন থেকে গ্রহণ করেছি। কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

অতঃপর যে স্ত্রীর সাথে মুতাহ্ করেছো তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মোহরানা প্রদান করো (সূরা : আন-নিসা আয়াত নং 24)।

বড় বড় মোফাস্সিরে কোরআন ও মোহাদ্দিসগণ অনেকেই ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে ,কোরআনের এ আয়াত মুতাহ্ তথা অস্থায়ী বিয়ে সম্পর্কিত।

তাফসীরে তাবারীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বহু সংখ্যক হাদীস উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করছে যে , এ আয়াত অস্থায়ী বা সাময়িক বিয়ে সম্পর্কিত এবং রাসূলের বিরাট সংখ্যক একদল সাহাবী এ পর্যায়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন (তাফসীরে তাবাররী 5ম খঃ পৃঃ নং 9)।

তাফসীরে দুররে মানছুর ও সুনানে বায়হাকীতেও এ পর্যায়ে প্রচুর হাদীস উল্লেখ করেছেন। (আদদুরারিল মানছুর 2য় খঃ , 140) , (সুনানে বায়হাকী 7ম খঃ পৃঃ নং 206)। ছহীহ্ রোখারী , ছহীহ্ মুসলিম , মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল আরো অনেক গ্রন্থাবলীতেও রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যামানায় অস্থায়ী বিয়ের প্রচলন ছিল বলে প্রচুর হাদীস বর্ণিত রয়েছে। যদিও এর বিরোধী হাদীসও উল্লেখ রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল 4র্থ খঃ পৃঃ নং 436 , ছহীহ্ বোখারী শরীফ 7ম খঃ , পৃঃ নং 16 ,ছহীহ্ মুসলিম শরীফ 2য় খঃ , পৃঃ নং 1022 ,শিরোনাম : বাবে নিকাহিল মুতআহ্ দেখুন)। আহলে সুন্নতের একদল ফকীহ্ বিশ্বাস করেন যে , মুতআহ্ বিবাহ্ রাসূলের যামানায় প্রচালিত ছিল। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত করা হয়েছে। অথচ আরেক দল ফকীহ্ বলেন : এ বিধান রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর জীবনের শেষ পর্যন্ত বর্তমান ছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফা জনাব ওমর এ বিধান বাতিল করেছেন। জনাব ওমর নিজে বলেন :

রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যামানায় দু 'প্রকারের মুতআহ্ বিয়ের প্রচলন ছিল। শুধুমাত্র এ দু টোকে আমি হারাম ঘোষণা করেছি এবং এর উপর শাস্তির বিধান করেছি। একটি হলো মুতআতুন্নিসা (সাধারণ প্রচলিত লোকের সাথে মুতআহ্)। দ্বিতীয়টি হলো মুতআতুল হাজ্ব (বিশেষ এক ধরনের হজ্জ)

এ হাদীসটি ঠিক একই পরিভাষায় অথবা বিষয়বস্তুর দিক থেকে অনুরূপ অন্য ভাষায় সুনানে বায়হাকীতে রয়েছে (7ম খঃ 206পৃঃ)। এ ছাড়া আরো বহু গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। আল- গাদীরের রচয়িতা 25টি হাদীস , ছীহাহ্ হাদীসগ্রন্থ ও মুসনাদ গ্রন্থাবলী থেকে উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লিখেছেন : মুতআহ্ বিয়ে ইসলামী শারীয়াতে রাসূলের যামানায় , প্রথম খলিফার যামানায় ও খলিফা ওমরের সময়ের একটা অংশ পর্যন্ত হালাল , সাধারণ রীতিসিদ্ধ ও প্রচলিত ছিল। অতঃপর জনাব ওমর নিজের জীবনের শেষের দিকে এসে এ বিধানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন (দেখুন আল-গাদীর 3য় খঃ , পৃঃ নং 332)।

কোনই সন্দেহ নেই যে , ইসলামের এ বিধানটির ব্যাপারে আহলে সুন্নতের হাদীস ও বর্ণনাসমূহে অন্যান্য আরো অনেক বিষয়ের ন্যায় দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে। তাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে , রাসূলের যামানাতেই তা রহিত হয়ে গেছে। আরেক দলের বিশ্বাস হচ্ছে দ্বিতীয় খলিফার যামানায় এসে নিষিদ্ধ হয়েছে। একদল তা সম্পূর্ণই অস্বীকার করছে। তাদের ফীকাহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বহু বিরোধ বর্তমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিয়া ফকীহ্গণ মুতআহ্ একটি শারীয়াত সিদ্ধ বিধান বলে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাঁরা বলেন : রাসূলের যামানায় এ বিধান বাতিল হয়নি। আর রসূলের পর বাতিল হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। (কেননা রাসূলের পরে ইসলামী শারীয়াতে কোন কিছু কমানো বাড়ানোর অধিকার ও ক্ষমতা কাউকেই দেয়া হয়নি।)

যাহোক , আমরা বিশ্বাস করি : অস্থায়ী বিয়ে যদি অন্যায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অবস্থা সৃষ্টি না করে তাহলে আমাদের সমাজের সে সমস্ত যুবকদের প্রয়োজনের একটা অংশ মিটাতে সক্ষম যারা স্থায়ী বিয়ে করতে অক্ষম। অথবা যে সমস্ত মুসাফির লোকেদের ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থ উপার্জনের জন্যে অথবা শিক্ষাজর্নের প্রয়োজনে কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনের তাগিদে একটা দীর্ঘ সময়-কাল নিজেদের পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়। এ ছাড়া আরো বহু কারণে অস্থায়ী বিয়ের প্রচলন , সমাজে থাকা দরকার। যেমন : অস্থায়ী বিয়ের সুযোগ না থাকলে ঐ সমস্ত লোকদের মাঝে অশ্লীল কর্ম ছড়িয়ে পড়ার দরজা খুলে যাবে। বিশেষতঃ আজকের আমাদের এ যুগে যেভাবে বিভিন্ন কারণে যুব সমাজের স্থায়ী বিয়ের বয়স সীমা বেড়ে গেছে অপর দিকে কামভাব ও উত্তেজনা শক্তিকে আন্দোলিত করার জন্যে প্রচুর ব্যবস্থা অহরহ আশে পাশে রয়েছে ; সেখানে যদি সাময়িক বিয়ের এ সুন্দর বিধান বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে সমাজ ধবংশকারীর জন্য অশ্লীল ও অবৈধ কর্মকান্ডের পথ নিঃসন্দেহে প্রশস্ত হয়ে যাবে।

আবারও বলছি : আমরা ইসলামের এ বিধান দ্বারা যে কোন প্রকারের অন্যায় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ , এটাকে কামুকদের হাতের খেলনা বানানো ও নারীদেরকে কলুষতার দিকে টেনে আনার কঠোর বিরোধী। কিন্তু কোন কোন কামুকদের অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করার কারণে মূল আইনের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিৎ হবে না বরং অন্যায় সুযোগ গ্রহণের পথ রোধ করতে হবে।