ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস0%

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস লেখক:
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাযী
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ:

ভিজিট: 16328
ডাউনলোড: 3288

পাঠকের মতামত:

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16328 / ডাউনলোড: 3288
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বাংলা

7. নবীগণের মু 'জিযাহ্ আল্লাহর অনুমতিক্রমে :

আমরা বিশ্বাস করি : আসল ক্রিয়াগত একত্ববাদ এ বাস্তবতার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে যে , নবী-রাসূলগণ কর্তৃক যে সমস্ত অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনাবলী -যা মু 'জিযাহ সংঘঠিত হত সেগুলো সবই ছিল মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে। যেমন আল কোরআনে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে :

) وَتُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ بِإِذْنِي وَإِذْ تُخْرِجُ الْمَوْتَى بِإِذْنِي(

আর তুমি আমারই অনুমতিক্রমে জন্মগত অন্ধ লোকদেরকে , দূরারোগ্য কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত্য লোকদেরকে নিরাময় করে দিতে এবং আমারই আদেশে মৃতদেহকে জীবিত করতে। (সূরা : আল-মায়েদাহ্ , আয়াত নং 110)।

হযরত সুলাইমানের (আঃ) একজন মন্ত্রী সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন :

) قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهُ قَالَ هَذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ وَمَنْ شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ(

যার নিকট আসমানী গ্রন্থের জ্ঞান ছিল সে বলল : চোখের পলক দেয়ার পূর্বেই আমি তা (সাবা সম্রাজ্ঞীর বিলকিসের সিংহাসনটিকে) এনে আপনার সন্মুখে উপস্থিত করবো। অতঃপর (হযরত সুলাইমান (আঃ)) যখন তা নিজের চোখের পলকের সামনে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত দেখতে পেলেন তখন বললেন : এটা আমার প্রভুরই অনুগ্রহ। (সূরা : আন-নামল আয়াত নং 40)

অতএব , দূরারোগ্য ও ব্যধিগ্রস্তদের নিরাময় করা , জন্মান্ধকে চক্ষু দান করা এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা , এ কাজগুলো হযরত ঈসা (আঃ) মহান আল্লাহরই অনুমতি ও আদেশক্রমে করেছিলেন ; যা আল-কোরআনে উল্লেখ হয়েছে তা একত্ববাদেরই প্রতিভু।

8. আল্লাহর ফেরেশতা :

আমরা বিশ্বাস করি : আল্লাহর ফেরেশ্তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই বিশেষ বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত। কোন কোন ফেরেশ্তা নবী-রাসূলগণের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ বা ওহী পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত। (সূরা বাকারাহ আয়াত নং 97)

একদল ফেরেশ্তা মানুষের কাজ-কর্ম তথা আমল অনুশীলনের সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত। (সূরা : ইনফিতার আয়াত নং 10)

আরেকদল ফেরেশ্তা রূহ কবয করা তথা মৃত্যু সংঘটিত করার কাজে নিয়োজিত। (সূরা আরাফ আয়াত নং 37)

আরেকদল ফেরেশ্তা অবিচলভাবে মু মিনদের সাহায্য-সহযোগিতার কাজে নিয়োজিত। (সূরা : ফুচ্ছিলাত আয়াত নং 30)

অন্য একদল ফেরেশ্তা যুদ্ধের ময়দানে মু মিনদের সাহায্যের কাজে নিয়োজিত। (সূরা আহযাব আয়াত নং9)

আরেকদল ফেরেশতা খোদাদ্রোহী জাতিগুলোকে শায়েস্থা করার (শাস্তি দেয়ার) কাজে নিয়োজিত , (সূরা : হুদ আয়াত নং 77)।

এভাবে আরো অন্যান্য দলে বিভক্ত ফেরেশ্তারা এ পৃথিবীতে বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্যে লিপ্ত আছেন।

নিঃসন্দেহে এ সব দায়িত্ব-কর্তব্য যেমন আল্লাহর অনুমতি , আদেশ ও খোদায়ী শক্তির বলে প্রতিপালিত হয়ে আসছে তেমনি মূল ক্রিয়াগত একত্ববাদের সাথে কোন অসংগতি ও বিরোধ নেই। বরং আরো অধিক গুরুত্বের দাবীদার।

এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে , নবী-রাসূল , মা সুম ও ফেরেশ্তাদের শাফাআ 'ত করার বিষয়টি যেহেতু আল্লাহর অনুমতিক্রমে সেহেতু তা একত্ববাদেরই নামান্তর । আল্লাহ্ বলেন : কোন সুপারিশকারীই নেই তাঁর অনুমতি ছাড়া , (সূরা : ইউনুস. আয়াত নং 3)। এ বিষয়ে আরও অধিক কথা-বার্তা এবং তাওয়াস্সুলের বিষয়ে নবুয়্যাতের অধ্যায়ে আলোচনা করব।

9. ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্যেই নির্দিষ্ট :

আমরা বিশ্বাস করি : ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যেই নির্দিষ্ট। (যেমন ইবাদতগত একত্ববাদের আলোচনায় উল্লেখ করেছি)। অতএব , যে ব্যক্তি তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করল সে মুশরিক। সমস্ত নবী-রাসূলগণের দাওয়াত এরই মধ্যে কেন্দ্রীয়ভূত ছিল। আল্লাহ্ বলেন :অর্থাৎ কেবলমাত্র মহান আল্লাহরই ইবাদত করো , কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মা বুদ নেই , (সূরাঃ আল-আরাফ , আয়াত নং 59 ,65 ,73 ,85)।

এটা এমন একটা বক্তব্য যে , কোরআন মজীদে বারবার নবী-রাসূলগণকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ্ এ কথাটি বলেছেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে , আমরা মুসলমানরা সব সময় নিজেদের নামাজের মধ্যে যখন সূরা : ফাতিহা তিলাওয়াত করি তখন এ ঘোষনাটি বারবার উচ্চারণ করি : আমরা শুধুমাত্র তোমারই ইবাদত করি আর কেবলমাত্র তোমারই নিকট চাই সাহায্য। এ কথা স্পষ্ট যে , নবী-রাসূল ও ফেরেশ্তাদের সুপারিশ আল্লাহর অনুমতি ও আদেশক্রমে হয় -যা কোরআনের আয়াতসমূহে এসেছে , এ বিশ্বাসের অর্থ ইবাদত নয়। অনুরূপভাবে তাওয়াসসুল" তথা নবী-রাসূলগণের সহায়তা চাওয়া। তাঁদের কাছে চাওয়ার হচ্ছে অর্থে যে , তাঁরা যেন মহান আল্লাহর পাকের দরবারে তাওয়াসসুলকারী ব্যক্তির সমস্যার সমাধান চান , এটা ইবাদত উপাসনা হিসাবেও গণ্য হবে না , আর এটা ক্রিয়াগত একত্ববাদ বা ইবাদতগত একত্ববাদের সাথেও কোন বিরোধ সৃষ্টি করবে না। এ বিষয়ের ব্যাখ্যা নবুয়্যাতের অধ্যায়ে আসবে।

10. আল্লাহর অস্তিত্বের প্রকৃত রহস্য সবার জন্য গোপন রয়েছে :

আমরা বিশ্বাস করি : মহান আল্লাহর শক্তির নিদর্শনাদি ও প্রভাব , সমগ্র সৃষ্টি জগতে ব্যাপকভাবে ছেয়ে থাকা সত্বেও তাঁর অস্তিতের প্রকৃত রহস্য কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। কেউ তাঁর অস্তিত্বের গুরুরহস্য খুঁজে বের করতে সক্ষম নয়। কেননা , তাঁর অস্তিত্বের বিষয়টি সকল দিক থেকেই সীমিত ও সীমাবদ্ধ। এ কারণেই তাঁর অস্তিত্বের রহস্য আয়ত্তে আনা আমাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণরূপে তারঁই আয়াত্তাধীন। আল্লাহ্ বলেন :

মনে রেখো! সব কিছু তাঁরই আয়ত্তাধীন (সূরা : ফুচ্ছিলাত , আয়াত নং 54)।

আল্লাহ্ আরো বলেন : মহান আল্লাহ্ সব কিছুর উপর পূর্ণ আয়াত্ত রাখেন (সূরা : আল-বুরুজ , আয়াত নং20)।

কবি হাকীম বলেন :

তববুদ্ধি পর হাকীম দম্ভ কত আর ?

যত ভাবো তত দূর-কোথা পাবে পার ?

কত যে জটিল প্রভূভেদ বুঝা নাহি যায় ;

ডুবন্ত নাবিক সায়রে যাঁচে-তৃণ যদি পায়।

মহা নবী (সঃ) থেকে একটি বিখ্যাত হাদীস আছে। তিনি বলেন :

তোমার যতটুকু অধিকার ছিল আমরা ততখানি ইবাদত করতে পারিনি। আর তোমার যে পরিচয় জানা দরকার ছিল , আমরা সেভাবে তোমাকে চিনতে পারিনি (বিহারুল আনোয়ার 68 খঃ ,23 পৃঃ)।

এখানে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই। উল্লেখিত বক্তব্যের অর্থ এ নয় যে , যেহেতু আমরা মহান আল্লাহর মূল অস্তিত্বের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞাত নই , কাজেই তাঁর পরিচয় জানার লক্ষ্যে সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকেও হাত গুটিয়ে নেব এবং আল্লাহর মা রিফাত সম্পর্কিত কিছু শব্দ আওড়াতে থাকব -যার কোনই তাৎপর্য নেই।

বস্তুতঃ এ ধরনের মা রিফাত -যার তাৎপর্য অনুদঘাটিত , তা আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত নয় এবং আমরা তাতে বিশ্বাসীও নই। কেননা , মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ও অন্যান্য সমস্ত আসমানী কিতাবসমূহ আল্লাহর মা রিফাত বা পরিচয় তুলে ধরার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।

এ পর্যায়ে যথেষ্ট উদাহরণ উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন , আমরা রূহ বা আত্মার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানি না যে , তা কী ? কিন্তু নিঃসন্দেহে আত্মা সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা ও পরিচিতি জানা আছে। আমরা জানি যে , আত্মার অস্তিত্ব আছে এবং তার প্রভাব ও নিদর্শন আমরা প্রত্যক্ষ করি।

হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী আল বাকের (আঃ) থেকে এ পর্যায়ে একটি আকর্ষণীয় হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন :

প্রত্যেক বস্তুকে যখন চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারনা দ্বারা তার যথার্থ অর্থের কথা কল্পনাকরবে তখন তা হবে তোমারই সৃষ্ট ও নিরূপিত এবং তা তোমাদের নিজেদের মতই হবে ,আর তোমাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে (বিহারুল আনোয়ার , খঃ-66 , পৃঃ 293)।

আমীরুল মু 'মিনীন হযরত আলী (আঃ) থেকে অন্য একটি হাদীসে আল্লাহর মা রিফাত ও পরিচয় সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন :

মহান আল্লাহ্ আকল-বুদ্ধি ও বিবেককে স্বীয় (অস্তিত্বগত) মারিফাত সম্পর্কে অবহিত করেননি। পক্ষান্তরে স্বীয় মা 'রিফাত ও পরিচিতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অবগতি অর্জনের পথে অন্তরায় ও বাঁধার সৃষ্টি করেননি এবং বাতিল করেননি (গুরারুল হিকাম)।

11. তা 'তীলও নয় তাশবীহ্ও নয় :

আমরা বিশ্বাস করি : যেমনি ভাবে তাতীল তথা মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রকৃত রহস্য জানা সঠিক কাজ নয় তেমনিভাবে আল্লাহকে কারো সাথে , তাশবীহ তথা সমকক্ষ ও সমতুল্য মনে করা কিংবা কোন আকার আকৃতির সাথে তুলনা করার কাজে অবতীর্ণ হওয়া ভুল ও শিরক জনিত কাজ। অর্থাৎ আমরা একথা বলতে পারব না যে , মহান আল্লাহকে আদৌ চেনা যাবে না এবং তাঁকে চেনার রাস্তাও উন্মুক্ত নয় , যেমন তাঁকে কোন সৃষ্টির সাথে তুলনা করা যায় না। এ দু 'টি নীতির একটি হলো 'এফরাত ' তথা অতিরজ্ঞন ও বাড়াবাড়ি আর দ্বিতীয়টি হলো 'তাফরীত ' তথা চরমবাড়াবাড়ি ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

নবী আল্লাহর বার্তা বাহক

12. নবী প্রেরণের দর্শন :

মহান আল্লাহ্ মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্যে এবং মানুষদেরকে বাঞ্চিত পূর্ণাঙ্গতা ও চির কল্যাণময় স্থানে পৌঁছানোর জন্যে নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আর যদি তাঁদেরকে না পাঠাতেন তাহলে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যই অর্জিত হত না। আর মানুষ পথভ্রষ্টতার ঘূর্ণাবর্তে হাবুডুবু খেত এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যাহত হত। আল্লাহ্ বলেন :

এ নবী-রাসূলগণ সুসংবাদ প্রদানকারী ও ভয় প্রদশর্নকারী ছিলেন-যাতে করে মানুষের জন্যে মহান আল্লাহর হুজ্জাত"(দলীল-প্রমাণ) অবশিষ্ট না থাকে। (আর কল্যাণের পথ সকলকে দেখিয়ে দিবেন ও সকলের প্রতি হুজ্জাত সমাপ্ত করবেন) আর মহান আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী ও সর্বাজ্ঞ ( সূরা : আন নিসা , আয়াত নং 165)।

আমরা বিশ্বাস করি : এ নবী-রাসূলগণের মধ্যে পাচঁজন ঊলুল আযম অর্থাৎ তাঁরা পূর্নাঙ্গ শরীয়াত , আসমানী কিতাব ও নতুন বিধি-বিধান আনয়নকারী। তাঁদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন হযরত নূহ (আঃ)। অতঃপর ইব্রাহীম , মূসা ও ঈসা (আঃ)। আর তাঁদের সর্বশেষ হচ্ছেন হযরত মুহম্মাদ (সাঃ)। আল্লাহ্ বলেন :

স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমরা নবী-রাসূলগণের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলাম। এভাবে আপনার কাছ থেকে এবং নূহ , ইব্রাহীম , মূসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের (আঃ) কাছ থেকে। আর আমরা তাদের সকলের কাছ থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলাম। (এ মর্মে যে , তাঁরা রেসালতের দায়িত্ব-কর্তব্য প্রতি পালনে ও আসমানী কিতাব প্রচার-প্রকাশে স্বচেষ্ট থাকবে) সূরা : আল-আহযাব ,আয়াত নং 7।

আল্লাহ্ আরও বলেন :

ধৈর্য ও দৃঢ়তা অবলম্বন কর , যেমনভাবে উলুল আয্ম রাসূলগণ ধৈর্য ও দৃঢ়তা অবলম্বন করেছিলেন (সূরা : আল-আহকাফ , আয়াত নং35)।

আমরা বিশ্বাস করি : সমস্ত নবীগণের মধ্যে সর্ব শেষ নবী এবং রাসূলগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল-বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। তিনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্যে নবী এবং পৃথিবীর শেষাবধি তিনিই নবী থাকবেন অর্থাৎ তাঁর অনুসৃত সার্বজনীন বিজ্ঞতা , বিধি-নিষেধ ও ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা এমন যে , পৃথিবী অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মানুষের পার্থিব ও পরকালের জীবনের সমস্ত চাহিদা-প্রয়োজন মিটানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাঁর পরে যে কেউ নতুন করে নবুয়্যাত বা রেসালাতের দাবীদার হবে সে ভিত্তিহীন ও বাতিল বলে গণ্য হবে। মহান আল্লাহ্ বলেন :

মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো (ডাকা) পিতা ছিলেন না। কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবুয়্যাতের ধারা সমাপ্তকারী। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত আছেন। (যা কিছু প্রয়োজন ছিল সবই তাঁর অধিকারে দিয়েছেন) (সূরা : আহযাব , আয়াত নং 40)।

13. অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে সহাবস্থান :

যদিও আমরা এ যুগে ইসলামকেই একমাত্র আল্লাহর গ্রহণযোগ্য দ্বীন বলে জানি ও মানি কিন্তু আমরা অন্যান্য আসমানী দ্বীনের অনুসারীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেও বিশ্বাসী। চাই তারা ইসলামী দেশে বসবাস করুক অথবা মুসলিম বিশ্বের বাইরে জীবন যাপন করুক। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তাহলে আল্লাহ্ বলেন :

আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না সে সব লোকদের সাথেসদাচরণ ও ইনসাফ করতে যারা দ্বীন ও ধর্ম বিষয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি , বস্তুতঃ ন্যায়াচারীদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসেন (সূরা : আল- মুমতাহিনাহ্ আয়াত নং 8)

আমরা বিশ্বাস করি : যুক্তিসংগত আলোচনা দ্বারা ইসলামের প্রকৃত রূপ ও তার শিক্ষা- সংস্কৃতির সৌন্দর্য সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা যায় এবং ইসলামের আকর্ষণীয় বিষয়গুলোকে এত শক্তিশালী মনে করি যে , যদি সঠিক ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয় তাহলে মানব জাতির অনেক লোককেই এদিকে আকৃষ্ট করা যাবে। বিশেষভাবে , নানাবিধ সমস্যা-জর্জরিত আজকের পৃথিবী ইসলামের আহ্বান শুনার জন্যে বর্তমানে কান পেতে বসে আছে।

এ কারণেই আমরা বিশ্বাস করিঃ ইসলামকে বল প্রয়োগ ও চাপ সৃষ্টির পন্থায় কারো উপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ নয়। আল্লাহ্ বলেন :

দ্বীন গ্রহণ করার ব্যাপারে জোর-জবরদস্তির কোন দরকার নেই। কেননা সত্য , অসত্য থেকে পরিস্কার হয়ে গেছে ( সূরা : আল-বাকারাহ্ ,আয়াত নং 256।)

আমরা বিশ্বাস করি : ইসলামের সামাজিক বিধি-বিধানসমূহের উপর যদি মুসলমানরা আমল-অনুশীলণ করে তাহলে তা ইসলামের পরিচয় তুলে ধরার জন্যে বিরাট কাজ। কাজেই ইসলামকে জোরপূর্বক কারো উপর চাপিয়ে দেয়ার দরকার নেই।

14. নবীগণ আজীবন মা সুম (নিষ্পাপ) :

আমরা বিশ্বাস করি : সমস্ত নবী-রাসূলগণ মা সুম বা নিষ্পাপ অর্থাৎ তাদের সমস্ত জীবন (নবুয়্যাতের পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) সব রকমের গুনাহ্ ও ভুল-ত্রুটি থেকে আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতায় নিরাপদে থাকা। কেননা , যিনি নবী হবেন তিনি যদি গুনাহ কিংবা ভুল- ত্রুটির মধ্যে লিপ্ত হন তাহলে নবুয়্যাতের পদের জন্যে যে আস্তা ও নির্ভরতা দরকার তা হারিয়ে যাবে এবং লোকেরা তাঁকে আল্লাহ্ ও তাদের নিজেদের মধ্যেকার একজন নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসাবে মেনে নিবে না। আর তাঁকে জীবনের সমস্ত কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে নিজেদের আদর্শ নেতা হিসাবে মেনে নিবে না।

এ কারণেই আমরা বিশ্বাস করি : যদিও কোরআনের কোন কোন আয়াতে বাহ্যিকভাবে কোন কোন নবীর গুনাহ্ সম্পর্কে ইংগিত করা হয়েছে ; যেমন : (তারকে আওলা) (অর্থাৎ দু ' টি ভাল কাজের মধ্যে যে কাজটি কম ভাল সেটি গ্রহণ করেছেন। বস্তুতঃপক্ষে উচিৎ ছিল অধিক ভাল কাজটি বাছাই করা।) অথবা অন্য কথায় যেমন : নেককার লোকদের ভাল কাজ কখনও নৈকট্য হাসিলকারীদের গুনাহ্ হিসাবে পরিগণিত হয় । কেননা , প্রত্যেকের কাছে তার পদ-মর্যাদা হিসাবে কাজ-কর্ম আশা করা হয়। (আল্লামা মাজলিসী বিহারুল আনোয়ারে এই হাদীসটির কোন ইমামে বলেছেন তা উল্লেখ না করে বলেছেন , কোন এক ইমাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। (বিহারুল আনোয়ার , 25 তম খঃ , পৃঃ 205)।

15. তাঁরা আল্লাহর অনুগত বান্দা :

আমরা বিশ্বাস করি : নবী-রাসূলগণের সবচেয়ে বড় গর্ব ও গৌরবের বিষয় ছিল এই যে , তাঁরা আল্লাহর অনুগত ও বাধ্যগত বান্দা ছিলেন , এ কারণেই আমরা প্রতিদিন আমাদের নামাযসমূহে আমাদের নবী (সাঃ) সম্পর্কে এ বাক্যটি বার বার উচ্চারণ করি : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল

আমরা বিশ্বাস রাখি : কোন একজন নবী ও উলুহিয়্যাত তথা নিজেকে উপাস্য হিসাবে দাবী করেননি এবং লোকদেরকে তাঁদের পুজা করার জন্যে আহ্বান জানাননি। আল্লাহ্ বলেন :

কোন মানুষের পক্ষেই এটা সমিচীন নয় যে , মহান আল্লাহ্ তাকে ঐশী কিতাব , বিজ্ঞতা ও নবুয়্যাত দান করবেন , অতঃপর সে লোকদেরকে বলবে যে , আল্লাহকে ত্যাগ করে আমার উপাসনা কর ( সূরা : আলে ইমরান 79)।

এমনকি হযরত ঈসাও (আঃ) কখনও লোকদেরকে তাঁর পুজা করতে আহ্বান জানাননি এবং সব সময় নিজেকে আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর বান্দা ও তাঁর প্রেরিত পুরুষ বলে জানতেন। আল্লাহ্ বলেন :

ঈসা (আঃ) কখনও একথা অস্বীকার করেননি যে , তিনি আল্লাহর বান্দা। আর (আল্লাহর) নৈকট্য লাভকারী ফেরেশ্তাও (কখনো নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা হিসাবে অস্বীকার করেননি (সূরা : নিসা 172)।

খৃষ্টবাদীদের এখনকার ইতিহাসই সাক্ষী দেয় যে , ত্রিত্ববাদ বিশ্বাস (তিন খোদার বিশ্বাস) খৃষ্টবাদের প্রথম শতাব্দীতে অস্তিত্ব ছিল না। তাদের এ ত্রিত্ববাদের মতবাদ পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে ।

16. মু 'জিযাহ্ ও ইলম-ই-গায়েব :

নবী-রাসূলগণের উপাসনা ও বন্দেগী কখনও এ বিষয়ের বাঁধা হতে পারে না যে , তাঁরা আল্লাহর অনুমতি ও আদেশক্রমে অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোন গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।

মহান আল্লাহ্ বলেন : মহান আল্লাহ্ই গায়েবী (অদৃশ্যের) বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তিনি তাঁর গায়েবী-গোপন বিষয়ে কাউকে অবহিত করেননা। কিন্তু সে রাসূলকে (অবহিত করেন) যাকে তিনি মনোনীত করেন (সূরা : আল-জিন্ন , আয়াত নং 26-27)।

আমরা জানি : হযরত ঈসার (আঃ) মু 'যিজাহ্সমূহের মধ্যে এমন একটা মু যিজাহ্ ছিল যে , তিনি কোন কোন গোপন বিষয়ের আংশিক সংবাদ লোকদের মধ্যে পরিবেশন করতেন। যেমন : তোমরা তোমাদের ঘরে যা কিছু খাও এবং যা কিছু জমা করে রাখো তা আমি ঈসাতোমাদেরকে বলে দিতে পারব ( সূরা : আল-ইমরান 49)।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে অনেক গোপন সংবাদ বর্ণনা করতেন। যেমন আল্লাহ্ বলেন : এটা অদৃশ্যের গোপন সংবাদসমূহ থেকে একটি , যা অহীর মাধ্যমে আমি তোমাকে শিক্ষাদিচ্ছি (সূরা : ইউসুফ 102 নং আয়াত)।

অতএব , কোন বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতাই থাকতে পারেনা যে , নবী-রাসূলগণ আল্লাহর আদেশ ও অনুমতিক্রমে গায়েবের গোপন সংবাদ পরিবেশন করবেন। যদিও কোরআনের কোন কোন আয়াতে রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর ইলম-ই-গায়েব সম্পর্কে নেতিবাচক ইংগিত রয়েছে। যেমন : আমি গায়েব সম্পর্কে অবগত নই আর আমি একথাও বলি না যে , আমি একজন ফেরেশ্তা ( সূরা : আল-আনআম 50)।

এ আয়াতে যে ইলম-ই-গায়েবের কথা বলা হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে সহজাতগত বা সাত্তাগত ও স্বকিয়তাগত ইলমে গায়েব। না ঐ ইলম যা আল্লাহ্ কর্তৃক শিক্ষার মাধ্যমে হাসিল হয়। কেননা , আমরা জানি যে , কোরআনের আয়াত একে অপরের ব্যাখ্যা বিশ্লেষক ও সম্পূরক। আমরা বিশ্বাস করি : এ মহান নবী-রাসূলগণ অলৌকিক কর্ম-কান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ মুজিযাহ্সমূহ মহান আল্লাহরই অনুমতিক্রমে করেছেন। আর তাঁদের এ ধরনের কর্ম-কান্ড আল্লাহর অনুমতিক্রমে আঞ্জাম দেয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন , না শিরক হবে আর না তাঁদের আল্লাহর বান্দা হওয়ার ব্যাপারে বিরোধের অবকাশ আছে। কোরআনের বিশ্লেষনে দেখা যায় , হযরত ঈসা (আঃ) মৃতকে আল্লাহর অনুমতিক্রমে জীবিত করতেন এবং দূরারোগ্য রোগীদেরকে আল্লাহর আদেশে সুস্থ করতেন। আল্লাহ্ বলেন : আর আমি আরোগ্য করি জন্মান্ধকে ও কুষ্ঠরুগীকে। আর জীবিত করি মৃতকে আল্লাহর অনুমতি বা আদেশক্রমে (সূরা : আলে ইমরান 49)।

17. নবীগণ শাফায়াতের অধিকারী :

আমরা বিশ্বাস করি : সমস্ত নবী-রাসূলগণ ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সুপারিশ করার মর্যাদার অধিকারী এবং বিশেষ একটা শ্রেণীর লোকদের জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে শাফায়াত করবেন। কিন্তু সেটাও মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে। মহান আল্লাহ্ বলেন : কোন সুপারিশকারী নেই ; শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতি ব্যাতীত । ( সূরা : ইউনুস আয়াত নং 3)

মহান আল্লাহ্ বলেন : কে সেই ব্যক্তি , যে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে ? (সূরা : আল-বাকারা আয়াত নং 255 )

যদিও কোন কোন আয়াতে আল্লাহ্ সাধারণভাবে শাফায়াতের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলেছেন , যেমন :

আল্লাহর পথে খরচ কর , সেই নির্ধারিত দিনটি উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই যে দিন কোন বেচা-কেনা চলবে না (যে , কেউ তার নিজের মুক্তি ও কল্যাণ কিনতে পারবে) আর না বন্ধুত্ব কোন কাজে আসবে , আর না কারো শাফায়াত ( সূরা : বাকারাহ্ 254 )।

এরূপ ক্ষেত্রে শাফায়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনভাবে নিজের থেকে ও আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করা অথবা সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে , সুপারিশ করার যোগ্যতা রাখে না। কেননা , বার বার বলা হয়েছে যে , কোরআনের আয়াতসমূহ একটি আরেকটির সম্পূরক ও বিশ্লেষক। আমরা বিশ্বাস করি : সুপারিশ বা শাফায়াতের বিষয়টি লোকদের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্যে , পাপীদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে , পবিত্রতা ও খোদাভীরুতা হাসিলের জন্যে এবং তাদের অন্তরে আশার আলো সঞ্চার করার জন্যে একটা উত্তম উছিলা। কেননা , সুপারিশের ব্যাপারটি হিসাব কিতাব বিহীন কোন বিষয় নয়। সুপারিশ শুধুমাত্র সে ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রজোয্য যে তা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। অর্থাৎ তার পাপ ও অপরাধ এতখানি সীমা ছাড়িয়ে যাবে না যে , সুপারিশকারীর সাথে তার সম্পর্কের ছিন্নতা ঘটবে। কাজেই সুপারিশের বিষয়টি একটি সাবধানতা ও হুশিয়ারী , যাতে করে ব্যক্তি তার নিজের সমস্ত সিঁড়ি ও স্তরগুলোকে একেবারে ধবংস করে না দেয় ও ফিরে আসার পথ অবশিষ্ট রাখে এবং সুপারিশ লাভের সুযোগটা যেন হাত ছাড়া না করে।