ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস0%

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস লেখক:
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাযী
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ:

ভিজিট: 16463
ডাউনলোড: 3344

পাঠকের মতামত:

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16463 / ডাউনলোড: 3344
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বাংলা

চতুর্থ অধ্যায়

কিয়ামত ও পূনর্জীবন

34. পরকাল ব্যতীত জীবন অর্থহীন :

আমরা বিশ্বাস করি : সমস্ত মানুষ মৃত্যুর পর একদিন পুনরায় জীবিত হবে। আর তাদের কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। সৎ কর্মশীল ও নেক্কার লোকেরা বেহেশ্তের মধ্যে চিরকালের জন্যে স্থান লাভ করবে এবং অসৎ কর্মশীল ও পাপী লোকেরা নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ্ বলেন : আল্লাহ্ সে মহান সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। নিঃসন্দেহে তোমাদের সকলকে শেষ বিচার দিবসে অবশ্যই সমবেত করা হবে , যে দিনের ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ( সূরা : আন-নিসা , আয়াত নং 87)।

আল্লাহ্ আরো বলেন :

কিন্তু যে ব্যক্তি বিদ্রোহ করবে ও পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করবে , নিঃসন্দেহে তার স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর যে ব্যক্তি তার প্রভূর বিচার আদালতকে ভয় করে চলবে এবং নিজের আত্মাকে প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে নিবৃত্ত রাখবে , নিঃসন্দেহে তার বাসস্থান হচ্ছে বেহেশ্ত (সূরা : আন-নাযিয়াত , আয়াত নং 37-41)।

আমরা বিশ্বাস করি : এ পৃথিবীটা প্রকৃত পক্ষে একটা পুল বা সেতু স্বরূপ। সমস্ত মানুষকেই তা অতিক্রম করে যেতে হবে এবং নিজের চির আবাসে গিয়ে পৌঁছতে হবে। অন্য কথায় , এ পৃথিবীকে একটা বিদ্যাপীঠ বলা যেতে পারে। অথবা এটা একটা ব্যবসা কেন্দ্র কিংবা এটা একটা কৃষিক্ষেত্র , আর বাসস্থান অন্যত্র।

হযরত আলী (আঃ) এ পৃথিবী সম্পর্কে বলেন :

পৃথিবী সত্য ও সত্যবাদীতার স্থান সে ব্যক্তির জন্যে যে এর সাথে সত্যবাদীতার সাথে কাজ করে দুনিয়া একটি অমুখাপেক্ষীতার স্থান , যে রসদ সঞ্চয় করে। এ জগৎ একটি জাগ্রত ও শিক্ষা গ্রহণ করার স্থান সে ব্যক্তির জন্যে যে এর থেকে শিক্ষা নিতে চায়। এটা খোদার বন্ধুদের জন্যে মসজিদ ; আল্লাহর ফেরেশতাদের নামাযের স্থান , আল্লাহর অহী বা প্রত্যাদেশ অবতীর্ণের স্থান ও খোদার অলি আওলিয়াদের ব্যবসাকেন্দ্র (নাহজুল বালাগাহ্ ,কালিমাতি কেসার নং 131)।

35. পরকালের দলীল-প্রমাণ সুস্পর্ষ্ট :

আমরা বিশ্বাস করি : কিয়ামত বা পরকালের দলীল-প্রমাণ সুস্পষ্ট। কেননা , প্রথমতঃ এ পৃথিবীর জীবনই নির্দেশ করছে যে , মানব সৃষ্টির চুড়ান্ত ও মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এ পৃথিবীর জীবন হতে পারে না। মানুষ কিছু দিনের জন্যে এখানে আসবে , তারপর অসংখ্য সমস্যা বিজড়িত জীবন যাপন করবে , এরপর সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটবে , আর মানুষ অনস্তিত্বের রাজ্যে বিলিন হয়ে যাবে। আল্লাহ্ বলেন :

তোমরা কি ভেবে নিয়েছ যে , আমরা তোমাদেরকে অহেতুক সৃষ্টি করেছি , আরতোমাদেরকে আমাদের কাছে ফিরে আসতে হবে না ? (আল-মু 'মিনুন : 115)।

এ আয়াতটি এ কথারই ইংগিত করছে যে , যদি পরকালের ব্যাপারই না থেকে থাকে তাহলে তো এ দুনিয়ার জীবন একটা নিছক পুতুল খেলা মাত্র।দ্বিতীয়ত : আল্লাহর আদ্ল বা ন্যায়-ইনসাফের অপরিহার্য দাবী হচ্ছে যে , সৎ কর্মশীল ও অসৎকর্মশীল লোকেরা যারা প্রায়শই এ জগতে একই কাতারে সারিবদ্ধ হয় আবার কখনো অসৎকর্মশীল লোকেরা এগিয়ে চলে যায় , তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের পরিণতি ভোগ করবে। আল্লাহ্ বলেন :

যারা পাপ-অপরাধে অপরাধী তারা কি মনে করে নিয়েছে যে , আমরা তাদেরকে সে সমস্তলোকদের সমপর্যায়ের বলে বিবেচনা করব-যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্মগুলো সম্পাদনকরেছে-যার ফলে তাদের জীবন ও মরণ সমভাবে হবে ? তাদের এ ফয়সালা কতোইনা মন্দ! (সূরা : আল-জাছিয়াহ , আয়াত নং 21)।

তৃতীয়ত : আল্লাহর অনন্ত-অসীম দয়ার অপরিহার্য দাবী হচ্ছে যে , তাঁর অনুগ্রহ ও নেয়ামতসমূহ মানুষের মৃত্যুর কারণে তার থেকে বিছিন্ন হয়ে যাবে না। যোগ্য ও প্রতিভাবান লোকদের পর্যায়ক্রমিক পূর্ণতা লাভ যথারীতি অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ্ বলেন : আল্লাহ্ অনুগ্রহ ও দয়া করাকে নিজের প্রতি নিজে কর্তব্য কাজ করে নিয়েছেন। আর তোমাদের সকলকে শেষ বিচার বা কেয়ামতের দিন অবশ্যই সমবেত করবেন , যে দিনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই (সূরা : আল আনআ 'ম আয়াত নং 12)।

পরকাল সম্পর্কে যারা সন্দেহ পোষণ করে কোরআন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছে : আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার ব্যাপারে কি করে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে তিনি মৃতদেরকে জীবিত করবেন ? অথচ তোমাদেরকে প্রথম বারে সৃষ্টিও তিনিই করেছেন। আবার তিনি তোমাকে পুনরায় জীবন দান করবেন। আল্লাহ্ বলেন :

আমরা কি প্রথমবারের সৃষ্টির সময় অপারগ ছিলাম ( যে ,পরকালে আবার সৃষ্টি করতে পারবো না ?) কিন্তু তারা (এ স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ থাকার পর ও) পরকালে নতুন করে সৃষ্টির ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করছে । (কাফ : 15)।

আল্লাহ্ বলেন

সে আমাদের ব্যাপারে একটি উদাহরণ উপস্থাপন করলো। কিন্তু সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে গেল ও বললো : এ পঁচা-গলা হাড়গুলোকে কে জীবিত করবে ? তুমি বলে দাও! সে সওাই (পুনরায় জীবিত করবেন) যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন। আর তিনি সমস্ত সৃষ্টি সম্পর্কেই সম্যক অবগত আছেন (ইয়াসীন : (78-79)।

এছাড়া মানুষের সৃষ্টি কি আকাশ-মন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টির চেয়ে আরো অধিকতর গুরুত্বের দাবীদার ? যিনি এ বিরাট-বিশাল সৃষ্টি জগৎকে এত সব বিস্ময়কর ভাবে সৃষ্টি করেছেন , তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করার ক্ষমতাও রাখেন।

আল্লাহ্ বলেন :

তারা কি জানেনা যে , আল্লাহ্ এ আসমান সমূহ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন , আর এ গুলো সৃষ্টির কারণে অপারগ ও ক্লান্ত হননি ? তিনি মৃত মানুষকে আবার জীবিত করতেও সক্ষম। হ্যাঁ ; তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান (আল-আহকাফ : 33)।

36. শারীরিক পরকাল :

আমরা বিশ্বাস করি : শুধুমাত্র মানুষের আত্মাই নয় বরং আত্মা ও দেহ একসংগে পরকালে আল্লাহর দরগাহে প্রত্যাবর্তন করবে এবং নতুন জীবন লাভ করবে। কেননা , এ জগতে যা-কিছু করেছে , এ দেহ ও আত্মাই ছিল। সুতরাং পুরস্কার হোক আর শাস্তি হোক এ দুটোকেই ভোগ করা উচিৎ।

কোরআন মজীদে পরকাল সম্পর্কিত আয়াতসমূহের অধিকাংশ আয়াতেই স্ব-শরীরে পুনরুত্থানের কথা ইংগিত করা হয়েছে এবং বিরোধীদের আশ্চর্যজনক কথাগুলোর মোকাবেলায় এভাবে বলছে যে , তারা বলতো : এ পচাঁ-গলা হাড়গুলো কিভাবে আবার পূনর্জীবন লাভ করবে ? এর জবাবে কোরআন বলে : তুমি বলে দাও! যে সওা প্রথমবার মাটি থেকে এ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনরায় জীবিত করতেও সক্ষম (ইয়াসীন : 79)।

কোরআন আরো বলে :

মানুষ কি মনে করে আমরা তাদের (পচাঁ-গলা) হাড়গুলোকে একত্রিত (করে তাকে জীবিত) করব না ? হ্যাঁ ; আমরা সক্ষম ; এমনকি তাদের আঙ্গুলের দাগগুলোকে পর্যন্ত একত্রিত করে পূর্বের ন্যায় ঠিক করবো (আল কিয়ামাহ্ : 3-4)।

এ আয়াতটি ও এ জাতীয় অন্যান্য আয়াতসমূহ সমস্তই স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করছে যে , পরকালে পুনরুত্থান স্বশরীরেই অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া , যে সমস্ত আয়াত এ কথা বলে যে , তোমাদেরকে তোমাদের কবর থেকে জাগ্রত করা হবে। এ আয়াতসমূহও পরকালে স্বশরীরে উত্থাপনের বিষয়টিকে পরিঙ্কার করে দেয়।

বস্তুতঃ পরকাল সম্পর্কিত অধিকাংশ আয়াতই আত্মা ও দেহের একত্রে উত্থানের প্রতি ইংগিত করছে।

37. মৃত্যুর পর আশ্চর্যজনক এক জগৎ :

আমরা বিশ্বাস করিঃ মৃত্যুর পরবর্তী জগতে (আলমে বারযাখে) , মহা প্রলয় বা কেয়ামতেরসময়ে , বেহেশ্ত ও দোযখের রাজ্যে যা কিছু ঘটবে তা আমরা এ সীমিত পৃথিবীতে যা কিছু জানতে পারছি তার থেকে অনেক অনেক উচ্চতর। আল্লাহ্ বলেন :

কারো জানা নেই যে ,এরূপ (পূণ্যবান) লোকদের জন্যে নয়ন জুড়ানো জিনিসপত্র (আল্লাহর) অদৃশ্য ভান্ডারে মওজুদ রয়েছে (সূরা : আস-সিজদাহ ,আয়াত নং 17)।

রাসূল (সাঃ) এর একটি বিখ্যাত হাদীস আছে , তিনি বলেন :

আল্লাহ্ বলেন : আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্যে এমন সব নেয়ামতসমূহ আয়োজন করে রেখেছি-যা কোন চক্ষু দেখতে পায়নি ,কোন কান শুনতে পায়নি আর কোন মানুষের অন্তরে এমন কথা স্মরণেও আসেনি (বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ যেমন , বোখারি ও মুসলিম এবং খ্যাতনামা মুফাস্সিরগণ যেমন , তাবারসী ,আলুসী ও কোরতবী নিজ নিজ গ্রন্থাবলীতে এ হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেছেন)।

আসলে আমরা এ পৃথিবীতে সে ভ্রূণের ন্যায়-যা মাতৃগর্ভের সীমিত পরিসরে থাকে। যদি ধরে নেয়া হয় যে , মাতৃগর্ভের সে ভ্রূণের জ্ঞান-বুদ্ধি আছে , তাহলেও তা মাতৃগর্ভের বহির্জগতে যা কিছু আছে যেমন , উজ্জল চন্দ্র ,সূর্য ,শীতল বায়ুপ্রবাহ ,সুশোভিত ফুলের দৃশ্য ,সমূদ্রের ঢেউ-তরঙ্গের তর্জন-গর্জন ইত্যাদি অনুভব করতে পারছে না। ঠিক তেমনিভাবে , এ পৃথিবীটাও পরকালের তুলনায় সে মাতৃগর্ভের ভ্রূণের মত। ভেবে দেখুন।

38. কিয়ামত ও আমলনামা :

আমরা বিশ্বাস করি : কিয়ামত বা শেষ বিচারের দিন আমাদের এ জগতের কৃতকর্মের নথিপত্র বা প্রতিবেদন আমাদের হাতে দেয়া হবে। পূর্ণ্যবান লোকেরা তাদের ডান হাতে এবং পাপি লোকেরা তাদের বাম হাতে নিজেদের কৃতকর্মের আমলনামা পাবে। সৎকর্মশীল লোকেরা তাদের আমলনামা প্রত্যক্ষ্য করে খুবই আনন্দিত ও পুলকিত হবে আর অসৎকর্মশীল পাপি- অপরাধীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে। আল্লাহ্ বলেন :

যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে তো (আনন্দে পুলকিত হয়ে চিৎকার করে) বলবে (হে হাশর বাসীরা)এ নাও আমার আমলনামা ,পাঠ করে দেখ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ,আমি আমার হিসাব-নিকাশ পর্যন্ত পৌঁছবো। আর সে একটা সন্তোষজনক পরিবেশে থাকবে। সে উচ্চতর স্বর্গে অবস্থান করবে-যার ফলসূমহ তার সামনেঝুঁকে আসবে। (তাকে বলা হবে) আনন্দ ভরে খাও এবং পান কর। এ হচ্ছে তোমার সে কাজের বিনিময়-যা তুমি পূর্বে দুনিয়াতে আঞ্জাম দিয়েছ। কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে , সে (অতীব আক্ষেপ করে বলবে) হায়! যদি আমার আমলনামা আমাকে দেয়াই না হত , তাহলে কতোইনা ভাল হতো (আল-হক্কা : 19-25)।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমলনামা কিরূপ ? তা কিভাবে লেখা হবে ? যে ব্যাপারে কারো অস্বীকার করার জো নেই ; তার সঠিক নীতিমালা আমাদের নিকট স্পষ্ট নয়। এর আগেও আমরা ইশারা করেছি যে , এর বিস্তারিত অনুধাবন করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সামগ্রিক দিকটার অবগতি সম্ভব ও অস্বীকার করার উপায় নেই।

39. কিয়ামত দিনের সাক্ষী :

আমরা বিশ্বাস করি : কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ নিজেই আমাদের সমস্ত কৃতকর্মের সাক্ষী থাকার পরও আমাদের কাজ-কর্মগুলোর সাক্ষী গ্রহণ করবেন। আমাদের হাত-পা গুলো এমনকি , আমাদের শরীরের চামড়াগুলোও আমাদের কর্মধারার সাক্ষ্য প্রদান করবে। যে ভূ-পৃষ্টে আমরা জীবন-যাপন করতাম এবং আরো অনেক কিছুই আমাদের কাজ-কর্মের সাক্ষী প্রদান করবে।

আল্লাহ্ বলেন : আজ (কিয়ামতের দিন) আমরা তাদের মুখে সীল-মোহর লাগিয়ে দিবো , তাদের হাতগুলো আমাদের সাথে কথা বলবে আর তাদের পা গুলো তারা যা-যা কাজ করেছে তার সাক্ষ্য দিবে (ইয়া-সীন : আয়াত নং 65)।

আল্লাহ্ বলেন : তারা তাদের শরীরের চামড়া গুলোকে বলবে ,কেন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রদান করলে ? জবাবে বলবে , সে মহান আল্লাহ্ যিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন তিনিই আমাদের কে বাকশক্তি দান করেছেন (এবং তিনিই এ ভেদ ফাঁস করার নির্দেশ দিয়েছেন) ফুচ্ছিলাত : আয়াত নং 21।

আল্লাহ্ আরো বলেন :

সে দিন যমীন তার সমস্ত সংবাদ প্রকাশ করে দেবে। কেননা , তোমার প্রভূ তাকে অহী তথা প্রত্যাদেশ করেছেন। (আর তাকে এ দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন (সূরা : যিলযাল , আয়াত নং 4-5)।

40. পুলছিরাত ও আমলের পরিমাপ :

আমরা বিশ্বাস করি : কেয়ামতে পুলছিরাত মীযান এর অস্তিত্ব আছে। পুলছিরাত এমন একটি সেতু যা জাহান্নামের উপর সংস্থাপন করা হয়েছে। আর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই ঐ পুলের উপর দিয়ে অতিক্রম করে যেতে হবে। হ্যাঁ ; বেহেশ্তের পথও জাহান্নামের উপর দিয়েই অতিক্রম করে গেছে। আল্লাহ্ বলেন :

তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই-যাকে এ (পুলছিরাত) অতিক্রম করতে হবে না। অর্থাৎ প্রত্যেককে অবশ্যই এ পুলছিরাত অতিক্রম করতে হবে। আর এটা তোমার প্রভূর অনিবার্য ও অলংঘনীয় নির্দেশ যা অবশ্যম্ভাবীরূপে কার্যকর হবে। অতঃপর , আমরা সে সমস্ত লোকদেরকে মুক্তি ও নাজাতদান করব-যারা তাকওয়া ও পরহেযগারীর নীতি অবলম্বন করেছে। আর অনাচারী-জালিমদেরকে আ Íসমর্পণ ও নতজানু অবস্থায় এতে (জাহান্নামে) ছেড়ে দেব (সূরা : মারইয়াম আয়াত নং 71-72)।

এ পুলছিরাত অতিক্রম করা এক বিপদজনক ব্যাপার! আমলের উপর নির্ভর করে এ পুলছিরাত কিভাবে পার হবে , এ পর্যায়ে একটি বিখ্যাত হাদীস আছে : কেউ কেউ বিদ্যুৎ বেগে এ পুলছিরাত অতিক্রম করবে , কেউ কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার ন্যায় , কেউ কেউ হামাগুড়ি দিয়ে , কেউ কেউ পদব্রীজে চলা লোকদের মতো আবার কেউ কেউ ঝুলন্ত অবস্থায় পার হবে , তাতে দোযখের আগুন তাদের কিছু কিছু জ্বালাবে আর কিছু কিছু ছেড়ে দেবে

এ হাদীসটি সামান্য পার্থক্য সহকারে শিয়া ও সুন্নী উভয় মাযহাবেরই বিখ্যাত বিভিন্ন হাদী গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে । যেমনঃ কানযুল উম্মাল , হাদীস নং 39036 , কোরতুবী , 6ষ্ঠ খঃ ,পৃঃ475 , সূরা : মারইয়ামের 71 নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ছদূক তাঁর আমালী গ্রন্থে ইমাম জা 'ফর ছাদিক (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন , ছহীহ্ বোখারী 8ম খঃ , পৃঃ 146 , আছছিরাতু জাসারা জাহান্নাম শিরোনাম।

মিযান : নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে , মিযান হচ্ছে মানুষের আমল-অনুশীলনের পরিমাপের মানদন্ড। হ্যাঁ ; কিয়ামতের দিন আমাদের কাজকর্মগুলোর পরিমাপ করা হবে এবং তার ওজন ও পরিণতি সবকিছু সুস্পষ্ট করে দেয়া হবে।

আল্লাহ্ বলেন :

আর আমরা কেয়ামতের দিন ন্যায়-ইনসাফের মানদন্ড প্রতিষ্ঠা করব। সে দিন কারো প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না। এমনকি , একটি সরিষা দানা পরিমানও যদি (পাপ অথবা পূর্ণ) থেকে থাকে তাহলে সেটিকে উপস্থাপন করব ও তার প্রতিদান দেব। আর যথাযথ হিসাবকারী হিসাবে আমিই যতেষ্ট (আল আম্বিয়া : 49)।

আল্লাহ্ আরো বলেন :

সেদিন যার নেকির পাল্লা ভারী হবে সে সন্তোষজনক এক সুখকর বাসস্থানে অবস্থান করবে আর যাদের নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে , জাহান্নামের অতল গহবরে হবে তার বাসস্থান (আল-কারিয়াহ্ : 6-9)।

হ্যাঁ ; এটাই আমাদের আকীদা-বিশ্বাস যে , পরকালে মুক্তি ও পরিত্রাণ মানুষের কর্মের উপর ভিত্তি করে হবে । আশা-ভরশা সব আমলের ভিত্তিতে চুড়ান্ত হবে। বস্তুতঃ আত্মার পবিত্রতা ও তাকওয়া-পরহেযগারী ব্যতীত কোন কিছুর আশা করা যায় না। এ ছিল পুলছিরাত মিযান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও মোটামুটি আমাদের বক্তব্য ও বিশ্বাস। এর বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অবস্থার কথা আমাদের জানা নেই। আগেই বলেছি পরকালের বিষয়টি দুনিয়ার তুলনায় অনেক বিরাট- বিশাল ও উচ্চ ব্যাপার। এর সবকিছু উপলব্ধি করা আমাদের মত পার্থিব নানান ঝামেলায় ব্যস্তলোকদের পক্ষে অসম্ভব।

41. রোয হাশরে শাফায়া ত :

আমরা বিশ্বাস করি : শেষ বিচারের দিন নবী-রাসূলগণ , মা 'সুম (নিস্পাপ) ইমামগণ ও অলী-আওলিয়াগণ আল্লাহর অনুমতিক্রমে কোন কোন পাপী-গুনাহ্গারের জন্যে শাফায়া ত বা সুপারিশ করবেন এবং তাদেরকে ক্ষমা প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু আমাদেরকে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে , এ সুপারিশ বা শাফায়া ত শুধুমাত্র এই ব্যক্তির ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও অলী-আওলিয়াদের সাথে যোগ সম্পর্ক ছিন্ন করে না। সুতরাং শাফায়া ত শর্তহীন নয়। আর সে শর্তও হচ্ছে নিজেদের আমল-আখলাক ও নিয়্যতের পবিত্রতার মাধ্যমে অলী-আওলিয়াদের সাথে যোগ-সম্পর্ক বজায় রাখা। যেমন আল্লাহ্ বলেন :

তারা সে সমস্ত লোক ব্যতীত অন্য কারও জন্যে শুপারিশ করবেন না-যাদের জন্যে সুপারিশ করার ব্যাপারে আল্লাহ্ রাজী থাকবেন (আল-আম্বীয়া : 28)।

আগেও যেমন ইশারা করেছি , শাফায়া মানুষকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার একটা পন্থা ও পাপ কর্মে লিপ্ত হওয়ার পথে এক প্রকারের বাঁধা। আর অলী-আওলিয়াদের সাথে সম্পূর্ণরূপে সর্ম্পক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে লোকদেরকে বলে যে , যদি গুনাহ্ ও পাপের কাজে লিপ্ত থেকে থাক তাহলে এখানেই থেমে যাও এবং পাপ কাজ ত্যাগ করে ফিরে এসো। এর অধিক পাপ আর করো না।

নিঃসন্দেহে শাফায়া তের ময়দানে সর্বোচ্চ স্থান হচ্ছে বিশ্বনবী (সাঃ) এর। তাঁর পরে পর্যায়ক্রমে সুপারিশ করার মর্যাদা হচ্ছে অন্যান্য নবী-রাসূল ও মা সুম ইমামগণের। এমনকি , আলেমগণ , শহীদগণ ও পরিপূর্ণ ঈমানদার লোকেরা যাঁরা কামালিয়াত ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। আরো এগিয়ে গিয়ে স্বয়ং আল-কোরআন এবং সৎকর্মসমূহও কোন কোন লোকের জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ) বলেন :

পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে , পরকালে তার মহানবী (সাঃ) এর সুপারিশের দরকার হবে না (বিহারূল আনোয়ার 8ম খঃ পৃঃ41)।

রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেন : রোয হাশরে সুপারিশকারীদের সংখ্যা পাঁচ : আল-কোরআন , সেলেয়ে রেহেম বা আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণ ,আমানত বা গচ্ছিত সম্পদ , তোমাদের নবী ও তোমাদের নবীর আহলে বাইত তথা নবীর (মাছুম) বংশধর (কানযুল ওম্মাল , হাদীস নং 39041 , খঃ- 14 , পৃঃ- 390)।

ইমাম জা ফর সাদিক (আঃ) আরো বলেন : হাশরের দিন মহান আল্লাহ আলেম আবেদগণকে (বিশেষভাবে) অভিষিক্ত করবেন। তাঁরা যখন মহান আল্লাহর দরবারে দন্ডয়মান হবেন তখন আবেদ কে তথা ইবাদতকারীকে বলা হবে : তোমরা বেহেশ্তে চলে যাও। আর আলেমদেরকে বলা হবে : তোমরা দাঁড়াও এবং লোকদেরকে যে সুশিক্ষা দান করেছ (সে সুবাদে তোমাদেরকে মর্যাদা দেয়া হল) এখন তাদের জন্যে সুপারিশ করো (বিহারূল আনোয়ার ,8ম খঃ ,পৃঃ নং 66)।

এ হাদীসটিও শাফায়া ত ও সুপারিশের পক্ষে একটা দারুণ দলীল।