জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ0%

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ লেখক:
: নূরে আলম মাসুদ।
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 16 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 10235 / ডাউনলোড: 2527
সাইজ সাইজ সাইজ
জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

জিহাদ আল আকবার : নফসের সাথে যুদ্ধ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

অধ্যায় 3

সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ : নফসের সাথে যুদ্ধ

আমাদের জীবনের আরও একটি বছর পার হয়ে গেলো। তোমরা তরুণেরা বৃদ্ধ বয়সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো , আর আমরা বৃদ্ধরা এগিয়ে যাচ্ছি মৃত্যুর দিকে। এই শিক্ষাবর্ষে তোমরা তোমাদের পড়াশুনা ও জ্ঞানার্জনের মাত্রা সম্পর্কে জানতে পেরেছো। তোমরা জানো কতদূর তোমরা অর্জন করেছো এবং তোমাদের শিক্ষার ইমারত কতটা উঁচু হয়েছে। যাই হোক , আচরণের বিশুদ্ধতা , ধর্মীয় আচরণ শিক্ষা করা , ঐশী শিক্ষা এবং আত্মার পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রে তোমরা কী করেছো ? কী কী ইতিবাচক পদক্ষেপ তোমরা নিয়েছো ? তোমরা কি পরিশুদ্ধি নিয়ে , অর্থাৎ নিজের সংস্কার নিয়ে কোনো চিন্তা করেছিলে ? এই দিকে কোনো কর্মসূচী গ্রহণ করেছো কি ? দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার স্বীকার করতে হচ্ছে যে তোমরা চোখে পড়ার মতো কিছু করোনি , এবং নিজের পরিবর্তন ও আত্মিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তোমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নাওনি।

অধ্যায় 4

ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রের প্রতি পরামর্শ

পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিষয়ের ( scholarly matters)পড়াশুনার পাশাপাশি ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার-ও প্রয়োজন আছে। আধ্যাত্মিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য নৈতিক পথপ্রদর্শক ও প্রশিক্ষকের প্রয়োজন , দরকার উপদেশ-পরামর্শ সেশনের। নীতিশাস্ত্র ও নৈতিক সংস্কারমূলক কর্মসূচী , আচরণ ও পরিশুদ্ধির উপর ক্লাস , ঐশী জ্ঞানার্জনের (যা ছিলো নবীগণের (আ.) মিশনের মূল লক্ষ্য) দিকনির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত , এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে যেটুকু মনোযোগ দেয়া হয় , তা অতি নগন্য। আধ্যাত্মিকতার পড়াশুনা এখন কমে যাচ্ছে , ফলস্বরূপ ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রগুলো ভবিষ্যতে আর নৈতিকতার উপর পণ্ডিত গড়ে তুলতে পারবে না , গড়ে তুলতে পারবে না বিশুদ্ধ-প্রাণ নৈতিক শিক্ষক , ঐশ্বরিক মানব। প্রাথমিক বিষয়ের আলোচনা-অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকার কারণে মৌলিক ও ভিত্তিমূলক বিষয়ের পড়াশুনার সুযোগ হয়ে ওঠে না। সেসব মৌলিক বিষয় , মহাগ্রন্থ আল কুরআন যা উপস্থাপন করেছে এবং মহানবী (সা.) এবং অন্যান্য নবী (আ.) ও আউলিয়াগণ (আ.) যা উপস্থাপন করেছেন। পণ্ডিতসমাজের উল্লেখযোগ্য আইনজ্ঞ ও খ্যাতনামা প্রফেসরগণের উচিত তাঁদের বিভিন্ন লেকচার ও আলোচনায় মানুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে গড়ে তোলা ; উচিত আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিষয়গুলির উপর অধিক জোর দেয়া। ধর্মশিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্রদের জন্য পাণ্ডিত্য ও আত্মিক বিশুদ্ধতা অর্জনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের মহান দায়িত্বের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

অধ্যায় 5

ধর্মশিক্ষার ছাত্রদের প্রতি পরামর্শ

আজকে তোমরা যারা এই মাদ্রাসাগুলোয় পড়াশুনা করছো , যারা আগামী দিনে সমাজের নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব নেবে ভেবোনা যে কেবলমাত্র কিছু ধর্মীয় টার্ম শেখা-ই তোমাদের দায়িত্ব ; কারণ তোমাদের অন্যান্য দায়িত্বও রয়েছে। এসব শিক্ষাকেন্দ্রে তোমাদের নিজেদেরকে অবশ্যই এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেনো যখন তোমরা কোনো গ্রাম বা শহরে যাবে , তখন সেখানের মানুষদের গাইড করতে পারবে এবং তাদেরকে আত্মশুদ্ধির পথ দেখাতে পারবে। যখন তোমরা ধর্মীয় আইনশিক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়বে , তখন যেনো তোমরা নিজেরাই পরিশোধিত ও সুসংস্কৃত হও , যাতে মানুষকে ইসলামের নৈতিক আদবকায়দা , রীতিনীতি ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে সুশিক্ষিত করে তুলতে পারো এটাই কাম্য। আল্লাহ না করুন যদি তোমরা শিক্ষাকেন্দ্রে এসে নিজেদের সংস্কার করতে না পারো , আধ্যাত্মিক আদর্শকে উপলব্ধি করতে না পারো , তাহলে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন যেখানেই তোমরা যাবে , (তোমাদের শিক্ষায়) মানুষ বিকৃতমনা হবে , এবং তোমরা মানুষকে ইসলাম ও আলেমগণের ব্যাপারে নিচু ধারণা দেবে।

তোমাদের এক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। তোমরা যদি মাদ্রাসায় নিজেদের দায়িত্ব পালন না করো , নিজের পরিশুদ্ধির পরিকল্পনা না করো ; যদি শুধুমাত্র কিছু টার্ম শেখা , আইনের কিছু ইস্যু কিংবা বিচারশাস্ত্র শেখার পিছনে ছোটো , তাহলে তোমরা ইসলাম ও ইসলামী সমাজের যে ক্ষতি করবে খোদা আমাদের সেটা থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ রক্ষা করুন , কিন্তু তোমাদের দ্বারা মানুষকে বিকৃত ও বিপথগামী করা সম্ভব। যদি তোমাদের কাজ , কর্ম ও অনুচিত আচণের কারণে কোনো ব্যক্তি পথচ্যুত হয়ে ইসলাম ত্যাগ করে , তবে তুমি সবচে বড় কবিরা গুনাহর দোষে দোষী হবে , আর তোমার তওবা আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়াও কঠিন হবে। অনুরূপভাবে , (যদি তোমাদের কাজ , কর্ম ও আচরণের কারণে) একজন ব্যক্তি সঠিক পথ খুঁজে পায় , তবে একটা বর্ণনা অনুযায়ী সেটা ঐ সকল কিছুর চেয়ে উত্তম , যার উপর সূর্যরশ্মি বিকীরিত হয়। তোমাদের দায়িত্ব অনেক কঠিন। সাধারণ মানুষের চেয়ে তোমাদের দায়িত্ব বেশি। সাধারণ মানুষের জন্য কত কিছুই বৈধ , যা তোমাদের জন্য অনুমিত নয় , এমনকি হারামও হতে পারে ! অনেককিছুই সাধারণ মানুষের জন্য বৈধ , কিন্তু তোমরা তা করো , সেটা মানুষ পছন্দ করে না। অনৈতিক কাজের সামনে তোমরা চুপ করে থাকবে , এটা তারা প্রত্যাশা করে না , আর আল্লাহ না করুন যদি তোমরা সেগুলো করো , তবে মানুষ ইসলাম সম্পর্কেই খারাপ ধারণা করে বসবে , আলেম সমাজ সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।

সমস্যা হলো : মানুষ যদি তোমাদের কাজকর্মকে প্রত্যাশার বিপরীত দেখতে পায় , তাহলে তারা ধর্ম থেকেই সরে যায়। তারা গোটা আলেম সমাজ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয় , কোনো নির্দিষ্ট একজনের থেকে নয়। যদি তারা শুধু ঐ একজন আলেমের থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতো এবং শুধু ঐ ব্যক্তির ব্যাপারেই নিচু ধারণা করতো ! কিন্তু তারা যদি একজন আলেমকে প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে অনুচিত কাজ করতে দেখে , তারা বিষয়টাকে এভাবে পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ করে দেখে না যে একই সময়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও খারাপ ও বিকৃতরুচির লোক আছে , এবং অফিস-কর্মচারীদের মাঝেও দুর্নীতি ও নোংরা কাজকর্ম দেখা যায় , সুতরাং এটা সম্ভব যে আলেমগণের মাঝেও এক বা একাধিক অধার্মিক ও পথচ্যুত মানুষ থাকতে পারে। সুতরাং , যদি একজন মুদি দোকানী একটা দোষ করে , তখন বলা হয় যে ওমুক দোকানী একজন খারাপ লোক। যদি একজন ফার্মাসিস্ট কোনো নোংরা কাজের অপরাধে দোষী হয় , বলা হয় যে ওমুক ফার্মাসিস্ট খারাপ লোক। কিন্তু যদি একজন দায়ী কোনো অনুচিত কাজ করে , তখন লোকে বলে না যে ওমুক ধর্মপ্রচারকটি খারাপ , বরং বলা হয় যে ধর্মপ্রচারকেরাই খারাপ !

জানাশোনা মানুষের দায়িত্ব বড় কঠিন ; অন্যদের তুলনায় উলামাগণের দায়িত্ব বেশি। উলামাগণের দায়িত্ব বিষয়ে উসুলে কাফি কিংবা ওয়াসসাইল বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো যদি দেখো , তাহলে দেখবে কিভাবে তারা জানাশোনা মানুষদের কঠিন দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার কথা বর্ণনা করেছে ! বর্ণনায় পাওয়া যায় যে , যখন আত্মা গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায় , তখন আর তওবা করার সুযোগ থাকে না , এবং তখন কারো তওবা কবুল-ও হবে না। অবশ্য যদিও অজ্ঞদের তওবা আল্লাহ তাদের জীবনের শেষ মিনিট পর্যন্ত কবুল করে থাকেন। আরেকটা বর্ণনা অনুযায়ী কোনো আলেমের একটি গুনাহ ক্ষমা হবার আগে একজন অজ্ঞ মানুষের 70টি পাপ ক্ষমা করা হবে। এর কারণ হলো একজন আলেমের পাপ ইসলাম ও ইসলামী সমাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যদি কোনো অসভ্য মূর্খ মানুষ একটা পাপ করে , সে কেবল নিজেরই দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। কিন্তু যদি একজন আলেম পথচ্যুত হয় , যদি সে নোংরা কাজে লিপ্ত হয় , সে গোটা একটা দুনিয়াকে (আলম) নষ্ট করে। সে ইসলাম ও ইসলামের উলামাদের ক্ষতিসাধন করে।

আরেকটা বর্ণনা অনুযায়ী জাহান্নামের বাসিন্দাদের ঐসব আলেমের দুর্গন্ধ দ্বারা কষ্ট দেয়া হবে , যাদের কাজ ( 'আমল) তাদের জ্ঞান ( 'ইলম) মোতাবেক ছিলো না। ঠিক এই কারণেই , ইসলাম ও ইসলামী সমাজের লাভ-ক্ষতির ক্ষেত্রে এই দুনিয়ায় একজন আলেম ও একজন অজ্ঞ ব্যক্তির মাঝে পার্থক্য আছে। কোনো আলেম যদি পথচ্যুত হয় , তাহলে খুবই সম্ভব যে তার গোটা কমিউনিটিই ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। আবার একজন আলেম যদি বিশুদ্ধ হন এবং ইসলামী আচরণবিধি ও নীতি-নৈতিকতা মেনে চলেন , তিনি গোটা কমিউনিটিকেই পরিশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করবেন। এই গ্রীষ্মে আমি কয়েকটা এলাকায় গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম একটা এলাকার মানুষজন আচার-ব্যবহারে বেশ ভালো , তাদের আচার-আচরণে ধার্মিকতার ছাপ। আসল ব্যাপার হলো তাদের মাঝে একজন আলেম ছিলেন , যিনি নিজে ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ন ছিলেন। যদি কোনো সমাজে , এলাকায় কিংবা রাষ্ট্রে একজন ন্যায়পরায়ন ধার্মিক আলেম বাস করেন , শুধু তাঁর উপস্থিতিই ঐ এলাকার মানুষের পথপ্রদর্শন ও পরিশুদ্ধিকে উন্নত করবে , এমনকি যদিও তিনি মৌখিকভাবে দাওয়াত দেয়া , গাইড করা ইত্যাদি না করেন। আমরা এমন মানুষকে দেখেছি যাঁর কেবল উপস্থিতিই শিক্ষাগ্রহণ ঘটায় , শুধুমাত্র তাদেরকে দেখলে , তাদের দিকে তাকালেই মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে তেহরানের সম্পর্কে আমার কাছে যদ্দুর খবর আছে , সেখানে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকার অবস্থা ভিন্ন। যে এলাকায় একজন বিশুদ্ধ আলেম বাস করেন , সেখানের মানুষের নৈতিকতা উন্নত , ঈমান দৃঢ়। আরেক এলাকায় , যেখানে এক দূর্নীতিগ্রস্ত লোক পাগড়ি পরে , এবং সে নামাজের ইমাম-ও হয়েছে , ব্যবসা খুলে বসেছে , লক্ষ্য করে দেখবে সেখানের মানুষেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে , তাদেরকে দূষিত করা হয়েছে , বিকৃত করা হয়েছে। এটা সেই একই দূষণ , জাহান্নামের বাসিন্দারা যার দুর্গন্ধ দ্বারা শাস্তি ভোগ করবে। এটা সেই একই দুর্গন্ধ , যা শয়তান আলেমরা দুনিয়ায় বয়ে নিয়ে এসেছে , যার দুর্গন্ধে জাহান্নামীদের শাস্তি দেয়া হবে ; এরা সেইসব কর্মহীন আলেম , বিকৃতমনা আলেম। বিষয়টা এমন না যে তাদের দ্বারা জাহান্নামীরা কষ্ট পাবে কারণ তাদের (অর্থাৎ সেসব আলেমদের) সাথে কিছু (পাপ) যুক্ত হবে , বরং পরকালে এই আলেমের কপালে যা ঘটবে , তা এই দুনিয়াতেই প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা যা করি তার বাইরে আমাদেরকে কিছুই দেয়া হয় না। একজন আলেম যদি দুর্নীতিগ্রস্ত ও খারাপ হয় , তবে সে গোটা সমাজকেই নষ্ট করে ফেলে , যদিও এই দুনিয়ায় আমরা সেটার দুর্গন্ধ বুঝতে পারি না। কিন্তু পরকালে সেটা টের পাওয়া যাবে। কোনো অসভ্য-মূর্খ মানুষের ক্ষমতা নেই যে ইসলামি সোসাইটিতে সেই পরিমাণ দূর্নীতি ও দূষণ প্রবেশ করাবে। অসভ্য-মূর্খ মানুষেরা কখনো নিজেদেরকে ইমাম কিংবা ইমাম মাহদি দাবী করবে না , কিংবা নবীও দাবী করবে না , অথবা বলবে না যে তার কাছে ওহী নাযিল হয়েছে। বরং এটা হলো দুর্নীতিগ্রস্ত আলেমদের কাজ , যারা দুনিয়াকে নষ্ট করে : যদি একজন আলেম নষ্ট হয় , গোটা একটা দুনিয়া (আলম)-ই নষ্ট হয়ে যায়।